শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ৩

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ৩
আলিশা

বৃষ্টিতে মেতে উঠলো আজ শহর। হুটহাট বৃষ্টি। বড় কাচের জানালা খুলে ভরপুর চিন্তাকে সঙ্গী করে পড়ার টেবিলে বসেছিলাম। এমন সময়ই একটা মেঘের গর্জন। তারপরই হাওয়ার দাপট শুরু হয়। ছাদে আমার এক গাদা কাপড় ছিলো। খালাকে ডাকলেও সাড়া পেলাম না। নিজেই রওনা হলাম ছাদের দিকে। তড়িঘড়ি করে ছাদে পৌঁছে বাতাসের বেগে দেখি উড়ে যাওয়ার পালা আমার। শাড়ির আঁচল হাওয়া পেয়ে মাতাল।

হুট করে যেন মাথা ফাঁকা হয়ে গেলো। অর্থাৎ পরীক্ষা নামক অশান্তি ডুবে গেলো অতলে। কিছুসময় হাওয়ার বেগ পরখ করলাম। বিদ্যুৎ চমকানো আকাশকে দেখলাম। আচমকা এক ফালি আলোর ঝলক। বাবা! কি ভয়ঙ্কর লাগে আকাশটাকে দেখতে। মেঘের গুড়গুড় শুনে ভয় পাই না। কিন্তু এই আলোর ” আছি নাই” খেলা দেখলে বুক ঢিপঢিপ করে। দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছাড়লাম। বৃষ্টির ছোট ছোট ফোঁটার আগমন হয়েছে। জলদি এগিয়ে গেলাম কাপড়ের কাছে। একটা, দুইটা, তিনটা কাপড় নিয়ে হাতের ভাজে রাখার পর হঠাৎ কানে এলো স্মরণের কন্ঠ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— এতোটা শর্ট তুমি? এইভাবে যুদ্ধ করে কাপড় পারছো? ছোট বেলায় কমপ্লেন খাও নি? অপুষ্টিকর শিশু ছিলা নাকি?
কন্ঠস্বর কানে পৌছাতেই পেছন ফিরে চাইলাম। রাগে ফুলে ফেঁপে উঠলো মন। হয়তোবা রশি একটু নাগালের বাইরে। হয়তোবা আমি একটু লাফিয়েই কাপড়ের কাছে পৌঁছাচ্ছি। তাই বলে একটুর কারণে অনেকখানি অপমান করে দিলো সে আমায়? ঠোঁটের ভাজে কিছু কথা এসে পরলেও লুকিয়ে ফেললাম। কথাই বলতে চাই না এমন মানুষের সাথে।

— আরে বোবা রাণী রাগ করলো নাকি। হারি আপ ডাম্ব কুইন। বৃষ্টি পরছে তো।
— হ্যা দেখছি। কারো বলতে হবে না।
কথাটা বলেই কাজে মনোযোগ দিলাম। কেন যে এই অসময়ে তার ছাদে থাকাতে হবে। আগে জানলে কাপড় ভিজে, উড়ে আকাশে ঘুড়ি হলেও আমি আসতাম না। তার কেমন কেমন কথা গুলো শুনতাম না। ভীষণ অভিমান জমে যাওয়া মন নিয়ে লাফালাফি করছিলাম। ঠিক এমন সময়ই আমার সাথে ঘটালো হলো একটা অবিচার। আচমকা দড়ি উঁচু হয়ে গেলো আরো। নাগালের একদম বাইরে। লাফিয়ে নাগাল পাচ্ছি না এখন। রাগ নিয়ে স্মরণের পানে চাইলাম। সে হেঁসে কুটিকুটি। আমার চাইতে দশ কদম দূরে দাড়িয়ে রশি ঠেলে ওপরে তুলে দিচ্ছে সে। এবার রাগ দমে রাখা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হলো। কিছুটা উঁচু গলায় বললাম

— এটা কিন্তু ঠিক না। আমি নিচে যাবো।
স্মরণ হেলেদুলে আমার কাছে এলো। ঠোঁট জুরে তার হাসি।
— হুম যাও। না করলাম কখন।

বুঝলাম লোকটা আমাকে রাগিয়ে মজা নিচ্ছে। আকাশের অবস্থা ভীষণ খারাপ। দুপুর যেন সন্ধ্যে হলো। হাওয়ার দাপট দমার নাম নেই। বিরক্ত হয়ে গলায় কান্না কান্না ভাব আটকে রেখে একটা লাফ দিলাম। পুরোই ফেল আমি। মনে মনে আওড়ালাম “নেক্সট”। তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে আমি পুষ্টিকর বাচ্চা ছিলাম। নাদুসনুদুস একটা শিশু ছিলাম। সেই অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে দ্বিতীয় বার লাফ দিলাম।

তবে এই লাফ দেওয়ার মুহূর্তে হঠাৎ এসে জড়িয়ে ধরলো কেউ। উঁচু করলো আমাকে আকাশের দিকে। ছলাকলাহীন ভাবে এবার আমি অতি সহজে পৌছে গেছি রশির কাছে। সেই সাথে ভীষণ লজ্জার পাহাড়ে। এমন সময় আচমকা এলো খোঁপায় গুচ্ছ বেঁধে থাকা চুলগুলো আমার উন্মুক্ত হলো। হাওয়া এসে উড়িয়ে দিলো তাদের। পরিস্থিতি পাল্টে গেলো মুহূর্তেই। স্মরণ এমন সময় বলে উঠলো
— এখন তাড়া নেই?

অনিচ্ছায় দৃষ্টি গেলো তার মুখপানে। সে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। আমি তড়িঘড়ি করে হাত বাড়ালাম কাপড়ের দিকে। ছোঁয়ার একটা জামা। স্মরণ আবার অন্যদিকে এগোলো। কাঁপা হাতে সে কাপড়গুলো তুলে নেয়ার কালে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। কিছুটা চমকে গেলাম আমি। ভেবেছিলাম স্মরণ নামিয়ে দেবে। কিন্তু আমাকে অবাক করে সে নামিয়ে দিলো না। বরং বলে উঠলো হঠাৎ

— খেয়া, তুমি বৃষ্টির মতো স্নিগ্ধ, তোমার হঠাৎ মেঘের মতো গর্জে ওঠাটা ভীষণ প্রিয়। আরো প্রিয় তোমার বোবা স্বভাবগুলো। তোমার লজ্জাগুলো।
নীরবে একটা ঢোক গিললাম আমি। ভীষণ অবাক হওয়ার অভিব্যাক্তি লুকিয়ে রেখে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললাম
— কার প্রিয়?
স্মরণ যেন ঈষৎ চমকালো। পরক্ষণেই চতুরতা দেখিয়ে বলল
— পারাপর্শির।

বৃষ্টির তেজ তখন বেশ বেড়ে গেছে। স্মরণ হাতের বাঁধন হালকা করলো। তার মুখোমুখি হলো আমার মুখ। পা পরলো একটু দৈব ভাবে তার পায়ের পাতায়। সে প্রস্তুত হচ্ছিলো আমাকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য। ওমনি ভয় লজ্জা আজ কেন যেন দূরে পাঠিয়ে আমি তার গলা জড়িয়ে ধরলাম। বললাম
— কার প্রিয় বললেন না?

আমার প্রশ্নের জবাবে স্মরণ আমাকে নামাতে চাইলো পায়ের পাতা থেকে। আমি শক্ত হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। স্মরণ চেষ্টা চালিয়ে ব্যার্থ হওয়ার পর আচমকা আমার কোমড় পেচিয়ে ধরে বলল
— শুনবে? লজ্জা পাবে না তো?
অস্বাভাবিক তার আচরণ। মন বলল রাগ থেকে রোমান্স করছে লোকটা। একটু থতমত খেয়ে গেলাম। সিক্ত শাড়ির কাপড়কে সহজেই কাবু করে তার হাতের ছোঁয়া আমার কোমড়ে। হৃদপিণ্ডের ধুকপুক শব্দ বেড়ে গেলো। স্মরণের দিকে শঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকাতেই সে বলে দিলো সহজ করে

— তোমার শখের বাবুর বাবার প্রিয় তুমি।
লজায় ডুবে গেলাম। দু’দিন আগের বেখাপ্পা কান্ডের রজনীর কথা মনে পরলো। এবার আমি পালাতে চাইলাম স্মরণ কে ছেড়ে। কেন যে তাকে জ্বালাতন করার মতো ইচ্ছেটা মাথা চাড়া দিয়েছিলো! গলা ছেড়ে পায়ের পাতা নামাতে যাওয়ার মুহূর্তেই স্মরণ বাঁধা হলো। কোমড়ে তার হাতের বাঁধান আরো অটুট হলো। এক পা দুপা করে এগোতে লাগলো আমাকে নিয়ে। আমার দেহের ভার রইলো তার পায়ের পাতায়। লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রইলাম।

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২

( জানি ছোট হলো। কিন্তু আমি আজ এর বেশি জোর করেও লিখতে পারলাম না 😥 গল্পের মোড় দরকার)

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ৪