শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২
আলিশা

— খেয়া?
স্বপ্নের মাঝে কর্কশ কন্ঠ কানে বাজলো। ঘুম ঘুম ভাব কিছুটা ছুটে গেলো। তারপর তা পুরোপুরি ছুটে গেলো স্মরণের ঝাঁকুনিতে। ঝট করে চোখ মেললাম।সবদিক আধারময়। কোনো বস্তু চোখে ধারা দিলো না। শুধু অনুভবে ধরা দিলো কারো স্পন্দিত বুক। থমকে গিয়ে কান পেতে রইলাম। খুবই অল্প সময়ের মাঝে বুঝে গেলাম শূন্যে ভাসছি স্মরণের কোলে। ইদানীং লোকটা হুটহাট কোলে তুলে নেয়। আর আমি লজ্জার সাথে মিশে একাকার হয়ে যাই।

— নামার ইচ্ছে কি খেয়ে ফেলেছো? আমি কিন্তু নিচে ফেলে দেবো।
কথার মাঝেই ঘরে আলো জ্বালিয়ে দিলো স্মরণ। অতঃপর নিজের কথা সত্যি করেই ঠাস করে ছুড়ে দিলো আমাকে বিছানার মধ্যে। ভাগ্যিস বিছানাটা বড়োলোক ধাঁচের। এক হাত পরিমাণ ডুবে গেলাম যেন। স্মরণও কিছুটা ঝাপ দিয়ে যেন বসে পরলো। এসি অন করলো। অতঃপর শার্টের বোতামে হাত লাগাতেই আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। বিষয়টা কি ওদিকে গড়াবে? গলা শুকিয়ে এলো লজ্জায়। তবুও নির্লজ্জের মতো হা করে তাকিয়ে রইলাম স্মরণের দিকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এলোমেলো চুলের মাঝে সে এক হাত চালিয়ে অন্য হাতে শার্ট খুলতে ব্যাস্ত। কপালে ঘামের ছিটেফোঁটা। চোখা নাকের ডগা চেরি ফলের মতো লাল হয়ে গেছে। রক্তলাল ঠোঁট কিছুটা ফুলিয়ে রাখা। চোখের দৃষ্টি শান্ত। হায়! বুকে যেন একটা তীর এসে বিধলো তাকে দর্শন পর্যায়ে। দেখতে দেখতে সে শার্টের বোতাম খুলে উন্মুক্ত করলো বুক। আমি গুনে গুণে তিন নজর দেখেই চোখে আড়াল করলাম হাত দিয়ে। ছিহ! এতোটা নির্লজ্জ না আমি।

— লাইট অফ করুন।
কম্পমান কন্ঠে কথাটা বলেই হাতের এপাশে চোখ দ্বয় বন্ধ করে নিলাম। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেলো। লাইট অফ করার কোনো সাড়া পেলাম না। পাঁচ মিনিট পর পেলাম বিছানায় দুম করে কিছু পরার শব্দ। খটকার এক আস্ত পাহাড় নিয়ে চোখ থেকে হাত সরিয়ে ফেললাম। প্রথমেই অক্ষিপটে দৃশ্যমান হলো স্মরণের রাগে ভরপুর মুখ। সে কোমরে এক হাত রেখে আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে। আমার দৃষ্টিতে বোকা ভাব বাসা বাঁধলো।
— ঐজন্য আনিনি এখানে। এইজন্য এনেছি। মাথাটা কি গেছে? ঐসব ভাবনা কবে থেকে মাথায় নিয়েছো? এইগুলো শেষ করো।

তার হাতের ইশারা অনুসরণ করে ভেঙে যাওয়া মন নিয়ে চাইলাম বিছানার মধ্যে। ইশ! বুকটা কষ্টে ভরে উঠলো আমার। একগাদা বই। ওরা যেন দাঁত কেলিয়ে হাসছে আমাকে দেখে। লজ্জায় মর মর দশা হলো আমার। হে আল্লাহ, দড়ি, লতা, রশ্মি যে কোনো একটা ফেলে দিন। আমি ওপরে উঠে যাই। মনে মনে এ প্রত্যাশা করলেও আল্লাহ দড়ি বা রশি না ফলে ফেললেন স্মরণকে। আচমকা সে ঝড়ের বেগে আমার মুখের কাছে এসে উপস্থিত। চোখ তুলে তাকানোর মতো অবস্থাটা আমার অনেক আগেই হাওয়া হয়ে গেছে। স্মরণ অবস্থা আরো বেগতিক করে দিতে বলল

— দশদিন পর ইয়ার চেঞ্জ। মাইন্ডে পড়ালেখা ঢুকান। প্রিয়ার সাথে দেখা হয়েছিল ওর থেকে জানলাম পরীক্ষা । ও না বললে তো আমি জানতামই না। পরীক্ষা যতো নিকটে আপনার পড়ালেখা দেখছি তত দূরে। এতো রোমান্স রোমান্স পায় কেন বুঝি না।

স্মরণের কথার ধারণে আমার সত্যিই লজ্জায় পালাতে ইচ্ছে করছে। তড়িঘড়ি করে মুখের সামনে বই ধরে বসলাম। তাকে রাখলাম বইয়ের ওপাশে। প্রিয়াকে রীতিমতো ধুয়ে দিচ্ছি। স্মরণ কে আস্ত এক খাটাশ, খবিশ, খচ্চর বলে গালি দিলাম। মোটেও আমার রোমান্স রোমান্স পায়নি। এমন করে রাতে তুলে এনে বিছানায় ছুড়ে মারলে কার না সিনেমার কথা মনে পরবে? আমার কোনো দোষ নেই। সব দোষ তার সিস্টেমের।

এমন সিস্টেমে কেউ বউকে তুলে এনে পড়তে বসায়? পড়ার কথা ভাবতে গিয়ে আরেকটা দুঃখে মন কেঁদে উঠলো। সোজাসাপটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে, ইচ্ছে হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রী হয়ে যেতে বা আইন মন্ত্রী হয়ে যেতে। অতঃপর এমন একটা নিয়ম করবো যেখানে কারো বৈবাহিক জীবনে লেখাপড়া থাকবে না। বৈবাহিক জীবনে লেখাপড়া কাবাবের হাড্ডি। বিয়ের পর এটা থাকা উচিত না।

— আমি ফ্রেশ হয়ে খাবার নিয়ে আসছি।
আমি কোনো কথা বলতে গেলাম না। বেচারার ওপর চরম ভাবে ক্ষেপে আছে আমার মন। মানে অস্বস্তিকর বিষয়। জয়নব খালার ওপরও হুট করে রাগ জমলো। তার কেন আবার বলতে হয়েছে আমি না খেয়ে আছি? এজন্য আরো তাড়া ছিলো তার আমার ঘুম ভাঙানোর।

গুমোট আকাশ, কালো মেঘ, কালো কালো মন প্রতিটা মানুষের। প্রিয়ার সাথে আমার বিড়াট এক ঝগড়া বেঁধে গেছে। গত রাতের প্রহর গুলো অত্যন্ত খারাপ ছিলো আমার জন্য। এই খারাপ প্রহরের সৃষ্টি হওয়ার পেছনে আমি শুধু প্রিয়াকেই দোষারোপ করছি। কিছু কথা আর কিছু কিল ওর পিঠে বসিয়ে এখন আমি থম মেরে বসে আছি। শান্ত লাইব্রেরিতে এসে টেবিলে বই রেখে তাতে মাথা ঠেস দিয়ে রেখেছে। চোখ দু’টো ওর বন্ধ। ঘুমোচ্ছে হা করে। আমার গাটা রাগে উশখুশ করছে। ওর ঘুমটাও সহ্য হচ্ছে না। এই খাটাস সারাবছর “চিইইইইইল দোস্ত চিইইইইল” করে চিল্লাপাল্লা করে পরীক্ষার আগে এসে তুমুল পড়ালেখা করে। তারপর প্রতিবারই দেখবো প্লেস করেছে পরীক্ষায়। আর আমি? টেনে টুনে সিজিপিএ ২.৮০ পাই সর্বোচ্চ।

— বুঝলাম না দোস্ত, তোর এতো রাগ করার কারণ কি।
নীলিমার চিন্তিত মুখের কথা। আমি কিছু বলতে পারছি না রাগ করার বিষয় সম্পর্কে। প্রিয়া ঠোঁট উল্টে বসে থাকতে থাকতে বলল
— ওর জামাই ওকে ভার্সিটি টপার বানাইবো আর এজন্য ওকে গতরাতে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে পড়াইছে এইটা নাকি আমার দোষ। আরে ভাই তোর জামাই কাল আমার শশুর বাড়ি গিয়েছিল। আর আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম দশদিন পর তো পরীক্ষা খেয়াকে একটু বলবেন কিছু নোট যেন আমাকে দেয়। আমার নোট গোছানো নাই।
— তুই আর কথাই বলবি না। চুপ।

অনেকটা রেগেই বললাম। প্রিয়া চুপ হয়ে গেলো। নীলিমা, সজিব ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আমাকে দেখলো কিছুসময়। অতঃপর হঠাৎ করে তারা হাতের নোটের দিকে মনোনিবেশ করলো।অন্ধকার ভবিষ্যতে হারিকেন জ্বালানোর জন্য পড়া শুরু করলো। গুণগুণ করে। আমার বুকের ভেতর জ্বালাপোড়া অনুভূতি হচ্ছে। না পারছি পড়তে না পারছি গত রাতের পরিস্থিতি ভুলতে। এক অসহায় প্রহর কাটছে আমার।

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ১

জোর করে চোখ রাখলাম বইয়ের দিকে। খুবই বাজে অবস্থা। কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। স্বামী সেবায়, প্রেম সেবায়, সংসার সেবায়, ভ্রমণ সেবায় নিয়োজিত থাকার কারনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসগুলো মিস হয়েছে। ভাবনার মাঝে আড়চোখে প্রিয়ার দিকে তাকালাম। অনেকটা চিন্তামুক্ত সে। আমাদের সাবজেক্টটা হলো প্রাণীবিদ্যা। অঙ্কন তো ডাক্তার। নিশ্চয়ই পড়াগুলো ছেঁচে রস করে খাইয়ে দিয়েছে ওকে। আফসোস হচ্ছে, হয়তো আমার কমার্সে পড়া অতি জরুরি ছিলো নয়তো স্মরণের প্রাণিবিজ্ঞানের ওপড় পিএইচডি করা উচিত ছিলো।

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ৩