শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ গল্পের লিংক || আলিশা

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ১
আলিশা

প্রিয় একটা প্রহর কাটলো সিলেটের চা বাগানকে সাক্ষী রেখে। এই প্রিয় প্রহরটা যেন ছিলো আমার জীবনের প্রিয় বেলার সূচনা। এরপর হতে প্রতিটি দিনই আমার প্রিয় হলো। প্রতিদিন পেলাম কিছু প্রিয় বেলা। তিনদিন ঘোরাঘুরি করে ফিরে এলাম চট্টগ্রামে। নতুন করে স্বাদ পেলাম সংসারের। পুনরায় গুছিয়ে উঠলো আমার জীবন। স্কুলের চাকরিটা ছেড়ে দিলাম। পড়ালেখায় মন বসালাম স্মরণের শাসনে। তার মুখে একটা বাক্যই লেগে গেলো

— না পড়লে চলবে না। আমার জীবন প্রতিদিন সংকটে থাকে। নিজের একটা শক্তপোক্ত জায়গা তোমার লাগবে না?
মন খারাপ হয়। পড়তে ইচ্ছে করে না। মন শুধু সংসার সংসার করে তবুও পড়তে হয়। নিয়ম করে সকালে দুই ঘন্টা, দুপুরে একঘন্টা আর রাতে দুই, তিন ঘন্টা। আর যদি সে সামনে বসে তবে আমার পড়ার সময় হয়ে যায় চার পাঁচ ঘন্টা। এমন করে দিন কাটাতে আমি কিছুটা বিরক্ত ছিলাম। তবে ছোঁয়ার দিনগুলো ছিলো এক অনবদ্য। হৈ, চৈ আর আল্লাদে ভরপুর দিন যায় ওর। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো স্মরণ কে যখন ছোঁয়া বলে বসে

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— বাবা, তিনশো পঁয়ষট্টিটি দিনের পনেরো দিন চলে গেছে। আর তিনশো পঞ্চাশ দিন আছে। এইদিনগুলো চলে গেলেই আমার ভাই আসবে তাই না?
স্মরণের মুখটা তখন আমার দেখা সর্ববৃহৎ মজার জিনিস হয়ে ওঠে। মুখ টিপে হেঁসে লুটোপুটি খেতে খেতে উঠে পরি আমি ওদের পাশ থেকে। স্মমরণ ইয়া বড় চোখ করে। আমার মুখটা চুপসে যাওয়ার বিপরীতে বড্ড প্রফুল্ল হয়। গতকাল সন্ধ্যের সীমান্তে এমনই ঘটনা ঘটে গেছে।

আজ হঠাৎ স্মরণ প্রতিশোধ তুলতে হাজির হয়েছে আমার সামনে। সচরাচর এমন করে প্রতিশোধ নিতে আসে না সে। হঠাৎ কালেভদ্রে আসে। দুপুরের রোদের তেজে পুড়ে ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরেছি। যদিও জাহিন গিয়েছিল গাড়ি নিয়ে তবে আজ নাকচ করে দেই। নীলিমার সাথে রিকশায় বসে চলে আসি। এখন যখন আমি সদ্য গোসল করে মাথায় ভেজা তোয়ালে পেঁচিয়ে বেরিয়েছি ওয়াশরুম থেকে তখনই স্মরণের আগমন। চোখ জোরা কুঁচকে গেলো আমার। আরো গাড় ভাজ পরলো কপালে ছোঁয়ার ফিক করে হেঁসে দেওয়া দেখে। তাজা সতেজ প্রাণপ্রাপ্ত এই জলজ্যান্ত প্রাণী আমি গাছের মতো হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। স্মরণ একপা থেকে দুপা, তিনপা করে ক্রমেই ঘুচিয়ে ফেলছে তার আর আমার মাঝের দূরত্ব। মুখ হতে আমার কোনো কথা প্রকাশ পেলো না। শুধু সরু চোখে তাকিয়ে রইলাম স্মরণের দিকে।

— চোখ বন্ধ করো।
— আমি আর হাসবো না।
— আরে ভয় পাচ্ছো কেন। কিচ্ছু করবো না।
— এর আগের বারও বলেছিলেন কিছু করবেন না কিন্তু আমি গোসল করে আসার পর মাথায় ডিম ভেঙে দিয়েছিলেন। আটা ফেলেছিলেন।

স্মরণ হাসালো মৃদু শব্দে। আমি ভয়ে জড়সড় হয়ে পরছি। তার ইউনিক প্রতিশোধ হজম করার মতো হয় না। কিছু না ভেবে দু’পা পিছিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম আমি। যেই না এক কদম ফেলতে যাবো আচমকা তখনই স্মরণ ঝট করে কোলে তুলে নিলো আমাকে। হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম। ছোঁয়া হাত তালি দিয়ে উঠলো। আমার হাত শক্তি বিসর্জন দিলো অবলীলায়। মাথার তোয়ালে আলগোছে মাটিতে স্থান নিলো। লজ্জা এসে জেঁকে বসলো আমার মুখে। উশখুশ লাগছে, হৃদস্পন্দন থমকে যাওয়ার দশা। স্মরণ হাঁটা আরম্ভ করেছে ইতিমধ্যে। আমি কেবল বললাম

— আপনি ভালো আছেন তো?
তার স্পষ্ট জবাব
— না ভালো নেই। একটা নুনের বস্তা টানতে গিয়ে আমি ভয়াবহ রকমের খারাপ আছি।
নুনের বস্তা শব্দটা শুনেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলাম আমি। কিছু বলতে গেলেই আকস্মিক ভাবে স্মরণ তার গালটা চেপে ধরলো আমার মুখে। কথা বলা বন্ধ হলো। কেঁপে উঠলাম ভয়ঙ্কর ভাবে। ছোঁয়া নেই তো পাশে?
— ছোঁয়া নেই। ও আগেই গন্তব্যে চলে গেছে। আর তুমি একটু চুপ থাকো এখন কেমন?
প্রায় দশ মিনিট পর পোঁছালাম একটা ঘরে। ফুলের সুবাস নাকে এসে ধাক্কা দিলো। স্মরণ কোল থেকে নামিয়ে দাড় করালো আমাকে একটা টেবিলের সামনে। তিন পাউন্ডের একটা সাদা কালো কেক ফ্যালফ্যাল করে যেন তাকিয়ে দেখছে আমাকে। আমিও স্তব্ধ হয়ে দেখছি।

— হ্যাপি বার্থডে মাআআআ
চমকে উঠলাম। ছোঁয়া দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই কানের কাছে আরো একটা কন্ঠ শোনা হলো
— হ্যাপি বার্থডে মাই ডেয়ার বোবা রাণী, ভিতু কুমারী আর নাকের ডগায় রাগ রাখা পত্নী।
আমি ছলছল চোখ নিয়ে হেসে উঠলাম। অনেকটা অপ্রত্যাশিত ছিলো তাদের বাবা মেয়ের উইশ। জড়িয়ে আসা গলা নিয়ে ছোট করে থ্যাঙ্কস বলতে গিয়ে চুপ হয়ে যেতে হলো আমার। গলা ধরে এলো কান্নার দরুন। স্মরণ তখন পকেট থেকে একটা সোনার চেইন বের করে পরিয়ে দিতে ব্যাস্ত আমাকে। ছোঁয়া জড়িয়ে ধরে আমাকে আদর করতে ব্যাস্ত। আর আমি ব্যাস্ত চোখের পানি ফেলাতে। আজ সকালে নীলিমা, সজিব, শান্ত আর প্রিয়া যদিও উইশ করেছে আমাকে তবুও এই মুহূর্তটায় অন্য কোনো নতুনত্ব আছে।

শুধু একটা কেক আর গলার চেনেই স্মরণের উইশটা সীমাবদ্ধ রইলো না। সাথে সে একগুচ্ছ গোলাপ তুলে দিলো আমার হাতে। এই মুহূর্ত হয়ে উঠলো পৃথিবীর সবচাইতে বেশি আনন্দের মুহূর্ত। আমার পাশে ছোঁয়া দাড়িয়ে ছিলো। স্মরণ ভালোবাসার কথা বলেনি, কোনো কবিতা শোনায়নি আমাকে তবে এদের চাইতেও বড় ভালোলাগার একটা অভিব্যাক্তি সে প্রকাশ করেছে। ছোঁয়ার সামনে সে বলতে গিয়েছিল কোনো গভীর অনুভূতির কথা।

তবে তা বলার পূর্বেই মিটিমিটি হাসি। শেষ অব্দি সে পারেনি ছোঁয়ার সামনে কিছু বলতে। তার অস্পষ্ট হাসি দেখে আমি নিজের হাসি শিকোল মুক্ত করে দিয়ে ফিক করে হেসে উঠি। স্মরণও তখনও অনিচ্ছাকে ছাপিয়ে দিয়ে হেঁসে ওঠে। নীরব কথনে আমার হাতে গুঁজে দেয় গোলাপের গুচ্ছ। তারপর…. তারপর কাহিনি হঠাৎই পাল্টে গেলো। আচমকা কেক থেকে খানিকটা ক্রিম নিয়ে লাগিয়ে দিলো সে আমার নাকের ডগায়। এরপর আমার মাথায় আজও একটা ডিম ভেঙে কুসুম ফেলল। যেটা ভীষণ বাজে ব্যাপার আমার কাছে। অসহায় আর বিরক্তির চাহনি স্মরণ প্রসারিত এক হাসি দেখালো আমাকে। মুখে বলে দিলো

— এটা গতকালকের হাসির জন্য।
তার কথা শেষ হতেই আমিও আমার ডিমের কুসুমে সিক্ত মাথা তার গলায় বেশ ভালোভাবে ঘষে দিয়ে বললাম
— এটা আমার মাথায় ডিম ভাঙার জন্য।
স্মরণ ডিমের মাত্রাতিরিক্ত সুবাসে নাক মুখ কুঁচকে হুঙ্কার দিয়ে উঠলো
— খেয়াআআআআ

ওমন একটা হুংকার শুনে ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যাওয়া হৃদয় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। দুপুরের পর হতে আর তার সামনে যাওয়া হয়নি। কোথায় যেন বেরিয়ে গেলো চারটার নাগাদ। আমাকে ডেকেছিল তবুও যাইনি সামনে। সে ঘর ছাড়লে আমি ঘরে এসেছি। রাত এখন আটটা। সে আসেনি।

ছোঁয়ার সাথে খুনসুটি করে আজ পড়ালেখা গাঙ্গে ভাসিয়ে শুয়ে পরেছি। পুরোদস্তুর ঘুমের ঘোরে ছিলাম। হঠাৎ মনে হলো আমি শূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছি। উফ! বাই এনি চান্স আমার কি ডানা গজালো? মানে সত্যি? ভাবতে গিয়ে মনে হলো আরে ধুর! আমার প্রজাতি হলো মানুষ মানে আমি ম্যামালিয়া পর্বভুক্ত, অ্যাভিস না। এটা নিয়েই তো গতরাতে বিস্তারিত পড়েছি। সে যাই হোক, আমি স্বপ্নের জগতে আছি হয়তো। স্বপ্নে ডানা পেয়েছি।

( ২য় অংশ হিসেবে দেওয়া শুরু করলাম। দুই, তিন পাচ, পঞ্চাশ যে কোনো পর্বে সমাপ্ত হতে পারে)

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ২