শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ৯

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ৯
আলিশা

আমার জীবন হয়ে গেছে এখন বন্ধুকেন্দ্রিক, স্মরণ কেন্দ্রিক আর ছোঁয়া কেন্দ্রিক। এতোটা সুখ জুড়ে এসে আমার কোলে বসবে আমি সত্যিই কখনো কল্পনা করিনি। স্মরণের অন্যরকম ভালোবাসা গুলো। ছোঁয়া কে ঘিরে আমার অনুভূতি গুলো। মা মেয়ের খুনসুটির দুষ্টুমি। ইশ! এতো কেন সুখী হলাম আমি?

— মাআআআ, মাআআআ। তোমার কাছে একটা বিচার। দেখো ওপাশের ফুলগাছ থেকে ফুল গুণেছি… তারপর আমার ফুল হয়েছে আটটা। কিন্তু বাবা বলছে ছাদে নাকি দশটা ফুল আছে। তুমি একটু আসো তো। গুণে দেখো। আর দু’টো ফুল নাকি আশেপাশেই আছে। সেই ফুলগুলো নাকি আবার হাঁটা হাঁটিও করছে। কিন্তু আমি খুঁজে পাচ্ছি না তাদের।
শেষ বেলায় ছাদে এসে গালে হাত রেখে ভাবনায় ডুবেছিলাম। ছোঁয়ার বাক বাকুম রূপ কন্ঠে ভাবনা ছুটে গেলো। আহ্লাদ ভরা কন্ঠে বললাম

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— এটা বলল তোমার বাবা? কি আশ্চর্য! কই দেখি তো। তোমার বাবা মনে হয় অংকে কাঁচা। গুণতে পারে না।
ছোঁয়া মুখে হাত রেখে ফিক করে হেঁসে দিলো। আমার হাত টেনে সে নিয়ে গেলো স্মরণের নিকট। আমি বাগানের ফুলগুলো গণনা করলাম। অতঃপর স্মরণের দিকে ফিরে বললাম

— আর দু’টো ফুল কোথায়? আমরা তো দেখছি না?
— আর দু’টো ফুল আমার সামনে। ওই যে পিচ্চি ফুল। আর ওই যে আরেকটা বড় বোকা ফুল।
আমি ঈষৎ লজ্জা পেলাম। তবে ঝগড়ার অভিব্যাক্তি নিয়ে এক ঝাঁক কথা বললাম তাকে আমায় বোকা ফুল বলার মতো মিষ্টি অপরাধে। স্মরণ শুধু আজ শুনলো।

বাগানের গাছগুলোতে দৃষ্টি বুলিয়ে সে হঠাৎ তুলে নিলো দু’টো ফুল। অলকানন্দা ফুল। প্রথমে সে গুঁজে দিলো তা ছোঁয়ার কানে। অতঃপর আমার দিকে পা বাড়িরয়ে এসে তা গুঁজে দিলো আমার কানে হুট করেই। ছোঁয়ার অগোচরে। বড্ড ভালো লাগে তার এই জ্ঞান। মেয়ের সম্মুখে কখনো প্রেমানুভূতির মতো কোনো অনুভূতি সে ব্যাক্ত করে না। আমাদের উচিতও নয় এমটা। মেয়ের শিক্ষার ঘাটতি থাকবে। বেফাঁস আচরণ শিখে যাবে একদা।

— আজকের বিকেলটা সুন্দর তাই না?
আমি ছোট করে জবাব দিলাম স্মরণের কথার পিঠে
— হুম। কিছু ছবি তুলে দেবেন আমার আর ছোঁয়ার?
স্মরণ উদাস চিত্তে ঠোঁট প্রসারিত করে বলল
— পজিশন প্লিজ….

আমি গালভরা হাসি নিয়ে ছোঁয়াকে কোলে তুলে নিলাম। পশ্চিম আকাশ রক্তিম হয়েছে। মন দুলিয়ে দেওয়া মতো হাওয়া বইছে। ছোঁয়ার মাথার সাথে আপন মাথা ঠেস দিয়ে দু’জনেই গাল ভরে হাসার অভিব্যাক্তি দিলাম। স্মরণ নিজের ফোনে বন্দি করলো আমাদের প্রতিচ্ছবি। আরো কিছু অভিব্যাক্তি দিয়ে আরো কিছু ছবি তুললাম। সবশেষে ফোনে বন্দি করা হলো তিন সদস্যের এক সুখী পরিবার৷ যাদের জীবনটা পূর্বে ছিলো বিবর্ন। অতঃপর এমই শেষ বেলায় রঙ ছড়িয়ে হয়েছে এখন রঙিন। ছবি তোলার পালা শেষ হতে না হতেই আমরা জমাচ্ছিলাম বিদায় নেয়ার মনোভাব। ঠিক এমন সময় হঠাৎ পাশের ছাদ হতে এক দূরসম্পর্কের দেবর বলে উঠলো

— ছোঁয়া তোমাদের বা পাশটা ফাঁকা ফাঁকা। আর একটা কেউ হলে পারফেক্ট হবে।
আমি গলা খাঁকড়ি দিয়ে উঠলাম। স্মরণ হেঁসে উঠলো ছেলেটার কথায়। সে এপাশ হতে বলে উঠলো
— নিজের সংসারে মন দে ছোট ভাই….
আরো কিছু কথা তাদের মাঝে হবে হবে ভাব। আমি এমন সময় চলে এলাম সেখান থেকে। তবে কপাল চাপড়ে ছেলেটাকে অসংখ্য ধন্যবাদে ভাসিয়ে দেয়ার জোগাড়ও করলাম।

ঘরে ফিরে ফোন খামোখা ফোন হাতে নিয়েছিলাম। প্রিয়ার ম্যাসেজ জ্বলজ্বল করে। বার্তা পাঠিয়েছে নীলিমার বিয়ে। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো বিয়েটা আর করো সাথে নয়। আমাদের ভার্সিটির নব টিচার। তবে অন্য ডিপার্টমেন্টের। অবাক হলাম অনেক খানি। প্রিয়া আরো লিখেছে ম্যাসেজে, নীলিমা কান্নায় ভেঙে পরেছে। কারণ, পাত্র তার ভীষণ রকমের অপছন্দ।

চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা পরে। শ্যাম বর্ণের মানুষ। চশমা ছাড়া ইয়া বড় হাতিও সে ঝাপসা দেখে। ভীষণ রকমের আনরোমান্টিক তো বটেই। ভার্সিটির গেইটে দু একবার দেখা হয়েছে স্যারের সঙ্গে। মাটি বৈ অন্য দিকে তার দৃষ্টি যায় না। নীলিমার ধারণা ও বেচারা বই রেখে বউ কে বুঝবে না কখনো। সেখানে নীলিমা কে বুঝবে কিভাবে? তার এত উঁচু উঁচু রোমান্টিক আবদার গুলো পূরণ করবে কিভাবে?

নীলিমার জন্য মায়া হচ্ছে আমার। আজীবন গল্প উপন্যাসে ডুবে পানি খেয়েছে মেয়েটা। না, পানি না, সে খেয়েছে রোমান্টিক স্বপ্ন। তবে কপালে জুটতে চলেছে নিরামিষ এক মানুষ! মাহা দুঃখ ওর জন্য। ভাবনার মাঝেই হঠাৎ পরখ করে দেখি প্রিয়া ফোন করেছে। ফোন কেঁপে কেঁপে উঠছে। সময় বয়ায় না করে ফোনের কাঁপা কাপি নিরসন করতে রিসিভ করলাম প্রিয়ার ফোন। গদগদ কন্ঠ ভেসে এলো ওপাশ হতে

— খেয়া, ইশ! নীলিমার সংসারটা জোস হবে না? আমার হিংসা হচ্ছে দোস্ত? ভুল করেছি জীবনে। পাপ করেছি। একটা ভার্সিটির টিচার বিয়ে করা উচিত ছিলো আমার। এক্সাইটেড সংসার। সেই হতো….
প্রিয়ার আফসোসের সুর। এই সুরের মাঝে হঠাৎ আমি শুনতে পেলাম আরেকটা ধমকে দেয়ার সুর। প্রিয়া স্তব্ধ হলো। অঙ্কন যেন ওপাশ হতে বলছে

— এই!
এটুকুতেই তার টক মিষ্টির উচ্চবাক্য স্তব্ধ। সাথে সেও যেন স্তব্ধ প্রিয়ার কথাগুলো শুনে৷
“আমায় বিয়ে করে ভুল করেছো তুমি? ”
অঙ্কনের হতাশ, নিরাস, রাগী অভিব্যাক্তির সংমিশ্রণে বলা বাক্য। প্রিয়া ফোন না কেটেই অঙ্কনের উদ্দেশ্যে বলল
” ভুলই তো। কোথাও নিয়ে যায় না। ঘুরতে যাওয়ার নাম করে নিজের চেম্বারে বসিয়ে আমায় রুগী বানিয়ে রাখে। নয়তো টিকেট কাউন্ট করায়। আবার কখনো ডাক্তারি শেখায়। হুহ! কিপ্টা ক্লেভার ম্যান।”

” আর সেদিন যে পাঁচ ডালা হরেক রকমের ফুল কিনে দিলাম ওগুলো? আনহেল্দি ফুড খাওয়ালাম। রাস্তার পাশে দাড়িয়ে ফুচকা?”
” ফুচকা খাওয়ালেই কেউ রোমান্টিক হয়ে যায় না বুঝলেন? আর চেম্বারে বসিয়ে বউয়ের গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে দিয়ে বুকে ধরে বউকে ” ওগো তুমি কি শুনতে পারছো আমার ভালোবাসার সম্পন্দন? তোমার নাম জপের শব্দ? ” বললেই কেউ রোমান্টিক হয় না। ”

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ৮

আমি হাসি চেপে শুনলাম ওদের ঝগড়া শুনে গেলাম। তবে কি সময় হলো আমাদের সবার সংসারে আবদ্ধ হওয়ার? প্রাণের প্রিয় বন্ধুমহলের একেকটা মানুষ দূরে সরে আসছি ক্রমে ক্রমে যেন। নীলিমার বিয়ে! নতুন জীবন হবে। নতুন পৃথিবী হবে! প্রিয়ার না জানি কখন খবর আসে পুচকের মা হবে। থমকে যাবে মেয়েটা। স্তব্ধ হবে। কথার গতি, ধারা মনথর হবে। ইশ জীবন!

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ১০