শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ৮

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ৮
আলিশা

হাতে এক গুচ্ছ লাল গোলাপ। মাথায় গোলাপ, বেলি’র সন্ধিতে তৈরি হওয়া সুঘ্রাণ যুক্ত একটা ব্যান্ড। হাতে বেলি ফুলের গাজরা ঠাঁই পেলো। অতিরিক্ত করে এই জিনিস গুলোই আমি আলাদা করে নিলাম ছোঁয়ার জন্য। পথে গল্প হলো স্মরণের সাথে। হাঁটতে হাঁটতে দেখা হলো অথৈয়ের সাথে। নাহ! চমকানোর মতো কিছু নয়। এই দেখাটা এক পাক্ষিক। চোখের দেখা। ঝাপসা দেখা। দূর থেকে শুধুই মাটির ঘরটা দেখা।

আনন্দ ঘন প্রহর কাটিয়ে বাসায় ফেরার পথে কবরস্থানের পাশ দিয়ে আসা হচ্ছিলো। স্মরণ থমকে গিয়েছিল ভেতরে ভেতরে। হুটহাট এলোমেলো হলো। আমার নজর ফাঁকি দিতে সে ব্যাস্ত হয়ে ধরতে চাইলো এলোমেলো গল্প। যেন সে বুঝে ওঠতে পারেনি তার কি প্রতিক্রিয়া দেওয়া উচিত আমার সামনে। ছটফট করা মন নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে গিয়ে একবার অথৈয়ের সাথে দেখা করা উচিত? নাকি আমি ভেবে বসবো কিছু অলক্ষুণে ভাবনা এটা মনে রেখে তার আমার সাথে তার পথ চলা উচিত?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বড্ড মায়া হলো। তার হাতটা আমি খপ করে ধরে হাঁটার গতি রোধ করে দিলাম। সে থমকে দাড়িয়ে থতমত ভাব নিয়ে চাইলো আমার পানে।
— দেখা করে আসবেন না? আমি কিন্তু অভিযোগ নিতে রাজি নই।
স্মরণ নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। যেন মনে হলো তার শক্ত হৃদয় ব্যাথাতুর হচ্ছে। রয়ে সয়ে চোখ ছলছল করে উঠতে চাইছে। বুকে ঘর বেঁধেছে চিনচিন ব্যাথা। আমি স্বাভাবিক করতে চাইলাম তাকে। গোমড়া ভাব টেনে মুখে বসিয়ে দিয়ে অথৈয়ের ছোট ঘরের পানে দৃষ্টি রেখে বললাম

— এই যে শুনছো? আমি কিন্তু দোষ মুক্ত। সে যাচ্ছে না। আমি কিন্তু আঁটকে রাখিনি। দোষ দিবা না আমায়।
স্মরণ আমার কথার ধাঁচে এবার হালকা শব্দে হেঁসে উঠলো।
— এতো সহজ করে বলছো তোমার হিংসে হয় না অথৈ কে?
হঠাৎ তার বলা কথা। আমি তার হাতটা ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে বললাম

— এটা আপনাকে কেন বলবো? এটা আমাদের দু সতীনের বিষয়। আপনি এবার যান। অথৈ আমাকে বকাঝকা করবে।
স্মরণ আরেক দফা হাসলো। শব্দহীন হাসি। প্রথমেই চলে গেলো সে অযুর উদ্দেশ্যে পাশের মাদরাসার ওযু খানায়। আমি দাড়িয়ে রইলাম। অপলক তাকিয়ে পরখ করলাম তাকে। মনে জায়গা দিলাম ভাবনার। এই মানুষটা অথৈ কে প্রচন্ড ভালোবাসে। এ নিয়ে আমি কি ঈর্ষা, হিংসা করি? হয়তোবা। আবার হয়তো না। অথৈয়ের সাজানো সংসারে আমি হুট করে প্রায় উড়ে এসে জুড়ে বসেছি। গুছিয়ে দিয়ে যাওয়া ঘর-মানুষ গুলোকে আমার করে নিয়েছি আমি। ঈর্ষা মাটির ঘরে বসে অথৈয়ের করা উচিত। আমি কোনো একদিন স্মরণ কে শুধিয়েছিলাম।

— আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় আপনি কাকে বেশি ভালোবাসেন? প্রথম ওয়াইফ কে নাকি দ্বিতীয় ওয়াইফ কে?
— তুমি কাকে বেশি ভালোবাসো, তোমার ডান চোখ কে? নাকি বাম চোখকে?
থতমত খেয়ে জবাব দিয়েছিলাম

— আমার ডান চোখ যা আমার বাম চোখও তো তাই। এদের আবার তুলনা হয় নাকি?
— আমার কাছে অথৈ যা খেয়াও তাই। এদের মাঝে আর কোনো তুলনা আমি রাখতে পারি না।
— কিন্তু আমি শুনেছি বুকের বা পাশে একজন কে জায়গা দেওয়া যায়।
— আমি জেনেছি জীবনে দ্বিতীয় বার ভিন্ন ভাবে ভালোবাসা যায়। তাই আমার বুকের বাঁ পাশে একজনের জায়গায় দু’জন কে হিজিবিজি করে রেখে দিয়েছি।
— ঝগড়া লাগে না?

— উঁহু! ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন আমার বউগুলো তোমার মতো ঝগড়াটে না। বড় বউ বসন্তকাল আর ছোট বউ বর্ষাকাল আমার পছন্দের দুটো ঋতুর মতোই তারা। একজন শুধুই রঙ ছড়িয়ে রঙিন রূপে মেতে উঠতে জানতো আমাকে নিয়ে। আরেকজন হঠাৎ হঠাৎ মেঘের মতো গর্জে উঠে আমাকে ভয় দেখায়। মেঘলা আকাশের মতো অভিমান তার। মুষল ধারে বৃষ্টির মতো অভিযোগ তার। আবার বিনা নোটিশে ভয়ঙ্কর ঝড় তার। “ভালোবাসেন না আমাকে, প্রয়োজন হয়ে থাকবো না আমি” র মতো ঝড়ে লন্ডভন্ড করে দেয় সে আমাকে।

— খেয়া, বৃষ্টি পরছে তো, বাসায় যাবে না?
ভাবনার মাঝে কানে বাজলো স্মরণের কন্ঠ। ঈষৎ চমকে পাশ ফিরে চেয়ে দেখি সে গম্ভীর, শক্ত মুখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তাকে একটু আগেই যেন দেখেছিলাম দু-হাত তুলে বিরবির করতে অথৈয়ের কবরের পাশে।
— এই, বৃষ্টি পরছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। জ্বর বাধাবা নাকি তুমি? হারি আপ?

এক হাতে হেঁচকা টেনে আমায় নিয়ে পথ চলতে শুরু করলো স্মরণ। কতটা স্বাভাবিক তার আচরণ। এমনই সে। বুকের ভেতর সাইক্লোন সাতদিন ধরে চলমান থাকলেও সে কেন যেন তার প্রভাব আমার ওপর ফেলে না। অথৈয়ের বিষয়টা আরো যেন ধামাচাপা দিতে চায় সে। এই অংশের দুঃখ গুলো সে আমায় না দেখাতে চায় চায় আর না এর ভাগ আমায় দিতে চায়।
চলতি পথে ভাবনার জাল বোনার কালে উপলব্ধি হলো স্মরণ তার ছোট রুমাল বের করে আমার মাথায় ধরে রেখেছে।

বড় বড় ফোঁটার বৃষ্টির অস্তিত্ব পুরো রাস্তা জুড়ে। আমি ভয়, সংকোচ, লজ্জা যেন বৃষ্টির সাথে ঝড়ে দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম স্মরণের পানে। স্মরণও হঠাৎ দৃষ্টি ফেরালো আমার দিকে। ভ্রু উঁচিয়ে জানতে চাইলো আমার তাকিয়ে থাকার কারণ? আমি মুচকি হেঁসে মাথা নাড়িয়ে শব্দহীন ভাবে জানালাম কিছু না। অতঃপর শাড়ির আঁচল হাতের বাহুতে ছড়িয়ে নিয়ে ছাউনির ন্যায় বানিয়ে তার মাথা আড়াল করলাম বৃষ্টি থেকে।

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ৭

সে অবাক হলো। ঝুম বৃষ্টির মাঝে আমি আর সে। ছোটাছুটি করা কিছু মানুষের ভীরে একে অপরের দিকে পলকহীন তাকিয়ে আছি। সময়টা এতো সুন্দর হলো কেন? আর সে-ই বা এতো ভালো কেন? অন্যরকম ভালো। ভিন্নরকম তার ভালোবাসাগুলো।

শেষ বিকেলে তুমি আমি সিজন ২ পর্ব ৯