সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৩

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৩
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

দুইদিন পরে আজ চোখ খুলেছে ফায়জা।তার পাশেই ফারহান বেগম আর সায়েবা বসে।সোফায় গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে ফারহান।লম্বা শরীর টা সোফায় না আটার দরুন অয়া গুলো বাইরে বেরিয়ে আছে। চোখে প্রচন্ড জ্বালা হচ্ছে। কয়েক বার চোখ পিটপিট করতেই ফারহানা বেগম ফায়জার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
— কষ্ট হচ্ছে আম্মু?কোথায় কষ্ট হচ্ছে আমাকে বলো?

ফায়জা কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে আবার খুললো।ফারহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে ইশারায় আস্বস্ত করলো সে ঠিক আছে। সবাই কে পর্যবেক্ষণ করে তার আফসোস হলো এমন একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। তার জন্য সবাই কতটা কষ্ট পেয়েছে সবার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস গোপন করে চারিদিকে চোখ ঘুরালো।কাঙ্ক্ষিত মানুষ টা কে না দেখে তপ্ত শ্বাস ফেললো। ভালোই হয়েছে সে এখানে নেই।সে নিজেও চায় না আদিব আর তার সামনে আসুক।
সায়েবা আর ফারহানা বেগম মিলে ফায়জা কে ফ্রেশ করতে নিয়ে গেলো। দুই দিনে অনেকটা দুর্বল হয়ে গেছে সে।এখন কিছু খাইয়ে মেডিসিন নিতে হবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ফারহান এতক্ষণ ঘুমের ভান ধরে সায়েবা কে লক্ষ্য করছিলো। কাল থেকে বেলুনের মতো মুখ ফুলিয়ে রেখেছে মেয়েটা।যেখানে রাগ তার করার কথা সেখানে মহারানী নিজেই অজ্ঞাত কারণে রাগ করে বসে আছে। ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে বারবার। ফায়জা কে কোন প্রশ্ন করতে নিষেধ করেছে ফারহান।সবাই এখন সবটা জানে।ফারহান চায় না ফায়জা কে এসব কথা তুলে আরো বিব্রত করা হোক।তবে সে রেগে আছে ফায়জার উপর। এতো বড় একটা স্টেপ নেয়ার আগে একবার ও তাদের কথা ভাবলো না! একবার ভাইদের সাথে কি আলোচনা করা যেতো না? তাদের বললে ওই মুহূর্তে সবাইকে নিজেদের জায়গা দেখিয়ে দিতো তারা।মানুষের কথা বড় হলো? ফায়জার কিছু হলে ওদের কি হতো একবার ভেবে দেখেছে?উল্টো হয়ে আবার শুয়ে পরলো ফারহান।সে এখানেই থাকবে। কিন্তু কথা বলবে না ফায়জার সাথে। আর ধুলোর রানী কে ও সে দেখে নিবে।শুধু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষা। পৃথিবীতে তার বউ কেই কেন এমন বেয়াদব হতে হলো! এই যে সে কাল থেকে এখনো সায়েবার সাথে একবার ও কথা বলে নি সে খেয়াল আছে তার? তাকে পাত্তাই দিচ্ছে না! এই দিন ও দেখার ছিলো! নাহ,এর একটা হেস্তনেস্ত করতে হবে। তাকে পাত্তা না দেয়া চলবে না। হোক সেটা হসপিটাল। তবুও তাকে ফারহানের দিকে প্রেম প্রেম নজরে তাকাতে হবে। আহ্লাদ করে রাগ ভাঙ্গাতে হবে। একটা মাত্র স্বামী তার।একটু আহ্লাদীপনা করলে তো আর ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে না।
ফারহান নিজের মাথা টা দুই দিকে ঝাড়া দিয়ে আবার ঘুমানোতে মনোযোগ দিলো। ঘুম থেকে উঠে এই মেয়ে কে এক হাত দেখে নেয়া যাবে।

–এমন চিংড়ি মাছের মতো ফালাফালি করছিস কেন? (ভ্রু কুচকে)
ঘুমানোর প্ল্যান বাদ দিয়ে এবার তড়াক করে উঠে বসলো ফারহান। ফরহাদ এখনো তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। ফরহাদের দৃষ্টিকে সম্পুর্ন উপেক্ষা করে আড়মোড়া ভাঙ্গলো সে।ফরহাদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— খাবার নিয়ে এসেছো?
— হুম।
— আপুকে ফ্রেশ হতে নিয়ে গেছে।আপুর কয়েক সেট কাপড় আনার ব্যবস্থা করো।আমি সুমি কে কল করে দিয়েছি।ও সব গুছিয়ে রাখবে।(গম্ভীর গলায়)
কপালের ভাজ গাঢ় হলো ফরহাদের।এখানে এতো কাপড় আনার কি দরকার? ফায়জা কে তো এখন বাসায় ই নিয়ে জেতে পারবে।ভাইয়ের মনের কথা হয়তো বুঝতে পারলো ফারহান।তাই আবার বললো,
— আপু কে কয়েকদিন এখানেই থাকতে হবে। হাতের ক্ষত খুব গভীর। কয়েকদিন ডাক্তারের পর্যবেক্ষনে রাখবো। বাড়িতে সেটা সম্ভব নয়।

ফারহানের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর শব্দ করলো ফরহাদ। ছেলেটা সব সময় সিরিয়াস মুখ করে থাকে।একদিন এই গম্ভীর মুখের ভার সইতে না পেরে সায়েবা দেশান্তরি হবে নিশ্চিত।
— বুঝেছি।আম্মু মামির সাথে খুবই রাফ ব্যবহার করেছে ফারহান। মানছি মামি ভুল করেছে,,,
ফরহাদ কে থামিয়ে দিলো ফারহান, শক্ত গলায় বললো,
— ভুল নয় ভাই।অন্যায় করেছে সে।তার জন্য আমরা আজ আমাদের একমাত্র বোন কে হারাতে বসেছিলাম।এই টুকু তার প্রাপ্য।
— এখানে আদিবের দোষ কোথায়? ওকে কেন এখানে আসতে দিচ্ছিস না?ছেলেটা দুইদিন ধরে ছটফট করে যাচ্ছে।
— আদিব ই এখানে একমাত্র দোষী ভাই।ছেলের ভালোবাসায় ই মা এসে আমার বোন কে কটু কথা শুনিয়েছে।আর ডাক্তার কে টাকা দিয়ে ভাগানোর কি দরকার ছিল? এর চেয়ে ওদের সত্যি টা সবার সামনে আনলে আপু কে মিথ্যা অপবাদ পেতে হতো না। মাথামোটা একটা।
ফারহানের দাত কিড়মিড় করে বলা কথা শুনে শুকনো ঢোক গিললো ফরহাদ। এখানে তার ও হাত আছে। এটা জানলে তাকেও ধুয়ে দিবে ফারহান। এই কেবিনে প্রবেশ করা তার ও বন্ধ হতে পারে। তাই সব চেপে গিয়ে খাবার বের করায় মনোযোগ দিলো সে।

উস্কখুস্ক চুলে মলিন চেহারা নিয়ে বারান্দার বেঞ্চে বসে আছে আদিব।আজ দুই দিন তার খাওয়া ঘুম লাটে উঠেছে।খাওয়ার রুচি নেই একদম ই।একটা জিনিস সে খুব করে অনুধাবন করেছে এই দু’দিনে।প্রেমিকা হাত কে*টে ম’রার প্ল্যান করে বেচে গেলেও প্রেমিক সেই শো’কে না খেয়ে ম’রবে নিশ্চিত। এই যে সে হাসপাতালের করিডরে লইট্যা মাছের মতো শুকিয়ে যাচ্ছে তাতে কি কারোর দয়া হচ্ছে? উল্টো প্রানের বন্ধুটাও ভিলেন ভাইয়ের রোল প্লে করছে।দোস্ত দোস্ত না রাহা!সব বেঈমান।
— বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন ভাইয়া।আপনাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
নীতির কথায় চোখ খুললো আদিব।সাবা আর নীতি এখনো হলে ফিরে যায় নি।ফারহানদের বাসা থেকেই এসেছে দেখে বোঝা যাচ্ছে। হাতে একটা কাপড়ের ব্যাগ। নিশ্চিত ফায়জার কাপড়।
— আমি ঠিক আছি।

আদিবের মলিন কন্ঠ শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো নীতির।দু দিনেই চোখের নিচে কালি পরে গেছে।পরনের শার্ট টা ও কুচকে আছে।
— আপুর সাথে দেখা হয়েছে??আপু এখন জেগে আছে। আপনি চলুন না,একবার দেখে আসবেন।
নীতির করুন স্বর শুনে মলিন হাসলো আদিব। মেয়ে টা তাকে নিয়ে টেনশন করছে।অথচ যাদের করার কথা তাদের কোন হেলদোল নেই।
— আমার একটা কাজ করে দিবে নীতি?
— জ্বি বলুন না ভাইয়া।অবশ্যই করে দিবো।

ফায়জা কে খাইয়ে ফারহানের জন্য ও খাবার বাড়লো সায়েবা।ফারহান তার দিকেই তাকিয়ে। এভাবে তাকিয়ে থাকার কি হলো? সে কি নায়িকা হয়েছে নাকি?যাকে বিয়ে করবে তার দিকে গিয়ে কেন তাকিয়ে থাকছে না!
ফারহানের সামনে খাবার রেখে আবার গিয়ে ফায়জার কাছে বসে পরলো সায়েবা।থাকুক তাকিয়ে।তাতে তার কি?হুহ।অসভ্য স্বামী। ফায়জা জহুরি নজরে ওদের পর্যবেক্ষণ করছে তখন থেকে। মান অভিমানের পালা চলছে তা খুব বোঝা যাচ্ছে। ফারহান তার দিকে তাকাচ্ছে ও না। কয়েক বার কথা বলার চেষ্টা করেছে সে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। হতাশার নিশ্বাস ফেললো ফায়জা।ফারহান এখনো তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে সায়েবার দিকে।
— আমি অসুস্থ ভাই।বউ কে রেখে একবার আমার দিকেও তাকা!
ফায়জার খোচা বুঝতে পেরে ও চুপ রইলো ফারহান। ফায়জা তাকে কথা বলানোর জন্য এভাবে কথা বলছে তা ভালো করেই জানে সে।তাই কিছু বলছে না। এদিকে সায়েবা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। ভাগ্য ভালো ফারহানা বেগম এখানে নেই।না হলে আরো বেশি লজ্জায় পরতে হতো।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩২

— কথা বলবি না ভাই,?
ফায়জা করুন গলায় বলতেই ফারহান চট করে দাঁড়িয়ে গেলো। কাওকে কিছু বলতে না দিয়ে ই কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। ফায়জা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে ফারহানের যাওয়ার দিকে।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৪