সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩২

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩২
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে আয়েশি ভঙ্গিতে বসে আছে ফারহান।চেহারা দেখে মনে হচ্ছে সে খুবই বিরক্ত। ফায়জা কে কেবিনে সিফট করা হয়েছে। এখন কিছুটা ভালো আছে সে।ফরহাদ বাসায় চলে গেছে শাহানা বেগম আর লিজা কে নিয়ে। আফরিন বেগমে আর ফরিদ সাহেব ও চলে গেছে বাসায়।লিজার অবস্থা খুব একটা ভালো না।শেষ মুহুর্তে গিয়ে ফরহাদ আদিব কে ছাড়িয়ে নিয়েছে।নাহলে এতক্ষণে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেয়া হয়ে যেতো। ফরহাদের এই কাজে ফারহান খুব বিরক্ত।তার হিসেব মতো এই মেয়েকে সময় নিয়ে কিস্তিতে কিস্তিতে গলা টেপা উচিত। আর আদিব তা করতে অসফল হয়েছে। সাবা আর নীতির ও এ নিয়ে দুঃখের শেষ নেই।দুজনেই একটু পর পর হা হুতাশ করছে।এতক্ষণ রেগে থাকলেও এখন অসহায় হয়ে বসে আছে আদিব।ফারহান কোন ভাবেই তাকে ফায়জার কাছে যেতে দিচ্ছে না। সায়েবা আর ফারহানা বেগম আছে ফায়জার কাছে।অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারনে তার জ্ঞান ফিরতে একটু সময় লাগবে।

— আর কতক্ষন এভাবে বসে থাকবো? এবার যেতে দে ভাই! একবার দেখেই চলে আসবো।
আদিবের অসহায় গলা শুনেও কোন হেলদোল হলো না ফারহানের। সে এখনো আয়েশি ভঙ্গিতে পা নাড়িয়ে যাচ্ছে। আদিবের অবস্থা কেদে দেয়ার মতো। সাবার একটু কষ্ট হলো আদিব কে দেখে। সে ফারহান কে অনুরোধের ভঙ্গিতে বললো,
— যেতে দিন না দুলাভাই। বেচারা কষ্ট পাচ্ছে! আপনি চিন্তা করবেন না, দেশে এখন অনেক উন্নত চিকিৎসা আছে। আর, আর তা না পেলে আদিব ভাইয়াকে আমরা কলিকাতা হারবাল খাওয়াবো।
কলিকাতা হারবালের কথা শুনে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো সবাই। আদিব আর্তনাদ করে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— অস্তাগফিরুল্লাহ!
নীতি কপাল চাপেরে বললো,
— গাধী,কোথায় কি বলতে হয় আর কবে শিখবি তুই?
সাবা প্রতিবাদের সুরে বললো,
— একদম গাধী বলবি না। আমি শুনেছি,দুলাভাই বলেছে দুর্বল পুরুষের কাছে বোন বিয়ে দিবে না। সামান্য দুর্বলতার জন্য এমন তুখোড় প্রেমিক হেরে যাবে তা আমি কখনোই মেনে নিবো না। দরকার হলে আদিব ভাইয়াকে কাদের কাকুর মতো সিঙ্গাপুর পাঠাবো।(দৃঢ় গলায়)
— এই কাদের কাকু কে?(ভ্রু কুচকে)
— সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। (নির্লিপ্ত গলায়)
— সে দুর্বলতার জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েছিল?,(অবাক হয়ে)
— না।
— তাহলে?
— আরে ধুর, সিঙ্গাপুর নামে একটা ওয়েট আছে।গেলেই সব দুর্বলতা চলে যাবে।

সাবার কথা শুনে তিন জনেই হতাশার নিশ্বাস ফেললো। আদিব তো পারলে ফারহান কে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে।ফারহান তা মোটেও পাত্তা দিচ্ছে না। সে গভীর ভাবে চিন্তিত। সায়েবার সাথে একটা বোঝাপড়া করতে হবে। বাসর রাতে আদর করে করে বুঝিয়েছে তার কাছ থেকে কিছু না লুকাতে। আর এই মেয়ে এতো বড় কথা লুকিয়ে গেলো! মেয়েটা তার কথা সিরিয়াসলি নেয় নি?কি বেয়াদব!

লিজার গলা লাল হয়ে ফুলে আছে।ব্যাথায় ঠিক ভাবে কথা বলতে পারছে না। তার এই অবস্থা দেখেও তাকে ডাক্তার দেখায় নি কেউ।তার মা ও একবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায় নি। কিছুক্ষণ পরেই বাসায় চলে যাবে তারা।এতো কিছুর পরে এখানে থাকার মুখ নেই।শাহানা বেগম পরিস্কার খরখরে গলায় বলে গিয়েছে সব কিছু প্যাক করে নিতে। একটু পরেই বেরুবে তারা।ভাই আর ভাবির সামনে দাড়ানোর মুখ নেই।এখন এখান থেকে যেতে পারলেই বাচে।
রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে লিজা।সব কিছু হয়েছে এই সায়েবার জন্য। ও যদি ফারহানের জীবনে না আসতো তাহলে এমন কিছুই হতো না। আজ ফারহানের বউ সে হতো। ফারহানের দেয়া ভালোবাসার চিহ্ন তার গায়ে থাকতো। সব কিছু এই মেয়েটা কেড়ে নিয়েছে তার থেকে।আজ এতো অপমান তার জন্যই হতে হলো। এর শোধ সে নিবে।ভয়ংকর ভাবে নিবে।সব কটার জীবন থেকে সুখ কেড়ে না নিয়ে শান্তি নেই তার।

সানোয়ার সাহেবের প্রেসার আবার বেড়ে গিয়েছে।মেয়ের এই অবস্থার কথা শুনে নাইট সুট পরেই হাসপাতালে ছুটে এসেছে সে।রাতে প্রেসারের ঔষধ নেয়ার দরুন ঘুম ভাঙেনি তার।তাই কিছুই জানে না সে।সকালে উঠে সব শুনতেই দিকবিদিকশুন্য হয়ে গেছে সে।হাসপাতালে আসার পর থেকেই ঘেমে যাচ্ছে কুলকুল করে। সায়েবা এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দিয়ে তাকে শান্ত হতে বলছে বারবার। কে শুনে কার কথা। সে ফায়জা কে দেখার জন্য আকুতি মিনতি করছে।ফায়জা কে দেখে এসে মাত্রই এখানে বসেছে সে।তবুও আবার বাচ্চাদের মতো জেদ করছে। দুর্বলতা দরুন ফায়জার জ্ঞান ফেরার পর পর তাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়েছে। তাই কাউকে কেবিনে থাকতে দেয়া হয় নি। কিন্তু সানোয়ার সাহেব কে তা কে বোঝাবে?বুঝদার মানুষ যখন অবুঝের মতো ব্যবহার করে তখন তাকে বোঝানো দায়।

হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করলো ফারহান। সানোয়ার সাহেব তাকে দেখে অস্থির হয়ে বললো,
— তুমি এসেছো আব্বু।দেখো আমাকে ফায়জার কাছে যেতে দিচ্ছে না! আমি কি ওকে ডিস্টার্ব করবো বলো?আমি চুপচাপ বসে থাকবো। আমাকে আমার মেয়ের কাছে নিয়ে যাও বাবা।
শেষের কথা গুলো বলার সময় গলা ধরে এলো তার।বাবার আকুলতা বুঝতে পারছে ফারহান। সানোয়ার সাহেবের কাছে গিয়ে তার পায়ের কাছে বসলো ফারহান। ব্যাগ থেকে নতুন এক জোড়া জুতা বের করে পড়িয়ে দিতে দিতে বললো,
— তুমি খালি পায়ে চলে এসেছ আব্বু।ইসস,কয়েক জায়গায় ছুলে গেছে।তারপর চিৎকার করে নার্স কে ডেকে অ্যান্টিসেপটিক মলম আনতে বলে সানোয়ার সাহেব কে আস্বস্ত করে বললো, আপু ঠিক আছে আব্বু।আমরা সবাই আছি তো আপুর পাশে।এখন আপুর চিন্তা করতে করতে যদি তুমিও অসুস্থ হয়ে যাও তাহলে আমাদের সামলাবে কে?তুমি তো আমাদের একমাত্র ছায়াতল। তোমাকে এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলে?শান্ত হও।আম্মু আসবে এখন। আম্মুকে সামলে নিও।আপুর কিছু হবে না। বিকেলে আপুকে বাসায় নিয়ে যাবো।নিজেকে সামলাও।

ফারহানের কথার মাঝেই নার্স মলম নিয়ে এলো। ফারহান যত্ন সহকারে সানোয়ার সাহেবের পায়ে তা লাগিয়ে দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো। এতক্ষণ এক কোণে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো সায়েবা।কাল রাত থেকে ফারহান তার সাথে একটা কথা ও বলে নি। একবার তাকিয়ে ও দেখেনি তার দিকে। ফারহান খুব রেগে আছে বুঝতে পারছে সে।কিন্তু সে ই বা কি করতো! বলার পরিস্থিতি কি আদেও ছিলো? সব কিছু জানার পর কি একটা বিশ্রী পরিস্থিতি তৈরি হলো। এজন্যই তো সে কিছু বলতে চায় নি। এখন সব রাগ তাকে দেখানো হচ্ছে। সায়েবার চোখ গুলো ছলছল করে উঠলো।এই পাষাণ মানুষটা কি জানে না, সে রাগ করে থাকলে সায়েবার দুনিয়া এলোমেলো হয়ে যায়! এই যে এখন তার বুকে চিন চিন ব্যথা হচ্ছে সেই খবর কি এই লোক রাখে? নিষ্ঠুর স্বামী!
কেবিনের বাইরে করিডরে এসে দাড়াতেই সাবা গম্ভীর মুখে এসে দাড়ালো সায়েবার পাশে।দুঃখী দুঃখী চেহারা করে বললো,
— তোর তো জামাই হাত ছাড়া হয়ে গেলো বান্দুপি। শুনলাম দুলাভাই আবার বিয়ে করবে।আদিব ভাইয়াকে বলতে শুনলাম।তাদের বিয়ের সাথে নিজের বিয়ে টাও এবার সেরে ফেলবে।থাক, তুই কষ্ট নিস না। আবার না হয় আমাদের মতো সিঙ্গেল হয়ে যাবি।এতে দুঃখে মরে যাওয়া টাইপ কিছু হয় নি।তুই একদম দুঃখ পাবি না। বুঝলি?

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩১

সায়েবা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে সাবার দিকে।সাবার কথা গুলো তার মাথায় বজ্রপাতের মতো আঘাত করেছে।আর এ মেয়ে বলছে তুই একদম দুঃখ করবি না! আর ফারহান আবার বিয়ে করবে মানে! তাহলে তার কি হবে?
(সায়েবার কি হবে?????।সাবার জন্য দু’লাইন বলে যান।)

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৩

1 COMMENT

Comments are closed.