সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৪

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৪
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

ফায়জার মুখোমুখি বসে আছে আদিব। নীতি কে আর সাহায্য করতে হয় নি।ফায়জা নিজেই আদিবের সাথে দেখা করতে চেয়েছে।ফারহান একটু অসন্তুষ্ট হলেও সায় দিয়েছে। মুহুর্তেই সায়েবা কে নিয়ে কেবিন ফাকা করে চলে গিয়েছে।এখন কেবিনে শুধু আদিব আর ফায়জা।আসার পর থেকে আদিব একবার ও ফায়জার দিকে তাকায়নি।তখন থেকেই মাথা নিচু করে বসে আছে। আদিবের অবস্থা বুঝে ফায়জা ই প্রথমে মুখ খুললো,

— তোমাকে বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে। আমি জানি তোমার এই বিদ্ধস্ত রুপ শুধু আমার জন্য। সে হিসেবে দেখতে গেলে আমি খুব ভাগ্যবান। কিন্তু আমার এমন ভাগ্য চাই না আদিব।তুমি ভালো ছেলে। তোমার ভবিষ্যৎ ব্রাইট। আমরা দুজন দু মেরুর বাসিন্দা।যেমন হয় নদীর দুটি পাড়।নদীর পানি তাদের এক করলেও তারা কখনো একসাথে পথ চলতে পারে না। বলতে বাধা নেই যে আমি ও তোমাকে ভালোবাসি।আমাদের ভালোবাসা আমাদের এক করলেও আমরা কখনো একসাথে পথ চলতে পারবো না। ভালোবাসি বলেই পুরো জীবন একসাথে কাটাতে হবে এমন কোন কথা নেই।দূরত্ব নিশ্চয়ই ভালোবাসা মলিন করে দিবে না। বরং তা আরো প্রখর করবে। ভুল তো হয়েছে,ভালোবেসে এই সমাজের কাছে অপরাধী হয়েছি।অপরাধের শাস্তি তো পেতেই হবে। তাই আজ থেকে তুমি আর কখনো আমার সামনে আসবে না। ভালোবাসার দাবি নিয়ে আমাকে দুর্বল করবে না। আজ থেকে আমরা সম্পুর্ণ আলাদা হলাম।আর কোন অপবাদ নেয়ার শক্তি নেই আমার।নিজেকে সামলে নাও। মনের দরজায় অভিমানেরা পাহারা বসিয়েছে।সেখানে তোমার প্রবেশ নিষিদ্ধ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রক্তিম অশ্রুসিক্ত চোখে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে আদিব।নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে অনবরত। সামনের রমনীকে ভয়ংকর পাষাণ মনে হচ্ছে তার। এই মেয়েটা একের পর এক আঘাত করেই চলেছে তাকে।মনটা বিষিয়ে গেলে কি ভালোবাসা অবশিষ্ট থাকে?
— বাসায় যাও আদিব।আর এসো না এখানে।ইভেন আমার সামনে ও এসো না কখনো। অন্য কাওকে নিয়ে সুখি হও।
চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো আদিবের।সবাই যেন তাকে নিয়ে খেলছে।ইচ্ছে মতো তার জীবনের ডিসিশন নিতে ব্যস্ত সবাই।অথচ তার থেকে একবার জানতে চাইলো না সে কি চায়?কার সাথে জীবন কাটাতে চায়।তারা শুধু নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে ব্যস্ত।
— এটাই তোমার শেষ সিদ্ধান্ত?
আদিবের শক্ত গলা শুনে কেপে উঠলো ফায়জা।আদিব এখনো ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে। মন খারাপের পরিমাণ বাড়লো। একবার তার দিকে তাকালে কি এমন হয়?মনে মনে অভিমান করলো শতবার। নির্লিপ্ত গলায় জবাব দিলো,
— হ্যা।
চট করে উঠে দাড়ালো আদিব। সরাসরি ফায়জার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,

— ভালো তাকেই বাসতে হয় যে ভালোবাসা কে শুধু একটি শব্দ হিসেবে নয় একজন মানুষের হৃদয় উজার করা অনুভূতি হিসেবে বোঝে।এখানে আমার একটু ভুল হয়ে গেছে। কি করবো বলো?ভালোবাসা কি এতো হিসেব করে হয়?শা’লা হুট করেই হয়ে যায়। নাহলে আমি ঠিকই হিসেব করে বয়স,ফিগার,যোগ্যতা আর মোষ্ট ইমপোর্টেন্ট,আমার প্রতি তার কোন ভালোবাসা আছে কি না সেটা খুব ভালো করে যাচাই বাছাই করে নিতাম।কিন্তু অই যে,ভাগ্য খারাপ।বয়সে বড় মেয়ে ভালোবাসার মতো কঠিন পাপ টা করে বসলাম।হাহ,,যাই হোক,আমাকে ভালোবাসো এই কথা টা আর কখনো বলো না প্লিজ। খুব হাস্যকর শোনায়।মনে হয় আমাকে উপহাস করছো।আচ্ছা ফায়জা!

ভালোবাসলে কি এভাবে কষ্ট দেয়া যায়!দিনের পর দিন কুকুরের মতো পিছনে ঘোরানো যায়?সামনের মানুষ টা কষ্ট পাবে যেনেও বার বার কথা দিয়ে তাকে আঘাত করা যায়?এ কেমন ভালোবাসা!আরে ভালোবাসার জন্য মানুষ পুরো পৃথিবীর সাথে লড়ে যায়।আর তুমি একটা বার সাহস করে আমার হাত টা ধরতে পারলে না!মানুষের কথাই তোমার কাছে বড় হলো? একটা বার ভরসা করেই দেখতে না হয়।তোমাকে নিয়ে নাহয় নিজের মধ্যেই একটা আলাদা পৃথিবী গড়ে দিতাম। কয়েক জনের কটু কথায় আজ মৃত্যু পর্যন্ত পৌঁছে গেলে ফায়জা!অথচ তুমি আমার ভালোবাসা হয়েও দিনের পর দিন আমাকে অবহেলা অপমান করে রক্তাক্ত করেছো।এতো বছরের অপেক্ষা কে পায়ে মাড়িয়ে আরেকজনের জন্য বউ সেজেছো।আমার সামনে তার হাতে হাত রেখেছো।ভালোবাসা যদি এমন হয় তাহলে কাওকে আর এভাবে ভালোবেসো না।যাও আজ থেকে আমার ভালোবাসা থেকে মুক্ত তুমি।আদিব নামের কেউ আর তোমার জীবনে থাকবে না। আজ থেকে আমার ভালোবাসার শিকল থেকে মুক্ত তুমি।
আদিব বেড়িয়ে গেছে সাথে সাথেই। নিশ্বব্দে কেদে যাচ্ছে ফায়জা।তাহলে কি সে সত্যিই আদিব কে ভালোবাসতে পারে নি!

— এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?কি সমস্যা তোমার?
ফারহানের কথায় দাত কিড়মিড় করে রাগ টা দমানোর চেষ্টা করলো সায়েবা।এই অসভ্য লোকের উস্কানিতে অবাধ্য রাগ গুলো নিশ্চিত বেড়িয়ে আসবে।
— এখন আমার তাকানো ও আপনার ভালো লাগছে না তাই না? বুঝি তো সব। পুরোনো হয়ে গেছি তো।এখন আর আমাকে ভালো লাগবে কেন?
চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে ফারহান। রানী সাহেবার ভাব মোটেও সুবিধার নয়। নিশ্চিত মাথায় উল্টো পালটা কিছু খিচুড়ি পাকিয়েছে।
— বাজে না বকে কি হয়েছে সেটা বলো।কাল থেকে কুমড়ার মতো মুখ ফুলিয়ে রেখেছো কেন? আবার আমাকে ইগনোর করছো।সাহস ভালোই বেড়েছে মনে হচ্ছে? (দাতে দাত চেপে)
সায়েবা ফারহানের রাগের মোটেও তোয়াক্কা করলো না। গলায় অবজ্ঞা ঢেলে উপহাস করে বললো,

— তো এখন কি আপনার কোলে উঠে বসে থাকতে হবে।দেখুন, আমি এখন আপনার সাথে এই খোলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ঝগড়া করতে চাইছি না।তাই মুখ বন্ধ রাখুন।
ফারহান গম্ভীর মুখে তাকিয়ে রইলো সায়েবার দিকে। মেয়েটার সাহস দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। দুই মিনিটে তাকে দুই বস্তা কথা শুনিয়ে দিলো।আবার ঝাড়ি ও দিয়েছে শেষে! তাজ্জবের ব্যপার। এর একটা বিহিত হওয়া উচিত। বাসায় গিয়ে কঠিন ভাবে এর শোধ নেয়া যাবে।এখন যতো খুশি উড়ে নাও তোতা পাখি।আমার ও সময় আসবে।
সায়েভা শাশুড়ীর কেবিনের দিকে চলে গেলো। এখান থেকে সোজা বাবার বাড়ি চলে যাবে।থাকবে না আর এই নিষ্ঠুর লোকের সাথে।করুক অন্য মেয়ে কে বিয়ে।সে ও বিয়ে করে নিবে।তার আগে ওই বিসিএস ব্যাটার খোঁজ নিতে হবে।

বাড়িতে কয়েক দফা ভাঙচুর করে ভয়ংকর পরিবেশ তৈরি করেছে আদিব।আফরিন বেগম এ নিয়ে মোটেই বিচলিত নন।দরকার হলে ছেলের ভাঙ্গার জন্য ট্রাক ভরে জিনিস পত্র এনে দিবেন।একটা ই ছেলে তার। ইচ্ছে হলে এই বাড়ি ও ভেঙ্গে ফেলবে।তাতে কার বাবার কি?কথা গুলো মনে মনে ভেবে ফরিদ সাহেবের দিকে আড় চোখে তাকালো সে।যে এখন মনোযোগ দিয়ে পত্রিকা পড়ছে।এসবে তার কোন ধ্যান নেই। ভাব দেখে মনে হচ্ছে পত্রিকা পড়তে না পারলে তার প্রেমিকা পালিয়ে যাবে!হুহ।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৩

আফরিন বেগম মুখ বাকিয়ে আবার আদিবের রুমের দিকে চিন্তিত চোখে তাকিয়ে রইলেন।আদিব বের হলে তার সাথে জরুরি ভাবে কথা বলতে হবে। এসব আর নেয়া যাচ্ছে না। নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত সে।ফায়জার কাছে ও ক্ষমা চেয়েছে কয়েকবার।কেউ কল ধরছিলো না বলে সায়েবার নাম্বারে কল করেছিলো।ওর ফোন দিয়েই কথা হয়েছে ফায়জার সাথে। ফায়জা স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছে তার সাথে। তাই একটু আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন তিনি।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৩৫

1 COMMENT

Comments are closed.