সায়েবা আসক্তি পর্ব ৯

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৯
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

বাড়ির পরিবেশ থমথমে হয়ে আছে।ফারহানের হাত থেকে টপটপ করে রক্ত পরছে।সে অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে সামনে বসে থাকা মেয়েটার দিকে। মেয়ে টা ফারহানের অগ্নিদৃষ্টি কে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে তা ও না।সে এখনো বেহায়া চোখে ফারহান কে দেখায় ব্যাস্ত।ফারহানের বিক্ষিপ্ত চাহনি দেখে ফারহানা বেগম স্বামীর দিকে রুষ্ট চোখে তাকালো। সানোয়ার সাহেব ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে।ছেলের ভয়ংকর রাগ দেখে মনে মনে একটু ভয় পেলে ও মুখে তা একদম ই প্রকাশ করছে না।

ফারহানা বেগম ছলছল চোখে বড় ছেলের দিকে তাকালো। মায়ের অসহায় দৃষ্টি দেখে ফরহাদের মন টা ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো। বাবার উপর সে যে খুব বিরক্ত সেটা তার দৃষ্টি বলে দিচ্ছে। ফারহানের রক্তাক্ত হাত দেখে বুকে চিন চিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই।এখন ফারহান কে কিছু বলাই যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। ফারহানা বেগম ব্যান্ডেজ হাতে ফারহানের পাশে বসে আছে। একবার ড্রেসিং করতে গিয়ে ফারহানের হুংকার শুনে আর সামনে যেতে সাহস হয়নি।
কিছুক্ষণ আগে,,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ভার্সিটি থেকে বাসায় আসতেই একটা মেয়ে এসে আচমকা ফারহান কে জরিয়ে ধরে। ফারহান স্তব্ধ হয়ে গেলেও সাথে সাথেই মেয়েটিকে ওক ঝটকায় নিজের থেকে সরিয়ে দেয়।হঠাৎ করে জরিয়ে ধরায় এতক্ষণ মেয়েটির ফেস দেখা যাচ্ছিলো না। এখন মেয়েটিকে দেখে ফারহানের মেজাজ মুহুর্তেই বিগড়ে গেলো। মেয়েটি সানোয়ার সাহেবের একমাত্র আদরের ছোট বোন সামিহার মেয়ে লিজা।দাতে দাত চেপে বললো,
— মেয়ে মানুষ এতো নির্লজ্জ হতে পারে তোমাকে না দেখে বুঝতেই পারতাম না। হে ইউ,লিসেন টু মি কেয়ারফুলি।আর কখনো আমার সাথে গা ঘেসাঘেসি করতে আসবে না। ইজ দ্যাট ক্লিয়ার? (চিৎকার করে)
ফারহানের রাগ কে উপেক্ষা করে ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলালো লিজা।লাস্যময়ী হেসে বললো,
— দিন দিন এতটাই হট হচ্ছো যে আমি দেখেই তোমার আগুনে পুড়ে যাচ্ছি। ইউ আর লুকিং সো হট বেব।
— আগুনের বেশি কাছে যেতে নেই।তাহলে সে জ্বালিয়ে ছাই করে দিবে।তুমি নিশ্চয়ই ছাই হতে চাও না!
ফারহান আগুন চোখে তাকিয়ে বাকা হেসে বলতেই লিজা আরেকটু এগিয়ে গেলো ফারহানের দিকে। তর্জনীর সাহায্যে ফারহানের গালে স্লাইড করতে করতে বললো,

— আমি তো পুড়তেই চাই,তবে তোমার ভালোবাসার আগুনে। তোমার স্পর্শের দহনে জ্বলে পুড়ে শেষ হতে চাই।প্লিজ একটু ভালোবাসো আমাকে।আমি নিজেকে তোমার কাছে বিলীন করে দিতে চাই ফারহান।
ফারহান নির্লিপ্ত ভঙিমায় দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার সাহস দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেছে সে।ভাব ভঙিমায় নির্লিপ্ত হলেও চোখ থেকে আগুন বেরুচ্ছে। অবস্থা বেগতিক দেখে ফারহানা বেগম কে ডেকে নিয়ে আসলো কাজের মেয়ে সুমি।ফারহানা বেগম নাইট ডিউটি থেকে এসে ঘুমিয়ে ছিলেন।সুমির কাছে বিস্তারিত শুনে হড়বড়িয়ে উঠে ড্রয়িং রুমে চলে গেলো। তড়িঘড়ি করে লিজা কে ফারহানের থেকে সরিয়ে এনে অগ্নি চোখে তাকালো তার দিকে। মামির ঝাঝালো নজর টলাতে পারলো না তাকে।
ফারহানের হাত টেনে বললো,

— রুমে চলো বেবি।এখানে একদম ই প্রাইভেসি নেই। ওখানে আমরা একান্তে কিছু সময় কাটাবো।
ফারহান এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
— আমি রুমে যাচ্ছি আম্মু। এই নির্লজ্জ মেয়ে কে যেন আমার এবং আমার রুমের আশে পাশে ও না দেখি।
ফারহানের অগ্নি কন্ঠে বলা কথায় মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো ফারহানা বেগম। ফারহান চলে যেতেই ফারহানা বেগম লিজার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বললো,
— শোন লিজা,এটা তোমার মামার বাড়ি। যখন খুশি আসবে,বেড়াবে।কিন্তু এমন বেহায়াপনা করে আমার বাসায় পরিবেশ নষ্ট করবে না। আর ফারহানের আসে পাশে যেন তোমাকে না দেখি।
ফারহানা বেগমের কথা শুনে বাকা হাসলো লিজা।সোফায় আরাম করে বসে ঘাড় কাত করে তাকালো তার দিকে। ব্যাঙাত্বক গলায় বললো,

— আমি বেড়াতে আসি নি মামি।আমি এখানে একেবারে এসেছি।আর রইলো পরিবেশ নষ্ট করার কথা, আমার হবু বরের সাথে আমি যেখানে সেখানে রোমান্স করতে পারি। তাতে মনে হয় না কারোর কোন সমস্যা হওয়ার কথা। আফটার অল এটা আমারও বাড়ি হবে কয়েকদিন পর।
লিজার কথা শুনে আকাশ থেকে পরলো ফারহানা বেগম। নিজের স্তম্ভতা কাটিয়ে কাট কাট গলায় বললো,
— হবু বউ মানে!আজে বাজে কথা বলা বন্ধ করো।আর খবরদার ফারহানের সামনে এইসব পাগলের প্রলাপ করবে না।
— সেটা নাহয় আপনি মামার কাছ থেকে জেনে নিবেন।আমি খুব টায়ার্ড। রুমে যাচ্ছি রেষ্ট করতে।
লিজা উঠে চলে যেতেই ফারহানা বেগম সানোয়ার সাহেব কে কল করলেন।কয়েকবার রিং হওয়ার পরেও কল রিসিভ করলো না সানোয়ার সাহেব।তাই বাধ্য হয়ে ফরহাদ কে কল করলেন,
— আসসালামু আলাইকুম আম্মু।
— ওয়ালাইকুম আসসালাম।তোমার বাবা কোথায় ফরহাদ?যতই কাজ থাকুক না কেন এই মুহুর্তে তোমার বাবা কে নিয়ে বাসায় আসবে।
— কি হয়েছে আম্মু?(অস্থির গলায়)।তুমি ঠিক আছো তো?
— আমি ঠিক আছি।তবে কতক্ষণ থাকবো বলতে পারছি না। কথা বলে সময় নষ্ট না করে তোমার বাবা কে নিয়ে বাসায় এসো।

— আমি এখুনি আসছি আম্মু।তুমি একটু রিলাক্স হয়ে বসো।এতো হাইপার হলে শরীর খারাপ করবে।
ফারহান কল কেটে দ্রুত বাবা কে নিয়ে বাসার দিকে রওনা হলো। সানোয়ার সাহেব অনেক বার প্রশ্ন করলেও তার কোন জবাব দিলো না সময় সে।
–তোমার মাথা ঠিক আছে সানোয়ার!লিজার সাথে ফারহানের বিয়ে মানে!ফারহান সায়েবা কে ভালোবাসে।সব কিছু জেনে তুমি এমন কথা কিভাবে বলতে পারো?
ফারহানা বেগমের কথার কোন জবাব দিলোনা সানোয়ার সাহেব।সে এখনো নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে আছে। পাশেই ফরহাদ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে। ফারহান রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে চুপচাপ বসে আছে মায়ের পাশে।
— আমি লিজার সাথে ফারহানের বিয়ে ঠিক করেছি।এখানে দ্বিমত করো না।ফরহাদের জন্য মেয়ে দেখতে দেখতে ওরা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা সেরে নিতে পারবে।এইসব ভালোবাসা হচ্ছে খনিকের আবেগ।কয়েকদিন পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।

সানোয়ার সাহেবের কথা শুনে এক ঘুসিতেই কাচের টি টেবিল টা ভেঙে গুড়িয়ে দিল ফারহান। রাগে তার সমস্ত শরীর কাপছে।হাত দিয়ে টপটপ করে রক্ত বেরিয়ে ফ্লোর ভরে যাচ্ছে। শব্দ শুনে ড্রয়িং রুমে আসলো লিজা।এসেই ফারহানের রাগী চেহারার দিকে রইলো।
বর্তমান,
ফারহানা বেগম তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে স্বামীর দিকে।
— আমি ভালোবাসি সায়েবা কে আব্বু।ও আমার কোন মোহ নয়।আল্লাহ যদি আমাদের মিল রেখে থাকেন তবে অবশ্যই আমরা এক হবো।আর যদি না ও হই তবু্ও আমি তোমার এই বেহায়া ভাগ্নীকে বিয়ে করবো না।
— আমার কথার এদিক সেদিক হওয়া আমি পছন্দ করি না ফারহান। আমার সিদ্ধান্ত ই শেষ সিদ্ধান্ত।
সানোয়ার সাহেবের একরোখা জবাবে তেতে উঠলেন ফারহানা বেগম।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৮

— তাহলে আমাদের মাঝে ও আজ থেকে ভালোবাসার কোন সম্পর্ক থাকবে না সারোয়ার।তুমি ভাবলে কি করে আমার ছেলে কে তার ভালোবাসা কে তার থেকে কেড়ে নিয়ে তুমি নিজের ভালোবাসা কে নিয়ে সুখে থাকবে।বিচ্ছেদ তাহলে দু দিক থেকেই হোক।
ফারহানা বেগমের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো সানোয়ার সাহেব। অবাক চোখে প্রিয়তমা স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে সে।ফারহানা কে ছেড়ে থাকার কথা সে স্বপ্নে ও চিন্তা করতে পারেন না।
ফারহান ভাবলেশহীন থাকলেও ফরহাদ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে।
ফারহানা বেগম কারোর দৃষ্টি তোয়াক্কা না করে সুমি কে ডেকে নিজের জিনিস পত্র নিচের রুমে ট্রান্সফার করতে বললো। সানোয়ার সাহেব এখনো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে স্ত্রীর দিকে।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১০

1 COMMENT

Comments are closed.