সায়েবা আসক্তি পর্ব ১০

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১০
লেখিকা সানজিদা বিনতে সফি

‘তুই এক্ষুনি আমার বাসায় আসবি।এক্ষুনি মানে এক্ষুনি’
ফারহানের চিৎকারে কেপে উঠল সায়েবা। ভার্সিটি তে সব ঠিক ই ছিল। বাসায় আসতে আসতে আবার কি হয়ে গেলো!
ভার্সিটি থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে শরীর টা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পরেছিল সে।খাওয়া ও হয় নি এখনো। তার ঘুম ভাঙলো ফারহানের কলের শব্দে।যতটুকু তন্দ্রা ভাব ছিল তাও চলে গেছে ফারহানের হুংকার শুনে।
— কি হয়েছে আপনার? এতো রেগে আছেন কেন? আম কি কোন ভুল করেছি?(অসহায় গলায়)

— তোকে এত প্রশ্ন করতে বলেছি? আসতে বলেছি চুপচাপ আসবি।আদার্স আর একটা কথা ও বলবি না। যাস্ট টু মিনিট দিচ্ছি। এর মধ্যে তোকে আমার সামনে দেখতে চাই। বোঝাতে পেরেছি? (দাতে দাত চেপে)
সায়েবা কোন রকম হু বলেই দৌড় লাগালো ফারহানের বাসার দিকে।তাড়াহুড়ো তে মা কে বলতে ভুলে গেছে।ফারহানের বাসার লফটের সামনে এসে পেট চেপে ধরে হাপাতে লাগলো সায়েবা।এত জোড়ে দৌড়েছে যে এখন নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কোন রকম লিফটে উঠে সাত তালায় আসলো সে।হাপাতে হাপাতে কলিং বেল চাপতেই দু মিনিটের মাথায় দরজা খুললো লিজা।সায়েবা এখনো জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।
সায়েবা কে দেখে চোয়াল শক্ত করে ফেললো লিজা।এই মেয়েটাকে ফারহান ভালোবাসে ভাবতেই গায়ে আগুন লেগে যাচ্ছে। মনে মনে কিছু একটা ভেবে বাকা হাসলো সে।চেহারায় খুশি খুশি ভাব এনে বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— আরে সায়েবা যে।দৌড়ে আসলে বুঝি? ভালোই হলো তুমি এসেছো।আসার পর থেকে বোর হচ্ছি।এই বাড়িতে এখন থেকে একা একা থাকতে হবে ভেবেই মন টা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো। কি আর করার বলো,শশুর বাড়ি যেমন ই হোক না কেন মেয়েদের মানিয়ে নিতে হয়।(মন খারাপের ভান করে)তবে তুমি আসলে মাঝে মাঝে গল্প করা যাবে।কি বলো?
লিজা কে দেখেই চোখ মুখ কুচকে গিয়েছে সায়েবার।তবে লিজার শেষের কথা গুলো বুঝতে একটু বেগ পেতে হলো তাকে।কথার মানে বুঝতে পেরেই চোখ বড় বড় করে তাকালো লিজার দিকে। কৌতুহলী গলায় জানতে চাইল,
— শশুর বাড়ি মানে?
এই প্রশ্নেরই অপেক্ষা করছিলো লিজা।সায়েবার দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসলো সে।লজ্জা লজ্জা ভাব এনে বললো,
— ফারহানের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।কয়েকদিন পরেই বিয়ে।বিয়ের আগের কয়েকটি দিন আমি এখানেই থাকবো।
সায়েবা যেন আকাশ থেকে পরলো। ফারহানের সাথে বিয়ে মানে!

— ক কি সব বলছো!তোমাদের বিয়ে মানে?কবে ঠিক হলো?
সায়েবার কন্ঠ বারবার কেপে উঠছে।চোখ গুলো ছলছল করছে।সায়েবার চোখের কোনায় পানি দেখে পৈচাশিক হাসি হাসলো লিজা।চোখে মুখে অবাকতার রেশ এনে বললো,
— বিয়ে তো অনেক আগেই ঠিক হয়েছে।তুমি জানো না!
সায়েবার গাল বেয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পারল। হাত পা কাপছে তার।দরজা ধরে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে সে।সুমি এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লিজার নাটক দেখছিল। অবস্থা বেগতিক দেখে দৌড়ে ফারহানের রুমে চলে গেলো খবর দিতে। ঝড়ের গতিতে দরজার সামনে উপস্থিত হলো ফারহান।লিজা কে দেখেই মেজাজ খিচে গেলো তার।সায়েবার দিকে তাকাতেই রাগ আকাশ ছুলো।সুমির দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো,
— এটাকে সরা আমার চোখের সামনে থেকে।নাহলে ডাস্টবিনে ফেলে আসতে আমার একমিনিট ও সময় লাগবেনা। আবর্জনা যত্তসব।

ফারহানের কথায় ভাবাবেগ হলো না লিজার।ফারহানের কাছে এসে নিজের তর্জনী দিয়ে ফারহানের বুকে আঁকিবুঁকি করতে করতে বললো,
— বাড়িতে কেউ আসলে তাকে এভাবে ট্রিট করতে হয়না বেবি। আমার একটু কাছি এসেই দেখো না।পুরোপুরি ঠান্ডা করে দিবো তোমার রাগ।
সায়েবা এসব দেখে মুখ ঘুরিয়ে ফেললো। ঘৃণায় চোখ বন্ধ করে ফেললো সে।ছিঃ।
ফারহান এক ঝটকায় লিজা কে সরিয়ে দিয়ে সুমির দিকে তাকালো। ফারহানের দৃষ্টি বুঝতে পেরে সুমি ছুটে পানি নিয়ে আসলো। ফারহান নিজের টিশার্ট খুলে সুমির হাতে দিয়ে বললো,
— এটা কে বাইরে ফেলে দিয়ে আয়।

নিজের হাত ভালো করে ধুয়ে সায়েবা কে একটানে নিজের কাছে নিয়ে এলো। সায়েবা কিছু বোঝার আগেই শক্ত করে জরিয়ে ধরলো নিজের সাথে।সায়েবা ফারহানের আচানক আক্রমনে হতভম্ব হয়ে গেছে। ফারহানের খালি বুকের সাথে লেপ্টে আছে খেয়াল হতেই হাত পা কাপতে লাগলো তার।সায়েবার কাপুনী অনুভব করতেই আরেকটু শক্ত করে জরিয়ে ধরলো ফারহান।
— ক কি করছেন? ছারুন প্লিজ। সবাই দেখছে।(কাপা কাপা গলায়)
— দেখুক।ওই অসভ্য মেয়েটা আমাকে জরিয়ে ধরেছিলো। ছিঃ।গা ঘিনঘিন করছে আমার।এই নোংরা ফিলিংস থেকে একমাত্র তুই ই আমায় মুক্তি দিতে পারিস।প্লিজ একটু জরিয়ে ধরে থাক আমাকে।
সায়েবা চরম পর্যায়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে।এদিকে লিজার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এই মেয়ের কতবড় সাহস ফারহান কে জরিয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তেড়ে গিয়ে সায়েবাকে টেনে সরিয়ে সপাটে চড় লাগিয়ে দিল সায়েবার গালে।চড়ের তীব্রতা এত ছিলো সায়েবা গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পরলো ফ্লোরে। ঠোঁট কেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে। ঘটনা এতো তাড়াতাড়ি ঘটে গেছে যে ফারহান স্তব্ধ হয়ে গেছে। মুহুর্তের মধ্যে লিজা এমন কিছু করবে তার ধারণাই ছিলো না। সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ ওদের দেখছিল ফরহাদ।লিজার কান্ডে সে ও হতভম্ব হয়ে গেছে। তবে তার ঘোর তারাতাড়ি ই কেটে গেলো। দৌড়ে এসে সায়েবা কে ফ্লোর থেকে দাড় করালো। সায়েবার ফর্সা গালে পাচ আঙুলের দাগ পরে গেছে।সায়েবার অবস্থা দেখে ফরহাদ রেগে লিজার দিকে তাকালো। চিৎকার করে বললো,

— তোর সাহস কিভাবে হলো ওর গায়ে হাত তোলার?অভদ্রতার সমস্ত সীমা পার করে ফেলেছিস তুই।
ফরহাদের চিৎকারে হুস ফিরলো ফারহানের।ধীর পায়ে কাছে গিয়ে সায়েবার গালে হাত দিতেই মুখ থেকে আর্তনাদ বেরিয়ে গেলো সায়েবার। চোখ বন্ধ করে নিলো ফারহান।উল্টো ঘুরে পর পর তিনটা চড় লাগালো লিজার গালে।চড়ের দাপটে পরে যেতে নিতেই তাকে ধরে ফেললো সানোয়ার সাহেব। চেচামেচি শুনে ফারহানা বেগম ও নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে।পরিস্থিতি দেখে সে নিজেও হতভম্ব হয়ে গেলো। সানোয়ার সাহেব হুংকার দিয়ে বললো,

— তোমার সাহস কিভাবে হলো লিজা কে মারার?কি করেছে সে?
ফারহান আগে থেকেই রেগে আগুন হয়ে আছে।সানোয়ার সাহেবের কথায় যেনো সে আগুনে ঘি পরলো।সানোয়ার সাহেবের দিকে আগুন চোখে তাকাতেই সানোয়ার সাহেব হচকচিয়ে গেলেন। ফারহানের পিছনে সায়েবার দিকে চোখ যেতেই পরিস্থিতি বুঝে ফেললেন তিনি।এই কান্ড যে লিজা ঘটিয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।ছেলের সাথে আর উউচ্চবাচ্য করলেন না তিনি।ফরহাদ সায়েবা কে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সায়েবা টলমল চোখে সব কিছু দেখে যাচ্ছে। এখানে কি হচ্ছে কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না। ফারহানা বেগম এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও সায়েবা কে দেখে আর চুপ থাকতে পারলেন না। সুমির দিকে তাকিয়ে দৃঢ় গলায় বললেন,
— লিজার লাগেজ নিয়ে আয় ওর রুম থেকে। ও আজই নিজের বাড়িতে ফিরে যাবে।এটা নিয়ে আর কারোর কোন কথা আছে?(রেগে চিৎকার করে)

সানোয়ার সাহেব চুপ করে থাকলেও এবার সেও রাগী গলায় বললো,
— লিজা কোথাও যাবে না ফারু।ও এখানেই থাকবে। যা হয়েছে তার জন্য সায়েবার কাছে মাফ চেয়ে নাও লিজা।(লিজার দিকে তাকিয়ে)
লিজা পরিস্থিতি বুঝে সায়েবার দিকে তাকিয়ে সরি বলে গটগট করে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। ফারহানা বেগম সানোয়ার সাহেবের দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে। ফারহান সায়েবাকে নিজের সাথে আগলে ধরলো। সায়েবা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে আরো শক্ত করে ধরলো তাকে।দাতে দাত চেপে বললো,
— আমার হাত থেকে চড় খেতে না চাইলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকো।আজকে এর শেষ দেখেই ছাড়বো আমি।আমার উপর একটু ভরসা রাখো প্লিজ।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ৯

মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
— আমি সায়েবাকে আজকেই বিয়ে করতে চাই আম্মু।সায়েবার আম্মু কে রাজি করানোর দায়িত্ব তোমার।আমার বউ কে তোমার কাছে আমানত রেখে গেলাম।ফিরে এসে তাকে বউ রুপেই দেখতে চাই।
ফারহানা বেগমের হাতে সায়েবার হাত ধরিয়ে দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো ফারহান। পেছন থেকে ফরহাদ ডেকে বলছে,
— আরে শার্ট তো পরে যা ভাই।

সায়েবা আসক্তি পর্ব ১১