প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫৪

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫৪
নিশাত জাহান নিশি

“আমার মাঝেই তোমার ম’র’ণ লিখা আছে চাঁদ! বিশ্বাস না হয় তো তোমার বুকে হাত রেখে দেখো। বুকের ছাতিটা কতোখানি ফুলে আছে! এভাবে ফুলতে থাকলে তো নিশ্চিত আমার মাঝেই তোমার ম’র’ণ হবে তাইনা?”

চাঁদ ফিক করে হেসে দিলো। তবে সেই হাসির একরত্তিও আওয়াজ হলোনা! গভীর প্রেমের নেশায় আসক্ত হয়ে সে নূরকে একান্তে, নিরিবিলি, নির্মলভাবে আলিঙ্গন করল। নিবিষ্ট হয়ে সে স্নিগ্ধ আঁখিযুগল বুজে নিলো। চাঁদের অতি রঞ্জিত আলিঙ্গনের মাত্রা যদিও সুঠাম দেহধারী নূরের তুলনায় এতোটা জোরালোভাবে নয় তবে সে তার পাতলা শরীরের সমস্ত শক্তি লাগিয়ে দিয়েছে নূরকে জড়িয়ে ধরতে!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তাদের আলিঙ্গনের মাত্রা ক্রমশ গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছিল। দুটো প্রেম পিপাসু হৃদয় ধীরে ধীরে এক হচ্ছিল। মন-প্রাণ-হৃদয় একান্তে মিশে যাচ্ছিল। পরম আবেশে সিক্ত হয়ে চাঁদ ঘোরে ডুবে যাচ্ছিল৷ সম্মোহনী গলায় বলল,,
“আপনি ঠিকই বলেছেন নূর ভাইয়া। সত্যিই আমি আমার ম’র’ণ দেখছি আপনার মাঝে!

এতো প্রশান্তি কেন আপনার সান্নিধ্যে হ্যাঁ? এতো সুখ কেন আপনার ছোঁয়ায়? এতো অসীম কামনা, তৃপ্তি, সুকুন আমি সত্যিই সহ্য করতে পারছিনা নূর ভাইয়া। বুকের ভেতরে অসহ্য এক যন্ত্রণা হচ্ছে। মনে হচ্ছে যেনো বুকের ভেতরে কেউ ক্রমাগত হাতুড়ি পিটাচ্ছে। আমার মন-প্রাণ সব ছেদ করে রীতমতো আমাকে আহত করে তুলছে। বাঁচতে দিবেনা বুঝি এই ছেদ আমায়।”

আচমকা নূর নাটকের আশ্রয় নিলো! ঝট করে হাতের বাঁধনটা ছেড়ে দিলো। বেশ ভাব নিয়ে পিছু ঘুরে শার্টের কলারটা ঝাড়ল। নাটকীয় গলায় বলল,,
“ওকে ফাইন। ছেড়ে দিলাম। আব জিয়ো। জি ভারকে জিয়ো! আমাকে ছাড়াই জিয়ো।”

চাঁদ ঠোঁট উল্টালো। নির্বোধ দৃষ্টিতে নূরের পেছন পানে তাকিয়ে রইল৷ কী হলো না হলো সব তার মাথার উপর দিয়ে গেল। খারাপ কী এমন বলেছে সে? যার কারণে নূর তার সাথে এই বিরাট অভিমান করল? কিয়ৎক্ষণ নিজের মধ্যে আকাশকুসুম চিন্তা ভাবনা করে চাঁদ গলা ঝাড়ল। হঠকারি গলায় নূরের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,,

“এই? কী হলো ব্যাপারটা? হঠাৎ রাগ করলেন কেন?”
“কী হবে আবার? যা চাইছ তাই হইছে! তুমি তো বাঁচতে চাও তাইনা? আমাকে মে’রে তুমি বাঁচতে চাও! আমি আবার কাউকে মেরে টেরে আসামি টাসামি হতে চাইনা। এরচেয়ে বরং আমি একাই ম’রি। তোমার প্রেমের আগুনে একাই জ্বলে পুড়ে ম’রি।”

নূর বেশ অভিমান নিয়ে বুকের পাঁজরে হাত গুজে দাঁড়ালো। শরীর তার তীব্র অসুস্থতায় আক্রান্ত হলেও নাটক যেনো তার ঘুনাক্ষরেও কমছিলনা। রোগা শরীর নিয়েই সে প্রচণ্ড অভিমান দেখালো। আশায় রইল চাঁদ কখন তাকে পেছন থেকে আঁকড়ে ধরবে! তার অভিমান ভাঙানোর জন্য প্রেমময়ী গলায় বলবে,,

“ম’র’ণ হলে হোক। তবুও আমি আপনাকে ছাড়ছিনা! প্রয়োজনে দুজনই প্রেমের আগুনে জ্বলে পুড়ে ম’র’ব।”
নূরের অভিমানের কারণ চাঁদ বেশ বুঝতে পারল! ইচ্ছে করছিল নূরকে আরও একটু ক্ষেপিয়ে দিতে! নূরের রাগী মুখটাকে প্রতিবারের ন্যায় আরও একবার দর্শণ করতে।

দেখে দেখে শুধু মুগ্ধ হতে। তবে বর্তমানে নূরের শরীরের যা অবস্থা এই অবস্থায় তার সাথে অভিনয় করা তো দূরে থাক তাকে রাগানোটাই বোকামী হবে। অতিরিক্ত রাগের কারণে সে আরও অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। আর নূর অসুস্থ হয়ে পড়লে হিতে চাঁদেরই কষ্ট পেতে হবে। তাই সে মিটিমিটি হেসে সত্যিই নূরের ভরসাকে সত্যি প্রমাণ করে দিলো! পেছন থেকে শক্তভাবে নূরকে জড়িয়ে ধরল! চোখ বুজে গভীর প্রেমমাখানো গলায় অস্পষ্ট সুরে বলল,,

“আপনার মাঝেই তো আমার জীবন-ম’র’ণ নূর ভাইয়া! যদি আপনার ভালোবাসায় ম’রেও যাই না? তবে আমার বিন্দুমাত্রও আফসোস থাকবেনা। কেন বলুন তো? কারণ, আপনার ভালোবাসাতেই আমি বারবার বেঁচে ফিরব! আর উপর ওয়ালা যেদিন সত্যি সত্যি আমার মরণ লিখে রাখবে না? সেদিন না হয় আপনার মাঝেই আমার শেষ মরণটা দেখব!”

নূর গম্ভীর হাসল! ঘাড়টা পেছন দিকে ঈষৎ বাঁকালো। বুকের মাঝখানে থাকা চাঁদের ডান হাতজোড়া শক্তভাবে আঁকড়ে ধরল। মলিন গলায় শুধালো,,
“এতদিন এত ভালোবাসা কোথায় ছিল হ্যাঁ? বি’ষ খেয়ে যে বি’ষ হজম করছিলাম চোখে পড়েনি তখন? আর একটু হলেই তো ম’রে যাচ্ছিলাম। পালঙ্কে উঠানোর পর আমার ভালোবাসা বুঝতে তাইনা?”

চাঁদ এবার প্রচুর ক্ষেপে গেল! নূরের মুখ থেকে এসব হৃদয়বিদারক কথা শোনার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। বেশ আঘাত হানল কথাগুলো তার ব্যাকুল মনে। তীর বিঁধে যাওয়ার মতো আঘাত করল। এক ঝটকায় সে নূরকে তার শরীর থেকে সরিয়ে দিলো! তুখোড় জেদ দেখিয়ে লাফিয়ে দাপিয়ে জায়গা পরিত্যাগ করল। ঝাঁঝালো গলায় বলল,,

“শুধু আমার না। আমার ভালোবাসাও কখনো আপনার চোখে পড়েনি! তাই বুঝেও বুঝেন নি আমনর অনুভূতিগুলো। এই মর্মান্তিক কথাগুলো না? আমার আপনাকে বলার ছিল। আর আপনি কিনা উল্টে আমাকে এসব বলে দিলেন? আর কখনো আমি আপনার সামনে আসবনা। কখনো না।”

চাঁদের অগ্নিঝরা ক্ষোভ দেখে নূর দৌঁড়ে গেল চাঁদের পেছনে পেছনে। চৌকাঠ পার হওয়ার পূর্বেই সে পেছন থেকে চাঁদের কোমর আঁকড়ে ধরল। কোলে তুলে তাকে সোজা রুমের ভেতর ঢুকিয়ে দিলো! দরজার খিলটা সজোরে আটকে সে হাঁপাতে হাঁপাতে রাগান্বিত চাঁদের মুখোমুখি দাঁড়ালো। অসুস্থ গলায় বলল,,

“শোনো? তোমার সাথে এখন ধস্তাধস্তি করার এনার্জি নেই আমার। শান্ত হয়ে বসো এখানে৷ আমাকেও একটু শান্ত হতে দাও। মাথাটা প্রচুর ঘুরছে।”

ঘর্মাক্ত হয়ে উঠল নূর। সারাশরীর বেয়ে টপটপ করে ঘাম ঝড়তে লাগল। শরীর তার ক্রমাগত দুর্বল হয়ে উঠছিল। গতকাল রাত থেকেই পেটে কোনো দানা পানি পড়েনি তার। পুরো পেট খাবার শূণ্য। তাই শরীরটা আরও বেশি অকেজো হয়ে উঠছিল তার। কোনো অঙ্গেই যেনো শক্তি খুঁজে পাচ্ছিলনা। কেবল বমি বমি ভাব হচ্ছিল। নূরের এই সূচনীয় অবস্থা দেখে চাঁদ তার অদম্য জেদ এবার ক্ষান্ত করল। উদ্বিগ্ন হয়ে নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। ওড়না দ্বারা পরম যত্নে নূরের ঘর্মাক্ত মুখমণ্ডল মুছে দিলো। ক্ষীণ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,

“কিছু খাননি এখনো?”
চোখ বুজে নূর অস্থির গলায় বলল,,
“না।”
“ইশশ কী যে করেননা আপনি।”

আর কোনো কথা বাড়ালো না চাঁদ। নূরকে টেনে ধরে বিছানার উপর বসিয়ে দিলো। ঘামে সিক্ত নূরের অগোছালো চুলগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে গুছিয়ে দিলো। উত্তেজিত গলায় বলল,,
“আপনি বসুন এখানে। আমি খাবার নিয়ে আসছি। আর শরীর বেশি খারাপ করলে শুয়ে পড়ুন। রেস্ট নিন।”

তৎক্ষনাৎ নূর শরীরের সমস্ত শক্তি ছেড়ে দিলো! শটান করে বিছানায় শুয়ে পড়ল। কাতর হয়ে দুর্বল গলায় বলল,,
“তাড়াতাড়ি এসো। আমার কথা বলতেও খুব কষ্ট হচ্ছে।”

চাঁদ আর এক মুহূর্ত ব্যয় করলনা। দ্রুত বেগে হেঁটে রুম থেকে বের হয়ে গেল। হন্ন হয়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করতেই দেখল সামিয়া আহমেদ বেশ রেগে মেগে রান্নাঘরের জিনিসপত্র গুছাচ্ছেন। মাঝে মাঝে আসবাবপত্রগুলোকে সজোরে আছাড়ও মারছেন! এ যেনো প্রখর রাগের এক বহিঃপ্রকাশ। চাঁদকে পাশে দেখে উনার রাগের মাত্রাটা যেনো আরও তড়তড় করে বেড়ে গেল! অস্থির হয়ে থাকা চাঁদের দিকে তিনি শাণিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। রূঢ় গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,,

“এই নূর তোর রুমে কী করছে হ্যাঁ?”
প্লেটে ভাত বেরে চাঁদ রুক্ষ দৃষ্টিতে সামিয়া আহমেদের দিকে তাকালো। অকপট গলায় পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল,,
“কী করছে মানে? এটা কোন ধরনের প্রশ্ন মা?”

“আমি তোকে যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দে। নূর তোর রুমে কী করছে? একটা অবিবাহিত মেয়ের রুমে একটা অবিবাহিত ছেলে কী করছে?”

সামিয়া আহমেদের প্রশ্নকে তোয়াক্কা করলনা চাঁদ! সম্পূর্ণ গাঁ ছাড়া ভাব নিলো। সে বেশ বুঝতে পারল সামিয়া আহমেদ ঠিক কোনদিকে ইঙ্গিত করতে চাইছেন। তাই সে নিশ্চুপ হয়ে প্লেটে ভাত তরকারি বেরে নিলো। কাজ শেষ হওয়ার পর সে চোখ তুলে সামিয়া আহমেদের দিকে তাকালো। নির্ভেজাল দৃষ্টিতে তার মাকে নিরীক্ষণ করল। বিনয়ী সুরেই বলল,,

“নূর ভাইয়া কিছুদিন পর তোমার ছোটো মেয়ের জামাই হতে চলেছে মা! এবার বুঝে নাও উনি এই মুহূর্তে আমার রুমে কী করছে!”
যত দ্রুত সম্ভব জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো চাঁদ। রাগে সামিয়া আহমেদ গর্জে উঠলেন। চ্যাচিয়ে বললেন,,
“এই কী বললি তুই?”

চাঁদ আর পিছু ঘুরে তাকালো না। খাবারের প্লেট নিয়ে ছুটে চলল তার রুমের দিকে। তার মা ভীষণ ক্ষেপে গেছে। যা সে গলার স্বর শুনেই বেশ আঁচ করতে পারছে। এই মুহূর্তে তার মা কে আরও ঘাঁটিয়ে দেওয়া মানে বাড়িতে দক্ষ যজ্ঞ বাঁধিয়ে বসা৷ যা এই মুহূর্তে খুবই বেদরকারি। নূরকে খাওয়ানোটাই এই মুহূর্তে বিশেষ দরকারি। পরে সময় বুঝে যেকোনো সময়ে তার মায়ের সাথে এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কথা বলা যাবে। এই ভেবে সে ছুটে চলল তার রুমের দিকে।

এরমধ্যে আয়মনও হঠাৎ রান্নাঘরে গিয়েছিল পানি খেতে। ঘটনাচক্রে সামিয়া আহমেদের মুখোমুখি পড়ে গেল সে! সামিয়া আহমেদ কোমরে হাত গুজে আয়মনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। গড়গড় করে পানি খেতে থাকা আয়মনকে কড়া গলায় শুধালেন,,

“এই আয়মন কী হচ্ছে রে এসব? চাঁদ কী বলে গেল এখন? নূর নাকি আমার মেয়ের জামাই হতে চলেছে?”
সঙ্গে সঙ্গেই নাকেমুখে পানি ওঠে গেল আয়মনের! বিষম খেয়ে বসল সে। মৃদু কাশতে কাশতে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলল সে,,

“কী বলছ কী মামানি? কে বলল এসব তোমাকে?”
“কে আবার? চাঁদ বলল।”
কাশির মাত্রাটা আয়মনের আরও উর্ধ্বগতিতে এসে থামল! তাজ্জব গলায় বিড়বিড় করে বলল,,

“বাপরে! এর তো দেখছি রকেটের তুলনায়ও স্পিড বেশি! কী সুন্দর নিজেই নিজের বিয়ের কথা নিজের মাকে টুপ করে বলে দিয়ে চলে গেল? এর এত তাড়া কীসের হ্যাঁ নূরকে বিয়ে করার? পালিয়ে যাচ্ছে নাকি নূর? নাকি আমরা কেউ পালিয়ে যাচ্ছি?”

আয়মনের মৌনতা দেখে সামিয়া আহমেদ কপাল কুঁচকালেন। তিরিক্ষিপূর্ণ গলায় প্রশ্ন ছুড়লেন,,
“আরে বল না? সত্যিটা কী?”
আয়মন এক ঢোঁকে মুখে থাকা বাকি পানিটুকু গিলে খেলো। গ্লাসটা তাকের উপর রেখে সামিয়া আহমেদের মুখোমুখি দাঁড়ালো। পরিস্থিতির চাপে পড়ে চাঁদকে ইন্ধন যুগিয়ে বলল,,

“নূরকে মানতে তোমার আপত্তি কীসের মামানি? মাশাআল্লাহ্ আমাদের নূর তো লাখের মধ্যে এক। নূরের ক্যারেক্টার, ওর স্টেটাস, ফ্যামিলি সম্পর্কে সবই তো জানা তোমার। তো এতে এত আপত্তির কী আছে?”
“নূর এখনো বেকার! চাকরী বাকরী করে কিছু?”
মেয়ের মা হিসেবে যদিও সামিয়া আহমেদের কথাটা অযৌক্তিক নয়৷ তবে আয়মন প্রাণপনে চেষ্টা করল সামিয়া আহমেদকে বুঝাতে। আশাবাদী গলায় সে বলল,,

“এখন করে না তো পরে করবে। ফাইনালের পর পরেই তো চাকরীর জন্য ট্রাই করবে। আশা করি ভালো একটা চাকরি পেয়েও যাবে। যথেষ্ট যোগ্যতা আছে নূরের। তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করোনা মামানি। আমরা আছি তো। কিছু একটা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই হয়ে যাবে। এসব কোনো প্যারা খাওয়ার জিনিস হলো বলো? তুমি এখন প্যারা খাবা সোহানী আপুর বিয়ে নিয়ে। কীভাবে কী করলে বিয়ের এরেঞ্জমেন্ট সুন্দর হবে এসব নিয়ে। তা না, তুমি আছো যতসব আজাইরা বিষয় নিয়ে চর্চা করতে।”

আজভাজ বুঝিয়ে আয়মন তোপের মুখ থেকে বেঁচে ফিরল। দ্রুত বেগে জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো! সামিয়া আহমেদ বোকা বনে গেলেন! তাজ্জব দৃষ্টিতে আয়মনের যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলেন। কিয়ৎক্ষণ টাস্কিত থাকার পর তিনি বিস্মিত গলায় বললেন,,

“কী যামানা এলো রে বাবা? ছেলে মেয়েরা এখন নিজেরাই ঠিক করবে কে কাকে বিয়ে করবে? এই বিষয় নিয়ে বাবা-মা কিছু বললেই বলবে সব আজাইরা প্যাচাল?”

তিথীর সাথে নিরিবিলি লাইন মারতে ব্যস্ত মাহিন! ছাদে দাঁড়িয়ে দুজন বেশ মাখোমাখো হয়ে কথা বলছে! কেবল এক থেকে দু’ইঞ্চি ফাঁকা আছে দুজনার মধ্যে। মাহিনের হাস্যকর কথাবার্তায় পিছলে পড়ে তিথী মিটিমিটি হাসছে। আর মাহিন খানিক ঘুরে দাঁড়িয়ে তিথীর হাসোজ্জল মুখপানে চেয়ে প্রেমের ছন্দ বুনছে!

মাহিনের বেপরোয়া চাহনিতে তিথী বারবার লজ্জায় কুকিয়ে উঠছে! মাথা নুইয়ে হালকা হাসছে। এসবে মাহিন একটু হলেও ধারণা করতে পারছে তিথী তার প্রেমে পিছলে পড়ছে। মনে মনে ব্যাপক খুশি সে! কখন তিথীকে লাইনে আনতে পারবে সেই চিন্তায় ছটফট করছে। হাসি ভুলে তিথী এবার আগ্রহী দৃষ্টিতে মাহিনের দিকে তাকালো। জিজ্ঞাসু গলায় বলল,,

“এরপর কী হলো?”
ছাদের রেলিংয়ে মাহিন ড্যাশ দিয়ে দাঁড়ালো। ঈষৎ হেসে বলল,,
“এরপর আর কী হবে? দুজনে একসাথে বসে চা, কফি খেলাম। মেয়েটাকে কিছুক্ষণ বুঝালাম। শান্ত গলায় বললাম, আরে যা হইছে বাদ দাও। আমি হয়তো তোমার ভাগ্যে ছিলাম না। না হয় আমাকে প্রপোজ করার আগের দিনই কেন হুট করে তোমার বিয়ে-শাদি ঠিক হয়ে যাবে বলো? এখন আর আফসোস কী লাভ? বরং বিয়ে শাদি করো। আমাকে দাওয়াত টাওয়াত করো। খেয়ে দেয়ে তোমাদের জন্য দোয়া করে আসি।”

“আহারে। মেয়েটা খুব কষ্ট পেয়েছে তাইনা?”
“পাইলে আমার কী? আমি তো আর তাকে বলিনি আমার জন্য কষ্ট পাও। এমন কতো মেয়েই তো আছে যারা আমার জন্য কষ্ট পায়! অনেকে তো বলে তোমাকে না পেলে আমি বাঁ’চ’ব না মাহিন। ডিরেক্ট সু’ই’সা’ই’ড করব! ছাদ থেকে ঝা’প দিয়ে পড়ব। তো এসবে কি আমি পাত্তা দিই বলো? এসব তো হলো সাময়িক আবেগ।”

বেশ ভাব নিয়ে মাহিন কলার ঝাড়ল! এমন একটা ভাব নিলো যেনো সে যা বলছে সব সত্যি সত্যি বলছে! মেয়েরা সত্যিই তার পেছনে আদাজল খেয়ে পড়ে। কোথাও কোনো মিথ্যের অবকাশ নেই। মাহিনের এই দুর্দান্ত এটিটিউট দেখে তিথী চোখ বুজে সব বিশ্বাস করে নিলো! নির্লিপ্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,,
“সত্যি? আপনার জন্য এতো মেয়ে পাগল ছিল?”

“তা বৈ কী? পুরো বিদেশ কাঁপিয়ে এসেছি আমি! আমাকে দেখে কী মনে হয় তোমার হ্যাঁ? এই নীল নীল চোখ দুটো দেখছ না? সবাই এই নীল চোখের দিকে তাকালেই আমার প্রেমে ডুবে যায়! আফসোস! শুধু তুমিই ডুবলা না!”
মাহিনের করা শেষোক্তিটা শুনে তিথী ভ্রু কুঁচকালো। কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“মানে?”
মাহিন থতমত খেলো৷ প্রসঙ্গ পাল্টাতে মরিয়া হয়ে উঠল। শার্টের কলারটা উঁচিয়ে বলল,,
“মানে কিছুনা৷ তবে এই সাদা জামাটায় তোমাকে কিন্তু জোস লাগছে! চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার মতো সুন্দর লাগছে।”
তিথী ভীষণ লজ্জা পেল! লজ্জাবতী হয়ে মাথাটা নুইয়ে নিলো। উড়তে থাকা খোলা চুলগুলো কানের পেছনে গুজে নিলো। মিষ্টি হাসিতে আচ্ছাদিত হয়ে উঠল। তিথীর চোখ ধাঁধানো হাসি দেখে মাহিন গলা ঝাড়ল। বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে বলল,,
“হাছি তো ফাছি!”

আয়মন প্রায় অনেকক্ষণ যাবত হন্ন হয়ে তাশফিয়াকে খুঁজে চলছে। ধারণা করছে তাশফিয়া এবং জায়মা একসাথেই বাড়ির কোথাও একটা আছে। একটু মন দিয়ে খুঁজলেই হয়তো পেয়ে যাবে। এদিকে প্রায় সন্ধ্যা হতে চলছে আর এক্ষণি তাদের শপিংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে। সোহানীও ঐদিক থেকে বেশ তাড়া দিচ্ছে। মেয়েদের বিয়ের সময়টাতে নাকি একটু বেছে চিন্তে চলতে হয়।

মুরুব্বিদের বলা কথা এসব। নিশ্চয়ই তারা বুঝে শুনেই কথাগুলো বলেন। পুরো বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে আয়মন অবশেষে তাশফিয়া এবং জায়মাকে হলরুমের পেছনের এরিয়ায় খুঁজে পেল! দুজনই হৈ-হুল্লোড় করে বেলিফুল কুড়ুচ্ছে! খুশিতে যেন হৈ হৈ করছে। হলরুমের পেছনের দিকে যে এত বিশাল বড়ো এক বেলিফুল গাছ আছে আগে তা কেউই জানত না!

মূলত জায়গাটা প্রচুর ঝোঁপঝাড়ে আবিষ্ট বলে কেউ এখানে আসতে চায়না। তবে আজ জায়মা এবং তাশফিয়া হাঁটতে হাঁটতে এই জায়গাটায় এলো। এসেই দেখতে পেল বেলিফুল অকাতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে মাটিতে। মাতাল করা সুঘ্রাণে জায়গাটা ম ম করছে। সেই লোভ তারা সামলাতে পারলনা। প্রতিযোগীতা করে নেমে পড়ল বেলিফুল কুড়োতে।

রাগে গজগজ করে আয়মন দুজনের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। এই ভর সন্ধ্যায় ঝোপঝাড়ে তাদের দেখে তার মাথাটা যেনো গরম হয়ে গেলো। কিছুতেই যেন তার রাগ সংবরণ হচ্ছিলনা। তারা দুজনই এখনো উবুড় হয়ে বেলিফুল কুড়াতে ব্যস্ত৷ তাই আয়মনের উপস্থিতি তারা তেমন টের পেলনা।

আয়মনের দু’পায়ের মধ্যখানে পড়ে থাকা বড়ো রকমের বেলিফুলটা দেখে মাত্রই তাশফিয়া দেঁতো হাসল। উচ্ছ্বাসিত হয়ে বেলিফুলটা তুলতে গেলেই হঠাৎ তাশফিয়ার নজর পড়ল উপরের দিকে। চোখ উঠিয়ে দেখল আয়মন অগ্নিশর্মা হয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে! সঙ্গে সঙ্গেই শুকনো ঢোঁক গিলল তাশফিয়া। চট করে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো। ওড়না ঠিক করে মাথাটা নুইয়ে নিলো। অন্যদিকে জায়মা এদিক ওদিক না তাকিয়ে ওড়না ভর্তি বেলিফুল নিয়ে দিলো এক ছুট! যেতে যেতে তাশফিয়াকে ভয় দেখিয়ে বলল,,

“আরে এই তাশফিয়া চলে আয়। আয়মন ভাইয়া বকবে তোকে এখন। দেখছিস না কেমন রেগে আছে?”
হাতে থাকা অবশিষ্ট বেলিফুল গুলো মাটিতে ছুড়ে ফেলেই তাশফিয়া জান নিয়ে পালানোর চেষ্টা করল। আয়মনের ভয়ে সে কাবু হয়ে উঠল। অমনি আয়মন পেছন থেকে তাশফিয়ার বাঁ হাতটা খপ করে ধরে ফেলল! তাশফিয়া ভয়ে কান্না জুড়ে দিলো! ভরাট গলায় বলল,,

“সরি আয়মন ভাইয়া। আমি আর কখনো এখানে আসবনা। এবারের মতো আমাকে যেতে দিন প্লিজ।”
তাশফিয়ার আহাজারি শুনলনা আয়মন। হেঁচকা টানে তাকে তার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলো! একজন আরেকজনের গাঁয়ের সাথে যতখানি সম্ভব ঠেসে দাঁড়ালো। কোথাও একরত্তি ফাঁকফোকরও অবিশিষ্ট রইল না।

বুক দুড়ুদুড়ু করে কাঁপতে লাগল তাশফিয়ার। চোখ জোড়া জ্বালা পোড়া করে উঠল। তাশফিয়ার ভয়াল দু’চোখে এক ঝলক তাকালো আয়মন। রাগ ভুলে তার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। সহজ গলায় শুধালো,,
“আমাকে এত ভয় পাওয়ার কী আছে হ্যাঁ? আমি বাঘ না ভালুক?”
তাশফিয়া ছটফট করে উঠল আয়মনের কবল থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। হাত দু’খানা মোচড়াতে লাগল সে। জড় গলায় অসহায়তা নিয়ে বলল,,

“প্লিজ আমাকে যেতে দিন।”
“আগে বলো আমাকে এত ভয় পাও কেন? ভয় পাওয়ার মতো এমন কী আছে আমার মধ্যে?”
“কারণ, আপনি যখণ তখন আমার গাঁয়ে হাত তুলতে পারেন। আমি আপনার গাঁয়ে একবার হাত তুলেছিলাম তাই!”
“ধ্যাত বোকা মেয়ে। মেয়েরা হলো আদর করার জিনিস। মা’র’ধ’র করার জিনিস নাকি?”

তাশফিয়া ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে আয়মনের দিকে তাকালো। ক্ষণিকের মধ্যেই তাশফিয়াকে সম্পূর্ণ অবাক করে দিয়ে আয়মন টুপ করে তাশফিয়ার কপালে চুমু এঁকে দিলো! দ্রুত বেগে তাশফিয়ার হাতটা ছেড়ে সে পেছনের দিকে মোড় নিলো। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাশফিয়ার দিকে তাকিয়ে ব্যগ্র হাসল। রসাত্মক গলায় বলল,,

“ভয়কে এবার জয় করে নিলাম! আমাকে দেখলে এবার শুধু লজ্জা পাবে। ভয় আর পাবেনা!”
ঘটনার আকস্মিকতায় তাশফিয়া বরফের মতো জমে গেল! ম’র’ণটা বোধ হয় তার ঘনিয়ে এলো।

খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে নূরের মাথার পাশে ঠায় বসে আছে চাঁদ! নূর কোল বালিশ আঁকড়ে ধরে নাক টেনে বেশ আরামচে ঘুমুচ্ছে! খাবার নিয়ে আসতে আসতে এতটুকু সময়ের মধ্যে যে নূর এতোটা গভীরভাবে ঘুমিয়ে পড়বে আন্দাজ করতে পারেনি চাঁদ। নূরকে এই সময় ডেকে তোলাটাও তার বিবেকে বাঁধছে।

অসুস্থ শরীরে যত ঘুমোনো যায় ততোই ভালো। এতে শরীর মন চাঙা থাকে। নূরের দিকটা বিবেচনা করেই চাঁদ নূরের ঘুম ফুরিয়ে জেগে ওঠার অপেক্ষা করছে। এইদিকে মাহিন, আয়মন, সোহানী, জায়মা, তিথী এবং তাশফিয়া চাঁদকে ফেলেই শপিংয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেছে! আর কতক্ষণ তারা চাঁদের জন্য এভাবে অপেক্ষা করবে? এদিকে যে রাত হতে চলল।

খাবারের থালাটা সেন্টার টেবিলের উপর রাখল চাঁদ। একধ্যানে নূরের ঘুমন্ত, মায়াময়, নিষ্কুলষিত মুখমণ্ডলে তাকিয়ে রইল। ভালোলাগা, ভালোবাসা নেশালো ভাবে ছুঁতে লাগল তাকে। অজানা কিছু শিহরণ বার বার জানান দিয়ে বলছিল এই বুঝি তার বাম পাজরের হাড় ঘুমিয়ে রয়েছে।

নূরের দিকে ওভাবে অপলক তাকিয়ে থেকেই সে যেনো নিমিষেই আজীবন পাড় করে দিতে পারবে। এই যামানা ধ্বংস হয়ে গেলেও নূরকে দেখার তৃষ্ণা তার একচুলও কমবেনা। বরং আরও পিপাসু হয়ে উঠবে তার প্রেমপিপাসু হৃদয়। নূরের মধ্যেই বার বার পূর্ণজ্জীবিত হয়ে উঠবে।

নূরকে আরও কাছ থেকে দেখার লোভ সামলাতে পারলনা চাঁদ। তাই আস্তে ধীরে সে নূরের মাথাটা তার হাঁটুর উপরের অংশে রাখল! মিটিমিটি হেসে নূরের দিকে ঝুঁকে তাকালো। আলতো করে নূরের চুলে বিলি কেটে দিতে লাগল। কপালে একটু একটু করে হাত বুলাতে লাগল।

পরম আরামের খনি যেনো খুঁজে পেল নূর। নড়েচড়ে সে জমপেশ ঘুম দিলো। সেই ঘুম ভাঙল তার আরও ঘণ্টা খানিক পর! তখন ধরণীতে সন্ধ্যা সাতটা প্রায়। হাঁটু গলিয়ে চাঁদ আকাশকে রাঙিয়ে তুলছে। অদ্ভুত সৌন্দর্য্যে মেতে আছে গোটা ধরণী। জানালা দিয়ে সুন্দর চাঁদ দেখা যাচ্ছে। এদিকে চাঁদের হাঁটু প্রায় অবশ হয়ে আসার পথে। তবুও সে তার কষ্টকে নূরের আরামের তুলনায় বেশি প্রাধান্য দিলোনা।

ঘুম ফুরিয়ে আসতেই নূর পিটপিটে চোখে এদিক ওদিক তাকালো। উঁচুতে তাকাতেই চাঁদের ঝুকে থাকা হাসোজ্জল মুখটা সে মিটমিটে চোখে দেখতে পেল! ধড়ফড়িয়ে সে শোয়া থেকে ওঠে বসল৷ চাঁদের দিকে আগ্রাসিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। ভ্রু যুগল কুঁচকে বলল,,

“এই তুমি এখানে কী করো? শপিংয়ে যাও নাই?”
চাঁদ মুখটা কুঁচকে নিলো। গম্ভীর গলায় বলল,,
“আপনাকে এই অবস্থায় রেখে আমি কীভাবে শপিংয়ে যাই হ্যাঁ?”
“আশ্চর্য! কী অবস্থা আমার? আমি তো টোটালি ফিট এন্ড ফাইন।”

“ফিট এন্ড ফাইন না? খাবার দাবার খেয়েছেন কিছু? আমি যে একটুর জন্য খাবার আনতে গেলাম এসে তো দেখলাম ঘুমিয়ে পড়েছেন। খাওয়ানোর সুযোগটা দিয়েছেন একটু?”

তাড়াহুড়ো করে নূর বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। সোজা হয়ে দাঁড়াতেই তার মাথাটা হঠাৎ ঘুরে এলো! তাল গোল পাকিয়ে গেল সব। এক পর্যায়ে সে হেলেদুলে স্থির হয়ে দাঁড়ালো। চাঁদ বসা থেকে ওঠে রেগে মেগে নূরের মুখোমুখি দাঁড়ালো। কোমড়ে দুু’হাত গুজে চোয়াল শক্ত করল। উড়নচণ্ডী ভাব নিয়ে বলল,,

“এই আপনার ফিট এন্ড ফাইন, না? এখনি তো মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন।”
অস্থির হয়ে নূর চোখজোড়া বুজে কপালটা খানিক ঘঁষল। অস্থির গলায় বলল,,
“বাইরে চলো।”
“বাইরে চলো মানে? খাবেন না এখন?”
“বাইরে গিয়েই খাব।”
“মানে? এখানে খেলে কী হবে?”
“সবাই খারাপ ভাববে।”

“আশ্চর্য। খারাপ ভাবার কী আছে এখানে?”
“তুমি আর আমি একা একটা রুমে! খারাপ ভাববে না সবাই?”
“এসবের তোয়াক্কা করেন নাকি আপনি?”
“আগে করতাম না। তবে এখন করি। কারণ, আমি আমার ভালোবাসা নিয়ে কারো কোনো কটুক্তি শুনতে পারবনা। কেউ আমার ভালোবাসাকে অসম্মান করুক ঘুনাক্ষরেও মানতে পারবনা।”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫৩

“এদিকে যে আমি আম্মুকে বড়ো গলায় বলে এলাম আম্মুর ছোটো মেয়ের জামাই আপনি হতে চলেছেন এখন তার কী হবে?”

প্রেমময়ী তুমি পর্ব ৫৫