সেদিন তুমি প্রেম নিয়ে এসেছিলে পর্ব ২

সেদিন তুমি প্রেম নিয়ে এসেছিলে পর্ব ২
ফারজানা আফরোজ

সকালের সূর্য উঁকি দেওয়ার পরপর ব্যাস্ত শহরের মানুষগুলো ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। স্পন্দনের কলেজে ক্লাস থাকা সত্ত্বেও মায়ের অনুরোধে চুপচাপ সোফায় বসে আছে। বিপরীত পাশে স্পন্দনের বাবা জনাম সাদিফ চৌধুরী ছেলেকে আগাগোড়া এক পলক দেখে প্রশ্ন করলেন,

– বিয়ে না করার কারণ? তোমাকে আগেই বলেছিলাম মেয়েকে স্বচক্ষে দেখে পরে বিয়ের কথাবার্তা ঠিক করি কিন্তু তুমি তখন কি বলেছিলে, বাবা আমি বিয়েতে রাজি মেয়ে দেখতে হবে না তাহলে মেয়ে দেখার পর বিয়েতে অসম্মতি দেওয়ার কারণ আমি তো খুঁজে পাচ্ছি না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শুভ্রতা দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনই তার প্রতিভা। তাছাড়া আমাদের সকল রিলেটিভস জানে তোমার বিয়ে কনফার্মড এখন এই মুহূর্তে বিয়ে ক্যান্সেল করলে আমাদের মান সম্মান থাকবে? সোসাইটিতে আমার মাথা নিচু হবে না? শুভ্রতার ফ্যামিলিকে কি জবাব দিব আমি? ভুলে যেও না শুভ্রতার মা তোমার মায়ের খুব কাছের বান্ধুবি। ওদের দুজনের বন্ধুত্ব নষ্ট হবে না? তুমি চাও তোমার মায়ের কষ্ট হোক?

স্পন্দন ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। সে চায় না তার পরিবারের সম্মানে আঘাত আসুক। তাছাড়া বিয়েটা না হলে কলেজে তাকে নিয়ে হাসাহাসি করা হবে। আশেপাশের মানুষজন ভুল ঠিক বিবেচনা না করে তাকেই দোষী সাব্যস্ত করবে। বলা হবে একটি মেয়ের বিয়ে ভাঙার কারণ স্পন্দন। স্পন্দন জানে এখানে তার কোনো হাত নেই।

মেয়েটা নিজেই বিয়েটা হতে দিবে না। তবে শুভ্রতার প্রতি রয়েছে তার এক আকাশ সমান রাগ। মেয়েটাকে হাতের কাছে পেলে শাস্তি না দিয়ে সে থামছে না। মনে মনে ভাবলো, বিয়ে যদি করতেই হয় তাহলে বিয়ের পর বুঝাবে সে কেমন। একটা থাপ্পড়ের জবাব প্রতি মিনিটে মিনিটে উসুল করে নিবে। মনে মনে বাঁকা হাসলো স্পন্দন। বাবা মায়ের প্রশ্নের জবাবে উত্তর দিলো,

– বিয়েতে আমার সম্মতি আছে বাট বিয়েটা নির্দিষ্ট সময়ের আগে করতে চাই। তিনদিনের ভিতর সব ঠিক করবে যদি না পারো তাহলে আমিও আর এ বিয়ে করব না। ডিসিশন আমার চিন্তা তোমাদের।
স্পন্দনের বাবা মা ছেলের কথায় চমকে উঠলেন। নিজের সিদ্ধান্তে অনড় স্পন্দন এ কথা তার পরিবার ভালো করেই জানে। তবুও বিয়ের বিষয় তাই স্পন্দনের মা জিজ্ঞাসা করলেন,

– কিছুক্ষণ আগেও বিয়েতে তোমার সম্মতি ছিল না তাহলে হঠাৎ বিয়েতে রাজি হয়ে গেলে তার উপর দ্রুত। মতলবটা কি বলবে আমাদের?
স্পন্দন শুধু হাসলো। হাত দিয়ে চুলটা ঠিক করে উঠে দাঁড়ালো। মায়ের প্রশ্নের ছোট্ট একটা জবাব দিল,

– ম্যাথ ক্লাস আছে আমার। কলেজ কর্তপক্ষ আমাকে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিবে না নিশ্চয়। একজন প্রফেসরের নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাসে থাকা আবশ্যক। প্রফেসর যদি নিজেই দেরিতে কলেজে যায় তাহলে স্টুডেন্ট তার কাছে কী আশা করবে?
স্পন্দন বেরিয়ে পড়লো। স্পন্দনের বাবা মা হতাশ চোখে ছেলের যাওয়া দেখা ছাড়া উপায় ছিল না।
– এই ছেলেটা আদৌ আমার বংশের তো রুজিনা?

হতাশ চোখে জিজ্ঞাসা করলো সাদিফ চৌধুরী। রুজিনা বেগম ভ্রু কুঁচকে স্বামীকে দেখে রাগী গলায় বললেন,
– বিয়ের আগে বাপ যেমন রগচটা স্বভাবের ছিল ছেলেটাও সেরকম হয়েছে। ছেলের বাপকে তো ঠিক করতে পেরেছি কিন্তু ছেলেকে ঠিক করা আমার সাধ্য নেই। এই ছেলেকে শুভ্রতা ছাড়া আর কেউ সামলাতে পারবে না। শুনো যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে অ্যারেঞ্জ করো কখন না জানি ছেলেটার মত চেঞ্জ হয়ে যায়। দেখা যাবে বিয়ের আসরে বলে উঠবে, মা আমার মুড অফ এখন বিয়ে হবে না। হাহ

সাদিফ চৌধুরী স্ত্রীর কথার প্রতিউত্তরে কথা বলার সাহস পেলেন না। স্ত্রীকে আশ্বাস দিয়ে বিয়ের আয়োজনে লেগে পড়লেন। অন্যদিকে রুজিনা বেগম শুভ্রতার মাকে ফোন দিয়ে বলে দিলেন তিনদিন পরে বিয়েটা হবে অতি দ্রুত শুভ কাজটা সেরে ফেলতে চান ওনারা।

সূর্যের তেজ বেড়েছে দ্বিগুণ হয়ে। সেই সাথে শুভ্রতার রাগ পাল্লা দিয়েছে চারগুণ। কিছুতেই সে এই বিয়েটা করবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছে কিন্তু তার বাবা মা এক প্রকার জোর করেই বিয়েটা দিবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শুভ্রতা পালানোর অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু প্রতিবারই সে ব্যর্থ।

সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দিন, ঘণ্টা, মিনিট, সেকেন্ড সে সাথে শুভ্রতা এবং স্পন্দন্দের বিয়ের দিনক্ষণও নিকটে পৌঁছে গেছে। আজকে তাদের বিয়ের দিন। শুভ্রতাকে বউ সাজিয়ে তারই পাশে বসিয়ে রেখেছে নেহাকে যে সম্পর্কে শুভ্রতার ফুপাতো বোন।

স্পন্দন বর সেজে ড্রয়িং রুমে বসে আছে। আত্মীয়-স্বজন বলতে হাতে গোনা কয়েকজন। স্পন্দনের মুখে স্মিথ হাসি। মনে মনে নানান জল্পনা কল্পনা। শুভ্রতার জীবন তেজপাতা বানানোর নানান কু-কৌশল।
– কি রে স্পন্দন হাসছিস কেন? দিল্লিকা লাড্ডু ফুটেছে মনে তাই না?
বন্ধুদের দুষ্টু কথায় নিজেও দুষ্টু হাসি দিল। ভাবখানা এমন যেন সে বাসর রাত নিয়ে অনেক এক্সাইটেড। গলা কেঁশে আরেক বন্ধু বলে উঠল,

– স্পন্দনের বিয়ের পর তিশান ব্যাটাকে জোর করে বিয়ের আসরে বসাতে হবে। ব্যাটা সেই যে সিলেটে চুপটি মেরে বসেছে আর কোনো সাড়াশব্দ নেই।
স্পন্দন দুষ্টু সুরে বলল,

– তাই বুঝি? তাহলে তোরা বিয়ে করে বলিস কেন ভুল করেছিস? লাড্ডুর মজা শেষ?
– এই মিষ্টি যে সে মিষ্টি নয় রে বন্ধু। না খেয়ে থাকলে মনে হয় জীবনটা বৃথা খাওয়ায় পরেও মনে হয় জীবনে আর কিছু বাকি নেই। তবে না খাওয়ায় চেয়ে খেয়ে আফসোস করাটা বেশ ভালো।

বন্ধু মহলের এমন দুষ্টু মিষ্টি কথা চলতেই থাকলো। স্পন্দন শুনছে মাঝে মাঝে উত্তর দিচ্ছে তবে তার মনে বিরাজ করছে অন্য কাহিনী। চড়ের ব্যাপারটা কিছুতেই হজম করতে পারছে না। শুভ্রতাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত শাস্তি দিবে ততক্ষণ হৃদয়ের গভীরের চিনচিন ব্যাথা বন্ধ হবে না।
– মিস শুভ্রতা যত দ্রুত আপনি মিসেস শুভ্রতা হবেন তত দ্রুতই আপনার শাস্তি আপনার অতি নিকটে পৌঁছে যাবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা!

হাতের ব্যাগটা অতি দ্রুত নিচে ফেলে জানালা টপকে নিচে নামলো শুভ্রতা। লেহেঙ্গা সামান্য উঁচু করে নেহার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে দৌঁড়ানো শুরু করল বাড়ির পিছনে। হঠাৎ কিছু মনে পড়ায় ব্যাগটা সেখানে রেখে আবারও দ্রুত ব্যাক করলো জানালার ধারে। শুভ্রতাকে ফিরে আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো নেহা। নিচু সুরে বলল,

– আবার চলে আসছিস যে ,তার মানে বিয়েটা করবি? নাটক করার কি দরকার ছিল! আমার হৃদপিন্ড যে হারে উঠা নামা করছে কিছুক্ষণ পরেই ওপরের টিকিট কেটে ফেলব শিউর। ভাগ্যিস বাঁচালি এখন দ্রুত জানালা দিয়ে ভিতরে আয়। তোর বাবা মায়ের কাজকর্ম নেই বড় বড় জানালা দিয়ে ঘর করেছে। চোর ডাকাত খুব সহজেই চুরি করে পালাতে পারবে।
নেহার কথায় ঈষৎ রেগে উঠল শুভ্রতা। রাগী দুটো চোখ নেহার দিকে নিক্ষেপ করে বলল,

– বিয়ে করার জন্য আসিনি। আমি পালিয়ে যাব কোথায়? তোর বাসার চাবিটা দিয়েছিস? খবরদার ভয় পেয়ে ভুলেও তোদের বাসায় নাম উচ্চারণ করবি না। ফুপিকে আমি ম্যানেজ করে রেখেছি উনি বলবে না। আর তোকে যা শিখিয়েছি মনে আছে তো?

নেহা মাথা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে বুঝালো তার মনে আছে। শুভ্রতার ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বলল,
– চাবিটা ফেল তাড়াতাড়ি। চলে আসবে কেউ।
দৃষ্টি জোড়া চারদিকে বুলিয়ে মাটি থেকে চাবি কুড়িয়ে দৌঁড় শুরু করল আবারও। নেহা এক পলক তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

– গল্প সিনেমাতে নায়িকা পালিয়ে গেলে নায়িকার বোন সে রুলস ফলো করে। দেখা যায় তখন নায়িকার পরিবর্তে বোনকে বিয়ে দিয়ে বোন হয়ে যায় রিয়েল নায়িকা। আমার ক্ষেত্রে কি এমন কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আছে? স্পন্দন ছেলেটা দেখতে মন্দ নয়।

যদিও শুনেছি ছেলেটার চরিত্র খারাপ। আচ্ছা খারাপ চরিত্রের ছেলেকে বিয়ে করলে সে ভালো হবে? উপন্যাসের মত আবার শাস্তি দিবে না? নাহ বাবা আমি এত প্যারা নিতে পারব না। যদি এমন কিছু হয় তাহলে বলব আমার বয়ফ্রেন্ড আছে বিয়েটা আমি করতে পারব না।

সেদিন তুমি প্রেম নিয়ে এসেছিলে পর্ব ১

চারদিকে বিয়ের সানাই বেজে চলেছে। সবার মনে আনন্দের রেশ। কিন্তু কথায় আছে না, কপালের লিখন না যায় খন্ডন। কিছুক্ষণের মাঝে ছড়িয়ে পড়লো,
– বউ পালিয়েছে। শুভ্রতা পালিয়ে গেছে।

সেদিন তুমি প্রেম নিয়ে এসেছিলে পর্ব ৩