সে আমার সুকেশিনী পর্ব ২৭

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ২৭
রাউফুন

প্রথম বার বিউটি মিনহাজের বাসায় এলো। তার পরনে রাউন্ড জামা। মিষ্টি রঙের মধ্যে সাদা বল প্রিন্টের কারুকাজ। ড্রেসটাই তাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছিলো। সাদা উড়নাটা মাথায় দেওয়াই আরও বেশি সুন্দর লাগছিলো। তাকে এখানে সুপ্রিয়ই পাঠিয়েছে বলা যায়।

বিউটি ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে। তার সামনে হাসি মুখে নাস্তা এনে বসলো রাহেলা। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে কতটা খুশি হয়েছে বিউটি এখানে আসায়। বিউটি অপ্রতিভ হয়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সব কিছু দেখছে। তার দু-চোখ ব্যস্ত বাড়ির প্রতিটি আনাচে কানাচে! রাহেলা গলা খাকাড়ি দিয়ে কৌতুক করে বললো, ‘তুমি যাকে খুঁজছো সে তো বাসায় নেই! একটু মার্কেটে পাঠিয়েছি!’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বিউটি হাসার চেষ্টা করলো। মাথা নত করে বললো, ‘না মানে এমনি, আপনাদের বাড়িটা দেখছিলাম। কি সুন্দর বাড়িটা!’
‘ও কি কথা, শুধু কি আমাদের বাড়ি এটা? এটা তোমারো বাড়ি! কদিন পরে তো এটা তোমার শ্বশুর বাড়ি হবে। এই ঘর, সংসার, সবটা তোমার ই তো!’

‘কি যে বলেন আপু! বাসায় কি আর কেউ-ই নেই?’
‘আছে তো, আমার ছেলে আছে ছোটো টা। ড্রয়িং করছে! ও ড্রয়িং করতে ভীষণ ভালোবাসে।’
‘আর আপনার ছেলে তো আরেকটা আছে তাই না?’

রাহেলার মুখ মলিন হলো। বললো, ‘ হ্যাঁ সুমন্ত।ছেলেটা যে কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে কে জানে? উচ্ছ্বন্নে গেছে একেবারে! তুমি কিছু খাচ্ছো না কেন? খাও প্লিজ! সবটা খেতে হবে বলে দিচ্ছি!’
‘এতো কিছু, এক সঙ্গে কি করে খাবো!’

‘তা বললে তো শুনবো না। খাও এরপর আমি তোমাকে পুরো বাড়ি ঘুরে দেখাবো! ততক্ষণে তোমার উনি এসে যাবে!’
বিউটি লজ্জা পাওয়ার চেষ্টা করলো। কি আশ্চর্য তার লজ্জা লাগছে না। অথচ সুপ্রিয়র কথা ভাবলেও তার ভীষণ লজ্জা লাগে। সে শুধু একটু কফি টেষ্ট করলো। এক চুমুক মুখে দিয়েই বললো,
‘উম্ আপু কফিটা দারুন হয়েছে! আপনার হাতে জাদু আছে!’

বিউটি আর কিছুই মুখে তুললো না৷ তার ভালো লাগছে না। রাহেলা বিউটির হাত ধরলো। বিউটিও তার সঙ্গে যেতে সবটা ঘুরে দেখলো। ইশ কি সুন্দর বাড়িটা। মিনহাজের আনা বিখ্যাত বিখ্যাত পোর্টফলিও, আরও বিভিন্ন পেইন্টং, সুন্দর কিছু ছবি দেখলো। বাড়িটার কোথাও কোনো ধুলোর অস্তিত্ব নেই। প্রতিটি জায়গায় যেনো প্রাণ খুলে শ্বাস নেওয়ার মতো পরিষ্কার!

‘মা, মা, কোথায় তুমি? এদিকে আসো!’
রাহেলা কথা বলতে বলতে ডাক শুনতে পেলো না। বিউটি শুনেছে। তাই সে বললো,’আপনাকে বোধহয় ডাকছে। এই বাড়িতে তো আপনি ছাড়া কেউ-ই নেই।তাই ধরেই নিচ্ছি নিচে আপনার ছেলেই মা মা বলে আপনাকে ডাকছে।’
রাহেলার মুখ খানা শুকিয়ে গেলো।

তিনি ভয় পাচ্ছেন, ছেলেটা আবার উলটা পালটা কিছু করে না বসে। মেয়েটা এই প্রথমবার এসেছে, যদি কোনো কান্ড করে বসে তিনি ভীষণ লজ্জায় পড়বেন এই মেয়েটার সামনে। অত্যন্ত অপ্রাকৃতস্থ হয়েও হাসার চেষ্টা করলো রাহেলা। বললো,’বিউটি তুমি ঘুরে দেখো আমি নিচে যাচ্ছি দেখি কেন ছেলে চেঁচাচ্ছে! না হলে বিদঘুটে ব্যাপার স্যাপার করে বসবে। তুমি এক কাজ করো, সামনেই আমার রুম সেখানে গিয়ে বসো। আমি আসছি।’

‘আচ্ছা।’
বলেই বিউটি মাথা নাড়লো। রাহেলা নিচে নামলো। এবারে বিউটির মনে হলো এখানে আসার আগে সুপ্রিয় ভাই তাকে রাহেলার রুমটা চেক করতে বলেছে। সে জিজ্ঞেস করেছিলো কেন রুম চেইক করতে হবে। সুপ্রিয় ভাই প্রতুত্তরে বলেছে, ‘কারণ টা পরে জানতে পারবি!’ বিউটিও আর প্রশ্ন করেনি।

এবং এই বাড়িতে এসে সুযোগ পেলেই যেনো রাহেলার ঘর সে সার্চ করে। কোনো না কোনো বাহানা করতেই হতো তার। কিন্তু রাহেলা নিচে যাওয়াই নতুন করে আর বাহানা দিতে হলো না। সে রাহেলার রুমে ঢুকলো। পুরো রুম তন্নতন্ন করে খুঁজেও তেমন কিছু পেলো না। সে সুপ্রিয়কে ম্যাসেজ করলো, ‘তেমন কিছুই পাইনি এখানে! কি করবো?’

তৎক্ষনাৎ সুপ্রিয় বিউটির ম্যাসেজের রিপ্লাই করলো, ‘কোনো ডায়েরী বা কিছু আছে দেখ তো! কাকন আপুর ডায়েরি লিখার অভ্যাস ছিলো!’
‘ঠিক আছে দেখছি!’
খুঁজাখুঁজি করে বিউটি শেষে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে একটা ডায়েরি পেলো। সে আবার ম্যাসেজ লিখলো, ‘একটা ডায়েরি পেয়েছি এখন কি করবো?’
‘ওটা তোর ব্যাগে উঠিয়ে নে!’

বিউটিও তাই করলো। ডায়েরি টা হ্যান্ড ব্যাগে তুলে নিচে নেমে এলো সে। তক্ষুনি, একটা নয় দশ বছরের ছেলে দৌড়ে তার সামনে এলো। হোঁচট খেয়ে পড়তে নিলেও সামলে নিলো ছেলেটিকে ধরে। ছেলেটিকে দেখে মনে হচ্ছে সে ভয় পাচ্ছে ভীষণ বাজে ভাবে। ঘেমে নেয়ে একাকার পুরো মুখ। ছেলেটা হাতের ইশারা করে দেখালো ঐ রুমে কিছু হচ্ছে। বিউটি বিচলিত হয়ে বললো, ‘কি হয়েছে বাবু? ওখানে কি?’

‘ভাইয়া, আম্মু! আম্মু!’
ভয়ে তটস্থ হয়ে গেছে ছেলেটা।
বিউটি ছেলেটিকে পানি এনে দিলো। ঢকঢক করে পানি খেলো ছেলেটা।
‘তোমার নাম কি বাবু?’

‘আমার নাম নিহাত।’
‘আচ্ছা, এবারে বলো তো কি হয়েছে?’
‘আন্টি ভাইয়া, আম্মুকে মা’র’ছে!’
‘কিহ?’

‘হ্যাঁ আমাকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে!’
বিউটি দৌড়ে গেলো। গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।একটা ক্ষীন আর্তনাদ গোঙানির শব্দ তার কানে এলো। সে চিৎকার করে বললো,
‘দরজা খোলো। দরজা কিন্তু ভে’ঙে ফেলবো। খোলো বলছি দরজা!’

দরজা খুললো না ভেতর থেকে। উপায় না পেয়ে বিউটি সেখানে থাকা চেয়ার তুলে নিলো। গায়ের জোরে দরজাটাই ধাক্কা দিতে লাগলো চেয়ার দিয়ে। শক্ত কাঠের দরজাটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। ধুপধাপ শব্দ হচ্ছিলো। শব্দ পেয়ে বাইরে থেকে কাজের লোক গুলো ছুটে এলো। তারাও দরজা ভাঙার চেষ্টা করলো।

বাচ্চা ছেলেটিও সাহায্য করতে লাগলো। দরজা প্রায় ভাঙার মুহুর্তে মিনহাজ এলোমেলো পায়ে ভেতরে ঢুকলো। সে বাড়িতে এসেই এমন শব্দ পেয়ে বুঝতে পেরেছে কিছু একটা হয়েছে। সে দিক বেদিক না দেখে সোজা গিয়ে দরজায় লাথি দিয়ে দরজা ভেঙে ফেললো। দরজা ভাঙার পর যা দেখলো, বিউটি, মিনহাজ, সহ বাকি কাজের লোকজনও হতভম্ব হয়ে গেলো। সুমন্ত মিনহাজকে দেখে দৌড়ে পালাতে চাইলো। কিন্তু মিনহাজ তাকে খপ করে ধরে ফেললো। ঠা’স ঠা’স করে গালে থাপ্পড় দিতে লাগলো সে। রাগে ক্ষোভে নিজের সত্ত্বার বাহিরে চলে গেলো সে।
‘বিউটি বুবুকে ধরো!’

রাহেলার অবস্থা খারাপ। সে নিচে বসে গোঙাচ্ছে। সুমন্ত নিজের প্যান্টের বেল্ট দিয়ে রাহেলার গলা চেপে ধরেছিলো। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। আর একটু হলেই বুঝি প্রাণ টা উবে যেতো। বিউটি ব্যস্ত হয়ে বসে রাহেলার পাশে, গলায়, বুকে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। বিষন্ন স্বরে বললো,’নিহাত, যাও পানি আনো আম্মুর জন্য!’

বিউটির হুকুম শুনেই দৌড়ে চলে গেলো পানি আনতে। পানি এনে দিলো বিউটির হাতে। রাহেলা কাশতে কাশতে পানি খেয়ে নিলো। বিউটি বাকি কাজের লোকদের সাহায্যে তাকে তুলে ধরে শুইয়ে দিলো খাটের উপর। রাহেলার গলায় লাল, কালচে দাগ ফুটে উঠেছে স্পষ্ট ভাবে!

এদিকে মিনহাজের থামাথামি নেই। সে এলোপাথাড়ি ভাবে সুমন্তকে মে’রেই যাচ্ছে। মিনহাজের শক্ত হাতের ঘু’ষি সুমন্তের নাকে মুখে পড়তেই নাক মুখে ফে’টে গেলো সুমন্তর। তার দম ফা’টা চিৎকারে পুরো বাড়ি ভরে গেলো। রাহেলা নিজের ছেলেকে র’ক্তা’ক্ত অবস্থায় দেখে ঐ অবস্থাতেই ছুটে গেলো ছেলেকে বাঁচাতে! কোনো রকমে গলায় স্বর বের হলো তার।

‘মিনহাজ, ভাই ওঁকে ছেড়ে দে। ও ম’রে যাবে। ও যতই অন্যায় করুক ওকে তো আমি দশ মাস দশ দিন পেটে ধরেছি! মা হয়ে সন্তানের এমন শোচনীয় অবস্থা দেখতে পারবো না! ওকে ছাড় ভাই!’
‘আজ তোমার কোনো কথা শুনবো না বুবু! ওকে কতবার সাবধান করেছি যেনো তোমার গায়ে হাত না তুলে! ও কেন ভুলে যায়, যার গায়ে সে হাত তুলছে, এক মাত্র তার জন্যই ও এই পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছে, এখনো মুক্ত শ্বাস নিচ্ছে। ‘

মিনহাজ বাকি কাজের লোকদের ইশারায় রাহেলাকে সরাতে বললো। তারা রাহেলাকে সরিয়ে নিলো। মিনহাজ এবারে প্যান্ট থেকে বেল্ট খুললো। বেল্ট দিয়ে সুমন্তকে আঘাত করলো। তার গগন বিদারী চিৎকারে বিউটি নিজের চোখ মুখ কুচকে কান চেপে ধরলো।

নিহাত ভয়ে কাচুমাচু হয়ে মায়ের কোলে বসে রইলো। রাহেলা ছোট ছেলেকে বুকে চেপে ধরে দু-চোখের অশ্রু ঝড়াচ্ছে। হাউমাউ করে কান্নায় মুখরিত হলো পুরো রুম, পুরো বাড়ি। পর অনেক গুলো বা’ড়ী দেওয়ার পর সুমন্ত এবারে নাটক করে মিনহাজের পা চেপে ধরলো। জানের ভয় সবার ই আছে। ওর ও এবারে ভয় করছে। আজ ই না তার শেষ দিন হয়।

‘মামা আমাকে ক্ষমা করে দাও এবারের মতো। আমি আর এমন করবো না ছেড়ে দাও প্লিজ! আমি এরকম ভুল আর করবো না। তুমি যেভাবে বলবে সেভাবেই চলবো। আমাকে ক্ষমা করো মামা!’
মিনহাজ তাও ছাড়লো না। আবারো বেল্টের বা’ড়ী দিবে তখনই সে বাঁধা পেলো।
‘আমাকে ছাড়ো!’ আক্রোশে ফেটে পরা মিনহাজ খেয়াল করলো বিউটি তার হাত চেপে ধরেছে।’
‘ওকে ছেড়ে দিন এবারের মতো। ও তো বলছে এরকম আর করবে না।’

‘তুমি যে প্রেমময়ী তাই মধুর রূপ ছাড়া কারোর অন্য নিকৃষ্ট রূপের কল্পনাও করতে পারো না। কিন্তু আমরা ওর কাছের মানুষ, আমরা সবকিছুর উর্ধ্বে ওর ত্রুটিগুলো আগে দেখতে পাই। ও যে নাটক করছে তা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি। ওকে সুযোগ দিতে দিতে এতো বেড়েছে যে একটা সাইকোতে পরিনত হয়ে গেছে। ওর বয়স কত? অনলি সিক্সটিন ইয়ারস!

এর মধ্যে এতো বা’জে স্বভাবের এতো নিকৃষ্ট, জানুয়ার, নির্দয়া তৈরি হয়েছে। এই টুকু বাচ্চা ছেলে নেশা করে, রাত বিরেতে ক্লাবে যায়, ড্রা’গ’স নেই। এটা কি ওর এসব করার বয়স? পড়াশোনা, খেলাধুলার বয়সে ও এসব করে বেড়াচ্ছে। ওকে অনেক বার এসাইলামেও দিয়েছি যেনো শুধরে যায়। কিন্তু ও ওখানেও থাকেনি। পালিয়ে এসেছে কাউকে না কাউকে অ্যাটাক করে।

জানুয়ারটা মানুষ খু”ন করতেও দ্বিধা বোধ করবে না। চেনো না তুমি ওকে! ও যদি মানুষই হতো তবে নিজের মায়ের গলায় নিজের প্যান্টের বেল্ট চেপে ধরতে পারতো না। পারতো না এভাবে নেশার টাকা না পেয়ে, ছেলে হয়ে মায়ের জন্য গায়ে হাত দিতে। ওকে শুধু মাত্র এই মানুষটার জন্য এখনো জ্যা’ন্ত রেখেছি। তা না হলে আমি ওকে এখানেই পু’তে দিতাম। আজ তুমি বাঁধা দিয়ে ভুল করলে বিউটি!’

‘শান্ত হোন প্লিজ! ওকে এবারের মতো ছেড়ে দিন। আমি বলছি ও ভালো হয়ে যাবে!’
সুমন্ত আঁটসাঁট হয়ে খাটের সঙ্গে লেপ্টে গেলো। সর্বাঙ্গে চিনচিন ব্যথা করছে ওর। তবুও ঠোঁটের কোণে একটা অদ্ভুত হাসি খেলা করছে তার। বিউটি সেটা দেখে ভেতরে ভেতরে ভয় পেলো। মিনহাজ হুংকার দিয়ে উঠলো। চিল্লিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলো। রাগে ক্ষোভে দেয়ালে পাঞ্চ করলো পর পর কয়েকটা। বিউটি সহ্য করতে না পেরে জোর করে সে ঘর থেকে বের করে আনলো। চেয়ারে বসাতে বসাতে বললো,

‘আপনি শান্ত হয়ে বসুন। ঠান্ডা পানি খান!’
মিনহাজ পানি নিলো। পানি খেয়ে জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করতে লাগলো। বিউটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

‘আমি বলছি কি করবেন এরপর আপনি! আপনি আপনার বাড়িতেই কড়া সিকিউরিটির ব্যবস্থা করুন। একটা রুম তৈরি করুন, সেই রুম এমন ভাবে সাজান যেটাকে একদম জেল খানার মতো লাগবে। ঠিক কয়েদীদের যেমন রাখে সেভাবে ওকে বন্দি করে দিন। আর হ্যাঁ অবশ্যই দ্রুত করতে হবে কাজ টা। আমার মনে হচ্ছে ও প্রায় কয়েকদিন শান্তই থাকবে।

জেলখানা তৈরি করে, ওকে ওখানেই দুই বেলা শুকনো রুটি আর ডাল দিবেন খেতে। ওকে বাস্তবতা বোঝাতে হবে। ওর কাছ থেকে ফোন নিয়ে রেখে দিন। এরপর পাশে কড়া সিকিউরিটির ব্যবস্থা করে দিবেন। এমন তালা বানান যেটাকে ভাঙা যাবে না। এই বয়সে একবার খারাপ সঙ্গ পেলে আর সেখান থেকে বেরোনো সহজ হয় না। ওই রুমে খাট, ফ্যান, এয়ারকন্ডিশন কিচ্ছু দিবেন না। ও ঠিক না হওয়া অব্দি এটা করতেউ থাকুন। এটা করে দেখুন কাজে লাগবে!’

মিনহাজ ক্ষনিকের জন্য মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো বিউটির দিকে। কি সুন্দর করে একটা সমাধান বের করলো। এই মেয়েটার কাছে কি সব কিছুর এমন সহজ সমাধান রেডি থাকে?
বিউটি আরও বেশ কিছুক্ষণ থেকে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিলো। মিনহাজ পৌঁছে দিতে চাইলোও বিউটি বারণ করেছে।

বলেছে এখানে আপনাকে প্রয়োজন আছে। পথিমধ্যে সুপ্রিয় এসে হাজির। তার সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিলো। সুপ্রিয়র পরনে, মিষ্টি কালারের শার্ট। তাকে অদ্ভুত সুন্দর মানিয়েছে। ফর্সা শরীরে দারুন ভাবে ফুটে উঠেছে! বিউটি এগিয়ে গিয়ে গাড়িতে চেপে বসলো। সুপ্রিয় মিষ্টি করে হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। বিউটি মনে হয় সেই হাসিতে ঘায়েল হয়ে গেলো! ইশ কি সুন্দর করে হাসে তার সুপ্রিয় ভাই।

‘উমুহু ম্যাচিং ম্যাচিং!’ কথা শেষ করেই বিউটি সুপ্রিয়কে চিমটি কাটলো।
‘আউচ্ এটা কি হলো?’
‘এই দেখুন, আজ আপনিও মিষ্টি রঙের শার্ট পড়েছেন আর আমিও! ম্যাচিং ম্যাচিং। তাই চিমটি কাটলাম।’
‘ইইহ তুই কি বাচ্চা? বাচ্চাদের মতো খামচাখামচি করছিস!’

‘খামচাখামচি না ছোট্ট করে চিমটি দিয়েছি!’
‘একই তো দাঁড়ালো। এই তোর নখ দেখি!’
বিউটি তার হাত সুপ্রিয়ত সামনে ধরলো। সুপ্রিয় নাক মুখ কুচকে বিকৃত করে বললো, ‘ইশ কি বড় নখ। এতো নোংরা কেন তুই? আজ ই নখ ফেলে দিবি!’

‘ফেলবো না। অনেক কষ্টে বড় করেছি!’
‘আচ্ছা দেখা যাক তবে?’
বলেই সুপ্রিয় গাড়ি থামালো। বিউটি বোকার মতো তাকিয়ে রইলো সুপ্রিয়র দিকে। জোর করে বিউটির হাত চেপে ধরলো সুপ্রিয়।

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ২৬

তারপর নেইল কা’টার দিয়ে ফটাফট তার নখ কে’টে ফেললো। বিউটি অসহায়,হতভম্ব হয়ে কাঁদো কাঁদো ফেস করে তাকিয়ে রইলো সুপ্রিয়র দিকে। সুপ্রিয় মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। বিউটি মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে ফিরে রইলো। সুপ্রিয় তা দেখে হোহো করে হেসে উঠলো!

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ২৮