হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩৮

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩৮
সাইয়ারা মম

আজকের সকালে একটা অন্যরকমের প্রশান্তি রয়েছে । কারণ আজকে একটি ভালোবাসার পরিপূর্ণতার দিন । মিহু নিজের ভেজা চুলগুলো খুলে দিল । ঘুমন্ত আরফানের দিকে তাকাতেই মুচকি হাসি দিল । তারপর নিচে চলে গেল নাস্তা তৈরি করতে । মিহু নিজের আচল কোমড়ে বেঁধে কাজে নেমে পড়ল । কাজে দক্ষ হওয়ায় মিহু সব কাজগুলোই অনায়সেই করে ফেলল । কাজ করতে করতে হঠাৎ কারো ভালোবাসার দুটি হাত মিহুর কোমড় আকড়ে ধরল । মিহু একটা লাজুক হাসি দিয়ে বলল

– কোমড় ছাড়ুন । দেখছেন তো কাজ করছি
আরফান নিজের হাত আরো টাইট করে মিহুর কাধে থুতনি রেখে বলল
– তো তুমি তোমার কাজ করো । আমি কি নিষেধ করেছি ?
– আরে আমার কাজে তো সমস্যা হচ্ছে । আপনি আপনার কাজ করুন না ।
– আমি তো আমার কাজই করছি

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বলে টুস করে মিহুর গালে চুমু খেলো । মিহু নিজের কাজ রেখে আরফানের হাত ছাড়াতে চাইল কিন্তু আরফান ছাড়ল না । মিহু বাধ্য হয়ে আরফানের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকল । আরফান একটা মিষ্টি হাসি দিল। তারপর বলল
– স্বইচ্ছায় চুমু করিলে দান
আমি করিব প্রস্থান
মিহু একটা বাকা হাসি দিয়ে বলল

– গরম পাত্র পড়িলে হাতে
প্রস্থান করিবেন স্বইচ্ছাতে
আরফান হতভম্ব হয়ে গেল মিহুর কথাতে । মিহু সামনে রাখা গরম কফির পাত্র আরফানের হাতে স্পর্শ করাতেই আরফান চমকে সরে গেল । মিহু তা দেখে হেসে দিল । আরফান আকস্মিকতা কাটিয়ে মিহুর দিকে তাকিয়ে বলল
– রেডি থেকো । আমার ও সময় আসবে , তখন দেখা যাবে ।

গতদিন রাতে এবাড়িতে এসে পিয়াস তেমন কিছুই জানতে পারেনি যতটা এই কয়েক মিনিটে জেনেছে । ও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বিদিশার দিকে । বিদিশাকে দেখতে আগে যতটা না হাসি খুশি দেখাতো এখন তার এক ভাগ ও নাই । চেহারায় একটা মলিনতার ছাপ এসে গিয়েছে । নাকে দেওয়া হীরের নাকফুলটা জ্বল জ্বল করছে । আগে খেয়াল না করলেও এখন ঐ উজ্জ্বলতা পিয়াসের চোখে প্রতিফলিত হচ্ছে । পিয়াস সকালবেলা পুকুর ঘাটে বসেছিল । সেখানে পাতি হাসের দল নিজেদের মতো করে খেলা করছিল তখন বিদিশা এসে জিজ্ঞেস করে

– আপনি কি আসলে এবনরমাল ?
পিয়াস হতভম্ব হয়ে বিদিশাকে বলল – মানে ?
– আপনি কি বুঝেও কিছু না বোঝার ভান করছেন ?
– দেখো বিদিশা আমি তোমার কথা কিছুই বুঝতে পারছি না ।
– দেখুন আপনাকে যা বলার আমি সরাসরি ই বলতে চাই । আপনি কি সেই এস এম এস টির মানে আদৌ বুঝেন নি ? নাকি সেটাও বুঝে না বোঝার ভান করেছেন ?

– হ্যাঁ আমি বুঝেছি কেউ আমাকে ভালোবাসে কিন্তু সে কে ? সেটাইতো আমি খুঁজে পেলাম না । তবে এর সাথে তোমার সম্পর্ক কি ?
– যদি বলি সে আমি ?
পিয়াস বিদিশার দিকে একটু সময় তাকিয়ে থাকলো । তারপর উচ্চস্বরে হেসে দিয়ে বলল – তুমি ? মজা করছো ?
বিদিশা কঠিন মেজাজে বলল – এটা কি মজা করার সময়? আর আপনার কেন মনে হয় আমি হতে পারব না ?
পিয়াস হাসি থামিয়ে বলল – না আমি ওরকম ভাবে বলিনি । তুমি যদি ঐ এস এম এস টি দিয়েই থাকো তাহলে আমাকে ব্লক করে রেখেছো কেন ? আর কথাটি তো অনেক আগেই বলে দিতে পারতে

– আপনি কি জানেন আমাদের বাসায় সবাই কেন এসেছে ?
– ঈদ কাটাতে
– জ্বি না । আমার বিয়ে উপলক্ষ্যে । এই যে দেখছেন নাকফুল , এটা আমাকে দেখতে এসে পড়িয়ে গিয়েছে । আর কয়েকদিন পরেই বিয়ে ।

পিয়াস তখন থেকে স্তব্ধ হয়ে বসল । বিদিশার কথাগুলো মস্তিষ্কে যেতে একটু টাইম নিচ্ছে । পিয়াস কে এরকম তাকিয়ে থাকতে দেখে বিদিশা ঘাটে নেমে পড়ল । সকাল বেলা পুকুর থেকে পানি নিতে এসে দেখে পিয়াস এখানে বসে আছে । তাই মনের কথাগুলো আর চেপে রাখতে পারল না । কলসে পানি নিয়ে উঠে আসার সময় পিয়াস কে বলল

– আমি জানিনা আপনার মনের মধ্যে আমার জন্য কোনো জায়গা আছে কিনা তবে আমি আপনাকে আমার মনের কথা জানিয়ে দিয়েছি । এখন আপনি চাইলে যা খুশি তাই করতে পারেন । তবে মনে রেখেন এই সপ্তাহের মধ্যেই আমার বিয়ে ।
বলে বিদিশা চলে গেল বাড়ির উদ্দেশ্যে । পিয়াস কিছুক্ষণ ভাবলো আসলেই কি ওর মনের মধ্যে বিদিশার জন্য কোনো ফিলিংস আছে ? একজনের অনুভূতি দিয়ে তো আর একটি সম্পর্ক জোড়া যায় না । আর এখন তো বিদিশার বিয়েও ঠিক হয়ে গিয়েছে ।

গ্রাম সাইড এলাকা হলেও কিছুটা শহুরে ধাচ রয়েছে এখানে । বিদিশাদের বাড়িটা পাকা বাড়ি । সব আত্মীয় স্বজন এখানে গিজ গিজ করছে । তবে মাহিনের চোখ শুধু একজনকেই খুঁজছে যদিও সে এখানে আসেই নি । একটু আগে একজন নীল শাড়ি পড়া মেয়েকে নীলু ভেবে ডাক দিয়েছিল কিন্তু সে তো আর নীলু না । সবাই এদিকে ওদিকে ব্যস্ত হলেও মাহিন সোফায় চুপ করে বসে আছে । নেহাল এসে ওর পাশে বসল

– কি মন খারাপ ?
– না ।
– তাহলে তোমাকে এরকম দেখাচ্ছে কেন ?
– এমনিই
– আচ্ছা তুমি কি নীলুকে দেখেছো ? আমি কালকে ওকে খুজলাম পেলাম না আবার সকালেও খুজলাম , এখনো পেলাম না
– নীলু নাকি বাসায় গিয়েছে
– সেটা আমাকে একবার বলে যাবে না । দেখেছো কতটা বেখেয়ালী মেয়ে । থাক আরফান ভাই বাড়িতে আছে যেহেতু তাই টেনশন করার কোনো কারণ নেই
– হুম

মিহু সেই সকাল থেকে ঘ্যান ঘ্যান করছে বিদিশাদের বাসায় যাবে কিন্তু আরফান মিহুর কোনো কথাই শুনছে না । ল্যাপটপ যে সেই কখন থেকে কোলে নিয়ে বসে আছে সেরকমই বসে আছে । মিহুর কথার কোনো উত্তরই দিচ্ছে না । মিহু রেগে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে গেল । স্ক্রিনে গেমস দেখে আরফানকে বলল
– আপনি এখন গেমস খেলছেন ? আমার কথার কোনো মূল্যই নেই আপনার কাছে ?
– আমার মূল্য যার কাছে নাই সে এখন আমার কাছে মূল্য আশা করছে কেন ?
মিহু একটা দম ফেলে বলল – আপনি ঐ বিষয় টি নিয়ে এখনো পড়ে আছেন ? চলুন আপনাকে একটা না একশটা চুমু দিব এখন চলুন

– ডান
মিহু কথাটা এমনিতেই বলল কিন্তু আরফান খুশি হয়ে গেল মিহুর এই শর্তে । মিহু কিছু বলার আগেই আরফান আবার বলে উঠল
– শর্ত যেন মনে থাকে ।
– আরে আমি তো এমনিই বললাম
– সেটা যেভাবেই হোক আমি জানি না । তুমি যেহেতু বলেছো সেহেতু তোমাকে অবশ্যই শর্ত মানতে হবে । যাও এখন রেডি হয়ে এসে ।
মিহু হতভম্ব হয়ে চলে গেল রেডি হতে । আরফান কাউকে ফোন দিয়ে বলল

– আজকে সন্ধ্যায় একটা রুম বুক করে রাখুন । আর সেখানে যেন কোনো রকম সিকিউরিটির ঘাটতি না হয় । আজকের সন্ধ্যা আমার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ । যত টাকা লাগুগ আজকের সিকিউরিটি যেন কড়া হয় ।
আরফান নিজেও রেডি হয়ে নিল । রেডি হয়ে বডি স্প্রে দিতে গিয়ে ওর দেওয়া পারফিউম টির দিকে চোখ গেল । ফারিশের কথা মনে পড়তেই হাতের স্প্রে টা ছুড়ে ফেলে দিল ।

– ফারিশ আর যতই হোক আরফান আদিত্য বিশ্বাস ঘাতকদের কখনো ক্ষমা করে না । তুই কি ভেবেছিস তুই পার পেয়ে যাবি এমন কাজ করে । কখনোই না , তোকে এর শাস্তি পেতেই হবে ।
মিহু কোনো কিছুর শব্দ পেয়ে দ্রুত আরফানের কাছে এলো । আরফানকে এমন রাগন্বিত হতে দেখে অস্থির হয়ে গেল ।
– আপনার কি হয়েছে এরকম করছেন কেন ?
– কিছু হয় নি মিহু তোমার কাজে তুমি যাও

– আপনি কি আপনার কম্পানি নিয়ে আপসেট আছেন ?
– এটা নিয়ে তোমার টেনশন করা লাগবে না । তুমি যাও
মিহু হঠাৎ করেই আরফানের গালে একটা চুমু দিল । আরফান অবাক হয়ে গিয়েছে ।
– রাগ কমেছে ?
আরফান হ্যাঁ বলতে নিয়েও আবার মাথা নাড়িয়ে বলল
– না

মিহু আরেকটি চুমু দিতেই আরফান আবার মাথা নাড়ালো । এবার মিহু চুমু দিতে নিয়েও সরে এসে বলল
– আপনি আসলেই একটা বাটপার
– নিজের হাজবেন্ড কে কেউ কি বাটপার বলে ?
– আপনার রিজার্ভ আছে এখন 98 টি । দুটি শেষ , মনে থাকে যেন ।
বলে মিহু চলে গেল । আরফান একটু হাসলো ।

রাস্তায় জ্যাম থাকার কারণে মিহু অতিষ্ঠ হয়ে গেল । আজকে আরফান গাড়ি নেয় নি । বাইক নিয়ে বের হয়েছে । মিহু বোরকা পড়ে আছে দেখেও একটা ছেলে বার বার ওর দিকে তাকাচ্ছে । আরফান বলল
– আমার রিজার্ভ থেকে আরো আটটা এখন দাও
মিহু চারপাশে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে বলল – এখন ?

– হ্যাঁ
– কিন্তু
– না কোনো কিন্তু নেই
আরফানের জেদের কাছে হেরে গিয়ে মিহু আরফানের কথা মানলো । আরফান সেই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বলল – অন্য কোথাও চোখ দে না হলে চোখ শেষ হয়ে যাবে ।
বিদিশাদের বাসায় যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেল । বাইক থেকে মিহু নামার পরে আরফান বলল
– তাহলে তুমি যাও ।

মিহু অবাক হয়ে বলল – আপনি যাবেন না ?
– না , আমার একটু কাজ আছে । আমি এখন যেতে পারব না । তবে কথা দিচ্ছি বিদিশার বিয়ের সময় অবশ্যই আসবো ।
– কী বিদিশার বিয়ে ? আমি তো জানি না । আপনি জানলেন কী করে ?
– তুমি গিয়ে জানবে । আর আমার একটু কাজ আছে তাই এখন এ বিষয়ে বলতে পারছি না । তবে সাবধানে থেকো আর আমার বোন আর তোমার খেয়াল রেখো ঠিক আছে ?

মিহু ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে । আরফান একটু হালকা হেসে বলল
– এখন আমার পাওনা থেকে কয়েকটা দাও ।
মিহু লজ্জা পেয়ে বলল – আপনি কখনো শুধরাবেন না । আমি গেলাম ।
বলে মিহু চলে যাওয়া ধরল । আরফান জোরে জোরে বলল – তাহলে কিন্তু পরে ডবল চাই ।
বলে বাইক স্টার্ট দিল । আর তখনই মিহু আরফানের গালে চুমু দিয়ে দৌড় দিল । আরফান হেসে দিয়ে চলে গেল ।
– তাহলে আপনিই সেই ব্যক্তি যে কিনা আমার আর মিহুর শুভাকাঙ্ক্ষী ।

– তাহলে এতদিনে চিনতে পেরেছো । আমিতো ভাবলাম সরোয়ার কাজীর রহস্য মনে হয় কেউ জানতেই পারবে না ।
আরফান নিজের ফোনটা বের করে টেবিলে রেখে চেয়ারে রিল্যাক্স হয়ে বসল । তারপর বলল
– আমার মনে হয় আপনাকে কোথাও দেখেছি
আরফানের সামনে বসা মহিলাটি হেসে বলল

– ততোমার স্মৃতি শক্তি তো খুব ভালো । দেখি তুমি আমাকে মনে করতে পারো কিনা ?
আরফান একটু ভেবে বলল – আমি যদি ভুল না করি তাহলে আপনি ঐদিন আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন আর একটা ঠিকানায় আসতে বলেছিলেন কিন্তু সেখানে মিহুর দাদু আগে থেকেই বসে ছিল । তারপর আপনি ঐদিন আমাকে বলেছিলেন আপনি আমার চাচাতো ভাইয়ের কোনো আত্মীয় হন ।

– তুমি ঠিকই ধরেছো । এখন বলো তুমি কি চাও
– আমি সব কিছু পরিষ্কার ভাবে জানতে চাচ্ছি । এই রহস্য এর উদঘাটন করতে চাচ্ছি । আমি জানি আপনি এই সবের সাথে সম্পর্কিত । এখন আমি মূলত সব কিছুই জানতে চাচ্ছি ।
– ওকে । আমি বলতে পারি তবে তুমি কোনভাবে জানতে চাও । আমার কাছ থেকে সরাসরি নাকি এই ডায়েরির মাধ্যমে ।
বলে মিহুর মায়ের ডায়েরি টা আরফানের সামনে রাখল ।

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩৭

( আসসালামু আলাইকুম । আজকে একটা বিষয় বলি । আপনারা কোনভাবে মিহুর মায়ের রহস্য জানতে চাচ্ছেন? ডায়েরির মাধ্যমে নাকি সরাসরি? কমেন্টে জানান । আপনাদের মতামতের ভিত্তিতে পরের পর্ব টা দেবো । ধন্যবাদ । )

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩৯

1 COMMENT

  1. ডায়রির মাধ্যমে এবং নীলুর ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না
    আপু তুমি খুব ভালো গল্প লেখো ধন্যবাদ

Comments are closed.