হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩৯

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩৯
সাইয়ারা মম

আরফান ডায়েরি টা হাতে নিয়ে তার সামনে বসা মহিলাকে বলল
– ডায়েরী পড়ে তো জানতেই পারব কিন্তু তার আগে আপনার পরিচয় আর এই সবের সাথে সম্পর্ক জানতে চাই ।
মহিলাটি কিঞ্চিত হেসে বলল – রহস্য জানার আগে আমার পরিচয় টা তুমি বুঝতে পারবে না । মিহুর মা মানে প্রিয়ন্তি খুব ভালো একটা কাজ করেছে । সব তথ্য লিখে রেখে গিয়েছে । তুমি পড়লেই পরিষ্কার বুঝতে পারবে । একদম আমার পরিচয় ও

– আচ্ছা তাহলে ডায়েরি টা আপনার কাছে এলো কি করে ?
– সরোয়ার কাজী তোমার কাছ থেকে ডায়েরীটা সরিয়েছিল আর আমি সরিয়েছি তার কাছ থেকে ।
– তাহলে আপনি যদি জেনে থাকেন এই রহস্য , আপনি কেন এর সমাধান করছেন না ।
তিনি মৃদু হাসলেন । বললেন
– সবাই সব কিছু জানলেও সবার সব কিছু করার ক্ষমতা থাকে না । আমি পারিনি এর সমাধান করতে কিন্তু আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করতে পারি ।
– আমি আপনার কাছ থেকে জানতে চাই আসল কাহিনী কী ?
-আচ্ছা তোমাকে আমি বলছি বলে কয়েকটা দম নিলেন । তারপর বলতে শুরু করলেন

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সরোয়ার কাজী হলো কাজী বংশের ছোট ছেলে । পড়াশোনায় ভালো হওয়ার কারণে শহরে বসে পড়াশোনা করেছে । মেধাবী আর বুদ্ধিমত্তার কারণে বড় ভাইয়ের অনেক প্রিয় । কাজী বংশের কোনো কিছুতে কমতি ছিল না আর কখনোই কোনো কিছুর অভাব ছিল না । সরোয়ার কাজী যখন যা চাইতো কখনো তার ভাই না বলত না । সে ভাবতো আমি পড়াশোনা করতে পারিনি তো কি হয়েছে? আমার ভাই তো করছে । তার জন্য যত টাকা লাগে আমি দেবো । কিন্তু কথায় আছে না ? যত পাই তত চাই । সরোয়ার কাজীর টাকার নেশা হয়ে গিয়েছিল । তাই তো বৈধ অবৈধ এমন কি আপন পর কিছুই দেখেনি । পড়াশোনায় মেধাবী হওয়ার কারণে বিভিন্ন অফার তার কাছে আসত ।

– বিভিন্ন অফার বলতে কী বোঝাচ্ছেন?
– বিদেশ থেকে অনেক কম্পানি তাকে অফার দিয়েছিল সেখানে গিয়ে রিসার্চ করার জন্য । কিন্তু তিনি সেটা করলেন না । কারণ তিনি চাইতেন নিজে একটা কিছু করবেন ।
– আপনি প্লিজ খোলসা করে বলুন বিষয় টা । আসলে তিনি কি কাজ করেছে বা কি কাজ এখন করছেন ?

– তার কাজ বলতে গেলে এক কথায় মানুষ নিয়ে । তিনি তার রিসার্চের জন্য মানুষকে ব্যবহার করেন । তিনি বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক তৈরি করে মানুষের ওপর প্রয়োগ করেন । যেগুলোতে সফল হন সেগুলো তিনি বিদেশে বিক্রি করে দেন ।
– আরেকটু গুছিয়ে বলেন বিষয় টা । আমি যতদূর জানি তিনি শুধু মেয়েদের ব্যবহার করেন ।
– হ্যাঁ তুমি ঠিকই জানো । তিনি মেয়েদের ই ব্যবহার করতেন আর এখনো করেন । আর এর কারণ টা হলো মেয়েদের শিকার করা সহজ । মেয়েরা সহজেই তার শিকারে পরিণত হয় । তুমি কি তালেব মাস্টারের কথা জানো ?
– আমি কিছুটা পড়েছি তালেব মাস্টারের কথা । তার বোনকে নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল ।

– হ্যাঁ তার বোন ই ছিল সরোয়ার কাজীর প্রথম শিকার । তার বোন লেখাপড়ায় ভালো ছিল এই জন্য সরোয়ার কাজীর নজরে পড়েছে । তাকে কোনোভাবে ভুলিয়ে তিনি তার প্রথম এক্সপেরিমেন্ট করেছেন । তবে ঐ সময় যন্ত্রপাতি তত উন্নত না হওয়ায় কারণে মেয়ে টা মারা গিয়েছিল আর সরোয়ার কাজীর টাকার জোরে তালেব মাস্টারকে ফাসিয়ে দেয় তার বোনকে খুন করার অভিযোগে । আমি জানি তুমি অনেক কিছুই বুঝনি ।

আমি তোমাকে সংক্ষেপে সরোয়ার কাজীর কিছু তথ্য জানিয়ে রাখছি । ডায়েরি তে তুমি বিস্তারিত জানতে পারবে । তবে দিন দিন উন্নত হওয়ার কারণে সরোয়ার কাজী নিজের কাজে সফল হতে লাগল । কিন্তু তিনি এক সময় একজন সহকারীর শূন্যতা অনুভব করতে লাগলেন যে কিনা রসায়ন বিষয়ে অভিজ্ঞ । কারণ তার কাজ তাহলে আরো সহজ হতো । তিনি অনেক খোঁজার পরেও তার সহযোগী পেলেন না ।

তারপর তিনি দেখলেন যে তার ভাইঝি ই অনেক ট্যালেন্টেড । তাই তিনি একটা বদ্ধ পরিকল্পনা করলেন । প্রিয়ন্তিকে এই বিষয়ে কাজে লাগাবেন । সব কিছু ঠিক ভাবেই চলছিল । কিন্তু এক সময় প্রিয়ন্তির ফুফু ওর চাচার বিষয় টা জেনে যায় কারণ তালেব মাস্টারের চিঠি টা তার কাছে ছিল । সেটা পড়ার পরে সরোয়ার কাজীর কাছে বিষয় টির সত্যতা জানতে চাইলে তিনি নিজের বোনকেই মেরে ফেলেন ।

বলার পরে মহিলাটি একটু থামলো । তার চোখে পানি চিক চিক করছে । তিনি বিষয়টি পাত্তা না দিয়ে বলতে লাগলেন
– তাকে খুন করার পরে তার চেহারা থেতলে দেয় । তারপর ফেলে রাখে জঙ্গলে । আর সরোয়ার কাজী এমন খারাপ যে এই খুনের দায় দেয় নিজের বড় ছেলে করিমের ওপরে

– বড় ছেলে মানে মাহিনের বাবা ?
–হ্যাঁ ।
– কিন্তু কেন ?
– কারণ করিম সরোয়ারের বিরোধী ছিল । ও চাইতো প্রিয়ন্তিকে বাঁচাতে । এমন কি এই সম্পর্কে আগেই সতর্ক করতে চেয়েছিল কিন্তু সরোয়ারের জন্য পারেনি । সরোয়ার অনেক আগেই বিয়ে করেছিল শহরে বসে যে বিষয়টা সবার অজ্ঞাত ছিল । প্রিয়ন্তির কাছে ওদের পরিচয় করে দেওয়া হয়েছিল তার বন্ধুর পরিবার হিসেবে । আর সরোয়ার কাজী ই কারসাজি করে করিমকে ফাঁসির আসামি বানিয়ে দেয় ।

আরো কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই একটা গুলি এসে দেওয়ালে রাখা একটা পেইন্টিং ভেঙে দেয় । মহিলাটি তাড়াহুড়ো করে উঠে বলে
– সব কিছু তুমি ডায়েরি থেকেই জানতে পারবে । আমাকে এখন যেতে হবে । সরোয়ার কাজীর লোক জেনে গিয়েছে আমি এখানে । আর হ্যাঁ ডায়েরিটা যেন কেউ না দেখে কারণ তিনি এখন পর্যন্ত ডায়েরি সরানোর ব্যাপারটি জানতে পারেন নি ।

– রুবেল তুমি নাকি একটা অপারেশন নিজ চোখে দেখতে চেয়েছিলে কীভাবে কিডনি বের করা হয় ?
– হ্যাঁ । কিন্তু মামা তো কাউকে তার কাজের কাছে এলাউ করে না । আমি তো আবার লেখাপড়া জানিনা
– তোমার মামার কাজে লেখাপড়া জানা লাগে না । আর তাছাড়াও তোমার কথাবার্তায় কিন্তু এগুলো বোঝা যায় না । থাক , তুমি কি দেখতে চাও ? আমাদের কাছে একটা মেয়ে বেশী আছে । সে অনেক কিছুই জেনে ফেলেছে আমাদের ব্যপারে । যেহেতু মেয়েটাকে রিসার্চের কোনো কাজে লাগবে না তাই আপাতত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো রেখে দিতে বলেছে ।

– কোন মেয়েটা বেশী আছে ?আমিতো সবগুলো এনেছি যেগুলো বলা হয়েছে ।
– ঐ যে একটা নীল শাড়ি পড়া আছে না ?
– তুলিদের বাসা থেকে যাকে এনেছি ?
– হ্যাঁ ।
– কিন্তু তুলি যে বলল মামা নাকি বলেছে ওকেও নিয়ে আসতে ?
– সে যাই হোক তোমার মামাই বলেছে মেয়েটাকে মেরে ফেলতে ।
– কিন্তু মেয়েটা কোথায়?
-রিসার্চ রুমে রাখা আছে । জ্ঞান ফেরেনি , এখনো অজ্ঞান ।

নীলুর মাথাটা ভার হয়ে আছে । অনেকক্ষণ ধরে ক্লোরফর্মের কারণে অজ্ঞান অবস্থায় ছিল । সব কিছু মনে করার চেষ্টা করতেই মনে পড়ে দাদুর রুমে থাকা অবস্থায় কোনো এক অচেনা ব্যক্তি এসেছিল । যে ওকে জোর করে একটা আতরের গোডাউনে এনে রেখেছিল আর অনেক কথাবার্তা বলছিল । তারা খেয়াল করেনি নীলুর জ্ঞান ফিরেছে । যখন বুঝতে পারল তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে কারণ নীলু সব কিছুই জেনে গিয়েছে তাই তাকে আবার অজ্ঞান করে রেখেছিল ।

চারদিকে তাকাতেই দেখতে পেল বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আর কম্পিউটার । রুমটা একদম সাদা । চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে একটা দরজার কাছে এলো । দরজাটা খুলতে একটা পাসওয়ার্ড চাইছে । নীলু ঐসময় অনেক কিছু শুনতে পেরেছিল তাই পাসওয়ার্ড টা জানে । কারণ ওরা বলেছিল সব দরজায় একই লক থাকে । পাসওয়ার্ড দিতেই দরজা খুলে গেল । নীলু এক আজব দুনিয়ায় প্রবেশ করল ।

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৩৮

অনেক বড় বড় কাচের পাত্রের মধ্যে বিভিন্ন কেমিক্যাল এর মধ্যে বিভিন্ন জিনিস রাখা । নীলু বুঝতে পারল না জিনিস গুলো কি । সামনে গিয়ে ভালো করে লক্ষ্য করতেই নীলুর মাথা ঘুরে এলো । এসব কি ?

হৃদমাঝারে তুমি পর্ব ৪০

1 COMMENT

Comments are closed.