হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১৭+১৮

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১৭+১৮
সাদিয়া জাহান উম্মি

সাখাওয়াত বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে জায়ান আর আরাবী।জায়ানের অফিসে নাকি জরুরি মিটিং পরে গিয়েছে সেখানেই যেতে হবে ওকে।এইজন্যে বিকেলে যাওয়ার কথা থাকলেও সকালের নাস্তা করেই ছুটেছে তারা।আরাবীকে বাড়ির গেটের সামনে নামিয়ে দিলো জায়ান।বললো,

-‘ সাবধানে যাও।আমি দ্রুতই ফিরবো।’
-‘ হু!’
জায়ান চলে গেলো।আরাবী লম্বা শেষ ফেলে বাড়ির ভীতরে প্রবেশ করলো।তারপর দারোয়ানের উদ্দেশ্যে বলে,
-‘ আসসালামু আলাইকুম চাচা।ভালো আছেন?’
দারোয়ান চাচা যেন বেজায় খুশি হলেন।তার পান খাওয়া লাল দাঁতগুলো দেখিয়ে হাসি দিয়ে বলেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘ ওয়া আলাইকুমুস সালাম মা।ভালো আছি।আপনে ভালো আছেন?’
-‘ উফ,চাচা আমি আপনার মেয়ের বয়সী।আমায় তুমি করে বললেই খুশি হবো।’
-‘ আইচ্ছা।’
আরাবী মুচঁকি হেসে সামনের দিকে পা বাড়ালো।কিন্তু বাড়ির সদর দরজা খোলা থাকায় ভ্রু-কুচকে আসলো ওর।নিস্তব্ধে বাড়িতে প্রবেশ করতেই কর্ণকুহরে কিছু কটুক্তি বাক্য শ্রবণ হতেই পা-জোড়া থেমে যায় আরবীর।

-‘ একটা কথা বলি ভাবি,রাগ করবেন নাহ।জায়ান বাবা যেই চাঁদের মতো সুন্দর।সেই ক্ষেত্রে কিন্তু পুত্রবধুটা ওতো সুন্দরী আনতে পারেননি।গায়ের রঙটা এতো চাঁপা। কি দেখে যে এমন একটা মেয়েকে নিজের ছেলের বউ করে আনলেন।’
শিরিন নামের মহিলাটি একনাগাড়ে কথাগুলো বললো সাথি বেগমের উদ্দেশ্যে।সাথি বেগম নিজের পুত্রবধু সম্পর্কে এমন কথা শুনে তার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।তিনি বেশ শক্ত কণ্ঠে বলেন,

-‘ যা বলেছেন তা যেন দ্বিতীয়বার আমি আর না শুনি শিরিন ভাবি।এসেছেন আমার বাড়িতে ভালো কথা।আমার ছেলে আর ছেলের বউকে দোয়া করে দিয়ে যাবেন।অযথা বেহুদা কথা বলবেন নাহ।তাহলে সদর দরজা সামনেই আছে আশা করি আমার আর চিনিয়ে দেওয়া লাগবে না।’

সাথি বেগমের কথায় অপমানে মুখ থমথমে হয়ে আসে শিরিন বেগমের।তিনি উঠে দাড়ালেন।রাগি গলায় বলেন,
-‘ এতো বড় অপমান করলেন ভাবি। ঠিক আছে আমিও দেখে নিবো কয়দিন আপনি এরকম থাকতে পারেন।ছেলের বউ আপনাকে নাকে দড়ি দিয়ে যখন ঘুরাবে তখন টের পাবেন।তখন কেঁদেও কুলাতে পারবেন নাহ।’
-‘ সে আমারটা আমি বুঝে নেবো।আপনার চিন্তা না করলেও হবে।’

শিরিন বেগম ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে দরজার সামনে দাঁড়ানো আরাবীকে চোখ রাঙিয়ে যেতে ভুললেন নাহ।এদিকে সাথি বেগম আরাবীকে দেখে দ্রুত পায়ে ওর কাছে এসে দাড়ালেন।আরাবীর গালে আদুরে স্পর্শ করে বলে,

-‘ বোকা মেয়ে মন খারাপ করছো কেন?মন খারাপ করবে না।এইগুলো তো তুমি জানোই আমাদের সমাজে এই ধরনের মানুষের অভাব নেই। এসব মানুষদের জন্যে একটুও মন খারাপ করবে নাহ।’
আরাবী মন একটুও খারাপ হয়নি। বরংচ বেশ ভালো লেগেছে সাথি বেগমের প্রতিবাদি কথাগুলো শুনে।আরাবী মুচঁকি হেসে বলে,

-‘ আমার মন খারাপ একদম হয়নি মা।বাহিরের লোকদের কথা শুনে আমি মন খারাপ করবো কেন?’
সাথি বেগম খুশি হয়ে বললেন,
-‘ এইতো আমার মেয়ে বুঝতে পেরেছে।’
আরাবী হেসে দিলো।সাথি বেগম আবার বললেন,
-‘ কি ব্যাপার তোমরা তো আজ বিকেলে আসতে।সকালেই এসে পরলে যে?আর জায়ান কোথায়?’
আরাবী বললো,

-‘ মা উনার নাকি জরুরি কাজ পরে গিয়েছে অফিসে।তাই সেখানেই গিয়েছেন।আমাকে থাকতে বলেছিলেন।আমিই এসে পরেছি।’
-‘ খেয়েছো কিছু?’
-‘ হ্যা খেয়েছি।’
-‘ তাহলে যাও ফ্রেস হয়ে আসো।’
আরাবী মাথা দুলিয়ে ওর দোতলায় চলে গেলো।ফ্রেস হয়ে নিচে চলে আসলো।বসার ঘরে কাউকে দেখতে না পেয়ে সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো ও।গিয়ে দেখে সাথি বেগম আর মিলি বেগম রান্না করছেন।আরাবী তাদের কাছে গিয়ে মুচঁকি হেসে বলেন,

-‘ কি রান্না করছেন মায়েরা আমার।’
আরাবীর মুখে ‘মায়েরা ‘ শব্দ শুনে সাথি আর মিলি দুজনে হেসে দিলেন। আরাবীও হাসলো।মিলি বেগম বলেন,
-‘ এইতো দুপুরের রান্না করছিলাম আরাবী।’
-‘ কি কি রান্না করবেন?’
-‘ আকাশে মেঘলা মেঘলা ভাব তাই ভাবি আর আমি ভাবলাম খিচুরি রান্না করা যাক।সাথে হাঁসের গোস্ত,বেগুন ভাজা,ডিম ভাজা,মিষ্টি কুমড়া ভাজা,ডালের বড়া করবো।নূর আবার হাঁস খায় না তাই ওর জন্যে আলাদা করে একটু মুরগির গোস্ত রান্না করবো।’

খিচুরির কথা শুনে জিভে জল চলে গেলো আরাবীর।খুশি হয়ে বলে,
-‘ ওয়াহ,খিচুরি আমার খুব প্রিয় খাবার।’
সাথি বেগম তরকারি কাটছিলেন। আরাবীর কথা শুনে বলেন,
-‘ আমার জায়ানেরও খিচুরি অনেক পছন্দ।’
জায়ানের খিচুরি পছন্দ শুনে আরাবীর মুখটা একটুখানি হয়ে গেলো।মিলি বেগম তা দেখে বলেন,

-‘ কি হয়েছে?মুখটা ওমন করলে কেন?’
-‘ আপনার ছেলের খিচুরি পছন্দ। আমি প্রায় সব রান্না পারলেও এই খিচুরিটা রান্না করতে পারি না।আমারটা একটুও মজা হয় না।’
ভোঁতা মুখ করে বললো আরাবী।মিলি বেগম আরাবীর কথার ধরণ দেখে শব্দ করে হেসে দিলেন।সাথি বেগম আরাবীকে বললেন,

-‘ আজ রান্না করবে?’
-‘ কিন্তু আমি তো পারি নাহ।’
-‘ আমি আছিতো। আমি দেখিয়ে দিবো।’
খুশিতে চোখ চিকচিক করে উঠলো আরাবীর।বললো,
-‘ সত্যি?’
-‘ হ্যা।’
-‘ তাহলে বলুন কি কি করতে হবে আমায়।আমি কিন্তু গোস্তও কিন্তু আমি রান্না করবো।’
-‘ আচ্ছা বাবা আসো।’

আরাবীর খুশি দেখে কে?সে তার দুই মায়ের সাথে লেগে পরলো রান্নার কাজে।রান্না প্রায় শেষ।চুলোতে শুধু খিচুরি নিভু আঁচে দিয়ে আরাবী হাত ধুয়ে নিলো।সাথি বেগম বলেন,
-‘ যাও গোসল করে নেও গিয়ে।ঘেমে গিয়েছো।নামাজটাও পরে নিও।’
-‘ আপনারা আগে যান মা।আমি আছি এখানে।’

-‘ উফ,মেয়েটা বেশি বুঝে।যাও তো তুমি আগে গোসল করে আসো।হাতটাতেও অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে নিও।’
-‘ মা চিন্তা করবেন না তো।এই এতোটুকু ছ্যাকা লেগেছে।এতে কিছু হবে না।’
-‘ ওহ আমি জানি নাহ।লাগাতে বলেছি,লাগাবে।আর হ্যা আমাদের আপনি সম্বোধন করতে হবে না।তুমি করেই বলবা যেরকম জায়ান,নূর,ইফতি করে।’

আরাবী মিষ্টি হেসে মাথা দুলালো।তারপর শাশুড়ি মায়ের কথা মতো চলে গেলো গোসল করার জন্যে। গোসল করে একটা গাঢ় খয়েরী রঙের শাড়ি পরলো আরাবী।অনেক এক্সাইটেড ও।জায়ান ওর হাতের রান্না খেয়ে কি বলবে কে জানে।ভয়ও লাগছে একটু আধটু। এমন সময় ওর রুমে আসলো নূর।এসেই আরাবীকে ঝাপ্টে ধরলো।বলল,
-‘ ভাবি আপনি এসে পরেছেন শুনে অনেক ভালো লাগলো।’
আরাবী হেঁসে দিয়ে বলে,

-‘ কোথায় ছিলে?’
-‘ আর কোথায়?ভার্সিটি গিয়েছিলাম।আজ যাবো না বলেছিলাম।ইফতি ভাইয়া টেনেটুনে নিয়ে দিয়ে আসলো।’
তারপর আবার কিছু একটা ভেবে বলে,
-‘ ভাবি?তুমিও তো মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছো।আর ভার্সিটিতে যাবে নাহ?’
আরাবী নূরের প্রশ্নের জবাবে বলে,
-‘ হ্যা যাবো তো।এইতো আর এক, দু’দিন বাদে যাবো।’
-‘ আচ্ছা,চলো মা নিচে ডাকছে খাবে নাহ?’
-‘হ্যা চলো।’

দুপুরের খাবার ননদ আর দুই শাশুড়ি মায়েদের সাথেই করলো আরাবী।সবাই বেশ প্রসংশা করলো ওর রান্নার।এতে যেন সস্তি পেলো আরাবী।যাক,জায়ানেরও তাহলে পছন্দ হবে।খাওয়া দাওয়ার পালা শেষ হতেই আরাবীর কাজ না থাকায় রুমে গিয়ে সুয়ে পরলো।ঠিক তখনই ফোন করলো জায়ান।আরাবী মুঁচকি হেসে ফোন রিসিভ করে সালাম দিলো।জায়ান সালামের জবাব দিয়ে বললো,

-‘ কি করছিলে?’
-‘ এইতো সুয়ে আছি।’
-‘ দুপুরে খেয়েছো?’
-‘ হ্যা,আলহামদুলিল্লাহ খেয়েছি।আপনি?’
-‘ আমিও মাত্রই খেলাম।’
-‘ আসবেন কখন?’
-‘ মিস করছো বুঝি?’
-‘ বেশি না,এই একটু!’
হাসলো জায়ান।বললো,

-‘ বাড়ি এসে রাতে সব আদর দিয়ে পুষিয়ে দিবো।’
আরাবী ভীষণ লজ্জা পেলো।বলে উঠলো,
-‘ যাহ,শুধু অস’ভ্য কথাবার্তা বলে।’
-‘ আমার বউকেই তো বলছি।’
-‘ আমার লজ্জা করে না বুঝি?’

-‘ সেইজন্যেই তো বলি।আমার কাঠগোলাপকে লজ্জারাঙা মুখশ্রীটা দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে।’
আরাবীর মনটা ভালোলাগায় ভড়ে উঠলো।জায়ানের এমন প্রতিটা কথাতেই আরাবীর মনটা প্রশান্তিতে ছেঁয়ে যায়।আরাবী কানের পিঠে চুল গুজে দিয়ে বললো,

-‘ কখন আসবেন বলেন নাহ?’
-‘ এইতো রাত সাতটা বাজবে।’
-‘ ওহ, আচ্ছা।’
-‘ আচ্ছা আরাবী রাখছি।আব্বু ডাকছে।’
-‘ হুম।সাবধানে আসবেন।’
-‘আচ্ছা ম্যাডাম।’

জায়ান ফোন রাখতেই আরাবী ফোন চার্জে দিয়ে ঘুমানোর জন্যে চোখ বুজলো।একসময় ঘুমিয়ে পরলো। ঘুম ভাঙলো কারো উষ্ণ আলিঙ্গনে। আর কপালে বার বার দেওয়া উষ্ণ স্পর্শে।আরাবী পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো।চোখ খুলতেই জায়ানকে দেখলো আরাবী।জায়ান আরাবীকে দেখেই মু্ঁচকি হাসলো।আরাবীও হাসলো।তারপর ঘুম জড়ানো গলায় বলে,
-‘ কখন আসলেন?’

জায়ান সাথে সাথে বুকে হাত চেপে ধরলো।শব্দ করলো ‘ হায়!’। জায়ানকে এমন করতে দেখে ঘাবড়ে গেলো আরাবী।তড়িঘড়ি করে উঠে বসলো।উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলতে লাগলো,
-‘ কি হয়েছে আপনার?এমন করছেন কেন?’
জায়ান বুকে হাত চেপে রাখা অবস্থাতেই বলে,
-‘ তোমার ঘুমন্ত কণ্ঠস্বর শুনে আমার হার্টবিট ফাস্ট হয়ে গিয়েছে।’

জায়ানের এমন হোয়ালিপনা কথা শুনে খুব রাগ লাগলো আরাবীর।কিছু না বলে ঠোঁট ফুলিয়ে বিছানা থেকে নেমে যাওয়ার জন্যে উদ্যত হলো।জায়ান তড়িঘড়ি করে উঠে তাড়াতাড়ি আরাবীর হাত চেপে ধরলো।ব্যস্ত কণ্ঠে বলে,
-‘ আরে, আরে কোথায় যাচ্ছো?’
আরাবী রাগি গলায় বলে,

-‘ আপনার সাথে কোন কথা নেই আমার।’
-‘ কেন?’
-‘ আপনি একটু আগে এমন করলেন কেন?জানেন কতো ভয় পেয়ে গিয়েছিনাম?’
জায়ান বুঝলো এইবার।হেঁসে দিয়ে বলে,
-‘ আচ্ছা সরি।আর করবো নাহ।’
-‘ মনে থাকে যেন।’
-‘ যো হুকুম মেরি রানি।’

বলেই বুকে হাত চেপে কুর্নিশ করলো জায়ান।খিলখিলিয়ে হেসে দিলো আরাবী জায়ানের কান্ডে।আর জায়ান মুগ্ধ দৃষ্টিতে আরাবী হাসি দেখলো।ঘোরলাগা গলায় বললো,
-‘ তুমি এইভাবেই হাসবে বউ।তোমার হাসি দেখলে আমার হৃদয়টা জুড়িয়ে যায়।শুভ্র কাঠগোলাপদের হাদিখুশিই ভালো লাগে। বিষন্নতা যে তাদের মানায় নাহ।’
আরাবী লজ্জা পেলো।তারপর মুঁচকি হেসে জায়ানের বুকে মাথা রাখলো।জায়ানও জড়িয়ে নিলো ওকে বুকের মাঝে।

সাখাওয়াত পরিবারের সবাই একসাথে রাতেত খাবার খেতে বসেছেন।আরাবী সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছ।সাথি বেগম না করলেও মেয়েটা শুনলো না।সবাইকে খাবার বেড়ে দিয়ে এইবার জায়ানের পাশে বসলো আরাবী।জায়ান গপাগপ খেয়েই যাচ্ছে।কোন হেলদোল নেই।নূর খাওয়ার মাঝে বলে,
-‘ ভাবি যে এতো সুস্বাদু রান্না করতে পারে আমি তো ভাবতেও পারিনি। মুরগির ঝোলটা অনেক মজা হয়েছে ভাবি।’
মিষ্টি হাসলো আরাবী, বললো,

-‘ ধন্যবাদ নূর।’
এদিকে নূরের মুখে আরাবীর রান্নার কথা শুনে জায়ান খাওয়া থামিয়ে দিলো।গম্ভীর গলায় বললো,
-‘ তুমি রান্না করেছো?’
-‘ হ্যা ভালো হয়নি?’

জায়ান জবাব দিলো না শুধু একটু হাসলো।তারপর সবার আড়ালে হাত চেপে ধরলো আরাবীর।এদিকে জায়ান এমন করায় ঘাবড়ে গেলো আরাবী।কি করছে কি লোকটা?সবাই এখানে আছে। কেউ দেখলে কি ভাববে? আরাবী হাত মুচড়ানো শুরু করলো জায়ান থেকে ছাড়া পাবার জন্যে।তাও জায়ান ছাড়লো না।হার মেনে নিলো আরাবী।জায়ানের সাথে যে সে পারবে না কোনদিন।এদিকে নিহাদ সাহেব খেতে খেতে বললেন,

-‘আজ রাতের ফ্লাইটে তোমার মিথিলা আসছে।’
খাবার থামিয়ে দিলো জায়ান।গম্ভীর গলায় বলে,
-‘ হঠাৎ যে? বিয়েতে আসলো না। তাহলে এখন আসতে চাচ্ছে কেন?’
নিহাদ সাহেব বললেন,
-‘ আহানার জন্যে।’

জায়ান আর একটা কথাও বললো না।দ্রুত খাবার শেষ করে উঠে চলে গেলো।যাওয়ার আগে বলে গেলো,
-‘ আরাবী দ্রুত রুমে আসো।’
অন্যসময় হলে শশুড় শাশুড়ির সামনে এমন একটা কথা বলায় লজ্জা পেতো।তবে আরাবীর মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগলো।ওর চিন্তার ঘোর কাটে সাথি বেগমের কথায়।তিনি বলেন,
-‘ কি দরকার ছিলো জায়ানের সামনে আহানার কথা উঠানোর?ছেলেটা আমার ঠিকমতো খাবারটাও খেলেও নাহ।’
নিহাদ সাহেবেরও খাওয়া শেষ।তিনি হাত ধুয়ে এসে আরাবীর মাথায় হাত রাখলেন।স্নেহভরা কণ্ঠে বলেন,

-‘ ভীষণ মজা হয়েছে খাবারগুলো।’
তারপর আরাবীর হাতে দু হাজার টাকা গুজে দিয়ে বলেন,
-‘ প্রথমবার এই বাড়িতে রান্না করেছো তাই এটা তোমার বকসিস।’
আরাবী মুঁচকি হাসলো।নিহাদ সাহেব চলে গেলেন।যেতে যেতে বলে গেলেন,
-‘ সাথি তোমার ছেলেকে বুঝিয়ে বলো।হাজার হোক মিথিলা আমার বোন।আর আমার বোনকে আমি ফেলে দিতে পারবো না।তেমন আহানাকেও পারবো নাহ।’

সাথি বেগম চুপ করে রইলেন।আর কিইবা বলবেন তিনি।পরক্ষণে আরাবীর চিন্তিত চেহারা দেখে তিনি আরাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
-‘ অযথা চিন্তা করো না।জায়ান নিজেই তোমায় সব বলবে। যাও রুমে যাও।’
আরাবী মাথা দুলিয়ে উঠে গেলো।সবার খাবার শেষ হয়েছে।আরাবী প্লেটগুলো গুছিয়ে নিচ্ছে।সাথি বেগম মানা করার পরেও শোনেনি আরাবী।নূরও হেল্প করছে আরাবীর সাথে।এঁটো প্লেটগুলো ধুয়েমুছে রাখছে।হঠাৎ কাজের মধ্যে নূর বলে উঠল,

-‘ ভাবি একটা কথা বলবো।’
-‘ হুম বলো।’
-‘ আহানা আপুর থেকে সাবধানে থেকো।’
নূরের এমন কথায় ভ্রু-কুচকালো আরাবী।কাথাবার্তায় যেটুকু বুঝলো আহানা ওদের কাজিন হয়।আর নিজের কাজিন সম্পর্কে এমনটা কথা কেন বলবে নূর? আরাবী প্রশ্ন করলো,

-‘ কিন্তু কেন?’
নূর ধুয়ে রাখা প্লেটগুলো গুছিয়ে রাখতে রাখতে বলে,
-‘ আমার জানা মতে আহানা আপু ভাইয়া বিয়ে করে নিয়েছে শুনেই বিডিতে ব্যাক করছে।আহানা আপু ভাইয়াকে পছন্দ করে। তবে ভাইয়া একটুও দেখতে পারে নাহ তাকে।ভাইয়াকে বিয়ে করার জন্যে কি যে করেছে।তাও ভাইয়া রাজি হয়নি।এখন এসে জানবে তুমি ভাইয়ার বউ।তাহলে কি না কি করে কে জানে?তাই বললাম সাবধানে থেকো।ও একটা সাই’কো।মাথা ঠিক নেই ওই মেয়ের।’

নূরের কথায় আরাবীকে বিন্দুমাত্র চিন্তিত দেখা গেলো না।আরাবী বাঁকা হেসে বলে,
-‘ শুধু আসুক না আমার সাথে লাগতে।বুঝিয়ে দিবো আমি আরাবী কি জিনিস।আমি চুপচাপ এটা সবাই জানে।কিন্তু আমার সাথে যে বাড়াবাড়ি করবে তার সাথে আমি ঠিক কি কি করতে পারি তা তার ভাবনাতেও আসবে না।আর সেখানে তো আমার স্বামির দিকে হাত বাড়ানো।আমি আরাবী সেই হাত না কে’টে দিবো।’

আরাবী এমন শীতল কণ্ঠের ভয়ান’ক কথাগুলো শুনে শুকনো ঢোক গিললো।মনে মনে বললো,
-‘ ভাইয়ার থেকেও তো কোন অংশে কম না ভাবি।দুজনেই ভয়’ংকর। তবে ভালোই হবে এইবার।ভাবিই উচিত শিক্ষা দিবে ওই মেয়েকে।’
কাজ শেষ করে রুমে ফিরে আসলো আরাবী।গিয়ে দেখে জায়ান ল্যাপটপে কাজ করছে।আরাবী মুঁচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে গেলো।ফ্রেস হয়ে এসে জায়ানের পাশে গিয়ে বসলো।বসতেই জায়ান প্রশ্ন করল,

-‘ এতোক্ষণ লাগে?’
-‘ কাজ করছিলাম তো।’
একটু চুপ থেকে আরাবী আবার বলে,
-‘ রান্না কেমন হয়েছে আমার বললেন না যে?’

জায়ান মুঁচকি হেসে আরাবীর কপালে চুমু খেলো।চোখ বন্ধ করে আরাবী হাসলো।জায়ান আরাবীর গালে স্পর্শ করে বলে,
-‘ ভীষণ ভালো হয়েছে।আগে জানলে গিফট নিয়ে আসতাম।’
-‘ ইস,রান্নাই তো করেছি। এতে আবার গিফট কে দেয়?’
-‘ আমি দেই।’
-‘ জানেন? বাবা আমায় দু হাজার টাকা বকসিস দিয়েছে।’
-‘ ভালো তো।’
জায়ান এইবার আরাবীর হাত টেনে ধরলো। হকচকিয়ে গিয়ে আরাবী বলে,
-‘ কি করছেন?’

-‘ যা বলেছি।রান্না করেছো শুনেই আমার মন বলছিলো হাতে ব্যাথা ট্যাথা নিশ্চয়ই পেয়েছো।দেখলে আমার মনের কথাই ঠিক হলো।’
জায়ানের কথা শুনে আরাবী ওর হাত টেনে নিয়ে বললো,
-‘ ওহ একটুখানি ছ্যাকা লেগেছে।অয়েন্টমেন্ট লাগিয়েছি ঠিক হয়ে যাবে।চিন্তা করবেন নাহ।এখন রাত হয়েছে।চলুন ঘুমিয়ে পরি।’

-‘ কিন্তু আমার কিছু বলার আছে আরাবী।’
-‘ কাল শুনবো তো।চলেন ঘুমাই ক্লান্ত লাগছে।’
আর কিছু বলার ভাষা পেলো না জায়ান।শুয়ে পরলো বিছানায়।তারপর আরাবীকে উদ্দেশ্যে করে বলে,
-‘ আসো বুকে আসো।’
আরাবী মুচঁকি হেসে জায়ানের বুকে মাথা রাখলো।জড়িয়ে ধরলো জায়ানকে।জায়ানও আষ্টপৃষ্ঠে জড়িয়্র নিলো আরাবীকে।তারপর আরাবীর কপালে চুমু খেয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।একসময় দুজনেই শান্তির ঘুমে তলিয়ে গেলো।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১৬

কাল দেয়নি তাই বিশাল পর্ব দিলাম।ভুলগুলো ক্ষমা করবেন।আমার প্রচুর টাইপিং মিস্টেক হয় আমি জানি।তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।গল্পের রেস্পন্স কমে যাচ্ছে। এমন হলে আমার লিখার আগ্রহও কমে যাবে।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১৯