হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১৯

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১৯
সাদিয়া জাহান উম্মি

সকাল থেকে রান্নার তোড়জোড় চলছে।আজ মিথিলা আর আনহা আসছে সাখাওয়াত বাড়ি।আরাবীও হাতে হাতে কাজ করছে।শুক্রবার থাকায় আজ বাড়ির পুরুষদেরও অফিস নেই।জায়ান সকাল থেকেই থমথমে মুখে আছে।সকালে ঠিকঠাক খাবারটাও খায়নি।এমনকি রুম থেকেও বের হচ্ছে না।আর আরাবী রুমের বাহিরে গিয়ে পাঁচ মিনিটও থাকতে পারছে না।একটু পর পরই ডাকছে।এইযে আরাবী এখন সালাদ কাটছে।আর তখনই জায়ানের ডাক।আরাবীর বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে ফেললো। নূর মিটিমিটি হেসে বলে,

-‘ যাও ভাবি, যাও ভাইয়া ডাকছে।’
আরাবী ছু’রিটা রেখে দিয়ে বলে,
-‘ তোমার ভাইয়ার সমস্যাটা কি?নিজেও রুমের বাহিরে আসছে না।আর আমাকেও পাঁচ মিনিটের জন্যে রুমের বাহিরে যেতে দিচ্ছে না।’
-‘ তুমি যাও ভাবি।ভাইয়ার মুড এমনিতেও ভালো নেই।তুমি যদি আবার তার কথা না শোনো তাহলে সে আরো রেগে যাবে।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘ কিন্তু এটা কেমন দেখায়? বসার ঘরে বাবা আর ছোট বাবা বসে আছে।তারা কি মনে করবে?’
-‘আহা,কিছু মনে করবে না। যাও তো তুমি।’
এদিকে জায়ান এখনও ডেকে চলেছে।সহ্য করতে না পেরে আরাবী কাজ ফেলেই ছুটলো জায়ানের কাছে।রুমে এসে দেখে জায়ান বিছানার সাথে হেলান দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করছে।আরাবী বিছানার কাছে গিয়ে বলে,

-‘ কি হয়েছে আপনার? এমন ডাকাডাকি করছেন কেন?’
জায়ান কাজ করতে করতেই গম্ভীর স্বরে বলে,
-‘ তুমি রুমের বাহিরে যাচ্ছো কেন?তাই তো আমার ডাকাডাকি করা লাগছে।’
আরাবী ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ তার মানে আপনি বলছেন আমি রুমের বাহিরে যাবো নাহ?’
-‘ নাহ!’
জায়ানের সোজাসাপটা জবাব।আরাবী হা করে চেয়ে রইলো জায়ানের দিকে।জায়ান শান্ত গলায় বলে,
-‘ এদিকে এসো।’

আরাবী জায়ানের এমন শান্ত কণ্ঠের ডাক উপেক্ষা করতে পারলো না। বিছানায় উঠে গিয়ে জায়ানের পাশে বসলো।জায়ান আরাবীকে কাছে এসে বসতে দেখেই ল্যাপটপটা পাশে রেখে দিলো। তারপর বা হাতে আরাবীর কোমড় স্পর্শ করে ওকে টেনে নিজের কোলে নিয়ে বসালো।কেঁপে উঠলো আরাবী।জায়ান ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
-‘ এখনো আমি ধরলে কাঁপাকাঁপি করা লাগে?’
আরাবীর লজ্জা লাগছে এইভাবে জায়ানের কোলে বসতে।আরাবী আমতা আমতা করে বলে,

-‘ আ…আমি কি কর..করবো?’
-‘ আমি করবো?’
-‘ কি কর..করবেন?’
কাঁপা গলায় আরাবীর প্রশ্ন।জায়ান আরাবীর গলায় মুখ গুজে দিলো।আরাবীর গলায় নাক ঘষসে সে।ধীর আওয়াজে বলে,
-‘ চুমু খাবো।’

আরাবী জায়ানের এমন স্পর্শে কাঁপছে।একহাত জায়ানের কাধের পাশে রেখে আরেকহাতে জায়ানের চুল খামছে ধরলো।জায়ান ছোটো ছোটো চুমু দিতে লাগলো।চোখ বুজে জায়ানের ভালোবাসাগুলো উপভোগ করছে আরাবী।একসময় জায়ানের নরম স্পর্শগুলো কাম’ড়ে পরিনত হতে লাগলো।আরাবী আরো জোড়ে খামছে ধরলো জায়ানকে।আরাবীর আর সহ্য করতে না পেরে বলে,
-‘ ব্যা..ব্যাথা পাচ্ছি।’
আরাবী ভাঙা গলায় উচ্চারিত শব্দগুলো শুনে থেমে গেলো জায়ান।মুখ তুলে তাকালো আরাবীর মুখপাণে।আরাবী চোখ বন্ধ করে আছে।জায়ান হালকা শব্দে ডাকলো,

-‘ আরাবী?’
আরাবী নিভু নিভু চোখে তাকালো জায়ানের দিকে।জায়ান আরাবীর গালে স্পর্শ করলো।আরাবী জায়ানের সেই হাতের উপর হাত রাখলো।জায়ান ঘোরলাগা কণ্ঠে বলে,
-‘ কিস মি।’
জায়ানের মুখে এমন একটা কথা শুনে আৎকে উঠলো আরাবী।খামছে ধরলো জায়ানের হাত।আরাবী চোখ বড় বড় করে তাকালো।জায়ান এইবার হাত গলিয়ে দিলো আরাবীর চুলে। আরাবীর চুল খামছে ধরে আরাবীকে টেনে ওর মুখোমুখি আনলো।আরাবী মুখ ঘুরিয়ে নিতে চাইলেও পারলো না।জায়ান আগের মতোই বললো,

-‘ কিস মি আরাবী।’
আরাবী জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।নাহ,সে কখনই পারবে না এটা করতে।লজ্জায় ম’রে না যাবে ও।আরাবী শুকনো ঢোক গিললো।কাঁপা গলায় বলে,
-‘ আমি পা..রবো না এটা করতে।’
-‘ করতে হবে।’
-‘ প্লিজ।’
-‘ উঁহু! ফাস্ট আরাবী।’

আরাবী কি করবে ভেবে পেলো না।সে জানে জায়ানকে শতোবার মানা করলেও এই লোক শোনার পাত্র না।জায়ানকে তার কিস করতেই হবে।নাহলে যে এই লোক তাকে একটুও ছাড়বে নাহ।আরাবী চোখ বন্ধ করে নিলো। মনে মনে সাহস জুগিয়ে মুখশ্রী এগিয়ে নিলো জায়ানের দিকে।জায়ানের গরম নিশ্বাসগুলো ওর চোখ মুখে বারি খাচ্ছে।আরাবী দু একটা জোড়ে নিশ্বাস নিয়েই জায়ানের অধরে অধরে মিলিয়ে দিলো।খামছে ধরলো জায়ানকে আরাবী।দীর্ঘ প্রেমময়ী চুম্বনে লিপ্ত হলো দুজন।একে-অপরের মাঝে বিভোর হয়ে গেলো।যেন সময় থমকে গেলো দুজনের জন্যে।

বসার ঘরে উপস্থিত সবাই।আরাবী তীব্র উৎকণ্ঠা নিয়ে তাকিয়ে সামনের দিকে। না চাইতেও খারাপ লাগা কাজ করছে ওর মাঝে।জায়ানের একহাত কপালে ঠেকিয়ে কাঁদছে এক মেয়ে।এটা যে আহানা। এটা বুঝতে বাকি নেই আরাবীর। একটু আগে যখন তারা একে-অপরের মাঝে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় ছিলো তখন হঠাৎই সাথি বেগম ওদের ডেকে উঠলেন।আরাবী ডাক শুনেই সরে আসতে চাইছিলো।কিন্তু অনুভূতির মাঝে তলিয়ে যাওয়া জায়ান যেন হুশেই ছিলো না।

সে মত্ত ছিলো প্রেয়সীর ঠোঁটের সুধা পাণে।আরাবী অনেক কষ্টে জায়ান থেকে ছাড়াতে পেরেছে।লজ্জায় হাসফাঁ’স করে আরাবী দ্রুত রুম ত্যাগ করে জায়ান থেকে ছাড়া পেতেই।নিচে এসেই তিনটে নতুন মুখ দেখেই বুঝলেন।আজকের আয়োজন যাদের জন্যে করা হয়েছে তারা এসে পরেছে।মেয়ে দুজনকে দেখলে বুঝলো। তা হলো এখানের সাথি বেগমের মতো মহিলা ইনিই হলেন জায়ানের ফুপু মিথিলা।

আর তার মতোই বয়সী একটি মেয়ে সে হলো আহানা।তবে মিথিলার পাশে দাঁড়ানো ছেলেটা কে তা বুঝতে পারলো না আরাবী।ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ছেলেটা। ছেলেটার চাহনীটাও বি’শ্রি।আরাবী সাথি বেগমের পিছে চলে গেলো।এর মধ্যেই জায়ান নিচে নেমে এসেছে।গম্ভীর মুখশ্রী তার।জায়ান আসতেই আহানা একছুটে এসে পরলো জায়ানের কাছে।জায়ান দ্রুত একহাত সামনে রেখে থামিয়ে দিলো আহানাকে। আহানা জায়ানের সেই হাত চেপে ধরে কপালে ঠেকিয়ে হু হু করে কেঁদে দিলো।কাঁদতে কাঁদতে বলে,

-‘ কেন করলে জায়ান এমনটা?কেন করলে?আমি তো তোমায় ভালোবাসি জায়ান।আমার ভালোবাসাকে এইভাবে অবহেলা কেন করলে?’
জায়ান চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে।হাত ছাড়ানোর প্রয়াস চালাচ্ছে ও।কিন্তু আহানা ছাড়ছে না।আহানা বলছে,
-‘ আমি তো তোমায় সেই ছোট বেলা থেকে ভালোবাসি জায়ান।এটা সবাই জানে।তাহলে তুমি বিয়ে কেন করলে জায়ান?কেন করলে?আমার ভালোবাসার কি বিন্দুমাত্র দাম নেই তোমার কাছে?’

আহানা এভাবে সবার সামনে এসব কথা বলায় জায়ান অসস্থিতে পরে গেলো।আরাবী না জানি কি ভাবছে। যাই হোক আরাবীকে কষ্ট দিতে পারবে না জায়ান।জায়ান টেনে হাত সরিয়ে নিলো আহানা থেকে।শক্ত গলায় বলে,
-‘ বিহেব ইউরসেল্ফ আহানা।আমি এখন বিবাহিত এটা মাথায় রেখো।আর রইলো তোমার কথা। তুমি আমায় ভালোবাসলেও।আমি তোমায় ভালোবাসতাম নাহ।আর নিজের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে কোন কাজ আমি জায়ান করি নাহ।’
আহানা কান্নারত কণ্ঠে বলে,

-‘ এখন যাকে বিয়ে করেছো তাকে ভালোবাসো বুঝি?’
জায়ান পিছনে ঘুরে এগিয়ে গেলো আরাবীর কাছে।সাথি বেগমের পিছন থেকে আরাবীর হাত ধরে বের করে আনলো।তারপর আরাবীকে নিয়ে আহানার সামনে দাঁড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বললো,
-‘ নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।’

আরাবী কোমল নয়নে জায়ানের দিকে তাকিয়ে।মনটা শীতলতায় ভরে গিয়েছে জায়ানের এই একটা বাক্য শুনে।আহানা দু কদম পিছিয়ে গেলো।একধ্যানে আরাবী আর জায়ানের দিকে তাকিয়েই থাকলো।হঠাৎ কি মনে করে যেন দু হাতে চোখ মুছে নিলো ঢলে।তারপর জায়ান আর আরাবীর কাছে এসে দাড়ালো।আরাবীর দিকে তাকিয়ে মুঁচকি হাসলো। আরাবী অবাক হয়ে তাকিয়ে আহানার দিকে।আহানা আরাবীর গালে হাত রাখলো।বললো,

-‘ এইজন্যেই বলি জায়ান সাখাওয়াত কোন মেয়ের জন্যে এমন পাগল হবে।যে হঠাৎ করেই বিয়ে করে নিলো।তুমি দেখতে ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে।পুরো মায়াবতী। ‘
আরাবী হা করে তাকিয়ে থাকলো।আরাবী ঠিক কি রিয়েকশন দিবে ভুলে গেলো। নূরের কথা অনুযায়ী মেয়েটা নাকি পা’গল। ওর নাকি ক্ষ’তি করতে পারে।কিন্তু এখন তো দেখছে পুরো উলটো।আহানা আবার বলে,

-‘ জায়ান বোধহয় আমার ভাগ্যে ছিলো না।তাই ছোটো বেলা থেকে ওকে ভালোবেসেও আমি ওকে পেলাম নাহ।তুমি ভাগ্যবতী মেয়ে। সামলে রেখো তাকে।’
কথাগুলো বলেই সরে গেলো আহানা।সাথি বেগমের কাছে এসে বলে,
-‘ বড় মামি আমি রুমে গেলাম।’

আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না আহানা।দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলো।এদিকে মেয়ের কান্না দেখে মিথিলারও চোখ ভিজে।সে এখন আর কোন কথা বলার মুডে নাই। তাই নিহান সাহেবকে বললেন,
-‘ ভাইয়া আমি একটু বিশ্রাম করবো।তুমি আমার জিসানকে একটু ওর রুমটা দেখিয়ে দিয়ে আসো।’
মিথিলা চলে গেলেন।নিহান সাহেব ইফতিকে বললেন জিসানকে রুমটা দেখিয়ে দিতে।ইফতি তাই করলো।জিসানকে চলে গেলো।বাকিরাও যার যার রুমে চলে গেলেন।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১৭+১৮

আসসালামু আলাইকুম। ভালো আছেন সবাই?আমি দুদিন পর গল্প দিলাম তার জন্যে সরি।আমার হাত কেটে গিয়েছে তাই টাইপ করতে পারিনি।আজও লিখতে কষ্ট হয়েছে তাও দিলাম।ভুল গুলো ক্ষমা করবেন।আপনাদের অপেক্ষা করানোর জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী আমি।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২০