হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২০

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২০
সাদিয়া জাহান উম্মি

-‘ মা এমনটা হয় না মা।তুমি যা বলছো তা সম্পূর্ণ ভুল।ওরা এখন বিবাহিত। আমি চাইলেও এখন আর কিছু করতে পারবো না।আর জায়ান তো বলেই দিলো ও তার বউকে অনেক ভালোবাসে।’
আহানার কথায় মিথিলা উচ্চস্বরে বলে,

-‘ তাহলে কি করবো?আমি কি করলে তোর কষ্ট কমবে?আমি মা হয়ে তো তোর কষ্ট সহ্য করতে পারছি নাহ।’
সাথি বেগম
আহানা মলিন হেসে বলে,
-‘ এই কষ্ট যে কমাতে পারবো না মা।কোনদিন নাহ।আমার হৃদয়ের থেকে জায়ানের নামও কেউ মুছতে পারবো না আর এই কষ্টও ভুলতে পারবো না।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘এইভাবে জীবন চলে না মা।আমি তোকে এমনভাবে দেখতে পারবো না।’
-‘ দেখতে হবে নাহ মা।আমি তো আমার কষ্ট দেখতে দিবো না।আজ থেকে আমি আহানা আর কোনদিন কাঁদবো নাহ।’
মিথিলার কষ্টে বুক ফেঁ’টে যাচ্ছে।একমাত্র মেয়ে তার। সেই মেয়েকে এমনভাবে কষ্ট পেতে দেখে তার তার নিজের যে কি পরিমান খারাপ লাগছে তা বলে বুঝাতে পারবে না মিথিলা।দীর্ঘশ্বাস ফেললো মিথিলা।এমনসময় তাদের দরজায় আওয়াজ হলো।আহানা ‘ আমি দেখছি ‘ বলে গেট খুলতে গেলো।গেট খুলতেই সামনে আরাবীকে দেখে অবাক হলো।এদিকে আরাবী মিষ্টি করে হেসে বলে,

-‘ নিচে যাবেন নাহ আপু?দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গিয়েছে।’
আহানা বড্ড অবাক হলো।আরাবীর জায়গায় অন্য কোন মেয়ে হলে তার চুল ছি’ড়ে ফেলতো।সেখানে আরাবী তাকে দেখে মিষ্টি হাসি উপহার দিচ্ছে। আহানা নিজেই তো রাগে ফেটে যেতো।যদি কেউ তার সামনে তার স্বামিকেই ভালোবাসি বলে। সেখানে আরাবীর এমন ঠান্ডা স্বভাব প্রচন্ড পরিমান অবাক করেছে তাকে।আহানা আমতা আমতা করে বলে,

-‘ আসছি তুমি যাও।’
আরাবী চলে গেলো হেঁসে।মিথিলা নাক মুখ কুচকে বলে,
-‘ ঢং দেখে বাজি নাহ।এমন ভাণ করছে যেন দুধে ধোওয়া তুলসি পাতা।’
আহানা বিরক্ত হয়ে বলে,
-‘ উফ মা চুপ করো। আরাবী এমন নাহ।আমি আরাবীকে দেখেই বুঝেছি।’

-‘আপনি খাবেন নাহ?’
জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বললো আরাবী।জায়ান নির্বিকার ভঙিতে উদোম শরীরে বিছানায় উপর হয়ে সুয়ে আছে। আরাবী আবার বলে,
-‘ আর এইটা কিভাবে সুয়ে আছেন?’
জায়ান না নড়লো না।তেমনভাবেই বললো,

-‘ কিভাবে সুয়ে আছি?ঠিকভাবেই তো আছি।’
-‘ জামা-কাপড়ে নেই আপনার?’
-‘ আছে তো।’
-‘ তো এমন উদোম হয়ে সুয়ে আছেন কেন? টি-শার্ট পরুন।’
-‘ পরতে ইচ্ছে করছে না।’
আরাবী বিছানায় গিয়ে বসলো।জায়ানের উন্মুক্ত পিঠে আলগোছে হাত রেখে বলে,

-‘ উঠুন নাহ।সবাই বসে আছে।’
-‘ আমি এখন খাবো না।তারা খেয়ে নিক।’
-‘ এমন করছেন কেন?বাড়িতে মেহমান এসেছে।পরিবারের সবার সাথে বসে খাবার খাবেন এতেই তো আনন্দ।আর তাছাড়া সে তো আপনার ফুপু আর কাজিন।’
আরাবী কথায় জায়ান ঘুরে গেলো।তারপর আরাবীর হাত ধরে আরাবীকে বুকে টেনে নিলো।জায়ান শীতল গলায় বলে,

-‘ তোমার কি একটুও খারাপ লাগছে নাহ?’
আরাবী অবাক হয়ে বলে,
-‘ আজব,খারাপ কেন লাগবে?’
-‘ এইযে সকালে যা কিছু হলো?’
আরাবী মুঁচকি হেসে জায়ানের বুকে মাথা রাখলো।জায়ানের বুকের বা-পাশে আঁকিবুঁকি করতে করতে বলে,
-‘ সকালে যা হলো তাতে বুঝতে পারলাম আহানা আপু আপনাকে ভালোবাসে।কিন্তু আপনি বাসেন নাহ।আপনি তো ভালোবাসেন আম…’

থেমে গেলো আরাবী।জায়ান বাঁকা হেসে বলে,
-‘ বলো?থেমে গেলে কেন?’
-‘ নাহ,কিছু না। ছাড়ুন তো আপনি।খাবেন চলুন।’

আরাবী সরে গেলো।তারপর টেনে জায়ানকে উঠালো।জায়ানও হেসে উঠে বসলো।তারপর টি-শার্ট গায়ে দিয়ে আরাবীর হাত ধরে নিচে নেমে আসলো।আরাবী হাত ছাড়াতে চাইলেও জায়ান ছাড়লো নাহ।আরাবীকে নিয়েই চেয়ার টেনে বসলো।জিসান আরাবীর দিকে তাকিয়ে ছিলো।আরাবী এইবার সহ্য করতে পারলো না। ভয়ংক’রভাবে রাগি চোখে তাকালো আরাবী।আরাবীর হঠাৎ এমন তেজিয়ান দৃষ্টিতে ভড়কে গেলো জিসান। ভয় পেয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।বিরবির করলো,

-‘ এই মেয়েকে তো ভোলাভালা ভাবছিলাম।কিভাবে তাকালো আমার দিকে। যেন ওই চোখের তেজেই আমাকে পু’ড়িয়ে ফেলবে।’
এদিকে আরাবী হাসলো।মনে মনে বলে,
-‘ আমাকে দূর্বল ভেবে ভুল করিস নাহ।আমি নরম,লাজুক শুধু আমি একজনেরই কাছে।আর সে হলো আমার স্বামি।আর বাদ বাকি যে আমার সাথে যেমন আমি তার সাথেও তেমন।আমার সাথে উল্টাপাল্টা করার চিন্তাও মাথায় আনলে আমি আমার ক্রো’ধের আগুনে তাকে ঝল’সে দিবো।’

আহানা করুণ চোখে জায়ানের দিকে তাকালো।তবে জায়ান একবারও তাকালো না আহানার দিকে। মিথিলা শুধু রা’গে ফুসছে আরাবীর দিকে তাকিয়ে।আরাবী তা বুঝল তাইতো তরকারির বাটিটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে হেসে বললো,
-‘ এই তরকারিটা আমি স্পেশালি আপনার জন্যে রান্না করেছি ফুপি।খেয়ে দেখুন।’
মিথিলা দাঁতেদাঁত চেপে বলে,

-‘ আ’ম ওলরেডি ফুল। ‘
নিহান সাহেব বলে উঠলেন,
-‘ আহা,মিথু একটু খেয়ে দেখ নাহ আরাবী মা রান্না করেছে।’
মিথিলা ভাইয়ের কথায় একটু খানি তরকারি নিয়ে খেলো।আরাবী প্রশ্ন করলো,
-‘ কেমন হয়েছে ফুপি তরকারিটা?’
মিথিলা’র রাগি কন্ঠ,

-‘ ভালো।’
খাওয়া দাওয়ার পালা শেষ হতেই। জায়ান আরাবীকে বলে,
-‘ রুমে চলো।’
আরাবী ধীরে বলে,
-‘ আপনি যান।আমি আসছি।এইটুকু কাজ সেরে।’
-‘ হু।’
যেতে নিতেই জায়ান ফের বলে,
-‘ জলদি এসো।’

আরাবী হেসে দিলো।লোকটা এতো অধৈর্য।মিথিলা বসার ঘরে এসব দেখে সাথি বেগমকে বলে,
-‘ আমাদের ছেলেকে তো দেখছি পুরো বশ করে নিয়েছে ভাবি।ছেলেকে সাবধানে রেখো ভাবি।পরে না কপাল চাপড়ে কাঁদতে হয়।’
সাথি বেগমের কথাটা পছন্দ হলো না।বড্ড অবাক হয় সাথি মানুষের চিন্তা ভাবনা এতো নিচ কেন হয় সবসময়। সাথি বেগম বলে,

-‘ এইগুলা কোনদিন হবে না আপা।আপনার ভাইও আমায় কতো ভালোবাসে।তাই বলে কি সে আব্বা,আম্মা বা আপনাদের ভাই বোনকে ফেলে দিয়েছে🫠?দেই নি তো তাই নাহ?তাহলে জায়ানও এমন করবে নাহ! ‘
সাথি বেগম উঠে চলে গেলেন। শুধু মাত্র ননদ বলে আর বেশি কিছু বলতে পারলেন না তিনি।

-‘ আর কতো এমন করবে?ঝগড়ার সময় তো তোমার মুখ কে’চির মতো চলে।তাহলে আমি ফোন করলে কেন এমন চুপ থাকো?’
ইফতির কথায় আলিফা রে’গেমেগে বলে,

-‘ কি বললেন?আমার মুখ কে’চির মতো চলে? ঠিক আছে আপনি আর ফোনই করবেন নাহ। ‘
-‘ আরেহহ আমি সেটা বুঝাই নি।আমার কথাটা তো শোনো।’
ইফতি বলতে না বলতেই আলিফা ফোন কেটে দিলো।ইফতি আবারও ফোন দিলো সাথে সাথে অপাশ থেকে ফোন কেটে দিলো।ইফতি আবার ফোন দিলো এইনার ফোন বন্ধ শোনাচ্ছে।ইফতি দীর্ঘশ্বাস ফেললো।ইফতির আলিফাকে ভালোলাগে সেটা ইফতি বুঝতে পেরেছে। আরাবীর কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে আলিফার নাম্বার নিয়েছে।

কিছুদিন যাবত ফোনে আলিফার সাথে যোগাযোগ রাখছে সে।কিন্তু আলিফা তার যেনো কথাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।ইফতি ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝাতে চাইছে কিছু কথা। কিন্তু আলিফা বুঝতেই চায় নাহ।ইফতির মনে হয় আলিফার মতো মাথামোটা সে আর দুটো এই দুনিয়াতে দেখেনি। এইযে মেয়েটা এখন ফোন বন্ধ করে রেখেছে।ইফতি মন চাচ্ছে আলিফার বাড়িতে গিয়ে মেয়েটাকে কষি’য়ে কয়েকটা থা’প্পড় মেরে আসতে। তাও যেমন তেমন থা’প্পড় না একদম চাপার হাড্ডি-গুড্ডি যেন নড়ে যায়।বেয়া’দপ মেয়ে কোথাকার।ইফতি চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,

-‘ এই মেয়েকে যে আমি কি করবো কে জানে? অসহ্যকর একটা মেয়ে। এমন তারছি’রা মেয়ে আমি আমার লাইফে দেখিনি।তবে যাই হোক এই তারছি’রা মেয়েটাকেই আমার চাই।কিন্তু এই মেয়েটাকে যে কিভাবে বুঝাই? উফ,অস’হ্য।’

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১৯

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।আজ নানুবাড়ি ঢাকা এসেছি।তাই লেট হয়ে গিয়েছে। নানুবাড়িতে কাজিনরা একসাথে হলে তো একটু বিজি থাকবোই বুঝেন তো। আর হ্যা,আলহামদুলিল্লাহ আমার হাত ভালো আছে।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২১