হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২১

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২১
সাদিয়া জাহান উম্মি

নতুন কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছে আজ নূর।কিন্তু সেই কোচিংয়ের শিক্ষকই যে ফাহিম তা জানতো না নূর। বেশ অবাক হয়েছে প্রথমে সাথে ভালোও লেগেছে ওর।ফাহিমকে অনেক ভালো লাগে নূরের।শুধু মেয়ে মানুষ বলেই মনের কথা বলতে পারে না।

পাছে না আবার ফাহিম ওকে নির্ল’জ্জ না দাবি করে বসে।এদিকে ফাহিম পড়া বুঝানোর সময় হঠাৎ ওর নজর পরে নূরের উপর। নূরকে তো খেয়ালই করিনি ও।আশ্চর্য বিষয়?চোখ কোথায় ছিলো ওর?তবে বেশিক্ষন নূরের দিকে তাকিয়ে থাকলো না ফাহিম।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো।নাহলে আবার অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীরা খারাপ কিছু না ভেবে বসে।পুরো ক্লাসে দু তিনবার চোখাচোখি হয়ে যায় নূর আর ফাহিমের। ক্লাস শেষ করে ফাহিম চলে যেতেই হুরমুর করে বের হয়ে আসে নূর।দৌঁড়ে যায় ফাহিমের কাছে।একেবারে ফাহিমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাপাতে থাকে।এদিকে ফাহিম হকচকিয়ে যায় আচমকা নূরকে এইভাবে সামনে আসতে দেখে।ভ্রু-কুচকে ফাহিম এইবার বলে,

-‘ কি ব্যাপার?তুমি হঠাৎ আমার সামনে এসে দাঁড়ালে কেন?’
নূর খানিক সময় নিলো স্বাভাবিক হতে।তারপর বলে,
-‘ আমি যে আপনাকে এতো ডাকলাম শুনলেন নাহ কেন?’
ফাহিম চারপাশে তাকালো।এইভাবে প্রথম দিনেই কথা বলতে দেখলে আবার কেউ খারাপ ভাব্বে।তাই ফাহিম ধীর আওয়াজে বলে,

-‘ দেখো এইখানে আমি কোচিং করাই।এই কোচিংয়ে আমাদের ব্যাক্তিগত বিষয়ে কোন কথা না হলেই আমি খুশি হবে। মানে এটা আমাদের দুজনের জন্যেই ভালো হবে।এইখানে আমাদের সম্পর্ক শুধু তুমি আমার ছাত্রী আর আমি তোর শিক্ষক।’

নূর ভাবতেই পারেনি ফাহিম এমনভাবে কথাগুলো বলবে। সে তো এখনও কিছু বলেইনি।তার আগেই এতোগুলো কথা বলে দিলো লোকটা?তাকে কি ছ্যা’ছড়া মেয়েদের মতো মনে হয়?নূরের রাগ লাগলো।তবে অভিমানটাই হলো বেশি।ও ধীরে বলে,
-‘ সরি স্যার।আর এমন হবে না।আমি আগামীতে খেয়াল রাখবো, আসি।’

নূর আর একমুহূর্তও না দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে চলে গেলো।ফাহিম নূরের কথায় স্বস্তি পেলো। যাক,মেয়েটা বুঝলো তাহলে।কিন্তু ভীতরে ভীতরে ফাহিমের কোথায় যেন একটু খারাপ লাগছে।মেয়েটাকে কি একটু বেশিই বলে ফেললো আগেভাগে?মেয়েটা তো তাকে কিছু বলেও নি।তবে ও যা বলেছে তা দুজনের ভালোর জন্যই বলেছে। দীর্ঘশ্বাস ফেললো ফাহিম। তারপর নিজ কাজে চলে গেলো।

ক্লান্ত দেহ নিয়ে ভার্সিটি থেকে ফিরেছে আরাবী।বসার ঘরে থাকা সাথি বেগম পূত্রবধুকে দেখেই বলেন,
-‘ আরাবী ক্লান্ত দেখাচ্ছে।আগে ফ্রেস হয়ে আসো।আমি লেবুর শরবত পাঠাচ্ছি।’
আরাবী ক্লান্তস্বরে বলে,
-‘ যাচ্ছি মা।’

আরাবী চলে গেলো।তবে যেতে যেতে কানে মিথিলার তীরিক্ষপূর্ণ কথাও তার কানে এলো।তবে সেসবে কান দিলো না আরাবী।তার এখন ঠান্ডা একটা গোসল নেওয়া দরকার।ভীষণ ক্লান্ত ও আজ।

রুমে গিয়ে আগে গোসল নিলো আরাবী।টেবিলের উপর শরবতের গ্লাস দেখেই মুঁচকি হাসলো।সাথি বেগমের মতো একজন শাশুড়ি পেয়ে নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হয় আরাবীর।

তার শাশুড়ীকে দেখলে জানতেই পারতো না শাশুড়ীরাও বুঝি এতো ভালো হয়।নাহলে তার বিবাহিত বান্ধবীদের মুখে তো শুধু শাশুড়ীদের বদনামই শুনে ও।শরবতটুকু খেয়ে আয়ানার সামনে চলে গেলো চুল মুছার জন্যে।আরাবী যখন নিজের কাজে ব্যস্ত।

হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ হলো।আচমকা এমন হওয়ায় হাত থেকে তোয়ালে পরে গেলো আরাবীর।পিছনে ঘুরেই যাকে দেখতে পেলো ভাবতেই পারিনি আরাবী।জিসান এসেছে ওর রুমে।তাও বি’শ্রি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আরাবীর রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো।এতো সাহস এই ছেলের।ওর বেডরুম অব্দি চলে এসেছে।আরাবী শক্ত কণ্ঠে বলে,

-‘ কি সমস্যা?কি চাই আপনার?আর আমার রুমে প্রবেশ করার অনুমতি কে দিয়েছে আপনাকে?’
জিসান কুটিল হেসে বলে,
-‘ আমার কি চাই বুঝতে পারোনি তুমি?আমার তো তোমাকে চাই জানেমন।জায়ান শা’লা ঘরের ভীতর এমন হট,সুন্দরী বউ রেখে অফিসে যায় কিভাবে?আমি তো হলে সারাদিন তোমাকে নিয়ে আদর সোহাগে ব্যস্ত থাকতাম।’

আরাবীর ঘৃনার গা গুলিয়ে আসলো।আরাবী বুদ্ধি খাটিয়ে অতি সন্তর্পণে নিজের ফোনের ভিডিও অন করে ড্রেসিংটেবিলের উপর রাখা ফুলের টবের পিছনে রেখে দিলো।যাতে এখানে এখন যা যা হয় সব রেকর্ড হয়ে যায়।এই জিসানকে তো শাস্তি দিতেই হবে।নিজের কাজ শেষ করে আরাবী এইবার দুহাত বুকে বেধে দাঁড়ালো। বললো,

-‘ তো একটা বিয়ে করে নিন না।অন্যের বউয়ের দিকে নজর দিচ্ছেন কেন?’
-‘ কি করবো বলো।অন্যের বউ যদি এতো সেক্সি আর হট বডি ফিগার নিয়ে চোখের সামনে ঘুরঘুর করে তাহলে যে কন্ট্রোল হয় নাহ।’
আরাবীর শরীর রাগে ফে’টে যাচ্ছে।দাঁতেদাঁত চেপে বলে,

-‘ নিজের ভালো চাইলে এখান থেকে চলে যাহ।নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম।’
জিসান হাসলো।আরাবীর দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,

-‘ তোর এতো তেজ? এতো তেজ তো আজ আমি মাটির সাথে মিশিয়েই ছাড়বো।’
আরাবীর কাছে জিসান এসে ওর গায়ে হাত দেওয়ার আগেই। আরাবী সজোড়ে লা’থি মে’রে দিলো জিসানের গোপনাঙ্গে। ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলো জিসান।আরাবী জিসানের হাত ধরে মুচড়ে দিলো।চেয়েও চিৎকার করতে পারলো না জিসান।কারন তার আগেই আরাবী জিসানের মুখে ফেলে রাখা তোয়ালেটা উঠিয়ে গুজে দিয়েছে।আরাবী জিসানের গালে সজোড়ে থা’প্পড় মে’রে বলে,

-‘ তোর এতো বড় সাহস তুই আমায় এইসব কথা বলিস।আমি আরাবী শুধু আমার স্বামির কাছে নম্র,ভদ্র,লাজুক। নাহলে আমি মেয়েটা মোটেও ভালো নাহ।আমার দিকে কুদৃষ্টি দিলে সেই চোখ আমি গে’লে দিবো।’

আরাবী জিসানের হাতে পাশে রাখা হিল জুতো দিয়ে ইচ্ছে মতো বা’রি দিলো।হাতটা র’ক্তা’ক্ত করে ছাড়লো আরাবী।নিজের মনের ঝাজ মিটিয়ে তারপর ছাড়লো জিসানকে।জিসান ব্যাথায় আর্তনাদ করছে।আরাবী ওর চুল মু’ঠি করে ধরে ওর রুমের বাহিরে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।আরাবী চাপা স্বরে দরজার ওপাশে থাকা জিসানকে রাগি গলায় বললো,

-‘ এই শিক্ষা মনে থাকলে আর কোনদিন আমি কেন আর কোন মেয়ের দিকেও তাকাবি নাহ।’

রাতে যখন জায়ান অফিস থেকে ফিরলো আরাবীর থমথমে মুখশ্রী দেখে ভ্রু-কুচকালো। সারাটাক্ষন আরাবীকে এমন ভার মুখ নিয়ে থাকতে দেখে শেষে আর না পেরে প্রশ্ন করলো,

-‘ কি হয়েছে?’
আরাবী বিছানা করতে করতে উত্তর দেয়,
-‘ কি হবে?’
-‘ সেটাই তো বলছি।কি হয়েছে বলতে।এটা বলো না যে কিছু হয়নি।কারন আমার কাছে মিথ্যে বলে লাভ নেই।আমি জানি কিছু তো একটা হয়েছে।তাই তাড়াতাড়ি বলো। ‘

আরাবী এইবার থপ করে বিছানায় বসে পরলো।এতোক্ষনে জমিয়ে রাখা কান্নাগুলো যেন হঠাৎই ঠেলেঠুলে বেড়িয়ে আসলো।বলে না প্রিয় মানুষের সামনে হাজার চাইলেও নিজেকে শক্ত রাখা যায় না।

তাদের সামনে দূর্বল হয়ে পরি আমরা।আরাবীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।আর হাজার হোক সে একটা মেয়ে। পরপুরুষের মুখ এমন বি’শ্রি কথা শুনলে তো ওর খারাপ লাগবেই।আরাবীকে হঠাৎ এমন কাঁদতে দেখে অবাক হলো জায়ান।আরাবীর এমন কান্নায় যেন ওর কলিজা তীরের মতো বি’ধছে।ঝাঝ’ড়া করে দিচ্ছে হৃদপিণ্ডটা।জায়ান তড়িঘড়ি করে আরাবীর পাশে এসে বসলো।টেনে আরাবীকে বুকে নিলো।অস্থির কণ্ঠে বলে উঠলো,

-‘ কি হয়েছে আরাবী?কাঁদছ কেন?আমাকে বলো।আমি সব ঠিক করে দিবো।তবুও কাঁদে না তো।আমার ক’ষ্ট হচ্ছে।’
আরাবী ঝাপ্টে ধরলো জায়ানকে।মনের ক’ষ্টগুলো উজাড় করে দিলো প্রিয় মানুষটার কাছে।তার বক্ষপিঞ্জরার মাঝে চুপটি করে মিশে রইলো।

জায়ান ও কিছু বললো না সময় দিলো আরাবীকে।খানিক সময় পর আরাবী নিজের ফোনটা এনে সেই ভিডিও রেকর্ডটা অন করে জায়ানের হাতে দিলো।জায়ান অবাক হলো এমন একটা সময়ে হঠাৎ আরাবীকে এমন ভিডিও রেকর্ড দেখানোর জন্যে।

পরবর্তীতে সম্পূর্ণ ভিডিও রেকর্ডটা দেখে জায়ানের মাথায় র’ক্ত উঠে গেলো।রাগে শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গ কেঁপে কেঁপে উঠছে।চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো জায়ানের।চোখজোড়া লাল হয়ে গেলো জায়ানের।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো জায়ান।আজ একটা অঘটন তো ওর দ্বারা হবেই হবে।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২০

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।আমি অনেক দুঃখিত প্রতিদিন গল্প না দিতে পারার জন্যে।বেড়াতে এসে এতো হৈ-হুল্লোড়ে আসলে লিখা হয়ে উঠছে না।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২২