হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২২

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২২
সাদিয়া জাহান উম্মি

জায়ানকে এমন ভয়া’নকভাবে রেগে যেতে দেখে ভ’য়ে শুকনো ঢোক গিললো।আরাবী জায়ানকে কিছু বলবে তার আগেই জায়ান বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।বাঘের ন্যায় গর্জন করে উঠে বলে,
-‘ সাহস কি করে হয় ওর।সাহস কি করে হয়?আমার বউ,ও আমার বউকে এসব কথা বলার সাহস কি করে হয়?ওর জিভ আমি টেনে ছি’ড়ে ফেলবো।’

জায়ান রেগেমেগে কক্ষ থেকে বের হতে নিবে তার আগেই আরাবী জায়ানের হাত টেনে ধরে।ভ’য়ার্ত গলায় বলে উঠলো,
-‘ প্লিজ,যাবেন নাহ। আমি ওকে মে’রেছি তো।অনেক মে’রেছি।যাবেন নাহ।’
জায়ান আরাবীর হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,
-‘ তো?তুমি মে’রেছো এতে আমি কি করবো?সেটা তোমার ভাগের ছিলো।তুমি তোমার জন্যে লড়েছো।এইবার আমি আমার বউয়ের জন্যে করবো,বুঝেছো?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরাবীর জিভ দিয়ে ঠোঁটজোড়া ভিজিয়ে নিলো।জায়ানকে বুঝাতে চেষ্টা করলো,
-‘ শুনুন নাহ।তারা তো চলেই যাবে।আমার মনে হয় না আজ যা মা’র খেয়েছে এরপর আর কোনদিন আমি কেন আর কোন মেয়ের দিকে তাকাবে।আপনি থামুন।এমনিতেই ফুপি আমায় পছন্দ করেননা বেশি একটা।আপনি এখন এমন করলে কিভাবে কি হবে বলুন তো?’

জায়ান যেন আরাবী এমন কথায় কিছু বুঝবে তো দূরের কথা।আরও রেগে গেলো।দাঁড়িয়ে থাকা আরাবীকে এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো।জায়ানের শক্তপোক্ত হাতের থাবায় আরাবী ব্যাথা পেলো।তবুও কিছু বললো নাহ।জায়ান আরাবীকে বিছানায় ধপ করে ফেলে দিলো।তারপর এক পা ফ্লোরে রেখে আরেক পা বিছানায় উঠালো।এক হাত আরাবীর কাধের পাশে রেখে আরেক হাত দিয়ে আরাবীর গাল চেপে ধরলো।চি’বিয়ে চি’বিয়ে বলে উঠলো,

-‘ কে কি ভাবলো আই ডোন্ট কেয়ার।বউটা তুমি আমার।বিয়ে করেছি আমি তোমাকে।অন্য কেউ করেনি যে অন্যের কথা ভেবে আমি আমার বউয়ের সাথে হওয়া অন্যায় দেখেও মুখ বুজে সহ্য করে নিবো।আমি জায়ান সাখাওয়াত কথাটা ভুলে যেও নাহ।’

কথাগুলো বলেই জায়ান উঠে চলে যাওয়ার জন্যে উদ্যত হলো।আরাবী দ্রুত উঠে দাঁড়ালো।ছুটে গেলো জায়ানের কাছে।যে করেই হোক এই পাগলকে থামাতে হবে।নাহলে ভয়ং’কর প্রলয় এসে যাবে।আরাবী এইবার জায়ানকে ঝাপ্টে ধরলো জায়ানকে।একেবারে সাপের মতো দুহাতে পেঁচিয়ে ধরলো।এদিকে আরাবী এমন করায় হতভম্ব জায়ান।শান্তভাবে দাঁড়িয়ে রইলো।আরাবী দেখলো জায়ান ওকে জড়িয়ে ধরছে না।তাই নিজেই আবার জায়ানের হাত দুটো টেনে ওর কোমড়ে রাখলো।জায়ানের গলা জড়িয়ে ধরলো।তাও বেশ বেগ পেতে হয়েছে আরাবীর।কারন জায়ান অনেক লম্বা।আরাবী পা উঁচিয়ে জায়ানের গলা জড়িয়ে ধরেছে।তাও বেশ ক’ষ্ট হচ্ছে।জায়ান তখনও নির্বিকার।সহ্য করতে না পেরে আরাবী বলে,

-‘ আমি দাঁড়াতে পারছি না দেখছেন নাহ?আপনি এতো লম্বা আমি কি আপনাকে ধরতে পারি?উপরে তুলুন আমায়।’
ভ্রু-কুচকালো জায়ান আরাবীর কথায়।মেয়েটার মাথায় চলছে কি? কি করতে চাইছে এই মেয়ে?এর মাঝে আরাবীর কণ্ঠ আবার,
-‘ কি হলো তুলুন?’

জায়ান আরাবীর কোমড়ে একহাতে আঁকড়ে ধরেই ওকে উপরে তুলে নিলো।আরাবী দাঁত বের করে হাসি দিলো।জায়ান ভ্রু-কুচকে বলে,
-‘ কি করতে চাইছো তুমি?’
আরাবী হি হি করে হেসে বললো,
-‘ আপনাকে সিডিউস করছি।’

জায়ান হা হয়ে রইলো আরাবীর কথায়।যে মেয়েকে আদরের সময় বলে কয়েও একটা চুমু দেওয়াতে পারে না। আর সে নাকি আজ ওকে সিডিউস করছে।জায়ান ঠোঁট কামড়ে ধরে মুখ অন্যপাশে ফিরিয়ে নিলো।তারপর শব্দ করে হেসে দিলো।আরাবী ঠোঁট ফুলালো জায়ানকে হাসতে দেখে।রেগে বলে,
-‘ হাসছেন কেন হ্যাঁ?এখানে হাসার কি আছে?’
জায়ান হাসি থামালো। আরাবীর কোমড় টেনে ওকে আরেকটু উপরে উঠিয়ে নিয়ে বলে,

-‘ সিডিউস বুঝি এভাবে করে?’
-‘তাহলে কিভাবে করে?’
-‘ আমি কিভাবে করি তোমায় রাতে?’
জায়ানের এমন একটা কথা বলবে ভাবতেই পারেনি আরাবী।লজ্জায় মুখশ্রী রক্তিম আভা ধারণ করলো।জায়ানের ঘাড়ে খা’মছে দিয়ে বলে,
-‘ ছিহ অস’ভ্য।’

-‘ছি কি? সিডিউস কিভাবে করতে হয় বললাম।’
-‘ লাগবে না সিডিউস করা।ছাড়ুন আমায়।’
আরাবী মোচড়ামুচড়ি শুরু করলো।জায়ান ছাড়লো না।আরও শক্ত করে ধরলো।আরাবীর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,

-‘ সিডিউস করতে এসেছো এখন তো সেটা না করা পর্যন্ত আমি ছাড়ছি না তোমায়।’
জায়ানের ফিসফিসানো কথাগুলো শুনে পুরো শরীর মৃদ্যু কেঁপে উঠলো।লজ্জায় হাঁসফাস করে উঠলো আরাবী।নিজের করা ট্রিকে যে নিজেই এইভাবে ফেঁসে যাবে ভাবতে পারেনি আরাবী।আরাবীর মাথা নিচু করে করুন গলায় বলে,
-‘ ছাড়ুন নাহ।’
-‘ উঁহু। ছাড়বো না।’
-‘ আচ্ছা আর করবো না তো!’
-‘ চুমু চাই আমার।’

চোখ মুখে লজ্জার আস্তরনে ঢেকে গেলো আরাবীর।নিজের জালে নিজেই যেন জড়িয়ে গেলো মেয়েটা। জায়ানের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে নিদারুণ একরাশ মুগ্ধতা তার প্রেয়সীর জন্যে।যেন প্রেয়সীর ঠোঁটের সিক্ত চুমুর জন্যেই অপেক্ষা করছে।সেইভাবেই আরাবীকে ধরে রাখলো। আরাবী সময় নিলো।চোখ বুজল।ধীরে এগিয়ে নিলো ঠোঁটটা জায়ানের ঠোঁটের কাছে।

তবে ওকে আর কিছু করতে হলো না।পরমুহূর্তেই জায়ানের নরম,গরম ঠোঁটের প্রগাঢ় স্পর্শ অনুভব করলো নিজের ঠোঁটের ভাজে।ভালোবাসাময় উষ্ণ ছোঁয়া দিতে ব্যস্ত জায়ান।উন্মাদ হয়ে যায় ছেলেটা আরাবীর কাছে আসলেই।থরথর করে কাঁপতে থাকা আরাবীর ছোট্ট শরীরটা জায়ান ভালোভাবে আগলে নিলো।যত্ন করে রাখলো নিজের বক্ষের মাঝে।যেন মেয়েটা একটু খানিও ব্যাথা না পায়।বেশ সময় নিয়ে ছাড়লো জায়ান আরাবীকে।জায়ানের গরম নিঃশ্বাসগুলো আরাবীর নত করে রাখা রক্তিম মুখশ্রীতে আছড়ে পরছে।জায়ান ধীরে বলে,

-‘ এতো নরম শরীর।পুরোই তুলোর মতো।ধরতেও পারি না ঠিকঠাক।ধরলেই মনে হয় এই বুঝি ব্যাথা পেলে।’
হাসল আরাবী।লাজুক হাসি।জায়ান আবার বলে,
-‘ কি আছে তোমার মাঝে?’
জবাব নেই আরাবীর।জায়ানের হাত আরাবীর গালে আদুরে স্পর্শ করলো।
-‘ বলো না কিছে? ‘
-‘ জা..জানিনাহ।’
আরাবীর কম্পিত কণ্ঠস্বর।

-‘ কেন জানো না? কেন তোমার কাছে এলেই আমি এলোমেলো হয়ে যাই।উম আরাবী তোমায় ছাড়া আমার একমুহূর্ত চলে না।অফিসে আমি যাই ঠিকই।তবে মন আমার তোমার কাছে পরে থাকে।আমার কি হবে আরাবী?তুমি তো পাগল বানিয়ে ছাড়লে।লোকে এখন আমায় পাগল বলবে। লোকে বলবে বউয়ের প্রেমে পরে জায়ান সাখাওয়াত পাগল হয়ে গিয়েছে।’
জায়ানের এমন কথা শুনে আরাবী খিলখিল করে হেঁসে দিলো।জায়ান চেয়ে চেয়ে দেখলো প্রাণপ্রিয়ার সেই মনখোলা হাসি।এমন একটা মেয়েকে কি ভালো না বেসে থাকা যায়?উঁহু,কখনও না।সেও পারেনি।ভীষণ ভালোবাসে ও আরাবীকে।এমন মেয়েটাকে ছাড়া এখন একমুহূর্তের জন্যেও শ্বাস নেওয়া ক’ষ্ট হয়ে যাবে ওর জন্যে।জায়ানকে এমন ধ্যানমগ্ন হয়ে তাকে দেখতে দেখে আরাবী হাসি থামালো।কোমল নরম হাত দ্বারা জায়ানের গাল স্পর্শ করে তার চিকন মেয়েলী কণ্ঠে বলে,

-‘ কি দেখেন এতো?’
-‘ আমার মাঝে কি এমন আছে?কেন এতো ভালোবাসেন আমায়?আমি তো আপনার মতো অতো সুন্দরও নাহ। ‘
আরাবীর এই কথায় রেগে গেলো জায়ান।শক্ত কণ্ঠে বললো,
-‘ তার মানে তুমি বুঝাতে চাইছো জায়ান সাখাওয়াতের পছন্দ ভালো না।’
-‘ আমি সেটা কখন বললাম আজব?’
আরাবীর অবাক কণ্ঠস্বর।জায়ান ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলে,

-‘ এই-যে তুমি বললে তুমি নাকি সুন্দর নাহ।আমি তোমায় কি দেখে ভালোবাসলাম।এইটা কেমন কথা আরাবী? আমাকে রাগাও কেন তুমি?তুমি জানো যে আমি আর যাই হোক তোমার উপর রাগ দেখাতে পারি না।রেগে আমি পুরো পৃথিবী ধ্বং’স করে দিতে পারলেও। তোমাকে কিছু বলতে পারি নাহ আরাবী।’

জায়ানের হৃদয় নিগরানো প্রতিটি কথায় আরাবীর চোখ ভরে উঠলো।ও ঝাপ্টে ধরলো জায়ানের গলা।ফিসফিস করে জায়ানের কানে কানে বললো,
-‘ ভালোবাসি।আপনায় প্রচন্ড ভালোবাসি আমি।শুনছেন আপনি আপনার কাঠগোলাপ আপনাকে ভালোবাসে।’

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২১

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। প্রচন্ড ব্যস্ত আমি কাজিনদের নিয়ে।হৈ-হুল্লোড়ে লিখা হয়ে উঠে সম্ভব হয়ে উঠে নাহ। তাও আমি চেষ্টা করছি।প্লিজ প্লিজ রাগ করবেন নাহ।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৩