হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৩

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৩
সাদিয়া জাহান উম্মি

রকিং চেয়ারে বসে উপন্যাস পড়ছিলেন জাহিদ সাহেব।ঠিক তখনি চা নিয়ে হাজির হলেন লিপি বেগম।স্বামির হাতে চায়ের কাপ দিয়ে তিনি বিছানায় বসলেন স্বামির মুখোমুখি হয়ে।জিহাদ সাহেব চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে স্ত্রীর দিকে চাইলেন।ভ্রু-কুচকে আসলো তার।সন্দিহান কণ্ঠে বলে উঠলেন,

-‘ কি হয়েছে ফাহিমের মা? কিছু বলবে?’
লিপি বেগম যেন এই প্রশ্নে খুশি হলেন।গদগদ হয়ে বলে,
-‘ হ্যা,হ্যা অনেক দরকারি কথা এটা।’
-‘ কি কথা বলো।’
লিপি বেগম খানিক আমতা আমতা করলেন। খানিক ভাবনা চিন্তা করে বলে উঠলেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘ সাখাওয়াত বাড়ির ছোটো ছেলেকে তো চিনো ও-ই।’
-‘ হ্যা,ইফতি কেন?’
-‘ আমাদের মেয়ে ফিহার জন্যে ইফতিকে কেমন লাগে তোমার?’
লিপি বেগমের আচমকা এমন একটা কথা শুনে আশ্চর্য হলেন জিহাদ সাহেব। তবে স্ত্রীর এই প্রস্তাবটা তার কাছে বেশ ভালো লাগলো।ইফতি ছেলেটাকে তারও ভালোলাগে।তিনি বললেন,
-‘ ভালো, খুব ভালো।তবে বলছিলাম কি মাত্রই তো আরাবীটাকে বিয়ে দিলাম।ফিহাটার বিয়ে আরও কয়েকদিন পর দিতে চাইছিলাম।’

লিপি বেগম রেগে গেলেন।তাও বহু কষ্টে নিজেকে দমিয়ে নিয়ে বলে,
-‘ ফিহাও তো বড় হয়েছে। ছোটো নেই আর।মেয়েটার জন্যে ভালো জায়গায় বিয়ে দিতে পারলে চিন্তা মুক্ত হতাম।আর তাছাড়া সত্যি কথা এটা হলো আমাদের ফিহা নিজেও ইফতিকে পছন্দ করে।ও নিজেই আমাকে এই কথা বলেছে।তাই তো আমি তোমাকে বলতে এলাম।’

মেয়ে ইফতিকে পছন্দ করে শুনে আশ্চর্য হলেন জিহাদ সাহেব।অবাক কণ্ঠে বলেন,
-‘ এ তুমি কি বলছো লিপি?’
-‘ আমি সত্যি কথাই বলছি।এটা জেনেই তো আমি তোমার কাছে জলদি জানাতে আসলাম।’
জিহাদ সাহেব স্তব্ধ হয়ে কতো সময় বসে রইলেন।বেশ খানিক চিন্তা ভাবনা করে বললেন,
-‘ আচ্ছা ঠিক আছে।মেয়ে যখন পছন্দ করে এখানে আর কিইবা বলব আমি।ঠিক আছে কাল তো শুক্রবার কাল নাহয় আমরা আরাবীদের দাওয়াত করি।তারপর নাহয় এই কথা উঠাই?’

খুশি হয়ে লিপি বেগম বলেন,
-‘ ঠিক আছে।তুমি আর ফাহিম সকাল সকাল বাজার করতে চলে যেও।আর এখনই ফোন দেও সাখাওয়াত বাড়ি।দাওয়াত করো তাদের।’

এই বলে লিপি বেগম চলে গেলেন জিহাদ সাহেব ফোন লাগালেন নিহান সাহেবের কাছে।প্রথমে কিছুক্ষণ কুশল বিনিময় করে নিলেন।তারপর কাল স্বপরিবারে তাদের কাল দাওয়াত করলেন। এটা একটা বাবার জন্যে ভালো খবর। যে এতো ভালো একটা পরিবারে আরেকটা মেয়েকেও তিনি বিয়ে দিতে পারবেন।দুবোন একসাথে থাকবেন।তবে কেন যেন তিনি শান্তি পাচ্ছেন নাহ। আরাবীর সময় যেমনটা খুশি হয়ে গিয়েছিলেন।আজ তেমন অনুভূতি হচ্ছে না।মনের মাঝে অজানা একটা ভয় হচ্ছে।মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হবে।কিছু একটা ঘটনা ঘটার পূর্বাভাস পাচ্ছে মন।

জায়ানের মুখ থেকে যেন হাসির রেখা সরছে না।আর জায়ানের সেই হাস্যজ্জ্বল চেহারা দেখে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে আরাবী।কাল রাত যে কিভাবে কথাটা বলে ফেলেছিলো ও কে জানে? কাল রাত থেকে লোকটা এইভাবে ওর দিকে তাকিয়ে।আর সুযোগ পেলে কাছে এসেই বলছে, ‘ আবার বলো না আরাবী ভালোবাসি।’ সাথে তো লোকটার বেফাস কথা আছেই।আরাবী লজ্জায় লাল নীল হয়ে যায়। এইযে খেতে বসেও ওর কানে ফিসফাস করছে।কেমন দেখায় নাহ?সবার সামনে লজ্জায় পরছে আরাবী। খেতে খেতে হঠাৎ মিথিলা বলে উঠলো,

-‘ কি শুরু করলে তোমরা? শশুড় শাশুড়ি কাউকে দেখছি মানো নাহ।এভাবে বেহায়াপনার কোন মানে হয় নাহ তো? মা বাবা কি কোন শিক্ষা দেইনি তোমাকে?নাকি তোমার বাবা মা-ও এমন স্বভাবের।লজ্জা শরমহীন। ‘
সবাই চমকে উঠলো এমন একটা কথায়।আরাবীর খারাপ লাগলো।এভাবে সবার সামনে এসব বলার তো কোন মানে নেই তাই নাহ? আর বাবা মায়ের কথা তোলায় বেশ রাগ লাগলো আরাবীর। শাশুড় শাশুড়ির উদ্দেশ্যে বেশ শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,

-‘ মাফ করবেন বাবা, মা।আমি এখন একটু বেয়াদবি করবো।কারন এখানে আমার বাবা মায়ের কথা তোলা হয়েছে।আমি সব সহ্য করতে পারলেও আব্বু আম্মুর নামে কেউ কিছু বললে সহ্য হয় নাহ।’
সাথি বেগম চোখের ইশারায় সম্মতি দিলেন।নিহান সাহেব কিছুই বললেন নাহ।চুপচাপ খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন।আরাবী এইবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো মিথিলার দিকে।গম্ভীর গলায় বলে উঠে,
-‘ তা কি যেন বলছিলেন ফুপু শাশুড়ি আম্মা।আমার বাবা মা আমায় ঠিকভাবে শিক্ষা দেই নি?’
মিথিলা ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে।আরাবী আবার বলে,

-‘ নিজের স্বামির সাথে কথা বললে নির্লজ্জ হয়ে যায় আমি জানতাম নাহ তো? তাহলে কি আমার এখানে বসা দুই মা আমার আম্মু এমনকি আপনিইও কি নির্ল’জ্জ?কারন আপনারাও তো স্বামির কথা বলতেন।
আমি আমার স্বামির সাথে কথা বলছি বুঝেছেন?

স্বামির সাথে।কোন পরপুরুষের সাথে নাহ যে আমি লজ্জায় ম’রে যাবো।তাহলে বলবো আপনি আপনার সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারেননি।যে কি-না একজন বিবাহিত পুরুষকে সবার সামনে নির্ল’জ্জের মতো জড়িয়ে ধরতে চায়। আবার অন্যের স্বামিকে ভালোবাসিও বলে।আশা করি বুঝতে পারছেন আমি কি বলেছি।পরেরবার ভেবে চিনতে কথা বলবেন।আমি কিন্তু মুখ বুজে সব সহ্য করা মেয়ে নই।আমার সাথে অন্যায় করলে প্রতিবাদ আমি কর‍তে জানি। ‘

সাথি আর মিলি বেগমের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।মিথিলা তাদেরও এমন লজ্জা দিতো সবার সামনে। নতুন নতুন যখন তারা তাদের স্বামিদের সাথে কথা বলতো।আজ শান্তি লাগছে।নিহান সাহেব আর মিহান সাহেবের ঠোঁটের কোণেও মৃদ্যু হাসি।নিজের পুত্রবধুর প্রতিবাদি রূপ দেখে তাদেরও বেশ ভালো লাগলো। এদিকে আরাবী বসতে নিবে তার আগেই জায়ান ওর হাত টেনে ধরলো।সবার উদ্দেশ্যে গম্ভীর গলায় বলে উঠে,

-‘ আমরা উপরে যাচ্ছি।’
জায়ান আরাবীকে নিয়ে চলে গেলো।এদিকে মিথিলা রাগে ফোঁসফোঁস করছে।রেগে বড় ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললো,
-‘ দেখলে ভাই।তোমার ছেলের বউ আমায় কিভাবে অপমান করলো।’
নিহান সাহেব টিশ্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বললো,

-‘ আমার ছেলের বউ যা করেছে আমি মনে করি ঠিক করেছে।তুই নিজেকে পরিবর্তন কর মিথিলা।বিদেশে থাকিস তুই।এটুকু তো বুঝিস যুগ পরিবর্তন হয়েছে।আর এই যুগের ছেলেমেয়েদের চিন্তা ভাবনা আমাদের থেকেও ভিন্ন।’
নিহান সাহেব উঠে চলে গেলেন।আহানা করুন কণ্ঠে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,
-‘ মা ছেড়ে দেও না।কেন এমন করছো? জায়ান তো সুখে আছে।এতেই হবে।এসব বাদ দেও মা।’

আরাবী রেগে আছে।কথা বলছে না জায়ানের সাথে।জায়ান আদুরেভাবে আরাবীকে বুকে টেনে নিয়ে বলে,
-‘ কি হলো?কথা বলছো না কেন?’
আরাবী রেগে বলে,
-‘কথা বলব নাহ।’
-‘ কেন বলবে নাহ?’
-‘ আপনার জন্যে সব হয়েছে।’
-‘ আশ্চর্য! আমি কি করলাম?’

আরাবী জায়ান থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।চোখ ছোটো ছোটো করে বলে,
-‘ আপনাকে আমি বার বার বলছিলাম তখন এমন করবেন নাহ। এমন করবেন নাহ।আপনি আমার কথা শুনলেন নাহ।এখন দেখুন তো সকাল সকাল কি একটা পরিস্থিতি হলো।’
জায়ান হেসে আরাবীর কাছে এসে আরাবীর কোমড় আকঁড়ে ধরে নিজের কাছে আনলো।আরাবীর কপালে আদুরে চুমু খেয়ে নিলো। এতে যেন সব রাগ গলে পানি হয়ে গেলো আরাবীর।জায়ান আরাবীর গালে স্পর্শ করে বলে,

-‘ তখন যদি আমি এমন না করতাম।আমার বউটার এই প্রতিবাদি রূপটা কি আমি দেখতে পেতাম? বলো?পেতাম।উফ,আমারও প্রেমে পরলাম বউ তোমার উপর।আবারও ঘা’য়েল হলাম।’
আরাবী মুঁচকি হাসলো।জায়ানকে দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
-‘ বেশ কথা জানেন আপনি। আপনি খুব খারা’প। খুব খা’রাপ।’

জায়ান শব্দ করে হাসলো।জায়ানের শরীর দুলছে হাসির কারনে।আরাবীর অপলক তাকিয়ে রইলো জায়ানের সেই দিক।জায়ান হাসি থামিয়ে তাকায় আরাবীর দিকে। আরাবীকে এইভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে,
-‘ কি দেখছো?’

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২২

আরাবী জায়ানের বুকের বা-পাশে হাত রেখে বলে,
-‘ দেখছি আমার সুদর্শন স্বামিকে।’

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৪