হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৪

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৪
সাদিয়া জাহান উম্মি

একটুপরেই মৃধা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবে সাখাওয়াত বাড়ির লোকজন।জায়ান গোসল নিচ্ছে।এই ফাঁকে শাড়িটা রুমের মধ্যেই পরে নিচ্ছে আরাবী।চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ লেপ্টে আছে মেয়েটার।জায়ান আরাবীকে আজ শাড়ি পরতে বলেছে।তাও নিজে বেছে একটা নীল রঙ্গের জামদানি শাড়ি বের করে দিয়েছে।আরাবীও খুশি মনে রাজি হয়ে গিয়েছে।

ভালোবাসার মানুষটা যখন যা চায় তখন তাই করতে ভালোবাসে।কিন্তু এখন আরাবীর এতো বিরক্ত লাগছে শাড়িটা পরতে।শাড়ির কুচিগুলো কিছুতেই ঠিক করতে পারছে না মেয়েটা।ঠিক সেই মুহূর্তেই একজোড়া হাত এসে স্পর্শ করলো ওর শাড়ির কুঁচিগুলো।সুন্দরভাবে ভাঁজে ভাঁজে গুছিয়ে নিয়ে হাতে দিলো আরাবীর।জায়ান চোখে মুখে মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আরাবীর দিকে।লজ্জা পেলো আরাবী জায়ানের কাছ থেকে সরে গিয়ে কুঁচিগুলো গুজে নিলো।পিছন থেকে জায়ানের বিরক্তভরা কণ্ঠ শোনা গেলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘ আহা, দেখছিলাম তো আমি।’
আরাবী মুঁচকি হেসে বলল,
-‘ পরে দেখিয়েন।আমি এখনো পুরো তৈরি হইনি।হিজাব বাঁধা বাকি আছে।’
-‘তো পরে আসো।আগে আমি দেখে নেই একটু।’
বাচ্চাদের মতো আবদার জায়ানের।আরাবী শাড়ির আঁচল ঠিক করে নিয়ে। হিজাব বাধায় মনোযোগ দিলো।মানে জায়ানের কথাকে পুরোপুরি ইগনোর করলো আরাবী।জায়ান গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

-‘ ইগনোর করা হচ্ছে বুঝি?’
আরাবী হিজাবে পিন গাঁথছিলো। সেইভাবেই বলে উঠলো,
-‘ এখানে ইগনোর করার কি আছে? সবাই রেডি হয়ে গিয়েছে বোধহয়।আমিই লেইট।’
জায়ান এসে পিছন থেকে আরাবীকে জড়িয়ে ধরলো।হকচকিয়ে গেলো আরাবী।অবাক হয়ে বলে,
-‘ আরেহ, কি করছেন? ছাড়ুন তো।’

-‘ আহ, এতো ছাড়ুন ছাড়ুন করো কেন?রাতেও তোমাকে কতো ভুলিয়ে ভালিয়ে কাছে আনা লাগে।’
আরাবী লজ্জায় হতভম্ব। জায়ানকে ঠেলে সরিয়ে দিলো তৎক্ষনাত। বিরবিরিয়ে বলল,
-‘ অস’ভ্য, অস’ভ্য।চরম অস’ভ্য।’
জায়ান প্যান্টের পকেটে হাত গুজে সটান হয়ে দাড়ালো।নির্বিকার ভঙিতে বলল,

-‘ অস’ভ্য আমি হয়েছি কার জন্যে?তোমার জন্যে।সো এখন এসব সহ্য করতেই হবে।কিছু করার নেই।’
আরাবী আর কিছুই বলল নাহ।সে জানে এই ঠোঁটকা’টা লোকটাকে থামানো কারো পক্ষে সম্ভব নাহ।তাই অহেতুক কথা বাড়ালো নাহ।আরাবী ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে বলল,
-‘ চলুন আমি রেডি।’
জায়ান এসে আরাবীর হাত মুঠোয় পুরে নিলো।তারপর বেড়িয়ে পরলো রুম থেকে।নিচে এসে দেখে সবাই তৈরি।জায়ান বলে উঠল,

-‘ চলো যাওয়া যাক।’
সাথি বেগম বললেন,
-‘ দারা বাবা।জিসান তো এখনও এলো।নাহ।’
জায়ান ভ্রু-কুচকালো। রাগি স্বরে বলে,
-‘ ওকে কে নেবে? ওকে কি আমি যেতে বলেছি?’
জায়ানের মুখে এমন কথা শুনে বেশ অপমানবোধ করলেন মিথিলা।আরাবীর দিকে রাগি চোখে তাকালো।উনি মানেন যে এখানে আরাবীই কিছু একটা করেছে। মিথিলা বলেন,

-‘ আমার সাথে এসেছে জিসান।ওকে এইভাবে অপমান করা মানে আমাকেও অপমান করা।জিসান না গেলে আমি অথবা আহানা কেউ যাবো নাহ ভাইয়া।এই আহানা চল উপরে।এমনিতেও এই মেয়ের বাবার বাড়ি যাওয়ার কোনরকম ইচ্ছা ছিলো না আমার।সে তো ভাইয়া এতো করে বলেছে তাই না করতে পারিনি।’
জায়ান কিছু বলতে নিবে তার আগেই আরাবী জায়ানের হাত ধরে থামিয়ে দিলো।মাথা দুলিয়ে না করলো কিছু বলার জন্য।নিহান সাহেব বললেন,

-‘ আহা,মিথিলা ছাড় তো।ওর কথায় রাগ করিস নাহ।’
মিথিলা নাক ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকালো।এমন সময় নেমে আসলো জিসান।ওর অবস্থা দেখে সবাই অবাক।হাতে ব্যান্ডেজ করা আবার খুরিয়ে খুরিয়ে হাটছে।আরাবী অনেক হাসি পেলো জিসানকে দেখে।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিলো নিজেকে ও।এদিকে কাল থেকে রুম থেকে বের হচ্ছিলো না জিসান।তাই ওর এই অবস্থা কেউ দেখেনি।মিথিলা দৌড়ে আসলো জিসানের কাছে।অস্থির হয়ে বললেন,

-‘ জিসান বাবা কি হয়েছে তোর?এইগুলো কিভাবে হলো?’
জিসান আমতা আমতা করল।তাও কোনরকম বলল,
-‘ কাকিমা বাথরুমে পরে গিয়েছিলাম কাল। তাই সামান্য ব্যাথা পেয়েছি।’
-‘ এটা সামান্য মনে হয় তোর? ইস,কতোটা ব্যাথা পেয়েছিস।তোর মা আর বাবা জানলে আমি কি জবাব দিবো বলতো?তারা তো আমার ভরসাতেই তোকে এখানে পাঠিয়েছে।’

-‘ চিন্তা করো না তো তুমি।আমি ঠিক আছি।’
মিহান সাহেব বলেন,
-‘ জিসান? ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই তোমায় চলো।’
-‘ তার দরকার নেই ছোটো মামা।আমি ঠিক আছি।হালকা ব্যাথা পেয়েছি।’
জিসানের নাকচ শুনে নিহান সাহেব বলেন,

-‘ তা বললে হবে বাবা? একটু চেক-আপ করিয়ে নিয়ে আসি চলো।’
-‘ নাহ বড়ো মামা তার দরকার নেই।আমি ঠিক আছি।আপনারা যান। ভাবিদের বাড়িতে।আমি এখানেই থাকবো।এই অবস্থায় সেখানে যাওয়া ঠিক হবে নাহ।’
মিথিলা জিসান যাবে না শুনে বলেন,

-‘ তুই না গেলে আমিও যাবো নাহ।তুই একা একা এখানে কিভাবে থাকবি বলত?’
-‘ আহা কাকিমা যাও তো তুমি।আমি ঠিক আছি।এমনিতে আমি বাডি থাকবো না।একটু পর আমি এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার জন্যে বের হবো যাও তুমি।’
অবশেষে জিসানের কথাই সবাই মেনে নিলো।জায়ান তো অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছে শুধু আরাবীর জন্যে।মেয়েটা তাকে পিছন থেকে খামছে ধরে আছে।অবশেষে সবাই রওনা হলো।

মৃধা বাড়িতে আজ আলিফাও এসেছে।ফাহিম আর জিহাদ সাহেব ওকে আসতে বলেছেন। আলিফাকে তারা নিজেদের মেয়ের মতোই ভালোবাসেন। আরাবী আসবে শুনে ওকেও আসতে বলেছেন তারা।আলিফা টেবিলে পানির জগ ভরে এনে রাখলো।এমন সময় কলিংবেল বেঁজে উঠলো।লিপি বেগম শরবত বানাচ্ছিলেন তিনি বলেন,
-‘ আলিফা যা তো দরজাটা খুল।তারা বোধহয় এসে পরেছে।’

আলিফা লিপি কথা মতো দরজা খুলতে চলে গেলো।দরজা খুলেই দেখলো সাখাওয়াত বাড়ির সবাই হাজির।আলিফা সবাইকে সালাম জানালো।তারপর সরে গিয়ে সবাই ঘরের ভীতর প্রবেশ করার জায়গা করে দিলো।ইফতি ঢুকতে নিয়েই আলিফার ওর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো।ইফতি সুযোগ বুঝে আলিফা চোখ মেরে দিলো।আলিফা হা করে রইলো অবাক হয়ে।এতোগুলো মানুষের সামনে কিভাবে এরকম করতে পারলো লোকটা?কেউ দেখল কি ভাবতো?আলিফা বিরবির করল,
-‘ অস’ভ্য কোথাকার।’

জিহাদ সাহেব আর ফাহিম সবাইকে সাদরে আসন গ্রহন করতে বললেন।কুশল বিনিময় হলো সবার সাথে।আরাবী গিয়েই বাবার বুকে ঝাপিয়ে পরলো।লেপ্টে রইলো বাবার বুকে। তো এই বাবাকে ছেড়ে আবার ফাহিমের বুকে গিয়ে লেপ্টে পরে।না চাইতেও চোখের কোণ ভিজে উঠছে মেয়েটার।মনে হয় কতোদিন দেখেনা বাবা,ভাইকে।কিন্তু কিছু করার নেই।মেয়েদের ভাগ্যই এমন।ফাহিম বুঝিয়ে শুনিয়ে বোনকে জায়ানের পাশে বসিয়েছে।

আরাবীকে জায়ানের কাছে বসাতে গিয়ে চোখ যায় নূরের দিকে।মেয়েটা মাথা নিচু করে বসে আছে।কোচিংয়ে সেদিনের ঘটনার পর থেকে মেয়েটা ভুলেও ওর দিকে তাকায় নাহ।শুধু পড়া বুঝানোর সময় যা একটু চোখাচোখি হয়।তাও নূর স্বর্বচ্চ চেষ্টা করে ফাহিমকে এড়িয়ে চলার জন্যে।ফাহিম ভাবলো একবার নূরের সাথে কথা বলবে।মেয়েটা কি রাগ করলো?কিন্তু ও যা বলেছে নূরের ভালোর জন্যেই বলেছে।

এদিকে আলিফার সাথে কথা বলার জন্যে পেট ফেটে যাচ্ছে আরাবীর।কালকের ঘটনা আলিফাকে না বলতে পারলে ওর হবেই না।আরাবী জায়ানের কানে ফিসফিস করে বলে,
-‘ কালকে যে আমি এতো সাহসী একটা কাজ করলাম।সেটা আলিফাকে না বলতে পারলে আমার পেটের ভাত হজম হবে না।আমি একটু যাই?’

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৩

জায়ান অদ্ভূত দৃষ্টিতে তাকালো।আরাবীর এমন বাচ্চামো কথা শুনে কি বলবে ভেবে পেলো না। তাই সম্মতি দিয়ে দিলো আরাবীকে।আরাবী সম্মতি পেয়ে উঠে চলে গেলো আলিফার কাছে।আলিফার হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের রুমে নিয়ে গেলো।দুই বান্ধবী চুটিয়ে কথা বলবে এখন।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৫