হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৫

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৫
সাদিয়া জাহান উম্মি

বিরক্তিকর মুড নিয়ে বসে আছে জায়ান।সেই কখন গিয়েছে মেয়েটা এখনও আসার নামগন্ধ নেই।শেষে টিকতে না পেরে ফোনকল আসার কথা বলে সেখান বসার ঘর থেকে সরে আসে জায়ান।বিন্দুমাত্র এদিক সেদিক না তাকিয়ে ডিরেক্ট আরাবীর রুমের দিকে অগ্রসর হয়।রুমের দরজা ভিড়ানো।জায়ান দরজায় দুবার টোকা দিয়ে গলা খাকারি দিলো। এদিকে দু বান্ধবীর কথার মাঝে ব্যাঘাত ঘটায় চমকে উঠে ওরা।গলা খাকারি দেওয়ার আওয়াজ শুনে আরাবী বুঝতে পারে লোকটা তার স্বামি ছাড়া আর কেউ নাহ।আলিফা বুঝতে পেরে দুষ্টু হাসলো।কাধ দিয়ে আরাবীর কাধে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,

-‘ ওহহো ভাইয়া বুঝি তোকে এতোক্ষন যাবত না দেখতে পেয়ে পাগল হয়ে গিয়েছে। ইস,কি ভালোবাসা গো।’
লজ্জা পেলো আরাবী।বলল,
-‘ কি যে বলিস না তুই।হয়তো তার কিছু লাগবে এই জন্যেই এসেছে।’
-‘ হ্যা হ্যা লাগবেই তো।তোকে লাগবে।বুঝি,বুঝি সব বুঝি।থাক তুই আমি যাচ্ছি।তোদের মাঝে কাবাবে হাড্ডি হতে চাই নাহ আমি।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আলিফা গিয়ে দরজা খুলে দিলো।জায়ান গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। আলিফা দুষ্টু হেসে বলে,
-‘ কি ভাইয়া?বউ ছাড়া বুঝি চলে নাহ?’
জায়ান আলিফার কথায় বাঁকা হেসে বলে,
-‘ একটা মাত্র বউ আমার তাকে ছাড়া চলবে কিভাবে বলো?’
আলিফা হেসে দিলো। তারপর বিনাবাক্যে বেড়িয়ে গেলো। আলিফা যেতেই জায়ান আরাবীর কক্ষে প্রবেশ করে।দরজা আটকে আরাবীর কাছে এসে দাঁড়ায়। আরাবী জিজ্ঞেস করল,

-‘ কিছু লাগবে আপনার?’
-‘ তোমাকে লাগবে।’
জায়ানের সোজাসাপ্টা জবাবে লজ্জা পেলো আরাবী।রিনরিনে কণ্ঠে বলে,
-‘ কি যে বলেন নাহ আপনি।চলুন বাহিরে যাই। সবাই অপেক্ষা করছে।’
আরাবী জায়ানের হাত ধরে যেতে নিতেই জায়ান উলটো আরাবীকে টেনে নিজের বাহুডোরে নিয়ে আসে।আরাবী হকচকিয়ে যায়।হাত রাখে জায়ানের বুকে।আরাবী নিচু গলায় বলে,

-‘ কি করছেন।’
জায়ান নরম হাতে আরাবীর কানের পিঠে চুল গুঁজে দিলো।তারপর আরাবীর কানের কাছে মুখটা এগিয়ে নিলো।জায়ানের গরম নিশ্বাসগুলো আরাবীর কানে এসে লাগছে। যা আরাবীর ভীতরে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে।শিহরণ জাগায় মনে। জায়ান চুমু খেলো আরাবীর কানের লতিতে। চোখ বন্ধ করে নিলো আরাবী।খামছে ধরলো জায়ানের বুকের কাছের অংশ।জায়ান ফিসফিস করে বলে,

-‘ তুমি জানো নাহ?তোমায় ছাড়া আমার একমুহূর্তও চলে নাহ?শুক্রবারেই শুধু পুরোটা দিন আর রাত আমি তোমাকে কাছে পাই।নাহলে তো অফিস থাকে। এই শুক্রবারে তুমি আমার চোখের আড়াল হতে পারবে না একটুও।’
ঢোক গিললো আরাবী।মৃদ্যুস্বরে বলে,
-‘ এমন করছেন কেন?ছাড়ুন নাহ।আজ তো বেড়াতে এসেছি।’

জায়ান আরো শক্ত করে ধরলো আরাবীর কোমড়।তারপর আরাবীর চোখেচোখ রেখে বলে,
-‘ কোন ছাড়াছাড়ি হবে না।আমার এখন একটা উষ্ণ চুমু চাই। সো চুপচাপ দাঁড়াও।আমি এখন চুমু খাবো।’
আরাবী আবার কিছু বলতে নিবে তার আগেই জায়ান আরাবীর অধরে অধর মিলিয়ে দিলো। মৃদ্যু কম্পিত হলো আরাবীর ছোট্টো দেহটা।আরো মিশে যেতে চাইলো জায়ানের প্রসস্ত্ব বুকটায়।জায়ানও বুঝতে পেরে আগলে নিলো অর্ধাঙ্গিনিকে নিজের বুকের মাঝে।

জিহাদ সাহেব উশখুশ করছেন নিহান সাহেবের পাশে বসে।ব্যাপারটা বেশ লক্ষ করছেন নিহান সাহেব। মূলত নিহান সাহেব,জিহাদ সাহেব আর মিহান সাহেব বাগানে এসেছেন কথাবার্তা বলার জন্যে। বুড়ো মানুষ তারা ইয়ং জেনেরশনদের মাঝে বসে আর কি করবেন তারা। কিন্তু জিহাদ সাহেবকে এমন কর‍তে দেখে নিহান সাহেব আর পেরে প্রশ্ন করেই ফেললেন।

-‘ কি হয়েছে ভাইসাহেব?কিছু বলবেন আপনি?অনেকক্ষন যাবত দেখছি ব্যাপারটা।কিছু বলার হলে বলে ফেলুন নির্দ্বিধায়।’
জিহাদ সাহেব যেন এতে যেন আস্থা পেলেন।মনে মনে নিজেকে পুরোদমে তৈরি করে বলে উঠলেন,
-‘ আসলে কিভাবে যে বলব কথাটা ভেবে পাচ্ছিলাম নাহ।না জানি আপনারা কি মনে করেন এই ভয়ে।’
মিহান সাহেব মুঁচকি হেসে বলেন,

-‘ আপনি বলুন।আমরা কেউ কিছু মনে করব নাহ।’
জিহাদ সাহেব রুমালের সাহায্যে কপালের ঘামটুকু মুছে নিলেন।টেবিলে থেকে গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পানি পাণ করে নিলেন।তারপর বলেন,

-‘ আসলে মিহান ভাইয়ের ছেলে ইফতিকে আমার বেশ ভালো লাগে।ছেলেটা অনেক ভালো।প্রতিটা মেয়ের বাবাই এমন একজন ছেলেকে তার মেয়ের জামাই হিসেবে চান।আর সেই কাতারে আমিও একজন।আপনাদের ছেলে ইফতিকে আমি আমার ছোটো মেয়ে ফিহার জন্যে পছন্দ হয়েছে। এভাবে নিজের বিয়ের কথা বলাটা ভালো দেখায় না।কিন্তু কিছু করার নেই ভাই।ক্ষমা করবেন আমায়।’

মিহান সাহেব চুপ করে রইলেন।কি বলবেন ভেবে পেলেন নাহ।ফিহাকে তার একটুও ভালো লাগে না।মেয়েটার চলাফেরা একটুও ভালো না।কিন্তু এইভাবে কারো মুখের উপর না বলতে কেমন একটা দেখাবে নাহ?সেখানে আবার মানুষটা যদি হয় তাদেরই কাছের মানুষ।আর এমনিতে কিছু বলার কথা বললে।মূলত এখানে তিনি কিছু বলতেও চাননা।যেখানে বড় ভাই আছেন। তিনি আর কিইবা বলবেন।বড় ভাই যা বলবেন তাই তিনি মেনে নিবেন।সম্পূর্ণ ব্যাপারটা বড়ভাইয়ের উপর ছেড়ে দিলেন তিনি।মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইলেন।

এদিকে জিহাদ সাহেব মাথা নিচু করে বসে রইলেন।তার কেমন যেন লজ্জা লাগছে।এইভাবে নিজেই নিজের মেয়ের বিয়ের কথা তোলায়।নিহান সাহেব সবটাই পর্যবেক্ষন করলেন।অতঃপর জিহাদ সাহেবের কাধে ভরসার হাত রেখে মুঁচকি হেসে বললেন,

-‘ লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই এখানে ভাইসাহেব।আরাবী মাকে যেমন আমার পছন্দ হওয়ায় আমি নির্দ্বিধায় আপনার কাছে এসেছি আপনার মেয়ের হাত চাইতে।আপনিও তাই করেছেন।পার্থক্য আপনি আপনার মেয়ের জন্যে করেছেন আমি আমার ছেলের জন্যে।এখানে লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।’
নিহান থামলেন।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে আবার বলেন,

-‘ তবে ভাই আমি আপনাকে তো এখনই তো উত্তরটা দিতে পারছি না।আমার পুরো পরিবারের সাথে কথা বলতে হবে।আর সবচেয়ে বড় কথা ইফতির মতামত নিতে হবে।যেমনটা আপনি নিয়েছিলেন আরাবীর থেকে।কি বলেন ভাই?’
জিহাদ সাহেব নিহান সাহেবের প্রতিটি কথায় মুগ্ধ হলেন। এমন একটা ভালো ফ্যামিলিতে নিজের মেয়েকে বিয়ে দিতে পেরে শতো কোটিবার ধন্যবাদ জানালো রবের দরবারে।তিনি বলেন,

-‘ অবশ্যই ভাই সাহেব।ছেলেমেয়েদের মতামতই হলো বড়।ইফতি বাবা যদি রাজি হয় তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। আর রাজি নাহলেও এতে আমার কোন কষ্ট নেই।কারন জোড় করে কোন সম্পর্ক হয় না।এতে কেউ সুখি হয় নাহ।’
-‘ হ্যা যা বলছেন ভাই।’

এইভাবেই তারা কথাবার্তা বলতে লাগলো।এমন সময় চা নিয়ে আসলো আলিফা।তাদের তিনজনের হাতে চায়ের কাঁপ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো। মিহান সাহেব তাকিয়ে রইলেন আলিফার দিকে। মনে মনে বলেন,
-‘ আমি জানি আমার ছেলে ফিহাকে বিয়ে করতে রাজি হবে নাহ। ও না বললে ভাইও জিহাদ সাহেবকে মানা করে দিবে।এই বিষয়টা শেষ হলেই আমি আলিফার বাড়িতে যাবো ইফতির জন্যে আলিফার হাত চাইতে।মেয়েটাকে আমার বেশ লাগে।কি সুন্দর সুশীল আর ভদ্র মেয়েটা।ছেলে আমার রাজি না হলেও সমস্যা নেই।ওর কানে টেনে নিয়ে গিয়ে হলেও আমি এই বিয়েতে রাজি করাবো।তাও আলিফা মেয়েটাই আমার পুত্রবধূ হবে।সিদ্ধান্ত ফাইনাল।’
মনে মনে কথাগুলো বলে মুঁচকি হাসলেন মিহান সাহেব।

লিপি বেগমের কথা অনুযায়ী বাগানে গল্পরত জিহাদ সাহেব,নিহান সাহেব আর মিহান সাহেবকে চা দিতে গিয়েছিলো আলিফা।সেখানে গিয়েই যা শুনলো স্তব্ধ হয়ে যায় আলিফা।ইফতি আর ফিহার বিয়ে নিয়ে চলা সমস্ত কথা শুনে নেয় আলিফা। কোনরকম নিজেকে শক্ত করে তাদের চা দিয়েই সেখান থেকে চলে আসে আলিফা।

সোঁজা ওয়াশরুমে এসে পরে ও।ওয়াশরুমে দাঁড়িয়ে নিস্তব্ধে কাঁদছে আলিফা।কিভাবে সহ্য করবে ও এসব? ইফতিকে তো নিজেও ভালোবাসে।কিন্তু নিজের মনের মধ্যে সদ্য ফোটা ভালোবাসার পদ্ম ফুলটা যে এতো তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে ভাবেনি আরাবী।অনেকক্ষন সেইভাবে কাঁদলো আলিফা।অতঃপর কান্নার রেশ কমে আসতেই চোখেমুখে জল ছিটিয়ে নিলো ও। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৪

-‘ দূরে থাকতে হবে আপনার থেকে।অনেক দূরে।হবে না কোনদিন আমাদের মিল হবে না ইফতি।তাই আপনি আমার মনের কথা জানার আগেই আমি দূরে সরে যাবো আপনার থেকে।আমি জানি আপনি আমার মনের কথা জানলে কোনদিনও বিয়েতে রাজি হবেন নাহ।আর আপনি রাজি না হলে আরাবীর উপর সব দোষ দিবে ওর মা আর বোন।আর আমি চাই না আমার কারনে আমার বোনের মতো বান্ধবীর জীবনে অশান্তি হোক।দূরে চলে যাবো আমি।’

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৬