হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৬

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৬
সাদিয়া জাহান উম্মি

বিকেলেই ফিরে আসে সাখাওয়াত পরিবারের সবাই মৃধা বাড়ি থেকে।যাওয়ার সময় ইফতি একপলক আলিফাকে দেখার জন্যে ছটফট করছিলো। কিন্তু মেয়েটার বিন্দুমাত্র পাত্তা পেলে তো।ফাহিমেরও একই দশা।সে এতো চেষ্টা করেছে নূরের সাথে কথা বলার জন্যে।কিন্তু নূর প্রতিবারই ফাহিমকে ইগনোর করে গিয়েছে।নূরের এমন ব্যবহারে কেন যেন মনে মনে ভীষণ কষ্ট লেগেছে ফাহিমের।কিন্তু কেন এমনটা হলো?

এর উত্তর হাজার খুঁজেও মিলাতে পারেনি ফাহিম।অস্থির হৃদয় নিয়ে সারারাত ছটফটিয়ে কাটিয়ে দিলো ছেলেটা।আর এদিকে বাড়িতে এসে আলিফাকে শতোবার ফোন করেছে ইফতি।কিন্তু প্রতিবারই আলিফার ফোন বন্ধ বলছে।এমন তো কখনও হয় না।ইফতি জানে আলিফাও ওকে ভালোবাসে।শুধু মুখে বলে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আর ভালোবাসি মুখে বলতে হবে এমন তো নাহ।প্রিয় মানুষটার চোখের দিকে তাকালেই তো বুঝা যায় তাই নাহ? প্রায় একঘন্টা টানা চেষ্টা করলো ইফতি।কিন্তু নাহ সেই একই অবস্থা।এইবার না পেরে ইফতি সোজা চলে গেলো জায়ানের রুমে। রুম গোছাচ্ছিলো আরাবী।জায়ান গিয়েছে ওয়াশরুমে।এমন সময় দরজায় করাঘাতের আওয়াজ শুনে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।হুরমুর করে ঘরে প্রবেশ করে ইফতি।অস্থির গলায় বলে উঠে,

-‘ ভাবি আপনি একটু আপনার ফোন দিয়ে আলিফাকে ফোন দিবেন?’
আচমকা ইফতির মুখে আলিফার নাম শুনে অবাক হয় আরাবী।ভাবুক মনকে শান্ত করতে প্রশ্ন করে,
-‘ কি হয়েছে ভাইয়া?হঠাৎ আলিফাকে ফোন করবো মানে?’
-‘ আহা! ফোন করুন নাহ ভাবি।একটু আর্জেন্ট।’

আরাবী বুঝলো এই মুহূর্তে ইফতিকে প্রশ্ন করা বোকামি হবে।তাই আরাবী আর প্রশ্ন করলো না।বিনাবাক্যে ফোনটা নিয়ে আলিফার ফোনে কল করলো।অপাশ থেকে সেই একই কথা বলল।ইফতি অস্থির হয়ে দাঁড়িয়ে। আরাবী ওকে হতাশ করে দিয়ে বলে,
-‘ ফোন বন্ধ বলছে ওর।’
-‘ সিট!সিট!সিট!’

দুহাতে চুল খামছে ধরলো ইফতি নিজের।কেন যেন ওর মন বলছে কিছু একটা ঠিক নেই।কোথায় কিছু গন্ডগোল আছে।মন বারবার কু ডাকছে।আরাবী ইফতির এমন পাগলপ্রায় অবস্থা দেখে ক্ষনে ক্ষনে অবাক হচ্ছে।ইফতিকে এর আগে এমন অবস্থায় কখনও দেখেনি আরাবী।হঠাৎ কিছু একটা মনে পরতেই আরাবী বলে,
-‘ আমি আলিফার ছোটো বোনের কাছে ফোন করছি।ওর কাছ থেকে জানতে পারবো আলিফার ব্যাপারে।’
আরাবীর মুখে এমন একটা কথা শুনে যেন একটু আশার আলো পেলো ইফতি।দ্রুত বলে,

-‘ ভাবি জলদি কল করুন।’
আরাবী কল করলো।দুবার রিং হতেই ফোন রিসিভ হলো।
-‘ হ্যালো? কে? আহিয়া?’
অপাশে খানিক নিরবতা চললো।তারপর দীর্ঘশ্বাসের শব্দ।এরপর আস্তে করে জবাব আসে।
-‘ নাহ, আমি আলিফা।’
অবাক হয় আরাবী।বলে,

-‘ আলিফা?তোর ফোন বন্ধ কেন?কি হয়েছে তোর?আর তোর কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন?’
ইফতি পাশ থেকে ইশারা করলো আরাবীকে ফোনটা ওকে দিতে।আরাবী মাথা দুলিয়ে ফোনটা ইফতিকে দিয়ে দিলো।ইফতি ফোন হাতে নিয়ে দ্রুত কানে লাগালো।অপাশে আলিফা কিছু বলছিলো।আলিফার কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েই যেন জান ফিরে পেলো ইফতি।তারপর কোনকিছু না ভেবে বেশ উচ্চস্বরেই ধমকে উঠে,

-‘ এই মেয়ে এই।তোমার ফোন বন্ধ কেন?হ্যা?ফোন বন্ধ কেন?জানো কতোটা চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম আমি? কোন কমনসেন্স নেই তোমার মাঝে? এখন তুমি যদি আমার সামনে থাকতে থা’পড়ে তোর গাল লাল করে দিতাম বেয়াদ’ব মেয়ে।তুমি এতোটা……’

বাকিটা আর বলতে পারলো না ইফতি কারন অপাশে আওয়াজ হচ্ছে ‘ টুট,টুট,টুট!’ মানে কলটা কেটে দিয়েছে আলিফা।বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো ইফতি।রাগে শরীর থরথরিয়ে কেঁপে উঠলো।শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
-‘ হাও ডেয়ার সি? আমি কথা বলছিলাম।ও কল কাটার সাহস কোথায় পেলো? এই মেয়ে তো আমি সামনে পেলে দেখে নিব।কার সাথে ও এমন করছে অক্ষরে অক্ষরে বুঝিয়ে দিবো।’

আরাবী এতোক্ষন নির্বিকার ভঙিতে থাকলেও আর পারলো না এইবার।এতোক্ষন যেটুকু দেখলো তাতে যা বোঝার বোঝে গিয়েছে ও।আরাবী প্রশ্ন করল,
-‘ ভালোবাসেন আলিফাকে ভাইয়া?’
থমকে গেলো ইফতি আরাবীর এমন একটা কথায়।কি বলবে ভেবে পেলো না।ইফতি খানিক ভাবলো।সিদ্ধান্ত নিলো আরাবীকে সব জানাতে হবে।এখন আরাবীই পারবে এই সমস্যার সমাধান করতে।আর কোন লুকোচুরি না করে ইফতি বেশ শান্ত কন্ঠে বলল,

-‘ হ্যা ভালোবাসি।প্রচন্ড ভালোবাসি ভাবি ওকে আমি।’
মুঁচকি হাসলো আরাবী। বলল,
-‘ চিন্তা করবেন নাহ ভাইয়া।সব ঠিক হয়ে যাবে।আমি আছি তো।’

আরাবীর এইটুকু কথায় যেন প্রচন্ড ভরশা পেলো ইফতি।তাই আরাবীর উপরে সব দিয়ে চলে গেলো।একটু পরেই ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে জায়ান।সে ওয়াশরুমে থাকাকালিনই চিল্লাপাল্লা শুনেছে।তাই এসেই আরাবীকে প্রশ্ন করে,
-‘ ইফতি এসেছিলো বুঝি?ওর গলার আওয়াজ পেলাম?’

আরাবী জায়ানের হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে নিলো।ইশারা করলো জায়ানকে বিছানায় বসতে।জায়ান বিনাবাক্যে গিয়ে বিছানায় বসল।আরাবী এগিয়ে গিয়ে জায়ানের চুল মুছে দিতে লাগলো।তারপর বলে,
-‘ হ্যা ভাইয়া এসেছিলো।’

জায়ান ওর শীতল হাতজোড়া নিয়ে রাখলো আরাবীর কোমড়ে।একহাত শাড়ির আঁচল ভেদ করে মসৃণ কোমড় স্পর্শ করেছে।মৃদ্যু কম্পিত হলো আরাবী।শব্দ করল, ‘ উহ!’ জায়ান টেনে আরাবীকে আরও নিজের কাছে নিয়ে আসে।শান্ত গলায় বলে,

-‘ কি হলো বলো?’
-‘ কিভাবে বলব?আপনি এমন করলে?’
-‘ এভাবেই বলতে হবে।’
উপায় নেই আরাবীর। সে জানে এই লোককে হাজার বললেও হবে না।তাই সেইভাবেই বলতে লাগল,
-‘ আলিফা ফোন বন্ধ করে রেখেছিলো।ইফতি ভাইয়া সেই কারনেই আমার কাছে এসেছেন।’
ভ্রু-কুচকালো জায়ান।প্রশ্ন করল,

-‘ মানে বোঝলাম নাহ?’
-‘ আরেহ এখনও বুঝেন নাই?ইফতি ভাইয়া আলিফাকে ভালোবাসে।আর তাইতো আলিফার ফোন বন্ধ থাকায় আমার কাছে এসেছে।’
-‘ হুম,এইবার বুঝলাম।’
-‘ এ্যাঁ?’
-‘ এ্যাঁ নাহ হ্যা।আমি এটা অনেক আগেই থেকেই জানি বউ।’

-‘ ওহ আচ্ছা তাই বলুন।’
থেমে আবার বলে আরাবী,
-‘ এই একমিনিট আপনি জানেন কিভাবে?’
মুঁচকি হেসে জায়ান বলে,
-‘ তুমি তো বোকা।নাহলে তোমার বান্ধবী তোমারই পিঠপিছে ইফতির সাথে গিয়ে দেখা করে আসে আর তুমি টেরই পাও না।বোকা কোথাকার।’

বোকা বলায় রেগে গেলো আরাবী।জায়ানের দিকে আঙুল তাক করে বলে,
-‘ এই এই এই একদম বোকা বলবেন নাহ বলে দিলাম।আমি কি আপনার মতো হ্যা?যে সবার পেছনে একটা করে বান্দরের লেঁজ লাগিয়ে দিবো?’
আরাবীর আঙুলে টুক করে কাম’ড়ে দিলো জায়ান।’উহ!’ শব্দ করে আঙুল সরিয়ে নিলো আরাবী।জায়ান হেসে বলে,
-‘ তুমি তো বুঝবে না আমি লেঁজ লাগাই কেন?যদি বুঝতে তাহলে তো হতোই।’

-‘ তো এখন বলুন।শুনি কেন এমন করেন?’
জায়ান ঝুকে এলো আরাবীর কাছে।ধীর কন্ঠে বলে,
-‘ আমার একটা মাত্র বউ।তার যদি কিছু হয়ে যায়?তাহলে আমার কি হবে?কাঠগোলাপের স্নিগ্ধ রূপে মোহিত হওয়া, তার সুবাসিত ঘ্রাণে নিজের দেহকে মাখামাখি করা যে আমার নিত্যদিনের কাজ।সেই কাঠগোলাপের গায়ে একটুখানি আঁচড়ের দাগও যে আমার সইবে নাহ।তাই তাকে সকল রকম ঝড়ঝাপ্টা থেকে বাঁচানোর জন্যেই আমি এমন করি বোঝলে?’

মুগ্ধ হলো আরাবী জায়ানের প্রতিটা কথায়।লোকটার এই নিখাত ভালোবাসা দেখলে ওর কান্না পায়।ভীষণ রকম কান্না।এই মানুষটার সাথে ও এখন আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গিয়েছে।প্রতিটি পদে পদে এখন এই মানুষটাকে ওর প্রয়োজন। ভীষণভাবে প্রয়োজন।আরাবী ঝাপিয়ে পরলো জায়ানের বুকে।তারপর চুমু খেলো জায়ানের উন্মুক্ত বুকের বাপাশে।তৃপ্তিময় হাঁসে জায়ান।আরাবীর চুলের ভাঁজে চুমু খেয়ে।আরো ভালোভাবে আগলে নেয় নিজের কাঠগোলাপকে।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৫

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।আপনাদের কি জায়ান আর আরাবীর রোমান্টিক মুহূর্তগুলো অতিরিক্ত লাগে?খারাপ লাগে পড়তে?তাহলে জানাবেন অবশ্যই।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৭