হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৭

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৭
সাদিয়া জাহান উম্মি

সকালে ব্রেকফাস্টের পালা শেষ হতেই নিহান সাহেব পরিবারের সবাইকে বসার ঘরে একঝোট হতে বললেন।বাড়ির প্রধান কর্তার আদেশ মোতাবেক সবাই শুরশুর করে হাজির হয় বসার ঘরে।নিহান সবাই আরেকবার সবার দিকে তাকিয়ে যাচাই-বাছাই করে নিলেন সবাই এসেছে কিনা।এইবার ইফতির দিকে একপলক তাকিয়ে গম্ভীরস্বরে বলে উঠেন,

-‘ইফতি আমি যা বলব মন দিয়ে শুনবে।’
হঠাৎ নিজের উদ্দেশ্যে এমন একটা কথা শুনে সজাগ হয়ে দাঁড়ায় ইফতি।সাবলীলভাবে বলে,
-‘ জি চাচ্চু বলো।’
গলা খাকারি দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে নেন নিহান সাহেব তারপর বলেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘ ইফতি তুমি বুঝদার হয়েছো। অফিসেও জয়েন করেছ বেশ কিছুদিন হয়েছে।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এইবার তোমাকে বিয়ে করাবো।আরাবী মায়ের ছোটো বোন ফিহাকে তো চিনই?ফিহার সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করতে চাইছি।এতে তোমার মতামত কি?’

নিহান সাহেবের মুখে হঠাৎ এরূপ কথা শুনে আশ্চর্য হয় সবাই।আরাবী তো বিষ্ময়ের সপ্তম চূড়ায়।একে একে সব বুঝতে পারলো আরাবী।কাল বোধহয় এর জন্যেই সাখাওয়াত পরিবারের সবাইকে ওর বাবা মা দাওয়াত করেছেন।আর এর পেছনে যে ওর মা আর বোন দায়ি তা বেশ ভালোই জানে।

আরাবী এটা ভেবে কষ্ট পেলো যে ওর বাবা ওকে না জানিয়ে এভাবে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো।একবার কি ওকে এই বিষয়ে জানাতে পারতো নাহ? বাবা কিভাবে এমন একটা কাজ করতে পারল ওর বাবা? বাবার প্রতি বেশ অভিমান হলো আরাবীর।
ইফতি স্তব্ধ হয়ে রইলো কিয়ৎক্ষন এমন কথা শুনে।কিছু মুহূর্ত পরে সবটা বুঝতে পেরে নিজেকে সামলে নিয়ে ইফতি বেশ শান্ত গলায় বলে,

-‘ চাচ্চু আমি তোমাকে সম্মান করি।তোমার সব সিদ্ধান্ত আমি চোখ বন্ধ করে মেনে নেই। তবে চাচ্চু এইবার আমি মানতে পারছি না।আমাকে ক্ষমা করবে চাচ্চু।তবে আমি এই বিয়ে করতে পারবো নাহ।’
ইফতির মুখে সোজাসাপ্টা না শুনে নিহান সাহেব এইবার বেশ রুক্ষভাষী হয়ে বলেন,
-‘ তা কেন আমার সিদ্ধান্ত তুমি মানতে পারবে নাহ?কি এমন কারন তোমার?কোন সঠিক কারন আমাকে দেখাও তুমি।যে কেন তুমি এই বিয়ে কর‍তে পারবে নাহ।’

ইফতি একটুও ভয় পেলো না।কেন পাবে সে ভয়? ও তো ভালোবেসেছে।আর ভালোবাসলে কোনদিন ভয় পেতে হয় না।ইফতি জোড়ে শ্বাস নিলো।চোখ বন্ধ করে বলে দিলো,
-‘ কারন আমি একজনকে ভালোবাসি।আর তাকেই বিয়ে করতে চাই।’
-‘ কে সেই মেয়ে।যার জন্যে তুমি আমার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাচ্ছো।’
-‘ তাকে তুমি চেনো চাচ্চু!’

-‘ এতো ভণিতা ভালো লাগছে না ইফতি সোজাসুজিভাবে বলে দেও।কে মেয়েটা?’
-‘ ভাবির ফ্রেন্ড আলিফা।আলিফাকে আমি ভালোবাসি চাচ্চু।আর বিয়ে করলে আমি ওকেই করবো।’
ইফতির মুখে আলিফাকে ও ভালোবাসে শুনে অবাক মিহান সাহেব।খুশিতে লাফিয়ে উঠতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিলেন।যাক ছেলে তার একেবারে মনমতো একটা জবাব দিয়েছে।

ছেলের মুখে অন্যজনকে ভালোবাসে শুনে যেটুকু না ভয় পেয়েছিলো।এখন ছেলের সেই ভালোবাসার মানুষটা যে তারই পছন্দ করা মেয়ে শুনে তার থেকেও দ্বিগুন খুশি হয়েছে।যাক তার আর ছেলের কান টেনে বিয়ে করার কথা বলা লাগবে না।ছেলে তার এমনিতেই একপায়ে রাজি।
ইফতি এটুকু বলে সবার দিকে তাকালো। সবাই তার দিকেই তাকিয়ে।ইফতি ভ্রু-কুচকে বলে,

-‘ আশ্চর্য! এমনভাবে তাকানোর কি আছে?’
মিলি বেগম নিজের হা করে রাখা মুখ বন্ধ করলেন।এরপর বলেন,
-‘ কবে থেকে চলছে এসব?আর তুই আমায় বললিও নাহ?’
-‘ উফ মা কান্নাকাটি করো না তো?এখানে তো তোমার খুশি হওয়ার কথা।যদি ছেলের বিয়েই দিতে চাও।তাহলে সে যাকে ভালোবাসে তার সাথেই দেও।অন্যথায় তোমরা না চাইলেও আমি আলিফাকেই বিয়ে করব।’
নিহান সাহেব হালকা রাগিস্বরে বলে,

-‘ এইভাবে কথা বলছো কেন ইফতি? আমরা কি তোমার খারাপ চাইবো?’
মাথা নিচু করে নিলো ইফতি।ধীর আওয়াজে বলে,
-‘ সরি চাচ্চু।বাট তোমরা যদি আমাকে বিয়ে করাতেই চাও।তাহলে আমি আলিফাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো নাহ।বাকিটা তোমরা জানো।আমি এখন অফিসে গেলাম।আসি।’
কথা বলেই উঠে দাঁড়ালো ইফতি।তারপর গটগট পায়ে বেড়িয়ে গেলো।ইফতি চোখের আড়াল হতেই হেসে উঠেন নিহান সাহেব।সবার উদ্দেশ্যে বলেন,

-‘ ছেলের বিয়ের আয়োজন শুরু করো।আলিফার বাসার ঠিকানা দিও তো আমায় বউমা।প্রস্তাব নিয়ে যেতে হবে তো।’
মুচঁকি হেসে আরাবী বলে,
-‘ ঠিক আছে বাবা।’
হঠাৎ নিহান সাহেব চুপ করে গেলেন।হতাশ গলায় বলেন,
-‘ কিন্তু বউমা আমি জিহাদ ভাইকে কি জবাব দিবো।কিভাবে কি বলবো তাকে আমি। ‘
দীর্ঘশ্বাস ফেললো আরাবী।তারপর বলে,

-‘ ও আপনি চিন্তা করবেন নাহ বাবা।আপনি তো অফিসে যাবেন।সেখানে বাবার সাথে কথা বলে নিবেন আমার বাবা বুঝদার মানুষ। বুঝে যাবেন।সমস্যা নেই।আপনি চিন্তা করবেন না।আর রইলো বাকি কথা।আমি কাল আবার যাবো বাড়িতে।গিয়ে বাকিদের ভালোভাবে বুঝিয়ে বলব।’
আরাবীর কথায় যেন সস্তির নিশ্বাস নিলো জিহাদ সাহেব।তারপর তিনি আর মিহান সাহেব চলে গেলেন অফিসে।রুমে চলে আসে আরাবীকে নিয়ে জায়ান।আরাবী সোজা গিয়ে জায়ানের অফিসের ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে।আরাবীর ছোট্টো মুখটা দেখে নিয়েই জায়ান বলে,

-‘ কি হয়েছে?মন খারাপ?’
-‘ উহু!’
-‘ আমি জানি মন খারাপ।এখন কারনটা বলো।’
থপ করে বিছানায় বসে পরলো আরাবী।ধরা গলায় বলে,
-‘ আমি জানি বাবা কাল ফিহার সাথে ইফতি ভাইয়ার বিয়ে নিয়েই কথা বলার জন্যে আপনাদের দাওয়াত করেছেন।আমার কষ্ট এই জায়গাতেই জায়ান।যে তিনি একবারও আমাকে এই বিষয়ে জানালেন নাহ।বিয়ের পর কি আমি এতোটাই পর হয়ে গেলাম তার কাছে।’

এগিয়ে আসে জায়ান।পাশে বসে আরাবীর।ওকে টেনে নেয় বুকের মাঝে।জায়ানের বুকে মুখ গুজে দেয় আরাবী।জায়ান বলে,
-‘ মন খারাপ করার কিছুই নেই এখানে আরাবী।হয়তো বাবা কোন কারনেই এমন করেছেন।অথবা তিনি চেয়েছেন সবটা ঠিকঠাক হওয়ার পরেই তোমার সাথে কথা বলতেন। অথবা চিন্তায় তিনি এই বিষয়ে ভুলেই গিয়েছেন।বয়স হয়েছে তার আরাবী।এটুকু বোঝার ক্ষমতা তো তোমার আছে তাই নাহ?’
আরাবী কিছু বলল না।জায়ান আবার বলে,

-‘ কাল যাবে সিয়র?’
-‘ হু!’
-‘ আচ্ছা,আমি গিয়ে দিয়ে আসব।’
-‘ নাহ,আপনিও আমার সাথে যাবেন। আমি বেশিক্ষন থাকব নাহ।বিকেলে গিয়ে সন্ধ্যায় চলে আসব।’
-‘ আচ্ছা যাবো।’
সরে আসলো আরাবী।জায়ান বিরক্ত হয়ে বলে,
-‘ আহ,সরলে কেন?’
ভ্রু-কুচকে আরাবী বলে,
-‘ অফিসে যাবেন নাহ?’

সটান হয়ে সুয়ে পরে জায়ান।তারপর হুট করে আরাবীকে টেনে ওর বুকের উপর সুইয়ে দিলো।হকচকিয়ে গেলো আরাবী।জায়ান দুষ্টু হেসে বলে,
-‘ যেতে ইচ্ছে করছে না।গতকাল শশুড়বাড়ি যাওয়ায় বউয়ের সাথে রোমান্স করতে পারেনি। তাই সেটা আজ পুষিয়ে নিতে ইচ্ছে করছে।’
জায়ানের হাত ঠেলেঠুলে উঠে দাড়ালো আরাবী।তারপর বলে,

-‘ আপনার অস’ভ্য কথাবার্তা বন্ধ করুন।আর উঠুন। যান অফিসে যান।কোনরকম চালাকি করবেন নাহ।’
আরাবী জায়ানের হাত ধরে টানাটানি করছে।কিন্তু ওর মতো আরাবী কি আর জায়ানের মতো বিশালদেহি পুরুষকে উঠাতে পেরে।উহু পারে না।তাইতো একটুতেই হয়রান হয়ে গেলো আরাবী।জায়ান তা দেখে নিজেই উঠে দাড়ালো।দুহাতে চুলে বেকব্রাশ করে বিরক্ত কণ্ঠে বলে,

-‘ তোমার জন্যে দেখছি শান্তি নেই। কোথায় তুমি আরেকটু আদর সোহাগ দিয়ে বলবে,’থাক জান আজ অফিসে যাওয়ার দরকার নেই।আমার সাথেই থেকো।’ এটা তো বলবেই না।আর রইলো তুমি ডাক।সেটাও আমার এই ইহজনমে শোনা হবে নাহ।’

খিলখিল করে হেঁসে দিলো আরাবী জায়ানের এমন বাচ্চামো দেখে।আরাবীর হাসি দেখে জায়ানের ঠোঁটের কোণেও হাসি ফুটে উঠে।জায়ান এগিয়ে গিয়ে আরাবীর দুগালে হাত রেখে আদুরে চুমু খেলো আরাবীর কপালে।সরে এসে তারপর বলে,
-‘ আসি লেইট হয়ে যাচ্ছে।থাকতে যেহেতু দিবে নাহ।তাই দেরি করে লাভ নেই।’
-‘ আচ্ছা সাবধানে যাবেন।’
জায়ান অফিস ব্যাগ নিয়ে চলে গেলো।আর তার যাওয়ার পানে মুঁচকি হেসে তাকিয়ে থাকলো আরাবী।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৬

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন। চাইলেও বড় করে লিখতে পারছি না।ঠান্ডায় হাত বরফের মতো জমে যায় পুরো।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ২৮