হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৩৫

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৩৫
সাদিয়া জাহান উম্মি

বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে আরাবীকে।জায়ান আরাবীকে আনতে চায়নি।মূলত আরাবীর ক্রমাগত ঘ্যানঘ্যানানি প্যানপ্যানানিতে অতিষ্ট হয়ে ওকে আনতে হয়েছে জায়ানের।কি করবে? মেয়েটা ওর দূর্বলতার কথা খুব ভালোভাবেই জানে।আর সেটাই কাছে লাগিয়েছে মেয়েটা।কান্নাকাটি করে বাসায় আসার বাহানা ধরেছে আরাবী।আর জায়ান আরাবীর কান্না সহ্য করতে পারে না।

তাই বাধ্য হয়েই আরাবীকে নিয়ে বাসায় ফিরতে হয়েছে ওর।সেই থেকে জায়ান রাগে বোম হয়ে আছে আরাবীর উপর।একটুও কথা বলছে না।আরাবী বার দুয়েক চেষ্টা করেছে জায়ানের সাথে কথা বলার।কিন্তু লোকটা শুনলে তো?আরাবী ঠোঁট উলটে তাকিয়ে রইলো।মহা মুশকিলে পরেছে আরাবী।লোকটা এইভাবে গোমড়ামুখো হয়ে আছে যা আরাবীর একটুও ভালো লাগে না।আরাবীর জন্যে রাতের খাবার এনে খাইয়ে দিচ্ছে জায়ান।ওর সব ধ্যাংজ্ঞান আপাততো আরাবীকে খাইয়ে দেওয়ার দিকে।আরাবীর দিকে ভালোভাবে তাকাচ্ছে না।আরাবী অপরাধী কণ্ঠে ডাকল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘ শুনুন নাহ।’
জায়ান নিশ্চুপ।আরাবী বার দুয়েক ডাকলো।কিন্তু জায়ানের কোন হেলদোল নেই।আরাবীকে খাবার খাইয়ে দিয়ে উঠে চলে যেতে নিতেই আরাবী জায়ানের হাত টেনে ধরল।জায়ান থমথমে গলায় বলে,
-‘ কি হচ্ছে এসব?ছাড়ো কাজ আছে আমার।’
আরাবী কাঁদো গলায় বলে,
-‘ নাহ ছাড়বো না।কথা বলছেন না কেন আমায়? কি হয়েছে?’
জায়ান গম্ভীর গলায় বলে,

-‘ যা চেয়েছো তাই পেয়েছো।এখন আর কি চাই? দেখি বলে ফেলো।’
আরাবী মাথা নিচু করে নিলো।ধরা গলায় বলে,
-‘ আচ্ছা সরি তো। আর এমন করবো না।আমাকে কালকে আবার হাসপাতালে রেখে আসবেন।আমি আর কিছু বলব নাহ। এইবার তো রাগ করবেন নাহ।কথা বলুন।’

জায়ান তাও মুখ ঘুরিয়ে।আরাবী জায়ানের হাত ধরে টেনে জায়ানকে ওর আরো কাছে আনলো।তারপর টুপ করে জায়ানের গালে একটা চুমু এঁকে দিলো আরাবী।জায়ান স্থির হয়ে রইলো কতোক্ষন।তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
-‘ খুব ভালোভাবেই জানো আমাকে কিভাবে বশে আনতে হয়।’

আরাবী দাঁত কেলিয়ে হাসলো।জায়ান হতাশার নিশ্বাস ফেলল।এই মেয়েটার সাথে ও কোনমতেই রাগ করে থাকতে পারে না। একদম পারে না।ওই স্নিগ্ধ,কোমল,আদুরে মুখশ্রীটা দেখলেই তো জায়ানের হৃদয়টা ভালোলাগায় ছেঁয়ে যায়।সকল ক্লান্তিরা ছুটে পালিয়ে যায়।একরাশ মুগ্ধতা এসে ভড় করে ওর চোখে মুখে।জায়ান নরম গলায় বলে,

-‘ আমি তোমার সাথে রেগে থাকতে পারিনা জানো তুমি।আর সেটাই কাজে লাগাও তুমি।কেন এমন করো তুমি আরাবী?আর দুটো দিন হাসপাতালে এডমিট থাকলে কি হতো?নিজের ভালো তো পাগলও বোঝে।’
আরাবী মুখটা একটুখানি করে বলে,

-‘ আমার হাসপাতালে থাকতে ভালো লাগছিলো নাহ।আর তাছাড়া আমি জানি আমার কিছুই হবে না। আপনি হতে দিবেন নাহ্।আপনি আছেন না আমার সাথে।তাই কোন ভয় নেই আমার।’
আরাবী মুঁচকি হাসলো।জায়ান ধ্যানমগ্ন হয়ে সেই হাসিটুকু দেখলো।তার সকল চিন্তাদের ঝেরে ফেলে দিলো।আসলেই চিন্তা করে কি হবে? ও আছে তো ওর আরাবীর জন্যে।জায়ান নরম হাতে জড়িয়ে ধরলো আরাবীকে।আরাবী ছোট্টো বিড়ালছানার মতো গুটিয়ে রইলো জায়ানের বুকে।জায়ান পরম আদরে চুমু খেলো আরাবীর চুলের ভাঁজে।

তারাহুরো পায়ে কোচিং-এ আসলো নূর।আজ বেশ দেরি হয়ে গিয়েছে ওর।কোচিং-এর দরজার সামনে এসে ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
-‘ আসতে পারি স্যার।’
ফাহিম সবেই ক্লাসে প্রবেশ করেছে।নূরকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অনুমতি চাইতে দেখে বলে,
-‘ ইয়াহ।এসো।’

নূর রুমে প্রবেশ করল। একটা সিটই খালি আছে।সেখানে গিয়েই বসে পরলো নূর।নূরের পাশে বসেছে একটি ছেলে।ছেলেটার নাম রিজন।রিজন নূরকে দেখে হাসল।নূরও বিনিময়ে হাসি ফিরিয়ে দিলো।ছেলেটা পড়ালেখায় অনেক মেধাবি।তাই নোটস-এর বিষয়ে দু একবার কথা হয়ে নূরের সাথে।তাই ভদ্রতার খাতিরে অল্পস্বল্প কথা বলে নেয় নূর।রিজন জিজ্ঞেস করল,

-‘ লেট হলো যে।’
-‘ আর বলো না।রিকশা পাচ্ছিলাম নাহ একটাও।’
-‘ ওহ।’

কথা শেষ হতেই নূর আর রিজন পড়ায় মনোযোগ দিলো।ফাহিম তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে আছে নূরের দিকে।পাশের ছেলেটার সাথে কিসের এতো কথা বলা আর হাসিহাসি করা।কই ওকে দেখলে তো কোনদিন হাসি দেয় না মেয়েটা।বরংচ ম্যারথন রেসের মতো দৌড় লাগায়।গম্ভীর হয়ে রইলো ফাহিম পুরোটা ক্লাসে।তেজ নিয়ে বেশিরভাগ পড়া জিজ্ঞেস করেছে নূরকে।

নূর কিছু পারলো আর কিছু পারলো নাহ। যা পারেনি তার জন্যে ফাহিম ওকে বেশ কয়েকটা ধমকও দিয়েছে। মূলত আরাবী অসুস্থ থাকাতেই এতোদিন ঠিকঠাক পড়া হয়ে উঠেনি নূরের।ফাহিম সেটা জানে। আর জেনেশুনেই কিনা লোকটা ওর সাথে এই ব্যবহার করল।নূরের অভিমান হলো।অভিমানে অভিমানে জমে গিয়ে এখন পাহাড়সম হয়েছে।

এই অভিমান কি আদৌ বুঝবে ফাহিম? ক্লাস শেষে ছুটির পর সবাই বের হয়ে গেলো।নূর দাঁড়িয়ে আছে রিকশার জন্যে।নূর বুঝে পায় না। সব রিকশাওয়ালার কি ওর সাথে জাত শত্রুতা?নাহলে ওর দরকারের সময়টাতেই কেন একটা রিকশা পায় নাহ ও।এমন সময় ওর সামনে বাইক নিয়ে হাজির হলো ফাহিম।নূর ভ্রু-কুচকে তাকালো।ফাহিম সেদিকে পাত্তা না দিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,

-‘ সাখাওয়াত বাড়ির দিকেই যাচ্ছি।উঠে পরো।’
নাক ফোলালো নূর।এটা কেমন ধরনের কথা?এমন তিতকরলার মতো করে বলে কিনা উঠে পরো।এহ! বয়েই গেছে ওর এই বাইকে উঠতে।নূর হেটে হেটেই বাড়ি যাবে সিদ্ধান্ত নিলো।তাও এই লোকটার বাইকে উঠবে না।নূর রাগে হনহন করে সামনের দিকে হাটা দিলো।ওর রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে।নূর বিরবির করল,

-‘ অস’ভ্য।চরম অস’ভ্য লোক।’
ফাহিম আবারও বাইক নিয়ে নূরের সামনে আসলো।নূর রাগি চোখে তাকালো ফাহিমের দিকে।ফাহিম গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-‘ তেজ দেখিয়ে লাভ নেই।বাইকে উঠতে বলেছি।রাস্তায় সিনক্রিয়েট করো নাহ।’
নূর আশেপাশে তাকালো।আসলেই অনেক লোক তাকিয়ে ওদের দিকে।বিষটা দৃষ্টিকটু ঠেকলো নূরের।তাই অভিমান থাকা সত্তেও ফাহিমের বাইকে চেপে বসলো।নূরের অগোচরে বাঁকা হাসলো ফাহিম।তারপর হেলমেট পরে বাইক স্টার্ট দিলো।

জায়ান হুটোপুটি করে তৈরি হচ্ছে।তা দেখে আরাবীর ভ্রু-কুচকে আসে।আরাবী বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসা।সেই অবস্থাতেই বলে,
-‘ কোথাও যাচ্ছেন?’
-‘ হু!’
আরাবী প্রশ্ন করে,

-‘ কিন্তু কোথায়?অফিসে যাবেন নাহ তা আমি জানি।কারন এই মাঝবেলা নিশ্চয়ই আপনার অফিস টাইম নাহ।’
জায়ান চুল জেল লাগাতে লাগাতে ভরাট কণ্ঠে বলে,
-‘ তোমায় আমি বিশ্রাম নিতে বলেছি।শুনেছো আমার কথা?’
-‘ আপনি শুনেছেন আমার কথা?’
-‘ তোমার কোন কথাটা শুনলাম নাহ?’

-‘ এইযে একটু আগেই শুনলেন নাহ। আমি কতোগুলো প্রশ্ন করলাম।উত্তর দিয়েছেন আপনি?’
জায়ান নিশব্দে হেঁসে দিলো।জায়ানকে হাসতে দেখে আরাবী মুখ ফুলালো।জায়ান একেবারে তৈরি হয়ে আরাবীর কাছে আসলো।আরাবীর গালে আদুরে স্পর্শ করে নরম গলায় বলে,
-‘ কি হয়েছে?এতো রেগে যাচ্ছো কেন?’
আরাবী মাথা নিচু করে বলে,

-‘ রাগবো না তো কি করব? আপনি আমায় ফেলে চলে যাচ্ছেন।এখন আমি রুমে একা একা কি করব?’
জায়ান হেসে বলে,
-‘ একটুর জন্যে যাচ্ছি। দরকার আছে নাহলে যেতাম নাহ।আর আমি এতোটাও নিষ্ঠুর না যে আমার বউটাকে একা ফেলে যাবো।নূর আছে আমি গেলেই ও আসবে।আর আলিফাকেও আসতে বলেছি।কতোদিন যাবত ভার্সিটি যাচ্ছো না। আলিফার থেকে কিছু পড়া বুঝে নিও। আর আমি আসার সময় নোটস নিয়ে আসবো নেহ স্যারদের থেকে।’
আরাবী মাথা দুলালো।তবুও কেমন যে ওর কৌতুহল কমছে না। হঠাৎ করে লোকটা এমন তারাহুরো করে যাচ্ছেই বা কোথায়?আরাবী ধীরে বলে,

-‘ কোথায় যাচ্ছেন বলুন নাহ।’
জায়ান একটুও বিরক্ত হলো না।বরংচ নম্র গলায় বলল,
-‘ আমার সুখের সুখ খুঁজতে যাচ্ছি।কাঠগোলাপের মাঝে আমার সুখ বাস করে।আর আমায় সুখি থাকতে হলে যে তাকেও সুখি থাকতে হবে।সেই কাঠগোলাপের গাছটার মূল শিকড় কোথায় আছে তা যে আমায় যে করেই হোক জানতে হবে।কারন এতেই যে আমার কাঠগোলাপ খুশি আর স খুশি মানে আমিও খুশি।’
কথাগুলো বলে আরাবীর কপালে চুমু খেয়ে বেড়িয়ে গেলো জায়ান।আর ভাবনায় ব্যস্ত রেখে গেলো আরাবীকে।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৩৪

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।চেয়েও লিখতে পারছি না।জ্বর,ঠান্ডা ভীষণভাবে ঝেঁকে ধরেছে আমায়।বহু কষ্টে এটুকু লিখতাম।প্লিজ কেউ রাগ করবেন নাহ।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৩৬