হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪৮

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪৮
সাদিয়া জাহান উম্মি

স্তব্ধ,বিমুঢ় আর ভয়মিশ্রিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা শামিম সাহেবকে দেখে জায়ানের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল।তারপর ডা.হোসনে আরা রোজিকে ধীর আওয়াজে বলে উঠে,’ খেলা তো পুরো জমে যাচ্ছে আন্টি।’
‘ তা দেরি কিসের?চলো যাওয়া যাক।’
‘ হ্যা,চলুন আন্টি।’

জায়ান ডা.রোজিকে নিয়ে এগিয়ে গেল সবার মাঝে।রোজি সালাম জানালেন।সবাই সালামের জবাব নিলেন।নিহান সাহেব বলে উঠলেন,’ জায়ান কে উনি?উনাকে চিনলাম না তো বাবা।’
জায়ান ডা. রোজিকে বসতে বলে নিজেও সোফায় আয়েশ করে বসল।বলল,’ বোসো সবাই।তারপর পরিচয় করাচ্ছি।’
সবাই বসল জায়ানের কথায়।জায়ান নিজের হাতের আঙুলগুলো নড়াচড়া করে দেখতে দেখতে হঠাৎই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল শামিম সাহেবের দিকে।শামিম সাহেব যেন ভড়কে গেলেন এতে।জায়ানের ওই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ভয়ে র’ক্ত হিম হয়ে যাচ্ছে উনার।জায়ান বাঁকা হাসল তার এই অবস্থা দেখে।পরক্ষনেই বলে,’ ফুপা আন্টিকে খুব ভালোভাবে চেনেন।কি বলেন ফুপা?চিনেন তো?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মিথিলা স্বামির দিকে তাকালেন।স্বামির ভয়ার্ত মুখশ্রী দেখেই বুঝে নিলেন।কিছু একটা খারাপ হতে চলেছে।
শামিম সাহেব জায়ানের কথা শুনে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, ‘ এ…এসব তুই ক..কি বলছিস বাবা? আমি একে চিনিনা।’
‘ সত্যি চিনো নাহ?’
‘ নাহ!’
নিহান সাহেব ছেলের হোয়ালিপনায় বিরক্ত হয়ে গেলেন।বললেন,’ হচ্ছেটা কি জায়ান?সোজাসাপ্টাভাবে উনার পরিচয় করিয়ে দিলেই তো হয়? এতো হোয়ালি করছ কেন?’

জায়ান শামিম সাহেবের দিকেই তাকিয়ে।সেই অবস্থাতেই দাঁত খিঁচিয়ে বলে,’ বাইশ বছর ধরে তো তোমরা হোয়ালিপনার মাঝেই ছিলে বাবা।আজ আমি নাহয় একটু হোয়ালি করলাম।এতে ক্ষতি কি?’
সাথি বেগম চিন্তিত কণ্ঠে বললেন,’ তুই এসব কি রকম কথাবার্তা বলছিস বাবা?’

‘ এখনই সব জানতে পারবে মা।আজ আর কোনো লুকোচুরি হবে না।সব সত্য আজ সবার সামনে বেড়িয়ে আসবে।’
জায়ান দৃষ্টি তাক করল আরাবীর দিক।মেয়েটা তাকিয়ে ওর দিকে।ওই দৃষ্টিজোড়ায় কি অসীম প্রেম তার জন্যে।এক আকাশসম ভালোবাসা দেখতে পায় জায়ান আরাবীর ওই চোখজোড়ার দিকে তাকালে।ওই আদুরে মুখশ্রীর মায়া মায়া চাহনী দেখলেই মনটা জুড়িয়ে যায় জায়ানের।জায়ান একপা দুপা করে এগিয়ে যায় আরাবীর কাছে।আরাবী প্রশ্নোসূচক চোখে তাকিয়ে আছে।জায়ান আরাবীর নরম হাতজোড়া নিজের শক্তপোক্ত হাতজোড়া দিয়ে আঁকড়ে ধরল।তারপর নরম কণ্ঠে বলে উঠল,’ আমার স্ট্রং গার্ল তুমি তাই নাহ বলো?’

আরাবী কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে রইল জায়ানের দিকে।পরক্ষণে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল।জায়ান হালকা হেসে বলে,’ আমি জানতাম তুমি এটাই বলবে।’
জায়ানের হঠাৎ এইসব কথাবার্তায় আরাবীর কেমন যেন লাগছে।তাই জিজ্ঞেস করল,’ কিন্তু হয়েছে কি?আমাকে বলবেন আপনি?’

‘ এখনই সব জানবে।তুমি কোনোভাবেই ভেঙে পরবে না।সাহস রাখবে মনে।ভরসা রাখবে নিজের উপর।আমার উপর।আমি আছি তো তোমার জন্যে।আমার শেষ নিশ্বাস অব্দিই থাকব।’
আরাবী চুপচাপ জায়ানের কথাগুলো শুনল।তার মনটা কু ডাকছে।কি এমন করতে চলেছে জায়ান?যার জন্যে লোকটা ওকে এসব কথা বলছে।জায়ান আরাবীর হাত ধরে নিয়ে সেইভাবেই এগিয়ে গেল ডা.রোজির কাছে।তারপর হাসি মুখে বলে,’ আন্টি এইটাই হলো আরাবী।আমার স্ত্রী।’

ডা.রোজি ছলছল চোখে তাকিয়ে আছেন আরাবীর দিকে।এই মেয়েটাকেই কিনা? মা’রার জন্যে পাঠিয়ে দিয়ছিল ও অন্যের হাতে দিয়ে।মেয়েটার মায়াভরা মুখশ্রীটা দেখেই অনুশোচনাগুলো যেন কিলবিল করে আঁকড়ে ধরল উনার হৃদপিণ্ডটা।তিনি আরাবীর একহাত ধরে সেই হাতের উপর উনার কপালটা ঠেকিয়ে কেঁদে উঠলেন।কান্নারত কণ্ঠে বলতে লাগলেন,’ আমায় ক্ষমা করে দেও মা।আমায় ক্ষমা করে দেও।তোমার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি আমি।আমায় ক্ষমা করে দেও।বিগত বাইশটা বছর আমি অনুশোচনায় প্রতি মুহূর্ত দগ্ধ হয়েছি।তিলে তিলে যা আমায় ভীতর থেকে শেষ করে দিচ্ছিল।তুমি আমায় মাফ করো মা।অনেক জঘ’ন্য অন্যায় কাজ করেছি আমি।’

আরাবী দ্রুত উনার হাতের থেকে হাত ছাড়িয়ে নিল।তারপর ডা.রোজির বাহু ধরে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বলে,’ এসব কি বলছেন আপনি আন্টি।কিসের ক্ষমা চাইছেন আপনি।আমি তো আপনাকে চিনিই না।তাহলে আমার সাথে অন্যা’য় করলেনই বা কিভাবে?’

ডা.রোজি চোখ মুছলেন।আরাবীর কথায় জবাব না দিয়ে এগিয়ে গেল শামিম সাহেবের দিকে।তিনি বিষ্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।এ কি হচ্ছে?কিসব দেখছেন উনি?আর রোজি-ই বা আরাবীর কাছে এইভাবে মাফ চাইছে কেন?তবে কি সেদিন ওই বাচ্চাটাকে রোজি মা’রেনি?আর…আর সেই বাচ্চাটাই কি এখনকার আরাবী?কিন্তু কিভাবে সম্ভব?কিভাবে?এটা হবার নয়।বাচ্চাটা মা’রা গিয়েছে।এ হতে পারে না।ওনার ভাবনার মাঝেই রোজি এসে উনার সামনে উপস্থিত হন।শামিম সাহেব ভড়কে গেলেন।তা দেখে রোজি হাসলেন।ঠান্ডা গলায় বলে উঠেন,’ কেমন আছিস রাশেদ?’

শামিম সাহেব চমকে উঠলেন।জায়ান ভ্রু উচিয়ে বলে উঠল,’ আরে আন্টি শুধু রাশেদ বললে তো হবে না।পুরো নামটা বলবেন নাহ?আচ্ছা আমি বলে দিচ্ছি।মি.রাশেদুল শামিম শেখ।কি ঠিক বলছি তো ফুপা?’
শামিম ভয়ার্ত গলায় বলেন,’ কি হচ্ছে কি এসব?তোমরা এমন করছ কেন আমার সাথে?’
জায়ান রাগি গলায় বলে, ‘ আমরা কোথায় করলাম ফুপা?করেছ তো তুমি।নিজের স্ত্রীর মৃ’ত্যুতে উল্লাস করেছ।নিজের সদ্যোজাত সন্তানকে মা’রার জন্যে অন্যকে মোটা অংকের টাকা দিয়েছ।যাতে তোমার কুকীর্তি সম্পর্কে কেউ না জানে।’

ভয়ে বুকটা ধরাস করে উঠল শামিমের।এই সত্য জায়ান জানল কিভাবে?হঠাৎ ডা.রোজির দিকে নজর যেতেই বুঝলেন।রোজিই আছে যে জায়ানকে সব বলে দিয়েছে।শামিমের মাথায় ধপ করে রাগ উঠে গেল।তারপর এতো বছরের পরিকল্পনা সব ভেস্তে গেল।বাইশটা বছর ধরে যেই সত্যকে তিনি ধাপাচাপা দিয়ে রেখেছিলেন আজ তা সবার সামনে বেড়িয়েই আসল।শামিম রেগে তেড়েমেড়ে এগিয়ে গেল রোজির কাছে।রাগে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে বলেন,’ তুই এমন কিভাবে করলি আমার সাথে?তোকে মুখ বন্ধ রাখতে বলেছিলাম না আমি? তার জন্যে মোটা অংকের টাকাও দিয়েছিলাম তোকে।তাহলে কেন আমার সাথে বেঈমানী করলি বল?কেন করলি?আজ তো তোকে মেরে ফেলব আমি।’

শামিম রোজির গলা চেপে ধরল।ইফতি আর ফাহিম এসে দ্রুত রোজিকে ছাড়িয়ে আনল শামিমের কাছ থেকে।জায়ান রেগে ফোঁস ফোঁস করতে এগিয়ে গেল শামিমের দিকে।তারপর শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চড় লাগাল শামিমের গালে।হুংকার ছুড়ে বলে,’ তোর সাহস কিভাবে হলো এটা করার?তুই আমার বাড়িতে থেকেই আমার মানুষদের মারার চেষ্টা করিস।’

জায়ানের এমন ব্যবহারে সবাই অবাক।শামিম সম্পর্কে ওর ফুপা হয়।সেই ফুপার সাথে এমন বেয়াদবি আচরণ নিশ্চয়ই শোভা পায় না।নিহান সাহেব ছেলের এমন আচরণগুলো অবাক হয়ে দেখছেন।তবে তিনি এটুকু জানেন তার ছেলে অন্যায়ভাবে কোনোদিন কারো সাথে এমন বিহেইভ করতে পারেন নাহ।আর গুরুজনদের তো একেবারে না-ই।

এর পিছনে নিশ্চয়ই কোন কারন আছে।এদিকে মিথিলা স্বামির সাথে জায়ানের এমন ব্যবহার দেখে তেতে উঠে বলেন,’ বড় ভাইয়া এসব হচ্ছে টা কি?তোমার সামনে তোমার ছেলে আমার স্বামির সাথে এমন বেয়াদবি করছে। আর তুমি কিছু বলছ না কেন?’
নিহান সাহেব তাকালেন না অব্দি মিথিলার দিকে।তিনি জায়ানের উদ্দেশ্যে বেশ শান্তভাবেই বলে উঠেন,’ জায়ান সবাইকে সবটা খুলে বল।কেন তুমি এমন করছ?আর শামিমই বা কি করেছে?আর কিসের সত্যির কথা বলছ তুমি? সবটা বলো।’

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪৭

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।ছোটো হওয়ার জন্যে দুঃখিত।একটু মানিয়ে নিন।ঠান্ডা লাগায় প্রচুর মাথা ব্যথা করছে।অনেক কষ্টে এটুকু লিখলাম।আমি আমার যথাসাধ্য দিয়ে বাকিটুক আগামীকালই দেওয়ার চেষ্টা করব ইনশা-আল্লাহ্।যদি আল্লাহ্ চান।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪৯