হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৬

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৬
সাদিয়া জাহান উম্মি

আজ শুক্রবার। সপ্তাহিক ছুটির দিন।সকাল থেকে আরাবী বসে নেই।একে একে ঘরের সব কাজ আজ সে একা হাতেই করছে।এখন রান্না করছে।অবশ্য রান্না প্রায় হয়ে এসেছে।ফাহিম বোনের হাতের পাস্তা খেতে চেয়েছে। সেটাই বানাচ্ছে আরাবী।চুলোয় পাস্তা সিদ্ধ দিয়ে কাটাকুটি করছে আরাবী।

এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো।আরাবী ভ্রুক্ষেপ করলো না।বসার ঘরে লিপি বেগম আর ফিহা আছে। তাদের মাঝেই কেউ গিয়ে খুলে দিবে।আরাবী পেয়াজ,কাচা মরিচ কেটে নিয়েছে।পাস্তাটা চুলোয় বসিয়ে দিয়ে নাড়াচাড়া করছে আরাবী।এমন সময় রান্না ঘরে এসে হাজির হয় ফিহা।এসেই আরাবীকে দেখে মুখের বিকৃতি আকার করলো।ফিহা বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘ তোর শশুড়বাড়ির লোক এসেছে। আম্মু তোকে ভালোভাবে হাত মুখ ধুয়ে পরিপাটি হয়ে আসতে বলেছে।’
আরাবী কথাটা শুনেই বড় বড় চোখে তাকালো।মনে মনে বললো,
-‘ ইয়া মাবুদ।হঠাৎ তারা আসলো যে?’

আরাবী ঝটপট পাস্তা বানিয়ে রুমের দিকে ছুট লাগালো।সুন্দরভাবে ফ্রেস হয়ে একটা বেবি পিংক কালার গোল জামা পরে নিলো।জামাটা আরাবীর খুব পছন্দ। স্পেশালি জামাটার ওড়না।ওড়নায় খুব সুন্দর কারুকাজ করা। আরাবী এইবার বসার ঘরে গেলো।গিয়ে দেখলো ওর হবু শাশুড়ি,চাচি শাশুড়ি আর নূর এসেছে।নূর আরাবীকে দেখা মাত্রই দৌঁড়ে উঠে গিয়ে আরাবীকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর বলল,

-‘ জানো ভাবি আমি তোমায় কত্তো মিস করেছি।ভাইয়াটা না অনেক শ’য়’তা’ন।কতো করে বললাম ভাবির নাম্বারটা দেও। আমি ভাবির সাথে ভিডিওকলে কথা বলবো।শয়’তানটা দিলোই নাহ।তুমি কিন্তু ভাইয়াকে ব*কা দিয়ে দিবে এরজন্যে ঠিক আছে?’

আরাবীর নূরের একনাগারে বলা এতোগুলো কথা ঠাওর করতে সময় লাগলো। তারপর জোড়পূর্বক হেসে আরাবী মাথা দুলালো।আরাবী সাথি বেগম আর মিলি বেগমকে সালাম দিলেন।তারাও সালামের জবাব নিলেন।সাথি বেগম বলেন,
-‘ আমরা এসেছিলাম আরাবীকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। ওকে নিয়ে আজ জুয়েলার্সের দোকানে গিয়ে গহনা বানাতে দিয়ে আসবো। আপনার এতে কোন আপত্তি আছে আপা,ভাই সাহেব?’
জিহাদ সাহেব হেসে বলেন,

-‘ নাহ নাহ আপা সমস্যা নেই।আপনারা যান নিয়ে ওকে।এমনিতেও তো আর কয়েকদিন পর মেয়ে আমার আপনাদেরই হয়ে যাবে।তখন উল্টো ওকে নেয়ার সময় আমার অনুমতি লাগবে আপনাদের কাছ থেকে।’

বলতে বলতে জিহাদ সাহেব মন খারাপ করে আরাবীর দিকে তাকালেন।মেয়েটা তার বড্ড আদরের।কলিজার টুকরো মেয়েটাকে আর কয়েকদিন পর পরের ঘরে পাঠিয়ে দিবেন ভাবলেই তার দ’ম বন্ধ হয়ে আসে।আরাবীও বাবার দিকে মলিন হেসে তাকালো।চোখে ওর একরাশ কাতরতা।পরিবার, আপনজন ছেড়ে চলে যাবে কয়েকদিন পর।সেই দুঃখের হাহা*কারে ভীতরটা কেমন খালি খালি হয়ে আসছে এখনি।লিপি বেগম বলেন,

-‘ আরাবী যা রেডি হয়ে আয়।’
আরাবী নিচু স্বরে বলে,
-‘ আমি রেডিই মা। শুধু হিজাব বাধলেই হবে।’

আরাবী রুমে এসে সুন্দরভাবে একটা হিজাব বেধে নিলো।কি মনে করে যেন চোখে কাজল দিলো আর ঠোঁটে হালকা লিপগ্লোস।আনমনেই হাসলো আরাবী নিজেকে দেখে।সেদিন জায়ানের কথাগুলো মানে বুঝার পর থেকে আরাবী হুটহাট লজ্জা পেয়ে বসে।

এইযে যেমন এখন হঠাৎই জায়ানের কথা ওর মনে পরে গেলো।আর এখন লজ্জায় গাল গরম হয়ে উঠেছে ওর। মনে মনে জায়ানকে আরেকবার অ*সভ্য উপাধি দিয়ে বেড়িয়ে আসলো আরাবী।এসেই দেখে ফিহাও তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে। ভ্রু-কুচকালো আরাবী।এই মেয়ে এমন সেজেগুজে আছে কেন? ওকে আরো অবাক করে দিয়ে ফিহা বলে,

-‘ চলুন আন্টি,আরাবী আপু এসে পরেছে।’
ফিহার মুখে আপু ডাক শুনে আসমান থেকে পরলো আরাবী।রাতারাতি এতো পরিবর্তন? ফিহার এসব নাটক সহ্য হচ্ছে না আরাবীর।দাঁত খিচিয়ে রয়েছে।নেহাত ওর শশুড়বাড়ির লোক আছে এখানে নাহলে।আরাবী ফিহা দুটো করা কথা নিশ্চিত শোনাতো।
সবাইকে বলে ওরা শপিংমলের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরলো।

জুয়েলারি শপে আসতেই অবাক হলো আরাবী।কারন গাড়ি পার্কিং এরিয়াতে আগে থেকেই জায়ান আর ইফতি দাঁড়ানো।তারা নামতেই জায়ান আর ইফতি এগিয়ে আসলো।জায়ান আরাবীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো?’

আরাবী মাথা দুলিয়া ‘ না ‘ বুঝালো।লজ্জায় আরাবীর গালে লাল আভা দেখা দিলো।সেদিনের ঘটনার কথা মনে পরে গিয়েছে জায়ানকে দেখে।আরাবী লজ্জা পাচ্ছে এদিকে অ’সভ্য লোকটার কোন হেলদোল নেই।ফিহা হা করে তাকিয়ে আছে জায়ান আর ইফতির দিকে।কেউ কারো থেকে কম নাহ।দু ভাই-ই সুদর্শন।সাথি বেগম ফিহাকে পরিচয় করিয়ে দিলো।জায়ান ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করল,

-‘ ভালো আছো?’
ফিহা কেমন যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে গিয়েছে।বেশ ভাব নিয়ে বলে,
-‘ আমি ভালো আছি জায়ান ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?বাই দ্যা ওয়ে আপনাকে এই ব্লাস স্যুটে দারুণ লাগছে।’
আরাবী ফিহার কথা শুনে রাগান্নিত দৃষ্টিতে ফিহার দিকে তাকালো।ছ্যা’ছড়ামো শুরু হয়ে গিয়েছে অসহ্য।আরাবীর মস্তিষ্কে যেন ঈর্ষা’রা কিলবিলিয়ে উঠলো। জায়ান ফিহার কথার কোন গুরুত্বই দিলো না।সবার উদেশ্যে বলল,

-‘ ভীতরে চলো সবাই।’
সাথি বেগম,মিলি বেগম ফিহাকে নিয়ে ভীতরে চলে গেলেন।নূর দাঁড়িয়ে আছে দেখে জায়ান শান্ত কন্ঠে বলে,
-‘ যাচ্ছিস না যে?’
-‘ ভাবিকে নিয়ে যাবো।’
-‘ তুই যা।ও পরে আসবে।’
-‘ নাহ, ভাবি আমার সাথেই যাবে।’

-‘ তোর অনলাইনে যেই যেই ড্রেসগুলো অর্ডার দিয়েছিলি সব কেন্সেল।’
-‘ ব্লেকমেইল করা হচ্ছে? ভালো হবে দেখো।এর শোধ আমি তুলবই।’
-‘ ইফতি, ওকে নিয়ে যাহ।’
ড্রেস কেন্সেল করে দেবার ভয়ে নূর ইফতির সাথে চলে গেলো।আরাবী ভাই বোনের খুনশুটি দেখে হাসছিলো।জায়ান তাকাতেই সাথে সাথে হাসি বন্ধ করে দিলো।জায়ান পকেটে দু-হাত ভরে টান টান হয়ে দাঁড়ালো।এদিক ওদিক ঘার নাড়িয়ে বললো,

-‘ হাসি থামালে যে?’
জবাব দিলো না আরাবী।এই লোকটার সামনে কেমন যেন মিইয়ে যায় ও লজ্জায়। কন্ঠ হতে শব্দ-রা বেরই হতে চায় না।
-‘ লজ্জা পাচ্ছো কেন?আমি তো কিছুই করি নি?’
এইবার ভয়ংকর রকম লজ্জা পেলো আরাবী।এই লোকটা ইচ্ছে করে ওর সাথে এমন করছে আরাবী ভালোভাবেই জানে।জায়ান আরাবীর অবস্থা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।আরাবী মিস করে গেলো জায়ানের সেই হাসি।হাসলে ছেলেটাকে যে মারাত্মক সুন্দর লাগে।

জায়ান আরাবীর দিকে একধ্যানে তাকিয়ে থাকলো।হঠাৎ জায়ান বলে উঠলো,
-‘ ভীষণ সুন্দর লাগছে।’
ঘোরলাগা এমন কন্ঠস্বর শুনে চকিতে তাকালো আরাবী।জায়ান ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।নে’শাগ্রস্ত সেই চাহনী।যা আরাবীর ভীতর শুদ্ধ কাঁপিয়ে দেয়।জায়ানের এই ছোট্টো প্রসংশাতেই যেন আরাবীর মনপ্রাণ জুড়িয়ে গেলো।আকস্মিক জায়ান এসে আরাবীর হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো।হালকা কাঁপলো বোধহয় আরাবী। জায়ান আরাবীর হাত ধরে শপিংমলে ভীতরে প্রবেশ করলো।জুয়েলারি শপে যেতেই ফিহা এসে জায়ানের ডানহাত হঠাৎ করে চেপে ধরে বলে,

-‘ কোথায় ছিলে ভাইয়া? আমি অপেক্ষা করছিলাম তোমার?’
দাঁতেদাঁত চেপে আরাবী। আপনি থেকে সোজা তুমিতে এসে পরেছে? এটা যে ওর বোন ভাবতেও আরাবীর ঘৃনা লাগে।এদিকে জায়ান ভয়া*নক রেগে তাকালো ফিহার দিকে।ফিহা জায়ানের রাগত মুখশ্রী দেখে ভয় পেয়ে সাথে সাথে জায়ানের হাত ছেড়ে দিলো।জায়ান চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,

-‘ আই সুড নেভার সি ইউ ডুয়িং দিস এগেইন।আদারওয়াইস আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।জাস্ট বিকয ওফ ওর বোন বলে আমি কিছু বললাম নাহ।বাট বি কেয়ারফুল নেক্সট টাইম।’
ফিহা ভয় পেয়ে সরে গেলো।আরাবী বোনের এমন কান্ডে ভীষন লজ্জিত হলো।আহত সুরে বললো,
-‘ আমার বোনটা একটু ছটফটে।ওর পক্ষ থেকে আমি মা…’
জায়ান আরাবীকে মাঝপথে থামিয়ে দিলো।বললো,

-‘ ডিড আই টোল্ড ইউ টু এপোলোজাইয ওন হার বিহাফ?’
আরাবী জায়ানের এমন হারকাপানো ঠান্ডা কন্ঠের কথায় ভয় পেয়ে বলে,
-‘ নাহ।আসলে…’
-‘ জাস্ট বি সাট আপ।’
আরাবী চুপ মেরে গেলো জায়ানের ধমক খেয়ে।লোকটা রেগে গিয়েছে ভীষণ।আরাবী জায়ানের অগোচরে ফিহাকে চোখ রাঙানি দিলো।ফিহার এতো কোন হেলদোল হলো নাহ।ও চলে গেলো জুয়েলারি দেখতে।

পুতুলের মতো বসে আছে আরাবী।আর দুই শাশুড়ি একের পর এক গহনা ওকে পরিয়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই।জায়ান আরাবীর বরাবর বসে।সে ওর মাকে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে কোনটা ভালো লাগছে নাকি ভালো লাগছে না।অবশেষে অনেক বাছাই দাছাইয়ের পর গহনা সিলেক্ট হলো।আরাবী যেন হাফ ছেড়ে বাচঁলো।আরাবী উঠে একটু সাইডে গিয়ে দাড়ালো।একেরপর এক গহনা পরতে পরতে ও ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।সিলেক্ট করা গহনা গুলোর দিকে তাকিয়ে আরাবী শুকনো ঢোক গিললো।এতোগুলো গহনা ওর জন্যে নেওয়া হচ্ছে।এগুলো কিভাবে পরবে আরাবী?গহনা ভারে না জানি ও বিয়ের দিন হাটতে নিয়ে উল্টেই না পরে যায়।মান সম্মান আর থাকবে না তাহলে।

জায়ানের দৃষ্টি সর্বদা আরাবীর দিকে।মেয়েটার থেকে একপলকের জন্যে যেন ও চোখ সরাতে পারে নাহ।এমন সময় ফিহা আসলো হাতে একটা আংটি নিয়ে। এসেই বলে,
-‘ ভাইয়া আংটিটা আমার পছন্দ হয়েছে।আমায় কি এটা আপনি কিনে দিবেন?’
জায়ান তাকালো না পর্যন্ত ফিহার দিকে।সেভাবে বসে থেকেই ইফতির উদ্দেশ্যে বলে,
-‘ ইফতি ফিহা যেটা পছন্দ করেছে তা ওকে প্যাক করে দিয়ে দে।’
-‘ আচ্ছা ভাই।’

ফিহা দাঁতেদাঁত চেপে চলে গেলো।কেমন ছেলে এটা?সামনে এমন সুন্দরী মেয়ে ঘুরঘুর করছে।আর সে তাকাচ্ছেও নাহ।ওই মেয়েটার মাঝে কি আছে যা ফিহার মাঝে নেই? আরাবীর থেকে ফিহা আরো দ্বিগুন সুন্দর।আর মেয়েটার ড্রেসাপ দেখো আর ওকে দেখো।ও কি সুন্দর লেডিস জিন্স আর শর্ট টপ্স পরেছে।

ওর ফিগার এমনিতেও সুন্দর।আরো ও আজ টাইট ফিট পোষাক পরায় তা আরো বেশি দৃশ্যমান।তাতে ওকে আরো আকর্শনীয় লাগছে।এইযে শপিংমলে প্রবেশ করার পর বেশ কয়েকজন ছেলে ওর দিকে তাকিয়েছিলো।কিন্তু এই ছেলেটা ওর দিকে ফিরিয়েও তাকালো নাহ। ফিহা বিরবির করলো,
-‘ কে জানে ওই কালি পে’ত্নিটাকে কি দেখো এতো এই ছেলে।’

আরাবী স্বর্ণের খুব সুন্দর একটা ব্রেসলেট হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছে।এমন সময় ফিহা এসে ওর হাতটা আরাবীর মুখের সামনে এনে বললো,
-‘ দেখ দেখ জায়ান ভাইয়া আমাকে এই আংটিটা গিফট করেছে সুন্দর নাহ?’
আরাবী কথাটা শুনে চটজলদি ফিহার হাতের দিক তাকালো।অবাক হয়ে বলে,
-‘ মানে কি?তোকে গিফট করবে মানে?’
-‘ মানে আবার কি?আমি আংটিটা দেখছিলাম।সে এসে বলে পছন্দ হয়েছে।আমি হ্যাঁ বলে দিতেই সে আমাকে এটা ঝটপট কিনে গিফট দিলো।’

আরাবী নাক মুখ কুচকে ফেললো।জায়ানের দিকে একবার তাকালো।লোকটা তার দিকেই তাকিয়ে।আরাবী দৃষ্টি সরিয়ে নিলো।আরাবী জানে ফিহা মিথ্যে বলছে।তবে এর মাঝে একটু সত্যিও আছে।আংটিটা ওকে সত্যিই হয়তো জায়ান কিনে দিয়েছে।

নাহলে এই আংটি কিনার মতো কোন টাকা ফিহার কাছে নেই তা আরাবী ভালোভাবে জানে।মনটা কেমন যেন একটু খারাপ হয়ে গেলো আরাবীর।জায়ান ফিহাকে আংটি টা কিনে দিয়েছে শুনে বুকের ভীতরটায় একটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হলো ওর।আরাবী মুখটা মলিন করে হাতের ব্রেসলেট’টা রেখে চলে গেলো ওখান থেকে।গিয়ে নূরের পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।এদিকে আরাবীকে মন খারাপ করতে দেখে পৈচা*শিক আনন্দ পেলো ফিহা।আংটিটার দিকে তাকিয়ে খুশিতে গদগদে হয়ে গেলো।

শপিং শেষে সাথি বেগম আর মিলি বেগম চলে গেলেন।জায়ান,আরাবী,নূর,ইফতি,ফিহা ওরা রেস্টুরেন্টে যাবে। ছোটদের মাঝে তারা বড়রা অহেতুক না থেকে চলে গিয়েছেন। রেস্টুরেন্ট’টার ছাদে এসে বসেছে ওরা।খুব সুন্দর ভাবে সাজানো ছাদটা।আরাবীর মন খারাপ থাকায় ও সবার থেকে একটু সাইডে গিয়ে ছাদের রেলিং ঘেসে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।

উত্তাল হাওয়া বইছে।ছাদে নানান রকম ফুলের গাছ রয়েছে সেখানে হরেকরকম ফুল ফুটেছে। বাতাসের সাথে সেই ফুলের ঘ্রাণ ভেসে আসছে।আরাবী লম্বা শ্বাস টানলো।ভীষন সুন্দর একটা ঘ্রাণ ফুলগুলোর সংমিশ্রণের।হঠাৎ নিজের পিছনে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে চোখ খুললো আরাবী।ঘার ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে জায়ান দাঁড়িয়ে।দৃষ্টি তার ওর দিকেই।আরাবী চোখ সরিয়ে নিলো।জায়ান গম্ভীর গলায় বলে,

-‘ কোন সমস্যা?’
আরাবীর মিনমিনে কন্ঠ,
-‘ কি সমস্যা আবার?’
-‘ সেটাই তো জিজ্ঞেস করছি। কোন সমস্যা?’
-‘ কোন সমস্যা নেই।’
-‘ মন খারাপ যে?’
-‘ একটুও নাহ।’
-‘ আমি তো দেখছি।’

-‘ আপনার চোখের সমস্যা,জেনে রাখুন।’
-‘ আচ্ছা জেনে নিলাম।’
বলতে বলতে জায়ান আরাবীর হাত টেনে ধরলো।আরাবী হকচকিয়ে গেলো। ঘাবড়ে গিয়ে বলে,
-‘ কি করছেন?’
জায়ান কিছুই বললো না।নিজের পকেট থেকে সেই স্বর্ণের ব্রেসলেটটা বের করে আরাবীর হাতে খুব যত্নে পরিয়ে দিতে দিতে বলে,

-‘ পছন্দের জিনিস কখনো হাতছাড়া করতে হয় নাহ।সময় করে নিজের করে নিতে হয়।’
ব্রেসলেট পরানো শেষে আরাবীর হাতের কবজি চেপে জায়ান আরাবীর ব্রেসলেট পরা জায়গায়টায় খুব আলতোভাবে ঠোঁটের নরম স্পর্শ করলো।

হৃদপিন্ড থমকে যায় আরাবীর।মাথাটা ভণভণ করছে।চোখ খিচে দাঁড়িয়ে রইলো ও। এ কি করলো জায়ান ওর সাথে।আরাবী নিজের ভারসাম্য সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিলেই জায়ান আরাবীকে আগলে নিলো নিজের কাছে।আরাবীর শরীর ভীষণভাবে কাঁপছে।আর হবেই বা না কেন?এই প্রথম কোন পুরুষ ওর এতোটা কাছাকাছি এসেছে।তাই আরাবীর অবস্থা এমন হয়েছে।নিস্তব্ধে হাসলো জায়ান আরাবীর অবস্থা দেখে।আরাবীর কানের কাছে ফিসফিস করে আওড়ালো,

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৫

-‘ কৃষ্ণচূড়া,রাধাচূড়া অনেক আমি দেখেছি।
সব ভুলেছি যেদিন আমি কাঠগোলাপের প্রেমে পরেছি।’

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৭