হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৭

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৭
সাদিয়া জাহান উম্মি

-‘ ঠিক আছো তুমি?’
জায়ানের কণ্ঠস্বর কানে এসে পৌছাতেই চট করে সরে আসলো আরাবী।লাজে রাঙা মুখ নিয়ে এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো।ভয়া*নক লজ্জা পেয়েছে ও।এমন অস’ভ্য লোকের ক্ষপ্পরে পরেছে ও।

যার এক একটা কর্মকান্ডে জান বেরিয়ে আসে আরাবীর।এই-যে একটু আগে ওর হাতের কব্জিতে চুমু খেলো লোকটা।কি রকম একটা অনুভূতি যে হচ্ছিলো বলে বুঝানো যাবে নাহ।শরীরটা এখনো স্থির হয়ে উঠেনা।এই লোকের এমন সব কর্মকান্ডে আরাবী কাঁপতে কাঁপতে না জানি কবে ই’ন্তে’কা’ল করে।আরাবীর জবাব দিচ্ছে না দেখে।জায়ান ভ্রু উঁচু করে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘ আমি জাস্ট তোমার হাতের কব্জিতে কিস করেছি।এতেই এই অবস্থা?’
তারপর হঠাৎ করে আরাবীর কানের কাছে এসে বললো,
-‘ বিয়ের পর তো আরো কতো কি করবো তখন কি করবে তুমি?’
আরাবী ভ’য় পেয়ে কিঞ্চিৎ সরে গেলো। একেবারে লেগে দাঁড়ালো রেলিংয়ের সাথে।রিনরিনে কন্ঠে বললো,
-‘ আমি এমন অস’ভ্য মানুষ জীবনেও দেখিনি।’

জায়ান ভ্রু-কুচকালো আরাবীর দিকে চেয়ে।কথাটা সে শুনেছে।হাতের আঙুলগুলো দ্বারা চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করে বলে,
-‘ সে তুমি আমায় যতোই অস’ভ্য উপাধি দেও।ইট ডাজেন্ট ম্যাটার ফোর মি।আমি দুনিয়ার সবার কাছে সভ্য হলেও।শুধু একজনেরই কাছেই সারাজীবন অস’ভ্য থাকতে চাই।বুঝলে?’

কি সর্ব’নাষ?সব শুনে ফেলেছে।দেখা যায় এখন আর আরাবী একা একা নিজের সাথে কোন কথাই বলতে পারবে নাহ। জায়ান এগিয়ে গেলো আরাবীর দিকে।আরাবীর পেছানোর জায়গা নেই।তাও সমানে পেছাতে চাচ্ছে।পারলে ছাদের রেলিংটাকে ভেঙে আরাবী পালিয়ে যায়।জায়ান আরাবীর হাত ধরে দ্রুত নিজের কাছে নিয়ে আসলো। আরাবী ভড়কে তাকাতেই।জায়ান একধমক দিলো,

-‘ কি সমস্যা?আমি বাঘ নাকি ভাল্লুক? যে তোমায় খে’য়ে ফেলবো?আর একটু হলেই তো পরে যেতে।ডা’ফার একটা।’
লোকটা আসলেই পাগল।এই কিছুক্ষন আগে ওর সাথে অস’ভ্য অস’ভ্য কথা বলছিলো।আর এখন আবার ধমক দিচ্ছে।এমনিতেই জুয়েলারি শপের ব্যাপারটা নিয়ে আরাবীর মন খারাপ।এখন আবার লোকটা ধমকাচ্ছে।

অভিমানে আরাবীর ছোট্ট হৃদয়টা টইটম্বুর হয়ে গেলো।নিজের হাত জায়ানের হাতের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যেতে নিতেই। জায়ান আবারও ওকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।আরাবীর দুহাত এইবার জায়ান তার একহাত দিয়েই অনায়াসে ধরে ফেলেছে।আরাবী ভ’য় পেয়ে গেলো।

কি আশ্চর্য লোকটা ওকে এমনভাবে ধরেছে কেন? আর কিভাবে আরাবীর হাতদুটো একহাত দিয়েই শক্তপোক্ত ভাবে ধরে।ওর হাত কি এতোটাই ছোট? আরে নাহ ওর হাত ঠিকই আছে।এই লোকটাই অতিরিক্ত বড় মানে লম্বা।আরাবী লোকটার দিকে তাকাতে গেলে গলা টানা দিয়ে তাকাতে হয়। লম্বা আছে লোকটা।তাই তো হাতগুলোও ইয়া বড় বড়।আরাবী চোখ বড়বড় করে বলে,

-‘ কি..কি কর..করছেন?’
জায়ান ভাবলেসহীনভাবে বলে,
-‘ কোথায় কি করলাম?এখনো কিছুই করিনি। যা করবো বিয়ের পর।’
-‘ অস’ভ্য কথাবার্তা বন্ধ করুন আপনার।’
-‘ তুমি তো মেইন কথাটা শুনলেই না।শুনো তবে…’
-‘ চুপ থাকবেন?আমি কিন্তু আর আপনার সাথে কথাই বলবো নাহ।’

-‘ আচ্ছা,ভ’য় দেখাচ্ছো?’
আরাবী মিনমিন করলো,
-‘ ভ’য় দেখালেই কি আপনি ভ’য় পান?এমন নির্ল’জ্জ কোন মানুষ হয়।’
-‘ ঠিক আমি কাউকে ভ’য় পাই নাহ।এমন কি আমার লজ্জা শরমও নেই।’
-‘ তা আর বলতে।’

-‘ মিনমিন করো কেন? ‘
আরাবী চুপ করে রইলো খানিকক্ষণ। তারপর বলে,
-‘ হাত ছাড়ুন।’
জায়ানের ত্যাড়া জবাব,
-‘ আগে মন খারাপের কারন বলো।’
আরাবী মুখ ভার করে বলে,
-‘ আমার মন খারাপ নেই।’
-‘ মিথ্যে!’

আরাবী চোখ পিটপিট করে তাকালো।এই লোক কি অন্তরযামি?নাহলে বুঝলো কিভাবে ওর মন খারাপ।জায়ান এখনও আরাবীর হাত চেপে ধরে।আরাবী বুঝলো সে এখন মন খারাপের কারন জায়ানকে না বলা পর্যন্ত জায়ান তাকে ছাড়বে নাহ। তবে আরাবীর ভালো লাগছে লোকটার কাছাকাছি থাকতে।একেবারে অন্যরকম ভীষণ সুন্দর একটা অনুভূতি।আরাবী কথা ঘুরানোর জন্যে মিনমিন করে বলে,

-‘ আচ্ছা আপনি তখন ফিসফিস করে আমার কানে কি বলেছিলেন?’
-‘ কথা ঘুরাচ্ছো?’
আরাবী হা।এতো চালাক এই লোক।তবুও আরাবী মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো।ও আসলেই তখন জায়ান কি বলেছিলো শুনতে পায়নি।প্রায় তো বেহুশই হয়ে যাচ্ছিলো ও।মাথার ভীতরে শুধু জায়ানের ওর হাতে চুমু দেওয়ার মুহূর্তটুকুই ভাসছিলো।তাই তো কৌতুহল বসত আরাবী জিজ্ঞেস করলো। জায়ান আরাবীর হাত ছেড়ে দিলো।ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,

-‘ যা শুনতে পাওনি।তা আর শুনে লাভ নেই।’
আরাবী মুখ ভেংচি মারলো।জায়ান তীক্ষ্ণ চোখে তাকালো।সে দেখেছে আরাবী মুখ ভেংচি কেটেছে ওকে।জায়ান চুলে হাত বুলিয়ে বললো,

-‘ মুখের বিকৃতি আকার আবার করলে যেটা একটু আগে হাতে দিয়েছি।সেটা ডিরেক্ট ঠোঁটে দিবো।’
আরাবী চোখ বড়বড় করে তাকালো জায়ানের দিকে।জায়ান চোখ মারলো আরাবীকে। ইশারা করলো ওর ঠোঁটের দিক।আরাবী সাথে সাথে দুহাতে ওর ঠোঁট চেপে ধরলো।এখনো ভ’য়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেয়েটা।জায়ান আরাবীর কান্ডে নিস্তদ্ধে হেসে দিলো।আরাবী ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে বলে,

-‘ এমনিতে তো সবাই বলছিলো আপনি নাকি কথা কম বলেন।দরকার ছাড়া বেশি কথা বলেন না।তো এখন আপনাকে দেখে তো সেটা আমার কাছে মিথ্যে মনে হচ্ছে।’
জায়ান গভীর দৃষ্টিতে তাকালো আরাবীর দিকে।ওর চোখে চোখ রাখলো।আরাবী জায়ানের চোখের দিকে তাকাতেই যেন ও সেই চোখের গভীরে হারিয়ে গেলো।কি স্বচ্ছ সেই চোখজোড়া।আরাবী শতোবার এই চোখের গভীরতম মায়ায় ডুবে যেতে রাজি।জায়ান আরাবীর কানের কাছে মুখ নামিয়ে বলে,

-‘ আমি কেন তোমার সাথে এতো কথা বলি?কেন তোমার এতো কাছে আসি।এর উত্তর তুমি নিজেই খুঁজে বের করে নিও কেমন? ফারদার আমি বুঝাতে গেলে কিন্তু বলে না করে বুঝাবো।বি কেয়ারফুল।’
কথাগুলো বলেই চট করে সরে আসলো জায়ান।আরাবীর হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে বলে,
-‘ চলো ওরা অপেক্ষা করছে।’

আরাবীকে টেনে নিজের সাথে নিয়ে গেলো।নূর আর ইফতি জায়ান আর আরাবীকে হাতে হাত ধরে এখানে আসতে দেখে মিটিমিটি হাসছে।জায়ান বিরক্ত হলো।বলল,
-‘ কি সমস্যা?’
নূর মুচঁকি হেসে বলে,

-‘ কোন সমস্যা নেই।এইযে তুমি ভাবির হাত ধরে রেখেছো এতে আমাদের কোন সমস্যা নেই।তারপর ভাবির সাথে সাইডে গিয়ে একটু রোমান্স করে এসেছো এতেও আমাদের কোন সমস্যা নেই।একদম নেই।’
আরাবী নূরের কথায় যেন লজ্জায় ম’রে যাওয়ার মতো অবস্থা।গালে লজ্জা রাঙা আভা ফুটে উঠেছে। আরাবী নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো জায়ানের কাছ থেকে।কিন্তু জায়ান ছাড়লে তো।সে আরো শক্ত করে ধরলো আরাবীকে।তারপর নূরের উদ্দেশ্যে বলে,

-‘ তোর ড্রেসগুলো কেন্সেল।’
-‘ এই নাহ নাহ ভাইয়া।সরি হ্যাঁ সরি।আমি আর কিছু বলবো না বিশ্বাস করো।এইযে আমি চুপ।’
ইফতি শব্দ করে হেসে দিলো এইবার।নূর গাল ফুলালো।কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
-‘ কেউ আমায় ভালোবাসে নাহ।আমি মানি আমি নাহয় একটু বেশি কথা বলি।তাই বলে তোমরা আমার সাথে এমন করবে?যাও আমি আর কথাই বলবো না তোমাদের সাথে।’

জায়ান এইবার মুচঁকি হাসলো বোনের অভিমানে। আরাবীকে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিলো।তারপর নিজেও বসে পরলো।জায়ানের একপাশে আরাবী আরেকপাশে নূর।জায়ান এইবার নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।জায়ান এইবার নিজের পকেট থেকে একটা আংটি আর চকোলেট বের করে দিলো নূরের দিকে।নূর আংটিটা পছন্দ করেছিলো।কিন্তু মেয়েটা কথার তালে তালে সেটা কিনতেই ভুলে গিয়েছে।এটা পেয়েই নূর খুশি হয়ে গেলো।হাসিমুখে বলে,

-‘ ইস,এই আংটিটাই তো আমার পছন্দ হয়েছিলো খুব।কিন্তু কিনতে মনে নেই।ভুলে গিয়েছিলাম।এখানে এসেই মনে পরলো।ভাবছিলাম কাল গিয়ে কিনে আনবো।তুমি সেটা খেয়াল করেছিলে ভাইয়া?’
জায়ান নূরকে বুকে টেনে নিয়ে বলে,
-‘ আমার একমাত্র বোনের খেয়াল আমি রাখবো নাহ।’

ইফতি নিজেও একজোড়া নূপুর বের করে নূরকে দিলো।তারপর বলে,
-‘ কোন এক ফকিন্নি মিসকিন এর জন্যে পছন্দ হলো।ভাবলাম নিয়ে নেই।’
-‘ ভাইয়া,এই ইফতি ভাইয়াকে কিছু বলবা?’

জায়ান হাসলো।ইফতি জোড়ে হাসছে।নূর নিজেও ভাইদের হাসি দেখে হেসে দিলো।তারপর ইফতির হাত থেকে নূপুরজোড়া নিয়ে।ইয়া বড় একটা হাসি দিয়ে বলে,
-‘ থাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া।’

আরাবী তিনভাই বোনের খুনশুটি দেখে হাসছে।কতোটা প্রাণচ্ছল তারা একসাথে।ওর ভাইটাও ঠিক জায়ানের মতো।জায়ানের মতো হয়তো এতো টাকা না থাকায় ওকে দামি দামি গিফট দিতে পারে নাহ।তবে ফাহিমের সামর্থ্যে যেটুকু হয় সব করে ওর জন্যে।ফিহার জন্যেও সেম।

তবে মেয়েটা কেন যে এমন করে।ওর ভাই কিছু গিফট আনলে সেটা কমদামি, এগুলো মানুষে পরে নাকি,লো ক্লাস।এসব বলে সেই গিফট আবার ঠিকই নেয়।আরাবীর কথা তুই গিফট যেহেতু নিবিই তাহলে খামোখা প্রথমে এই কথাগুলো বলিস কেন? ফাহিম শুধু কথাগুলো শুনে মলিন হাসি দিতো।বোনটা পুরোই উশৃঙ্খ’ল হয়ে গিয়েছে।এইযে এখনো বসে কিভাবে নির্ল’জ্জের মতো ড্যাবড্যাব করে জায়ান তো আবার ইফতির দিকে তাকাচ্ছে।আরাবী বিরক্ত হয়ে নিচু স্বরে বলে,

-‘ ফিহা নজর ঠিক কর।এভাবে তাকানোর কি হলো?’
ফিহা রাগি গলায় বলে,
-‘ তাতে তোর সমস্যা কি? আমি তোর থেকে সুন্দর তাই তোর হবু বরকে পটিয়ে ফেলতি পারি এইজন্যে বুঝি ইনসিকিউরড ফিল হচ্ছে।’
আরাবী ফিহার কথায় দাঁতেদাঁত চেপে বলে,

-‘ আজেবাজে কথা বললে থাপ্প’ড় দিয়ে তোর গাল ফাটিয়ে দিবো।’
-‘ ওহ রেয়েলি?দেখি তুই কি করতে পারিস।’
-‘ এনি প্রবলেম আরাবী?’
জায়ানের প্রশ্নে আরাবী দ্রুত নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো।মেকি হেসে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো কোন প্রবলেম নেই।সবাই খাওয়া দাওয়াতে মনোযোগ দিলো।জায়ান আরাবীকে এটা দিচ্ছে,তো ওটা দিচ্ছে।আরাবী এইবার সহ্য করতে না পেরে বলে,

-‘ কি হচ্ছে? আমি এতোসব খাবো কিভাবে?’
জায়ান আরাবীর প্লেটে আরেকটু ফ্রাইড রাইস দিতে দিতে বলে,
-‘ এইটুকু খাবার খেয়েই অবস্থা?জলদি শেষ করো।’
আরাবী মলিন মুখে খেতে লাগলো।শেষে আর না পেরে করুণ গলায় বলল,
-‘ আর খেতে পারছি না। সত্যি!’

জায়ান কিছু বললো না তবে আরাবীর প্লেটটা নিজের কাছে নিয়ে আরাবীর রেখে দেওয়া অবশিষ্ট খাবারটুকু খেতে লাগলো।ইফতি হেসে দিলো জায়ানের কান্ডে। হাসতে হাসতে বলে,
-‘ ভাই তোমার অনেক উন্নতি হচ্ছে।মাত্র কয়েকদিনেই এই অবস্থা?’
জায়ান নির্বিঘ্নে খেতে খেতে বলে,
-‘ ইট্স টেস্টি।’
-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ,বুঝেছি।অনেক টেস্টি।’

আরাবী লজ্জায় জুবুথুবু হয়ে বসে।এই লোকটা এসব করে করে আরাবীকে লজ্জার সাগরে একদিন চুবি’য়ে মে’রে ফেলবে।ভয়ং’কর ব্যাপার-স্যাপার।বিয়ের পর এই লোকের সাথে থাকবে কিভাবে আরাবী? তখন মনে হয় শ্বাসটুকু ঠিকভাবে নিতে দিবে লোকটা।

অস’ভ্য লোকটা অস’ভ্য কথাবার্তা বলে ওর শ্বাস চে’পেই ওর ইন্না-লিল্লাহ করে দিবে।তবে আরাবী এটা মানতে বাধ্য।জায়ান ভীষণ কেয়ার করে ওর।আর মানুষটার এই ছোট ছোট কেয়ারগুলোই আরাবীর ভীষণ ভালোলাগে।ভেবেই মুঁচকি হাসলো আরাবী।অতঃপর লাঞ্চ শেষে সবাই আরাবী ফিহাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে।জায়ানরা নিজেদের বাড়ি চলে গিয়েছিলো। সবাই থাকায় জায়ান আরাবীকে আর কিছু বলতে পারে নি।শুধু ভালো থেকো/থাকিয়েন বলে দুজন বিদায় নিয়েছিলো।

শুয়ে শুয়ে ফোন ঘাটছে আরাবী।এর মাঝে পেরিয়ে গেছে একদিন। কালকের সারাটা সময় জায়ানের সাথে বেশ ভালো কেটেছে।জায়ানের কথা মনে পরতেই লজ্জামিশ্রিত হাসি ফুটে উঠলো আরাবীর ঠোঁটে। লোকটার প্রতি যে ওর ভালোলাগা তৈরি হয়েছে মনে ইতিমধ্যে তা বুঝতে পেরেছে আরাবী। আরাবীর চারপাশে অদৃশ্য ভালো লাগার রঙিন প্রজাপতিরা এদিক সেদিন উড়াউড়ি করছে।ওদের ছুঁয়ে দিতে পারলেই বোধহয় ভালোবাসাও হয়ে যাবে।

বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো আরাবী।ফাহিম ডাকছে আরাবীকে।আরাবী ভাইয়ের ডাকাডাকি শুনে দ্রুত পায়ে ফাহিমের রুমের সামনে আসলো।ফাহিমের রুমের দরজায় দুটো টোকা দিতেই ভীতর থেকে ফাহিমের কণ্ঠস্বর ভেসে আসল,
-‘ ভীতরে আয়।’

আরাবী রুমে প্রবেশ করে দেখে ওর ভাই বিছানায় বসে আছে।ফাহিম হাতের ইশারায় ওর পাশে বসতে বলল।আরাবী বিনাবাক্যে ফাহিমের পাশে গিয়ে বসল।ফাহিম বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।আরাবী ভাইয়ের আদরে হাসলো।ফাহিম এইবার একটা ছোট্ট বক্স আর একটা ব্যাগ এগিয়ে দিলো আরাবীর দিকে।

আরাবী সেগুলো হাতে নিয়ে জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।ফাহিম চোখের ইশারায় দেখালো সেগুলো খুলে দেখতে।আরাবী আগে ব্যাগটা খুললো তারপর বক্সটা।ব্যাগের মাঝে একটা শাড়ি আর বক্সটার ভীতরে একটা স্বর্ণের লকেট।ফাহিম আলতো হেসে বলে,

-‘ বিয়ে উপলক্ষ্যে তোর জন্যে ছোট্ট উপহার আমার বোন।আমার তো ওতো ইনকাম নেই।তাই যেটুকু পেরেছি তাই এনেছি।’
আরাবীর চোখ ভড়ে উঠলো। সাথে সাথে ভাইকে ঝাপ্টে ধরে ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে কেঁদে উঠলো।কাঁদতে কাঁদতে বলে,

-‘ তুমি আমার জন্যে যা এনেছো তাই আমার জন্যে আমার লাইফের বেস্ট গিফট ভাইয়া।আই লাভ ইউ ভাইয়া।তুমি পৃথিবীর সেরা ভাই।’

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৬

ফাহিমের চোখ ভরে উঠলো।বোনটা আর কয়দিন পর চলে যাবে।ভাবলেই কলিজা ফে’টে যায় ফাহিমের।ফাহিম আরাবীর মাথায় চুমু খেয়ে বলে,
-‘ তোকেও আমি ভালোবাসি অনেক আমার বোন।’

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৮