হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৯

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৯
সাদিয়া জাহান উম্মি

জায়ানের সেই উল্টাপাল্টা কথা শুনে আরাবী ধ্যান মেরে বসে রইলো কতোক্ষণ।তারপর কিছু একটা ভেবে জায়ানকে মেসেজ করলো,

-‘ আমি ওখানে আসলে প্লিজ এমন কিছু করবেন নাহ।যাতে আমি মানুষের সামনে লজ্জায় পরি।প্লিজ, একটু বুঝুন।আমি একটা মেয়ে।আপনি এমন করলে আমার কি পরিমান লজ্জা লাগে আপনি বুঝতে পারবেন নাহ।আপনি এমন করবেন নাহ প্রমিস করুন।আর যদি করেন তাহলে আমি আমার সাজসজ্জা সব ন’ষ্ট করে ফেলবো।তখন দেখবো আপনি কি করেন!’
মেসেজটা সেন্ড করেই লম্বা শ্বাস ফেললো আরাবী।যদি এইবার লোকটার একটু মতিগতি ঠিক হয়।কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে জায়ান মেসেজ দিলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘ আমি এভাবে তোমার সাথে কথা বললে কি তোমার বি’র’ক্ত লাগে?অসহ্য লাগে আমায় আরাবী?’
আরাবী মেসেজটা পরে থমকে গেলো।ঠিক কি বলবে ও ভাষা খুঁজে পেলো না।ওর জায়ানকে কোনকালেই বিরক্ত বা অসহ্য লাগে নাহ।বরং লোকটার পাগলামিগুলো ওর ভালো লাগে।সব মেয়েরাই এমন একটা স্বামি চায়।যারা নাকি তাদের স্ত্রীদের জন্যে পাগল থাকে।শতো শতো পাগলামি করে।তার কেয়ার করে, ভালোবাসে।

আর আরাবী তো ভাগ্য করে জায়ানকে পেয়েছে।সেখানে লোকটাকে বি’র’ক্ত লাগবে কেন? জায়ান যখন ওকে লজ্জা দেওয়ার জন্যে দুষ্টু কথা বলে আরাবীর ভালোলাগে।যখন জায়ান আরাবীর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকায় তখন আরাবীর ভালোলাগে।মোট কথা গোটা জায়ানকেই তার ভালোলাগে।বিগত ১৪,১৫ দিনের মাঝে জায়ানের সাথে অনেকবার দেখা হয়েছে আরাবীর।দুজনে একসাথে টাইম স্পেন্ড করেছে।তখন জায়ান আরাবীর অনেক খেয়াল রাখতো।

একবার আরাবী রাস্তায় ইটের পা বেজে পরে যেতে নিয়েছিলো।জায়ানের কারনে বেঁ’চে গিয়েছিলো ও।তবে পায়ের একটু ব্যাথা পেয়েছিলো।ওর ওই একটুখানি ব্যাথার জন্যে লোকটার কতোশতো পাগলামি।যেন ব্যাথাটা ও না জায়ান পেয়েছে।যে ওর একটুখানি ক’ষ্টে এমন ডেস্পারেট হয়ে পরে সেই মানুষটিকে ওর বি’র’ক্ত বা অসহ্য লাগবে কেন? আরাবীর মন খারাপ হলো।লোকটা কি ওর কথায় রাগ করেছে? আরাবী মুখ গোমড়া করে মেসেজের রিপ্লাই দিলো,

-‘ আমি কখনও বলেছি এসব? তাহলে এভাবে বলছেন কেন?আপনি কি আমার কথায় রাগ করেছেন?’
জবাব আসলো সাথে সাথে জায়ানের,
-‘ নাহ রাগ করেনি।আমি নিজেই দুঃখিত।আসলে তোমাকে আর একটা দিন পরেই নিজের করে পাবো সারাজীবনের জন্যে।তাই অনেক ডেস্পারেট হয়ে পরেছিলাম।সেই থেকেই ওই কথাগুলো বলেছি।আমি অনেক সরি।ভয় পেও নাহ।আর এমন কিছু করবো না।যা তোমার ভালো লাগে নাহ।’

আরাবী চোখ ভরে আসলো। জায়ানের মেসেজে বুঝায় যাচ্ছে স্পষ্ট। লোকটা রাগ করেছে।
-‘ এমন করে বলছেন কেন? আমি কি বলেছি আমার ভালো লাগে নাহ? আমি শুধু বুঝাতে চেয়েছি যে আপনি একটু আগে যেসব কথা বলেছেন।ওরকম যদি সত্যি সত্যি সবার সামনে করেন। তাহলে এতোগুলো মানুষের সামনে আমি অনেক লজ্জা পাবো।আমি মেয়ে মানুষ বুঝেনই তো।’

-‘ বুঝতে পেরেছি।আমি আসলে অস্থির হয়ে ওসব বলে ফেলেছি।কিন্তু আমি এতোটাও বোকা না যে তোমার অসম্মান হবে তা তোমার ভালো লাগবে না। এমন কোন কাজ আমি তোমার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে করবো।জায়ান সাখাওয়াত এতোটাও খা’রা’প মানুষ না।’

-‘ রাগ করে কথা বলছেন কেন?রাগ করবেন না।আচ্ছা,আমি সরি।’
আরাবী মেসেজটা করে চুপ করে বসে রইলো।কিন্তু এরপর আর জায়ানের কোন রকম মেসেজ আসলো না।আরাবী বসেই রইলো ফোন হাতে নিয়ে।এতোক্ষণের সব আনন্দ আর ভালোলাগা যেন মাটি হয়ে গেলো।মন খা’রা’পে’রা এসে ভীর জমালো আরাবীর কাছে।

দ্রুত পায়ে সিড়ি দিয়ে নামছে নূর।আরাবীকে খুঁজতেছিলো ও।পরে জানতে পারলো আরাবী নিচের ফ্লোরের রুমে আছে।আলিফাও সাথে যাচ্ছে।তবে আলিফা আগে আগে নেমে গিয়েছে।নূরও এই কারনে তড়িঘড়ি করে নামার জন্য পা বাড়ালো।হঠাৎ করে সারারায় নিচের পার্টে পা আটকে পরে যেতে নিতেই ভয়ে চিৎকার করে উঠে নূর। কিন্তু শরীরে কোনরকম ব্যাথা অনুভব করতে না পেরে পিটপিটিয়ে তাকায় নূর।তাকাতেই ওর চোখের সামনে ফাহিমের মুখশ্রী ভেসে উঠে।নিজেকে ফাহিমের বাহুডোরে দেখে তাড়াতাড়ি করে সোজা হয়ে দাঁড়ায় নূর।ফাহিম নূরকে ছেড়ে দিয়ে বলে,

-‘ আর ইউ ওকে?’
নূর নিচের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়,
-‘ হ্যাঁ,ঠিক আছি আমি।’
-‘ এতো তাড়াহুড়ো করার কি আছে?আস্তে ধীরে নামা যায় নাহ?নাকি কোন ট্রেন ছুটে যাচ্ছে তোমার?এখনি তো মুখ টুখ পরে ফাটি’য়ে ফেলতে।বাচ্চাদের মতো খালি দৌঁড়াদৌঁড়ি।’

ফাহিমের কড়া কথাটুক সব হজম করলেও।নূর ফাহিম ওকে বাচ্চা বলায় সেটা মানতে পারলো না।রেগে দু-কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
-‘ এই আপনি আমায় বাচ্চা বললেন কেন?’
নির্বিকার ভঙিতে দাঁড়ানো ফাহিম বাঁকা হেসে বলে,
-‘ বাচ্চাদের বাচ্চা বলবো নাতো কি বলবো?’
-‘ খবরদার আমায় বাচ্চা বলবেন না।ভালো হবে না কিন্তু।’
-‘ আচ্ছা তাহলে বুড়ি দাদু বলি।’

নূর এইবার ভয়া’নক রেগে গেলো।তেড়েমেরে আসলো ফাহিমের দিকে।আঙুল উঁচু করে বলে,
-‘ এই এই কি বললেন আপনি?আমাকে দেখে কি আপনার বুড়ো মনে হয় হ্যাঁ?আমি মাত্র অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি।আপনি আমাকে বুড়ো বানিয়ে দিলেন।’

ফাহিম দু আঙুলের সাহায্যে নূরের উঁচু করে রাখা আঙুলটা ধরে নামিয়ে দিলো।কেমন যেন করে উঠলো নূরের মনের ভীতর।কেঁপে উঠলো শরীর ফাহিমের এই একটুখানি ছোঁয়াতে।দ্রুত দু পা পিছিয়ে গেলো নূর।ফাহিম ভ্রু-কুচকে বললো,
-‘ বাচ্চা বললেও দোষ,বুড়ো বললেও দোষ।কি বলবো তাহলে?’
নূর কেমন যেন দমে গিয়েছে।কোনো জবাব না দিয়ে দ্রুত পায়ে নিচে নামা ধরলো।ফাহিম হাসলো। তবে কিছু বললো না।ফাহিম চলে যেতে নিতেই হঠাৎ একটা ডাকে থেমে গেলো,

-‘ এইযে শুনুন।’
ফাহিম ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই নূর ধীর আওয়াজে বলে,
-‘ আমার নাম নূর।নূর সাখাওয়াত। পরেরবার মনে রাখবেন।’
নূর এটুকু বলেই দ্রুত পায়ে ছুটে চলে গেলো।ফাহিম নূরের যাওয়ার পাণে তাকিয়ে হেসে দিলো।মেয়েটা এতো বড় দেখলে বুঝাই যায়না। স্বভাবও কেমন ছটফটে বাচ্চাদের মতো।ফাহিম বিরবির করলো,
-‘ নূর!’

নূর আর আলিফা আরো কয়েকজন মেয়ে মিলে আরাবীকে নিতে রুমে প্রবেশ করলো।নূর গিয়ে ঝাপ্টে ধরলো আরাবীকে।আরাবী মলিন হাসলো।নূর ছটফটে কন্ঠে বলে,
-‘ ইস, ভাবি কি সুন্দর লাগছে তোমাকে।আমি তো পুরো ফিদা।’
আরাবী মিষ্টি করে হাসলো।নূরের গালে হাত দিয়ে বলে,
-‘ তোমাকেও সুন্দর লাগছে।একেবারে পুতুলের মতো।’

আলিফা ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে আরাবীর দিকে।তবে নূরকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-‘ নূর আরাবীর মাথার উপর যে ওড়না ধরতে হবে সেটা ওই ব্যাগটায় আছে বের করো তো। ‘
নূর ‘ আচ্ছা আপু ‘ বলে চলে গেলো।আলিফা দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে আরাবীকে ফিসফিস করেজিজ্ঞেস করলো,
-‘ আরাবী কি হয়েছে তোর?মন খারাপ কেন?এই একটু আগেই তো ভালো ছিলি।’
আরাবী নিজের মন খারাপ লুকানোর চেষ্টা করতে লাগলো।কথা ঘুরানোর জন্যে বলে,

-‘ কোথায় গিয়েছিলি? আমি এখানে একা বসে থেকে কি বোর হচ্ছিলাম।’
আলিফা জিহবে কামড় দিয়ে বললো,
-‘ ইস,আমিই ভুলেই গিয়েছিলাম।ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই শুনতে পেলাম।জায়ান ভাইয়ারা এসে পরেছে তাই সেদিকেই ছুট লাগিয়েছি।জায়ান ভাইয়াকে যা লাগছে না।তুই দেখলে পাগল হয়ে যাবি।’
আরাবী হালকা হাসলো আলিফার কথায়। তবে কিছু বললো না।এরপর নূর ওড়না নিয়ে আসতেই সবাই আরাবীকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হলো।

মিউজিক বক্সে জোড়েশোড়ে গান বাজছে।তার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে আরাবীর অনেক আলিফা, নূর ও আছে সাথে রয়েছে আরো মেয়েরা।আরাবীর কাজিন আর জায়ানের কাজিনরা। আরাবীর সেন্টারে প্রবেশ করতেই চারপাশ থেকে ফুল ছিটাতে লাগলো সবাই।তবে আরাবীর নজর স্টেজের উপরে রাখা চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে থাকা মানুষটার উপর।সাদা পাঞ্জাবী,পায়জামা,উপরে নীল কোটি পরিহিত জায়ানকে কি সুদর্শন যে লাগছে আরাবী বলে বুঝাতে পারবে না।

আরাবী আর জায়ানের ড্রেসও সেম সেম।আরাবীর হলুদ লেহেঙ্গায় নীল রঙের স্টোন, জারি সুতো আর সিকুয়েন্সের কাজ করা।সেই হিসেবেই জায়ানও এরকম ড্রেস-আপ করেছে।আরাবী যেন চোখ সরাতেই পারছে না।অথচ দেখো লোকটা কিভাবে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।যার জন্যে এতো সাজসজ্জা এতোকিছু করলো আরাবী।সেই তো ফিরে তাকাচ্ছে না।চোখ ভিজে উঠতে চাইলো আরাবীর। তাও নিজেকে সামলে নিলো।

আরাবীকে স্টেজের কাছাকাছি আসতে দেখেই ইফতি জায়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-‘ ভাই ভাবি এসে পরেছে।এরকম করছো কেন? একটু আগেই না তুমি ভাবিকে দেখার জন্যে পাগল হয়ে গিয়েছিলে?এখন এমন করছো কেন? যাও ভাবিকে হেল্প করো স্টেজে উঠার জন্যে।’
জায়ানের কোন হেলদোল দেখা গেলো না।ইফতি এইবার জায়ানের বাহুতে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,

-‘ ভাই উঠো না।ভাবিকে হেল্প করো।যাও।’
জায়ান চোখ মেলে তাকালো ইফতির দিকে।ইফতি জায়ানের চোখ দেখে অবাক হয়ে গেলো।চোখজোড়া লাল টকটকে হয়ে আছে জায়ানের।ইফতি ভাবলো জায়ান কি কোন কারনে রেগে আছে?কিন্তু কেন?একটু আগেও তো জায়ান স্বাভাবিক ছিলো।ইফতি অস্থির গলায় বলে,

-‘ ভাই কি হয়েছে তোমার?এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?’
জায়ান কপালে আঙুল ঘষে বলে,
-‘ নাথিং সিরিয়াস।জাস্ট একটু হেডেইক হচ্ছে লাউডস্পিকারের জন্যে।’
-‘ কফি খাবে ভাই?’
-‘ হু?নাহ, দরকার নেই। আমি ঠিক আছি।’

ইফতি কিছুই বললো নাহ।তবে,ভীতরে ভীতরে বেশ চিন্তা হচ্ছে ওর ভাইয়ের জন্যে।দীর্ঘশ্বাস ফেললো আরাবী।
এদিকে জায়ান গম্ভীর মুখশ্রী নিয়ে এগিয়ে গেলো স্টেজের সামনে।আরাবী তাকালো জায়ানের দিক।লোকটার দৃষ্টি অন্যদিকে।একটাবার ভুলেও তাকাচ্ছে না আরাবীর দিকে জায়ান।আরাবী বহুকষ্টে নিজের কান্না ধরে রেখেছে। জায়ান হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আরাবী ওর হাত ধরছে না দেখে জায়ান এইবার দাঁতেদাঁত চেপে বললো,
-‘ হাত ধরছো না কেন?’

চমকে উঠলো আরাবী।জায়ানের কন্ঠে যেন রাগ ঝড়ে পরছে।এতো রাগ লোকটার। আরাবী কাঁপা হাতটা জায়ানের হাতে রাখলো।জায়ান বেশ শক্তভাবে ধরেছে আরাবীর হাত।তারপর আরাবীকে প্রায় টেনে উঠালো স্টেজে।বেশ ব্যাথা পেলো আরাবী হাতে।তাও কিছু বললো না। জায়ান আরাবীকে নিয়ে স্টেজে বসিয়ে দিলো।ক্যামেরাম্যান তাদের ছবি তুলছে।সে বললো,

-‘ আপনারা একটু হাসুন।’
আরাবী জোড়পূর্বক হাসলো।তবে জায়ান সেইযে গম্ভীর মুখ নিয়ে বসে।একটুও হাসলো না।ইফতি বলে উঠে,
-‘ আমার ভাই এমনই।আপনি ছবি তুলুন।’

ক্যামেরাম্যান বেস কয়েকটা এইভাবে ছবি তুললো।এইবার বললো তাদের দাঁড়াতে বলে।দুজনকে নানানভাবে পোজ দেওয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দিলো।জায়ান এগিয়ে এসে আরাবীর কোমড়ে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে আনলো।জায়ানের ছোঁয়ায় কেঁপে উঠলো আরাবী।তবে জায়ান সোজা সামনে তাকিয়ে।জায়ান আরাবীকে নিয়ে নানা রকম পোজ দিচ্ছে ছবি তোলার। তবে আরাবীর দিকে তাকাচ্ছে না কোনভাবেই।মুখশ্রী পাথরের মতো শক্ত করে রেখেছে।আরাবী আর সহ্য করতে পারলো না।ধরা গলায় বললো,

-‘ আমাকে কি এতোটাই বাজে লাগছে?’
জবাব নেই জায়ানের।আরাবী আবারও বলে,
-‘ অনেক বাজে লাগছে নাহ?ছাড়ুন আপনি আমায়।সাজসজ্জার কোন দরকার নেই। সব ধুয়ে মুছে আসি।’
আরাবীর কথা শুনে জায়ান চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
-‘ চুপচাপ এখানে থেকে আমি যেভাবে যা করছি তার সাথে তাল মেলাও।বেশি বাড়াবাড়ি করো নাহ।মাথা এমনিতেই ঠিক নেই আমার।’

আরাবীর কান্না পাচ্ছে প্রচুর।তবে চাইলেও কান্না করতে পারছে নাহ।মূলত ও চাইছে না।আরাবী হাঁপানোর মতো করে বলে,
-‘ এমন করছেন কেন?তাকাচ্ছেন নাহ কেন আমার দিকে?আমি সরি তো।আর কখনও আপনাকে ক’ষ্ট দেয় এমন কথা বলবো নাহ।’
-‘ আমি বলেছি তোমাকে সরি বলতে।’
-‘ এভাবে বলবেন নাহ। আমি ক’ষ্ট পাচ্ছি।’
-‘ সেটা আগে ভাবা উচিত ছিলো তোমার।’
জায়ান গম্ভীর গলায় বললো।আরাবী নিচু স্বরে বলে,

-‘ আপনি যে আমার কথায় এতো ক’ষ্ট পাবেন ভাবিনি আমি।আপনি রাগ করে থাকবেন নাহ। আমাদের জন্যে আজ একটা স্পেশাল দিন।আপনি এমন করলে কিভাবে হবে?’
জায়ান কোন উত্তর দিলো না।আরাবী আবার বলে,
-‘ আমার দিকে কি কোনদিন আপনি তাকাবেন নাহ?’
-‘ নাহ!’
-‘ সত্যি?’
জায়ান চুপ।আরাবী বললো,

-‘ বিয়ে কেন্সেল করে দেই।আপনি যেহেতু আমার দিকে আর কোনদিন……!’
বাকি কথা আর সম্পূর্ণ করতে পারলো না আরাবী।তার আগেই জায়ান থামিয়ে দিলো।জায়ানের হাত আরাবীর কোমড়ের দুপাশে ছিলো।জায়ান আরাবীর কোমড় স্বজোড়ে চেপে ধরে।প্রায় একপ্রকার খামছে ধরেছে।আরাবী ব্যাথায় আর্তনা’দ করে উঠলো। জায়ান রাগি গলায় বলে,

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৮

-‘ আর একবার এইসব ফালতু কথা বললে মে’রে ফেলবো একদম।’
আরাবী এইবার নিজের কান্না থামাতে পারলো নাহ আর।জায়ানকে সরিয়ে দিলো তৎক্ষনাত।চলে যেতে নিতেই আলিফা আর নূর জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাচ্ছে ও?আরাবী ওয়াশরুমের কথা বলে চলে গেলো।কান্না থামাতে না পেরে আরাবী মুখে হাত চেপে ধরলো।দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো ওয়াশরুমের দিকে।কেউ ওর কান্নারত মুখশ্রী দেখার আগেই ওর এখান থেকে যেতে হবে।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ বোনাস পর্ব