হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ বোনাস পর্ব 

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ বোনাস পর্ব 
সাদিয়া জাহান উম্মি

ওয়াশরুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে আরাবী।ভীষণ খারাপ লাগছে ওর।ও বুঝতে পেরেছে অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলেছে ও।এমন একটা মেসেজ দেওয়া ওর উচিত হয়নি।জায়ান এমন কোন কাজ করবে না যাতে ওর অসম্মান হয়।সেটা ও ভালোভাবেই জানে।কিভাবে যে পারলো এমন একটা মেসেজ করতে।

চোখ লাল হয়ে গিয়েছে আরাবী।মেক-আপ ওয়াটার প্রুফ হওয়ায় সমস্যা হয়নি কোন।আরাবী ট্যিসু দিয়ে চোখ মুছে।হাতে পানি নিয়ে হালকাভাবে চোখ দিলো যাতে ওর মেক-আপ নষ্ট না হয়।এতে সবাই নানান প্রশ্ন করবে।নিজেকে স্বাভাবিক করে বেড়িয়ে আসলো ওয়াশরুম থেকে আরাবী।ধীর পায়ে হেটে এগিয়ে যেতে লাগলো স্টেজের দিক।হঠাৎ করে কেউ ওকে হেঁচকা টান দিয়ে একটা রুমে ঢুকিয়ে নিলো।ভয়ে, আতংকে চিৎকার করতে নিবে তার আগেই জায়ান তার শক্তপোক্ত হাত দ্বারা আরাবীর মুখ চেপে ধরলো।ধীরে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-‘ হুশ,চেচাবে না। এটা আমি।’
জায়ানকে দেখে আরাবী চোখ আবারও ভিজে উঠলো।ফুঁপিয়ে উঠলো আরাবী।জায়ান দ্রুত হাত সরিয়ে দিলো আরাবীর মুখ থেকে। আরাবী ফোপাঁতে ফোপাঁতে বলে,

-‘ আমি অনেক সরি।আর করবো না তো।আমার ক’ষ্ট হচ্ছে আপনি এমন করায়।আর করবো না তো। ‘
আরাবী কান্নারত অবস্থায় আরো কিছু বলতে নিবে তার আগেই জায়ান টেনে আরাবীকে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে আসলো।আরাবীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নরম গলায় বলে,
-‘ তোমার সরি বলতে হবে না আর।আমি সরি।তোমাকে শুধু শুধু এতো কাঁদালাম।কান্না করো না তো।এইযে এখন আমি তোমার কাছে আছি।’

আরাবী জায়ানকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো। করুন গলায় বলে,
-‘ আর রেগে নেই?’
-‘ নাহ আর রেগে নেই।’
-‘ সত্যি?’

-‘ হ্যাঁ,তবে আর কখনো এমন বো’কা’মো করবে না।আমি মানুষটা খুব রাগি।রাগলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।হুশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।তুমি আমাকে এমন একটা মেসেজ করেছো বোকার মতো।মেসেজটা পরে আমি অনেক ক’ষ্ট পেয়েছি।সাথে ভীষণ রেগেও গিয়েছি।তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমাকে ক’ষ্ট দিবো এমন কিছু করবো?’

জায়ানের শীতল কণ্ঠে উচ্চারিত প্রতিটা শব্দ যেন আরাবীর বুকে তোলপাড় সৃষ্টি করছে।ও আসলেই অনেক বোকা।জায়ান আরাবীকে ছেড়ে দিয়ে আরাবীকে সোজা করে দাঁড় করালো।তারপর নিজের হাতের মুঠো খুলে একটা মলম সামনে ধরলো ওর।আরাবী অবাক চোখে তাকালো।জায়ান নরম স্বরে বললো,

-‘ তখন বিয়ে কেন্সেল করে দিবে শুনে রেগে গিয়েছিলাম।তাই তোমার কোমড় খা’ম’ছে দিয়েছি।এটা লাগিয়ে নেও।সেরে যাবে।’
জায়ান উল্টো দিকে ফিরে গেলো।যাতে আরাবীর অস্বস্তি না হয়।জায়ান ধীরে বলে,
-‘ চলবে নাকি আমি চলে যাবো?’
আরাবী কাচুমাচু হয়ে বললো,
-‘ ন..নাহ ঠিক আছে।’

আরাবী লেহেঙ্গার উপরের পার্টটা উঠালো।দেখলো জায়ান খা’ম’ছে ধরায় একপাশ লাল হয়ে ফুলে উঠেছে।আরেক জায়গায় ডেবে গেছে জায়ানের হাতের নখ।আরাবী জায়ানের দেওয়া মলমটা লাগিয়ে নিলো।তাড়াতাড়ি নিজেকে ঠিকঠাক করে নিয়ে বললো,
-‘ হয়েছে।’
জায়ান এইবার দ্রুত আরাবীর দিকে ফিরে গেলো।তারপর আরাবীর কাছে এসে ওর গালে হাত দিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বললো,

-‘ ভীষণ সুন্দর লাগছে।অনেক অনেক সুন্দর।যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।’
জায়ানের কথা শুনে আরাবী হালকা অভিমানি কণ্ঠে বলে,
-‘ তখন তো তাকালেনই না।’
-‘ কে বলেছে তাকাইনি?’
চমকে উঠলো আরাবী,
-‘ মানে?’

-‘ তুমি সেন্টারে আসার সাথে সাথেই তোমাকে আমি দেখেছি।বিশ্বাস করো তোমাকে দেখে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলো।হ্যাং হয়ে গিয়েছিলাম আমি।নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা বড্ড কঠিন হয়ে পরেছিলো।তাই তো তাড়াতাড়ি করে চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে বসেছিলাম।’

কথাগুলো বলে মুচঁকি হাসলো জায়ান।আরাবী মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দেখলো।হাসলে কি সুন্দর লাগে লোকটাকে।জায়ান আরাবীর একটা হাত ওর বুকের বা-পাশে রাখলো। আরাবী প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও পরবর্তীতে জায়ানের হৃদস্পন্দন অনুভব করতে লাগলো।জায়ান নেশালো কণ্ঠে বলে,

-‘ অনুভব করছো?তোমাকে দেখে আমার হৃদস্পন্দন কতোটা তীব্রভাবে বিট করছে।’
তারপর হুট করে আবার আরাবীকে জড়িয়ে ধরে অস্থির গলায় বলে,
-‘ তোমাকে দেখলেই আমি আর আমার মাঝে থাকিনা আরাবী।নিজের সত্ত্বাকে হারিয়ে ফেলি।আমি আগে এমন ছিলাম না আরাবী।তুমি আমায় পাল্টে দিয়েছো।আমি পাল্টে গেছি।আমাকে সবাই ভয় পেলেও,আমি শুধু তোমার কাছেই হেল্পলেস।তোমার কাছে আসলেই আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।’

আরাবী জায়ানের আবেগঘন প্রতিটা বাক্য শুনে কেঁপে উঠছে।একটা মানুষ ঠিক কতোটা ভালোবাসতে পারে কাউকে।তা জায়ানকে না দেখলে আরাবী জানতো না।আরাবীর ভীষণ লজ্জাও লাগছে এইভাবে জায়ানের বাহুডোরে থাকতে।তাই জায়ানকে ঠেলে সরিয়ে দিলো।মাথা নিচু করে নিলো লজ্জায়।জায়ান আরাবীকে লজ্জা পেতে দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। আরাবীর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

-‘ এতো লজ্জা পেও না।এরপর না আবার আমার দ্বারা ভুল টুল হয়ে যায়।পরে তুমি আবার আমাকে কতোশতো কথা শুনিয়ে দেবে। শুধু আজকের রাতটুকু আরাবী।এরপর এরপর কাল আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না।একটুও না।নিজেকে তখন কোথায় লুকাবে? এতো লজ্জা পেলেও হবে না। আমি সব লজ্জা ভেঙ্গে দিবো।’
আরাবী শ্যামবর্ণের মুখশ্রীও যেন জায়ানের লাগামহীন কথাবার্তায় লাল হয়ে গিয়েছে।আরাবী দ্রুত উলটো দিকে ফিরে গেলো।লজ্জায় হাসফা’স করে বলে,

-‘ প্লি..প্লিজ থামুন না।দোহাই আপনায় আমায় আর লজ্জা দিয়েন নাহ।ম’রে যাবো।’
জায়ান বাঁকা হাসলো আরাবীর কথায়।তারপর নিজেকে দ্রুত জেন্টেলম্যান রূপে এনে আরাবীর হাত ধরে বলে,
-‘ চলো সবাই অপেক্ষায়।’

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৯

অতঃপর জায়ান আরাবী হাসিমুখে অনুষ্ঠানে হাজির হলো।সবাই বেশ খুশি।হলুদের অনুষ্ঠান বেশ আনন্দ উল্লাশে মেতে উঠলো।জায়ান আরাবীকে এর মাঝে একটু আধটু লজ্জা দিতে ভুলে নি।তাদের দুষ্টুমিষ্টি খুনশুটি আর সবার আনন্দ উল্লাশের মাধ্যমে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো আরাবী আর জায়ানের।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ১০