নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৫
Mousumi Akter
প্রান্তিক পেছন থেকে রজনীর হাত টেনে ধরে বলল, “প্লিজ ভুল বুঝো না আমাকে। তুমি যা ভাবছ তা নয়।”
রজনী ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকিতে বলল, “আমি কিছুই ভাবছি না।”
রজনীর এমন ভয়ঙ্কর দৃষ্টি দেখে প্রান্তিক শিউরে উঠল। সরল মুখশ্রীতে অগ্নিঝরা দুটো চোখ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে।প্রান্তিক রজনীর কপালে পড়া চুল কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলল,
“আমার এক ফালি পূর্নিমার চাঁদ, তোমার আলোয় আমি আলোকিত হতে চাই।
আমার জীবনের সব অন্ধকার দূর করে দাও তোমার শুভ্র আলোয়। তোমার ঘৃণাভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করো না আর। ওই ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে আমি ভস্ম হয়ে যাব।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রজনীর রাগের মাত্রা আরও বেড়ে গেল। দাঁতে দাঁত চেপে তাকাল প্রান্তিকের দিকে।প্রান্তিক মৃদু হাসল। হেসে বলল,
“আমার ফুল বাগানের সবচেয়ে পবিত্র ফুলটা আজ খুঁজে পেয়েছি। আমার বাগানে অজস্র ফুল আছে। তার মাঝে সবচেয়ে সুন্দর ফুলটা তুমি। রজনীগন্ধা ফুল।রজনীগন্ধা, তোমাকে সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন প্রান্তিক চৌধুরীর জন্য সুবাস ছড়াতে।”
রজনী আবারও অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করল।
প্রান্তিক মাথা ঝুঁকিয়ে রজনী মুখের কাছে মুখ এনে ফিসিফিস করে বলল, “এভাবে তাকিয়ো না। আই সয়ার, আমি এবার ম”রে”ই যাব রজনীগন্ধা।”
রজনী আবারও একইভাবে তাকাল। প্রান্তিক হাতটা ছেড়ে দিল।
রজনী বিয়ে বাড়িতে গিয়ে তার আম্মুকে ডেকে নিয়ে বাড়িতে চলে এলো। রজনীদের মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি। বাড়িতে হাফওয়ালের ঘর। হাঁস-মুরগি, গোরু-ছাগল নিয়েই গ্রাম্য সংসার। রজনীর বাবা সবজির চাষাবাদ করেন। মাছের পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেন। সংসারটা যতটা সুখের হওয়া উচিত ততটা সুখী নয়। তার একমাত্র কারণ– রজনীর ভাই। রজনী রুমে এসে হেঁচকা টানে গায়ের শাড়ি টেনে খুলে ফেলল। আড়ালে গিয়ে চেঞ্জ করে থ্রি পিছ পরে নিল। থ্রি পিছ পরে এসে দেখল জানালার এক পাল্লা খোলা। জানালার সাথে বাইক হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রান্তিক। রজনী সাথে সাথে জানালা বন্ধ করে দিল।
পরের দিন সকালে রজনী ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসেছে। বই-এর পৃষ্ঠা উল্টেই যাচ্ছে তবুও পড়ায় মন বসছে না। গতকাল রাতের ঘটনা তার মস্তিষ্কে গেঁথে আছে। ছেলেটা যেমন চরিত্রহীন তেমন অসভ্য আর বাজে।যে মেয়ে পায় তাকেই কোন না কোনো ফুলের সুবাস বানিয়ে দেয়। ছি! মেয়েরাও বা কেমন বাড়িতে মা-বাবা না থাকলে এসব চরিত্রহীন ছেলেদের ডেকে নিয়ে যায়।প্রান্তিকের চিন্তা মাথা থেকে ঝাড়তে বই ছেড়ে উঠে জানালা খুলল।
জানালা খুলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল প্রান্তিকের মুখের অবয়ব। কাল সারারাত প্রান্তিক এই জানালার পাশেই বাইক হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। রজনী জানালার ছিদ্র দিয়ে সারারাত খেয়াল করেছে ওখানে দাঁড়িয়ে সিগারেট টেনেছে প্রান্তিক। একটা শেষ হলেই আরেকটা টেনেছে। পৃথিবীর সব বাজে অভ্যাস ওই মানুষটির মাঝে আছে। এর ব্যাপারে কি বাড়িতে জানাবে? জানালে যদি উলটা খারাপ কিছু হয়। নাহ, কিছুই জানানো যাবে না। আজ যদি দেখা হয় তার শার্টটা ফিরিয়ে দিতে হবে।
এরই মাঝে বারান্দা থেকে রজনীর বাবা রজনীর মাকে ডেকে বলল,
“তোমার পোল কই?”
আয়েশা বেগম উঠান ঝাড়ু দিতে দিতে বললেন, “কইতে পারুম না।”
“কাইল রাইতে বাড়িত ফিরে নাই?”
“না।”
“আমারে কইছ হেই কতা?”
“ এইডা তো পতিদিনের রুটিন; তোমার পোলা বাড়ি আয়ে না। হেইডা আর কওনের কী আছে?”
“এমন বে”জন্মা পোলা যে সৈয়দ বাড়িত জন্মাইব হেইডা আমি ভাবদেও পারি নাই। জীবনে কী পা’প করছিলাম হেইডাই ভাবি। না অইলে এমন কু* সন্তান ক্যান আমার ঘরেই জন্মাইব!”
আয়েশা বেগম কোনো কথার আর উত্তর দিলেন না। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।আসলে তার কিছুই বলার নেই। ছেলেকে নিয়ে সংসারে রোজ অশান্তি চলে। ঠিকমতো বাড়ি ফেরে না, নেশা করে, মা’রা’মা’রি করে।এলাকায় মুখ দেখানো যায় না। বাড়ি থেকে টাকা নেয় আর উড়িয়ে বেড়ায়।
সৈয়দ মুনসুর আলী আবারও বললেন, “তোমার ছেলের লাইগা আমার মাইয়াডার ভালা ঘরে বিয়াও দিতে পারমু না। যার ভাই এমন কইরা বেড়ায় তার বোনেরে আর ক্যাডায় বিয়া করতে চাইব?”
আয়েশা বেগম রান্নাঘরের ছাইমাটি তুলে ভাতের হাড়ি নিয়ে বের হয়ে বললেন, “আমার মাইয়াডারে লইয়া আমার চিন্তা অয় অহন। ওর লাইগা শত্রুতা করইরা কেউ আমার মাইয়াডার ক্ষতি না কইরা দেয়।”
“তোমার পোলায় তো মাইনষেরর পা চাটা চামচা, বুঝলা? বুঝতাম নেশা কইরা মা’রা’মা’রি করে, এলাকার মাইনষে ভ*য়ে কাঁপে। তাও একটা সুনাম আছিল। তোমার পোলায় মাইনষের পা চাইটা বেড়ায়।মজুমদার বাড়ির বখাটে পোলাডার গোলাম।তার ইশারায় নাইচ্যা বেড়ায়। মাহবুব ভাই-এর পোলাডারে দেখলে আমার পরাণডা জুড়াইয়া যায়।
নয়নে লাগিল নেশা পর্ব ৪
হেও তো রাজনীতি কইরা, মা’রা’মা’রি কইরা বেড়ায় কিন্তু দ্যাখছ– মাইনষে ক্যামনে তারে ভালোবাসে। হে সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্দে থাহে। পোলাডারে দ্যাখলে পরাণডা জুড়াইয়া যায়।”
আয়েশা বেগম চাল ধুয়ে হাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে বললেন, “পোলাডা আসলেই অনেক ভালা।”