অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৮
Mousumi Akter
গ্রামের বাড়িতে সকালে মাটির চুলার ছাই খুলে, কালির হাড়ি,কড়াই মেজে তবেই মানুষ রান্না করতে যায়।এ কাজগুলা বাড়ির বউরা ই করে থাকে।শ্বাশুড়ির হুকুম অনুযায়ী পুষ্পকে আজ এ কাজ গুলো করতে হচ্ছে।এসব কাজের সাথে পরিচিত নয় সে।একটা কাজ ও ঠিকভাবে করতে পারছে না ফলে তার শ্বাশুড়ি খিটমিট করে কথা বলছে। গতরাতের এঁটো থালাবাটি পরিষ্কার করার জন্য গোছালো পুষ্প। এমন সময় পাড়ার একজন হিন্দু মহিলা এলো নতুন বউ দেখতে। মহিলাটি আসতেই রাজনের মা পুষ্পকে ডাকল।পুষ্প সামনে আসতেই পাড়ার মহিলাটি বলল,
‘ এ কি নতুন বউ -এর পরণে শাড়ি নেই কেন? শাড়ি ছাড়া ঝি বউ কে মানায় নাকি।ও রাজনের মা এ কেমন ধারার বউ আনলে।’
রাজনের মা চোখ রাঙিয়ে বলল,
‘যাও এখনি জামা খুলে শাড়ি পরে আসো।আর একদিন ও এইসব জামা-কাপড় পরবা না বলে দিলাম।’
পুষ্প মিহি কণ্ঠে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো,
‘আচ্ছা আম্মা।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রাজন সুয়ে আছে।পাশেই টেবিল ফ্যানে শো শো শব্দ হচ্ছে।সদ্য বিবাহিত স্বামীর সামনে খোলামেলা পোশাক চেঞ্জ করতে অস্বস্তি হচ্ছে পুষ্পের।সে খাটের স্ট্যান্ডে একটি তোয়ালে মেলে দিলো।তোয়ালের এপাশে দাঁড়িয়ে পোশাক চেঞ্জ করছে।ব্লাউজ আর পেটিকোট পরা শেষ হলে শাড়ি কোমরে গুজে কেবল ই কুঁচি দিচ্ছে, তখন ই রাজন তোয়ালে এক টানে সরিয়ে পুষ্পকে নিজের কাছে টেনে নিলো।এক টানে পুষ্প গিয়ে পড়ল রাজনের বুকের উপর।পুষ্প দারূণ লজ্জা পেয়ে গেলো।রাজন ঘুম ঘুম কণ্ঠে পুষ্পকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘সাত সকালে বরকে ছেড়ে কোথায় গেছিলে?’
পুষ্প লজুকমুখে বলল,
‘ছাড়ো বাইরে আম্মা অপেক্ষা করছে।’
‘করুক।কিছুক্ষণ আমার কাছে থাকো।’
‘সারারাত ই তো ছিলাম।’
‘তাতে কি তোমার মোহ কেটে গিয়েছে? চব্বিস ঘন্টা আমার তোমাকে লাগবে।’
বাইরে থেকে রাজনের মা বলল,
‘ঘরে গিয়ে কি সিন্ধুকে আটকে গেলে নাকি।’
মায়ের কণ্ঠ শুনে রাজন পুষ্পকে ছেড়ে দিলো।বিড় বিড় করে বলল,
‘মা কি কিছুই বোঝে না।’
পুষ্প দ্রুত শাড়ির কুঁচি গুজে ঘর ছেড়ে বের হতে পা বাড়াল।তখন ই রাজন পুষ্পের হাত টেনে ধরল।পুষ্পকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ আমি বাবার সাথে কথা বলব।ম’কে বুঝিয়ে বলার জন্য। তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবো আমি।’
পুষ্প হাসিখুশি মাখা মুখে বলল,
‘মায়ের ভালবাসা আদায় না করে আমি কোথাও যাচ্ছিনা।তুমি একদম চিন্তা করোনা। আমার ভাল লাগছে নতুন জায়গা।’
‘আমি তোমাকে চিনি পুষ্প।আমাকে বোঝাতে হবেনা।’
পুষ্প শাড়ি পরে বাইরে গেল।রাজনের মা পুষ্পকে বলল,
‘যাও হাড়ি, কড়াই কলে নিয়ে মেজে চাল ধুয়ে দাও।’
পুষ্প হাড়ি আর কড়াই নিয়ে কলপাড়ে গেল।মাটির হাড়িতে কালি।পুষ্পের হাত ভরে কালি ভরে গেল।কল চাপার মত অভ্যাস ও নেই তার।এত কঠিন পরিস্থিতিতে সে আগে -পরে কখনো পড়েনি।কি করলে তাল সামলাতে পারছে না।শাড়ি সামলাতে গিয়ে কলের পিচ্ছিল শেওলায় পা পড়তেই সিলিপ করে পড়ে গেল।সাথে সাথে একটা চিৎকার দিলো।পুষ্পের চিৎকারে রাজন এক লাফে ঘর ছেড়ে বের হয়ে এলো।পুষ্পকে আহত অবস্থায় দেখে রাজন সাথে সাথে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে মায়ের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল,
‘ ও আমার স্ত্রী মা। ভালবেসে বিয়ে করেছি। আমাকে বিয়ের বিনিময়ে ওর জীবন টা এমন অভিশপ্ত হয়ে উঠবে জানলে বিয়েটা করতাম।দূর থেকে আফসোস করতাম।তবুও নিজ হাতে ওকে অসুখী করার মত কষ্টে দগ্ধ হতাম না।’
কক্সবাজারের খুব উন্নত একটা হোটেলে সুয়ে আছে পূর্ণতা আর প্রভাত।পুরা একটা হোটেল ভাড়া নিয়েছে প্রভাত।যেন শান্তিতে সময় কাটাতে পারে। প্রভাত খালি গায়ে, পূর্ণতার পরণে সাদা একটা নাইটি।হোটেলের সাদা বিছানার চাঁদর, আর পূর্ণতার পরণের সাদা নাইটিতে মনে হচ্ছে এক টুকরো ভাসমান শুভ্র পেঁজা তুলোর উপর যেন আকাশ প*রী ঘুমিয়ে আছে।পূর্ণতা ডান কাত হয়ে কনুই ভাজ করে সুয়ে আছে।প্রান্তিক ঘুম ভাঙতেই পূর্ণতাকে দেখে মুগ্ধ আঁখিযুগলে কনুই ভেঙে মুখে হাত ঠেকিয়ে পূর্ণতার দিকে চেয়ে আছে।কি অপূর্ব দেখাচ্ছে পূর্ণতাকে।
ঘুমিয়ে থাকলে বোধহয় নারীদের সৌন্দর্য্য কয়েকগুন বেড়ে যায়।প্রভাত টু শব্দটি পর্যন্ত করছে না।সে একাধারে তাকিয়ে আছে পূর্ণতার দিকে।দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থেকে প্রভাত মোহবিষ্ট হল।তার ঠোঁট দুটো নেমে গেলো পূর্ণতার কপালে।কিছু আদুরে স্পর্শতে ভরিয়ে তুলল পূর্ণতাকে।প্রভাতের স্পর্শে ঘুম ভাঙল পূর্ণতার।ঘুম থেকে উঠেই প্রিয় পুরুষের এমন আদুরে স্পর্শ পূর্ণতার প্রেমদায়ক অনুভূতি বাড়িয়ে দিলো।উষ্ণতা ছড়াচ্ছে তার সর্বাঙ্গে।জীবনে প্রথম কোনো সকাল পূর্ণতা ঘুম থেকে উঠে নেশালো দুটি আঁখিতে প্রভাতের দিকে তাকালো।প্রভাতের ডাকে কোনো ভনিতা ছাড়া সাড়া দিলো।সে অনুভূতির সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে প্রভাতের গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে কণ্ঠে বলল,
‘ কি হচ্ছে হুম।ঘুমুতে দিবেন না।কাল সারারাত ঘুমোয় নি আমি।’
পূর্ণতার ঘুম ঘুম কণ্ঠ প্রভাতকে মাতাল করে তুলল।সে নেশাতুর চোখে তাকিয়ে রইলো পূর্ণতার দিকে।কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না।এমন একটি সকালের জন্য সে কতদিন,কতকাল অপেক্ষা করেছে তার ইয়ত্তা নেই।পূর্ণতা আবার ও ঘুমে জড়ানো কণ্ঠে বলল,
‘ কি চাই হুম, বলুন না।’
প্রভাত যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলো।তার ভাবনার ছেঁদ কাটল পূর্ণতার কণ্ঠে।সে পূর্ণতার দুই গালে হাত রেখে প্রেমময় কন্ঠে বলল,
‘ একটা জিনিস শুনতে চাই বলবে।’
‘ কি বলুন না।’
‘ ভালবাসো আমাকে।’
পূর্ণতার চোখের তারায় প্রভাতের চেহারা চিকচিক করছে।প্রভাতের জন্য গভীর প্রেম ধরা দিয়েছে।মুখ টা একটু উঁচিয়ে প্রভাতের গলায় ঠোঁট ছুইয়ে বলল,
‘ বাসিতো, অনেক ভালবাসি।’
প্রভাত স্মিথ হাসল।আবেগে আপ্লুত সে।আরেকবার জানতে চাইলো,
‘ কি বললে?’
‘ আমি আপনাকে ভালবাসি প্রভাত চৌধুরী। ভীষণ ভালবাসি।’ বলেই প্রভাতকে জড়িয়ে ধরল আরো শক্তকরে।প্রভাত ভালবাসার আলিঙ্গনে পূর্ণতাকে জড়িয়ে ধরল।তার ঠোঁট জোড়া আনন্দে কাঁপছে। প্রভাত কম্পিত ঠোঁটে উচ্চারণ করল,
‘ স্বপ্নের মত লাগছে সব।’
‘আমি স্বপ্নেও আপনার, কল্পনায় ও আপনার। আমি শুধু আপনার।’
প্রভাত খুব কাছে টেনে নিলো পূর্ণতাকে।পূর্ণতা মিহি কণ্ঠে বলল,
‘আজকের সকালটা আপনার সাথে দেখতে চাই।’ সাথে সাথে প্রভাত পূর্ণতাকে ছেড়ে দিলো।
পূর্ণতা রুমে ছেড়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়াল।সে প্রাণ খুলে সকালের শীতল হাওয়া নিচ্ছে। কি সুন্দর চারপাশ টা।প্রভাত ও উঠে এল।সে খালি গায়ে এসে পেছন থেকে পূর্ণতাকে জড়িয়ে ধরল।পূর্ণতার ঘাড়ে মুখ গুজে বলল,
‘ধন্যবাদ বউ।’
‘কেন?’
‘আজকের সকাল টা এত স্নিগ্ধ, সুন্দর করে দেওয়ার জন্য।’
‘ অসুন্দর ও করতে জানি।’
‘কীভাবে?’
‘প্রভাত ভাই।’
প্রভাত হাসল। হেসে বলল,
‘কাজিন বিয়ে করলে এই এক বিপদ।’
‘রাগ করেন নি আজ।’
‘না।’
‘ কেন?’
‘আমাকে একবার ভালবাসি বলেছো, আগামি এক যুগ সেই ভালবাসার ঘোরে থাকব আমি। সব অন্যায় মঞ্জুর।’
‘এত ভালবাসেন কেন আমাকে বলুন তো।’
‘আমি জানিনা পূর্ণ। এর কোনো উত্তর চেওনা।খুঁজোনা কোনো উত্তর। আমার কাছে কোনো উত্তর নেই।’
‘ইশ।’
‘কি হল?’
‘কেন আগে ভালবাসলাম না আপনাকে। শুধু আফসোস হচ্ছে।জীবন থেকে কত মধুর মুহুর্ত হারিয়ে গেল।’
‘গত দুই যুগের প্রেম আমি তোমাকে পুষিয়ে দিবো।বিনিময়ে আরোও বোনাস দিবো।কিচ্ছু লস নেই তোমার।’
‘আমার নাম পূর্ণতা ছিলো,কিন্তু সবই অপূর্ণ ছিলো।আজ যেন সত্যি পূর্ণ হলাম আমি।’
প্রভাত পূর্ণতার ঘাড়ে চুমু দিয়ে বলল,
‘পূর্ণতা, আজ তোমাকে কিছু একটা দিতে ইচ্ছা হচ্ছে।প্লিজ কিছু চাও!একটা কিছু চাও।’
‘প্রথমত আপনাকে চাই।’
প্রভাত আরেকটি চুমু দিয়ে বলল,
‘দ্বিতীয়ত দামি কিছু চাও।’
‘আপনার সন্তানের জননী হতে চাই।’
প্রভাত আরেকটি চুমু দিয়ে বলল,
‘তৃতীয়ত কিছু চাও।’
‘আপনার সাথে বৃদ্ধ হতে চাই।’
প্রভাত আরেকটি চুমু দিয়ে বলল,
‘এসবের বাইরে কিছু চাও।যা খুব দামী।’
অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৭
‘আমার জীবনে যখন আপনি এসেছেন।আর যখন বুঝতে শিখেছি আপনাকে আমি ভালবাসি তখন থেকে আমার জীবনে আপনি আর আপনি ছাড়া দামী কিছু নেই প্রভাত চৌধুরী।আই লাভ ইউ। ‘