Infinite Love part 56+57+58+59+60

Infinite Love part 56+57+58+59+60
Writer: Onima

বলে ও সারারুম জুরে খুজতে লাগল আমাকে , আমি চোখ খিচে বন্ধ করে বসে আছি, একবার ওর হাতে পরে গেলে আমার সাথে আজ কী হবে তা আল্লাহ জানে! গুটিসুটি মেরে বসে এটাই ভাবছি। হঠাৎ আমার পেছন থেকে কেউ বলে উঠল
.
– হাইড এন্ড সিক খেলা শেষ?
.
আমি চমকে গেলাম, প্রচন্ড ভয় নিয়ে ধীরে ধীরে পেছনে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান এক হাটু ভেঙ্গে বসে আছে, মুখে বাকা হাসি কিন্তু চোখে মারাত্মক রাগ। আমি ভয়ে একটা ঢোক গিলে দেয়ালের কর্ণারের সাথে লেগে বসলাম। আদ্রিয়ান বেশ ঠান্ডা গলাতেই বলল

– কী হলো তোমার হাইড এন্ড সিক খেলা শেষ হয়েছে নাকি আরো খেলবে?
.
আদ্রিয়ানের এই রুপ আমার বুকে ছুড়ির মতো করেই আঘাত করছে! এতোদিনের এতো ভালোবাসা সবটাই অভিনয়? এতো নিখুত অভিনেতা ও? ও একটু ধমক দিয়ে বলল
.
– নিজে বেরিয়ে আসবে না টেনে বের করব?
.
আমি এবার কেদে দিয়ে বললাম
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ যেতে দেও আমায়।
.
– বের হও!
.
– প্লিজ আদ্রিয়ান।
.
– ভালো কথায় শোনার মেয়ে তুমি কোনো কালেই ছিলে না
.
বলেই ও আমার ডান হাতের বাহু ধরে টেনে ওখান থেকে বের করে নিয়ে এসে ওর সামনে দাড় করালো, বেশ জোরে চেপে ধরে আছে আমার বাহু। আমি মাথা নিচু করেই আস্তে করে বললাম
.
– আদ্রিয়ান লাগছে আমার !
.
এটা বলার সাথে সাথেই ও ওর হাত আলগা করে দিলো, আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে। ও বেশ রাগী গলায় বলল

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– আমার কথা না শুনলে এর চেয়েও বেশি লাগবে।
.
এটুকু বলেই ও আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগল, আমার মাথায় এবার জেদ চেপে গেলো, খুব রাগ হতে লাগল যে এইরকম একটা মানুষকে ভালোবেসেছি আমি? যার উদ্দেশ্য শুধু মানুষ মারা, আমি শক্ত হয়ে দাড়িয়ে গিয়ে বললাম
.
– আদ্রিয়ান ছেড়ে দাও আমায়! তুমি যদি ভেবে থাকো যে আমাকে আটকে রেখে টর্চার করলেই আমি তোমাকে বলে দেবো যে ফাইলটা কোথায় আছে তাহলে খুব ভুল ভাবছো। আমাকে মেরে ফেললেও আমি বলবোনা ফাইলটা কোথায়!
.
ও পেছন ফিরে বাকা হেসে বলল
.
– ইউ নো তোমার এই জেদি স্বভাবটার জন্যেই তোমাকে আমার এতো ভালোলাগে..।
.
পরমূহুর্তেই ওর মুখের হাসি মুখটা রাগী মুখে পরিণত হলো, ও আমার কপালের চুলগুলো কানে গুজে দিয়ে ঠান্ডা রাগী গলায় বলল
.
– কিন্তু বেইবি, তোমার এই জেদ আমার সামনে না দেখালেই ভালো করবে কারণ তোমার চেয়ে আমার জেদ কয়েকশ গুন বেশি। চলো!
.
বলেই আমার হাত ধরেই হাটা দিলো আমিও ভয়ে আর কিছুই বললাম না কারণ এই মুহূর্তে ওকে দেখলে যে কেউ ভয় পাবে এতোটাই হিংস্র দেখাচ্ছে ওকে। যেতে যেতে আমি খেয়াল করলাম যে থার্ড ফ্লোর এর লিফট অন আছে! ও আমাকে টেনে ওর কেবিনে নিয়ে গিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো, তারপর চেয়ারের দুই পাশে হাত রেখে ঝুকে বলল
.
– চুপচাপ এখানে বসে থাকো, একদম ছটফট করবে না, তোমার ছটফটানি বন্ধ করার অনেক উপায় জানা আছে আমার। আমাকে রাগালে সেটা তোমার জন্যেই ক্ষতিকর হবে। সো কিপ কোয়াইট এন্ড কাল্ম!
.
বলেই ওর চেয়ারে গিয়ে পায়ে পা তুলে বসল, এরপর পানির গ্লাসটা আমার দিকেএগিয়ে দিয়ে বলল

– গলাটা শুকিয়ে আছে নিশ্চই !
.
ওর এই আলগা দরদ দেখে ভীষণ মেজাজ খারাপ হচ্ছে, আমাকে এতো কষ্ট দিয়ে নেকামো করছে? বেশ বিরক্তি নিয়েই বললাম
.
– লাগবে না আমার
.
– আমার উঠতে হবে? ( রেগে গিয়ে)
.
বিরক্ত হয়ে গ্লাসটা নিয়ে পানিটা খেয়ে নিলাম, এমনিতেও তেষ্টা পেয়েছিলো, সবকিছু অসহ্য লাগছে আমার, আদ্রিয়ান ফোনে কাকে যেনো একটা কল করছে, কীকরে করতে পারল ও এরকম? আর করার কারণটাই কী? ওর তো কোনোকিছুর অভাব নেই নাম, খ্যাতি, টাকা, পাওয়ার সব আছে ওর কাছে তবুও কীসের জন্যে এইরকম এক জগতে নিজেকে জড়ালো ও? যেখানে একবার ধরা পরলে ওর মৃত্যু নিশ্চিত! কী এমন প্রয়োজনীয়তা পরলো ওর যে ও দেশদ্রোহী হতেও দুবার ভাবলোনা? আমি লক্ষ করলাম ও ফোনে ভিজি আছে। আমি আস্তে করে উঠে দাড়ালাম, তবুও ও তাকালো না বুঝতে পারলাম ও ফোনে মগ্ন তাই আমি আস্তে আস্তে উঠে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম। তারপর কোনরকম দৌড়ে লিফটের কাছে এসে তাড়তাড়ি লিফট এর বাটন চাপলাম, আর বারবার পেছনে তাকাচ্ছি আদ্রিয়ান এসে পরে কী না সেটা দেখার জন্য। লিফট খুলতেই তাড়াতাড়ি লিফটে করে নিচে চলে এলাম কিন্তু নিচে এসে বুঝতে পারলাম যে শুধুশুধুই এতো কষ্ট করলাম আর নিজের বিপদ আরো বারালাম, নিচের গেইটটাও তালা দেওয়া, আমি অনেক্ষণ ঝাকালাম কেচি গেইটটা, তারপর চিৎকার লোকেদের ডাকতে শুরু করলাম কিন্তু দূর্ভাগ্যবসত কেউ এলো না। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ বলল
.
– কেউ এলোনা?
.
আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান দেয়ালে হেলান দিয়ে হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে। ওর হাতে গান। ঐ মুহূর্তে ওর চোখ দেখলে যে কারো গলা শুকিয়ে যাবে, আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলামনা মাথা নিচু করে ফেললাম। ও ধীরে ধীরে আমার দিকে আসতে লাগল, আমি জামা খামছে ধরে দাড়িয়ে আছি, ও এসে গান টা আমার গালে স্লাইড করে বলল
.
– কী হলো? নিচের দিকে তাকিয়ে আছো কেনো? পালাও!
.
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি ভয়ে ও বলল

– কী হলো বেইবি পালাও!
.
আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। ও আরেক হাত দিয়ে গাল চেপে ধরে রাগী গলায় বলল
.
– এখন কাদছো কেনো? পালাতে বারণ করেছিলাম না আমি? কী ভেবেছিলে তুমি চাইলেই এখান থেকে পালাতে পারবে?
.
বলে ঝাড়া দিয়ে গাল ছেড়ে দিলো আমি কান্নাজরিত চোখে একবার তাকালাম ওর দিকে এই আদ্রিয়ান আমার কাছে অচেনা খুব বেশিই অচেনা। এতোটা ভূল করেছি ওকে চিনতে, এই ছয় মাসে এটুকু বুঝতে পারিনি যে ওর আসল রূপ কী? আমি রাগান্বিত হয়ে বললাম
.
– মানুষ কতোটা নিখুত অভিনয় করতে পারে তোমাকে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। আমার কথা ছেড়ে দাও, আমাকে তো শুধু তুমি ইউস করেছো নিজের স্বার্থে কিন্তু তোমার পরিবার? তোমার বাবা মা বোন ওদের কথাও চিন্তা করলেনা?
.
ও বেশ কিছুক্ষণ স্হির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে চোয়াল শক্ত করে বললো
.
– নাহ করিনি

এটা শুনে বেশ অবাক হলাম, এটাই তাহলে আদ্রিয়ান? আমি একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম
.
– তা কেনো করবে? তুমি তো একটা স্বার্থপর! যে নিজের ছাড়া কারো কথা ভাবেনা। You are such a selfish man!
.
ও আমার বা হাত পেছনে মুচরে ধরে বলল
.
– হ্যা আমি স্বার্থপর! নিজের টা ছাড়া কারোটা ভাবিনা আমি। যা করেছি নিজের স্বার্থে করেছি আর যা করবো নিজের স্বার্থেই করবো। কী করবে তুমি?
.
এতোটা জোরে ও আমার হাত মুচরে ধরেছে যে ব্যাথায় কুকরে যাচ্ছি আমি, মনে হচ্ছে হাত এখনি ভেঙ্গে। সহ্য করতে না পেরে কেদে দিয়ে বললাম
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও! আমি আর নিতে পারছিনা এসব!
.
বলেই শব্দ করে কাদতে লাগলাম, প্রিয় মানুষটার দেয়া আঘাত খুব বেশি যন্ত্রণা দেয়! সেখানে ওকে তো আমি ভালোবাসি, আদ্রিয়ান আমার হাত ছেড়ে আমাকে কোলে তুলে নিলো, আমি আর ছটফট করলাম না জানি কোনো লাভ হবেনা। তাই চুপ করে রইলাম ও আমাকে ওর কেবিনে নিয়ে আবার সেই চেয়ারটাতে বসিয়ে দিলো। তারপর টেবিলের ওপর রাখা দরিগুলো হাতে নিতেই আমি চমকে গিয়ে বললাম

– আদ্রিয়ান ক্ কী করছো দ্ দেখো এসবের দরকার নেই অ্ আমি আর…
.
কিন্তু ও আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল
.
– খোলা আরাম করে বসিয়ে রেখেছিলাম ভালোলাগছিলো না তাইনা? তোমার জন্য এটাই পার্ফেক্ট।
.
বলেই আমাকে চেয়ারের সাথে বেধে দিলো আর আমি করুন চোখে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। এই সেই আদ্রিয়ান যে আমার সামান্য কষ্টও সহ্য করতে পারতোনা? আমাকে বেধে ও কোথাও একটা ফোন করল, ফোন রিসিভ করতে কেউ কিছু বলল তার উত্তরে ও বলল
.
– আমি বাংলোতে আসছি সব ক্লিন করে রাখো!
– ….
– আমার বাংলোতে আমি আসবো সেটারো কারণ বলে আসতে হবে? তাও তোমাকে? ( জোরে ধমকে)
– ….
– হুম। এই ভূল দ্বিতীয় বার করোনা। আর হ্যা গার্ড বাড়িয়ে দাও। আর কতোক্ষণ লাগবে সব রেডি করতে?
– ….
– সারাবছর ঘাস কাটো? এতোগুলো টাকা দেই ঘুমোনোর জন্যে রাবিশ!
.
বলেই ফোন কেটে দিয়ে টেবিলে রাখা ল্যাপটপ টা অন করল। আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি ওকে এইভাবে কথা বলতে দেখে আমি শকড, এই ছয়মাসে কারো সাথেই এভাবে কথা বলেনি ও অন্তত আমার সামনে, ল্যাপটপ এ কাজ করতে করতে একজনকে ফোন করে এখানে আসতে বলল। ও ফোনটা রাখতেই আমি চেচিয়ে বললাম
.
– আদ্রিয়ান কী শুরু করেছো তুমি? ছেড়ে দাও আমাকে আমায় আটকে রেখে তোমার কোনো লাভ হবেনা। প্রাণ থাকতে আমি..
.
– চুপ! একদম চুপ! আমার কীসে লাভ আছে কীসে নেই আই নো দ্যাট এস ভেরি ওয়েল, এখানে আমরা আর এক ঘন্টা আছি। এই এক ঘন্টা একদম ভদ্র মেয়ের মতো বসে থাকবে একটাও বারতি কথা না!
.
ওর ধমকে আর কিছু বলার সাহস পেলাম না একদম চুপ হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে এলো দেখে মনে হচ্ছে প্রায় আদ্রিয়ানের বয়সী তবে একটু ছোটই হবে, ছেলেটা এসে আমাকে দেখে অবাক হয়ে বলল
.
– স্যার ম্যাম কে এভাবে…

আদ্রিয়ান ল্যাপটপ থেকে চোখ না সরিয়েই রেগে বলল
.
– তোমাকে আমি তোমার ম্যামকে কেনো বেধে রেখেছি সেটা বলতে ডেকেছি অভ্র?
.
– সরি স্যার ( মাথা নিচু করে )
.
এবার আদ্রিয়ান ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে কপালে আঙ্গুল স্লাইড করতে করতে বললো
.
– আমি বাংলোতে যাচ্ছি আজ ওকে নিয়ে!
.
– কিন্তু স্যার ওখানে তো..
.
– আমার কথায় কিন্তু ধরার সাহস তোমার আবার কবে থেকে হলো?
.
– নাহ স্যার আপনিতো ওখানে যান না আর ওরকম নির্জন বাংলোতে ম্যামকে…
.
আদ্রিয়ান এবার টেবিলে রাখা পেপার ওয়েড ঘোরাতে ঘোরাতে বলল
.
– ইউ নো হোয়াট অভ্র? দাবা খেলায় প্রতিটা চাল তার পরবর্তী কয়েক চাল কী হবে সেটা মাথায় রেখেই দিতে হয়? আর আমার প্রতিটা চাল আমি সেই জায়গাটার কথা মাথায় রেখে দেই যেখানে হবে চেকমেট!
.
বদলে অভ্র নামের ছেলেটা হালকা হেসে বলল
.
– I know sir…
.
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে অাছি ছেলেটার দিকে দেখতে বেশ ভালো হাইট ও ভালো তবে আদ্রিয়ানের থেকে একটু কম, এটুকু বুঝেছি ও আদ্রিয়ানের এসিস্টেন টাইপ কিছু আর আমাকে চেনে আর এখানে আমাকে বাধা দেখে ও মারাত্নক শকে আছে। কিন্তু আমিতো শকে আছি আদ্রিয়ানের এটিটিউড দেখে ওর এইরকম এটিটিউড এর সাথে আমি একদমি পরিচিত নই। অভ্র হালকা কেশে বলল

– স্যার আমায় কী করতে হবে?
.
– বেশিকিছুনা আমার সাথে চলো, ঐ বাংলোর কথা তুমি ছাড়া এখানকার আর কেউ জানেনা।
.
– ওকে স্যার
.
একঘন্টা ও আমাকে ওভাবেই বেধে রেখেছিলো, আমিও আর কিছু বলিনি একঘন্টা পর এসে আমার বাধন খুলতে খুলতে বলল
.
– সবসময় উল্টোপাল্টা কাজ করো তুমি এখানে না আসলে আজকে আর তোমার সাথে আমাকে এসব করতে হতো না। যাই হোক এখন এসব বলে আর কী হবে?
.
– তোমার একবারো মনে হচ্ছেনা সবাইকে যখন আমি তোমার সত্যিটা বলবো তখন ওরা কতোটা কষ্ট পাবে?
.
ও এবার একটু শব্দ করে হাসলো। বেশ কিছুক্ষণ হাসার পর ও আমার দিকে ঝুকে বলল
.
– সেটাতো তুমি তখন বলবে জানপাখি যখন আমি তোমাকে ওদের কাছে যেতে দেবো!
.
আমার বুক কেপে ওর কথায় যেতে দেবেনা মানে কী? কী করবে ও আমার সাথে? কোথায় নিয়ে যাবে? ভয়ে ভয়ে বললাম
.
– ম্ মানে?
.
– মানে আমি যতোক্ষণ না চাইবো তোমার কাছে আসা তো দূর কেউ আর তোমার মুখ ও দেখতে পারবেনা।
.
– কী করবে তুমি?
.
ও বাকা হাসি দিয়ে বলল
.
– এস ইউসয়াল! প্রশ্ন অনেক বেশী করো তুমি চলো !
.
বলে আমার হাত ধরতেই আমি ঝাড়া দিয়ে হাত সরিয়ে অনেক খেকারী দিয়ে বললাম
.
– কোথাও যাবোনা আমি, তোমার সাথেতো নাই।

বলেই পাশ কাটিয়ে যেতে নিলাম, কিন্তু আমার এই আচরণ হয়তো ইগো হার্ট করো ও আমার ঘারের ওপর দিয়ে চুলের মুঠি ধরে টান মারলো, আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওর দিকে, যদিও এতোক্ষণে ওর যে রুপ দেখেছি তাতে এটা অস্বাভাবিক কিছুই না তবুও কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে যে এই লোকটাকে আমি এতোটা ভালোবাসি, কাল আবধি আমার চোখে পানি দেখলে ওরও চোখ ছলছল করত। চোখ আবারো পানিতে ভরে উঠলো আমার, ও আমার মুখটা একদম ওর মুখের কাছে নিয়ে বলল
.
– তোমাকে আগেও বলেছি যে আমি না চাইলে আমার কাছ থেকে তোমাকে কেউ বাচাতে পারবেনা তাই সেই চেষ্টাও করোনা ওকেহ!
.
– আদ্রিয়ান আমার ব্যাথা লাগছে। ( ছাড়ানোর চেষ্টা করে)
.
– সেটা আমার সাথে ঘারতেরামী করার আগে মনে ছিলো না? আমার মুখে মুখে কথা বলার সাহস করবে আর?
.
আমি চুপ করে আছি বলে আরো জোরে টেনে ধরলো আমি ‘আহ’ করে উঠলাম ও হুংকার দিয়ে বলল
.
– কী হলো বলো?
.
আমি মাথা নেড়ে না করলাম। এবার ও আমার বা হাতের বাহু ধরে টেনে লিফটের কাছে চলে গেলো, লিফট থেকে বেরিয়ে আমায় টানতে টানতে বাইরে নিয়ে গেলো, নিচে গিয়ে দেখি অভ্র দাড়িয়ে আছে গাড়ির ভেতরে একজন ড্রাইভার বসে আছে। আদ্রিয়ান ইশারা করতেই অভ্র গাড়ির সামনের সিটে গিয়ে বসল। আমাকে টেনে গাড়িতে তুলতে গেলে আমি আদ্রিয়ানকে বললাম
.
– প্লিজ আমাকে বাড়ি যেতে দাও! প্লিজ!
.
কথাটা জেনো ওর কানেই গেলোনা ও ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে ঢুকিয়ে দিলো আমাকে তারপর আমার পাশে বসল। আমি আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছি। একদিনে একটা মানুষ এতো বদলে যেতে পারে? অভ্র এখোনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। যেনো ব্যাপারটা হজম করতে পারছেনা। আদ্রিয়ান হালকা ধমকে বলল

– ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট করতেও কী আমাকে বলতে হবে অভ্র?
.
অভ্র থতমত বলল
.
– সরি স্যার
.
বলেই ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট করতে বলল। আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলাম, কিছু বলার শক্তি বা ইচ্ছে কোনোটাই আমার আর অবশিষ্ট নেই। চুপচাপ চোখের পানি ফেলতে লাগলাম। একদিনেই জীবনটা জাহান্নামের চেয়েও যন্ত্রণাদ্বায়ক মনে হচ্ছে। কতোক্ষণ গাড়িতে ছিলাম জানিনা বেশ অনেকটা সময় পর বেশ নির্জন জায়গায় গাড়ি থামলো, আশেপাশে তেমন কিছুই নেই শুধু একটা বাংলো। আদ্রিয়ান আমাকে গাড়ি থেকে নামলো আমি এবার আর কোনো জোড়জুড়ি করলাম না ওর সাথে, জানি লাভ হবেনা তার চেয়ে বড় কথা শারীরিক বা মানসীক কোন ভাবেই সেই শক্তি আর পাচ্ছিনা। অভ্র ও পেছন পেছন আসছে। ও আমার হাত ধরেই ভেতরে নিয়ে যেতে লাগল আর আমি চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে সেদিকেই যাচ্ছি যেদিকে ও নিয়ে যাচ্ছে। যাওয়ার সময় বেশ কয়েকজন গার্ড ওকে হাত তুলে সালাম দিলো, ও শুধু একবার হাতের ইশারা করে দরজার কাছে গেলো দরজা খুলেই একজন ওকে সালাম দিলো ও কোনোরকমে জবাব দিয়েই আমাকে সিড়ি দিয়ে উপরে নিয়ে গেলো অভ্র আর এগুলো না একটা বড় রুমে নিয়ে বেডে বসালো আমাকে তারপর আমার থুতনি ধরে উচু করে বললো

– আপাদত চলে যাচ্ছি কাল সকালে আসবো। একটুপর খাবার দিয়ে যাবে চুপচাপ খেয়ে ঘুমিয়ে পরবে, আর যদি এসে দেখেছি কোনো তেরিং বেরিং করেছো। You know as well what can i do..
.
বলেই চলে যেতে নিয়ে আবারো এসে এক হাতে আমার গাল ধরে বলল
.
– আর এখান থেকে পালানোর চেষ্টাতো ভূলেও করনা। বাইরে দেখেই নিয়েছো কী পরিমাণ গার্ড আছে, তাই সেই চেষ্টা করলেও পারবেনা। কিন্তু এরকম কোনো খবর যদি আমার কানে আসে যে তুমি সেই চেষ্টাও করেছো, তাহলে এমন অবস্হা করবো যে পালানোর পরিস্হিতিতেই থাকবেনা। Mind it..
.
বলেই আমাকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো, উপুর হয়ে বালিশের ওপর পরে গেলাম, ও দ্রুত পদে শব্দ করে দরজাটা বন্ধ করে চলে গেলো। আমি ওভাবেই বালিশে মুখ গুজে শব্দ করে কাদতে লাগলাম কিন্তু আমার এই কান্না দেয়াল ভেদ করে কারো কাছে পৌছবে না আর যার কাছে পৌছবে তার কাছে এই কান্নার কোনো দাম নেই। আজ মনে হচ্ছে এর আগে আমি মরে কেনো গেলামনা। এর থেকে ভালো হতো যদি তুমি আমায় নিজের হাতে মেরে ফেলতে আদ্রিয়ান কিন্তু তুমিতো আমার বেচে থাকাটাকেও মৃত্যুর চেয়ে বেশি যন্ত্রণার করে দিলে। আমি তোমার হাত থেকে মুক্তি পাই বা না পাই, এই যন্ত্রণা থেকে কোনোদিন মুক্তি পাবোনা আদ্রিয়ান কোনোদিন না…
বলেই আমাকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো, উপুর হয়ে বালিশের ওপর পরে গেলাম, ও দ্রুত পদে শব্দ করে দরজাটা বন্ধ করে চলে গেলো। আমি ওভাবেই বালিশে মুখ গুজে শব্দ করে কাদতে লাগলাম কিন্তু আমার এই কান্না দেয়াল ভেদ করে কারো কাছে পৌছবে না আর যার কাছে পৌছবে তার কাছে এই কান্নার কোনো দাম নেই। আজ মনে হচ্ছে এর আগে আমি মরে কেনো গেলামনা। এর থেকে ভালো হতো যদি তুমি আমায় নিজের হাতে মেরে ফেলতে আদ্রিয়ান কিন্তু তুমিতো আমার বেচে থাকাটাকেও মৃত্যুর চেয়ে বেশি যন্ত্রণার করে দিলে। আমি তোমার হাত থেকে মুক্তি পাই বা না পাই, এই যন্ত্রণা থেকে কোনোদিন মুক্তি পাবোনা আদ্রিয়ান কোনোদিন না। বুকের মধ্যে অসহ্য এক ব্যাথা হচ্ছে যেনো কেউ কলিজায় ছুড়ি চালিয়ে দিচ্ছে, আদ্রিয়ান তুমি আমাকে বলেছিলে আর যাই করো বুকে আঘাত করোনা, কিন্তু তুমি নিজেই তো সেটা করলে, চরম আঘাত করেছো তুমি আমাকে আর আমি তোমাকে ক্ষমা করবো না কোনোদিন না।

ধীরে ধীরে কান্নার বেগ কমে গেলো এখন হিচকি উঠছে হালকা। অনেকক্ষণ পর দরজা খোলার আওয়াজে চোখ মুছে উঠে বসলাম। একটা মেয়ে ঢুকলো, কালো শার্ট কালো হাটু অবধি স্কার্ট চুলগুলো রিবন করা, ট্রে তে করে খাবার এনে খাটের পাশের টি-টেবিলের ওপর রেখে আমার সামনে এসে বলল
.
– ম্যাম!! স্যার আপনাকে খেয়ে নিতে বলে গেছেন।
.
স্যার শব্দটা শুনেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ওর নাম শুনে যেটুকু খাওয়ার ইচ্ছে ছিলো তাও চলে গেলো। এমনিতেও মন ভালো না থাকলে আমি খাই না তেমন। আর এখন খাওয়ার মতো কোনো পরিস্হিতি বা রুচি কোনোটাই আমার নেই। তাই বললাম
.
– নিয়ে যান আমি খাবোনা এখন।
.
সেটা শুনে মনে হলো মেয়েটা ঘাবড়ে গেলো, রিকোয়েস্ট করে বলল
.
– প্লিজ ম্যাম এগুলো ফেরত নিয়ে গেলে কাল স্যার এসে আমাদের পানিস করবে। প্লিজ খেয়ে নিন।
.
বেশ অবাক হয়ে তাকালাম এতোটা ভয় পায় ওরা আদ্রিয়ানকে? এতোটাই রুড বিহেভ করে ওদের সাথে? পাবে নাই বা কেনো? টেরোরিস্ট একটা! আমি বেশ বিরক্ত হয়ে বললাম
.
– আচ্ছা রেখে যান।
.
– ওকে ম্যাম!
.
– আর আপনার আমাকে ম্যাম বলে ডাকার দরকার নেই, আমার নাম অনিমা। অনিমা বলেই ডাকতে পারেন আর এমনিতেও আমি আপনার ছোটই হবো তাই আমাকে তুমি করেও বলতে পারেন।
.
মেয়েটি কিছু না বলে চলে গেলো। আমি মাথা চেপে ধরে বসে আছি কিচ্ছু ভালোলাগছেনা। বাড়িতে সবাই নিশ্চই খুজছে আমাকে, কিন্তু এখান থেকে বেরোতেও পারবোনা, কোনো ভাবে ধরা পরে গেলে আদ্রিয়ান মেরেই ফেলবে আমাকে, এখনো বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না যে আদ্রিয়ান এমন করতে পারে, কিন্তু সবটাতো আমার সামনেই হলো। এসব চিন্তা করেই চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পরল। ধ্যান ভাঙলো দরজায় নক করার আওয়াজে এখন আবার কে এলো? আদ্রিয়ান তো চলে গেছে! আমি চোখ মুছে বললাম
.
– কে?

– ম্যাম আমি অভ্র! আসতে পারি!
.
– জ্বী আসুন
.
বলার সাথে সাথেই অভ্র দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখলো খাবার টি টেবিলে রাখা। মুখে একটা সুন্দর হাসি লেগেই থাকে ছেলেটার তবে আদ্রিয়ান একটু ধমক দিলেই মুখটা কাচুমাচু করে রাখে। মুখে হাসি রেখেই বলল
.
– খান নি এখোনো?
.
– এটা জিজ্ঞেস করতে এসেছেন? ( বিরক্ত হয়ে)
.
– নাহ আসলে…
.
বলেই একটা লাগেজ এনে রাখল খাটের ওপর, তারপর বলল
.
– এখানে আপনার দরকারী সব আছে আই মিন পোশাক, অন্যান্য সব।
.
আমি একবার লাগেজটার দিকে তাকিয়ে একটা নিশ্বাস দিলাম না জানি কতোদিন এভাবে আটকে রাখবে আমাকে। আমাকে চুপ থাকতে দেখে অভ্র বলল
.
– একটু পর সার্ভেন্ট এসে সব কাবার্ডে ভরে দিয়ে যাবে।
.
আমি ওর দিকে না তাকিয়েই বললাম
.
– তার দরকার নেই আমি পারবো
.
– কিন্তু ম্যাম স্যার তো..
.
আমি এবার একটু রেগেই বললাম

– বললাম তো আমি পারব
.
– অ্ আচ্ছা আচ্ছা। রাগছেন কেনো?
.
আমি বেশ বিরক্ত হয়ে হাত ভাজ করে খাটে হেলান দিলাম, আমিও কেমন জানি রুড হয়ে যাচ্ছি। অভ্র হেসে বলল
.
– ম্যাম..
.
– আমি আপনার টিচার নাকি বস যে ম্যাম ম্যাম করে যাচ্ছেন?
.
– বসের বউতো তাই! ( মুখ ছোট করে)
.
আমি কিছু না বলে একটা তাচ্ছিল্যের বাকা হাসি দিলাম, নিজেকেই নিজের কাছে একটা জোকার মনে হচ্ছে। বউ! হাহ! চোখ দুটো আবারো ছলছল করে উঠলো। অভ্র হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পারলো তাই ওর সেই হাসি মুখে গাম্ভীর্য চলে এলো, হাল্কা ইতোস্তত করে বলল
.
– ম্যাম আমার স্যার কিন্তু..
.
– প্লিজ! আপনার স্যারের সম্পর্কে কিছু শোনার ইচ্ছে নেই আমার এখন। আপনার কাজ হয়ে গিয়ে থাকলে আসতে পারেন!
.
– খাবারটা খেয়ে নেবেন কিন্তু… নইলে..
.
আমি চোখ গরম করে তাকাতেই অভ্র একটা কেবলাকান্ত হাসি দিয়ে বলল
.
– কিছু দরকার পরলে ডাকবেন আমি পাশের রুমেই আছি।

বলেই কেটে পরলো। ওর কান্ড দেখলে এখন যে কেউ হেসে দিতো কিন্ত হাসি পাওয়ার মতো মন মানসিকতা আমার নেই এখন তাই উঠে লাগেজটা খুললাম, একপাশে কতগুলো ফুল হাতা, হাফ হাতা শার্ট, গেন্জি আর ঢোলা টাউজার, ওপর পাশে টপস, কুর্তি জিনস, সালওয়ার সুট। কর্ণারে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, সাওয়ারজেল, ফেস ওয়াস, লৌশন, ক্রিম এক কথায় প্রয়োজনীয় সব আছে। আমার মনে হচ্ছে আমি এখানে অতিথী, যার সেবায় 10/12 জন কর্মচারী নিয়োজিত, কিন্তু আমাকে তো এখানে আটকে রেখে দিয়েছে তাও নিজের স্বার্থে এতো দরদ দেখানোর কী দরকার। এসব ভেবে আবারো একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। একে একে সব কাবার্ডে সাজিয়ে রেখে একটা এস কালার ফুল হাতার গেন্জি আর কালো টাওজার নিয়ে ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে চেন্জ করে বেরিয়ে এসে খাটে বসলাম। ফোনটাও নিয়ে গেছে আদ্রিয়ান কিচ্ছু ভালোলাগছে না, এবার ভালোভাবে চারপাশে তাকালাম, বেডটা বেশ বড়, রুমটাও বেশ সুন্দর করে সাজানো বিভিন্ন ফ্রেম আর শোপিছ দিয়ে, সোফা সেট, একটা টেবিল আর বুক সেলফ আছে। রুমের সাথে একটা ব্যালকনিও আছে ধীর পায়ে ব্যালকনিতে গেলাম। রেলিং ধরে চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম যে গার্ডের অভাব নেই পালানোটা এককথায় প্রায় অসম্ভব। রুমে গিয়ে খাবারের প্লেটের দিকে একবার তাকালাম খাওয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই আর ওর খাবার তো একদমি না তাই না খেয়েই চুপচাপ গিয়ে আবারো বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে পরলাম, সারাদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ভেবে নিশব্দে চোখে পানি ফেলতে লাগলাম, কাদতে কাদতে কখন ঘুমিয়ে গেছি নিজেও জানিনা।

ঘুমের মধ্যেই হ্যাচকা টানে কেউ বসিয়ে দিলো আমায়, এমন আচমকা ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেস নেই তারওপর হঠাৎ এভাবে টান মারাতে শরীর থরথর করে কাপছে, বুঝতে পারলাম সকাল হয়ে গেছে, ভালোভাবে চোখ ঝাপটে সামনে তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান রাগী চোখে তাকিয়ে আছে, ভয়ে একটা ঢোক গিললাম আমি আর চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। কেনো এমন করছে ও আমার সাথে ও তো জানে এমন আচমকা ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেস নেই আমার। ও ধমক দিয়ে বললো
.
– খাবার টা খেয়ে ঘুমাও নি কেনো?
.
আমি মাথা নিচু করে ফেললাম, ও দাতে দাত চেপে বলল
.
– কী বলেছিলাম আমি? বেশি তেরিং বেরিং করতে বারণ করিনি? সাহস কী করে হলো আমার কথা না শোনার?
.
ওর একেকটা ধমকে কেপে উঠছি আমি, এই সেই আদ্রিয়ান যে আমি রাগ করে একবেলা না খেলে নিজের হাতে জোর করে খাইয়ে দিতো? ও ধমক দিয়ে বলল
.
– এখন চুপ করে আছো কেনো?
.
এবার ও টি টেবিল থেকে কাল রাতের সেই খাবারের ট্রে থেকে প্লেটটা নিলো, খাবারটা নিঃসন্দেহে নষ্ট হয়ে গেছে হালকা গন্ধও বেরোচ্ছে। ও প্লেটটার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– মনে আছে প্রথম দেখায় কী বলেছিলাম? অপচয় পছন্দ করিনা আমি।
.
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওর দিকে ও আবারো বলল
.
– তাই এবার ব্রেকফাস্ট হিসেবে তুমি এই খাবারটাই খাবে।
.
আমি বেশ অবাক হয়ে তাকালাম ও এগুলো খাওয়াবে আমাকে? যেখানে আজ অবধি বাসি খাবারো খাইনি সেখানে এই নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবারটা খাবো? যদিও ওর দারা অসম্ভব কিছুই না। ও ওই প্লেট থেকে খাবার তুলে আমার মুখের কাছে ধরতেই মুখ ঘুরিয়ে নিলাম আমি, ও আমার গাল চেপে ধরে মুখটা ওর দিকে নিয়ে বলল

– হা করো!
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ আমি খেতে পারবোনা এসব
.
– সেটা খাবারটা নষ্ট করার আগে মনে ছিলোনা?
.
বলেই জোর করে আমার মুখে ঢুকিয়ে দিলো, বাজে সাদ আর টকের কারণে মুখে রাখতে পারলাম না থু থু করে ফেলে দিলাম ওটা। ও আবারো প্লেট থেকে খাবার তুলে জোর করে মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল
.
– এবার ফেললে ঐ ফেলে দেওয়াটাই মুখে ঢুকিয়ে দেবো!
.
আমি আর ফেলার সাহস পেলাম না, প্রচন্ড খারাপ লাগছে, গিলতেও পারছিনা, এরকম জিনিস গলা দিয়ে নামে? মুখে নিয়ে বসে আছি চোখ দিয়ে অনরগল পানি পরছে। যখন বুঝলাম যে না খাইয়ে ও ছাড়বেনা তখন যেই গিলতে যাবো তখনি ও আবার মুখের সামনে প্লেট বারিয়ে দিয়ে বলল
.
– ফেলো!
.
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। ও ধমক দিয়ে বলল
.
– কী হলো ফেলো!!
.
আমি তাড়তাড়ি মুখ থেকে ফেলে দিলাম ও গ্লাসে করে পানি এগিয়ে দিয়ে বলল
.
– কুলকুচি করে নেও!
.
আমিও আর কথা না বাড়িয়ে তাই করলাম। এরপর ও আমার গাল ধরে মাথাটা উচু করে বলল
.
– এরপর থেকে না খেয়ে থাকার আগে অাজকের কথাটা মাথায় রেখো!
.
এমনিতেই হঠাৎ করে টেনে তুলে জাগানোর জন্যে শরীর কাপছে তার ওপর এই ব্যাবহার, সব ঝাপসা লাগছে আমার কাছে। ও কোথাও একটা ফোন করে বলল
.
– রুমে ব্রেকফাস্টটা পাঠিয়ে দাও!

এটুকু বলেই ফোনটা রেখে আমার দিকে তাকালো, আমি এখনো থরথর করে কাপছি মাথাটা ব্যাথা করছে। ও হঠাৎ করেই আমাকে দুই হাত দিয়ে ওর বুকের সাথে খুব শক্ত করে চেপে ধরল। আমি ছাড়িনোর চেষ্টা করতেই ও ধমকে বলল
.
– একটু নড়াচড়া করলে খুব খারাপ হয়ে যাবে!
.
আমি আর কিছু বললাম না এতই শক্ত করে ধরেছে যে দুই মিনিটের মধ্যেই আমার কাপুনি থেমে গেলো, আমার কাপুনি থামতেই ও আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
.
– যাও ফ্রেশ হয়ে এসো!
.
আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। বেরিয়ে এসে দেখি ব্রেকফাস্ট দিয়ে গেছে। আমাকে দেখে বলল
.
– বসো!
.
আমি খাটে গিয়ে বসতেই একটা স্যান্ডউইচ ধরল আমার মুখের সামনে। আমার খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে এবার, এখন তো আর এসব নাটকের কোনো দরকার নেই তাহলে এসব করে কী প্রমাণ করতে চাইছে ও? আমি নিচু কন্ঠে বললাম
.
– আমি নিজেই খেতে পারব
.
– এখন কী আমায় ঐ বাসি খাবারটার মতো করে খাওয়াতে হবে নাকি হা করবে?
.
আমি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি হা করলাম ও ধীরে ধীরে বেশ সময় নিয়ে পুরোটা খাইয়ে দিলো আমাকে। এরপর সার্ভেন্ট ডেকে সব পরিষ্কার করিয়ে নিলো। তারপর খাটে হেলান দিয়ে বসে ফোন টিপতে লাগলো, আমি অবাক হয়ে দেখছি ওকে, একে দেখে মনে হচ্ছে সবকিছুই স্বাভাবিক আছে, এতো কান্ড ঘটিয়ে একটা মানুষ এতোটা স্বাভাবিক কীকরে থাকে? আমি বেশ বিরক্ত হয়ে বললাম
.
– কেনো আটকে রেখেছেন আমাকে?
.
ও ফোনে চোখ রিয়ে ভ্রু কুচকে বলল
.
– আপনি?

– সবাইকে তুমি বলা যায় না, ওই শব্দটা কাছের মানুষদের জন্যে আর কারো কাছের মানুষ হবার যোগ্যতা আপনার নেই।
.
ও কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো এরপর ফোনে চোখ দিয়ে বলল
.
– ওহ। ( একটা নিশ্বাস নিয়ে) হোয়াটএভার তুমি আমাকে তুমি বলো বা আপনি I don’t care!
.
– এবার বলুন আটকে কেনো রেখেছেন?
.
– নিজের স্বার্থে।
.
প্রচন্ড রাগ লাগছে আমার এই বেঈমান স্বার্থপর লোকটাকে কীকরে এতো বিশ্বাস করলাম? কীকরে ভালোবাসলাম?
.
– এতোটা সেলফিস আপনি? কারো ভালোবাসার পাবার অধিকার নেই আপনার! আর কারো বিশ্বাসের তো যোগ্যই না আপনি!
.
এবার এ ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– এতোটা বিশ্বাস না করলেও পারতে।
.
– ভূল করেছি।
.
– হুমম এবার সেই ভূলের মাশুল দেও।
.
– তা আপনার স্বার্থসিদ্ধি কবে হবে? আমি মরার পর?( ছলছলে চোখে কান্নাজরিত কন্ঠে)
.
ও আবার ফোনে চোখ রেখেই একটু হেসে বললো
.
– উমহুম আমি মরার পর।

আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওর দিকে ও ফোন থেকে চোখ না সরিয়েই বলল
.
– এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমার কথা এতো সিরিয়াসলি নেবার কিছু নেই!
.
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম
.
– বাড়িতে সবাই খুজছে না আমাকে?
.
– খুজছেতো! ইনফ্যাক্ট আমিও খুজছি, আমিতো তোমাকেই খুজতে বেরিয়েছি।
.
এটুকু বলে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলল
.
– সবাই এটাই জানে আরকি!
.
– সবার বিশ্বাস এভাবে ভাঙতে কষ্ট হচ্ছেনা আপনার? একবারো ভাবছেননা আপনার পরিবার, বন্ধুরা ওরা যখন এসব জানবে তখন ওরা কী করবে?
.
ও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আরো একবার ফোনে চোখ দিয়ে বলল
.
– কী আর করবে তোমার মতোই আমাকে স্বার্থপর বলবে, ঘৃণাও করবে হয়তো!
.
– এটা বলাকি স্বাভাবিক না?
.
ও আগের মতো একই ভঙ্গিতে বলল
.
– হ্যা! একদম স্বাভাবিক!
.
আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম। একটা মানুষ এতোটা খারাপ কীকরে হতে পারে? কারো বিশ্বাসের দাম দিতে জানেনা ও। ও হঠাৎ করেই উঠে গিয়ে সোফায় বসল ল্যাপটপ নিয়ে। বেশ ঘন্টা খানেকের মতো একমনে কাজ করলো। এরপর হঠাৎ কোথাও একটা ফোন করে কাউকে করে বলল
.
– কবে আসছো তোমরা?
– ….
– আজকেই? (অবাক হয়ে দাড়িয়ে গিয়ে)
– ….
– অব্ নো। কতোক্ষণ লাগবে আসতে?
– ….
– ওকেহ!

ফোনটা কেটেই আছাড় মারলো সোফার ওপর। দাত দিয়ে নিজের ঠোট কামড়ে ধরে ডায়ে বায়ে তাকালো। এরপর চুলগুলো নাড়তে নাড়তে সারা রুমে পায়চারী করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর কোমরে দুই হাত দিয়ে দাড়িয়ে গেলো, জিব দিয়ে ঠোট টা ভিজিয়ে উপরে তাকিয়ে একটা শ্বাস নিলো, তারপর সোফায় বসে মাথা থেকে ঘার পর্যন্ত দুই হাত দিয়ে একবার বুলিয়ে হালকা ঝুকে মাথাটা চেপে ধরল। আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি ওর দিকে হঠাৎ কী হলো? ও ওভাবেই কিছুক্ষণ বসে থেকে হঠাৎ কিছু একটা ভেবে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গিয়ে ফোনটা তুলল তারপর কাউকে ফোন করে আসতে বলল। কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজায় নক পরলো। আদ্রিয়ান বলল
.
– এসো!
.
সাথে সাথেই অভ্র ভেতরে এসে কিছু বলবে তার আগেই আদ্রিয়ান বলল
.
– উকিল আর কাজী দুটোই হাজির করো ইন ওয়ান আওয়ার! কেনো সেটাও নিশ্চই বলতে হবে না?
.
– স্যার আজকেই?
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকাতেই অভ্র হকচকিয়ে বলল
.
– ও্ ওকে স্যার।
.
– পেপারস সব রেডি থাকে জেনো!
.
– হুম..!
.
বলেই একপলক আমার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো অভ্র। আমি তো অবাক উকিল যেকোন কাজেই আনতে পারে কিন্তু কাজী কেনো? আমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে আদ্রিয়ান বলল
.
– যাও গিয়ে একটা সালওয়ার সুট পরে নাও
.
আমি তো মহা অবাক আমি কেনো এখন সালওয়ার সুট পড়তে যাবো আজব? আমি ভ্রু কুচকে বললাম
.
– কেনো?

– যা বলছি চুপচাপ তাই করো, এক্সট্রা কথা বলবে না একদম!
.
– আমি পরতে পারবোনা এখন এসব!
.
– তুমি নিজে পরবে নাকি আমি পরিয়ে দেবো? ( ধমকে )
.
আমি বেশ ভয় পেয়ে গেলাম ওর কথায় আমি জানি ওর দ্বারা কিছুই অসম্ভব নয়! তাই উঠে গিয়ে কাবার্ড খুলতেই ও বলল
.
– লালটা পরো!
.
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওর দিকে কিন্তু কিছু বললাম না চুপচাপ লাল একটা থ্রিপিচ পরে বেরিয়ে এলাম। বেরোতেই আদ্রিয়ান আমাকে আগা গোড়া স্কান করে হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দিলো, তারপর একটা বক্স খুলল, বক্সটার ভেতরে কিছু হালকা গহনা রাখা হয়তো স্বর্ণের। একটা পাতলা চেইন লকেট সহ, একজোরা কানের দুল, চারটা চিকন চুরি। আমি অবাক হয়ে বললাম
.
– এসব কী আদ্রিয়ান?
.
আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে একে একে সব পরিয়ে দিলো আমায়। বাধা দিতে গিয়েছিলাম কিন্তু এক ধমকে চুপ করিয়ে দিয়েছে। সব পরিয়ে ওরনাটা মাথায় দিয়ে বলল, একবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– পার্ফেক্ট
.
আমি বেশ রেগে বললাম
.
– এখন আবার কোন নতুন ড্রামা শুরু করলেন আপনি?
.
ও আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয় বলল
.
– চুপচাপ এখানেই বসে থাকো, আমি আসার আগে নড়বেনা এখান থেকে তাহলে খুব খারাপ হবে তাহলে!

বলেই চলে গেলো। কী করতে চাইছে ও আমি যেটা চাইছি সেটাই যদি হয় তাহলে তো! প্রায় বিশ মিনিট পর ও এলো একটা সাদা পান্জাবী আর কালো জিন্স পরে মাথায় সাদা টুপিও আছে।ওকে এইভাবে দেখে আমি অবাক, এসেই আমার হাত ধরে বলল
.
– চলো!
.
যদিও কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি তবুও বললাম
.
– ক্ কোথায়?
.
– বিয়ে হবে এখন আমাদের! ( স্পষ্ট জবাব)
.
– পাগল হয়ে গেছেন আপনি? বিয়ে করবো আমি তাও আপনাকে?
.
ও বাকা হেসে বলল
.
– এতো অবাক হওয়ার কী আছে? বিয়ে আমাদর ঠিক হয়েই ছিলো, তুমিও রাজী ছিলে
.
ওর অঙ্গুলে আমার পরানো আংটি দেখিয়ে বলল
.
– এটাই তার প্রমাণ!
.
– হ্যা হয়েছিলাম কারণ তখন আপনার মুখশের আড়ালের এই হিংস্র দানব কে দেখেনি তাই
.
– আমি হিংস্র দানব? ( শান্ত গলায়)
.
– তার চেয়েও খারাপ। আর তাই আপনাকে বিয়ে করার কোনো প্রশ্নেই ওঠেনা।
.
– বেশি কথা না বলে যা বলছি তাই করো।
.
– বললাম তো আপনাকে বিয়ে করা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। যা খুশি করুন!
.
ও আমাকে হাত ধরে ওর দিকে ঘুরিয়ে বলল

– এর পরিণাম কী হতে পারে জানো?
.
আমি হাত ঝাড়া দিয়ে কাদতে কাদতে বললাম
.
– কী করবেন আপনি? মেরে ফেলবেন আমাকে? ফেলুন না, এমনিতে তো মেরেই ফেলেছেন আমার মনটাকে, শরীরটাকে আর বাচিয়ে কেনো রাখবেন? এটাকেও মেরে ফেলুন!
.
ও আমার গাল ধরে বলল
.
– যদি তোমাকে মারার হতো অনেক আগেই মেরে ফেলতাম এতোক্ষণ বাচিয়ে রাখতাম না।
.
এরপর ও আমার গাল ছেড়ে ওর কপালে স্লাইড করতে করতে বলল
.
– কিন্তু সুইটহার্ট এখন তোমার হোল ফ্যামিলি তোমার বাড়িতেই আছে রাইট? এখন ধরো যদি তোমাদের বাড়িতে একটা বিশাল ব্লাস্ট হয় তাহলে কেমন হবে?
.
আমার পিলে চমকে উঠলো, কাপাকাপা গলায় বললাম
.
– মান্ নে
.
– তুমি এতোটাও বোকানা যে মানে টা বুঝতে পারছোনা।
.
আমি অবাক হয়ে দেখছি ওকে, কীকরে একটা মানুষ এতো নিচ হতে পারে? আমার পরিবারকে শেষ করার কথা ভাবছে ও? আমি কাপা গলাতেই বললাম
.
– আপনি এমন কিচ্ছু করবেন না?
.
– তুমি আমার কথা না শুনলে আমি এটা করতে বাধ্য হবো! ইউ নো আমি খুব সেলফিস! নিজের স্বার্থের জন্যে সব করতে পারি। আধ ঘন্টার মধ্যেই সব শেষ করে দিতে পারি আমি। জাস্ট একটা কল করতে হবে আমাকে।
.
ওর কথা শুনে চোখ নিয়ে অনবরত পানি পরছে আমার, আমি কাদতে কাদতে বললাম

– আদ্রিয়ান ওরা সবাই খুব ভালোবাসে তোমাকে। আমার মা তোমাকে আর কাব্যকে কোনোদিন আলাদা চোখে দেখেনি, আর বাকিরাও আদ্রিয়ান বলতে পাগল,ওহির অন্তর কথা ভাবো ওরাতো বাচ্চা!
.
ও আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল
.
– বাহ আবার তুমিতে চলে এসছো? যাই হোক আমি জানি সেটা! কিন্তু কী বলোতো তুমি যদি আমার কথা মতো না চলো এসব ভূলতে আমার এক মিনিট লাগবেনা। সো আমি কল করব নাকি..
.
আমি এবার ওর সামনে হাত জোর করে বললাম
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ! ওরাতো কিছুই করেনি, ফাইলটা তো আমি নিয়েছিলাম, যা ক্ষতি করার আমি করেছি তাই যা করার আমার সাথে করুন কিন্তু ওদের ছেড়ে দিন প্লিজ! আমার জন্যে ওদের কিছু হয়ে গেলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না আমি।
.
ও আমার হাত নামিয়ে বললো
.
– তো তুমি বিয়েতে রাজি?
.
আমি এবার অসহায় ভাবে তাকালাম ওর দিকে। তারপর ধীরে ধীরে সোফা ধরে বসে পরলাম। আমাকে কিছু বলতে না দেখে বললো
.
– ওকে ফাইন তাহলে আমি..
.
ও ফোন তুলতেই আমি বলে উঠলাম
.
– আমি রাজি…
.
এটা শুনে ও মুচকি হেসে বলল
.
– that like my lady…
.
এরপর আমাকে দাড় করিয়ে দিলো আমি কান্নাজরিত কন্ঠে বললাম
.
– ওদের কিছু…

– কাম অন! ওদের ক্ষতি করে আমার কী লাভ? কিন্তু ওরা ততোক্ষণি সেভ থাকবে যতক্ষণ তুমি আমার কথা শুনবে।
.
বলেই ও আমাকে কিছুই বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগল। যেতে যেতেই আমি বললাম
.
– কেনো বিয়ে করছেন আমাকে? আবার কী গেইম খেলতে চাইছেন আমার সাথে আপনি?
.
ও পেছনে ঘুরে বাকা হেসে বলল
.
– আমি গেইম খেলি না। গেইম এর নিয়ম তৈরী করি আর সবাই সেই অনুযায়ী খেলতে থাকে।
.
বলেই আমায় নিচে নিয়ে গেলো নিচে গিয়ে দেখলাম সোফায় কাজী, উকিল, বসে আছে পাশে অভ্র দাড়িয়ে আছে, আর কিছু লোক। আমাকে নিয়ে এগোতে নিলেই আমি দাড়ায়ে গেলাম আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে পেছনে তাকাতেই বললাম
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ এভাবে..
.
কিন্তু ও আমার কথা শেষ করতে দিয়েই টেনে নিয়ে গিয়ে গেলো, যারা বসা ছিলো তারা দাড়িয়ে গেলো, আমায়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে নিজেও আমার পাশে পায়ের ওপর পা তুলে বসতেই বাকিরা বসে পরল। উকিলের দিকে তাকাতেই উকিল তাড়াতাড়ি পেপার বের করে আদ্রিয়ান এর সামনে ধরল, আদ্রিয়ান হাত বাড়াতেই একটা পেন নিয়ে দিলো ওর হাতে, ও পেপারে একবার চোখ বুলিয়ে সাইন করে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
.
– সাইন করো!
.
আমি করুন চোখে ওর দিকে তাকালাম, কিন্তু ওর চোখের দৃষ্টি কঠোর ওকে কিছু বলে লাভ হবেনা তাই বাধ্য হয়ে সাইন করে দিলাম। চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে আমার এখন। অভ্র হেসে বলল
.
– কনগ্রাচুলেশন স্যার আজ থেকে আইনত আপনি ম্যারিড।
.
আদ্রিয়ান বাকা হেসে এবার কাজী সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– এবার ধর্মীয় ভাবেও বিয়ে সম্পূর্ণ করে দিন!

এরপর ধর্মীয়ভাবেও বিয়ে হয়ে গেলো আমাদের। আদ্রিয়ান বেশ কয়েকবার ধমক দিলেও একমুহূর্তের জন্যেও কান্না থামিয়ে রাখতে পারিনি আমি,আজ আমার সাথে সেটাই হলো যেটা কল্পনাও করিনি আমি, নিজের বাবা মা পরিবার সকলকে ছেড়ে বিয়ে করতে হলো আমাকে, এই দিনটা নিয়ে কতো স্বপ্ন ছিলো আমার আর সেই স্বপ্নের প্রতিটা মুহূর্ত তোমাকে ঘিরেই ছিলো আদ্রিয়ান। কিন্তু তুমি নিজের হাতে সব শেষ করে দিলে। ‘কবুল’ শব্দটা বলার সময় বুক ফেটে কান্না আসছিলো। হ্যা আজ থেকে আমিও বিবাহিত, তাও সেই আমার স্বামী যাকে আমি ভালোবাসি, জীবনের প্রতিটা সপ্ন যাকে নিয়ে সাজিয়েছি। কিন্তু অবাক করা বিষয় এটাই যে আমি তবুও খুশি নই, কারণ ও আমাকে শুধু নিজের স্বার্থের জন্যেই বিয়ে করেছে আর আব্বুকে কী জবাব দেবো আমি? কীভাবে দাড়বো ওনার সামনে? সবকিছু বিষের মতো লাগছে আজ। এমন কেনো করলে আদ্রিয়ান? কোনোদিন ক্ষমা করবোনা আমি তোমাকে..

এরপর ধর্মীয়ভাবেও বিয়ে হয়ে গেলো আমাদের। আদ্রিয়ান বেশ কয়েকবার ধমক দিলেও একমুহূর্তের জন্যেও কান্না থামিয়ে রাখতে পারিনি আমি,আজ আমার সাথে সেটাই হলো যেটা কল্পনাও করিনি আমি, নিজের বাবা মা পরিবার সকলকে ছেড়ে বিয়ে করতে হলো আমাকে, এই দিনটা নিয়ে কতো স্বপ্ন ছিলো আমার আর সেই স্বপ্নের প্রতিটা মুহূর্ত তোমাকে ঘিরেই ছিলো আদ্রিয়ান। কিন্তু তুমি নিজের হাতে সব শেষ করে দিলে। ‘কবুল’ শব্দটা বলার সময় বুক ফেটে কান্না আসছিলো। হ্যা আজ থেকে আমিও বিবাহিত, তাও সেই আমার স্বামী যাকে আমি ভালোবাসি, জীবনের প্রতিটা সপ্ন যাকে নিয়ে সাজিয়েছি। কিন্তু অবাক করা বিষয় এটাই যে আমি তবুও খুশি নই, কারণ ও আমাকে শুধু নিজের স্বার্থের জন্যেই বিয়ে করেছে আর আব্বুকে কী জবাব দেবো আমি? কীভাবে দাড়বো ওনার সামনে? সবকিছু বিষের মতো লাগছে আজ। এমন কেনো করলে আদ্রিয়ান? কোনোদিন ক্ষমা করবোনা আমি তোমাকে

একে একে সবাই আদ্রিয়ানকে কনগ্রাচুলেট করে চলে গেলো, অভ্র দাড়িয়ে আছে, আমি সুধু নিচের দিকে তাকিয়ে কেদেই চলেছি, সবাই চলে যেতেই আদ্রিয়ান বেশ জোরে একটা ধমক দিলো, কেপে উঠলাম আমি, কিন্তু কান্না থামার পরিবর্তে বেরে গেলো ও এবার প্রচন্ড রেগে বলল
.
– আরেকটা আওয়াজ হলে একটা থাপ্পড় মারবো!
.
আমি মাথা নিচু করে ঠোট চেপে বসে আছি। আদ্রিয়ান হঠাৎই আমাকে কোলে তুলে নিলো, আমি হকচকিয়ে গেলাম, অভ্রর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও মুখ টিপে হাসছে, তারপর সিড়ি দিয়ে ওপরে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিলো, নিচের দিকে তাকিয়ে আছি, আমার সামনে বসে বলল
.
– সো আজ থেকে আপনি মিসেস অনিমা আবরার জুহায়ের।
.
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা গলায় বললাম
.
– এটা করার খুব দরকার ছিলো?
.
– দরকার ছাড়া কিছু করিনা আমি।
.
আমি আর কিছু বললাম না, খাটে হেলান দিলাম, আদ্রিয়ান ও কিছু বললোনা পান্জবীটা খুলে আমার সাইড দিয়ে শুয়ে পরল বেশকিছুক্ষণ পর ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও ঘুমোচ্ছে। আমি তাকিয়ে আছি ওর মুখের দিকে, ঘুমন্ত অবস্হায় ওকে অনেক কিউট লাগে, ওর এই মুখ দেখলে কেউ বুঝতেই পারবেনা ছেলেটার পক্ষে এরকম কাজ করা সম্ভব, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এখন ও আমার স্বামী, এই দিনটার জন্যেই তো অপেক্ষা করেছি অামি কিন্তু সেটাযে এভাবে হবে কল্পনাও করতে পারিনি। আমি উঠে গিয়ে চেন্জ করে নিলাম, গায়ের গয়নাগুলো খুলতে গিয়ে হাতের বেসলেট টার দিকে চোখ গেলো, একটা মিথ্যে কনফেশন এর ওপর ভিত্তি করে পরে আছি এটা? কী লাভ রেখে খুলে ফেলতে গিয়েও কেনো যেনো খুলতে পারলাম না। এসে সোফায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরলাম কারণ বেডে আদ্রিয়ান আছে ওর ধারেকাছে যেতে চাইনা আমি। আর আজকে যেটা হলো সেটা ভেবে আবারো কান্না চলে এলো, কাদতে কাদতে কখন ঘুমিয়ে গেছি জানিনা।

ঘুম থেকে উঠে দেখি আদ্রিয়ান খাটে হেলান দিয়ে পায়ের ওপর পা রেখে কোলের ওপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করছে, আমি চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসলাম। কিছুক্ষণ পর ও সোফায় তাকিয়ে দেখে আমি বসে আছি। ও ভ্রু কুচকে আবারো ল্যাপটপে তাকিয়ে বলল
.
– ঘুমিয়ে ছিলে খুব ভালো কথা কিন্তু বেডে কী জায়গা কম পরেছিলো?
.
– কী করে শোবো আপনি শুয়ে ছিলেন আর আপনার পাশে শুতে পারবোনা আমি।
.
ও এবার ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে বাকা হেসে বলল
.
– এর আগে আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমাওনি মনে হয়? তখন তো এনগেইজড ছিলাম, আর এখনতো আমরা ম্যারিড, শুধু এক বিছানায় ঘুমোনো কেনো আরো অনেক কিছুই করতে পারি।
.
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ওর দিকে, ও ল্যাপটপ রেখে এগিয়ে এলো আমার দিকে আমি সোফা সাথে লেগে বসলাম। ও আস্তে আস্তে আমার কাছে এসে আমার দুপাশে হাত রেখে বলল
.
– হাত মুখ ধুয়ে নিচে এসো, লান্চ করব!
.
বলেই চলে গেলো ও, আমি হাত মুখ ধুয়ে নিচে যেতেই দেখি অভ্র আর আদ্রিয়ান ডাইনিং এ একে ওপরের অপজিটে বসে কথা বলছে, আমি গিয়ে দাড়তেই আদ্রিয়ান ওর পাশের চেয়ার টা টেনে দিলো আমিও চুপচাপ বসে পরলাম কারণ ওখানে না বসলে না জানি আবার কী করবে? একটা মেয়ে এসে তিনজনকেই খাবারটা সার্ভ করে দিলো। আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে খাচ্ছি। অাদ্রিয়ান খেতে খেতে বলল

– চুল কাটছো না কেনো অভ্র?
.
এটা শুনে আমি খাওয়া ছেড়ে ভ্রু কুচকে একবার আদ্রিয়ান একবার অভ্রর দিকে তাকালাম। অভ্র হকচকিয়ে বলল
.
– ইয়ে আসলে স্যার…
.
– গার্লফ্রেন্ডের চয়েজ? ( ভাবলেশহীন ভাবে খেতে খেতে)
.
– নাহ স্যার আসলে সময় পাই না স্যালুনে যাবার। ( মাথা নিচু করে)
.
– কাম অন অভ্র এক্সকিউস দেবার আগে ভেবে দেখো যে কার সামনে দিচ্ছো
.
– স্যার আজ আর কোথাও যাবেন? ( কথা ঘুরিয়ে)
.
আমি আবারো খাওয়ায় মনোযোগ দিলাম। আর আদ্রিয়ান বলল
.
– বিকেলে বেরোবো। বাট তোমাকে যেতে হবেনা আমার সাথে। সো ঐ সময়ে তোমার কোনো পার্সোনাল কাজ থাকলে করে নিও!
.
– আমার পার্সোনাল কাজ তো একটাই সুযোগ পেলেই ঘুমমম! ( দাত কেলিয়ে)
.
এটা শুনে আদ্রিয়ান মাথা তুলে একবার অভ্রের দিকে আরেকবার আমার দিকে তাকিয়ে ঠোট কামড়ে হেসে আবার খাওয়ার কনসিনট্রেট করলো। আমি ভাবছি যে হাসলো কেনো? পরক্ষণেই মনে পরল যে আমিও এরকম তাই ভ্রু কুচকালাম এতে হাসার কী হলো? হুহ!

আমি খাটে পা ঝুলিয়ে বসে আছি আর আদ্রিয়ান সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে, বেশ অসহ্য লাগছে আমার কাছে এভাবে আটকে রাখার কোনো মানেই হয়না! ওর মনে কী চলছে তাও বুঝতে পারছিনা, আমাকে বিয়ে কেনো করল? কী লাভ হবে এতে ওর? কিচ্ছু মাথায় ঢুকছেনা কী হচ্ছে আমার সাথে, আর ভবিষ্যতে কী হবে তাও জানিনা। আদ্রিয়ান আর আমার আথে কোনো কথা বলেনি ল্যাপটপের মধ্যেই মুখ গুজে বসে ছিলো। ওকে দেখে মনেই হয়না যে ও এতো কান্ড ঘটিয়েছে একদম স্বাভাবিক হয়ে বসে আছে। বিকেল চারটার দিকে ল্যাপটপ থেকে মুখ তুলে বলল
.
– রেডি হও বেরোতে হবে তোমাকে নিয়ে
.
– কোথায়? ( ভ্রু কুচকে)
.
– উত্তর দিতে ইচ্ছুক নই। চুপচাপ রেডি হয়ে এসো, জাস্ট চেন্জ করবে সাজার দরকার নেই।
.
– সাজার কোনো ইচ্ছেও নেই!
.
বলেই বিরক্ত হয়ে চেন্জ করে চুলটায় একটা ঝুটি করে নিলাম। ও এসে আগা গোড়া স্কান করে হাত ধরে হাটা দিলো। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সেটা জানতে ইচ্ছে করছে কিন্তু ও যেটা বলার, না জিজ্ঞেস করলেও বলবে আর যেটা না বলার সেটা চেচিয়ে মরে গেলেও বলবেনা, তাই জিজ্ঞেস না করাটাই ভালো। ও আমাকে গাড়িতে বসিয়ে আমার পাশে বসলো তারপর ড্রাইভার কে গাড়ি স্টার্ট করতে বলল। কোথায় যাচ্ছি আর কোথায় আছি কিছুই বুঝতে পারছিনা। এবার ও বলল
.
– মেন্টালি প্রিপারেশন নাও।
.
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম ও ফোন টিপতে টিপতে বলল
.
– আজ তুমি আবার তাদের মুখোমুখি হতে চলেছো যাদের মুখোমুখী তুমি তিন বছর আগেও হয়েছো!
.
আতকে উঠলাম আমি, শরীর ঘামছে আমার। ও আবারো বলল
.
– ফিজিক্যালি তুমি খুব স্ট্রং আমি জানি, তীব্র আঘাত সহ্য করেও মুখ বন্ধ রাখতে জানো, বাট মেনটালিও স্ট্রং হবার চেষ্টা করো। কথায় কথায় কাদবে না লোকে দূর্বল ভাববে তোমাকে। আর দূর্বলদের সবাই আঘাত করতে চায়।
.
আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম
.
– শত্রুপক্ষকে যুদ্ধনীতি শেখাচ্ছেন?
.
ও একটা রহস্যময় হাসি দিলো তারপর বলল
.
– আসলে কী বলোতো শত্রু বরাবর না হলে যুদ্ধ করে মজা পাওয়া যায় না।
.
– ওদের কাছেই রেখে আসবেন আমাকে?
.
– দেখি কী করতে পারি।

আমি আর কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। না জানি আজ অাবার কী হবে আমার সাথে। খুব ভয় লাগছে। বেশ কিছুক্ষণ পর একটা জায়গায় গাড়ি থামলো, আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো আমি ভালোকরে চারপাশে তাকালাম ফাকা একটা বিল্ডিং দেয়ালগুলো ধসা ধসা, জায়গায় জায়গায় কালো পোশাক আর মুখোশ পড়া লোক দাড়িয়ে আছে, সিড়ি দিয়ে উপরে নিয়ে গিয়ে একটা রুমে নিয়ে গেলো, সেখানে গিয়ে সামনে তাকিয়ে আমার পা থেমে গেলো শরীর কাপতে লাগল, ঠিক সেই ভাবেই মুখোশ পরে সেই তিনজন দাড়িয়ে আছে, এদেরকে আমি চাইলেও ভূলতে পারবোনা। আদ্রিয়ান হাত ধরে টান দিতেই দেখলো আমি শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছি ভয়ে হাত পা কাপছে আমার। ওদের মধ্যে একজন বলল
.
– আরেহ বাহ! পিচ্ছিতো বড় হয়ে গেছে?
.
আমি গুটিসুটি মেরে দাড়িয়ে আছি। আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে টেনে ওদের সামনে রাখা একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিজেও আমার সামনে দাড়ালো। পাশের জন আদ্রিয়ানের কাধে হাত রেখে বলল
.
– তুমি ঠিকি বলেছিলে যেটা জোর করে করা যায় না সেটা ভালোবাসা দিয়ে করা যায়। ঠিকিই প্রেমের জালে ফাসিয়ে নিজের হাতে নিয়ে এসছো ওকে!
.
আদ্রিয়ান বাকা হেসে বলল
.
– আমি সবসময় ঠিকি বলি।
.
আমি আহত দৃষ্টিতে তাকালাম ওর দিকে, প্রেমের জালে ফাসিয়েছে আমাকে? চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই জল গড়িয়ে পরল।
.
আদ্রিয়ান হেসে বলল
.
– এবার মুখোশটা খুলেই ফেলো এখন আর এসব পরে থাকার দরকার নেই ও আর কারো সামনে যেতে পারবেনা
.
সবাই একটানে মুখশটা খুলে ফেললো, এদের দেখে আমি শকড, তিনজনেই ইয়াং বয়স 25-30 এর মধ্যেই হবে, দেখতেও খারাপ না, যদিও শুনেছি এইগুলো ম্যাক্সিমাম ইয়াং রাই করে। ওদের মধ্যে একজন বলল
.
– তবে আদ্রিয়ান মানতে হবে বস যে তুমি বিশাল বড় মাপের অভিনেতা।

এটা শুনে আদ্রিয়ান আবার সেই রহস্যময় হাসি দিলো। আরেকজন এবার আমার সামনে এসে বলল
.
– এবার কী বলবে যে ফাইলটা কোথায় আছে নাকি তিন বছর আগের সেই ট্রিটমেন্ট শুরু করব?
.
আমি ঠান্ডা গলায় বললাম
.
– আমি আগেও বলেছি আর এখোনো বলছি আমি জানিনা!
.
লোকটা হেসে আদ্রিয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলল
.
– এই মেয়েতো আজও সেই একি গান গাইছে এবার তুমিই দেখো।
.
আদ্রিয়ান ওদের সরিয়ে একটা চেয়ার টেনে আমার সামনে বসল আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। ও আমার থুতনি ধরে উচু করে বলল
.
– তোমার এখোনো মনে হয় যে বলা ছাড়া তোমার আর কোনো অপশন আছে?
.
– আমি বললাম তো হারিয়ে ফেলেছি ফাইলটা।
.
– তুমি ভূলে গেছো সুইটহার্ট যে তুমি বলে দিয়েছো আমাকে যে ফাইলটা তোমার কাছে আছে!
.
আমি চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলাম। ভুলেই গেছিলাম যে ওকে সবটাই বলেছি শুধু ফাইলটা কোথায় আছে সেটাই বলিনি। দাড়িয়ে থাকা লোকগুলোর মধ্যে একজন বলল
.
– ভদ্রভাষায় বললে ও বুঝবেনা ওকে এবার আমাদের স্টাইলেই বোঝাতে হবে
.
আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলল
.
– কীহ ঠিক বলছে? আমাদের স্টাইলে বোঝাবো?
.
আমি কান্নাজরিত চোখে তাকালাম ওর দিকে। আদ্রিয়ান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে দাড়িয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল
.
– তবে রিক একটা ব্লান্ডার হয়ে গেছে।
.
ওদের মধ্যে একজন হয়তো রিক বললো
.
– কী ব্লান্ডার?
.
– আমার আর ওর বিয়ে হয়ে গেছে!
.
– হোয়াট! বাট ক্ কীকরে হলো?
.
– দুদিন আগে ওর বড় বোনের বিয়ে ছিলো, তো সেদিনি ওর বাবা ইমোশনাল ড্রামা করে আমাদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। উনার শাশুরী মানে ওর নানু নাকি আমাদের বিয়ে দেখে মরতে চান। যতোসব মেলোড্রামা।
.
আরেকজন রেগে বলল
.
– ওরা বলল আর তুমি বিয়ে করে নিলে?
.
– কাম অন দ্বীপ। কী করতাম আমি নাটকটা তো চালিয়ে যেতে হতো!

আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি আদ্রিয়ানের দিকে কী বলছে ও এসব? আমাদের বিয়েতো হলো আজ সকালে, আর আমার আব্বু কখন ওকে আমায় বিয়ে করার জন্যে রিকোয়েস্ট করলো? আর নানু ই বা ওসব কবে বলল? উল্টে ও আমায় ব্লাকমেইল করে জোর করে বিয়ে করেছে। কিন্তু এভাবে ওদের মিথ্যে কেনো বলছে? কী করতে চাইছে ও?
.
রিক: তো এখন কী করতে বলছো?
.
আদ্রিয়ান: খুব সিম্পল! প্লানে একটু চেইন্জ আনতে হবে।
.
দ্বীপ: কী চেইন্জ?
.
আদ্রিয়ান চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসে নখ দেখতে দেখতে বলল
.
– ফাইলটা হাতে পাওয়ার পর অনিমা কে মেরে ফেলার যে প্লান টা ছিলো সেটা ক্যান্সেল।
.
দ্বীপ: কী বলছো বাচিয়ে রাখবো ওকে?
.
আদ্রিয়ান: রাখতে হবে আফটার অল আমার একমাত্র বউ!
.
তৃতীয়জন: কিন্তু ও তো কোডটা জানে ওকে কীকরে বাচিয়ে রাখি?
.
আদ্রিয়ান: আমারো অতো শখ ছিলোনা ওকে বাচিয়ে রাখার ! কিন্তু ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে হয়েছে আমাদের তাই ও আমার বউ। কোড রেজেস্ট্রি হলেও ওতো ভাবতাম না। যাই হোক কোট টা যাতে ও কাউকে না বলতে পারে সেই দায়িত্ব আমার। বাট ওকে কোনো মতেই মেরে ফেলা যাবে না। Do you Understand Joy?
.
জয়: হুম
.
রিক: তুমি যখন দ্বায়িত্ব নিচ্ছো তখন ঠিক আছে।
.
আদ্রিয়ান: আসলে কী বলোতো? ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে একটা টান তৈরী হয়ে গেছে। আর তাছাড়াও সারাজীবন তো আর সিঙ্গেল থাকবো না? বউ যখন ফ্রি তে পেয়েই গেছি তখন আর কী লাগে? আর তাছাড়াও ওকে কীকরে কন্ট্রোলে রাখতে হয় I know as very well তাই না সুইটহার্ট?

বলেই আমার চুলগুলো গুজে দিলো। এতোক্ষণ ওর বলা কথাগুলো আমি স্তব্ধ হয়ে শুনছিলাম। আজ ঘৃণা হচ্ছে আমার ওর চেয়ে বেশি নিজের ওপর যে এই লোকটাকে ভালোবেসেছিলাম আমি?
.
রিক: আগে ওর কাছ থেকে ফাইলটা নেয়া যাক
.
বলেই আমার সামনে এসে বলল
.
– ফাইলটা কোথায় আছে ক্লিয়ারলি বলে দাও!
.
আমি চুপ করে বসে চোখের পানি ফেলছি আদ্রিয়ানের বলা কথা গুলো বুকে ছুড়ির মতো বিধেছে আমার এখন আর কিছু ভাবা বা বলার মতো অবস্হায় আমি নেই। আমাকে চুপ থাকতে দেখে রিক বলল
.
– এতো এমনিতে শুনছেই না? তাহলে অন্য ব্যাবস্হা করতেই হয়।
.
এটা বলার সাথেসাথেই আদ্রিয়ান বলল
.
– তোমরা কী বোকা? যে মেয়ে 15 বছর বয়সে ঐ টর্চারের পরেও মুখ খোলেনি তাকে এখন ফিসিকালি টর্চার করলে বলবে?
.
জয়: তাহলে কী করতে হবে?
.
আদ্রিয়ান এবার আমার সামনে এসে গাল চেপে ধরে বলল
.
– দেখো শুধু শুধুই আমাদের ঘাটাচ্ছো! ভালোভাবে বলে দাও ফাইলটা কোথায় আছে?
.
– আমি জানিনা মানে জানিনা ! আর শেষ অবধি আমি এটাই বলবো। ( কাদতে কাদতে)
.
ও গাল ঝাড়া দিয়ে বললো
.
– জীবনেও ভালো কথায় শুনলেনা।
.
এটুকু বলে কাউকে চিৎকার করে ডাকলো, একটা লোক আসতেই বললো
.
– সিরিন্জ টা নিয়ে আয়!
.
আতকে উঠলাম আমি আজকেও ইনজেকশন দেবে আমাকে? ওটা দিলেতো আমার খুব কষ্ট হয় শরীর দুর্বল হয়ে আসে।
.
রিক: কিন্তু এটা তো আরো আগেও দুবার দিয়েছো ও তো ডোস টা সহ্য করতে পারেনা সেন্সলেস হয়ে যায় নাকি?
.
আদ্রিয়ান: দেখি আজ পারে কী না!

কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা ইনজেকশন সিরিন্জ নিয়ে এলো আদ্রিয়ান ওটা হাতে নিয়ে আমার সামনে বসল। ওটা দেখেই আমার গলা শুকিয়ে গেছে ভয়ে হাত পা কাপতে লাগল। আমি চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে গেলাম। আদ্রিয়ান ওটা হাতে নিয়েই বললো
.
– কাছে এসো!
.
কিন্তু আমি আরো বেশি পেছাতে লাগলাম কিন্তু বেশিক্ষণ সেটা পরলাম না দেয়ালে আটকে গেলাম। ও বাকা হেসে বলল
.
– শুধু শুধুই এনার্জি লস করো তুমি!
.
আমি আদ্রিয়ানের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বললাম
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ এসব করোনা আমি আর পারছিনা এসব সহ্য করতে।
.
– এসব করতে কে চায় বলোতো? তুমি ভালোয় ভালোয় বলে দিলেই তো হয়?
.
বলেই আমার হাত টেনে ওর দিকে নিয়ে গেলো। আমি এবার শব্দ করে কেদে দিলাম। কাদতে কাদতে বললাম
.
– আদ্রিয়ান প্লিজ!
.
– সরি বেবি আ’ম হেল্পলেস!
.
এটুকু বলেই ইনজেকশন টা পুশ করে দিলো আমার হাতে। যন্ত্রণায় এবারো আমার মুখ দিয়ে আর্তনাথ বেরিয়ে এলো। আমি দেয়াল ঘেষেই নিচে বসে পরলাম। আদ্রিয়ানও একহাটু ভেঙ্গে আমার সামনে বসে আমার ঘারের পেছনে হাত রেখে চুল টেনে ধরে বলল
.
– বলো ফাইলটা কী করেছো
.
আমি ঠোট কামড়ে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে আছি চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে ও আজকেও আমার ইনজেকশন পুশ করা জায়গাটা আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরল। যদিও এঈ যন্ত্রণার সাথে আরো দুবার পরিচিত হয়েছে আমি কিন্তু আজকে কষ্টের পরিমাণ অনেক বেশি হচ্ছে কারণ আমাকে আঘাত করা এই ব্যাক্তিটি আদ্রিয়ান। আস্তে আস্তে আবারো সব অন্ধকার হয়ে এলো আমার
আমি ঠোট কামড়ে ধরে চোখ খিচে বন্ধ করে আছি চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে ও আজকেও আমার ইনজেকশন পুশ করা জায়গাটা আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরল। যদিও এঈ যন্ত্রণার সাথে আরো দুবার পরিচিত হয়েছি আমি কিন্তু আজকে কষ্টের পরিমাণ অনেক বেশি হচ্ছে কারণ আমাকে আঘাত করা এই ব্যাক্তিটি আদ্রিয়ান। আস্তে আস্তে আবারো সব অন্ধকার হয়ে এলো আমার।

মাথায় হালকা ব্যাথা অনুভব করে আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম। ভালোভাবে চারপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম আমি আদ্রিয়ানের বাংলোতে আছি আর সেই রুমটাতেই আছি যেখানে যেখানে আমাকে রাখা হয়েছে। আস্তে আস্তে মাথাটা ধরে উঠে বসলাম। হাত ও ব্যাথা করছে বিশেষ করে কুনুইয়ের উল্টো পিঠে, প্রতিবারই ঐ ইনজেকশন দেবার পর এরকমি হয়, আর আজকে অাদ্রিয়ানের বলা কথা আর ব্যাবহারের কথা মনে পড়তেই কেদে দিলাম। মনের কোণে কোথাও একটা আশা ছিলো যে হয়তো যা ভাবছি তা না কিন্তু আজ ও সেই আশাটাও নিভিয়ে দিলো, সব অভিনয় ছিলো, সব মিথ্যে ছিলো, ওর আগাগোড়া সবটাই মিথ্যে দিয়ে ভরা। ঠকিয়েছে ও আমাকে হ্যা ঠকিয়েছে। কিন্তু ঐ ইনজেকশন তা দেবার পরে আমি অজ্ঞান কেনো হই, কী আছে ওটায়, ওরা বলছিলো ডোজ টা সহ্য করতে পারিনা আমি, কিন্তু কীসের ডোজ, কিচ্ছু মাথায় ঢুকছেনা। অনেক্ষণ কাদার পর দেখলাম মাথাটা ভার হয়ে আছে, ম্যাচম্যাচ করছে শরীরটা। দেয়াল ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখি নয়টা পনেরো বাজে। মাথা নিচু করে চেপে ধরে বসে আছি হঠাৎ কেউ নক করল দরজায়, বুঝতে পারলাম অভ্র এসছে, কারণ মেয়ে সার্ভেন্ট, অভ্র আর আদ্রিয়ান ছাড়া কারো আসার পার্মিশন নেই এই রুমে। আদ্রিয়ান তো ভূল করেও নক করে ঢুকবে না, আর মেয়ে সার্ভেন্ট ও নক করে আসতে দেখিনি কাল, তো বাকি রইলো অভ্র। তাই বিরক্তি নিয়ে বললাম
.
– আসুন
.
অভ্র ভেতরে ঢুকলো পেছন পেছন একটা মেয়ে এলো খাবারের ট্রে নিয়ে, অভ্র ইশারা করতেই মেয়েটা ট্রেটা টি-টেবিলে রেখে চলে গেলো। অভ্র হাসি মুখে বলল
.
– ম্যাম আর কিছু লাগবে আপনার?
.
– নাহ
.
– স্যার বলেছেন..
.
ওর নাম শুনেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো আমি বেশ রেগে গিয়ে বললাম
.
– আমি জানতে চেয়েছি আপনার স্যার কী বলেছেন?
.
ও সাথেসাথেই মুখটা কাচুমাচু করে বলল
.
– নাহ আসলে..
.
– কাজ না থাকলে যান তো আপনি?
.
বলেই মাথাটা চেপে ধরলাম ভার হয়ে আছে খুব। অভ্র একটু উত্তেজিত হয়ে বলশ
.
– ম্যাম আপনি ঠিক আছেন?

– আপনি যাবেন? (ধমকে)
.
ও আবারো মুখ কাচুমাচু করে বিরবির করে বলে
.
– বর বউ দুটোই একরকম, নিজের রাগ কারো ওপর না ঝাড়তে পারলে শেষে আমার ওপর ঝারে!
.
যদিও শুনেছি তবুও কিছু বললাম না। আমকে চুপ থাকতে দেখে বলল
.
– ম্যাম?
.
আমার এবার ওর এই ম্যাম ম্যাম ডাকাটা অসহ্য লাগছে তাই বিরক্ত হয়ে বললাম
.
– আপনার বয়স কতো?
.
আমার প্রশ্নে ও একটু চমকে গেলো। এমন কিছু জিজ্ঞেস করবো ও হয়তো আশা করেনি। ও একটু ইতোস্তত করে বলল
.
– ইয়ে চব্বিশ চলছে জুলাইতে পচিশ হবে।
.
– আমার বয়স কতো জানেন?
.
অভ্র একটু মুচকি হেসে বলল
.
– কত আর হবে ষোল সতেরো।
.
আমি রাগে কটমট করে তাকিয়ে বললাম
.
– জ্বী না আঠারো। অক্টোবর এ উনিশ হবে।
.
এটা শুনে অভ্র কিছুক্ষণ অবাক হওয়ার ভান করলো তারপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল
.
– যাক বাবাহ আমিতো ভেবেছিলাম স্যার জোর করে নাবালিকা মেয়ে বিয়ে করেছে।
.
আমি চোখ গরম করে তাকাতেই ও তাড়াতাড়ি কথা ঘুরিয়ে বলল

– নাহ মানে ম্যাম আপনি বয়স কেনো জিজ্ঞেস করলেন?
.
– আমি আপনার অনেক ছোট তাই এই ম্যাম ঠ্যাম না ডেকে নাম ধরে ডাকলেই পারেন।
.
ও বিষ্মিত হয়ে তাকালো তারপর আবারো বিরবির করে বলল
.
– হ্যা সেই আমার তো আর প্রাণের মায়া নেই, আমি আপনাকে নাম ধরে ডাকি আর স্যার আমাকে সিলিং এর সাথে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখুক আরকি!
.
এবারেও শুনতে পেয়েছি তবুও রাগী গলায় বললাম
.
– কিছু বললেন?
.
অভ্র থতমত খেয়ে বলল
.
– নাহ তো! আমি আবার কী বলবো? আমিতো কথাই বলতে পারিনা।
.
আমি ভ্রু কুচকে তাকাতেই ও হকচকিয়ে ইনোসেন্ট ফেস করে বলল
.
– নাহ মানে বলতে পারি কিন্তু এখন কিছু বলিনি!

আমি ভ্রু কুচকেই তাকিয়ে আছি ওর দিকে, ও একটা মেকি হাসি দিয়ে হুরমুর করে বেরিয়ে গেলো। আমিও ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি, অন্যসময় হলে এই ছেলেটার কান্ড দেখে হাসিতে পেট ফেটে যেতো আমার কিন্তু আজ কেনো জানি হাসি পাচ্ছে না। তুমি আমাকে হাসতেও ভূলিয়ে দিলে আদ্রিয়ান? ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খাবারের দিকে তাকালাম, খাওয়ার ইচ্ছে একদমি ছিলোনা কিন্তু না খেলে যে আদ্রিয়ান আমাকে ঐ বাসি খাবারটাই জোর করে গেলাবে সেটা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আজ সকালে আমার অবস্হা দেখে ওর দয়া হলেও এর পর যে দয়া করবে সেটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তাই ইচ্ছে না থাকলেও কোনোরকমে খেয়ে নিলাম।

খাওয়া শেষ করে কিছুক্ষণ বসে রইলাম, কিন্তু মাথাটা খুব ব্যাথা করছে, ধীরে ধীরে বেরেই চলেছে তাই কিছু না ভেবেই ওয়াসরুমে গিয়ে সাওয়ার নিয়ে নিলাম, কিন্তু সাওয়ার শেষ করে বুঝতে পারলাম যে মাথা ব্যাথায় এতোটাই বেঘোর ছিলাম যে ড্রেস আনতেই ভূলে গেছি। পরে এটা ভেবে নিশ্চিন্ত হলাম যে রুমে কেউ নেই, তাই একটা টাওয়াল গায়ে জরিয়ে বাইরে চলে এলাম, আশেপাশে না তাকিয়ে সোজা কাবার্ডের কাছে চলে গেলাম ড্রেস নিতে, ওখান থেকে ড্রেস নিয়ে কাবার্ড লক করে পেছনে ঘুরতেই আমি পুরো 440 ভোল্টের শক খেলাম। আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে খাটে পা ঝুলিয়ে আমায় দেখছে। আমি ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের দিকে তাকালাম তারপর আবার ওর দিকে, মাথা টোটালি হ্যাং হয়ে আছে, নড়ার শক্তিও যেনো পাচ্ছিনা। ও আস্তে করে উঠে দাড়ালো তারপর ধীরে পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল, চোখে এক অদ্ভুত চাহনী, ওর চাহনীর সাথে আমি পরিচিত, কিন্তু আমিতো আর সেই আগের মতো ওর ছোয়াকে ভালোবেসে গ্রহন করতে পারবোনা। এখন ওর সেই স্পর্শ গুলোর কথা ভাবলেও খারাপ লাগে আমার, কারণ ওগুলো ওর ভালোবাসার স্পর্শ ছিলোনা, যেখানে ভালোবাসাই ছিলোনা সেখানে স্পর্শগুলো ভালোবাসার কীকরে হবে? এসব ভাবতে ভাবতেই কখন ও আমার কাছে চলে এসছে বুঝতেই পারিনি। হুস আসতেই দেখি ও আমার খুব কাছে দাড়িয়ে আছে সাথেসাথেই আমি কাবার্ডের সাথে লেগে গেলাম। ও আমার দুপাশ দিয়ে কাবার্ডের ওপর দুই হাত রাখল, চোখে এখোনো সেই নেশাক্ত চাহনী, ও আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসেয়ে বলল

– বাসর রাতে বউরা বরের জন্যে ঘোমটা দিয়ে রেডি হয়ে বসে থাকে শুনেছি, বাট তুমিযে নিজেকে এভাবে রেডি করে রাখবে ভাবিনি…
.
বলেই কানে একটা কিস করলো, হালকা কেপে উঠলাম আমি, চোখ বন্ধ করে আছি, হঠাৎ ওর নিশ্বাস আমার মুখে পরতেই আস্তে আস্তে ভ্রু কুচকে তাকালাম ওর দিকে ও মুচকি হেসে
.
– হোয়াট? আজ তো আমাদের বিয়ে হলো তো সেই অনুযায়ী আজ আমাদের ফার্স্ট নাইট মানে বাসর রাত! তো…
.
আমার ওর কথা শুনে বুক টিপটিপ করতে লাগল, শরীরও হালকা কাপতে লাগল, কথাটা যদি ও দুইদিন আগেও বলতো তো মনে মনে লজ্জা পেলেও বাইরে হেসে আমি হেসে উড়িয়ে দিতাম কারণ আমি জানতাম ও কোনোদিনো আমার অনুমতি ছাড়া এসব করবে না। কিন্তু এই আদ্রিয়ান তো আমার কাছে অচেনা ও কী পারে আর কী পারে না সেই সমীকরণ ই তো মেলাতে পারছিনা, ও যে আমার সাথে জোর করবে না সেটা বিশ্বাস করার কোনো বিশেষ কারণই দেখছিনা তাই ভয় লাগছে খুব যেভাবে জোর করে বিয়ে করেছে সেভাবেই যদি জোর করে..! আমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে ও আমার সামনে তুরি বাজিয়ে বলল
.
– হ্যালো ম্যাডাম? কোথায় হারালেন? আমি সবে বাসরের কথা বললাম আর তুমি কল্পনা করতে শুরু করে দিলে? How advance you are!

বলেই চোখ মারলো। আমার বেশ রাগ লাগছে ওর এইসব কথা শুনে মনে হচ্ছে আমরা নরমাল হাজবেন্ড ওয়াইফ, মসকরা করছে আমার সাথে, কিন্তু এর সাথে এখন তর্ক করতেও ইচ্ছে করছেনা সেই ধৈর্য নেই এখন আর। তাই বিরক্ত হয়ে বললাম
.
– জাহান্নামে যাক আপনার বাসর। আমাকে যেতে দিন!
.
– কী বলছো বাসর জাহান্নামে কেনো যাবে? আর তোমায় যেতে দিলে বাসর হবে কীকরে? ( মুচকি হেসে)
.
এবার আমার ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যাচ্ছে ইচ্ছে করছে লোকটার মাথা ফাটিয়ে দেই, এর এইসব মজা আমার একদমি ভালোলাগছে না। ও আবার বলল
.
– বাই দা ওয়ে সাওয়ার তো বাসরের পরে নিতে হয় তুমি আগে নিলে যে?
.
আমি শুধু চুপ করে আছি এমনিতেই মাথা ব্যাথা করছে আর তার ওপর ও জ্বালাতন, কেনো যে ড্রেস না নিয়ে ওয়াসরুমে ডুকেছিলাম আল্লাহ জানে। বেশ বিরক্তি নিয়ে বললাম
.
– স্ সরুন আমি চ্ চেন্জ করবো..

– আরে চেন্জিং এর কী দরকার?? আমার তো তোমাকে এভাবেই বেশ ভালো লাগছে। এই মুমেন্ট এর জন্য একদম পার্ফেক্ট। You know hot and…
.
আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম ওর দিকে, এর এই লাগামহীন কথাবার্তা আগেও শুনেছি কিন্তু এখন এসব অসহ্য লাগছে তাই বেশ বিরক্তি নিয়ে বললাম
.
– ছিহ। বাজে লোক একটা।
.
বলেই কোনরকমে ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ওয়াসরুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম। ফাজলামো করছে আমার সাথে? বাসর? লাইক সিরিয়াসলি? এভাবে জোর করে বিয়ে করে করে উনি এসছে বাসর করতে, যদিও ভালোবেসে বিয়ে করতো তবুও মানা যেতো কিন্তু করেছেতো নিজের স্বার্থে। কিন্তু আমায় বিয়ে করে ওর কোন স্বার্থসিদ্ধি হলো কে জানে? চেন্জ করে ভাবছি বেরোবো কী না? যদি উল্টৌপাল্টা কিছু করে? একে দিয়ে বিশ্বাস নেই। তার চেয়ে আজকে রাতটা ওয়াসরুমেই কাটিয়ে দেই তাও ভালো। তাই কোনোরকমে বাথটাব এর বাইরে দিকে এক কর্ণারে বসে আছি। বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রিয়ান নক করলো দরজায়, নক করতে করতে বলল

– অনি! এতোক্ষণ ওয়াসরুমে কী করছো? চেন্জ করতে এতোক্ষণ লাগে নাকি?
.
আমি চুপচাপ বসে আছি। করুকগে নক তাতে আমার কী? যেচে সিংহের গুহায় ঢোকার ইচ্ছে আমার নেই। ও কিছুক্ষণ নক করে এবার রাগী গলায় বলল
.
– What the hell অনি? কথা বলছোনা কেনো?
.
কথা বলবো কেনো? যত্তোসব! করতে থাকুক নক আমিও খুলবো না। এবার ও একটু হুংকার দিয়ে বলল
.
– অনি! বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু ! চুপচাপ বেরিয়ে এসো!
.
ওর ধমকিতে একটু ভয় পেলেও চুপ করে রইলাম। কিন্তু ও এবার দরজায় একটু জোরেই বারি মেরে বলল
.
– অনি ফর লাস্ট টাইম বলছি ওপেন দা ডোর ড্যাম ইট! এরপর আমার হাতে পরলে কিন্তু তোমার সাথে কী হবে কল্পনাও করতে পারবেনা তুমি!
.
এবার ভাবছি যে খুলবো? যেভাবে রেগে গেছে! এসব ভাবতেই ভাবতেই ও চেচিয়ে বলল
.
– ওকে ফাইন আমি দরজা ভাঙছি..

নাহ ! এটা করা যে ওর কাছে অসম্ভব কিছু না সেটা আমি খুব ভালো করে জানি তাই তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজাটা খুলতেই ও একটানে আমাকে বার করে নিলো তারপর দেয়ালের সাথে লাগিয়ে ধরে দাতে দাত চেপে বলল
.
– এতোক্ষণ ধরে ডাকছি কানে যাচ্ছিলো না?
.
আমি মাথা নিচু করে আছি ও ধমক দিয়ে বলল
.
– কথা বলছোনা কেনো?
.
– আসলে..
.
– হ্যা আসলে কী সেটাই শুনতে চেয়েছি !
.
– আসলে আমি…
.
– হুম আসলে আমি পর্যন্ত শুনে নিয়েছি তার পর বলো!
.
আমি কী বলবো খুজে পাচ্ছিনা মাথা নিচু করে আছি চোখ ছলছল করছে। ও এবার আমার থুতনি ধরে উচু করে বলল
.
– পরবর্তিতে এমন কিছু করলে খুব খারাপ হয়ে যাবে এটা মাথায় রেখো।
.
আমি এখোনো মাথা নিচু করে আছি চোখ দিয়ে এক ফোটা জল ও পরল, ও এবার সেই রাগী গলাতেই বলল
.
– এতো রাতে সাওয়ার কেনো নিয়েছো?
.
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে আছি আমাকে কিছু বলতে না দেখে ও আবারো ধমক দিয়ে বলল
.
– কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি?
.
– ম্ মাথা ব্যাথা ক্ করছিলো খুব
.
– মাথা ব্যাথা করলে রাতের বেলা সাওয়ার নিতে হবে? অভ্রকে বললেই তো ঔষধ দিয়ে যেতো
.
– ভেবেছিলাম সাওয়ার নিলে ঠিক হয়ে যাবে ( নিচু কন্ঠে )
.
– কী সুন্দর ভাবনা ! এমনিতেই বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে মাঝে মাঝে, এই গরম তো এই ঠান্ডা তার মধ্যে এই রাতের বেলা উনি সাওয়ার নিয়েছেন!
.
বলে টি টেবিল থেকে একটা ঔষধের বাক্স বের করে দুটো ঔষধ খুলে হাতে নিয়ে একটা গ্লাসে পানি নিয়ে আমার হাতে ঔষধ দিয়ে বলল
.
– খাও!
.
আমি ভ্রু কুচকে তাকাতেই ও মুচকিহেসে বলল
.
– ভয় পেয়োনা বিষ দিচ্ছিনা তোমাকে! এটুকু বিশ্বাস করতেই পারো
.
আমি ওর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললাম
.
– হাহ! বিশ্বাস? তাও আবার আপনাকে? আপনার কী সত্যিই মনে হয় আপনি এই শব্দটার যোগ্য?
.
ও মুখে মুচকি হাসি রেখেই বললো..
.
– May be or may be not…খেয়ে নাও
.
আমিও আর কিছু না বলে ঔষধ দুটো খেয়ে নিলাম। এরপর ও আমাকে টেনে ড্রেসিং টেবিল এর সামনে নিয়ে গিয়ে টুলে বসিয়ে দিয়ে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে দিলো। কিছু বলার আগেই বিশাল এক ধমক মেরে চুপ করিয়ে দিয়েছে তাই আর কিছু বলিনি! এবার ও আমার কোলে তুলে নিলো। আমি হকচকিয়ে গিয়ে বললাম

– ক্ কী করছেন কী?
.
ও একটা ইনোসেন্ট ফেস করে বলল
.
– এটা কোনো প্রশ্ন হলো নাকি? ভুলে গেলে আজ আমাদের বাসর রাত?
.
শুনেও ও আমার কাপাকাপা গলায় বললাম
.
– দ্ দেখুন আপনি এরকম ক্ করতে পারেন না
.
ও আমাকে বেডে নামিয়ে দিয়ে আমার দুপাশে হাত রেখে হালকা ঝুকে স্লো ভয়েজে বলল
.
– কেনো পারিনা?
.
– কারণ আমি চাইনা এসব…
.
ও আমার দিকে আরো একটু ঝুকে বলল
.
– কিন্তু আমিতো চাইছি..
.
আমি আরেকটু পিছিয়ে বললাম

– অ্ আপনি কী জোর করবেন ন্ নাকি আমাকে?
.
ও আরেকটু এগিয়ে এসে বলল
.
– করতেই পারি আফটার অল কালেমা পরে, কবুল বলে তোমায় বিয়ে করেছি, এমনকি দেনমোহর পরিশোধ করে দিয়েছি, অধিকার আছে আমার
.
পেছাতে পেছাতে এবার বালিশের সাথে লেগে শুয়ে পরলাম আমি। প্রচন্ড কাপাকাপা গলায় বললাম
.
– ত্ তাই বলে অ্ আপনি জ্ জোর করতে পারেন ন্ না আমাকে

ও আমার দুপাশে হাতের ওপর ভর দিয়ে আমার উপর ঝুকে আছে, ওভাবেই ফিসফিসিয়ে বলল
.
– অফকোর্স পারি বাংলায় একটা প্রবাদ আছে না যে “জোর যার জগত তার?”
.
আমার এবার কেদে দেবার মতো অবস্হা হয়েছে। ও আস্তে করে আমার কপালে একটা চুমু দিলো। আমি এবার ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। কিন্তু ধাক্কা দেবার সময় আমার হাত ওর বা হাতের কুনুই এর উল্টোপিঠে বেশ জোরেই লেগে যায় আর ও ‘ আহ’ করে উঠে বসে জায়গাটা চেপে ধরল, ফুল হাতা গেন্জি পরে আছে তাই বুঝতে পারছিনা যে কী হয়েছে কিন্তু আমার ধাক্কায় এতোটা ব্যাথা পায়নি সেটা সিওর মনে হয় আগে থেকেই ব্যাথা পেয়ে আছে। হঠাৎ আমার সেই দিনের কথা মনে পরল সেদিনো যখন ওরা মানে আদ্রিয়ান আমায় কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছিলো সেদিন ফেরার পর যখন আদ্রিয়ান আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিলো তখন ওর ঐ জায়গাতেই আমার হাত লেগেছিলো আর ও এভাবেই ‘আহ’ করে উঠেছিলো। কিন্তু কেনো? বারবার কী হয় ওখানে? যা ইচ্ছে হোক আমার কী? ওর মতো টেরোরিস্ট দের কতো কাজে কতো জায়গায় লাগে তার ঠিক আছে নাকি? এরপর বিকেলে ঘটা ঘটনা টা মনে পরতেই বললাম

– এতো তাড়াতাড়ি নিয়ে এলেন যে ওখান থেকে? ফাইলটা কোথায় আছে না জেনেই?
.
ও শান্ত ভঙ্গিতেই বলল
.
– জিজ্ঞেস তো করলাম বললে না তো!
.
– এতো সহজে হার মেনে নিলেন?
.
– হার কোথায় মানলাম সুইটহার্ট? ভুলে যেয়োনা তুমি এখোনো আমার হাতের মুঠোর মধ্যেই আছো। আর তুমি ততোদিন ছাড়া পাবেনা যতদিন আমি তোমাকে আটকে রাখতে চাইব।
.
ওর কথা শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম তারপর বললাম
.
– তা আমাকে তো ওখানেই রাখলেই পারতেন, ওখানে রেখে দিনরাত টর্চার করলে হয়তো বলেও দিতাম।
.
– বলতেতো তোমাকে হবেই জানপাখি। আজ হোক বা কাল। কিন্তু নিজের বউকে অন্যের কাছে কীকরে রেখে আসি? তারচেয়ে ভালো নিজের কাছে রেখেই কথা বের করে নেবো পেট থেকে!

এবার খুব রাগ লাগছে আমার। ওর মুখে এই বউ বউ শুনে আরো বেশি বিরক্ত লাগছে। আমি বেশ রেগে গেলাম রাগের বসে ওর কলার ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বললাম
.
– বউ বলতে লজ্জা করছেনা আপনার? ভালোবাসার মিথ্যে নাটক করে আজ এখানে আটকে রেখে দিয়েছেন, দিন রাত নানা ভাবে চর্চার করে যাচ্ছেন। কোনো খেলছেন এভাবে আমার সাথে কোনো বিয়ে করেছেন আমাকে? বলুন কেনো? এতোটা অমানুষ কীকরে হলেন আপনি? খারাপ লাগলোনা আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলতে, কেনো আমার জীবনটা এভাবে শেষ করে দিলেন? কেন?
.
ও আমার হাত ধরে কলার ছাড়িয়ে আমাকে চর মারার জন্যে হাত ওঠাতেই আমি নিজেকে গুটিয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ হবার পরেও কিছু বুঝতে না পেরে আস্তে আস্তে তাকিয়ে দেখি ও হাত নামিয়ে নিয়েছে। আমি ভালোকরে ওর দিকে তাকাতেই ও আমার দুই হাত পেছনে মুচরে ধরে বলল
.
– আগেও বলেছি আমার কলার ধরার সাহস দেখিয়োনা। সাহস কীকরে করলে এটা করার? আর হ্যা কী জেনো জিজ্ঞেস করছিলে বিয়ে কেনো করলাম তাইতো? নিজের জন্যে করেছি নিজের স্বার্থে! ওইযে বললাম না ভালোবাসার নাটক করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমি তোমার, তাই নিজের কাছে রাখতে চাইছি, নিজের প্রয়োজনীয়তার জন্যে বুঝেছো? পেয়ে গেছো উত্তর? এরপর আমার কলার ধরার সাহস দেখালে হাত ভেঙ্গে দেবো।
.
ও এতোই জোরে মুচরে ধরে আছে হাত দুটো ভীষণ ব্যাথা করছে কিন্তু ওর এইসব কথাগুলো শুনে মনে যেই ব্যাথা লেগেছে তার কাছে এই ব্যাথা কিছুই না। কীকরে বলল এই কথা গুলো, ছিহ! এই লোকটাকে নাকি আমি আমার সবটা দিয়ে ভালোবেসেছি ভাবলেই নিজের ওপর রাগ হচ্ছে। হাত ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে দিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসল ও। আমি হাটুতে মুখ গুজে কাদছি। বাড়ির সবার কথা খুব মনে পরছে এখন, খুব অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে, ওদের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে খুব। অনেক্ষণ পর চোখ মুছে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম। ও ভাবলেশহীনভাবে বসে আছে। আমি ভাঙা গলায় বললাম

– একটা কথা রাখবেন প্লিজ!
.
ও ভাবলেশহীন ভাবেই বলল
.
– পারবোনা।
.
– প্লিজ! ( করুণ গলায়)
.
– আচ্ছা বলো শুনে দেখি।
.
– বাড়ির সবার সাথে একটু কথা বলিয়ে দেবেন প্লিজ! আমি ওদের কিচ্ছু বলবোনা, এটাও বলবোনা আমি আপনার কাছে আছি, শুধু একটু কথা বলবো! ( কেদে দিয়ে )
.
আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে একটা শ্বাস নিয়ে বলল
.
– এখন সম্ভব না।
.
– প্লিজ জাস্ট একবার
.
– বললাম তো না..
.
– শুধু আব্বু আম্মুর সাথে…
.
ও বেশ জোরে ধমকি দিয়ে বলল
.
– বাংলা বোঝোনা? না মানে না।
.
আমি আর কিছু বললাম না নিরবে চোখের পানি ফেলতে লাগলাম, বেশ কিছুক্ষণ পর ও কিছু না বলে বিছানায় শুয়ে পরল। সেটা দেখে আমি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি ওর দিকে নিরবতা ভেঙ্গে ও বলল
.
– কী হলো বসে আছো কেনো ঘুমোবেনা?
.
– আপনি এখানে ঘুমোবেন?
.
– এটাতো আমারি রুম আমার রুমে তো আমিই ঘুমোবো।
.
– তাহলে আমায় এখানে কেনো রেখেছেন?
.
– আমার বউ আমার রুমে থাকবেনা তো কোথায় থাকবে?
.
– আমি আপনার সাথে এক বিছানায় শোবোনা। হয় আমার অন্য রুমে থাকার ব্যাবস্হা করুন নয়তো আমি সোফায় শুচ্ছি।
.
বলে উঠতে নিলেই ও আমাকে এক টানে বেডে ফেলে আমার হাত দুটো বিছানার সাথে চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলল

– একদম বেশি তেরিংবেরিং করবে না। ভুলে যেওনা তুমি আমার কবজায় আছো, আর এখানে এমন কেউ নেই যে তোমাকে আমার হাত থেকে বাচাতে পারে, আর এই মুহুর্তে যা খুশি করতে পারি তোমার সাথে আর আমাকে আটকানোর ক্ষমতা তোমার নেই সেটা তুমি ভালো করেই জানো। I don’t want to force you so don’t make me to do this okay?
.
এটুকু বলেই ও আমার উপর থেকে সরে বেডে শুয়ে আমাকে টেনে ওর বুকের উপর নিয়ে গিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। ওর বলা কথাগুলোতে ভয় পেয়ে গেছি খুব তাই কিছু না বলে ওর বুকেই চুপচাপ চোখের পানি ফেলতে লাগলাম।
একদম বেশি তেরিংবেরিং করবে না। ভুলে যেওনা তুমি আমার কবজায় আছো, আর এখানে এমন কেউ নেই যে তোমাকে আমার হাত থেকে বাচাতে পারে, আর এই মুহুর্তে যা খুশি করতে পারি তোমার সাথে আর আমাকে আটকানোর ক্ষমতা তোমার নেই সেটা তুমি ভালো করেই জানো। I don’t want to force you so don’t make me to do this okay?
.
এটুকু বলেই ও আমার উপর থেকে সরে বেডে শুয়ে আমাকে টেনে ওর বুকের উপর নিয়ে গিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। ওর বলা কথাগুলোতে ভয় পেয়ে গেছি খুব তাই কিছু না বলে ওর বুকেই চুপচাপ চোখের পানি ফেলতে লাগলাম, ও যদি সত্যিই ওমন কিছু করে সেই ভয়ে চুপ করে থাকলেও কান্না কিছুতেই থামাতে পারছিনা, চোখ দিয়ে অনবরত পানি পরেই চলেছে আর মাঝে মাঝে কেপে উঠছি, হঠাৎ আদ্রিয়ান এক হাতে আমার মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে আর আরেক হাতে পিঠে স্লাইড করতে করতে বলল
.
– এতো কান্না করলে মাথা ব্যাথা বেড়ে যাবে, কান্না বন্ধ করে ঘুমোও!

আমার এখন খুব বিরক্ত লাগছে ওর এইসব নাটক, যেই জন্যে এতো নাটক করেছে সেই প্রয়োজন তো শেষ, এখন কেনো করছে এসব? ওর এই ভালোমানুষি দেখে যাতে ফাইলটা দিয়ে দেই সেই জন্যে। আমি রেগে কান্নামিশ্রিত গলায় ওকে বললাম
.
– এখন এসব নাটকের মানে কী? আপনার কী মনে হয় আপনি এসব নাটক করলে ফাইলটা দিয়ে দেবো?
.
এটা বলার সাথে সাথে ও পিঠে স্লাইড করা থামিয়ে দিলো কিন্তু চুলে বিলি কাটতে কাটতেই বলল
.
– বেশি কথা না বলে চুপচাপ ঘুমোও।
.
কিন্তু আমিতো পারছিনা নিজেকে শান্ত রাখতে ওর ভাবলেশহীনতা আমাকে আরো রাগীয়ে দিচ্ছে তাই আবারো বললাম
.
– কেনো বলবোনা? আপনার ওই ভালোবাসার অভিনয় বুঝতে পারিনি নিখুত অভিনেতা ছিলেন তো। কিন্তু যদি ভেবে থাকেন এবারেও তাই হবে তাহলে খুব ভূল ভাবছেন। আপনার মতো চিট কে এই জীবনে আর বিশ্বাস করবো না আমি, আপনি তার যোগ্যই নন, আপনি তো…
.
আদ্রিয়ান ভীষণ জোরে ধমক দিয়ে বলল
.
– চুপ! আর একটা কথা যদি মুখ দিয়ে বের হয় তো মুখে ট্যাপ লাগিয়ে রেখে দেবো। চুপচাপ ঘুমিয়ে পরো।
.
ওর ধমকে কেপে উঠলাম তাই ওর বুক থেকে উঠতে গেলেই ও দুহাতে আরো ওর জোরে বুকের সাথে চেপে ধরে ধমকে বলল
.
– একটু আগের কথা ভূলে গেছো? আমাকে এখন রাগালে বিপদ তোমারি হবে।
.
আমি ভয়ে আর কিছু না বলে ওর বুকেই গুটিসুটি মেরে শুয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগলাম, ওও আর কিছু বললোনা কাদতেও বারণ করলোনা শুধু মাথায় বিলি কাটতে লাগল। বিলি কাটার কারণে আস্তে আস্তে মাথা ব্যাথাটা কমে গেলো, আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরলাম

সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আদ্রিয়ান আমার পাশে নেই। আস্তে আস্তে উঠে দেয়াল ঘড়িটার দেখলাম দশটা বাজে, এতোক্ষণ ঘুমিয়েছি? আস্তে করে উঠে ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। বের হয়ে দরজার কাছে গিয়ে বুঝতে পারলাম দরজাটা বাইরে দিয়ে লক করা, একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো, এভাবে লক করেই রাখে দরজাটা যা দরকার পরে রুমেই দিয়ে যায়। নিজেকে জেল খানার আসামী মনে হচ্ছে! অপরাধ তো করেছি, ভালোবাসার অপরাধ তাই শাস্তি তো পাওনাই ছিলো। খাটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম, সব অসহ্য লাগছে। দরজা খোলার শব্দে চোখ মেলে তাকালাম, ওই মেয়েটা এসছে খাবার নিয়ে, চুপচাপ ট্রে টা টি টেবিলে রেখে দরজাটা আবারো বাইরে থেকে লক করে দিয়ে চলে গেলো। আচ্ছা আদ্রিয়ান কী চলে গেছে? জাহান্নামে যাক আমার কী? এরপর খাবারটা খেয়ে ব্যালকনিতে দাড়ালাম চতুরপাশে গার্ড কীকরে পালাবো? তাই পালানোর চিন্তা বাদ দিয়ে খাটে বসে পরলাম এভাবে মানুষ থাকতে পারে, চুপচাপ কতোক্ষণ বসে থাকা যায় এভাবে? খুব কান্না পাচ্ছে আমার, সহ্য করতে না পেরে কেদেই দিলাম। খাটে বসে হাটুতে মুখ গুজে কাদতে লাগলাম। সারাদিন অভ্র বা আদ্রিয়ান কেউ আসে নি, মাঝখানে মেয়েটা শুধু লাঞ্চ দিয়ে গেছে, আর আজ সারাদিন আমার কান্নার ওপরেই গেছে, এক কথায় অতিষ্ট হয়ে গেছিলাম।

রাতে দরজায় নক পরলো অভ্র সেটা বুঝতে পেরেও সারা দিলাম না। খাটে হেলান দিয়েই চুপচাপ বসে আছি, বেশ কিছুক্ষণ নক করার পর বিরক্ত হয়ে বললাম
.
– আসুন
.
ও ভেতরে আসতে দেখলাম আজ ও নিজেই খাবার নিয়ে এসছে। খাবার রেখে ইতোস্তত করে খাটের কর্ণারে বসে বলল
.
– Any problem ma’am
.
আমি ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে বললাম
.
– No..
.
– আর কিছু চাই আপনার?
.
আমার এবার ধৈর্যের বাদ ভেঙ্গে গেলো বেশ রেগে দিয়ে চেচিয়ে বললাম
.
– মুক্তি চাই আমি।আপনার স্যারের কাছ থেকে মুক্তি পেতে চাই, এই নরক থেকে মুক্তি পেতে চাই। তিন দিন ধরে আটকে রেখে দিয়েছেন আমাকে। এই নরক থেকে মুক্তি চাই আমি। পারবেন দিতে?
.
বলেই জোরে জোরে কাদতে লাগলাম। অভ্র এবার একটু হকচকিয়ে গেলো, ছেলেটা সাধারণত সিরিয়াস মুডে থাকে না কিন্তু এখন ওর মুখভঙ্গি সিরিয়াস হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে একটা শ্বাস নিয়ে বাইরে চলে গেলো। অামি উপোর হয়ে শুয়ে পরলাম কিচ্ছু ভালো লাগছে না। প্রায় ঘন্টা দুয়েক পর উঠে খাবারটা খেয়ে নিলাম। তারপর চুপচাপ শুয়ে পরলাম ক্লান্ত লাগছিলো খুব তাই শোয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পরলাম।

পরের দিন সকালে রোদের আলো চোখে পরতেই ঘুম থেকে উঠে দেখি আদ্রিয়ান সোফায় বহে ল্যাপটপে কাজ করছে। আমি উঠে বসতেই ও আমার দিকে তাকালো, তারপর আবার ল্যাপটপে তাকিয়ে বলল
.
– যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।
.
আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে এলাম। আমি বেরিয়ে আসতেই ও হাত দিয়ে ইশারা করে আমায় সোফায় বসতে বললো। তারপর ও উঠে গিয়ে খাবারের প্লেট নিয়ে বসে মুখের দিকে এগিয়ে দিয় বলল
.
– হা করো।
.
আমিও কথা না বাড়িয়ে হা করলাম। ও খাবারটা খাইয়ে দিলো। তারপর ও উঠে কোথায় যেনো গেলো কিন্তু খেয়াল করলাম ওর ফোনটা রেখে গেছে, এটাই সুযোগ বাড়ির লোকের সাথে যোগাযোগ করার আর এখান থেকে মুক্তি পাবার, তাড়তাড়ি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও আসছে কিনা! ওকে আসতে না দেখে আমি দ্রুত ফোনটা হাতে নিয়ে আব্বুর নাম্বার ডায়াল করলাম, আব্বু ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথে অামি কিছু বলবো তার আগেই কেউ পেছন থেকে আমার মুখ চেপে ধরল। তাকিয়ে দেখলাম আদ্রিয়ান অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, তারপর আরেক হাত দিয়ে আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ওর কানে ধরল আব্বু কিছু বলল তার উত্তরে ও বলল
.
– না আঙ্কেল পাইনি এখোনো? ও ফিরেছে কী না সেটা জানতেই ফোন করেছি।
.
ও মুখ চেপে ধরে রেখেছে আমার। আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারছিনা।
.
-….
– তুমি টেনশন করো না কিচ্ছু হবেনা ওর আমি আছিতো ঠিক খুজে বের করবো ( আমার দিকে রাগী চোগে তাকিয়ে)
-….
– তুমি হাইপার হয়োনা নিজের খেয়াল রাখো

ও এক হাতে আমার মুখ চেপে ধরে আছে তাই কিছু বলতে পারছিনা চোখ দিয়ে পানি পরছে অনরগল, অপাশে আমার আব্বু কথা বলছে অথচ আমি ওনার সাথে কথাও বলতে পারছিনা। ফোনটা রেখেই আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে মুখটা ছেড়ে দিলো, কাদতে কাদতে সোফায় বসে পরলাম আমি ও আমার দিকে ঝুকে গাল চেপে ধরে বলল
.
– খুব বেশি বাড় বেড়ে গেছো তাইনা? একটু আদর দিলেই মাথায় উঠে যাও? বারণ করেছিনা আমি যে এমন উল্টোপাল্টা কাজ করবেনা?
.
আমি চুপ করে চোখের পানি ফেলছি সেটা দেখে ও আরো জোরে ধমকি দিয়ে বলল
.
– কী বারণ করেছি? ফোন কেনো করলে?
.
আমি ওর ধমকে কেপে উঠলেও কিছু বললাম না মাথা নিচু করে আছি। ও সাথে সাথেই মাথাটা উচু করে ধরে বলল
.
– আজ প্রথমবার তাই কিছু বললাম না নেক্সট টাইম এই ভুল ভুল করেও করোনা। পরের বার থেকে তোমার ভূলের পরিণাম কিন্তু তোমার পরিবারকেই ভোগ করতে হবে। ওরা কিছু জানা মানে ওদের জীবনও বিপদের মুখে পরা এটা মাথায় রেখো।
.
বলেই হনহনিয়ে ওয়াসরুম ঢুকে গেলো। আমি সোফাতেই বসে কান্না করতে লাগলাম। আমার পরিবারই আমার দুর্বলতা সেটা ও ভালোকরেই জানে তাই বারবার সেই সুযোগটাই নিচ্ছে। ও বেরিয়ে এসে বলল
.
– রেডি হও বেরোতে হবে?
.
কথাটা শুনেই বুক কেপে উঠলো আবারো ঐ লোকদের সামনে যেতে চাইনা আমি। এসব সহ্য করার ধৈর্য আমার আর নেই। আমি কাপা কাপা গলায় বললাম
.
– অ্ আমি যাবোনা!
.
ও ঘড়ি পরতে পরতে বলল
.
– তোমার কাছে জানতে চাইনি! জাস্ট জানিয়ে দিলাম। কথা না বাড়িয়ে রেডি হয়ে নাও। নইলে আমাকেই হাত লাগাতে হবে
.
আমি এবার কেদে দিয়ে বললাম
.
– প্লিজ ! আমি যাবোনা ওদের কাছে।
.
আদ্রিয়ান এবারের আমার সামনে বসে বলল
.
– ভয় পাও ওদের?
.
আমি কাছুই বললাম না মাথা নিচু করে ফেললাম। আমাকে ভয় পেতে দেখে ও উঠে দাড়িয়ে ওপরে জ্যাকেট পরতে পরতে বলল

– এতো ভয় পাও তো ওমন কাজ করলে কেনো? আর করেই যখন ফেলেছো তখন আর ভয় পেয়ে লাভ নেই। যা পরে আছো তাতেই চলবে, চলো!
.
বলে আমার হাত ধরতেই অামি আরো জোরে কেদে দিয়ে বললাম
.
– নাহ প্লিজ! আমি ওখানে যাবোনা।
.
– কিছু করার নেই যেতে হবে।
.
– প্লিজ…
.
কিন্তু ও আমার কোনো কথা না শুনেই হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো গাড়ির কাছে আমি অনেকবার ওকে রিকোয়েস্ট করেছি কিন্তু ও আমার কথা কানেই নেয় নি। আমাকে গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। সারারাস্তাই কেদেছি আমি। গাড়িটা সেই বিল্ডিং টার কাছেই থামলো। গাড়ি থামিয়ে আমায় টেনে ভেতরে নিয়ে যেতে লাগল, ও যত ভেতরে যাচ্ছিলো আমার ভয় ততই বাড়ছিলো। ও আমাকে টেনে সেই রুমে নিয়ে গেলো। গিয়ে দেখলাম ওই তিনজন চেয়ারে বসে আছে ওদের মাঝে একটা চেয়ার ফাকা রেখেছে আর সামনে আরেকটা চেয়ার। আমি ওই তিনজনকে দেখে আজকেও দাড়িয়ে গেলাম। আদ্রিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো আমি শক্ত হয়ে দাড়িয়ে কাদছি, তা দেখে দ্বীপ নামের লোকটা বলল
.
– আরেহ এ তো দেখছি, আমাদের দেখেই কেদে দিয়েছে।
.
আদ্রিয়ান কিছু না বলে আমাকে টেনে সামনের চেয়ারটায় বসিয়ে দিয়ে ও ওদের মাঝখানে রাখা চেয়ারে গিয়ে পায়ের ওপর পা তুলে বসল তারপর টেবিলের ওপর থেকে একটা আপেল নিয়ে বাইট করে চিবোতে লাগল, যেনো কিছুই হচ্ছেনা এখানে, আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছি নিরবতা ভেঙ্গে রিক বলল
.
– সো মিস.. ও সরি এখন তো আর মিস না মিসেস তাইনা? ( দৃঢ় ভাবে )
.
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম লোকটার দিকে সে হেসে বলল
.
– তো কী ঠিক করেছো ভালোয় ভালোয় বলবে না কী অন্য কিছু করতে হবে?
.
দ্বীপ: কী হলো কী বলো!
.
ওদের ধমকিতে হালকা কেপে উঠলাম আমি, ছলছলে চোখে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে। ও একমনে আপেল এর দিকে তাকিয়ে বাইট করছে আর চিবোচ্ছে যেনো ও ওর কাছে এটাই এখন একমাত্র প্রধান কাজ, আশেপাশে যা খুশি হোক ওর দেখার বিষয় না। ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জয় ধমকে বলল
.
– ওর দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই আমাদের কথার উত্তর দাও। আমি কাপা কাপা গলায় বললাম
.
– অ্ আমি জানিনা
.
দ্বীপ: ভয় পাচ্ছো আবার মিথ্যেও বলছো? এটাতো ঠিক না তাই না?

এদের প্রত্যেকের গলার স্বর শান্ত হলেও তাতে রাগ স্পষ্ট। আমি শুধু নিচের দিকে তাকিয়ে কাদছি। কান্না করতে করতে বললাম
.
– প্লিজ ছেড়ে আমাকে আমি জানিনা কিছু।
.
সেটা দেখে জয় নামের লোকটা জোরে ধমকি দিয়ে বলল
.
জয়: ওই চুপ! আমাদের সবাইকে কী তোমার জোকার মনে হচ্ছে নাকি গাধা মনে হচ্ছে যে এভাবে তোমাকে মজা দেখার জন্যে নিয়ে আসি আমরা?
.
দ্বীপ: দেখো এমনিতেই তিন তিনতে বছর নষ্ট করে দিয়েছো আমাদের, তোমার সাথে এখোনো ভালো ব্যাবহার করছি কারণ তুমি আদ্রিয়ান এর ওয়াইফ তার মানে এটা না যে তুমি যা খুশি করবে।
.
রিক: ও এভাবে শুনবে না। ভালো কথার মেয়ে ও না। আদ্রিয়ান?
.
আদ্রিয়ানের নাম ধরে ডাকতেই আদ্রিয়ান আপেলে বাইট করতে গিয়েও থেমে গেলো তারপর রিকের দিকে তাকাতেই রিক বলল
.
– আজ আর ওকে ড্রাগস দেবো না ডোজ টা সহ্য করতে পারেনা শুধুই শুধুই একটা দিন নষ্ট হয়
.
আমি অবাক হয়ে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে তারমানে ও আমাকে ওই ইনজেকশনে ড্রাগস দিতো? আর ওই ডোজ টা আমার বডি নিতে পারতোনা তাই অজ্ঞান হয়ে যেতাম আমি? এতোটা নিচে নামতে পারে ও ওর স্বার্থের জন্যে? চোখ সরিয়ে নিলাম ওর থেকে ওর দিকে তাকাতেও আজ ঘৃণা হচ্ছে আমার। আমার ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে আদ্রিয়ান বলল
.
– তো কী করতে চাইছো এখন? ( ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আপেলে বাইট বসিয়ে)
.
রিক: সব কিছুই এপ্লাই করেছি। গরম শিক, আঙ্গুল কেটে দেওয়া, মারার ভয় দেখানো, ড্রাগস কিন্তু কোনো লাভ হয়নি এবার একটাই জিনিস বাকি আছে ইলেকট্রিক শক।
.
এটা শোনার সাথে সাথেই কেপে উঠলাম আমি, ইলকট্রিক শক দেবে? এবারো অসহায় চোখে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম কিন্তু ওর নজর আপেলের দিকে। আমিও মনে মনে এটা ভাবলাম যে কার দিকে তাকাচ্ছি আমি? ওর তো এসবে কিছু যায় আসে না।
.
রিক: তোমার আপত্তি নেই তো? শত হলেও তোমার বউ। ( আবারো সেই দৃঢ় কন্ঠ)
.
আদ্রিয়ান: আপত্তি কেনো থাকবে? আমার কাছে ওর চেয়ে ফাইলটা অনেক বেশি ইমপরটেন্ট। ( আপেল চিবোতে চিবোতে)
.
এটা শুনে আবারো সেই আহত দৃষ্টিতে তাকালাম। এই আদ্রিয়ান ই একদিন বলেছিলো। ” আমার নাম,ফেম পপোলারিটি, টাকা, সাফল্য এই সব কিছু তোমার কাছে মূল্যহীন, তুমি যদি না থাকো এই সব কিছুর কোনো মূল্য নেই।” এতোটা মিথ্যে? এতোটা অভিনয়? আর আমি? আমিও বোকার ওর সব কথা অন্ধ্যের মতো বিশ্বাস করেছি?
.
জয়: ঐ দড়ি আর ইলেকট্রাক মেশিন টা নিয়ে আয়। ( দরজায় একজনের উদ্দেশ্যে)

Infinite Love part 51+52+53+54+55

এটা শুনেই আমার আত্মা শুকিয়ে গেছে লোকটা ওগুলো আনতেই আমি উঠে দৌড়ে দিয়ে দরজার কাছে যেতেই দুজন লোক হাত দিয়ে আটকে দিলো অামাকে। আমি পেছনে তাকিয়ে কাদতে কাদতে বললাম
.
– প্লিজ যেতে দিন আপনারা আমাকে, আমি বলতে পারবোনা ওটা কোথায় আছে। প্লিজ যেতে দিন।
.
কিন্তু আমার কান্না যেনো ওরা সবাই ইনজয় করছে আর আদ্রিয়ান? ও আগের আপেলটা শেষ করে নতুন একটা আপেল নিয়ে সেটাতে বাইট করছে, ভাবলেশহীন ভাবে আপেল খাচ্ছে পায়ের ওপর পা রেখে, উপরে রাখা পা টা ক্রমাগত নাড়িয়ে যাচ্ছে। রিক নামের ছেলেটা এসে আমার হাত ধরতেই আমি আবারো তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে কিন্তু তাতে ওর কোনো ভাবান্তর হলোনা ও এক মনে অপেলে বাইট করছে তবে পা নাড়ানোর গতিটা বাড়িয়ে দিয়েছে। ওর এই ভাবলেশহীনতা বুকে ছুড়ির মতো বিধছে আমার। তোমার কিচ্ছু যায় অাসেনা আদ্রিয়ান? এতোটাই গুরত্বহীন আমি তোমার কাছে? সত্যিই এতো নিখুত অভিনেতা তুমি?
.
রিক আমাকে টেনে চেয়ারে বসিয়ে দরি দিয়ে বেধে দিলো। এরপর মেশিনটা টেবিলে রেখে অন করল। আর তারটা আমার হাতের অনামিকা আঙ্গুলে বেধে দিলো। আমি এবার শব্দ করে কেদে দিয়ে আদ্রিয়ানকে বললাম
– আদ্রিয়ান প্লিজ ওদের এটা করতে বারণ করুন আমার খুব ভয় করছে। প্লিজ আদ্রিয়ান!
.
কিন্তু আদ্রিয়ান একি ভঙ্গিতে আপেল খাচ্ছে আর পায়ের উপরে রাখা পা টা নাড়িয়ে যাচ্ছে। ওর এই ভাবলেশহীনতা দেখে ওর দিকে আর তাকালাম না। রিক বাটন প্রেস করতে নিলেই আমি চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম…

Infinite Love part 61+62+63+64+65