বিষাক্ত অনুরাগ পর্ব ৪ || Asfiya Zannat Turfa

বিষাক্ত অনুরাগ পর্ব ৪
Asfiya Zannat Turfa

]মাঝপথে এসে তুরের মনে পড়লো, এটা আত্মহত্যা বলে সবার সামনে দেখাবে, কিন্তু খুন নিয়ে যারা ওর সামনে আসবে ও তাদের কি করবে? তুর চায় এই অদ্ভুত মৃত্যু নিয়ে কথা উঠুক। তুরের সঙ্গে অনামিকার নাম আসুক, তুরের নম্র স্বভাবের কারনে কেউ ওকে সন্দেহ করবে না, তাছাড়া চিঠিটাও আছে, তাহলে চিঠির অন্য ব্যক্তি অর্থাৎ অনামিকা তার সম্পর্কে যেটুকু তথ্য দেওয়া হয়েছে অর্থ, অনার স্বার্থ নিয়ে যেটা বলা হয়েছে সেটা কি সবার নজরে আসবে? অনার সম্পর্কে যে সন্দেহের কীট মানুষের মনে প্রবেশ করানোর চেষ্টা করা হয়েছে সেটা কি আদৌ প্রবেশ করবে?

– ‘ প্রথম খুন করেই এতো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে, না জানি বাকিগুলোয় কি হবে। যদি আমার ভাবনামতো সব না হয়? অনাকে যদি কেউ সন্দেহ না করে? আমি নিজের হাতে অনাকে কিভাবে মারি? শত হলেও বোন হয় আমার। ছোটবেলায় একটু হলেও আদর করেছে। যদি ওকে ফাঁসাইতেই না পারি তো এই ঘটনা সাজিয়ে কি লাভ? ”
তুর তৎক্ষণাৎ গার্ডসদের কল করে, একজন গার্ড ফোন রিসিভ করে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
– ” ম্যাম লাশটা বাড়ির বাইরে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু মুখোশ পড়া লোক এসে লাশটা নিয়ে গিয়েছে, আমাদের মধ্যে কিছু মানুষকে ক্লোরোফম দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলেছিলো তাই আমরা কিছু করতে পারিনি। ”

তুর ফোন কেটে গাড়ির সাইড মিররের দিকে তাকালো, একটা কালো গাড়ি ওকে সেই ঘন্টাখানেক আগে থেকে ফলো করছে। তুর রেগে গাড়ি থামালো, গাড়িতে কে আছে সেটা ও দেখবেই! সেই কালো গাড়িটাও থামে, তুর গাড়ি থেকে নেমে দাড়াতেই কালো গাড়িটি ফুল স্পীডে তুরের পাশ কাটিয়ে বেড়িয়ে যায়! তুর দ্রুত নিজের গাড়িতে উঠতে গিয়ে আবারও পায়ে চোট পায়। পা চেপে ধরে ও রক্তচক্ষু নিক্ষেপ করলো গাড়িটির দিকে। গাড়ির গ্লাসে ফোমের লেখা একটি শব্দ ভেসে উঠলো ‘ SoRrY ‘
বাড়িতে এসে মায়ের কোলে শুয়ে পড়ে তুর! হাতের ব্যন্ডেজটা কখন খুলে গিয়েছে তা জানে না ও। তুর কোলে মাথা রাখতেই তাহমিনা বেগম তুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
– ” কিভাবে হলো এসব? তুই সাবধানে থাকতে পারিস না? বড় হচ্ছিস তুর, এবার নিজের ভালো বুঝতে শেখ। কতদিন তোকে দেখে দেখে রাখবো? আমারও তো বয়স হচ্ছে। ”
তুর আহ্লাদি কন্ঠে বলে,

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

– ” আমি কি জানতাম নাকি আমার ওপর গুলি করা হবে? কে বা কারা যে আমার পেছনে পড়ে আছে আল্লাহই জানে। তাদের কি ক্ষতি করেছি আমি? আম্মু তুমি বলো আমি কি কখনও কাউকে কষ্ট দিয়েছি? বকেছি? মেরেছি? তবুও কেন সবাই আমার পেছনে আদাজল খেয়ে পড়ে আছে। ”
তাহমিনা তুরের মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছেন। তুরের ইনোসেন্ট চেহারা তাহমিনার সব অভিমান গলিয়ে দিতে সক্ষম তাই তাহমিনা তার অভিমানকে দূরে রেখে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।
– ” তুই কিছু করিস নি মা। জানি না কে বা কারা এমন করছে। কিন্তু এটা জানি সবটা হচ্ছে এই সম্পত্তির জন্য। উকিলসাহেব বললেন তুই বিয়ে করেছিস, তো জামাই বাবাজি কোথায়? কি করে সে? ”
তুর মুখে লজ্জাভাব এনে লাজুক কন্ঠে বললো,

– ” সে হার্ট সার্জন! নাম রোদ্দুর জুহায়ের। আমি ওকে অনেক আগে থেকে ভালেবাসি! ও সকালেই হসপিটালে চলে গিয়েছে আম্মু। রাতে আসবে এখানে, চিন্তা করো না। ”
– ” আচ্ছা! ”
– ” আম্মু তোমার এই বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই? তোমাদের না জানিয়ে এতো বড় কাজ করলাম অথচ তোমরা কেউ কিছু বলছো না! ”
– ” তোমার খুশিতেই আমরা খুশি তুর! তোমার বাবাই সবসময় বলতেন তুমি তোমার জীবনে যেটা চাইবে সেটাই হবে। সবকিছু তোমার পছন্দমত হবে আমরা কেউ আমাদের সন্তানকে কোনো কাজে বাঁধা দিবো না, রাগ করবো না, তিনি আজ নেই! তাই আমি তোমার প্রতিটা কাজই সমর্থন করি। ”
তুর এবার অনুনয়ের সুরে বললো,
– ” তাহলে আমাদের কম্পানির সমস্ত দায়ভার আমরা আবিদ ভাইয়াকে দিতে পারি তো! ভাইয়া তো এগুলো বোঝে, আমি ছোট মানুষ নতুন জয়েন করবো, ঠিক করে বুঝবো না সবকিছু। তুমি প্লিজ পার্মিশন দাও। ”

তাহমিনা হেসে বলে,
– ” আবিদকে তো আমি চোখ বুজে বিশ্বাস করতে পারি। ওর মতো ছেলে হয়না! আমাদের দুঃসময়ে কতটা পাশে ছিলো, এখনও আছে। তুমি যেটা চাও সেটাই করো। আমার এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই। ”
তুর তাহমিনার গালে চুঁমু দিয়ে বললো,
– ” থ্যাংকইউ সো মাচ আম্মু। & লাভ ইউ এ লট। ”
তুর উঠে নিজের ঘরে চলে আসে। দরজা লাগিয়ে সে ব্যালকোনিতে এসে দাড়ালো,
– ” বিশ্বাস! আমার মায়ের এই অন্ধবিশ্বাস নিয়েও তুই খেলেছিস আবিদ! আজ থেকে তুই জানের খেলা দেখবি। ফাঁকা মাঠে তো সবাই গোল দিতে পারে ভাই, বড় হচ্ছিস, বুদ্ধি বাড়ছে সুতরাং এখন থেকে ম্যাচ খেলে গোল দিতে শেখ। বাই দ্যা ওয়ে তুই কি কষ্ট পাবি? অনন্তর মতো তোকেও শেষ করলে? তুই কষ্ট না পেলেও আমার আম্মু অনেক কষ্ট পাবে রে ভাই! সে কথা ভেবে আমার নিজেরই এখন খুব কষ্ট হচ্ছে, ভীষন কান্না পাচ্ছে। ”

তুর কাঁদো কাঁদো মুখ করে কথাগুলো বলে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। মনে পড়লো অনন্তর বলা একটি শব্দ ‘ সাইকো ‘। আসলেই কি তুর সাইকো? জানোয়ারের মতো স্বভাব ওর? নাকি জানোয়ারদের সঙ্গে জানোয়ারের মতো ব্যবহার করায় পেয়েছে এই তকমা।যাই হোক পেয়েছে যখন তখন সেটাকে ধরে রাখতে হবে কিছুসময়। কিন্তু অনন্তর লাশ নিয়ে গেলো কে? মরা লাশ নিয়ে কার কি লাভ? তাও আবার পোড়া লাশ।
তুরের চোখ নিচে গেটের কাছে যেতেই ওর নজরে পড়ে একটা সাদা গাড়ি।
– ” এটা তো রোদ্দুরের গাড়ি। রোদ্দুর এখানে কি করতে আসছে? ওহ সীট আম্মুকে তো সবটা ভুলভাল বলে এসেছি। এই ব্যাটা যদি ওর বউ’য়ের কথা বলে দেয়! আম্মু কষ্ট পাবে। এটাকে এখানে আসতে বলেছে কে? ইডিয়েট। ”

তুর দ্রুত নিচে নেমে আসে। তাহমিনা ড্রইংরুমে বসে অফিসের ক্লাইন্টদের সাথে কথা বলছিলো, এমন সময় উনি লক্ষ করলেন একটা ছেলে ছুটে এসে তুরকে জড়িয়ে ধরেছে। তুরের হাতের ব্যান্ডেজ চেক করছে, চোখে মুখে ভয় এবং দুশ্চিন্তার ছাঁপ। তাহমিনা ইশারায় সবাইকে চলে যেতে বলেন।
– ” তুর! ও কে? ”
তুর রাগে দাঁত কিড়মিড় করছিলো। মায়ের ডাক শুনে ও হাসি হাসি মুখ করে বললো,
– ” আম্মু ও রোদ্দুর। আমার হাতে ব্যাথা তো তাই চিন্তার জন্য চলে এসেছে। ”
এরপর রোদ্দুরের বুকে হালকা ধাক্কা দিয়ে, দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
– ” পাগল ছেলে! এতো চিন্তা করতে আছে? আমি ঠিক আছি তো। হসপিটালে যাও, কতো পেসেন্ট আছে ওখানে। তোমার জন্য অপেক্ষা করছে, যাও যাও ”

রোদ্দুর অসহায় চোখে তাকালো। তাহমিনা রেগে বললো,
– ” এটা কেমন ব্যবহার তুর? রোদ্দুর প্রথমবার তার শশুড়বাড়ি আসলো আর তুই ওকে যেতে বলছিস? যা ওকে নিজের ঘরে নিয়ে যা! বাবা রোদ্দুর তুমি তুরের সঙ্গে যাও। আমি মিটিংটা শেষ করেই আসছি। ”
রোদ্দুর মাথা নেড়ে বলে,
– ” আচ্ছা আম্মু। ”
রেগে গিয়ে তুর রোদ্দুরের পিঠে চিমটি দেয়। রোদ্দুর মৃদু চিৎকার দিতেই তাহমিনা বেগম বললেন ‘ কি হয়েছে? ‘। রোদ্দুর মাথা নেড়ে ‘ কিছু না ‘ বলার ভঙ্গি দেখাতেই তাহমিনা চলে গেলেন। তুর রোদ্দুরের হাত টেনে উপরে নিয়ে আসে। এরপর দরজা লাগিয়ে রাগি গলায় বলে,
– ” এসব কি? কেন এসেছেন এখানে? আসার আগে আমায় জানাতে পারেননি? দেখুন আম্মুকে আপনার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই। আম্মুকে এটুকু বলবেন যে আমি আপনাকে ভালোবাসতাম, দেন বিয়ে করেছি। ”
রোদ্দুর খাটে হেলান দিয়ে বসতে বসতে বললো,

– ” আমি এগুলো কেন বলবো? ”
তুর ভ্রু কুঁচকে তাকায়। রোদ্দুর তুরের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। তুরের সারা শরীর জ্বলে গেলো রোদ্দুরের এই মুচকি হাসিতে।
– ” এসেছেন কেন এখানে? ”
– ” আমার শশুড়বাড়ি! আমি আসবো না তো কে আসবে? সবার সাথে আলাপ করতে এসেছি! তাছাড়া ওবাড়িতে একা থাকতে ভালো লাগে না আমার। তাই ভাবছি এখন থেকে এখানেই থাকবো। যদি থাকতে না দেন তাহলে আপনার আম্মুকে সব বলে দিবো।”
– ” নাহ। ”
তুরের মাথায় আরেক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। রোদ্দুর এখানে থাকলে আম্মুকে দেখানোর জন্য হলেও ওদের একসাথে থাকতে হবে যেটা তুর মোটেও চায়না। আবার রোদ্দুরকে না বললেও জ্বালা, রোদ্দুর যদি সত্যি সত্যি সবটা বলে দেয়। রাগে, বিরক্তিতে তুরের হাত চুলকাচ্ছে। সবকিছু ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে ওর, কিন্তু কিছুই করতে পারবে না। তুর নরম গলায় বললো,
– ” দেখুন বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করুন! এখানে থাকলে আম্মু আপনাকে আমার ঘরে থাকতে বলবে। একসাথে থাকতে হবে আমাদের। ”
– ” আমি তো সেটাই চাই। একসাথে না থাকলে বাচ্চা হবে কিভাবে? যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে তো, আমি এখান থেকে যাবোই না! ”
– ” সারাদিন বাচ্চা বাচ্চা! বাচ্চা হতেও তো নয়মাস লাগে ভাই! মুখটা বন্ধ রাখেন প্লিজ। এমনিতেই টেনশনে আছি, এর ওপর আর চিন্তা বাড়াইয়েন না। ”

তুরের ব্যন্ডেজ চেঞ্জ করে তুর নিজের কম্পানিতে চলে আসে। সবাই স্বাগত জানাচ্ছে তুরকে, তুরের কেবিনের ঠিক সামনে দাড়িয়ে আছে আবিদ! হাতে ফুলের তোরা।
– ” ওয়েলকাম বোন! ওয়েলকাম টু ইউর অফিস! ”
তুর হেসে বলে,
– ” আমার নয় ভাইয়া, বল আমাদের! আর আমি তো শুধু দেখতে এসেছি! এখন থেকে এই কম্পানির সব দায়িত্ব তোর। তুই হবি এই কম্পানির এম.ডি। অফিসিয়ালি ব্যাপারটা ঠিক করতে সময় লাগবে তাই আমি আজ এনাউন্স করে যাবো তোর বিষয়টা। ”
আবিদের চেহারায় খুশির ঝলক দেখা যায়। এমন বাক্য যে ওর জন্য আনন্দদায়ক সেটা জানে তুর! কিন্তু তুরের ঠোটে হাসি নেই কেন? সেটা ভেবে চিন্তায় পড়ে যায় আবিদ। তুর সবই করছে কিন্তু ওর সামনে এসেও হাসছে না, আবিদের মন পড়তে তুরের সময় লাগলো না। তুর হেসে বললো,

– ” হাতে-পায়ে অনেক ব্যাথা ভাইয়া। কি জানি কারা এমন করলো, আমাকে মেরেই বা কি লাভ তাদের? কি চায় তারা? আম্মু চিন্তা করছে অনেক। তুই বল, চিন্তা করে কি কোনো লাভ আছে? মানুষকে তো একদিন মরতে হবেই! সেটা আজ হোক কিংবা কাল। ”
‘ আজ হোক কিংবা কাল ‘বাক্যটি টেনে বললো তুর। তুরের টান দেখে আবিদ চোখ বড় বড় করে তাকায়। তুর নিজের ব্যাগ থেকে গাড়ির চাবি বের করে আবিদের হাতে দিলো,
– ” ভাইয়া এটা তোর গাড়ির চাবি! এখন থেকে আমার গাড়িটা তোর। আসছি, শরীর ভালো না। ক্লান্ত লাগছে অনেক। বাড়ি যাচ্ছি। টাটা ”
আবিদ মুখে হালকা হাসি রেখে বলে,

– ” সাবধানে যাস! পৌঁছে আমাকে জানিয়ে দিস। নাহলে আমার চিন্তা হবে অনেক! ”
– ” জানি তো! তোরা আমাকে কতটা ভালোবাসিস সেটা আমার থেকে ভালো আর কে জানে বল? কিন্তু দেখ তোদের মতো করে সবাই আমাকে ভালোবাসতে পারলো না। জানি না কি করেছি, কার সাথে অন্যায় করেছি যে এভাবে নিজের জীবন সংকটে ফেলতে হচ্ছে। ”
তুর কথাটি বলেই বেড়িয়ে আসে অফিস থেকে। আবিদ তুরের কেবিনে ঢুকে তুরের চেয়ারে আয়েশ করে বসলো। তুর একটা নোটিস টানিয়ে দিয়েছে অফিসের সামনের দেয়ালে। আবিদের এম ডি হওয়ার নোটিস! আবিদ তুরের চেয়ার ঘুরিয়ে টেবিলে হাত রেখে বসলো। গাড়ির চাবিটার দিকে তাকিয়ে ঈষৎ হাসলো।

– ” আমার বোকা বোন! শুধু গাড়ি নয়, তোর সবকিছু একদিন আমার হবে! তোর বাবার এই বিশাল সাম্রাজ্যের মালিক তুর নয় আবিদ এবং অনামিকা হবে। স্যরি বোন জানি আমার কথা জানতে পারলে হয়তো তুই অনেক কষ্ট পাবি, কিন্তু কি করবো বল? যার জন্য এতোবছর অপেক্ষা করেছি সেই সম্পত্তিকে হাতছাড়া করা আমার পক্ষে সম্ভব না। তারওপর এই প্রপার্টির শেয়ার আরও পাঁচজনকে দিতে হবে। কথা দিয়েছি তাদের। সেই কথা তো রাখতে হবেই। আমার প্রতি তোর এই ভালোবাসার যথাযথ দাম না দেওয়ার কারনে আমি সত্যিই মর্মাহত! ”

বাড়ি ফিরেই তুর দেখলো রোদ্দুর ওর মায়ের সঙ্গে বসে গল্প করছে! তুরের কপালে আবার সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়ে। রোদ্দুরের হসপিটাল নেই? পেসেন্ট নেই? এই লোক এখনও বাড়িতে কেন? তুরের মনে ভয় ঢুকে গেলো, রোদ্দুর যদি কথায় কথায় ওর আগের বউ’য়ের কথা বলে দেয়? মস্তবড় ঝামেলা হয়ে যাবে তখন। ওদিকে তুরকে ফিরতে দেখে রোদ্দুর ব্যস্ত হয়ে পড়ে, দ্রুতপায়ে তুরের দিকে এগিয়ে এসে ওকে কোলে তুলে নিলো। রাগে তুরের শরীর রি রি করে ওঠে, সামনে আম্মু বসা। কিছু বলা যাবে না, ভেবে দাঁত চেপে বসে,

বিষাক্ত অনুরাগ পর্ব ৩

– ” আহা! কি করছো রোদ্দুর? নামাও আমাকে। আম্মু আছে সামনে। ”
রোদ্দুর তাহমিনার দিকে জিজ্ঞাসাসূচক দৃষ্টিতে তাকালো। তাহমিনা ঠোট টিপে হাসছে। রোদ্দুর প্রশ্ন করে,
– ” তুমি কি কিছু মনে করছো আম্মু? আমার জানকে আমি কোলে নিতেই পারি তাইনা? ”
তাহমিনা হেসে উত্তর দিলো,
– ” হ্যাঁ অবশ্যই। তোমরা উপরে যাও। আমি রাতের খাবার উপরে তোমাদের ঘরেই পাঠিয়ে দিচ্ছি। ”
রোদ্দুর মুচকি হেসে তুরকে নিয়ে উপরে চলে আসে। ঘরে ঢুকতেই তুর নেমে যায় রোদ্দুরের কোল থেকে। এরপর রোদ্দুরের কলার চেপে ধরে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,
– ” ওভার এক্টিং হয়ে যাচ্ছে না ডক্টর রোদ্দুর? এসব নাটক আমার মোটেও পছন্দ নয়। ফারদার এমন করলে, ”

রোদ্দুর তুরের হাত টেনে চুঁমু খেলো। তুর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় রোদ্দুরের কাজে। রোদ্দুর তুরের ঠোটের দিকে এগোচ্ছে। তুর ভয়ে চোখ বুজে নেয়। রোদ্দুর মৃদু হেসে তুরের চোখে ফু দেয়! শীতল কন্ঠে বলে,
– ” এভাবে জোর খাটাবেন না মিসেস তুর! আমি নিজের ওপর থেকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবো। আপনি জানেন, আপনি রাগ করলে আপনাকে কতটা মিষ্টি দেখায়? আপনাকে দেখে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ হই আমি। আপনি বোঝেন, আমার মনের ব্যাকুলতা? আপনি অফিসে গিয়ে এতক্ষণ ছিলেন কেন? আমি কখন থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। কতবার, অস্থির চিত্তে দরজার পানে তাকিয়েছি। ”

তুর চোখ খুললো। রোদ্দুর তুরের বাহু ধরে ওর দিকে ঝুকে আছে। তুরের চোখের কোনে পানি দেখে রোদ্দুর বিষ্মিত হয়ে দূরে সড়ে দাড়ায়,
– ” নেক্সট টাইম আমাকে হুমকি দিলে আমি আপনার আম্মুকে সবটা জানিয়ে দিবো, ইট্স মাই হুমকি। বুঝেছেন? এবার খাটে চুপটি করে বসুন। আমি দেখছি খাবারের কি খবর! ”

বিষাক্ত অনুরাগ পর্ব ৫