ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ৮ || লেখায়- মোসাঃফাতেমা আক্তার

ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ৮
লেখায়- মোসাঃফাতেমা আক্তার

আমি সন্ধ্যার কথায় চোখ বড় করে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। এই মেয়ে বলে কি? আমি তো এখনো বিয়েই করি নি। বউ আসবে কই থেকে?
আমি ওকে বললাম,
– মানে?
ও বললো,
– আবার কিসের মানে?
– তোমার একটু আগে বলার কথা বুঝি নি। কী বলছিলে তখন আবার বলো।
– আপনি কি কানে কম শুনেন?
– না?
– তাহলে?
আমি সন্ধ্যার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বললাম,

– সন্ধ্যা কথা পেঁচানো কিন্তু আমার একদমই ভালো লাগে না, যা বলবা ক্লিয়ার করে বলবা।
ও বললো,
– ওরে বাবা এতো রাগ। তো মিস্টার ধূসর আমি যা বলছি তখন।সেটা হলো ” আপনি এতো রাতে ছাঁদে তাও আবার গিটার নিয়ে বসে আছেন, বউয়ের কথা মনে পড়ছিলো বুঝি?” এটাই জিজ্ঞেস করছি আর কিছু না। এভাবে চোখ গরম করে তাকাবেন না আমি ভয় পাই।

ওর বলা শেষ কথায় হাসবো কি না রাগ করবো বুঝে পেলাম না। নিজে অজান্তে আমি উচ্চ শব্দের করে হাসতে লাগলাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে ড্যাবড্যাব করে আমার মুখ মন্ডলের কোন একটা অংশের দিকে তাকিয়ে আছে। অনেক কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে আমি ওকে বললাম,
– এই একই প্রশ্ন তো আমিও করতে পারি। যে তুমি এতো রাতে ছাঁদে এসেছো কেন? বরের জন্য মন খারাপ লাগছে?

ও আমার কথায় মুখ জামটা মেরে বললো,
– আমার আবার বর। ইস জন্মে আমি বিয়ে করবো কিনা সন্দেহ।
আমি তখন মনে মনে বললাম,
– তুমিই আমার অর্ধাঙ্গিনী হবে, তুমি মিলে নিও। কিন্তু মুখে বললাম,
– কেন বিয়ে করবে না? ছেলেরা কি তোমায় চিমটি দিয়েছে?
ও বললো,
– ঐই রকমই কিছু।
– আচ্ছা এখন আসল কথায় আসি।
ও বললো,
– সেটা আবার কি কথা?
আমি ওর কথা শুনে চোখ ছোট করে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
– ঐই যে একটু আগে বললা, আমি নাকি আমার বউ কে মিস করছি তাই ছাঁদে গিটার হাতে বসে আছি। সেই ব্যাপার টায় তোমার ধারনা ক্লিয়ার করা দরকার।
ও তখন হেঁয়ালি শুরু বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– আমার কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার করবার জন্য এতো উত্তলা হচ্ছেন কেন? কি হই আমি আপনার?
আমি কি ভাবলাম বা কি মনে করলাম তাতে আপনার কি কিছু আসে যায়?
ওর বলা প্রতিটা বাক্যটা সোজা গিয়ে আমার হৃদয়ে লাগলো। চিনচিন করে একটা ব্যাথা অনুভব করলাম আমি আমার হৃদয়ে। এই মুহুর্তে এই ৫ তলার উপর ছাঁদে বসে আমি অনুভব করতে পারলাম আমার পাশে বসা অপরূপ সুন্দরীকে আমি আমার নিজের অজান্তে ভালোবেশে ফেলেছি। আমি আমার এই অনুভূতিকে এতো দিন কোন তোয়াক্কা করি নি। আমি আমার অনুভূতিকে এখন বুঝি কারণ আমি টিনএজের কোনো নিব্বা নই। এখন আমি বলতে পারবো গর্ব করে যে আমার ২৬ বছরের জীবনে, আমার প্রথম ভালাবাসা সন্ধ্যা। আমি যখন এইসব ভাব ছিলাম ঠিক তখনই সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে আমি আমার অজানতে বলে ফেলাম,

– তুমি আমার জীবনের ২৬ বসন্তের পর কুঁড়ে পাওয়া ভালোবাসা। তোমার জন্য উত্তলা হবো না তো কার জন্য হবো বলো? তুমি এই মুহুর্ত থেকে আমার সব , আমার বুকের বাপাশের একমাত্র উত্তরাধিকারী। তোমরা ভাবনাই তো আমার বেঁচে থাকবার সম্বল, কারণ তুমি আমার এই প্রানহীন জীবনে ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা হয়ে এসেছে”।
সন্ধ্যার কথায় আমার ধ্যান ভাঙ্গলো , ও আমায় বললো,
– বাহ ভালোই তো বলেন লাইন গুলো। কবিতা লিখেন বুঝি?
– আরে না কবিতা লিখি না। মাঝে মাঝে দু এক লাইন লিখা হয়,এই আরক কি।
-আচ্ছা গিটার টা কি শুধু শুধু নেছেন নাকি গান টান কিছু একটা গাইবেন?

আমি এতক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে কথা বলছিলাম ওর সাথে। কিন্তু ও যে অপকটে আমাকে গান গাইতে বলছে তা আমি খুব সহজেই ধরতে পেরেছি। এখন আমার ওকে একটু দেখবার ইচ্ছে হলো । তাই ওর দিকে মুচকি হেসে তাকালাম। তারপর গিটারে সুর তুলে শুরু করলাম গান ।

//সুন্দরীতমা আমার!!!!
তুমি নীলিমার দিকে তাকিয়ে
বলতে পারো,
এই আকাশ আমার?
নীলাকাশ রবে নিরুত্তর,
মানুষ আমি চেয়ে দেখ।
নীলাকাশ রবে নিরুত্তর,
যদি তুমি বল আমি
একান্ত তোমার।
আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেব,
তুমি আমার!!!
আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেব।
আমি তোমার!!
ক্যামেলিয়া হাতে এই সন্ধায়,
ভালোবেসে যতখুশি,
বলতে পারো,
এই ফুল আমার।
ফুল শুধু ছড়াবে সৌরভ,
লজ্জায় বলবে না কিছুই,
ফুল শুধু ছড়াবে সৌরভ,
লজ্জায় বলবে না কিছুই,
ফুল থাকবে নীরব।
আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেব,
তুমি আমার!!!
আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেব,
আমি তোমার!!
জোছনা লুটালেই,
তুমি অধিকার নিয়ে,
বলতে পারো,
এই জোছনা আমার।
এই চাঁদ খুজবে না উত্তর,
একবার যদি বল,
এই চাঁদ খুজবে না উত্তর,
একবার যদি বল আমাকে,
আমি থাকবো না নির্বাক।
আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেব,
তুমি আমার!!
আমি তারায় তারায় রটিয়ে দেব,
আমি তোমার!!

আমার দিনকাল এখন আগের থেকে ভালোই চলছে৷ এখন আর মরে যেতে ইচ্ছে করে না। সারাদিন এনজিও, ভার্সিটি, পড়াশোনা, সন্ধ্যা আর রুবির সাথে গল্প করেই কখন যে দিন চলে যায় খেয়ালই থাকে না৷ এই ভাবে কেটে গেলো আরো ১৫ দিন। যেদিন আমি বাড়ী গিয়ে আমার সার্টিফিকেট, জন্ম নিবন্ধনের কাগজ, মা বাবার এনআাইডি কার্ডের ফটোকপি, আমার এনআইডি কার্ড আনতে গিয়ে ছিলাম। বাসায় কেউ আমি আসার সময় কিছু বলে নি। কিন্তু চলে আসার সময় ভাবি বলেছিলো,
– কি কুহু প্রেমিকের বাড়ী ঠায় হয় নি তোমার আজ তাই এ বাড়ীতে এসে আমাদের টাকা পয়সা নিতে এসেছ?

ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ৭

হ্যাঁ কেমন প্রেমিক জোটালে কপালে। একদিন নিজের কাছে রেখে পরের দিন প্রেমিকাকে বাপের বাড়ী পাঠায় টাকা নিয়ে আসার জন্য? আচ্ছা তুমি নিজের কি মনে করো বেশি সুন্দরী যা দিয়ে পুরুষ মানুষের মন বস করবে। শুনো চেহারা সুন্দর হলেই হয় না। শরীর পবিত্র হওয়ার লাগে যা তোমার নেই। তোমার গায়ে যে কলঙ্ক লেগেছে, তা রূপ দিয়ে কেন টাকা দিয়েও তুলা যাবে না। ভালোই করেছো এবাড়ী থেকে চলে গিয়ে। অন্তত পক্ষে আমরা সমাজে একটু মুখ দেখাতে তো পারবো। সোসাইটিতে আমাদপর যে সমান ও মর্যাদা ছিলো সব তোমার জন্য আর নেই। তুমি এমন কেন? কেউর ভালো দেখতে পারো না এখন এসেছ এবাড়ী থেকে টাকা পয়সা নিয়ে প্রেমিকের সাথে এনজয় করতে লজ্জা করে না তোমার?

ভাবির কথা শুনে মাথায় রক্ত উঠে গেলো সেন্টার টেবিলের উপর ব্যাগটা রেখে এক এক করে সব জিনিস বের করে ফেললাম। ব্যাগে জিনিস বলতে, আমার সার্টিফিকেট গুলো, মা বাবার, এনআইডি ক্যার্ড, আমার জন্ম নিবন্ধন ও এনআইডি কার্ড, নানুর একটা শাড়ী এবং খুচরো ২০০ টাকা । এই জিনিস বের করে ব্যাগ ওনার সামনে দুবার ঝাড়া দিলাম কিছু নেই বুঝার জন্য। আবার ব্যাগের ভেতর জিনিস গুলে নিয়ে ভাবীর সামনে এসে তাকে বললাম,

– ভাবি আমি দোয়া করবো আপনার ঘরে জেনো কেনো মেয়ে জন্ম না নেয়। আল্লাহ তায়ালার কাছে এটাই দোয়া করবো কারণ আপনি আমাকে আজকে যে কথা গুলো বলেছে। সেগুলো যে আপনার ছেলের বউয়ের থেকে আপনার মেয়েকে না শুনতে হয়। চললাম ভালো থাকবেন জীবনের শেষ নিশ্বাস , নেওয়ার সময়ও যাতে আপনাদের কাছে না আসতে হয় সেই দোয়াই করবো রোজ।

ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ৯