ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ৯ || লেখায়- মোসাঃফাতেমা আক্তার

ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ৯
লেখায়- মোসাঃফাতেমা আক্তার

আমিও মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি। ইহ জন্মে আমি আমার বাবা মায়ের কাছে যাবে না যতো যাই হোক।ঐই দিন যদি আমি জুঁই খালামনির গাড়ীর সামনে না পড়তাম তাহলে কিন্তু আমি এতো দিনে মরে যেতাম। আমার বাবা মা কখনোই আমার খোঁজ করতো না তা আমি জানি। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। এই ভাবেই দিনকাল চলছে আমার।

আজকে এনজিও তে যাবো না, ভার্সিটিতে একটা জরুরি ক্লাস থাকায় আজকে ভার্সিটিতে যেতে হবে। এমনেই অনেক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ক্লাস। বাড়ী থেকে আমি আমার কোনো পোশাকই আনি নি। তাই খালামনি কয়েক সেট জামাকাপড় কিনে দিয়ে ছিলো। সেখান থেকে একটা নীল লং টপস নিয়া পরে নিলাম। আয়নার সামনে এসে গোলাপি রঙের একটা সিফন হিজাব পরে নিলাম। রুবি রুমে গেলাম ওদের জানাতে আজকে ভার্সিটিতে যাবো।

রুমে গিয়ে দেখি দুইজন মুখভার করে বসে আছে। এদের কে কখনো আমি এমন মুখভার করে বসে থাকতে দেখি নি। এই ক দিন আমি এই দুজনের মুখ কখনো ভার দেখি নি।
আমি ওদের দুজনের দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে আছি। তারপর বললাম
– সমস্যা কি?
সন্ধ্যা বললো,
– কই যাচ্ছিস এখন তুই?
আমাদের তিনজনের সম্পর্কে এখন তুই হয়ে গেছে মানে আমার তিন ভালো বন্ধু হয়ে গেছি।
আমি বললাম,
– কেন ভার্সিটিতে যাবো?
রুবি সন্ধ্যা কে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই বললো,
– শুন না কুহু আমরাও তোর সাথে যাবো। প্লীজ না করিস না লক্ষীটি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি রুবি কথা শুনে বুঝতে পারলাম কেন ওদের এমন মুখভার একটু ভাব নিয়ে বললাম,
– আসলে ঢাকা ভার্সিটি মতো একটা জায়গায় আমি চান্স পাইছি, সবাইরে ঐই ভার্সিটি নিয়ে কত স্বপ্ন থাকে। আহারে সবাই তো চান্স পায় না। তোরাও ভর্তি হইতে পারলি না। আচ্ছা এতো করে যখন বলিছস তাইলে চল।
আমি এই কথা বলতে দেরী দুরুম করে পিঠে কিল পড়তে দেরী হয় নি। কিলটা সন্ধ্যাই দিয়েছে। আর রুবি সে তো খুব চালাক । আমি যখন সন্ধ্যা কে ধরবার জন্য ওর পিছনে ছুটে যাবো ঠিক তখনই রুবি আরেকটা কিল আমার পিঠে দিয়ে দৌড়।

আজকে আমার জন্য ছোট খাটো একটা কিল দিবসও বলা চলে। ওরা আগে থেকেই রেডি ছিলো তাই আর সময় নষ্ট না করে রওনা দিলাম তিন জন ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্য।
নিচে নেমে এসে দেখি ওরা আগে থেকেই বাইকে বসে পড়ছে নিজেদের। আমার জায়গা হলো সন্ধ্যার বাইকে।
সন্ধ্যা এক নাছোড় বান্দা যখন যেটার ইচ্ছে হবে ঠিক তখনই তার সেটাই চাই। এই তো ১ মাস আগে বলে খালামনির কাছে আবদার করেই বাইক কিনেছে। খালামনিও কিনে দিয়েছে। এই কথা খালামনি বলেছে আমায়।
বাইকে বসে সন্ধ্যাকে বললাম,
– বোইন তুই মরলে মরিস, আমারে মারিস না দোস্ত আল্লাহর দোহাই লাগে। স্পিড কমাইয়া চালাইছ বাইক।

সন্ধ্যা কিছু একটা বললো, তা আমি আর৷শুনতে পারলাম না। তার আগেই বাইক প্রচন্ড স্পিডে চলতে শুরু করলো। আমি খুব শক্ত করে ওকে ধরে বসলাম। ভয় আমার জান যায় যায় অবস্থা। পাশে তাকিয়ে দেখি রুবি দাঁত বের করে হাসছে আমার অবস্থা দেখে।
একদলা থুথু ছুড়ে মারলাম ওর দিকে যা গিয়ে পড়লো রাস্তায়। ওর শরীরেই পড়ে নি। তার জন্য সে দাঁত বের করে খিলখিল করে হাসছে। ট্রাফিকের জন্য দাঁড়াতে হলো। এর মাঝে ঘটলো এক অপ্রত্যাশিত ঘটনাৃ। কই থেকে জেনে একটা ছেলে বাইক নিয়ে এসে আমাদের পাশে ব্রেক করলো। সন্ধ্যা তাকে দেখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আমি দুইজনে মুখে দিকে তাকিয়ে আছি কেউ কিছু বলছে না। কিন্তু তাদের চোখ বহু কথা বলে যাচ্ছে।

ভার্সিটিতে যাচ্ছিলাম ট্রাফিক জন্য বাইক থামানোর পর, আমার চোখ পড়লো ধূসর রঙ্গের কুর্তি পড়া সন্ধ্যার উপর। বাইকের সামনে বসে আছে সে তার পেছনে একটা মেয়ে। আমি আর কিছু না ভেবে ছুটে চলে গেলে তার কাছে গিয়ে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে রইলাম ও আমার দিকে বরাবরে মতো তাকিয়ে আমার মুখমন্ডলের কোনো একটা অংশের দিকে তাকিয়ে আছে।
এর মাঝেই ট্রাফিক ছুটে গেছে আমি ওকে বললাম,

– চলো আমার সাথে।
সন্ধ্যা আমার দিকে এখনো তাকিয়ে আছে,
আমি ওর ডান হাত টা ধরে আবারও বললাম,
– চলো আমার সাথে।
সন্ধ্যা আমার হাতের দিকে তাকিয়ে রইলো, আমি আবারও বললাম,
– সন্ধ্যা চলো আমার সাথে।
ওর কি হলে জানি না আমার কথা শুনে বাইক থেকে নেমে গেলো। নেমেই কাকে জেনো কল দিয়ে বাইকটা নেওয়ার কথা বলে। ওর সাথে যে মেয়েটা ছিলো তাকে বললো রুবি সাথে যেতে
, মেয়েটা নেমে গেলো বাইক থেকে ।
ও আমাকে বললো ৫ মিনিট সময় হবে?
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। দুইজনই বাইক সাইডে করে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে রইলাম, সন্ধ্যা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।৫ মিনিট পর একা ছেলে এসে সন্ধ্যার বাইক টা নিয়ে চলে গেলো। এর ওর সন্ধ্যা মাথা নিচু করে বললো,

– চলুন।
আমি একটু মুচকি হেসে বাইকে গিয়ে বসলাম ওর আমার পিছু পিছু এসে ততক্ষণে বাইকে এসে বসলো। ও ওর হেলমেট টা পড়ে নিলো আমিও হেলমেটা পরে ছুটলাম নবথেয়েটার।
তেজগাঁও ভিআইপি রোডে এসে নামলাম দুজনে। হেলমেট হাতে নিয়ে। কাউন্টার থেকে টিকেট কিনে নবথেয়েটারে প্রবেশ করলাম। বাইরে বাইক পার্ক করে রেখে এসেছি। তাই আর বাইক নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। নবথেয়েটারে ডান দিকে সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে গেলাম। আমার পিছু পিছু সন্ধ্যাও আসলো। এর পর আমার দুজন দোতালার র‍্যলিং এর পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। সন্ধ্যা একদম চুপ কোনো কথা বলছে না আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম কতক্ষণ । একটু পর সন্ধ্যা ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বললো,

– এখানে নিয়ে আসার কারণ কি?
আমি বললাম,
– কিছু না।
ও বললো,
– ওহ।
আমাদের দুজনের মাঝে দূরত্ব ২ হাতের মতো। আমি একটু এগিয়ে গিয়ে বললাম,
– সন্ধ্যা কেমন আছো তুমি?
ও বললো,
– আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
ওর কথা শুনে আমি মুচকি হেসে বললাম,
– আলহামদুলিল্লাহ, তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।
বলেই আমি আরো একদম এগিয়ে গেলাম।
ও তখনো নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো বলেই কিছু বুঝলো, এর পর বললো,
– কি কথা?
আমি বললাম,
– আচ্ছা। এই পনের দিন তুমি কোথায় ছিলে?
ও বললো,

ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ৮

– কোথাও না তো বাসায় ছিলাম, কেন?
– এই পনের দিনে তোমাকে একবারও দেখতে পেলাম না তাই , জিজ্ঞেস করলাম এই আরকি।
ও আমার কথা শুনে চোখ তুলে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।এর বললো,
– আমাকে দেখার কি কোনো দরকার ছিলো?
ওর কথা শুনে আমি মুচকি হেসে বললাম,
– হয়তো।
ও এবার বললো,
– এই আপনার কথা?
– না।
ও আমার দিকে চোখ ছোট করে বললো,
– তাহলে?
আমি একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললাম,
– শুনো ধূসর রঙ্গের মেয়ে তুমি আমার এই প্রানহীন জীবনে ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। হবে আমার সহধর্মিণী। আমার অর্ধাঙ্গিনী?
ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে, এমন করেই তাকিয়েছি রইলো কতক্ষণ তারপর অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইলো। আমি অন্য দিকে চলে গেলাম ওকে একা থাকে দেওয়ার জন্য ঠিক তখনই ও বলে উঠলো,

-এই যে শুনুন।
হ্যাঁ আপনাকেই বলছি, এমন মাদকা চাহুনিতে তাকাবেন না আমার দিকে।
আপনার ঐ চাহুনিতে আমার হৃদ মাঝে তোলাপাড় সষ্টি হয়।
ওহ!! হ্যাঁ আরেকটা কথা শুনুন আপনার মাদক মাদক চাহুনি। আমার নামের সিল মেরে দিলাম আজ থেকে।
কারণ আপনি একান্ত আমার এবং আপনার মাদক মাদক চাহুনি আজকে থেকে আমার জন্য বরাদ্দ করা হলো।

ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ১০