ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ১০ || লেখায়- মোসাঃফাতেমা আক্তার

ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ১০
লেখায়- মোসাঃফাতেমা আক্তার

সেদিনের কথা আমার চোখের সামনে পানির মতো স্বচ্ছভাবে ফুটে উঠে এখনো।
আমি যখন ধূসরের কথার উত্তর দেওয়ার পর তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। ঠিক তখনই খেয়াল করলাম, ও কার সাথে যেনো ফোনে কথা বলছে দূরে গিয়ে। আমার কথা যে কিছুই শুনতে পায় নি তা আমি নিশ্চিত। কারণ আমি যখন তার প্রশ্নের উত্তর দিছিলাম তখন আমি আমার দৃষ্টি ফ্লোরে দিকে নামিয়ে নিয়ে ছিলাম। ধূসর কোথায় অবস্থান করছিলো তা সম্পের্ক আমি অবগত ছিলাম না। আমি মনে করেছিলাম ও আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তাই আমি খুব নিচু স্বরে কথা বলেছিলাম তখন। তারপর যখন সামনে তাকিয়ে দেখলাম ধূসর আমার থেকে অনেক দূরে মানে করিডোরের আরেক প্রান্তে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।

ঠিক তখনই আমি ধূসরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বলেছিলাম,
– এতো সহজে আমি আমার মনে কথা শিকার করবো না। তোমাকে আরো একটু ঘুরাই তারপর না হয় আমি তোমার কাছে আমার ভালোবাসার কথা শিকার করবো।
কিছুক্ষণ পর ধূসর কল কেটে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো তারপর আমায় বললো,
– আমার উত্তর কিন্তু পেলাম না সন্ধ্যা?
– কিসের উত্তর?
– কি বলো এর মাঝেই ভুলে গেলে?
আমি ওনার দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে বললাম,
– ঐই মিয়া কথা পেঁচান কেন?
– আমার প্রপোজালের উত্তর টা তো পেলাম না?
আমি বললাম,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– শুনুন আপনি আমার কাছে একদমই একজন অপরিচিত ব্যক্তি।আপানর সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আপনার পরিবার বা ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে কিছুই জানি না৷ হুট করে আমি আমার জীবনের এতোবড় সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না। আমার সময় লাগবে। আবার আমি আপনাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম সেদিন আপনি ছিলেন বিয়ের বর সাজে। আগের আপনার বিয়ে হয়েছে কিনা তা তো জানি না। দেখুন আমি সতীনের সাথে সংসার করতে পারবো না। আমায় সময় দিন। আমি চাই না তারাহুরো করে সিদ্ধান্ত নিতে৷ মনে রাখবেন অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয়। ওনাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি জায়গাটা থেকে প্রস্থান করবার জন্য চললাম ঠিক তখনই ধূসর আমার ডান হাতের কবজি ধরে ফেলো। একটু একটু করে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমার ডান হাতের পিঠে আলতো করে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে বলছিলো,

– সময় চাইছো, সময় নাও আমি বাঁধা দিবো না। শুধু এতোটুকুই বললো শেষ মুহুর্তে যেনো আমারই থাকো এতোটুকুই চাইবো। এই অধমকে একবার ভালোবাসার সুযোগ দাও কথা দিচ্ছি। আমার শেষ নিঃস্বাস পর্যন্ত বুকের বা পাশে আগলে রাখবো তোমায়।
এরপরই আমার হাত ছেঁড়ে দিয়ে ধূসর আমার আগেই জায়গাটা থেকে প্রস্থান করেছিলো।
আমি ওর পিছুপিছু নবথেয়েটার থেকে বেরিয়ে এলাম । বেরিয়ে এসে হাটতে শুরু করেছিলাম তখন। তার একটুপরই ধূসর বাইক নিয়ে এসে আমার সামনে এসে থামিয়ে বলেছিলো,
– বাইকে উঠে বসো।
আমি লক্ষী মেয়ের মতো তার পিছে গিয়ে বসে, বাসায় এসেছিলাম।

সেদিন আমি সারাটা দিন আমার ডান হাতের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ইশ!!! সে যে এক অসাধারণ অনুভূতি ভালোবাসার মানুষটার দেওয়া প্রথম ভালোবাসার পরশ। যা চাইলেও ভুলা যায় না। কারণ তার ভালোবাসার পরশ আমার সর্বাঙ্গে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়ে ছিলো তখন। আমি না চাইতেও ধূসর কে ভালোবেসে ফেলেছি। ভাবা যায়? যে মেয়ে বিয়ে করতে চাইত না সেই মেয়েই এখন একজন অত্যন্ত সুদর্শন পুরুষের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। আমি এখন সারাদিন আয়নায় নিজের মুখশ্রীর দিকের তাকিয়ে থাকি। তাকিয়ে নিজে কে ধূসরের সাথে তুলনা করি। আদও আমি ধূসরের অর্ধাঙ্গিনী হওয়ার যোগ্য? লোকে বলে মানুষ নাকি প্রেমে পড়লে বার বার আয়না দেখে কথা কি সত্য?

আমি এখন রুবির রুমে বসে আছি, রুবি আর কুহুর সামনে।আমার অবস্থা এমন যে আমি চুরি করে ধরা খেয়েছি তাই আমার সালিশ বসেছে। সেই সালিশে বিচারক , শ্রোতা, এবং অভিযোগ করার ব্যক্তিও এই দুজনই। আজকে রুবির রুমে এই বৈঠকের কারণ হলো ওরা দুজন কিভাবে যেনো বুঝে ফেলছে আমি ধূসরের প্রেমি হাবুডুবু খাচ্ছি। ওদের দুজনকে কেন জানায় নি ব্যাপার তাই এই বিচার সভা। আমি অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে বসে আছি। অনেকক্ষণ হলো। আমাকে জহুরির নজরে দেখছে ওরা দুজন। সম্পূর্ণ রুম আসলে রুম না আমাদের ফ্লাট টাই নিশ্চুপ হয়ে গেছে। রুমের পরিবেশ একদমই ঠান্ডা এবং নীরব। একসময় এই নীরবতা ভেঙ্গে কুহু আমাকে প্রশ্ন করলো,

– কাহিনি কত দূর আগাইছে?
আমি বললাম,
-এখনো কিছু আগায় নি কাহিনি।
এর পর রুবি বললো,
-কেন আগায় নি?
আমি বললাম,
– আসলে আমি ওনার থেকে সময় নিয়েছি। আমার মতামত দেওয়ার জন্য।
কুহু বললো,
– ওয়েট, তোরে কি আগে ভাইয়া প্রপোজ করছে?
আমি বললাম,
– হুম, উপর নিচ মাথা নেড়ে।
এরপর রুবি আমার দিকে ছোট চোখ করে তাকিয়ে থেকে অনেকক্ষণ । তারপর বললো,
– কাহিনি পুরাটা বল।কিছু লুকাবি না। এ টু জেড বলবি নইলে আঙ্কেল আন্টিরে বলে দিমু তুই যে প্রেম করস?

রুবির ব্ল্যাকমেইল করা যেনো কাজে লেগেছে । আমি তোতাপাখির ন্যায়৷ ঐদিনের ঘটনা সক্ষিপ্ত ভাবে পুরো ঘটনা বললাম।
আমার কথা শুনে রুবি আর কুহু মানে দুজনেরই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। একটুপর কুহু বললো,
– তুই কি সত্যি ভালোবাসিস নাকি এটা তোর মহো?নাকি আবেগ?
তখন আমি বললাম,
– শুন, ওনি আমার মহোও না আবেগও না। কারণ ওনাকে দেখলে আমার মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়, ধূসরকে না দেখলেও আমার হৃদ মাঝারে তোলপাড় সৃষ্টি হয়৷ ওনার আশেপাশে থাকলে আমি দুনিয়ার সকল চিন্তা ভুলে যাই। ওনি আমার আশেপাশে থাকলে আমি আর আমার মাঝে থাকি না।
আমার কথা শুনে রুবি এবং কুহু গালে হাত দিয়ে সমস্বরে বলে উঠলো,

-আমাদের সন্ধ্যা আপা প্রেমে পড়ছে, ধূসর ভাইয়ের প্রেমে পড়েছে। বলেই দুজন খিলখিল করে হাসতে লাগলো ওদের এমন উদ্ভব কথায় আমি নিজেও না হেঁসে পারলাম না।
তারপর রুবি বললো,
– সন্ধ্যা এখন তো তোকে ট্রিট দিতেই হবে আমাদের নইলে । তুমি যে ধূসর ভাইয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছ তা কিন্তু আমি সম্পূর্ণ এলাকা মাইক নিয়ে প্রচার করবো আর আমার এসিসট্যান্টে হবে মিস কুহু রানী দাস? কি বলেন মিস কুহু রানী দাস?
রুবি কথায় কুহু রাগ করে বললো,
– আমার নাম মিস কুহু রানী দাস না৷ আমার নাম নুসরাত জাহান কুহু ।
এরপর রুবি বললো,

ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ৯

– এই একই এগারো কথা। এখন তুই কি বলিস সন্ধ্যা ট্রিট না দিলে আমারে হেল্প করবি? এলাকায় মাইকিং এর ব্যাপারে?
কুহু আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মেরে বললো,
– হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমাদের দাবি মানতে হবে নইলে এলাকায় মাইকিং হবে সন্ধ্যা আপার অমর প্রেম কাহিনি।
কুহুর কথায় রুবি তাল মিলিয়ে বললো,
– এবারের সংগ্রাম সন্ধ্যা থেকে ট্রিট নেওয়ার সংগ্রাম। এবারে সংগ্রাম সন্ধ্যার প্রেম কাহিনি মাইকিং করার সংগ্রাম।
এরপর কুহু আর রুবি সমস্বরে বলতে লাগলো,

-এবারের সংগ্রাম সন্ধ্যা থেকে ট্রিট নেওয়ার সংগ্রাম। এবারে সংগ্রাম সন্ধ্যার প্রেম কাহিনি মাইকিং করার সংগ্রাম।
সেদিন সন্ধ্যায় আমাকে একপ্রকার বাধ্য হয়েই রুবি আর কুহু কে ট্রিট দিতে হলো। এবং রাতে বাড়ী এসে খালামনি কে মেসেজে জানালাম যে আমি একজনকে ভালোবাসি। আপাতত এতোটুকুই বলেছি বাকিটুকু দেখা হবার পর বলবো বলেছি খালামনি কে।

ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ১১