ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ৭ || লেখায়- মোসাঃফাতেমা আক্তার

ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ৭
লেখায়- মোসাঃফাতেমা আক্তার

এই রকম ভাবে কেউই আমাকে বুঝায় নি ব্যাপারটা। বুঝাবেই বা কিভাবে? আমার পরিবারে সবাই মনে করে।।আমার নিজের দোষের কারণেই আজ আমার এই পরিনতি । তারা আমাকে এখন তাদের ঘাড়ের বোঝা মনে করে এখন। এই দুর্ঘটনা না ঘটলে আমার জীবনে, আমি কখনোই আমার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষের আসল রূপ কখনোই দেখতে পারতাম না। আমি এই সব ভাবছি আর নিচের দিকে তাকিয়ে চোখে পানি মুছে নিচ্ছি। একটু পর ওনি বললেন,

-তোমার বাবা মা মন্তব্য কি এই ব্যাপারে?
আমি ওনার দিকে না তাকিয়ে বললাম,
– আমার মা আমাকে তার গর্ভের কলঙ্ক মনে করে আর বাবা সে এই ঘটনা পর থেকে আমার সাথে দু দন্ড কথা বলে না।
একটু থেমে আবারও বলতে শুরু করলাম,
– দিন রাত মা, ভাবি, ভাইয়ের ধিক্কার শুনতে শুনতে আমি আর টিকতে না পেরে সুইসাইডে পথ বেঁছে নেই। একবার নয় দুইবার নয় ছয় বার আত্মহত্যা করতে গিয়ে আমি বেঁচে ফিরেছি। আমার কি মনে হয় জানেন? আমার প্রাণ কৈ মাছের প্রায়ই একই রকম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– আচ্ছা এখন তুমি কি চাও তোমার বাবা মায়ের কাছে ফিরে যেতে?
– না গিয়ে আর উপায় কি বলুন বেঁচে যেহেতু আছি। অন্তত পক্ষে নিজের পেটের ক্ষুধা মেটাবার জন্য হলেও তাদের কাছে আমার ফেরত যেতে হবে। জানি না, আমার ঠাঁই তাদের দুয়ারে হবে কি না।
অনেকক্ষণ চুপ থেকে মহিলাটি আবার বললেন,
– তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে তুমি এখানেই থেকে যাও আমার ভাগ্নীর সাথে। তোমার ভরনপোষণের খরচ আমি দেবো।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,
– করুণা দেখাচ্ছে আপনি আমাকে?

– আহা,, করুণা হবে কেন। শুনো এর বিনিময়ে তুমি আমার এনজিওতে চাকরি করতে পারো তাহলেই তো হয়। তোমাকে আমার ভালো লেগেছে ।
– সত্যি? আপনি আমাকে চাকুরি দিবেন?
– হ্যাঁ। কেন দিবো না। সন্ধ্যা মতো তুমিও আমার মেয়ে আজকে থেকে।
ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আমি আমার পরিবারের অত্যচারে অতিষ্ঠ হয়ে গেয়েছিলাম। আপনাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিবো?
আপনার রিন আমি কখনো ভুলতে পারবো না।
ওনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন সন্ধ্যা আমাকে ছোট আম্মু বলে, খালামনিও বলে তুমি ও তাই বলে ডাকবে৷ আপনি না তুমি করে বলবে। কেমন?
আমিও অনেক শক্ত করে জড়িয়ে দু নয়ন অশ্রুসিক্ত করতে লাগলাম।

আজকে সারাদিন প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝে কাটাতে হয়েছে এখন রাত ১১ টা বাজতে চললো। মাত্রই বাসায় ফিরেছি। কালকে স্টুডেন্টদের এক্সাম শুরু হবে তাও প্রথমে গনিত পরীক্ষা । তাই আজকে একটু বেশি সময় নিয়ে পড়াতে হয়েছে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি জুবায়ের ডাইনিং টেবিলে খাবার পরিবেশন করছে। খাবার দেখে আমার প্রচন্ড ক্ষুদা পেয়ে গেলো। বেসিন থেকে হাত ধুয়ে আমি একটা চেয়ারে টেনে বসে পরলাম। খাবার টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখি কাচ্চি, রোস্ট, গরুর মাংস, দই, বোরহানি সাথে কেক এগুলা দেখে আমি জুবায়ের কে জিজ্ঞেস করলাম,

– আজকে কি বুয়া এইসব রান্না করেছে?
– আরে না।
– তাইলে?
– সন্ধ্যা রান্না করে দিয়ে গেছে।
আমি জুবায়েরের কথা হা করে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে।তারপর ও আমাকে বললো,
– এমনে তাকায় আছোস কেন? কি হইছে?
– হঠাৎ সন্ধ্যা রান্না করে পাঠালো কারণ কি?

– ওর ছোট খালার জন্মদিন, তাই এইসব রান্না করছে ও।
আমি আর কিছু বললাম না চুপটি করে খাবার খেতে লাগলাম।
খাবার খুবই সুস্বাদু ছিলো। খাবার খেয়ে রুমে এসে শুয়ে পরলাম। শরীরটা প্রচুর ক্লান্ত লাগছে কিন্তু চোখে আমার ঘুম নেই। তাই আবার উঠে পরলাম । খাটে থেকে নেমে গিটার টা টেবিল উপর থেকে নিলাম তারপর আবার আগের জায়গায় গিয়ে বসলাম।
গিটারে টুটাং শব্দ করতে লাগলাম। অনেক দিন পর আজকে গান গাইতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু রুমের বসে গান ঠিক জমে উঠছে না৷ তাই এক কাজ করলাম টিশার্ট পরে ছাদে চলে এলাম।

আজকে সারাদিন আমি আমার মতো করে খালামনির সাথে উপভোগ করেছি। নিজের হাতে কাচ্চি, রোস্ট, গরুর মাংস, দই, বোরহানিতে তৈরী করেছি। শুধু কেকটা বাইরে থেকে রুবিকে দিয়ে আনিয়েছি। রাতের খাওয়া দাওয়ার পর খালামনি ও কুহু বাসায় চলে গেলে। কালকে সকালে কুহু সেইখান থেকে তার নিজের বাড়ীতে গিয়ে, নিজে প্রয়োজন কাগজ গুলা নিয়ে চলে আসবে।
খালামনি চলে যাওয়ার পর মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে গেলো। দই মগে কফি করে নিলাম, ছাঁদে গিয়ে জোছনায় বিলাস করবো আর খাবো বলে।

কিন্তু রুবির রুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম সে বসে বসে পড়াছে। ওকে আবার পড়ার সময় ডাক দিলে খুব রেগে যায়। তাই ওকে আর ডাকলাম না। রুম থেকে ছাঁদের চাবি নিয়ে চললাম ছাঁদে । কি মনে করে যেনো হাতে করে দু মগই কফি নিয়ে নিলাম । ছাঁদের চাবি ওরনার আঁচলে বেঁধে নিলাম। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে দেখি।
ওমা ছাঁদের দরজার তালা খুলা তার মানে নিশ্চয়ই ছাঁদে কেউ আছে।যাক ভালোই হলো, যেই থাকুক তার সাথে বসে গল্পও করা যাবে এবং একসাথে কফি খাওয়া যাবে।

ছাঁদে উঠার পর শুনতে পেলাম দক্ষিণ দিক থেকে গানের শব্দ আসছে। সেদিকটায় বসার জায়গা আছে ছাঁদে। যখন আমি গান গাওয়া ব্যক্তির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। ঠিক তখনই তিনি আমার দিকে তাকালো।। তার চাহুনিতে আমি ঠিক তখনই অনুভব করতে পারলাম,আমার হৃদয়ে আবার কালকের রাতের মতো তোলপাড় শুরু হয়েছে।

ছাঁদের দক্ষিণ দিকটায় বসার জায়গা আছে । সেখানে গিয়ে বসে পরলাম আস্তে আস্তে গিটারে সুর তোলতে শুরু করলাম , একটুপর গানের লিরিক্স মনে করবার চেষ্টা করলাম গেয়ে। এর মাঝে আমি ছাঁদে পায়ের নূপুরের শব্দে পেলাম। আস্তে আস্তে যখন নূপুরের শব্দ আমার কাছে এসে থেমে গেলো। ঠিক তখনই আমি আমার সামনে তাকিয়ে যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। কারণ আমি সামনে তাকিয়ে যাকে দেখেছি। সে আর কেউই না, সে ছিলো সন্ধ্যা । তার দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ কেন জেনে মনে হলো,
ও নিজেও আমাকে এখানে একদমই আশা করি নিও। ওর মুখের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে, আমি ওর পায়ের দিকে তাকালাম তাকিয়ে দেখি।এতোক্ষণ যে নূপুরের শব্দ হচ্ছিল সেই নূপুরের মালিক সন্ধ্যা।

ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ৬

ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে এখনো।
আমি ওর দিকে একটু মুচকি হাসে বললাম,
– আসসালামু আলাইকুম , কেমন আছো?
– ওয়ালাইকুম আসসালাম, আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
– আলহামদুলিল্লাহ। হঠাৎ এ সময় ছাঁদে?
– আসলে খালামনি চলে যাওয়া মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে ছিলো তাই ছাঁদে চলে এলাম জোছনা বিলাশ করতে।
– ওহ আচ্ছা, দাঁড়িয়ে কেন এখানে এসে বসো?
ও মনে হয় এতোক্ষণ আমার পারমিশনের জন্য অপেক্ষা করছিলো। কারণ আমি বলার পরপরই সে আমার থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসে পরলো আমার দিকে এক মগ কফি এগিয়ে তারপর বললো,

– নিন ধরুন।
আমি ওর হাত থেকে মগ টা নিয়ে বললাম,
– ধন্যবাদ।
– আপনি গিটার বাজাতে পারেন?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে যতটুকু বুঝলাম। কালকের দুপুরের কথা ও হয়তো ভুলে গেছে। তাই বললাম,
– হ্যাঁ।
– গান গাইতে পারেন?
– একটু একটু পারি আর কি।
– একটা কথা জিজ্ঞেস করি? যদি কিছু মনে না করেন ।
– সমস্যা নাই জিজ্ঞেস করো।
– আচ্ছা। আপনি এতো রাতে ছাঁদে তাও আবার গিটার নিয়ে বসে আছেন, বউয়ের কথা মনে পড়ছিলো বুঝি?

ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ৮