ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ৫ || লেখায়- মোসাঃফাতেমা আক্তার

ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ৫
লেখায়- মোসাঃফাতেমা আক্তার

আমি যখন আকাশকুসুম ভাবছিলাম ঠিক তখনই একটা কালো গাড়ীর সাথে ধাক্কা খেয়ে আমি জ্ঞান হারালম। হঠাৎ করে গাড়ীর সামনে একটা মেয়ে এসে পড়েছিলো। ড্রাইভার খুব কষ্টে গাড়ীটা নিয়ন্ত্রণ করেছিলো কিন্তু তারপরও মেয়েটাকে একটা ধাক্কা খেতেই হলো। মেজাজ টা সম্পূর্ণ বিগড়ে গেল গফুর চাচার উপর কিন্তু এতে ওনার কোনো দোষ নেই তা জানা সত্যেও আমার মেজাজ বিগড়ে গেলো। ওনাকে কিছু বলবার জন্য মুখ খুলবো ওমনিই ওনি বললেন,

– আফামনি আমি ইচ্ছা করে করি নি, মেয়েটা হুট করেই সামনে চলে এলো।
ওনার মুখে এমন কথা শুনে আমার রাগ একদম পানির মতো গলে গেলো। কোন কথা না বলে গাড়ী থেকে বের হলাম অপরিচিত মেয়েটিকে দেখবার জন্য।

মেয়েটির কাছে গিয়ে দেখি মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পরে আছে। মেয়েটির পাশে বসে আমার কোলে তার মাথা তুলে নিলাম। মেয়েটির মুখে তাকিয়ে দেখলাম কপালে ডান দিকে সামান্য একটু কেটে গেছে, সেই স্থান থেকে রক্ত পড়ছে। ইতিমধ্যে গফুর চাচাও আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন। আমি চাচার সাহায্যে মেয়েটিকে গাড়ী তুললাম এবং গফুর চাচাকে বললাম সামনে কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকের নিয়ে যেতে। রাত বাজে ১ টা২৫ মিনিট । হাতের ঘড়িতে দেখি নিলাম।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি কালকেই ঢাকায় এসেছি চট্টগ্রাম থেকে। আগামীকাল আমার জন্মদিন তাই আজকে সন্ধ্যার বাসায় যাচ্ছিলাম ওর সাথে কালে সারাদিন থাকবো বলে। কিন্তু এর মাঝেই ঘটে গেলো অঘটন । আসে পাশে কোনো হাসপাতাল না পেয়ে একটা ফার্মেসী তে গিয়ে মেয়েটির মাথায় ব্যান্ডেজ করে নিলাম। ফার্মেসীতে যে ডাক্তার ছিলো সে বললো মেয়েটা নাকি খাবার খায় নি ঠিক মতো এবং প্রচন্ড মানসিক চাপের জন্য অজ্ঞান হয়ে গেছে আপাতত একটা সেলাইন দিয়ে দিলেন, একটা ঘুমের ইনজেকশন এবং কিছু ঔষধ দিয়ে দিলেন।

এদিকে আমি এই মেয়ের নাম ঠিকানা কিছুই জানি একে নিয়ে এখন কি করবো, ভেবে না পেয়ে এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমার সাথে করে সন্ধ্যার বাসায় নিয়ে চললাম।

এবারের মতো ছোটখালামনির জন্মদিনে খালামনির সাথে থাকতে পারবো না। ভেবেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। খালামনিও রাগ করে আমার কল রিসিভ করছে না। আম্মুও ফোন ধরছে না হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। রাত ২ টা বাজতে চললো খালামনির ফোন বন্ধ। হঠাৎই কলিংবেল বেজে উঠলো। এতো রাতে কে আসলো, সে ভয়ে আমার আত্নায় পানি নেই। রুবি গেছে বাথরুমে। ডোর-হোল দিয়ে তাকিয়ে দেখি ছোটখালামনি দাড়িয়ে আছে ওনি সাথে একটা মেয়েকে ধরে। আমি আর একমুহূর্ত সময় নষ্ট না করে দরজা খুলে দিলাম। আমি এতো পরিমাণ খুশি হয়েছি যা আমার চোখ দেখলে স্পষ্ট বুঝা যায়। আমি খুশিতে দাঁড়িয়ে কান্না করে দিলাম। তখন খালামনি বললেন,

– সন্ধ্যা পরে কান্নাকাটি করিস, এখন ওকে একটু আমার সাথে করে তোর রুমে নিয়ে চল। আমি একা পারবো না।
খালামনির কথায় আমি খালামনিকে সাহায্য করলাম আমার রুমে মেয়েটাকে নিয়ে যেতে।
আমার রুমের বিছানায় মেয়েটাকে শুইয়ে রেখে খালাকে নিয়ে চললাম রুবির রুমে৷ তারপর রুবির রুমে খালামনিকে বসতে বলে চা বানিয়ে আনলাম সাথে টোস্ট, আর চানাচুর ভর্তা। কারণ আজকে রাতে আর রান্না করি দুপুরের রান্না করা খাবার আমি আর রুবি মিলে খেয়ে ফেলেছি। খাবার গুলো খালামনির সামনে দিয়ে বললাম,

– খালামনি আসলে আজকে রাতের বেলায় আমাদের তুফসা আপুর বাসায় দাওয়াত ছিলো তাই আর রাতে রান্না করি নি। দুপুরে যা রান্না করেছিলাম আমি আর রুবি তা দুপুরেই খেয়ে ফেলেছি৷ তুমি আপাতত এগুলা খাও। আমি রান্না চড়াচ্ছি।
এর খালামনি বললেন,
-ঐই মাইয়া দাঁড়া। আমি কি তোর বাসায় খাইতে আসছি হ্যাঁ? নাকি আমারে তোর রাক্ষস মনে হয়? এত্তগুলা খাবার খাওয়ার পর তোর কি মনে হয় আমি আরো কিছু খাইতে পারুম? এমনেও আমি খেয়েই এসেছি বাসা থেকে। তুই বস এখানে।

– কিন্তু,,,
– কিসের কিন্তু ? বস তুই।
আচ্ছা বলেই খালামনির পাশে বসে তার কানেকানে বললাম,
” শুভ জন্মদিন মাই ডিয়ার ছোট আম্মু ” বলেই খালামনির গালে টুপ করে একটা চুমু দিয়ে ফেললাম। খালামনি তো আমার ব্যবহার দেখে রীতিমতো অবাক কারণ সহজে খালামনিকে চুমু দেই না তারপর ওনি বলেন,
– সন্ধ্যা মনি কাহিনি কি বলতো? আজকে হঠাৎ এতো মোহাব্বত?
আমি খালামনির গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,
– কই কোনো কাহিনি নাই তো।
– তাইলে আজকে হঠাৎ চুমু। এর আগে তো চুমু দিয়ে আমাকে তোমার মনে আবদার গুলো পূরণ করছো।

খালামনি কথা শুনে। আমি দাঁত বের করে হেঁসে দিলাম কারণ আমি যতই চালাকি করি না কেন খালামনির কাছে ঠিকই ধরা খাই। এরপর বললাম,
– আসলে কোনো কাহিনি নাই। আদর করার কারণ হলো তুমি আমার উপর রাগ করেছিলে তা আমি জানি। তাই একটু আদর করে তোমার রাগ ভাঙ্গালাম। এই আর কি।
খালামনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
-পাগল একটা, তোর উপর আমি রাগ করে থাকতে পারি বল? তুই যে আমার কলিজার টুকরারে সন্ধ্যা।

এরপর যখন বুঝতে পারলাম খালামনি কান্নাকাটি শুরু ঠিক তখনই কথার প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে ফেললাম। কারণ খালামনির চোখের পানি দেখলে আমিও কান্না শুরু করবো। খালামনিকে বললাম,
– ঐই মেয়েটা কে তুমি কই থেকে পাইছো?
খালামনি সংক্ষিপ্ত ভাবে বললেন মেয়েটার সম্পর্কে কারণ তিনিও জানেন না মেয়েটার আসল পরিচয়।

ভোরের আলো ফুটেছে অনেকক্ষণ আগে পাখি কিচিরমিচির শব্দে চারদিক মুখোরিত। একটু একটু বাতাস আসছে জানালা দিয়ে। পাখির কিচিরমিচির শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘুম ভাঙ্গার পর নিজেকে সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা স্থানে আবিষ্কার করলাম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম রুমি শুধু আমিই একা। বাম হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি হাতে ক্যানল লাগানো। মাথার উপর ফ্যান ঘুড়ছে নিজের আপন গতিতে। আমি সেদিকে তাকিয়ে থাকলাম এবং মনে মনে বললাম।

– এই বারও বেঁচে গেলাম আত্নহত্যা করতে গিয়ে।আল্লাহ এই কেমন যন্ত্রণায় ফেললা আমাকে? না পারছি মতে, না পারছি বাঁচার মতো করে বাঁচতে। হয়তো তুমি আমাকে এই যন্ত্রণার সহ্য করবার ক্ষমতা দাও নইলে তোমার কাছে নিয়ে চলো। এই জিন্দ লাশ হয়ে বেঁচে থাকার থেকে মরে যাওই উত্তম। ”
আমার একটু একটু করে মনে পরছে কালকে রাতে আমার জ্ঞান হারাবার আগে কি হয়েছিলো।

ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ৪

” আমি অন্যমষ্ক হয়ে পড়েছিলাম যার। ফলে আমি নিজের অজান্তে রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছিলাম ঠিক তখনই এক গাড়ীর সাথে আমার ধাক্কা লাগে এবং আমি আমার জ্ঞান হারিয়ে সেখানে পড়ে যাই। এর পর আর কিছু মনে নেই আমার। এই সম্পর্কে আর কিছু চিন্তা না করে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। তার পর এই রুমটার সাথে যে ঝুলবারান্দা আছে সেটা গিয়ে বসলাম একটা চেয়ারে৷ বারান্দাটা খুন সুন্দর করে সাজ্জানো ঘোচ্ছানো। বারান্দায় থাকালে মনটা জুড়ে যায়৷

আমি যখন আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম ঠিক তখনই একজোড়া চড়ুই পাখি বারান্দার দেওয়ালে এসে গলা ছেড়ে কিচিরমিচির করছে। এদের দেখে মনে হবে গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ডের মতো ঝগড়া করছে। এদের কান্ড দেখে আমার প্রচুর হাসি পাচ্ছে। একটু পরই আমার মুখের হাসি উধাও হয়ে গেলো যখন দেখলাম চড়ুই পাখি গুলো চলে গেলো। ঠিক তখনই আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো।এইভাবেই কেটে গেলো আমার সকালবেলা একলা বসে ।

ধূসর রঙ্গের সন্ধ্যা পর্ব ৬