Infinite Love part 16+17+18+19+20

Infinite Love part 16+17+18+19+20
Writer: Onima

আমি খাচ্ছি আর ভাবছি হলোটা কী এদের? হঠাৎ এসব আজগুবি প্রশ্ন কেনো করল? কী চলছে এদের মনে? এইসব টপিক নিয়েতো আগে কোনোদিন কথা হয়নি?
.
খাওয়া শেষে ঘন্টা খানেক রেস্ট নেবার পর আপু এলো রেডি করাতে। আপু আমাকে শাড়ি পড়াতে লাগল
.
আমি: আচ্ছা আপু আব্বু আম্মুর কী হয়েছে গো?
.
আপি: ছি! ছি! কী বলছিস? এই বয়সে আবার কী হবে?
.
আমি: আপি.. তুমিওনা! আমি নিচে ওদের বলা কথাগুলোর কথা বলছি!
.
আপি: ও আচ্ছা! মেয়ে বড় হলে বাবা মা এসব নিয়ে একটু ভাবেই।

আমি: ও হ্যালো? তুমি কী বাচ্চা নাকি? তুমিতো আমার চেয়েও বড়! তোমাকে নিয়ে তো মামা মামি বা আব্বু আম্মু কেউই এসব বলেনা, আমাকে বলল কেনো?
.
আপি: আমি যখন তোর বয়সী ছিলাম অমাকেও বলেছে!
.
আমি: সত্যি?
.
আপি: হুম একদম। কিন্তু তুই যে বললি তোর পছন্দের কেউ নেই, সত্যিই নেই?
.
আমি: আজব থাকলেতো বলতামি!
.
আপি: তুই আদ্রিয়ানকে পছন্দ করিসনা?
.
আমি: হ্যা, আমার ওর পারসোনালিটি ভালোলাগে, কিন্তু কাউকে ভালোলাগা মানেইতো তাকে লাইফ পার্টনার বানানো নয়!
.
আপি: ভালোলাগা থেকেই কিন্তু ভালোবাসা হয়।
.
আমি: আপিই কী বলছ বলোতো?
.
আপি: ভুল বললাম কিছু?
.
আমি: অবশ্যই। তুমি কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যাচ্ছ।
.
আপি: নো বেবি! আমি যেখানকার কথা সেখানেই রাখছি, আর খুব তাড়াতাড়ি সেটা তুমিও বুঝতে পারবে।

আমি: হয়েছে এবার শাড়িতে কনসিনক্রিয়েট করো!
.
আপি: হুম, সেই ভালো!
.
আপি খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়েছে, আচলটা ভেঙ্গে পড়িয়েছে, আমিই বলেছি এভাবে পড়াতে কারন আমার সব বান্ধবীরা এভাবেই পড়ব
.
এরমধ্যেই আপি একঝাক মেকাপ কিট নিয়ে এলো যা দেখে আমি বললাম
.
আমি: প্লিজ আপি আমাকে ভুত সাজাতে বসোনা প্লিজ!
.
আপি: একটু সাজাবো, শাড়ি পড়েছিস না সাজলে ভালো লাগবে না!
.
আমি: জাস্ট হালকা ওকে? যেটুকু না দিলেই না সেটুকুই।
.
আপি: আচ্ছা বাবা ঠিকাছে! এবার বস! কী মেয়েরে বাবা,কোনো মেয়ের যে সাজের প্রতি এতো অনিহা থাকে তোকে না দেখলে সত্যিই বিশ্বাস করতাম না!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এরপর আপি আমার চুলগুলো চাইনা কাটা দিয়ে সুন্দর করে খোপা করে দিল, আর সামনের কান অবধি কাটা চুলগুলো সাইডে সিথি করে বের করে রাখল, মুখে হালকা ফেসপাউডার, ঠোটে হালকা পিঙ্ক লিপস্টিক, গালে এক্কেবারে হালকা ব্লাসন,চোখে কাজল, চোখের ওপরেচিকন করে আই লাইনার আর হালকা সেডো দিয়ে দিল।
.
আমি: দিবানা দিবানা করে কতকিছু দিলা! মাসকারা বাদ রাখলা কেনো?
.
আপি: তোমার আইলেশ এমনিই খুব ঘন আর বড় বড়, দরকার পরেনা।
.
আমি: হয়েছে? যেতে পারি?
.
আপি: ওয়েট ওয়েট!
.
আমি: আবার কী?
.
আপি একটা বাক্স বের করল তাতে সিলভার হোয়াইট স্টোনের কানের ঝুমকা, হাতের এক মোট চুরি, আর নীল আর সিলভার এর কম্বিনেশনে একটা পেন্ডেন্ট, নীলের ওপর সিলভার হোয়াইট স্টোনের একটা সুন্দর ঘরি
.
আমি অবাক হয়ে বললাম
.
আমি: ওয়াও.. এত্তো কিউট কিউট ওর্নামেন্টস?
.
আপি: পছন্দ হয়েছে?

আমি: খুব। কিন্তু এগুলাতো তোমার বা আমার কারোরি না, কোথায় পেলে?
.
আপি: সেটা জেনে তোমার কি কাজ? এসো সব পড়িয়ে দেই!
.
আমি: শাড়িটার ব্যাপারেও কিছু বললেনা! এতো হেয়ালির কী আছে, বুঝিনা!
.
আপি: বুঝতে হবেনা চুপচাপ বসো!
.
এরপর আপি আমাকে একে একে সব পরিয়ে দিল! এরপর আয়নায় একবার নিজেকে দেখে নিলাম, নট ব্যাড!
.
এরপর আপিকে একটা হাগ করে, নিচে গিয়ে সবাইকে বাই বলে চলে গেলাম মেডিকেলে, আর যথারীতি লেইট করেই গেলাম। গিয়ে দেখি ওরা সাইডে দাড়িয়ে আছে! আমি এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে!
.
ঐশি: এই এলেন আমাদের লেইট লতিফ!
.
আমি:ওটা লতিফা হবে! গ্রামার পড়িসনি মুর্খ! লিঙ্গ পড়বি!

ইশু: থাম মেরি মা তোকে কিছু বলাই ভূল আমাদের!
.
আমি: তাহলে বলিস কেনো?
.
অর্পি: চুপ কর! তুই সেজেছিস? রিয়েলি?
.
আমি: আপি জোর করে সাজিয়ে দিয়েছে!
.
ঐশি: অসম্ভব সুন্দর লাগছে তোকে!
.
অর্পি: একদম নীল পরী! আজকেতো যে কেউ তোকে দেখে ক্রাশ খাবে।
.
আমি: তোদেরকেও কম সুন্দর লাগছে নাকি? কিন্তু তিনজনেই নেভি ব্লু পরেছিস! আমিই এলিয়েনের মত নীল পরলাম।
.
ঐশি: তোকে নীলেই খুব সুন্দর লাগছে!
.
আমি: হইছে থাম! এনিওয়ে রিমু আজ আসতে পারত! প্রোগ্রামের সময় তো যে কেউ আসতে পারে!

ঐশি: বলেছিলাম, বাট আসেনি! কাজ আছে নাকি!
.
অর্পি: আসলে ভালোই হতো!
.
তারপর সবাই মিলে হাটতে লাগলাম এগোতে লাগলাম, হঠাৎই আমার মাথায় কেউ টোকা মারল! পেছনে ফিরে দেখি আদিব ভাইয়া!
.
আমি: আরেহ ভাইয়া আপনি এখানে?
.
আদিব ভাইয়া: শুধু আমি না আমরা সবাই এসছি!
.
শুনেই চমকে গেলাম। সবাই মানে আদ্রিয়ান ও এসছে?
.
আমি: প্রোগ্রাম দেখতে?
.
আদিব ভাইয়া: হুম। তারওপর আমাদের ইনভাইট করা হয়েছে, স্পেশিয়ালি আদ্রিয়ানকে, ওহ আদ্রিয়ান বললেতো চিনবে না AD কে!

এই নামটা আগে বললে তো আর এতো কিছু হতো নারে ভাই! বলল কখন যখন আমি সবটাই জানি।
.
আমি: ওহ।
.
আদিব ভাইয়া: খুব সুন্দর লাগছে আজকে! তোমাদের সবাইকেই
.
আমি: কেনো? প্রতিদিন লাগেনা?
.
আদিব ভাইয়া: লাগে তবে আজকে বেশি সুন্দর লাগছে।
.
আমি: হাহা তাই?
.
আদিব ভাইয়া: হুম চলো এগোই।

এরপর আমরা এগোতেই দেখলাম আদ্রিয়ান আর ওর বন্ধুরা দাড়িয়ে কথা বলছে!
.
সবাই আমাকে দেখে নানা রকম কথা বললেও আদ্রিয়ান একবার তাকিয়ে আমার দিকে দ্বিতীয়বার তাকায়নি! আজব! আমাকে কী এতটাই খারাপ লাগছে দেখতে যে দ্বিতীয়বার তাকাতেই ইচ্ছে করলনা?
.
আদ্রিয়ান: আদিব তোরা থাক আমি আসছি!
.
আমিতো অবাক, ইগনোর করল আমাকে? কী করেছি আমি? ধ্যাত যা খুশি করুক আমার কী?
.
বেশ কিছুক্ষন পর দেখলাম তিন চারটা ছেলেকে ধরাধরি করে কারা যেনো নিয়ে যাচ্ছে! আমি অবাক হয়ে বললাম।

আমি: এদের আবার কী হলো?
.
হঠাৎই আদিব ভাইয়া বলল
.
আদিব ভাইয়া: ওহ সিট!
.
বলেই দৌড়ে চলে গেলো! পিছন পিছন ওনার বন্ধুরাও গেলো! আমরা অবাক হয়েই তাকিয়ে আছি ব্যাপারটা কী?
.
ঐশি: কেসটা কী হল?
.
ইশু: সেটাইতো! এভাবে ছুটলো কেনো সব?
.
আমি: যা খুশী হোক চলতো।
.
তারপর আমরা প্রোগ্রাম দেখতে বসলাম, কিন্তু ওনাদের দেখতে পেলাম না, বেশ কিছুক্ষন পরে আদ্রিয়ানকে স্টেজে ডাকলো স্পিচ দেবার জন্য! আদ্রিয়ান কোনো রকমে স্পিচ দিয়ে চলে গেলো, কিন্তু তবুও স্পিচটা সুন্দর ছিলো
.
অনেকক্ষন প্রোগ্রাম দেখে ভাবলাম যাই একটু হেটে আসি, আমি আবার একজায়গায় বেশিক্ষন বসতে পারিনা। হাটাহাটি করছি এমন সময় আদ্রিয়ান এসে আমার হাত ধরল হাত ধরে টানতে লাগল! আমি বারবার জিজ্ঞেস করছি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? কিন্তু উনি কিছুই বললেন না নিজের মত করে নিয়ে যাচ্ছে আমায়!

আমি: আদ্রিয়ান কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ছাড়ুন!
.
কিন্তু উনি কোন উত্তর না দিয়ে একটা রুমে এনে দরজাটা আওয়াজ করে লক করে দিল! আমার কলিজাটা কেপে উঠল! আচ্ছা? আমিকি কোন ভুল করেছি? মানে সিনেমাতে যেমন দেখি হিরোয়িন রা কোন ভুল করলে হিরোরা এভাবেই নিয়ে এসে শাস্তি দেয়! হিরোরা তো কিস করে দেয় উনিও কি? ছি! ছি! কী ভাবছি হিরোরাতো হিরোয়িনদের ভালোবাসে কিন্তু আদ্রিয়ানতো আর আমায় ভালোটালো বাসেনা, আমার তো মনে হয় পছন্দই করেনা আমায়। তাহলে?
.
দেখলাম উনি এগিয়ে আসছেন আমার দিকে, আমার পেছোনোর জায়গা নেই কারন পেছনে দেয়াল, আমি দেয়ালের সাথেই লেগে আছি
.
আমি: অআপনি এভাবে এগগিয়ে আসছেন কেনো? আআর আমাখে এখাননে কেনো আনলেন?
.
আদ্রিয়ান কোন উত্তর না দিয়ে আমার খুব কাছে চলে আসল
.
আমার তো বুক কাপছে ভয়ে! কী করতে চাইছে এ? সত্যিই কি আমাকে.. না না ওসব কেনো করতে যাবে, কিন্তু এভাবে আসছে কেনো?

আদ্রিয়ান একদম কাছে এসে আমার কাধের শাড়ির আচলের দিকে হাত বারাতো লাগল, আমিতো পুরো জমে যাচ্ছি ভয়ে, বাধা দেবার শক্তিও পাচ্ছিনা আর কিছু বলতেও পারছিনা! উনিকি আমার সাথে? এসব ভাবতে ভাবতেই উনি আমার আচলটা ধরলেন, আর আমি খিচে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
আদ্রিয়ান একদম কাছে এসে আমার কাধের শাড়ির আচলের দিকে হাত বারাতো লাগল, আমিতো পুরো জমে যাচ্ছি ভয়ে, বাধা দেবার শক্তিও পাচ্ছিনা আর কিছু বলতেও পারছিনা! উনিকি আমার সাথে? এসব ভাবতে ভাবতেই উনি আমার আচলটা ধরলেন, আর আমি খিচে চোখ বন্ধ করে নিলাম।
আমার এখন কেদে দেবার মত অবস্হা, কারণ আমি আদ্রিয়ানের কাছ থেকে এরকমটা আশা করিনি! কিন্তু আমিতো ওকে আটকাতেও পারছিনা কেনো জানিনা সেই শক্তিটাই পাচ্ছিনা আমি, কিন্তু ও কেনো করছে অামার সাথে এরকম? চোখ বন্ধ থাকা অবস্হাতেই এগুলো ভাবছিলাম।
.
তারপর আদ্রিয়ান সেটাই করল যেটা আমি ভাবতেও পারিনি, আদ্রিয়ান হুট করে আমার আচলের সেফটিপিন খুলে ফেলল! না ব্লাউজের সাথে যেই সেফটিপিন লাগানো আছে সেটা না, আচলটা ভেঙ্গে যেই সেফটিপিন লাগিয়েছিলাম সেটাই খুলেছে ও! তারপর আমার আচলটা আলতো হাতে আমার হাতের ওপর ছড়িয়ে দিল, তারপর আমার কোমর ধরে ওর কাছে নিয়ে এলো, আমিতো অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে ওকে দেখছি। ও আমার চুলের চাইনা কাটাটা এক টানে খুলে ফেলল, তারপর চুলগুলো আমার পিঠে ছড়িয়ে দিল, হাতের আঙ্গুল দিয়ে সামনে দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে দিল, এরপর আমার বুকের আচলটা আরো একটু ওপরে উঠিয়ে দিলো যার ফলে আমার গলার খানিকটা নিচে পাশাপাশি 180 ডিগ্রি এঙ্গেলে জোরা দুটো তিল আছে, তিল দুটোর মধ্যকার ডিসটেন্স দুই ইঞ্চির মতো সেই তিল দুটো ঢেকে গেলো! যদিও আচলটা আগেও বেশ উপরেই ছিল কিন্তু তিল দুটো বেড়িয়ে ছিলো!
.
আমি বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি আমি খালি ওর কাজ দেখছি! তারপর ও খুব ঠান্ডা গলায় বলল

আদ্রিয়ান: আর কখনো যেনো শাড়ির আচল ভেঙ্গে পড়তে না দেখি! আর এত বড় করে পিঠ দিয়ে ব্লাউজ পড়বে না কখনো! এতো স্টাইলিং এর দরকার নেই
.
আমি কী বলব বুঝতে পারছিনা! কথাগুলো শান্ত ভাবে বললেও তাতে চেপে রাখা রাগটা স্পষ্ট! কখন আবার চেপে রাখা বোম ব্লাস্ট হয়, তাই চুপ থাকাই ভালো।
.
আদ্রিয়ান: আর হ্যা! বাইরে কখনো হাই নেকের ড্রেস পড়বে না! পড়লেও এই তিল দুটো যেনো কেউ দেখতে না পায়।
.
আমি কিছুই বলছিনা ওনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। ছেলেটাকি সত্যিই পাগল?
.
আদ্রিয়ান: আমি কি সেটা পরে ভেবো। Now come with me…
.
বলেই আমার হাত ধরে প্রোগ্রামের ওখানে নিয়ে গেলো গিয়ে দেখি আদিব ভাইয়ারা আর ঐশি, ইশু, অর্পিও ওখানেই দাড়িয়ে আছে,উনি ওদের সামনেই আমার হাত ধরে দাড়িয়ে রইলেন যেটা ওদের কারো চোখ এড়ায়নি। ওরা মিটমিট করে হাসছে। কিন্তু উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হাতটা ধরে দাড়িয়ে আছে।

আলোতে আশার পর আমি এবার ওনাকে একবার স্কান করলাম, একটা পান্জাবী পরেছে, অদ্ভুদভাবে ওনার পান্জাবী আর আমার শাড়ির কালারটা এক্কেবারে ম্যাচ করে গেছে! ওনার পান্জাবীটাও নীলের মধ্যে সিলভার হোয়াইট কাজ করা, সিলভার হোয়াইট জিন্স পড়েছে, ঘরিটার কালারো সেইম। তবে চুলগুলো আজ কপালে পরে নেই, বরাবরের মতই অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে! আশেপাশে তাকিয়ে যা বুঝলাম অলমোস্ট 80% মেয়ে ক্রাশ নামক বাশ খেয়ে বসে আছে!
.
আমি: হাতটা ছাড়ুননা। সবাই কী ভাবছে?
.
আদ্রিয়ান: ভাবুক I don’t care.
.
আমি: But I do. হাত ছাড়ুন।
.
এবার উনি একটু ঝুকে আসতে করে বললেন

আদ্রিয়ান: আবার ওই রুমে যেতে চাও?
.
আমি অসহায় ভাবে ওনার দিকে তাকিয়ে একটা ঢোক গিলে মাথা নেড়ে বললাম না।
.
আদ্রিয়ান: তাহলে চুপ থাকো!
.
পুরোটা প্রোগ্রাম উনি আমার হাত ধরে ছিলেন যেনো ছেড়ে দিলেই আমি পালিয়ে যাবো! যেখানে গেছে সেখানেই আমাকে নিয়ে গেছে হাত ধরে, আমার আর ওনার বন্ধুরা যথারীতি মুচকি হাসছে। আর আশেপাশের অনেকেই অন্যরকম ভাবে তাকিয়েছে। তবে আমার মজা লেগেছে ওই মেয়েগুলোর ফেস রিয়াকশন দেখে যারা ওনার ওপর বাশ থুরি ক্রাশ খেয়েছে!
.
আমি: অনেক রাত হয়েছে এবার আমরা যাবো।
.
ঐশি: হ্যা ভাইয়া! এবার যেতে হবে।
.
আদ্রিয়ান: আদিব! তুই ওদের তিনজনকে ড্রপ করে দে।
.
আমি: ওকে তোরা তিনজন আদিব ভাইয়ার সাথে যা আমিও যাই নইলে গাড়ি পাবোনা।
.
কিন্তু আদ্রিয়ান আমার হাত ছাড়ছেনা আমি একটু করুন সরে বললাম
.
আমি: এবারতো ছাড়ুন প্লিজ!

আদ্রিয়ান: তোমাকে আমি ড্রপ করে দেবো।
.
আমি: ওহ! কীহ?
.
আদ্রিয়ান: জ্বি।
.
আমি: কিন্তু..
.
আদ্রিয়ান: চলো! আদিব ওদের সাবধানে পৌছে দিস।
.
বলেই আমার কোন কথা না শুনে আমার হাত ধরেই এনে গাড়ির দরজা খুলে দীর্ঘ দুই ঘন্টা পর হাতটা ছেড়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: Sit
.
আমিও লক্ষী মেয়ের মত গাড়িতে বসে পড়লাম, উনিও বসে আমি সিটবেল্ট বাধতে যাবো তারআগে নিজেই বেধে দিলেন তারপর গাড়ি স্টার্ট করে চালাতে লাগলো! দুজনেই চুপচাপ বসে আছি! খানিক্ষণ পর উনি একটা গান প্লে করল। ” পেহলা নেশা”। আমি গানটা শুনে ওনার দিকে তাকালাম উনিও তাকালেন আমার দিকে চোখাচোখি হতেই আমি চোখ সরিয়ে বাইরে তাকালাম, উনিও ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিলো। পুরটা রাস্তা কেউ কারো সাথে কথা বলিনি চুপচাপ বসে ছিলাম, তবে আড়চোখে দুজন দুজনকে দেখেছি! চোখাচোখি হলেই চোখ সরিয়ে নিয়েছি।
বাড়িতে গেইটে আসার পর উনি নিজেই গাড়ির দরজা খুলে আমাকে নামতে বলল, আমি নেমে ভদ্রতার খাতিরে বললাম
.
আমি: বাড়িতে আসুন না।
.
আদ্রিয়ান মুচকি হেসে বলল

আদ্রিয়ান: আরেকদিন! এন্ড টেইক কেয়ার।
.
বলেই গাড়িতে উঠে গাড়ি চালিয়ে চলে গলো! আমি কিছুক্ষন যাওয়ার দিকে থাকিয়ে থেকে বাড়িতে ঢুকলাম।
.
বাড়িতে ঢুকে বসে আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলে রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে দেখি টিপ অফ বান্দর, মানে আপি, কাব্য, সজীব ভাইয়া অর্নব ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি মুচকি হাসছে! আমি ভ্রু কুচকে বললাম
.
আমি: এখন আবার হাসছো কেনো তোমরা?
.
সজীব ভাইয়া: এমনি! এত রাতে কিভাবে এলি? একা একা? ( মুচকি হেসে)
.
আমি: আব্ কিভাবে আসবো গাড়ি করে!
.
আপি: কী গাড়ি? (দুষ্টু হাসি দিয়ে)
.
আমি কী বলব সেটাই ভাবছি!
.
অর্নব ভাইয়া: কী হলো বল? কেউ দিয়ে গেলো বুঝি?
.
আমি এবার বেশ বুঝতে পারলাম যে আদ্রিয়ানকে ওরা দেখে ফেলেছে তাই এখন লুকোনোর কিছুই নেই!
.
আমি: হ্যাঁ।

আপি: কে?
.
আমি: আদ্রিয়ান।
.
সবাই: ওওওওওও
.
আমি: হোয়াট ও? তোমরা সবাই এখানে কী করছ বের হও আমি ফ্রেশ হবো
.
সজীব ভাইয়া: হ্যা এখনতো আমাদেরকেই তাড়বি, মনে লাড্ডু ফুটছে।
.
আমি: এই তুমি না আমার বড় ভাই? লজ্জা করেনা ছোট বোনকে এসব বলতে।
.
অর্ণব ভাইয়া: তুই করবি আমরা বললেই দোষ?
.
আমি: হ্যা যত পারো বলো, আপনা টাইমডভি আয়েগা!
.
কাব্য: তোর আবার টাইম।
.
আমি: Shut up and get lost
.
বলেই আপি বাদে সবগুলোকে ধাক্কিয়ে বের করে দরজা লক করে খাটে এসে বসে ওর্নামেন্টস খুলতে লাগলাম।

আপি: কী কী হলো আজ? (আমাকে হেল্প করতে করতে)
.
আমি: হলোতো অনেক কিছুই! কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি!
.
আপি: সবটাই বলো। ওয়েট ওয়েট! তোমার শাড়িটাতো আমি অন্যভাবে পড়িয়েছিলাম এভাবে পড়লে কখন? আমিতো প্রথমে এভাবেই হাতা ছেড়ে পড়াতে চেয়েছিলাম প্রথমে।
.
আমি: আসলে আপি..
.
আপি: কী?
.
তারপরে আপিকে সবটা খুলে বললাম, সবশুনে আপি আজ একটুকুও হাসলো না। বরং কিছুক্ষণ অবাক হয়ে আমার দিক তাকিয়ে থাকল তারপর আমার কপালে একটা কিস করে জোরে জরিয়ে ধরল। আমিতো অবাক যে আপির আবার কী হলো?
.
আমি: কী হলো আপি?
.
আপি: কিছুনা যাও ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পর কালতো ক্লাস নেই?
.
আমি: নাহ।
.
আপি: যাক ভালোই হলো পরশু আবার শুক্রবার।

আমি: এমন ভাবে বলছ যেনো পরশু আমার বিয়ে।
.
আপি কিছু না বলে হাসল, আমিও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমিয়ে পরলাম!
.
আজ শুক্রবার কিন্তু সবার কার্যক্রম আমার অবাক লাগছে, সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলছে আর আমি গেলেই সব থেমে যাচ্ছে, আমি খালি ভাবছি যে হচ্ছেটা কী? আপিকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছি লাভ হয়নি!
.
বিকেলে আপি একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিলো আমার হাতে! আমি সেটা খুলে দেখি কালো ভারি লেহেঙ্গা যার মধ্যে নিখুত হোয়াইট স্টোনের কাজ করা আছে।
.
আমি: আপি এটা আবার কোথায় পেলে?
.
আপি: সবসময় এতো প্রশ্ন কেনো করিস বলতো? এটা এখন তোর আর এটা পরেই আজ আদ্রিয়ানের বার্থডে পার্টি তে যাবি!
.
আমি: এতো ভারিটা পরে?
.
আপি: ভারি না হলে স্পেশাল লাগবে কীকর‍ে?
.
আমি: হ্যালো বার্থডে আমার না!
.
আপি: চুপচাপ এটা পরে নেও আমি রেডি করে আসছি!

বলেই আপি চলে গেলো আর আমি আহাম্মকের মত কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে পরে নিলাম লেহেঙ্গাটা। তারপর আপি এবারো কিছু ওর্ণামেন্টস নিয়ে এল। সবগুলোই হোয়াইট স্টোন আর পুতির কম্বিনেশনে তৈরী। গলার নেকলেস, কানের বড় একজোরা দুল, হাতের মোটা চারটা চুরি, একটা ঘরি সবই সাদা পাথর আর পুতির। আমি কিছু জিজ্ঞেস করব তখনি আপি বলল
.
আপি: প্লিজ এখন আর কিচ্ছু জিজ্ঞাসা করবে না।
.
আমি চুপ হয়ে গেলাম। আপি আমাকে হালকা মেকাপ করে ঠোটে লাল লিপস্টিক, স্মোকি আই করে সাজিয়ে দিল! চুলগুলো সাইডে সিথি করে ছেড়ে দিল কিন্তু মাথার তালুর অংশের কয়েকটা চুল আচলে পেছনে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিল।
.
আমি: এত কেনো সাজাচ্ছো আপি? বার্থডে আমার না!
.
আপি: যারি হোক বার্থডেতো।
.
এরপর আপি আমাকে ওর্নামেন্টস গুলো পড়িয়ে নিচে নিয়ে এলো। এরপর সবাই যেতে নেবো তখনি আব্বু বলল।
.
আব্বু: অনি তুমি সিওর আমি যাকে সিলেক্ট করব তোমার জন্য তাকে মানতে তোমার কোন আপত্তি নেই?
.
আমি: আব্বু এখন এসব কথা কেনো?
.
আম্মু: না বলো।

আমি: না নেই এবার চলেনতো!
.
এরপর সবাই গাড়ি করে চলে গেলাম আদ্রিয়ানদের বাড়ি! গাড়ি থেকে নেমে আমি একবার তাকালাম বাড়িটার দিকে, এই প্রথম এলাম এই বাড়িতে, বিশাল বাড়ি এত সুন্দর করে লাইটিং করা হয়েছে মনে হচ্ছে যেনো কারো বিয়ে। মানিক আঙ্কেল এসে আমাদের সবাইকে ভেতরে নিয়ে গেলো, আমি খালি লোক আর ডেকোরেশন দেখছি, শুধু বার্থডে তে এত বড় এরেন্জমেন্ট? যদিও আপি বলেছিল আরকটা কী হবে! কিন্তু কী? হঠাৎই দেখলাম আদ্রিয়ান সিড়ি দিয়ে নেমে আসছে অবাক করা বিষয় আজকেও ওর সাথে আমার ড্রেসের কালার কম্প্লিটলি মিলে গেছে।
ও একটা হোয়াইট শার্ট, কালো প্যান্ট, কালো ব্লেজার, আর রেড টাই পরেছে, কালো ঘরি পরেছে, চুলগুলো হালকা উচু করে সেট করা। অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে।
.
নিচে এসে আব্বুকে জরিয়ে ধরল ও, তারপর আম্মু, আপি, সবার সাথে নানারকম কথা বলতে লাগল তারপর আমার পাশ কাটিয়ে চলে গেলো একবার তাকালো অবধি না? এই ছেলে এমন কেনো আজ অবধি অামার দিকে ভালোভাবে তাকায়ও না, প্রসংসাতো দূরে থাক। মানছি ও খুব সুন্দর তাই বলে এত অহংকার।
.
বেশ কিছুক্ষন পর কেক কাটার সময় হবে তখন মানিক আঙ্কেল মাইক্রোফোন হাতে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে বলল
.
আঙ্কেল: লেডিস এন্ড জেন্টালম্যান, আপনারা আজ এখানে আমার একমাত্র ছেলে আদ্রিয়ান আবরার জুহায়েরের বার্থডে পার্টিতে এসেছেন, তারজন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। কিন্তু আজকের পার্টির উদ্যেশ্য কেবল বার্থ সেলিব্রেশন নয় বরং আজকের পার্টিতে আমার ছেলে আদ্রিয়ানের জীবনের আরেকটা খুব গুরত্বপূর্ন দিন।

সবাঈ উৎসুক হয়ে আছে, এমনকি আমিও ভাবছি ব্যাপারটা কী! কী হবে আজ। মানিক আঙ্কেল বললেন
.
আঙ্কেল: আজ আমার ছেলে আদ্রিয়ানের বার্থডে সেলিব্রেশনের সাথে আজ engagement পার্টিও…আর আমার ছেলে নিজের ইচ্ছতেই নিজের পছন্দ করা মেয়েকেই নিজের life partner করছে
.
সবাই জোরে হাততালি দিয়ে উঠল, আর আদ্রিয়ানকে অভিনন্দন জানাতে লাগল।
.
কিন্তু আমার সবকিছু ফাকা লাগছে, কেনো জানিনা বুকের ভেতর কোথাও একটা কষ্ট হচ্ছে, আমার মনে হচ্ছে আমি কিছু হারিয়ে ফেললাম। কিন্তু কেনো? আমিতো আদ্রিয়ানকে ভালোবাসিনা, না আদ্রিয়ান আমাকে বাসে, তবুও এত কষ্ট কেনো হচ্ছে, হ্যা ওকে আমার ভালোলাগে, কিন্তু সেটা শুধুই ভালোলাগা, তাহলে কেনো নিজেকে নিঃস্ব মনে হচ্ছে? কেনো? কেনো? কেনো?
আমার এখন খুব অসস্তি লাগছে, আমি আদ্রিয়ানের দিকে একবার তাকালাম, ও ভীষন খুশি হয়েই সবার সাথে কথা বলছে, হবে নাই বা কেনো? আঙ্কেলতো বলল ও ওর পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করছে, খুশি না হবারতো কোনো কারন নেই! কিন্তু আমার মন খারাপের কারনটা আমার জানা নেই, ভেতর থেকে একটা চাপা কষ্ট লাগছে, খুব অসহ্য লাগছে আমার, যদি গার্লফ্রেন্ড থেকেই থাকে তাহলে এতদিন আমার ওপর এত জোর কেনো খাটালো, এত কেয়ার কেনো?

ধুর কী ভাবছি অামি এগুলা? আর তাছাড়া ওর বিয়ে হলে আমার কী? এমনতোনা যে আমি ওকে ভালোবাসি, খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে তা কিন্তু না, কিন্তু মনটা অশান্ত খুব অশান্ত হোয়ে আছে। কিচ্ছু ভালোলাগছে না, চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিলাম নিজেকে শান্ত করতে।
.
হঠাৎ আপি এসে বলল
.
আপি: এবার বুঝেছো কীসের কথা বলেছি?
.
আমি: হুম বুঝলাম।
.
আপি: মন খারাপ? এভাবে কথা বলছো কেনো?
.
আমি: মন খারাপ কেনো হবে?
.
আপি: সেটাতো তুমিই ভালো জানো।
.
আমি: আচ্ছা আপি, মেয়েটাকি দেখেছো তুমি? খুব সুন্দর?
.
আপি: হুম দেখেছিতো, খুব সুন্দর।

আমি: ওদের দুজনকে একসাথে খুব মানায় তাইনা?
.
আপি: খুব মানায়। পুরো রাজজোটক।
.
আমি: ওহ।
.
ওখান থেকে একটা নিরিবিলি জায়গায় চলে এলাম, কিচ্ছু ভালোলাগছেনা। অসহ্য! আমার কেনো এমন লাগছে সেটাই বুঝতে পারছিনা। হঠাৎ আদিব ভাইয়া এসে দাড়ালো আমার পাশে!
.
আদিব ভাইয়া: কখন এলে?
.
আমি: কিছুক্ষন।
.
আদিব ভাইয়া: এনাউসমেন্ট শুনেছো?
.
আমি: হুম।
.
আদিব ভাইয়া: তোমার কী mood off?
.
আমি: না তা কেনো হবে।

আদিব ভাইয়া: তাহলে চল আদ্রিয়ানকে কনগ্রাচুলেট করে এসো!
.
আমি: না ভাইয়া আমি..
.
আদিব ভাইয়া : আরেহ চলোতো।
.
বলেই আমার কোনো কথা না শুনে ভাইয়া আমাকে নিয়ে গেল আদ্রিয়ানের কাছে, আদ্রিয়ান কথা বলছিল গেস্ট দের সাথে। আমার দিকে একবার তাকিয়ে আদিব ভাইয়াকে বলল
.
আদ্রিয়ান: কিছু বলবি? ( ফোন টিপটে টিপতে)
.
আদিব: কীহল অনিমা বলো!
.
নিজেকে সামলে কোনো রকমে বললাম
.
আমি: কনগ্রাচুলেশন আদ্রিয়ান ভাইয়া!

আদ্রিয়ান ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ভ্রু কুচকে একবার আমার দিকে তাকালো তারপর আদিব ভাইয়ার দিকে তারপর আবার আমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: লাইক সিরিয়াসলি? তুমি নিজে…
.
তখনি আঙ্কেল আদ্রিয়ানকে ডাকলো, আদিব ভাইয়াও চলে গেলো আদ্রিয়ানের সাথে! আমিতো অবাক এভাবে হাসার মতো কী বললাম। গেইটের দিকে তাকিয়ে আমি চমকে গেলাম, ঐশি,ইশু, অর্পি সবাই এসেছে, এসে তিনজনেই আমাকে জরিয়ে ধরল, আমিতো অবাক হয়ে বললাম
.
আমি: তোরা এখানে কী করছিস?
.
ঐশি: তুই যা করতে এসছিস।
.
আমি: মানে?
.
ইশু: মানে বার্থডে প্লাস এনগেইজমেন্ট পার্টিতে এসেছি।
.
আমি: কিন্তু আমি যতদূর জানি তোরা কেউ আদ্রিয়ানের রিলেটিভ বা ফ্রেন্ড নস তাহলে?

অর্পি: আরেহ এখানে কী শুধু ছেলের রিলেটিভ এসছে? মেয়ের পক্ষেরও লোক আসছে!
.
আমি: তোরা মেয়ের পরিচিত কেউ?
.
অর্পি: হ্যা আমরাতো ওর বান্ধবী বোন ও বলতে পারিস!
.
আমি: তোদের বান্ধবী আর আমি চিনি না?
.
ঐশি: তুইও চিনিস!
.
আমি: আমি চিনি? কে সে?
.
ঐশি: দেখতেই পাবি! By the way you are looking so pretty..
.
আমি: You guys are also…
.
এরপর সবাই কিছুক্ষন গল্প করলাম, ওদের সাথে গল্প করায় একটু ভালোলাগছে, সেই চাপা খারাপ লাগাটা আর নেই!
.
হঠাৎ আঙ্কেল আন্টি ডাকলেন আমাকে
.
আঙ্কেল: মামনী তোমার সাথে তো কথাই হলোনা, কেমন লাগছে?

আমি: ভভালো!
.
আন্টি: হুম পার্টি এনজয় করো ঠিকাছে?
.
আমি: হুম।
.
হঠাৎ পেছন থেকে একজন এসে আমাকে জরিয়ে ধরে বলল “আপু.. কেমন আছো?” তাকিয়ে দেখলাম জাবিন, আমি মুচকি হাসি দিয়ে বললাম
.
আমি: ভালো! তুমি?
.
জাবিন: ভালো! ওয়াও তোমাকে আজ যা লাগছেনা ভাইয়াতো পাগল হয়ে গেছে মে বি!
.
আমি: মানে?
.
জাবিন চমকে গিয়ে বলল
.
জাবিন: না মানে,আমি আমার উড বি জিজুর কথা বলছি, তোমার বয়ফ্রেন্ড!

আমি: আমারতো কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই!
.
জাবিন: কী বলো সত্যিই নেই?
.
আমি: জ্বী না।
.
জাবিন : ওকে তুমি থাকো আমি আসছি, বলেই চলে গেলো!
.
আমি ভাবছি কেক কেনো কাটছেনা সেই কখন বলেছে কাটবে,আমি যেই আপির কাছে যেতে নেবো তখনি আঙ্কেল আদ্রিয়ানকে ডাকলো কেক কাটার জন্য, আদ্রিয়ান গিয়ে ওর বার্থডে কেক কাটলো। আঙ্কেল আন্টিকে কেক খাইয়ে দিলো, কিন্তু অবাক করা বিষয় ওর উড বি কে কে দেখলাম না, অন্তত কেক কাটার সময় তো থাকবে? আমি আপির কাছে গিয়ে বললাম
.
আমি: আপি ওর উডবি কোথায়?
.
আপি: আমার সামনে !
.
আমি: কীহ? কই?
.
আপি: ছিলো কিছুক্ষন আগে এখন আর নেই!
.
আমি: আপি তুমিও না।
.
আপি: তুই দারা আমি আসছি!

আপি চলে গেলো, আজব সবাই আমায় ইগনোর করছে কেনো? তখনি মানিক আঙ্কেল মাইক্রোফোনে বলল
.
আঙ্কেল: এবার সময় হোয়ে গেছে সেই শুভ কাজটা সেরে ফেলার তাই বেশি সময় নষ্ট করবোনা। আপনারা সবাই নিশ্চই আমার ছেলের হবু বউ, আমার হবু পুত্রবধুর কে সেটা জানতে উৎসুক হয়ে আছেন?
.
সবাই জানার আগ্রহ প্রকাশ করল, আমারো জানতে মন চাইছে যে মেয়েটা কে! তাই ভীষন আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছি।
.
আঙ্কেল: সে আর কেউ না আমার সবচেয়ে কাজের বন্ধু, মোঃ কামরুল হাসান কোতোয়াল এর একমাত্র মেয়ে অনিমা কোতোয়াল..
.
সকলেই হাততালি দিয়ে উঠলো, আমি চমকে তাকালাম, নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিনা, আমার মাথা বন বন করে ঘুরছে, আমি অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম ও আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল, আমি তাকাতেই ও একটা হাসি দিল। আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছি, ও চোখ সরিয়ে নিলো,
.
আমি এবার আপির দিকে তাকালাম, আপি হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে, আব্বুর আম্মুর দিকে তাকাতেই ওনারা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।
.
আমি আপির কাছে গিয়ে বললাম
.
আমি: আপি এসব কী হচ্ছে?
.
আপি: যা শুনছো যা দেখছো তাই হচ্ছে!
.
আমি: হোয়াট? আমার এনগেইজমেন্ট? আদ্রিয়ানের সাথে।
.
আপি: সেটাইতো শুনলে
.
আমি: মজা পেয়েছো? আমার এনগেইজমেন্ট? আমি জানতাম না? জানলাম কখন? যখন এনাউসমেন্ট হয়ে গেছে!
.
আপি: আমাকে বলছিস কেনো আমিকি জানি? ফুপাতো তোকে জিজ্ঞেস করেছিল তোর কোনো আপত্তি আছে কি না, তুই বলেছিস নেই।

আমি: আজব! আমিকি জানতাম যে এখনি করবে এসব। অন্ত্যত একবার বলবে তো। দাড়াও আব্বুকেই ধরছি।
.
আপি: আরে অনি শোনতো!
.
আমি গিয়ে আব্বুকে বললাম
.
আমি: আব্বু? কী হচ্ছে এসব?
.
আব্বু: কী হচ্ছে?
.
আমি: আপনি আমার এনগেইজমেন্ট করাচ্ছেন আমিই জানিনা? আমাকে জানানোর প্রোয়োজন মনে করলেন না?
.
আব্বু: আমরা তো জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তোমার কোন পছন্দ বা সম্পর্ক আছে কী না, তুমিই না করেছো।
.
আমি: হ্যা করেছি কিন্তু তাই বলে আমাকে একটিবার জিজ্ঞেস করারো প্রোয়োজন মনে করলেন না?
.
আম্মু: তুমিই তো বললে যে আমরা যাকে খুশি সিলেক্ট করতে পারি তুমি আপত্তি করবেনা।
.
আমি: আমিকি জানি নাকি যে এখনি তোমরা এসব করছ! আমি করছি না এনগেইজমেন্ট ব্যাস।
.
আব্বু আমার হাত ধরে একটা নিরিবিলি জায়গায় নিয়ে গেলো! পেছন পেছন আম্মু আর আপিও এলো, তারপর বলল

আব্বু: মামনী আমি কিন্তু তোমাকে আগেও জিজ্ঞেস করেছিলাম এই বিষয়ে!
.
আমি: কী জিজ্ঞেস করেছিলেন? এনগেইজমেন্ট এর বিষয়ে কিছু বলেছেন আমায়?
.
আম্মু: দেখ মা।
.
আমি: কী দেখবো তোমরা হুট করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছ আমি এখন বিয়ে করছিনা।
.
আব্বু: আরেহ এখন বিয়ে হবে তোমায় কে বলল? বিয়েতে দেরী আছে এখন খালি এনগেইজমেন্ট হচ্ছে।
.
আমি: যাই হোক না কেনো আপনাদের উচিত ছিলো আমাকে আগে থেকে জানানো!
.
আপি: আচ্ছা এখন এসব বলেকি লাভ আছে?
.
আমি: আছে মানে? অবশ্যই আছে! আমি কোন এনগেইজমেন্ট করছিনা ব্যাস।
.
আব্বু: অনিমা তুমি কিন্তু কথার খেলাপ করছ। তোমার কথার ভরসাতেই আমি মানিককে হ্যা বলেছি।
.
বুঝলাম আব্বু রাগ করেছে আব্বু আমাকে তখনি নাম ধরে ডাকে যখন রাগ করে, কিন্তু আমিওতো হুট করে এসব মানতে পারছিনা। তাই মাথা নিচু করে রইলাম। সেটা দেখে আব্বু ঠান্ডা গলায় বলল

আব্বু: মামনী এমন কেনো করছো? আমার পছন্দের ওপর ভরসা নেই তোমার?
.
আমি: সেরকম কিছু না আব্বু কিন্তু আমি সবে আঠারোতে পা রাখলাম। তাছাড়া আমার চেয়ে বড় আমার অনেক কাজিনস দেরো এখনো বিয়ে হয়নি। আর আপনি!
.
আব্বু: মামনী বিয়েতো হচ্ছেনা এখন! আর আদ্রিয়ান ছেলেটাও খারাপ না।
.
আমি: কিন্তু..
.
তখনি আঙ্কেল আর আন্টি আসল আঙ্কেল বলল
.
আঙ্কেল: মামনী আমার ছেলেটাকি ছেলে হিসেবে খারাপ?
.
আমি মাথা নেড়ে না বললাম।
.
আন্টি: দেখতে খারাপ?
.
এবারো মাথা নিচু করে মাথা নাড়লাম
.
আঙ্কেল: তাহলে কী বাবা মা হিসেবে আমাদের পছন্দ হয়নি?

আমি: না না আঙ্কেল, আপনারা তো খুবি ভালো।
.
আঙ্কেল: তাহলে?
.
আমি: আসলে।
.
আন্টি: দেখো মা আমি শুনেছি তোমার সমস্যাটা, আজতো শুধুই এনগেইজমেন্ট হবে! বিয়ের দেরী আছে।
.
আমি: বুঝতে পারছি আন্টি কিন্তু
.
আম্মু: আসবিনা আমার মেয়ে হয়ে?
.
এখন আর না করার মত ভাষা পাচ্ছিনা, আদ্রিয়ানের মতো হাজবেন্ড, এদের মতো শশুর শাশুড়ি পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার, কিন্তু হুট করে এসব হওয়াতেই মানতে কষ্ট হচ্ছে আমার। কিন্তু আব্বুর ওপরেও ভরসা আছে যে উনি আমার জন্য বেষ্ট টাই চুজ করবে।
.
আব্বু: আর এখনতো এনাউসমেন্টও হয়ে গেছে, যদি এনগেইজমেন্ট না হয় তবে কী হবে ভেবে দেখেছো? তোমার মানিক আঙ্কেলকে কতটা ছোট হতে হবে?
.
আমি এবার অসহায় ভাবে একবার আব্বু একবার আঙ্কলের দিকে তাকালাম। তারপর মাথা নিচু করে বললাম
.
আমি: আচ্ছা তোমরা যা ভালো মনে করো।

আমার কথায় খুশি হয়ে দুই বন্ধু হাগ করল, আন্টি আর আম্মুও আমাকে জরিয়ে ধরল আপি এসে জরিয়ে ধরে বলল
.
আপি: That’s like my sweetheart !!
.
এরপর সবাই গেলো। আব্বু গিয়ে আদ্রিয়ানকে কী জেনো বলতেই আদ্রিয়ান খুব খুশি হয়ে আব্বুকে জরিয়ে ধরল, আঙ্কেলকেও জরিয়ে ধরল। আচ্ছা আমাকে সত্যিই ওর এত পছন্দ?
.
এখনি রিং পড়ানোর জন্য ডাকবে আমি আপির হাত শক্ত করে ধরে আছি! রাগ, অসস্তি, নার্ভাসনেস সব মিশ্রিত অনভুতি হচ্ছে আমার..
.
আঙ্কেল এবার বললেন।
.
আঙ্কেল : অনেকক্ষন অপেক্ষা করিয়েছি আপনাদের আর করাবোনা..
.
বলেই আদ্রিয়ানকে ডাকল আদ্রিয়ান ওনার একপাশে দাড়ালো তারপর আমাকে ডাকলো, আমিতো ঠায় দাড়িয়ে আছি, আপি ঠেলে পাঠালো আমায়। এরপর আমি আঙ্কেলের আরেক পাশে দাড়লাম। আব্বু আম্মু আন্টি আপি সবাই কাছে এলো। আদিব ভাইয়ারা, ঐশিরা, সব চারপাশে জরো হল। কারো মুখেই অবাক হবার ছাপ নেই তারমানে এরা সবাই সব জানত সব? হুহ কাউকে ছাড়বোনা। মিঃ আদ্রিয়ানকেতো নাই!

এরপর আন্টি একটা রিং আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে দিলো, রিংটা ডায়মন্ড এর, ছোট ছোট হোয়াইট ডায়মন্ড বসিয়ে গোল ডিজাইন করা, তার চারোপাশে একটু ফাকা ফাকা করে ছোট ব্লাক ডায়মন্ড বসানো, মাঝখানে একটা মিডিয়াম সাইজ লাল পাথর, বেশ সুন্দর
.
আদ্রিয়ান রিংটা হাতে নিয়ে আমার বা হাত ধরল, তখনি আমার হার্টবিট তীব্র গতিতে ছুটতে লাগল, বুঝতে পারলাম আমি ঘামছি, তারপর ও আমার দিকে তাকালো আমি চোখ সরিয়ে নিলাম, ও মুচকি হেসে আমার আঙ্গুলে রিংটা পড়িয়ে দিল, আমি পুরো জমে আছি এমন কেনো লাগছে আমার
.
তারপর আপি একটা রিং দিল আমায়, এই রিংটা কে কীভাবে বর্ণণা করব নিজেই জানিনা, সিলভার কালার তবে সাদা কালো মিক্সড পাথরের ডিজাইন আছে
.
আমি রিংটা ধরে দাড়িয়ে আছি, আদ্রিয়ান নিজেই হাতটা এগিয়ে দিলো সেটা দেখে আমি ওর দিকে তাকাতেই ও মুচকি হেসে চোখ দিয়ে আমায় ইশারা করল পড়ানোর জন্য, আমি চোখ নামিয়ে নিলাম, কী ছেলেরা বাবা !
.
তারপর আমিও ওকে রিংটা পড়িয়ে দিলাম। সবাই জোরে হাততালি দিয়ে উঠল।ওর মুখে হাসি ফুটে উঠল, আপি আমাকে জরিয়ে ধরে কনগ্রেস বলল।
.
বাহ কী সিনেমাটিক ব্যাপার স্যাপার, কী থেকে কী হয়ে গেলো? হঠাৎ করে আমার জীবনটা একটা নতুন মোর নিলো আমি এখন এনগেইজড? লাইক রিয়েলি? মানে আমি আদ্রিয়ানের হবু বউ? ভেবেই তাকালাম ওর দিকে..
বাহ কী সিনেমাটিক ব্যাপার স্যাপার, কী থেকে কী হয়ে গেলো? হঠাৎ করে আমার জীবনটা একটা নতুন মোর নিলো আমি এখন এনগেইজড? লাইক রিয়েলি? মানে আমি আদ্রিয়ানের হবু বউ? ভেবেই তাকালাম ওর দিকে ও আমার দিকেই তাকি আছে। দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো আর আদিব ভাইয়া ওই মুহুর্তটাকেও ক্যামেরা বন্দি করে ফেলল। আমি চোখ নামিয়ে নিলাম কিন্তু বুঝতে পারলাম যে উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন! আমি খালি ভাবছি কী হচ্ছে আমার সাথে? আমি সপ্নেও ভাবিনি এক মুহুর্তে আমার জীবনটা এভাবে বদলে যাবে। এই বদলটাযে আমার খুব বেশি খারাপ লাগছে তা কিন্তু না!

এরপর আরেকটা কেক নিয়ে আসা হলো। জ্বী ইটাই আমাদের এনগেইজমেন্টের কেক! এরপর আন্টি আদ্রিয়ানের হাতে একটা নাইফ দিলো। আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে কেকের সামনে এনে নাইফটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমার পেছনে পিঠ গেসে দাড়িয়ে আমার হাতের ওপর হাত রাখল। আমি অবাক হয়ে হালকা মাথা ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকালাম ওও আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল, আদিব ভাইয়া এই মুহূর্ত টাকেও ভালো করে বন্দী করে নিলেন। সবাই মিটমিট করে হাসছে, লজ্জায় পরে গেলাম আমি, এই ছেলের কী একটুও লজ্জা নেই? সকলের সামনে বিনা সংকোচে কীভাবে করে এগুলো? কেক কাটার জন্য ও একটু ঝুকলো যার ফলে ওর নিশ্বাস আমার কানে কাধে বাড়ি খাচ্ছে আমি একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছি, এক অদ্ভুত অনুভূতি, ও আমার হাতের ওপর হাত রেখেই কেকটা কাটলো। এরপর একটুকরো কেক নিজেই আমার দিকে এগিয়ে দিলো আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়েই আছি, আপির খোচাতে হুস এলো ওর চোখে চোখ রেখেই কেকটা অর্ধেকের মতো খেলাম, আমার কী হলো জানিনা আমি ওর হাত থেকে আমার অর্ধেক খাওয়া কেকের টুকরোটা নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে দিলাম, যেটা দেখে ও অদ্ভুত এক হাসি দিলো যেনো এভারেস্ট জয় করেছে! তারপর আমার হাত ধরেই কেকের টুকরোটা সম্পূর্ণ খেয়ে ফেললো যার ফলে ওর ঠোট আমার আঙ্গুল স্পর্শ করল, আমি কেপে উঠলাম। আর এই সব মুমেন্ট এর ছবিগুলোই আদিব ভাইয়া বিভিন্ন এঙ্গেলে যত্ন সহকারে তুলেছে।
.
আমার এসবে একটুও খারাপ লাখছেনা, কোথাও মনে একটা ভালো লাগা কাজ করছে, আচ্ছা আমিকি সবটা মন থেকে মেনে নিচ্ছি? মেনে নিচ্ছি আদ্রিয়ানকে? তবে একটা জিনিসতো ঠিকি যে আদ্রিয়ান এখন আমার হবু স্বামী, আমরা এনগেইজড, আমার বুকড করে নেওয়া প্রপারটি, রিয়েলি? আমার? এই মুডি, চার্মিং, চকলেট বয় এখন আমার? ভাবতেই শরীর শিওরে উঠলো।
.
ওয়ান মিনিট! এসব কী করছি আমি? এত সহজে মেনে নিচ্ছি? সবাই আমাকে এভাবে উল্লু বানালো, বলা নেই কওয়া নেই হুট করে এনগেইজড করে দিল, আমার এই বিন্দাস ফ্রি লাইফটাকে বেধে দিলো, আর আমি এমনি এমনি ছেড়ে দেবো? নেভার!

কেক কাটার পর্ব শেষ হতেই আমাদের সবাইকে বসালো একটা টেবিলে ডিনার করাতে, আমরা দুইটা টেবিল নিয়েছি, বাকি সব টেবিলে গেস্টরা বসছে। আমাকে আদ্রিয়ানের পাশেই বসানো হলো, আমাদের টেবিলে সব ছোটরা বসছে আপি, কাব্য, ওহি, সজীব ভাইয়া, অর্নব ভাইয়া, জাবিন, ঐশি, অরু, ইশু আর আদিব ভাইয়ারা আরেক টেবিলে সব বড়রা আব্বু, আম্মু, আঙ্কেল, আন্টি, চাচু, ফুপা, সুলানাপ্পি,আর আদ্রিয়ানের দাদা, দাদি, আরো দুই একজন।
.
আমার টেবিলে সব বান্ধরের দল থাকায় সবাই নানারকম হাসি ঠাট্টা করছে আর আমি মাথা নিচু করে খালি শুনছি, আদ্রিয়ান সাহেবও চুপ তবে মাঝে মাঝে দুই একটা কথার উত্তর দিচ্ছে।
.
আপি: অনিতো ভাবতেই পারেনি যে এরকম কিছু হবে।
.
আদিব ভাইয়া: ও তো ডিরেক্ট আদ্রিয়ানকে কনগ্রাচুলেট করতে গেছিলো।
.
সবাই হেসে দিলো, তার সাথে আমার জামাই মানে হবু জামাইও যোগ দিলো। আমি রেগে ভাইয়ার দিকে তাকালাম, নিজেই আমাকে জোর করে নিয়ে গেলো এখন নিজেই জোক মারছে।
আমি নিজের এনগেইজমেন্টে নিজেরি বরকে কনগ্রাচুলেট করেছি? কী হাস্যকর! এইজন্যই আদ্রিয়ান তখন দাত বের করে হাসছিল? আল্লাহ!

আপি: ও তো আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, মেয়ে দেখতে কেমন আদ্রিয়ানের সাথে কেমন মানায়।
.
আবার সবাই হেসে দিল। কিন্তু উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।
.
ঐশি: আমিতো ভেবেছিলাম আমাদের দেখে অন্তত বুঝে যাবে, কিন্তু এই মেয়েকে বললাম যে পাত্রি আমাদের বান্ধবী তবুও বুঝলো না?
.
সবার সেই বিখ্যাত হাসি। আল্লাহ আর কত লজ্জা দিবেন?
.
আদিব: আচ্ছা তোমারতো তোমার ফ্রেন্ডদের দেখে অন্তত বোঝা উচিত ছিল তাইনা।
.
আমি মাথা নিচু করে শুনছি আর হালকা হালকা খাচ্ছি, সত্যিই আমি এত বোকা কীকরে হলাম? হাউ?
.
জাবিন: হ্যা এখন তো সামনা সামনি ভাবী ডাকতে পারব তাইনা ভাবি?
.
আমি একটু মুচকি হাসলাম।
.
আদ্রিয়ান: হয়েছে আমার বউকে আর লেগপুল করিসনা, তোদের জন্য খেতে পারছেনা বেচারি!
.
আমার বুকটা ধক করে উঠলো। হার্ট আবার ফুল স্পিডে বিট করতে লাগল, ” আমার বউ” আদ্রিয়ানের মূখ থেকে বেরোনো এই শব্দটা আমাকে এলোমেলো করে দিলো। আমার পা কাপছে জোরে হাতো কাপছে, এখন আরো খেতে পারছিনা।

ওর কথায় সবাই অবাক হলো এভাবে সবার সামনে হূট করে যে বউ বলে ফেলবে আমার মত অন্য কেউও আশা করেনি!
.
কাব্য : এই বোকা মেয়েটাকেই তোমার পছন্দ হলো ভাইয়া? বাংলাদেশে মেয়ে ছিলোনা?
.
আমি রাগী চোখে কাব্যর দিকে তাকালাম, তখনি আদ্রিয়ান বলল
.
আদ্রিয়ান: নো শালাবাবু। আমার বউ মোটেও বোকা না, খালি একটু কম বোঝে, টিউবলাইট টাইপ।
.
সবাই হেসে দিলো। আমি রেগে গেলেও ওর ওই বউ শব্দটা আমার সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে, কী বেহায়া ছেলে সবার সামনেই বউ বউ করে যাচ্ছে? আরে ভাই তোমার নাহয় লজ্জা নাই আমার তো আছে, আমার কথাটাতো ভাবো? দূর সেদিকে আর মন না দিয়ে খেতে লাগলাম।
.
আদ্রিয়ান আবার বলল
.
আদ্রিয়ান: যেরোকমি হোক আমারি তো!
.
আমি খাওয়া ছেড়ে ওর দিকে তাকালাম, বেশ স্বাভাবিক ভাবেই বলল কথাটা, কিন্তু আমার তো অবস্হা খারাপ, আমি পুরো জমে গেছি ওর কথা শুনে, আমি ওর? রিয়েলি?
.
এরপর সবাই নানারকম কথা বলতে বলতে খাওয়ার পর্ব শেষ করলাম।

খাওয়া শেষে আদ্রিয়ান আমি আর সব বীচ্ছূবাহিনীর দল নানারকম কথা বলছে, আদ্রিয়ান ও মাঝে মাঝে মজা করছে, আর আমাকে লজ্জা দেবার মহৎ কাজটিতো আছেই.
.
কিছুক্ষণ পর বড়রাও এলো মানিক আঙ্কেল এসে আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল
.
আঙ্কেল: মামনী মন ভালো হয়েছে?
.
এটা শুনে আদ্রিয়ান ও আমার দিকে তাকালো, হয়তো আমার উত্তর টা জানতে চাইছে, আমি মাথা নিচু করে রইলাম কিছু বললাম না!
.
আঙ্কেল: আমার আর তোমার আব্বুর ওপর এটুকু বিশ্বাস রাখতে পারো। আমাদের কথাটা শুনে তুমি ঠকবেনা।
.
আমি মুচকি একটা হাসি দিয়ে মাথা নিচু করলাম।
.
আমিতো জানি আমি ঠকিনি, একদমি ঠকিনি, কিন্তু এভাবে হুট করে করার কী দরকার ছিলো? একবার জানালে কী হতো?
.
আব্বু: জানি মামনী তোকে না জানিয়ে কাজটা করে আমরা ঠিক করিনি কিন্তু..
.
তখনি আদ্রিয়ানের দাদাভাই এলো
.
দাদুভাই: কিন্তু সব দোষ আমার এই গুনধর নাতীর। এই বেটাই বলছে তোকে ভূলেও যাতে জানানো না হয়।

আন্টি: হ্যা শয়তানটা তোকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল, ওর জন্যই এতো কান্ড হলো। ( আদ্রিয়ানের কান টেনে)
.
আদ্রিয়ান: আম্মু… কী করো সবার সামনে? I have an image…
.
আঙ্কেল: রাখ তোর Image তোর কথায় কত বড় রিস্কটাই না নিলাম? যদি মেয়েটা রাজি না হতো?
.
আমিতো অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছি! তারমানে ওই বলেছিল ব্যাপারটা আমায় না জানাতে? সারপ্রাইজ?লাইক সিরিয়েসলি? আমিকি ওর গার্লফ্রেন্ড? বাজে ছেলে একটা ! এভাবে আমায় ঘোল খাওয়ানো? দেখে নেবো তোমায়!
.
তারপর দাদাভাই বলল
.
দাদুভাই : যাগগে যা হবার হয়েছে, এবার আমার রাজজোটক কে একসাথে দেখি একবার!
.
বলেই দাদাভাই আমাকে আর আদ্রিয়ানকে গা ঘেসিয়ে পাশাপাশি দাড় করিয়ে দিলেন।
.
উফ এতো লাগিয়ে দাড় করানোর কী ছিল?
.
দাদুভাই লাঠি দিয়ে আদ্রিয়ানকে একটা খোচা মেরে বলল

দাদুভাই: গাধা কিছুই শিখস নাই, বউয়ের কাধে হাত রাখ গাধা। এই যুগের ছেলে হয়েও রোমান্স শিখিয়ে দিতে হয়?
.
আদ্রিয়ান: হ্যা এই দিনটাও দেখার ছিলো? আমার বউয়ের সাথে রোমান্স করব সেটা এখন আমাকে এই বুড়ার কাছে শিখতে হবে?
.
দাদুভাই: তোমার কী মনে হয়? আমার রোমান্স সম্পর্কে কোনো ধারনা নেই? তোমার দাদিকে জিজ্ঞেস কর সেই জানে আমার ধারণা কতটা!
.
আদ্রিয়ান: হইছে এই বয়সে আর লোক হাসানের দরকার নাই।
.
আমিতো স্তব্ধ এদের দাদা নাতির কথা শুনে। এরকমও হয়?
.
দাদুভাই: হইছে এবার বউয়ের কাধে হাত রাখ।
.
আদ্রিয়ান: দাদুভাই তুমিও না!
.
বলেই আদ্রিয়ান আমার কাধে হাত রাখল।
.
দাদি: বাহ কী মানিয়েছে দুজনকে।
.
আমি মাথা নিচু করে আছি হঠাৎ আঙ্কেল ওর আর অামার হাত এক করে দিয়ে বলল
.
আঙ্কেল: জীবনে যাই হয়ে যাক এই হাত কখনো ছাড়বেনা
.
আদ্রিয়ান সাথেসাথেই বলে ফেলল

আদ্রিয়ান: কখনোই না।
.
এটা আমি আদ্রিয়ানের দিকে তাকালাম। সবাই হেসে দিল। উফরে এমন কেনো ও? ছাড়বেনা ভালোকথা সেটা সবার সামনে হুট করে এভাবে এনাউস করতে হবে? ও আমার দিকে তাকাতেই মাথা নিচু করে ফেললাম
.
এরপর সবাই অরো কিছুক্ষণ নানারকম কথা বলল। এরপর এলো ছবি তোলার পালা। প্রথমে আমাদের ফ্যামিলি পিক তোলা হলো, দুই ফ্যামিলি মিলেই তুললাম। তবে আমাকে আর আদ্রিয়ানকে মাঝখানে পাশাপাশি দাড় করানো হয়েছে। এরপর আমরা বিচ্ছু বাহিনীরা ছবি তুললাম, সেখানেও একি কাজ করল। এবার ওরার আমার কাপল পিক তোলা হবে আমিতো আর সেটা তুলবে আদিব ভাইয়া। তারপর ওকে আর আমাকে দাড় করিয়ে বিভিন্ন এঙ্গেলের বিভিন্ন ষ্টাইলের কাপল পিক তুললেন ভাইয়া। আর আমি অসহায়ের মত ওনার ইনসট্রাকশন অনুযায়ী আদ্রিয়ানের সাথে পোজ দিচ্ছিলাম।
.
এরপর আদিব ভাইয়া কিছু গ্রুপ সেলফি নিলো, আদ্রিয়ান আমার ফ্যামিলির সকলের সাথে আলাদা আলাদা করেও ছবি তুলল। বড়রা একজায়গায় কীসব কথা বলছে আর আদ্রিয়ান? ও আপি কাব্য, সজীব ভাইয়া, অর্ণব ভাইয়া সবার সাথেই হেসে কথা বলছে, আমি কী দোষ করলাম? ধুর না বললেই ভালো।

এরপর হঠাৎ আমার বান্দরনী থুরি বান্ধবীরা আদ্রিয়ানের হাত ধরে নিয়ে এলো আমার কাছে। তারপর বলল
.
ঐশি: জিজু চলে যাবো এখন তাই আপনাদের দুজনকে একসাথে দেখে যাই।
.
আদ্রিয়ান: এখনি চলে যাবে?
.
ইশু: হ্যা জিজু দেরী হয়ে যাবে নইলে।
.
আদ্রিয়ান: ওহ ব্যস্ততায় বেশি কথা হলোনা তোমাদের সাথে!
.
অর্পি: আরেহ ব্যাপার না আপনি আপনার বউকে টাইম দিন।
.
ঐশি: হ্যা আমাদেরো দেখবেন মাঝে মাঝে, আমরাও তো ফেলে দেবার মতো না!
.
আদ্রিয়ান: কী বলো? তোমাদের ফেলে দিতে পারি? যতই হোক শালিকা তো। ( চোখ মেরে)

সবাই হাসল তারপর ওরা আমায় জরিয়ে ধরে বাই বলল, আদ্রিয়ান সামনে তাই কিছু বললাম না, নইলে ধুয়ে দিতাম, আমাকে ওরাও বললনা?
.
ওরা চলে গেলো, আব্বু আদ্রিয়ানকে ডাকতেই ও চলে গেলো। তারপর আব্বু আমাকেও ডাকল। গিয়ে বুঝলাম আমাদের যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, দাদুভাই আমার হাত ধরে বলল,
.
দাদুভাই: তাড়তাড়ি দেখা হবে দিদিভাই।
.
আমি: জ্বী।
.
আঙ্কেল আব্বু একে ওপরকে জরিয়ে ধরল, তারপর আন্টি এসে আমাকৈ জরিয়ে ধরে বলল
.
আন্টি: ইচ্ছেতো করছে তোকে এখানেই রেখে দেই।
.
আদিব: আন্টি রেখে দিতেই পারেন একজনতো সেটাই টাইছে মনে মনে।
.
আদ্রিয়ান রাগী চোখে তাকালো আদিব ভাইয়ার দিকে ভাইয়া থেমে গেলো আর সবাই হেসে দিলো। এরপর আঙ্কেল বলল
.
আঙ্কেল: এখনো রেগে আছো?

আমি মাথা নিচু করে মাথা নাড়লাম। আঙ্কেল হেসে বলল
.
আঙ্কেল:আচ্ছা এসো দেখা হবে আবার।
.
তারপর আপি আদ্রিয়ানের সাথে কীসব কথা বলল। আদিব ভাইয়া আমাকে ডেকে বলল।
.
আদিব: এখনতো বোনের সাথে সাথে ভাবিও, তা দেখা হচ্ছে আবার।
.
আমি: হুম।
.
এবার আমাদের যাবার পালা, আব্বু আম্মু বাড়ির সবাই আদ্রিয়ানের সাথে কথা বলে চলে এলো যেই গাড়িতে উঠতে যাবো তখনি আদ্রিয়ান এসে আব্বুকে জরিয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: Thanks a lot…
.
আব্বু হাসল।আমিতো অবাক। এরপর গাড়িতে উঠলাম গাড়ি স্টার্ট দেবার পর আমি জানালা দিয়ে ওর দিকে তালালাম ও তাকিয়ে আছে আমার দিকে এরপর গাড়ি স্টার্ট দিলো যতদুর দেখা গেছে আমি ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলাম আর ও আমার দিকে।

গাড়িতে বসে ভাবছি কী হলো আজ আমার সাথে? সবাই সবটা জেনেও আমায় কিচ্ছু বললোনা কারন আদ্রিয়ান বলেছে? এমনিতেতো ফিরেও তাকায়না আর এখন সোজা এনগেইজড করে দিলো? ছাড়বোনা তোমায় মিঃ কিছতেই নাহ..
গাড়িতে বসে ভাবছি কী হলো আজ আমার সাথে? সবাই সবটা জেনেও আমায় কিচ্ছু বললোনা কারন আদ্রিয়ান বলেছে? এমনিতেতো ফিরেও তাকায়না আর এখন সোজা এনগেইজড করে দিলো? ছাড়বোনা তোমায় মিঃ কিছুতেই নাহ..
.
পুরো ড্রয়িং রুমে থমথমে এক পরিবেশ, কেউ কিচ্ছু বলার সাহস পাচ্ছেনা। নিচে দুটো শোপিছ আর একটা ফুলদানি ভেঙ্গে পরে আছে। আমিই ভেঙেছি, কিন্তু তবুও কেউ কিচ্ছু বলছেনা, আমি স্বভাবত রাগী নই, কিন্তু রেগে গেলে মাথার ঠিক থাকেনা, আর সবাই জানে এমন রাগ আমি তিন চার বছরে একবার দুবার দেখাই, আর ওনাদেরও ভূল আছে তাই চুপ করে আছে।
.
আব্বু: মামনী..
.
আমি: নাহ আব্বু আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা, I want answer, কেনো করলেন এটা?
.
আব্বু: আমি বলতে চেয়েছি কিন্তু..
.
আমি: কিন্তু? কিন্তু কী আব্বু? হ্যা আমি জানি আমি বলেছি যে আপনাদের পছন্দতে বিয়ে করতে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু তাই বলে আপনি আমাকে একটিবারো না জানিয়ে ডিরেক্ট এনগেইজমেন্ট করিয়ে ফেললেন?
.
আম্মু: আদ্রিয়ান ই বলেছিল তোমায় না জানাতে!

আমি: হ্যাঁ আদ্রিয়ান বলল আর তোমরা সেটাই করলে? সিরিয়াসলি?
.
আব্বু: সব তো ঠিক হয়ে গেলো আবার কেনো এসব?
.
আমি: আব্বু আমি সবটা আপনার আর মানিক আঙ্কেলের কথা ভেবেই মেনে নিয়েছি! তারমানে এই না যে আমি জবাব চাইবোনা।
.
আব্বু আমার হাত ধরে বসিয়ে বলল
.
আব্বু: আমি হুট করে এসব করতে চাইনি মা মানিক আমার কাছে আসার পর আমি বলেছিলাম আরো দুই এক বছর ওয়েট করতে? কিন্তু..
.
আমি: কিন্তু?
.
আব্বু: আদ্রিয়ান তখন নিজে আমার দুটো হাত ধরে বলেছে যে বিয়েটা এখন দিতে হবেনা কিন্তু আপাদত এনগেইজমেন্ট যাতে করাই। ওরকম একটা ছেলে এভাবে আমায় রিকোয়েস্ট করছে, কীকরে না করি বলো?
.
আমি: কিন্তু..

আপি: মেনে যখন নিয়েছিস তখন আর এসব কেনো বলছিস বলতো?
.
আমি: আপি তুমি বুঝছোনা..
.
আপি: সব বুঝতে পারছি চল রুমে চল।
.
আপি আমাকে রুমে নিয়ে গিয়ে এক গ্লাস পানি দিলো, আমিও ঢকঢক করে খেয়ে নিলাম তালপর জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিলাম।
.
আপি: আচ্ছা অনি এনগেইজমেন্ট তো হয়ে গেছে এখন এমন করছিস কেনো বলতো।
.
আমি: জানিনা আপি রাগ লাগছে খুব। এভাবে কীভাবে আমার এনগেইজমেন্ট করিয়ে দিলো?
.
আপি: আচ্ছা জীবনেও কী বিয়ে করতি না?
.
আমি: করতাম অবশ্যই করতাম তাই বলে এখন?

আপি: আরেহ এখন তো বিয়ে হচ্ছেনা।
.
আমি: হুম।
.
আপি: এবার ফ্রেশ হয়ে নে আমিও যাই।
.
আপি চলে গেলো ফ্রেশ হতে। আমিও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাটে আধশোয়া হয়ে একা একাই বিরবির করছি আচ্ছা আদ্রিয়ান আমাকে পছন্দ করে? আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে? আব্বুর কাছে অনুরোধও করেছে? কিন্তু কেনো? ও যেরকম ছেলে তাতে তো ও আরো ভালো মেয়ে পেতো? তাহলে?
.
“ভালোবাসা”
.
তাকিয়ে দেখি আপি কফি নিয়ে এসে আমার পাশে বসে আমার হাতে কফি ধরিয়ে দিলো
.
আপি: জানি আজ তোমার ঘুম আসবেনা তাই কফি নিয়ে এলাম রাত জেগে গল্প করব।
.
আমি: ভালোবাসা?
.
আপি: হুম.. He loves you..
.
আমি: Nice joke…( কফিতে চুমুক দিয়ে)
.
আপি: নো গাধি। এটা জোক নয়। ও সত্যিই তোকে ভালোবাসে।
.
আমি: আচ্ছা? কীকরে বুঝলে?
.
আপি: আচ্ছা তোদের প্রথম দেখায় ও তোর চোখে পানি দেখে তোকে কী বলেছিল?

আমি: রাগী গলায় বলেছিল ওটা ওর জিনিস আর ও ওর জিনিসের অপচয় পছন্দ করেনা।
.
আপি: Right! একটা ছেলে একটা মেয়ের চোখে পানি কখন সহ্য করতে পারেনা জানো?
.
আমি: কখন?
.
আপি: যখন ছেলেটা মেয়েটাকে মন থেকে ভালোবাসে।
.
আমি: ব্যাস? এটুকুতেই বুঝে গেলে?
.
আপি: নাহ আরো আছে!
.
আমি: আবার কী? ( ভ্রু কুচকে)
.
আপি: আচ্ছা তুমি যেদিন ফুচকায় ঝাল খেয়ে ফেললে সেদিন ও যা যা করেছিল সব স্বাভাবিক ছিলো?
.
আমি: নাহ একটু বেশিই কেয়ার করেছিল, ইনফ্যাক্ট খুব ভয় পেয়ে গেছিলো, এমন করছিলো জেনো ওরি কিছু হয়েছে!

আপি: তোমার কী মনে হয় এগুলো এমনি এমনি করেছে? মানবতার খাতিরে কেউ এতোটা করেনা অনি! আর যদি ধরেও নি যে ও যা করেছে শুধু মানবতার খাতিরে তাহলে পরে তোকে যেভাবে বকেছিল শাসন করেছিল, ঝাল খাওয়ার জন্য সেটা কেনো করেছিল? ওর ওই শ্বাসনে কোনো অধিকারবোধ দেখিসনি?
.
আমি আপির কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছি, এই প্রশ্নগুলো যে আমার মনেও ওঠেনি তা কিন্তু না, তবে আমি ব্যাপারটাকে ওতটা গুরত্ব দেই নি! কিন্তু এখন বিষয়টা ভাবাচ্ছে!
.
আপি: তারপর তোর ওরনা ধরার অপরাধে দুটো ছেলের কী অবস্হা করেছিল ভুলে গেলি? তারপর সবচেয়ে বড় কথা তোর নবীন বরণের প্রোগ্রামে যেটা করেছিল?
.
আমি: Wait a bit… আমিতো তোমায় বলিনি আদ্রিয়ানি AD তুমি কীকরে জানলে?
.
আপি: আমিতো সন্দেহ সেই প্রথম দিন থেকেই করেছিলাম, কিন্তু ওইদিন নিশ্চিত হয়ে গেছিলাম!
.
আমি: কোনদিন?
.
আপি: তোমার মনে আছে আমি তোমাকে AD এর ফুল ডিটেইলস জিজ্ঞেস করেছিলাম, ওর হাইট,চোখ, কান, নাক ঠোট সব?
.
আমি: হুম।
.
আপি: সেদিনি পুরোপুরি সিউর হয়েছি যে আদ্রিয়ান ই AD।
.
আমি: রিয়েলি?
.
আপি: ইয়েস। নবীণ বরণের ঘটনাটা শুনে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছিলাম। আর এটাও বুঝেছিলাম যে ও তোমাকে কতটা ভালোবাসে।
.
আমি: তাই সেদিন না হেসে আমাকে কিস করে জড়িয়ে ধরেছিলে?
.
আপি: হুম, খুব খুশি হয়েছিলাম সেদিন।
.
আমি: তুমি যদি জানতেই AD ই আদ্রিয়ান? তাহলে আমাকে বললেনা কেনো?

আপি: আদ্রিয়ান! ওই বলেছে।
.
আমি: কীহ?
.
আপি: হুম আমি যখন সিওর হলাম AD ই আদ্রিয়ান, তখন আমার খটকা লাগল যে আদ্রিয়ানতো তোমাকে দেখেছে, তাহলে নিজের পরিচয় তোমায় কেনো দিলোনা? কেনো অপরিচিতদের মত ট্রিট করল।
.
আমি: তারপর?
.
আপি: তারপর আমি আদ্রিয়ানকে ফোন করি। তখনি ও বলে যে সত্যিটা যাতে তোমাকে না জানাই।
.
আমি: কিন্তু এক পলক দেখে ওর আমাকে মনে ছিলো?
.
আপি: নো বেবি সেদিন ও তোমাকে এক পলক দেখেনি, খুব কাছ থেকে গভীরভাবে দেখেছে!
.
আমি: মানে?

আপি: এখন তোমরা এনগেইজড তাই এখন বলতেই পারি!
.
আমি: কী?
.
আপি: সেদিন ওর ওয়াসরুমে যাবার জন্য যেই রুমটা দেখিয়েছিলাম সেখানে যে তুমি ঘুমিয়ে ছিলে সেটা আমি বা ও জানতামনা। ওর আসতে দেরী হচ্ছে তাই কোন সমস্যা হয়েছে কী না সেটা দেখতে গেছিলাম, গিয়ে দেখলাম.. ( দুষ্টু হেসে)
.
আমি: কি দেখলে?
.
আপি: দেখলাম যে আদ্রিয়ান তোমার পাশে বসে তোমার গায়ে চাদর দিয়ে দিলো তারপর তোমার দিকে ঝুকে তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো অনেক্ষণ, আর..
.
আমি: আর?
.
আপি: তোমার কপালে..
.
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম
.
আমি: ককি?
.
আপি হেসে দিয়ে বলল

আপি: ভয় পেওনা কিস করেনি, যদিও করতে গেছিলো কিন্তু কিছু একটা ভেবে লাস্ট মুমেন্টে সরে গেছে।
.
আমিতো চরম অবাক হয়ে শুনছি। সত্যিই আদ্রিয়ান এগুলো করেছে? আর তাই আপি সেদিন ওমন বিহেভ করেছে?
.
আমি: তাই সেদিন ওমন রোমান্টিক হয়ে গেছিলে না?
.
আপি: হম! আর এটা শুধু আমি দেখিনি।
.
আমি: আর কে দেখেছে? (শুকনা ঢোক গিলে)
.
আপি: কাব্য আর ওহিও আমার পেছন পেছন এসে দেখেছে।
.
আমি: কীহ?
.
আপি: হুম! বেচারা আদ্রিয়ান আমাদের দেখে ভুত দেখার মত চমকে গেছিলো! ওহিকে চকলেট দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে, আমিও সামলেছি, কিন্তু কাব্যকে কীভাবে ম্যানেজ করেছে সেটা আদ্রিয়ানই জানে।
.
এইজন্যই ওই শয়তানগুলো মিটমিট করে হাসছিলো সেদিন? এতকিছু হয়ে গেলো আমি কিছুই টের পেলাম না?
.
আপি: তোমার নবীণ বরণের শাড়ি ওর্নামেন্টস কিন্তু ওরি দেওয়া।

আমি: মানে কী? এইজন্যই তুমি বলতে চাওনি যে কোথায় পেলে?
.
আপি: জ্বী!
.
আমি: তাইতো বলি ওর আর আমার পোশাক এতটা ম্যাচ করল কীভাবে? এনগেইজমেন্টের সবকিছুই নিশ্চই ওরি দেওয়া?
.
আপি: এইতো বুঝে গেছো।
.
হায় আল্লাহ আর কত কিছু দেখতে হবে? এতো সিনেমাকেও হার মানিয়ে দেবে।
.
আপি: আর কিছু জানার আছে?
.
আমি: হ্যা এনগেইজমেন্ট এর কথাটা ওরা কবে বলেছে?
.
আপি: সেটা জানিনা তবে আমি শুনেছি যেদিন দ্বিতীয়বার আদ্রিয়ানরা এলো। হয়েছে এবার ঘুমাও আর ঘুম না আসলে শুয়ে রেস্ট নেও।
.
বলেই আপি ওর রুমে চলে গেলো

আমি ভাবছি কী কী হয়ে গেলো এই কয়দিনে আর আমি টেরো পেলামনা? ওই বেটা আদ্রিয়ান তলে তলে এতো কিছু করে ফেললো আর আমি? কিছুই বুঝতে পারলাম না! এমনিতে একটুও ফিরে তাকায়না, দরকার ছাড়া নিজে থেকে একটুও কথা বলে না, আর সোজা আমার আব্বুকে পটিয়ে আমায় এনগেইজড করে দিলো, এত তাড়ার কী ছিলো? আমাকে নিয়ে রিস্ক নিতে চায়না? হুহ আর কত কী দেখবো আল্লাহ জানে। আর আজ কী কী করল এই ছেলে? এমন ভাব করল যেনো আমরা কতো ফ্রি, সবার সামনেই আমার হাত ধরে ফেলল, বউ বলল, আর রিং পড়ানোর সময়? নিজেই হাত এগিয়ে দিলো আবার চোখ দিয়ে ইশারা করল পড়িয়ে দেবার জন্য?

Infinite Love part 13+14+15

এবার আমি আমার হাতের রিংটার দিকে তাকালাম, আমি এনগেইজড? বাহ অনি কী ভাগ্য তোর, কোথায় ভেবেছিলি চুপি চুপি কয়েক বছর প্রেম করে তারপর বাড়িয়ে জানিয়ে বিয়ে করবি, কিন্তু সে গুরি বালি দিয়ে কেউ এসে তোকে বুক করে নিলো, তবে যাই হোক আজকের দিনটা অতটাও খারাপ ছিলোনা, আদ্রিয়ানের ওসব কাজ, সবার মজা করা, সকলের সেই আনন্দ, আর মোস্ট ইমপর্টেন্টলি আমার এনগেইজমেন্ট, এসব ভেবেই রিংটা হাত দিয়ে ছুয়ে দিলাম

আচ্ছা আদ্রিয়ান কী সত্যিই আমায় ভালোবাসে? সমস্ত ঘটনা আজ খুটিয়ে খুটিয়ে ভাবছি, সেই প্রথম দেখা থেকে নবীন বরণে যা যা হয়েছে তাতে এটাতো অনেকটাই ক্লিয়ার যে He loves me.. কিন্তু এতোদিন এমন ভাব নিলো যেনো পাত্তাই দেয়না আমায়, আর এখনোতো ও নিজে একবারো বলেনি যে ও আমায় ভালোবাসে, তাহলে আমি কেনো মানবো? নো মিঃ আদ্রিয়ান আমিও দেখি তুমি কতদিন না বলে থাকো, যতদিন তুমি নিজে থেকে না বলছ যে তুমি আমাকে ভালোবাসো আমিও তোমার সাথে নরমাল বিহেভ করছি না, আমিও ইগনোর করব তোমায়, এবার বুঝবে কেমন লাগে..

Infinite Love part 21+22+23+24+25