Infinite Love part 21+22+23+24+25

Infinite Love part 21+22+23+24+25
Writer: Onima

আচ্ছা আদ্রিয়ান কী সত্যিই আমায় ভালোবাসে? সমস্ত ঘটনা আজ খুটিয়ে খুটিয়ে ভাবছি, সেই প্রথম দেখা থেকে নবীন বরণে যা যা হয়েছে তাতে এটাতো অনেকটাই ক্লিয়ার যে He loves me.. কিন্তু এতোদিন এমন ভাব নিলো যেনো পাত্তাই দেয়না আমায়, আর এখনোতো ও নিজে একবারো বলেনি যে ও আমায় ভালোবাসে, তাহলে আমি কেনো মানবো? নো মিঃ আদ্রিয়ান আমিও দেখি তুমি কতদিন না বলে থাকো, যতদিন তুমি নিজে থেকে না বলছ যে তুমি আমাকে ভালোবাসো আমিও তোমার সাথে নরমাল বিহেভ করছি না, আমিও ইগনোর করব তোমায়, এবার বুঝবে কেমন লাগে..

কিন্তু ও আমার সামনে এলেইতো আমার সব এলোমেলো হয়ে যায়। আর এখন তো ও আমার উডবি। কেনো জানিনা ও আমার সামনে এলেই আমি বোকা বনে যাই, ও আমাকে ছুলেই হার্ট ফুল স্পিডে বিট করতে থাকে, শরীর অবস হয়ে আসে! কেন হয় এমন?
.
হঠাৎ মনে এলো আচ্ছা ও কী আমায় ফেসবুকে নক ঠক করেছে, করতেই পারে এখনতো আমি ওর উডবি, নিশ্চই এড দিয়েছে, গিয়ে দেখি! তাড়াতাড়ি ফেসবুকে লগিন করলাম 10 new friend request…Wow.. নিশ্চই এর মধ্যে ও আছে। চেক করলাম। কিন্তু আমার আশাকে নিরাশায় পরিনত করে দিয়ে আমার পারমানেন্ট হিরো আমায় নক করা তো বহুত দূরের কথা রিকোয়েস্ট পর্যন্ত পাঠায় নি। ধ্যাত ভাল্লাগেনা, এমন মানুষ জীবনে দেখিনি, হুহ এরপর এড দিলেও আমি একসেপ্ট করবোনা..তবুও কেনো জানি মন চাইলো ওর আইডিটা ঘুরে দেখতে তাই ঘুরে দেখতে গেলাম গিয়েতে আমি শকড্, বার্থডে বা এনগেইজমেন্টের একটা পিক ও পোস্ট করে নি, শুধু কভারে দুটো হাতের পিক দেওয়া, বেশ বুঝতে পারলাম হাত দুটো আমার আর ওর, রিং দেখেই সিওর হয়েছি, আঙ্কেল যখন আমাদের হাত এক করে দিয়েছিল তখনি হয়তো তোলা হয়েছে এটা… আর প্রোফাইল পিক টা আমাদের কেক কাটার যেখানে ওর বা আমার কারো মুখ বোঝা যাচ্ছে না কারন ছবিটা একপাশ থেকে তোলা, আমার মুখ চুলের জন্যে দেখা যাচ্ছে না, আর আদ্রিয়ানের এই সময় কেক কাটার জন্য ঝুকেছিল, তাই আমার মাথার জন্য ওর মুখটা দেখা যাচ্ছেনা। তবুও পিকটা সুন্দর খুব।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

এই ছবি দুটো সেভ করে নিলাম তারপর দেখতে লাগলাম, কেমন জেনো লাগছে এক অদ্ভুত অনুভুতি। আবারো রিংটা দেখতে লাগলাম, আমার ঠোটে হালকা হাসি ফুটে উঠল। উদ্ভুতভাবে এর কারণ আমার অজানা। এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পরলাম।
.
সকালে আজ আম্মুই টেনে তুললো, তুললো বলতে টেনে বসিয়ে দিলো! আমি চোখ কচলাতে কচলাতে হাই তুলে বলল
.
আমি: কী হলো? তুমিতো বললা আজ মেডিকেল যেতে হবে না, তাহলে ডাকছো কেনো?
.
আম্মু: মেডিকেল যেতে হবেনা বলে পরে পরে ঘুমোবে না কি?
.
আমি: আচ্ছা তাইলে সাকি সাকি গানটা প্লে করে দাও নাচি!
.
আম্মু: এক থাপ্পর মারব।
.
আমি: তাহলে করবোটা কী বলবেতো?
.
আম্মু: যাও ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো, এবং তাড়াতাড়ি।
.
বলেই আম্মু চলে গেলো। উফ এই আম্মুটাওনা এমন কেনো করে? এখন আবার কী করবে আল্লাহ জানে!
.
আমি ভালোভাবে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম।
গিয়ে দেখি বাড়ি শুদ্ধ সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। আমি একটা চেয়ার টেনে আপির পাশে বসে পরলাম।
.
আব্বু: মামনী আজকে বাড়িতেই থাকবে কিন্তু।
.
আমি: হুম।

সুলতানাপ্পি: তুই কী এখনো রেগে আছিস?
.
আমি: রেগে আর কী হবে? যা হওয়ারতো হয়েই গেছে।
.
কেউ কিছু বলতে যাবে তার আগেই আব্বু থামিয়ে দিলো
.
আব্বু: থাক এসব কথা, মামনী খাও তুমি।
.
আম্মু: খেয়ে আমার রুমে এসে একবার দেখা করে যেও।
.
আমি: আচ্ছা।
.
খাওয়া শেষ করে আম্মুর রুমে গেলাম আপিকে নিয়ে আব্বু আম্মু দুজনেই বসে আছে।
.
আম্মু: বসো।

আমি গিয়ে বসলাম।
.
আম্মু: আদ্রিয়ান ফোন করেছিল?
.
আমি একবার আপির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালাম।
.
আম্মু: ফোন এলে ভদ্রভাবে কথা বলবে, এটা মনে রাখবে ও তোমার হবু স্বামী, এনগেইজমেন্ট যেভাবেই হোক হয়েছে তাই ওর সাথে কোন খারাপ ব্যাবহার করবেনা।
.
আমি প্রচুর হাই তুলতে ইচ্ছে করছে আম্মুর কথাগুলো শুনে, আম্মু এগুলা বলার জন্য আমাকে ডেকেছে? সিরিয়াসলি?
.
আব্বু: আরে আমার মেয়েকে এসব বলতে হবে না এটুকু ভদ্রতা ওর আছে।
.
আম্মু: তোমার রিং কোথায়?
.
আমি: ফ্রেশ হবার সময় খুলে রেখে দিয়েছি।
.
আম্মু: এখনি গিয়ে পড়বে, ওটা যাতে সবসময় তোমার আঙ্গুলে দেখি।
.
আমি: অভ্যেস নেইতো আম্মু..
.
আম্মু: অভ্যেস করে নেও।

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম
.
আমি: আর কিছু?
.
আম্মু: না যেতে পারো।
.
এরপর আমি রুমে রিং টা পরে খাটে বসে রইলাম। আচ্ছা সত্যিইতো আদ্রিয়ান আমাকে একটা কল ম্যাসেজ কিছুই করলো না? শুনেছি হবু বর বউরা নাকি একে অপরের সাথে রাত জেগে কথা বলে আর এই খাটাশটার তো পাত্তাই নেই। দূর আমি এতো কেনো ভাবছি না করলে নাই।
.
তখনি বিচ্ছু বাহিনীর দল এক এক করে রুমে ঢুকলো, ঢোকার স্টাইলটাও ছিলো বিখ্যাত। প্রথমে ওহি দরজা দিয়ে উকি মারলো তারপর আমার দিকে তাকিয়ে একটা ইনোসেন্ট মারকা হাসি দিয়ে গুটি গুটি পায়ে রুমে ঢুকলো, তারপর কাব্য পকেটে হাত ঢুকিয়ে হালকা উপরে তাকিয়ে সিটি বাজাতে বাজাতে খাটের সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালো, তারপর অর্ণব ভাইয়া দরজায় এসে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে দাত বের করে একটা হাসি দিলো তারপর হেলতে দুলতে উনিও এসে বসল, আর সজীব ভাইয়া উনি প্রথমে দরজায় হেলান দিয়ে পোস নিয়ে দাড়ালো আমি ভ্রু কুচকাতেই চুল ঝারতে ঝারতে খাটে বসে পরল, সবশেষে আপু এলো একবল মুড়িমাখা নিয়ে।
.
আমি এতক্ষণ খাটের মঝখানে আসাম করে বসে ভ্রু কুচকে এদের কান্ড দেখছিলাম। আমার চারপাশে ঘিরে বসে সবগুলা দাত বের করে হাসি দিচ্ছে। এদের আসার স্টাইল দেখেই বুঝেছি যে এরা আমার ক্লাস নিতে এসছে। আমি এবার ভ্রু কুচকে বললাম
.
আমি: Now what?

সজীব ভাইয়া: নাহ মানে বুড়ি তুই এনগেইজড? সিরিয়াসলি?
.
বলেই হো হো করে হেসে দিলো। আমারতো গা জলছে! আমি রেগে কটমট করে তাকাতেই অর্ণব ভাইয়া বলল
.
অর্ণব ভাইয়া: ইয়ে আসলে তুই আমার ভাইয়ার এত ছোট হয়েও এনগেইজড হয়ে গেলি, আর আমরা এখনো একটা গার্লফ্রেন্ড অবধি জোটাতে পারলাম না
.
আমি: সেটা তোমাদের ব্যর্থতা।
.
কাব্য : হ্যা সেটাই! কেউ মুখেই খালি লাফাচ্ছিলো যে বিয়ে করবেনা এন্ড ওল। কিন্তু মনে মনে ঠিকি লুঙ্গি ডান্স দিয়েছে।
.
অনিমা: দেখ বেশি কথা বলবিনা।
.
অর্ণব ভাইয়া: তা ভাইয়া ফোন টোন করেছিলো?
.
আমি: কেনো গো তোমার ভাইয়ার কী এখন খেয়ে দেয়ে কাজের অভাব পরে গেছে?
.
সজীব ভাইয়া: করলেও কী আর বলবে?
.
আমি: দেখো ভাইয়া উনি কী করল না করল I just don’t care..

অর্ণব ভাইয়া: হ্যা হ্যা সে তো দেখতেই পাবো..
.
বলেই সবার সেই অট্টহাসি।
.
আমি: এই বড় ভাই হয়ে বোনের সাথে এসব বিষয় নিয়ে মজা করছ?
.
এবার ওহি আমার কোলে বসে বলল
.
ওহি: আপু আদ্রিয়ান ভাইয়া তোমার হাব্বি হবে?
.
আমি এবার অসহায় ভাবে আপির দিকে তাকালাম যার অর্থ প্লিজ বাচাও। এবার আপি বলল
.
আপি: হইছে কেউ আর ওকে জালিয়ো না। সবাই মুড়ি মাখা খাও।
.
এরপর সবাই মুড়ি মাখা খেলাম আর গল্প করলাম, ওরা চলে যেতেই আমি বারান্দার রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছি! আপি এসে পাশে দাড়িয়ে বলল
.
আপি: কী ভাবছ?
.
আমি: কাল থেকে যা যা হলো আমার সাথে।

আপি: বেবি ব্যাপারটা নরমালি দেখো, যা হয়েছে তা তো বদলাতে পারবেনা, বরং মেনে নাও।
.
আমি: হুম।
.
আপি আমার হাতের আঙ্গুল ধরে বলল
.
আপি: আচ্ছা ময়নাপ্পি বলল আর তুমি রিং টা পরে নিলে? কেনো?
.
আমি: না পরলে পেচাল শুরু করতা।
.
আপি: তুমি আবার কবে থেকে এগুলোকে পাত্তা দেও?
.
আমি কিছুই বললাম না।
.
আপি আমার কাধে হাত রেখে বলল
.
আপি: কিছু কিছু জিনিস মুখে বলতে হয়না কাজেই প্রকাশ হয়ে যায়।
.
বলেই আপি চলে গেলো, এরপর কেটে গেলো আরেকটা দিন। আজও মেডিকেলে যাই নি কারণ আম্মু নিষেধ করেছে। আর এই কয়দিনে আদ্রিয়ান সাহেব একবারো আমার সাথে যোগাযোগ করেনি খুব রাগ লেগেছে, আরেহ ভাই সোজা এনগেইজমেন্ট করে নিলে আর এখন আমার পাত্তাও নাই তোমার কাছে?

দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম হঠাৎই ঘুমের মধ্যেই কেউ আমাকে জরিয়ে ধরল, বেশ কিছুক্ষণ পরে তাকিয়ে দেখলাম যে আমার একমাত্র ননদিনী মানে জাবিন! আমি উঠতেই বলল
.
জাবিন: কেমন আছো ভাবি?
.
আমি: ভালো! তুমি?
.
জাবিন: খুব ভালো তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নাও!
.
আমি: কেনো?
.
জাবিন: সে দেখতেই পাবে এক্কেবারে রেডি হয়ে নিচে নাববে
.
বলেই চলে গেলো আমি হা করে তাকিয়ে আছি কেসটা কী, তখনি আপি এলো আপিকে বললাম
.
আমি: রেডি কেনো হবো? আর কোথায় যাবো?
.
আপি: আগে তাড়াতাড়ি রেডি হ।
.
বলেই আলমারি থেকে একটা কালো কুর্তি আর একটা হোয়াইট জিনস দিলো।
.
আমি: কিন্তু..
.
আপি: জলদি যাহ

আমি খালি ভাবছি কেস টা কী জাবিন এখানে কেনো, আর রেডি কেনো হতে বলল? আদ্রিয়ানও এসছে? ভাবতেই হার্ট বিট বেরে গেলো। তারপর কোনোরকমে চেন্জ করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো আচরে ছেড়ে দিলাম। কানে এস কালার বল রিং, মুখে হালকা পাউডার আর ঠোটে হালকা নুড লিপস্টিক দিলাম, তারপর বুকে ফু দিয়ে নিচে চলে গেলাম যদি আদ্রিয়ান থাকে?
.
নিচে গিয়েতো আমি টোটালি শকড, আদিব ভাইয়া, জাবিন, ইশরাক ভাইয়া আরেকটা মেয়ে বসে আছে, সজীব ভাইয়া অর্ণব ভাইয়া,কাব্য, আপি এমনকি ওহিও রেডি হয়ে বসে আছে! কিন্তু আদ্রিয়ানকে কোথাও দেখতে পেলাম না।
.
জাবিন এসে আমায় জরিয়ে ধরে বলল
.
জাবিন: ওয়াও ভাবি কী লাগছে।
.
আমি মুচকি হাসলাম। এরপর আদিব ভাইয়া আর ইশরাক ভাইয়াকে বললাম
.
আমি: ভালো আছেন?
.
আদিব ভাইয়া: খুব।
.
এরপর মেয়েটার সাথে আমার আলাপ করিয়ে দিলো ওর নাম রিয়া, আদ্রিয়ানের মামাতো বোন।

আপি: হয়েছে সন্ধ্যা হয়ে আসছে এবার চলো।
.
আমি: আরেহ কোথায়?
.
আপি: গেলেই দেখতে পাবি চল এখন
.
এরপর সবাই বেরিয়ে পরলাম, গাড়ি থামলো এক বিশাল রেস্টুরেন্টের সামনে। আমি আপিকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আপি বলল গেলেই বুঝতে পারবি! তারপর ভেতরে গেলাম।
.
ভেতরে গিয়ে কর্ণারের এক টেবিলে তাকাতেই আমি শকড! কাকে দেখছি আমি? এ এখানে কী করছে? এইজন্যই সবাই আমায় এখানে নিয়ে এলো? What the hell..
ভেতরে গিয়ে কর্ণারের এক টেবিলে তাকাতেই আমি শকড! কাকে দেখছি আমি? এ এখানে কী করছে? এইজন্যই সবাই আমায় এখানে নিয়ে এলো? What the hell..এসবের মানে কী? ধ্যাত কেনোযে এলাম। আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো এরাই যখন নিয়ে এসছে নিশ্চই কোন ঘট পাকিয়েছে। কিন্তু এখন আর এসব ভেবে কী লাভ।
.
জ্বী হ্যা জানালার পাশে কর্ণারের টেবিলে বসে বসে কফি খেতে খেতে ফোন স্ক্রল করছে আদ্রিয়ান। আজকে একটা সাদা ফুল হাতা টি শার্ট, কালো জিন্স পরেছে, আর সিল্কি চুলগুলো আজকেও কপালে পরে আছে, শার্টের হাতা থ্রি কোয়াটার করে ফোল্ড করা, কালো ব্রান্ডের ঘরি। উফ এতো সুন্দর কেনো ও?

আমি আপিকে একটা খোচা মেরে বললাম।
.
আমি: আপি ও কী করছে এখানে?
.
আপি: ও আসবে না তো কে আসবে? ওর জন্যই তো আসা।
.
আমি: মানে?
.
আদিব ভাইয়া: মানে ওইতো আজকে প্লান করল ঘুরতে যাবার।
.
আমি: তো ঘুরতেন? আমায় আনার মানে কী?
.
আপি: মানে কী? তোমরা একে অপরের ফিয়ন্সে.. একজন থাকবে আরেকজন থাকবেনা তা কি হয়?
.
আমি: হইছে থামো।
.
হুহ ফিয়ন্সে না ছাই! এমন ফিয়ন্সে জীবনে দেখিনি। তিনদিন হয়ে গেলো এনগেইজমেন্টের অথচ একটা ফোন বা মেসেজ করে খোজ নেবার প্রয়োজন মনে করলোনা?

আমরা ওদিকে যেতেই আদ্রিয়ান আমাদের দেখে দাড়িয়ে গেলো, এগিয়ে এসে সজীব ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে বলল
.
আদ্রিয়ান: কেমন আছো ভাইয়া?
.
সজীব ভাইয়া: খুব ভালো। তুমি?
.
আদ্রিয়ান: এইতো আছি।
.
এরপর অর্ণব ভাইয়াকেও জরিয়ে ধরে বলল
.
অাদ্রিয়ান: কী খবর অর্ণব?
.
অর্ণব ভাইয়া: বিন্দাস।
.
আদ্রিয়ান: হিয়া অল ওয়েল
.
আপি: ইয়াহ।

এবার ও ওহিকে কোলে তুলে নিলো তারপর বলল
.
আদ্রিয়ান: আপুমনি কী অবস্হা তোমার?
.
ওহি: ভালো কিন্তু I’m angry with you..
.
আদ্রিয়ান: Why sweetheart? কী করেছি আমি?
.
ওহি: তুমি আমার আপুকে নিয়ে চলে যাবে? তাহলে আমি খেলবো কার সাথে?
.
আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। কী বলল এই মেয়ে? সত্যিই তো একদিন তো আদ্রিয়ান আমাকে নিয়ে চলে যাবে? আমি ওর বউ হবো? ওর বাড়িই আমার বাড়ি হবে? আর রুমটাও.. ছি ছি কী ভাবছি আমি এসব। আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম ওও একটু ইতস্তত বোধ করছে ওহির কথায়। তবুও নিজেকে সামলে বলল।
.
আদ্রিয়ান: তোমাকে কে বলল যে আমি তোমার আপুকে নিয়ে যাবো?
.
ওহি: আম্মু বলছিল আব্বুকে আমি শুনেছি।

আদ্রিয়ান: ওহ তাই আমার কী দোষ বলো তোমার আপুই আমার কাছে চলে আসতে চায়।
.
আমি অবাক হয়ে তাকালাম আদ্রিয়ানের দিকে ও আমায় চোখ মারলো আর সবাই মিটমিট করে হাসছে রাগে আমার গা জলছে। আমি যেতে চাই আমি? নিজে আমার আব্বুকে পটিয়ে আমাকে এনগেইজড করে দিলো আর এখন বলছে আমি যেতে চাই? খাটাশ।
.
আদিব ভাইয়া: হ্যা হ্যা অনিমা ই তো চলে আসতে চাইছে, তাইতো আঙ্কেলের কাছে এত রিকোয়েস্ট তাইনা আদ্রিয়ান। (দাত বের করে হেসে)
.
আদ্রিয়ান রাগী চোখে তাকাতেই আদিব ভাইয়ার হাসি ফুস! ভদ্র ছেলের মত বসে পরল।
.
আদ্রিয়ান: তোমরা সবাই বসো প্লিস। হিয়া বসাও সবাইকে।
.
আপি: হুম।
.
আমি ওর থেকে একটু দূরত্ব বজায় রেখে বসলাম, কিন্তুু আমার ফাটা কপাল আদ্রিয়ান সবার সামনেই আমার হাত ধরে ওর পাশে বসিয়ে দিলো। সবাই আবারো মুখ টিপে হাসছে।

আমিতো অবাক। বাহ চান্দু বাহ! কী ট্যালেন্ট তোমার, এমনিতে এতো সোহাগ, কিন্ত সামনাসামনি কথা তো দূরে থাকুক ফোনে একটা কথা নক অবধি করলানা। কী সুন্দর ভালোবাসা তোমার। এই কথা ভাইরাল হইলে সিওর নোবেল পাইতা।
.
আদ্রিয়ান: কী খাবে তোমরা বলো?
.
আপি: তুমি যা খুশি ওর্ডার করে দাও। শুধু ওহির জন্য পাসতা।
.
আদ্রিয়ান: ওমম সিউর?
.
সজীব ভাইয়া: হ্যা তুমি যা ওর্ডার করো।
.
আদ্রিয়ান: আ.. ওকে। কাচ্চি বিরিয়ানি, এখানকার কাচ্চি বিরিয়ানি একদম ফার্সটক্লাস। ওটাই ওর্ডার করি।
.
আপি: ইয়াহ। ইটস গুড।
.
আদ্রিয়ান ওয়েটারকে বলে ওহির জন্য পাসতা,সবার জন্য কাচ্চি বিরিয়ানি ওর্ডার করল, আর বলল
.
আদ্রিয়ান: আর একটা কমপ্লিটলি ঝাল ছাড়া আনবেন আলাদা করে, একটুও যেনো ঝাল না ছোয়ানো থাকে ওকে?
.
ওয়েটার: ওকে স্যার।

আমি ভাবছি ঝাল ছাড়াটা কী আমার জন্য ওর্ডার করল? ওর মনে আছে? থাকবে নাইবা কেনো? যা কান্ড হয়েছিল।
.
বেশ অনেক্ষণ পর খাবার এলো, আদ্রিয়ান সবাইকে একটা একটা করে এগিয়ে দিলো কিন্তু আমায় দিলো না, পরে আলাদা ভাবে ঝাল ছাড়াটা এলো।
.
আদ্রিয়ান: Give it to her..( আমাকে উদ্দেশ্য কর)
.
আমাকে দিয়ে ওয়েটার চলে গেলো তারপর যেই আমি খেতে যাবো তখনি আদ্রিয়ান প্লেটটা আমার থেকে নিয়ে নিজে এক চামচ খেলো। তারপর বলল
.
আদ্রিয়ান: ইয়াহ সব ঠিক আছে। Now you can have it…আসলে চেক করে নিলাম এদের ভরসা নেই।
.
বলেই আমার দিকে আবার এগিয়ে দিলো.. সবাই এবারো হাসছে, আর আমার লজ্জার সাথে সাথে ভালোও লাগছে, সত্যিই আমার এতটা কেয়ার করে? ভাবতেই নিজের অজান্তেই ঠোটে হাসি ফুটে উঠল আমার।
.
খাওয়া দাওয়া শেষে আদ্রিয়ান বলল আর কিছু খাবে তোমরা?
.
আমি আনমনেই হুট করে বলে ফেললাম
.
আমি: আইসক্রীম খাবো, এখান থেকে না আইসক্রিম পার্লার থেকে।
.
আদ্রিয়ান কিছুক্ষণ আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থেকে হালকা হেসে বলল
.
আদ্রিয়ান: আচ্ছা চলো সবাই।
.
আমি ভাবছি কীকরে হেংলার মতো বললাম আমি।

কিছুক্ষণ গল্প করে সবাই গেলাম আইসক্রীম পার্লারে। ওখানে সবাই যে যার যার পছন্দ মতো আইসক্রীম নিলাম, আমি চকলেট ফ্লেবার নিলাম আর আদ্রিয়ান ভ্যানিলা। আমরা সবাই বসলাম, এখানকার টেবিল ছোট আর গোল তাই আমাদের তিনটা টেবিল লাগল। আমি এবার আদ্রিয়ানের ধারে কাছেও বসিনি, অন্য টেবিলে বসেছি, সবাই খেতে থাকলাম আইসক্রীম।
.
হঠাৎ আদিব ভাইয়া বলল ইশরাক, অর্ণব, ভাইয়া (সজীব ভাইয়া), চলোতো একটু ওদিকে কাজ আছে, আমি অবাক হলাম এদের আবার কী কাজ পরল, ওরা চারজনই কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর জাবিন বলল
.
জাবিন: ভাবি সামনে একটা সপিং মল আছে আমি আপি আর রিয়া একটু হেটে আসি, ওহি চলো তুমিও চলো।
.
আমি: আরেহ আমি একা থাকবো নাকি? চলো আমিও যাবো!
.
আপি: নাহ নাহ তুই আইসক্রীম খা আমরা যাবো আর আসবো।
.
আমি: আরে..
.
আমাকে কিছুই বলতে না দিয়ে চলে গেলো। যাহ এটা কী হলো, দেখলাম আদ্রিয়ান পাশের টেবিলে বসে আছে। এবার বুঝলাম হারামীগুলা প্রাইভেসির নাম করে আমাকে ফাসিয়ে দিয়ে গেছে! ধূর ভাল্লাগেনা।

হঠাৎ আদ্রিয়ান পাশের টেবিল থেকে উঠে দাড়ালো! আল্লাহ ও উঠলো কেনো? এখানে আসবে নাকি? যেটা ভাবলাম সেটাই হলো উনি ডিরেক্ট এসে আমার অপজিটে বসে পরলেন। আর আমার? আমার সেই বিখ্যাত কাপাকাপি শুরু হয়ে গেছে।
.
নাহ অনি You have to be strong..তোকে রাগ দেখাতে হবে, ওকে ইগনোর করতে হবে, এই তিনদিনে তোকে একটা টেক্সট ওভদি করেনি আর তুই ওকে ছেড়ে দিবি? নেভার!
.
আদ্রিয়ান: আইসক্রীম টা গলে যাবে খেয়ে নাও তারপর ভাবো!
.
ধক করে উঠলো বুকটা এনগেইজমেন্টের পর এই প্রথম কথা বলল আমার সাথে, নো নো আমি উইক হবোনা। তাই কথা না বলে খেতে থাকলাম।
.
অাদ্রিয়ান: আরেকটা আনবো?
.
আমি মাথা নারলাম কিন্তু কিছু বললাম না।
.
আদ্রিয়ান: তোমার চকলেট ফ্লেভার খুব পছন্দ তাইনা।
.
ওনার দিকে একবার তাকিয়ে আবার মাথা নামিয়ে নিলাম এবারো কিছু বললাম না।
.
আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে তাকালো আমার দিকে তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল..

আদ্রিয়ান: হাতের রিংটা ঠিক আছে তো? মানে মাপ মতো হয়েছে?
.
আমি একটা মলিন হাসি দিলাম। তবুও কিছু বললাম না। এবার বোঝ চান্দু কত তিলে কত তেল।
.
আদ্রিয়ান এবার বিরক্ত হয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: I am talking to you!
.
কিন্তু আমি এবারেও চুপ!
.
এবার আদ্রিয়ান ঠাস করে টেবিলে ওর হাত দিয়ে বারি মারলো। আওয়াজে কেপে উঠলাম আমি, আমি ভাবতেই পারিনি ও এতটা রেগে যাবে, আল্লাহ ওকে শিক্ষা দিতে গিয়ে কোন জালায় পরলাম, এরপর ও উঠে দাড়ালো আর আমার হাত পা কাপতে লাগলো, ও এসে ঠিক আমার পাশের চেয়ারে বসে আমি যে চেয়ারে বসে আছি সেটা এক টানে ঘুরিয়ে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো। আমি হতভম্ব হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আল্লাহ বাচাও আর কোনদিনো যেটা পারিনা সেটা করতে যাবোনা।
এবার আদ্রিয়ান ঠাস করে টেবিলে ওর হাত দিয়ে বারি মারলো। আওয়াজে কেপে উঠলাম আমি, আমি ভাবতেই পারিনি ও এতটা রেগে যাবে, আল্লাহ ওকে শিক্ষা দিতে গিয়ে কোন জালায় পরলাম, এরপর ও উঠে দাড়ালো আর আমার হাত পা কাপতে লাগলো, ও এসে ঠিক আমার পাশের চেয়ারে বসে আমি যে চেয়ারে বসে আছি সেটা এক টানে ঘুরিয়ে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো। আমি হতভম্ব হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। আল্লাহ বাচাও আর কোনদিনো যেটা পারিনা সেটা করতে যাবোনা।
.
আদ্রিয়ান ঠান্ডা কিন্তু রাগী গলায় বলল

আদ্রিয়ান: সমস্যাটা কী? কথা বলছোনা কেনো?
.
আমার তো ভয়ে এতক্ষনে অবস্হা খারাপ। আসলে এটা আমার ছোটবেলা থেকেই হয়। পরিবারে বা স্কুল কলেজে কখনো কারো বকা বা ধমক না খাওয়ার কারনে কেউ একটু রাগী গলায় কথা বললেই এমন হয় আর উনিতো অলমোস্ট চারপাশটা কাপিয়ে দেয়, ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
.
এসব ভাবতে ভাবতেই উনি আমার চেয়ারটার দুইপাশে হাত রেখে বলল
.
আদ্রিয়ান: This is too much.. তুমি কিছু বলবে নাকি আমি বলাবো?
.
আমি ভেতর ভেতর খুব ভয় পেলেও বাইরে দিয়ে নিজেকে স্ট্রং রাখছি, কিন্তু যেভাবে ক্ষেপে গেছে.. নো অনি বি স্ট্রং, কমসে কম কী করবে? আরো জোরে ধমকাবে? তারচেয়ে বেশি আর কী করবে? থাপ্পড় টাপ্পড় মারবে না কী? নাহ মনে তো হয়না এমন কিছু করবে। যদি মারে? মারলে মারুল I won’t talk to him that’s final.
.
এবার আদ্রিয়ান আমার দুই বাহু ধরে ঝাকুনি দিয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: Speak up!!!

এতটাই জোরে বলল কথাটা যে আমি দ্বিতীয়বারের মতো কেপে উঠলাম আর আশেপাশে সকলেই তাকালো। কথা বলব? নইলে যদি আরো রেগে যায়? না না বলবোনা দেখি কী করে হুহ। আমি ওনার হাত ছাড়িয়ে আইসক্রীমটা খেতে লাগলাম। বাহ অনি কেয়া বাত হ্যায়! কত্ত সাহস তোর! প্রাউড অফ মি!
.
একবার ভাবলাম চেয়ারটা ওনার কাছ থেকে সরিয়ে আগের জায়গায় নিয়ে বসে খাবো কিন্তু কেনো জানি সাহস পেলাম না, যদি আরো রেগে যায়? তাই ওভাবেই ওনার কাছে বসে খেতে লাগলাম। কিন্তু উনি কিছু বলছেননা আর আমিও তাকাচ্ছিনা। আসলে তাকানোর সাহস পাচ্ছিনা।
.
হঠাৎ একটা আওয়াজে চমকে তাকালাম তাকিয়ে দেখি একটা চেয়ার নিচে পরে আছে, বেশ বুঝতে পারলাম চেয়ারটা উনিই লাথি মেরে ফেলেছেন। উফ এই ছেলে এমন কেনো? রেগে গেলেই আশেপাশের জিনিস ভেঙ্গে তছনছ করে ফেলে। আব্বু কিনা এই রাগী ছেলেটাকে পেলো আমার জন্য? এতো বিয়ের পর আমায় চব্বিশ ঘন্টায় ছিয়ানব্বই টা ধমক দেবে। আল্লাহ আমার কী হবে?
.
আওয়াজ শুনে একজন দৌড়ে এলো হয়তো পার্লারেরি কেউ!
.
লোকটা: Anything wrong sir!
.
বুঝতে পারলাম এখন আদ্রিয়ান মুখ খুললেই ঝড় যাবে তাই তাড়াতাড়ি বললাম।

আমি: No all okay আপনি যেতে পারেন।
.
লোকটা চেয়ারটা তুলে দিয়ে চলে গেলো। আমি বুঝলাম যে কথা না বলে উপায় নেই এ পুরো টান্ডব নাচাবে নইলে। অন্যভাবে ব্যাপারটা সামলাতে হবে, তাই ওনাকে বললাম
.
আমি: হচ্ছেটা কী? এটা আপনার বাড়ি না!
.
উনি আমার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললেন
.
আদ্রিয়ান: যাক কুইন ভিক্টোরিয়া মুখ খুলেছেন তাহলে? Can you please explain যে এতক্ষণ এসব কী হচ্ছিলো?
.
আমি বুঝেও না বোঝার ভান করে বললাম
.
আমি: কোনসব?
.
আদ্রিয়ান: গালে একটা পরলে ঠিক বুঝতে পারবে! এতক্ষণ এত কথা বলছিলাম চুপ করে ছিলে কেনো? (ধমকে)
.
আমি যথেষ্ট সাহস জুগিয়ে বললাম।
.
আমি: আমার যতটুকু মনে পরে আপনার সাথে সবসময় কথা বলতে হবে বা সবসময় সব কথার উত্তর দিতে হবে এমন কোন এগ্রিমেন্ট তো আমি সাইন করিনি? তাহলে?

আদ্রিয়ান: What do you mean?
.
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আইসক্রিম খেতে খেতে বললাম
.
আমি: Very simple… আমি আপনার সাথে কথা বলতে বাধ্য নই।
.
আদ্রিয়ান: মানে কী? ভুলে যেওনা We are engaged.. তুমি আমার ফিয়ন্সে!
.
আমি: Oh really? ভাগ্যিস আপনি মনে করিয়ে দিলেন আমিতো ভুলেই গেছিলাম।
.
আদ্রিয়ান সাথে সাথেই আমার বা হাতটা সামনে এনে রিং টা ইশারা করে বলল
.
আদ্রিয়ান: মনে করানোর জন্য এটা আছে।
.
আমি: একটু মিসটেক করে ফেললেন। মনে করানোর জন্য শুধুই এটা আছে!
.
বলেই মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে হাত ছাড়িয়ে আইসক্রিম খেতে থাকলাম। আমার ওই কথাটায় অভিমান আর অভিযোগ স্পষ্ট ছিলো, আদ্রিয়ানও কিছু বললোনা আর।

কিছুক্ষণ কেটে গেলো কিন্তু আদ্রিয়ানের কোনো সারা শব্দ না পেয়ে আমি তাকালাম ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও গালে হাত দিয়ে আমাকে দেখছে, সেটা দেখে আমি ভ্রু কুচকে বললাম
.
আমি: এভাবে কী দেখছেন? আগে দেখননি?
.
উনি গালে হাত দিয়েই নেশাক্ত কন্ঠে বলল
.
আদ্রিয়ান: কী করব? যতবার দেখি ততোবারি নতুন করে মুগ্ধ হয়ে যাই।
.
আমি থমকে গেলাম ওর কথায়, হার্ট আবার ফুল স্পিডে বিট করতে লাগল, বেশ অস্হিতে পরে গেলাম ওনার এই কথায়। তবুও কাপা কাপা গলায় বললাম
.
আমি: মমানে?

আদ্রিয়ান এবার নিজেকে সামলে বলল
.
আদ্রিয়ান: My eyes my choice.. any problem??
.
আমি: No…carry on.
.
বলেই উলটো দিকে ঘুরে বসে পরলাম। হুহ দেখো চান্দু এবার মন ভরে দেখো…
.
আদ্রিয়ান: ঘুরে বসলে কেনো?
.
আমি: My body my wish any problem?
.
আদ্রিয়ান এক টানে আমার চেয়ারটি ঘুরিয়ে আবার ওর সামনে এনে বলল
.
আদ্রিয়ান: Yes, I have couse..
.
আমি: Couse?
.
আদ্রিয়ান চেয়ারের দুই পাশে হাত রেখে অনেকটা ঝুকে স্লো ভয়েজে বলল
.
আদ্রিয়ান: Couse you are mine..

এটা শুনে আমার কয়েকটা হার্টবিট মিস তারপরেই আবার ফুল স্পিডে ছুটতে লাগল। এই ছেলেটার এমনিতে কথা বলেনা ঠিকই কিন্তু যখন বলে তখন এমন সব কথা বলে হয় আমার হার্টবিট থেমে যায় নয়তো ফুল স্পিডে দৌড়ায়। কবে জেনো এর কথাতেই আমি হার্টফেইল করে মরি।
.
আমার এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে,ওর ওই কথাটায় একটা মাদকতা ছিলো। আমি বেশিক্ষণ ওর চোখে চোখ রাখতে পারিনা কিন্তু এখন কী হয়েছে জানিনা আমি গভীর ভাবে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি ওও সেটাই করছে। এভাবে কতটা সময় পার হয়ে গেছে নিজেরাই জানিনা।
.
” তোমরা কী করছ?”
.
দুজনেরই ঘোর কাটল কথাটা শুনে, তাকিয়ে দেখি ওহি কোমরে হাত দিয়ে ভ্রু কুচকে দাড়িয়ে আছে! এই মেয়ে আবার কখন এলো?
.
ওহি: কী হলো বলো? তোমরা এভাবে দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ছিলে কেনো।
.
আমি আর আদ্রিয়ান একে ওপরের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকিয়ে দেখলাম সবাই দাড়িয়ে মুখ টিপে হাসছে, অদ্ভুত ব্যাপার এদের হাসিটা থামার নামি নিচ্ছেনা। সেটা দেখে আমি আর আদ্রিয়ান দুজনে দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে ভ্রু কুচকে আবার ওদের দিকে তাকালাম ওরা এখনো হাসছে।
এবার আমরা খেয়াল করলাম যে আমরা খুব কাছাকাছি বসে আছি, এতক্ষণে এদের হাসির রহস্য উদ্ঘাটন করলাম। তাই তাড়াতাড়ি দুজন দুজনের থেকে সরে বসলাম।

এবার ওরা জোরে হেসে দিলো। তারপর সবাই এগিয়ে এসে বসল আপি বলল
.
আপি: যেই আমরা একটু প্রাইভেসি দিয়েছি ওমনি রোমান্স শুরু করে দিয়েছো?
.
ইশরাক ভাইয়া: একেই বলে সুযোগের সৎ ব্যবহার।
.
আদ্রিয়ান: Nothing like that..
.
আদিব: হুম তোরাতো এমনিই কাছাকাছি বসে ছিলি, আর অনির চেয়ারের দুইপাশে তুই এমনিই হাত দিয়ে রেখেছিলি তাইনা?
.
জাবিন: তা ভাইয়া কী কী করলি?
.
আদ্রিয়ান: থাপ্পড় খেতে না চাইলে চুপচাপ বস।
.
আদিব ভাইয়া: জাবিন থাম বোন। পার্সোনাল কথা বলবে কীভাবে বল?
.
আবার সবার সেই হাসি। আদ্রিয়ান ও আর কিছু বললনা আদিব ভাইয়াকে চোখ রাঙিয়ে থামিয়ে দিলো! হায় খোদা এরা ভাবছে প্রাইভেসি পেয়ে আমরা রোমান্সের বন্যা বয়িয়ে দিয়েছি আসলে কী করেছি তাতো আমরা জানি।
.
এরপর সবাই কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বেড়িয়ে গেলাম। গাড়ির কাছে যেতেই আপিকে আদ্রিয়ান বলল

আদ্রিয়ান: হিয়া তোমরা সবাই ওই গাড়িতে চলে যাও আমি অনিমাকে নিয়ে আসছি।
.
মানে কী? আমাকে রেখে দিচ্ছে কেনো? কী দরকার আমাকে?
.
আমি: আমি একা আর এই গাড়িতে কেনো যাবো? সবার সাথেই যাই?
.
আদ্রিয়ান: কেনো যাবে সেটা পরে বলি?
.
বুঝতে পারলাম রেগেই বলল কথাটা তাই আর কিছু বললাম নাহ। সবাই চলে গেলো। তারপর আদ্রিয়ান গাড়ির দরজাটা খুলে বলল
.
আদ্রিয়ান: বসো।
.
আমিও ভদ্র মেয়ের মতো কোনো প্রশ্ন না করে চটপট বসে পরলাম। এবারেও আমি নিজের সিটবেল্ট নিজে লাগানোর সুযোগ পেলাম না, উনিই লাগিয়ে দিলেন। এরপর গাড়ি স্টার্ট করলেন। গাড়ি মিডিয়াম স্পিডে চালাচ্ছে, বেশ কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ ছিলাম হঠাৎ উনি বললেন
.
আদ্রিয়ান: অনিমা
.
আমি চমকে উঠলাম ওনার এই হঠাৎ ডাকে তবুও নিজেকে সামলে বললাম
.
আমি: জ্বী?

আদ্রিয়ান: নাহ কিছুইনা।
.
আমি তো বোকা বনে গেলাম কিছু না হলে ডাকলে কেনো ভাই? ভাবলাম কিছু বলবে কিছুই বললনা? দূর!
.
হঠাৎ আদ্রিয়ান গাড়ি থামালো। সেটা দেখে আমি বললাম
.
আমি: এখানে কেনো?
.
আদ্রিয়ান কিছু না বলে আমার সিটবেল্ট খুলে দিলো তারপর গাড়ি থেকে নেমে দরজা খুলে আমার হাত ধরে নামালো তারপর গাড়ির দরজা লাগিয়ে হাত ধরেই হাটতে লাগল। আমি বললাম
.
আমি: কোথায় যাচ্ছি?
.
আদ্রিয়ান: চলোইনা।
.
আমি আর কিছু বললাম না আদ্রিয়ান একটা দোকানের ঢুকলো, তারপর এক বক্স চকলেট আর দশটা ডেইরিমিল্ক সিল্ক কিনলো। আমি কিছু বলার আগেই হাত ধরেই বাইরে চলে এলো। বাইরে একটু দূরে একটা সিড়ি আছে বসা যায় সেটা ইশারা করে বলল
.
আদ্রিয়ান: চল গিয়ে বসি।
.
আমি: বসবেন?
.
আদ্রিয়ান: Problem?
.
আমি: নো চলুন।

মজার বিষয় উনি আমার হাত ছাড়ার নামই নিচ্ছেন না। আমার হাত ধরেই সিড়ির কাছে নিয়ে গিয়ে আমার হাতটা ছেড়ে সিড়িতে বসলেন, আমাকেও হাত দিয়ে ওনার পাশে বসার জন্য বললেন। আমিও ওনার পাশে বসলাম। উনি আমার হাতে চকলেটস গুলো দিলেন। আমি বললাম।
.
আমি: এগুলো আমার?
.
আদ্রিয়ান: নাহ তো! তোমায় কেনো দেবো, এগুলো আমার বউয়ের!
.
বলেই একটা হাসি দিলো যেটা দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই, আমিও হেসে দিলাম। আদ্রিয়ান আবার বলল
.
আদ্রিয়ান: I know তোমার চকলেটস খুবি পছন্দ, ওহিকে দিয়েছি বাট তোমাকেই দেয়া হয়নি, ইচ্ছে ছিলো নিজে সাথে নিয়ে কিনে তোমায় খাওয়াবো!
.
আসলেই আমার চকলেট খুব পছন্দ তাই নিজেকে সামলাতে না পেরে বাচ্চাদের মতো করে বললাম
.
আমি: এখনি খাই?
.
আদ্রিয়ান হেসে দিয়ে মাথা নেড়ে ইশারা করল খাওয়ার জন্য, একটু লজ্জা পেলাম তবুও পাত্তা না দিয়ে একটা ডেইরি মিল্ক খেতে খেতে থাকলাম। খেতে খেতেই বললাম

আমি: আপনি কিকরে জানলেন যে আমার চকলেট পছন্দ?
.
আদ্রিয়ান: অনেক কিছুই জানি বেইবি।
.
বেইবি? লাইক সিরিয়াসলি? আমাকে ওনার বেইবি মনে হয়? কত কিছু দেখবো।
.
আমি: কীকরে জানেন?
.
আদ্রিয়ান: বলবো পরে এক সময়।
.
আমি: আচ্ছা।
.
এবার উনি অামার সাথে একটু লেগে বসল, আমি অবাক হয়ে তাকালাম ওনার দিকে, সেটা দেখে উনি বললেন
.
আদ্রিয়ান: মাইন্ড করলে?
.
আমি: নাহ ঠিক আছে!
.
আদ্রিয়ান এবার শান্ত গলায় বলল
.
আদ্রিয়ান: জানো তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে আমার, অনেক কথা জমে আছে, কিন্তু কিছুই বলতে পারছিনা না আর না বলে শান্তিও পাচ্ছিনা। রাতে ঘুমোতেও পারিনা, শুধু ভাবি যে কবে বলতে পারব তোমাকে!
.
আমিতো অবাক কী বলতে চায় উনি আমাকে?

আমি: বলুন না।
.
আদ্রিয়ান: বলবো কিন্তু আজ না অন্য একদিন, ধীরে ধীরে বলবো সবটা তোমায়, একদিনে নাহ।
.
আমি: আপনার ইচ্ছা।
.
কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ করে আছি, আমি মনের আনন্দে চকলেট খাচ্ছি, হঠাৎ খেয়াল করলাম উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে, সেটা দেখে আমি ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলাম কী? উনি একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমার পেছন দিয়ে ওপরের সিড়িতে বা হাত দিয়ে হালকা ঝুকলেন তারপর ডান হাত দিয়ে আমার ঠোটের কোণে লেগে থাকা চকলেট মুছে দিল। আমিতো শকড! ওনার এই নরমাল ছোয়াতেও আমি ফ্রিজড হয়ে গেছি।
.
তারপর উনি বললেন
.
আদ্রিয়ান: এভাবে বাচ্চাদের মতো কেউ চকলেট খায়? But I like it.. আমার সামনে সবসময় এভাবেই খাবে, আর আমি নিজের হাতে মুছে দেবো।
.
আমিতো হা করে শুনছি ওনার কথা তারপর কিছুক্ষণ ওখানে থেকে আমরা আবার রওনা দিলাম, এবারেও উনি আমার হাত ধরেই গাড়ি অবধি নিয়ে গেছেন। বাড়ি এসে আমি নিজেই সিটবেল্ট খুলে নামলাম তারপর ওনার দিকে তাকালাম। উনি হেসে বলল
.
আদ্রিয়ান: বাই!

আমি মুচকি হেসে বাই বললাম। অনেকটা এগিয়ে আবার পেছনে তাকালাম এখনো গাড়ির জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই হাত দিয়ে টাটা ইশারা করল আমি কিছু না বল ঘুরে হাসতে হাসতে ভেতরে চলে গেলাম।
.
আসলেই একসাথে কাটানো এই অল্প সময় আমাকে কতটা স্পেশাল ফিল করিয়েছে, কিন্তু আমি ভাবছি কী বলবে ও আমাকে? কী এমন কথা যেটা না বলতে পেরে ও ঘুমোতে পর্যন্ত পারছে না? কী কথা হতে পারে। আর আমার সম্পর্কে এতটা ও কিকরে জানে?
আসলেই একসাথে কাটানো এই অল্প সময় আমাকে কতটা স্পেশাল ফিল করিয়েছে, কিন্তু আমি ভাবছি কী বলবে ও আমাকে? কী এমন কথা যেটা না বলতে পেরে ও ঘুমোতে পর্যন্ত পারছে না? কী কথা হতে পারে। আর আমার সম্পর্কে এতটা ও কিকরে জানে?
.
মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে যেই সিড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে যাবো ওমনি লাইট জলে উঠল, তাকিয়ে দেখি আমার বিচ্ছু ভাইবোনেরা সোফায় বসে বসে হাসছে।
.
আমি: এই তোমাদের আর কাজ নেই? কারণে অকারণে হাসতে থাকো?
.
আপি: যাহ ! তুমি একা একা হাটতে হাটতে হাসতে পারো আর আমি হাসলেই দোষ?
.
আমি: ক কে হাসছিলো?
.
অর্ণব ভাইয়া: কেনো? আমিতো স্পষ্ট দেখলাম তুই হাসছিলি।
.
সজীব ভাইয়া: কেস টা কী বলতো বুড়ি? আদ্রিয়ান তোকে রেখে দিলো কেনো?

আমি: শিশুপার্ক নিয়ে গিয়েছিল। হয়েছে?
.
অর্ণব ভাইয়া: তোর জন্যে ওটাই ঠিক আছে!
.
আমি: হ্যা সেই, আর কিছু।
.
কাব্য: কী ব্যাপার বলতো আজ ক্ষেপছিস না?
.
আপি: মুড খুউউউউব ভালো আজকে, তাইনা sweetheart?
.
আমি কিছু না বলে হাসতে হাসতে চলে এলাম রুমে, রুমে এসেই ভাবছি সত্যিই তো আজ এত ভালো কেনো লাগছে আমার? আদ্রিয়ানের জন্য? কিছুক্ষণই তো কাটিয়েছি ওর সাথে তাতেই এতো ভালোলাগা? এসব ভাবতে ভাবতেই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চেন্জ করে নিলাম। বাইরে এসে দেখি আপি খাটে বসে বসে ফোন স্ক্রল করছে!
.
আমাকে দেখেই তাড়াতাড়ি উঠে হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিয়ে বলল
.
আপি: আরে বসো কথা আছে তোমার সাথে!
.
আমি: কী কথা?
.
আপি ভ্রু নাচিয়ে বলল

আপি: কী কী হলো আজ?
.
আমি: কী হবে?
.
আপি অবাক হয়ে বলল
.
আপি: কিচ্ছু হলোনা? এতক্ষণ একসাথে থাকলি আর কিচ্ছু করিসনি?
.
আমি: আরে নারে বাবা। এমন ভাবে বলছো যেনো রুমডেট করতে গেছিলাম।
.
আপি: নাউজুবিল্লাহ! কী বলস এগুলা?
.
আমি: যেমন প্রশ্ন করছ তেমনি উত্তর দিলাম।
.
আপি: হুমমম।
.
হঠাৎই আপির চোখ গেলো চকলেট এর প্যাকেট এর দিকে।
.
আপি: এটার মধ্যে কী?
.
আমি: চকলেট!

আপি: কে দিলো? ( দুষ্টু হাসি দিয়ে)
.
আমি: আমার নানা। ( মেকি হাসি দিয়ে)
.
আপি: ওই এখানে দাদুভাই কোথা থেকে এলো?
.
আমি: এক্সাক্টলি! আদ্রিয়ান ছাড়া আমার সাথে কে ছিলো?
.
আপি: কেউ না।
.
আমি: তো অবিয়াসলি ওই দিয়েছে!
.
আপি: ওওও। আচ্ছা বলনা কী কী করলি।
.
তারপর আপিকে সবটা খুলে বললাম, আমি সব শুনে বলল
.
আপি: দেখলে I told you that he loves you…
.
আমি: ওহ আপি প্লিজ ও এখনো এমন কিছুই বলেনি আমাকে।
.
আপি: Wait baby wait… এতো তাড়া কীসের দেখো কী হয়?
.
আপি একটা চকলেট নিতে গেলেই আমি টান মেরে নিয়ে নিলাম।

আমি: ডোন্ট টাচ!
.
আপি: কেনো? কত্তগুলো তো!
.
আমি: কাল মেডিকেল থেকে আসার সময় তোমার জন্য অনেকগুলো নিয়ে আসবো কিন্তু এগুলো নাহ প্লিজ!
.
আপি: হুমমম! বুঝলাম। নিশ্চই খুব ক্লান্ত? এখন ঘুমিয়ে পরো।
.
আমি: হুম। Good night
.
আপি: Good night
.
বলেই আপি চলে গেলো আর আমি আজকের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম।
.
পরের দিন মেডিকেলে একটা নেভি ব্লু কুর্তি, ব্লাক জিন্স, ব্লাক স্কার্ফ পরলাম, কেনো জানি আজকে একটু সাজতে মন চাইল তাই একটু কাজল আর হালকা লিপস্টিক দিলাম, চুলগুলোও সাইড সিথি করে ছেড়ে দিলাম। মেডিকেলে যেতেই তিন বান্দরনী ধরল আমায়
.
ঐশি: কী ইয়ার এনগেইজমেন্ট হয়েছে বলে তিন দিন মেডিকেলে এলিনা?
.
অর্পি: এই তিনদিন কি জিজুর সাথে প্রেম করেছো নাকি?
.
ইশু: তা ছাড়া আর কী? কিন্তু আফসোস ক্রাশকে এখন জিজু ডাকতে হবে!
.
আমি: হয়েছে? এই তিনদিন আম্মু আসতে দেয় নাই।
.
ঐশি: হুম বুঝি বুঝি! তা কাল নাকি ঘুরতে গেলি?
.
আমি: একা যাইনি সব্বাই গেছি ওকে? আর তোরাতো কথাই বলবিনা আমার সাথে সবটা জেনেও আমাকে বললিনা একবার?
.
অর্পি: কী করব বল জিজুর করা নির্দেশ ছিলো!
.
ঐশি: শালিকা হয়ে জিজুর কথা অমান্য করতে পারি বল?
.
আমি: হইছে ডোন্ট টক টু মি!
.
ইশু: আচ্ছা সরি বাবা।
.
ঐশি: হ্যা ইয়ার সরি..
.
তিনজনেই কানে হাত দিয়ে এমন ঢং করল যে আমি হেসে দিলাম, ওরাও হেসে আমাকে হাগ করল।

আড়াইটায় ক্লাস শেষ হলো ক্লাস শেষে চারজন গেইটের বাইরে গিয়ে চমকে গেলাম। আদ্রিয়ান গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ফোন স্ক্রল করছে, আজকে গাঢ়ো ব্লু টিশার্ট, ব্লাক জিন্স, ব্লাক লেদার জ্যাকেট, ব্লাক এন্ড ব্লু এর কম্বিনেশনের কেচ, ব্লাক ঘরি, সেই কপালে পরে থাকা চুল, আর টি শার্টের সাথে ঝুলে থাকা সানগ্লাস এ ওকে প্রত্যেকবারের মতই অসম্ভব সুন্দর লাগছে। আমাদের দেখেই ওর সেই জগৎ ভোলানো হাসিটা দিয়ে এগিয়ে এলো। ওদের উদ্যেশ্য করে বলল
.
আদ্রিয়ান: হাই শালিকারা কেমন আছো?
.
ঐশি: খুব ভালো আপনি?
.
আদ্রিয়ান: রক!
.
আমি তো এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওনাকে হুট করে দেখার ঝটকাটা সামলাতে পারিনি এখনো, নিজেকে সামলে বললাম।
.
আমি: আপনি?
.
আদ্রিয়ান: হুম চলো।
.
আমিতো শকড চলো মানে কী? কোথায় যাবো? আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ইশু বলশ
.
ইশু: ওও বউ কে নিতে এসছেন?

আদ্রিয়ান: জ্বী। তোমাদের সাথেও দেখা হয়ে গেলো।
.
অর্পি: হুম। আচ্ছা যান যান, আমরা কাবাবের হাড্ডি হতে পছন্দ করিনা। বাই!
.
আদ্রিয়ান হেসে দিলো ওদের কথায়। তারপর ওরা বাই বলে চলে গেলো। আদ্রিয়ান বলল
.
আদ্রিয়ান: চলো?
.
আমি: কোথায়?
.
আদ্রিয়ান: বেশি প্রশ্ন কর তুমি!
.
বলেই আমার হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিলো, তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে আমার সিটবেল্ট লাগিয়ে দিলো, তারপর নিজেরটা লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট করল। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম গাড়িটা বাড়ির রোড দিয়ে যাচ্ছেনা। তাই ওকে বললাম।
.
আমি: কোথায় যাচ্ছি আমরা? এটাতো বাড়ির রাস্তা না!
.
আদ্রিয়ান: কিডন্যাপ করবোনা তোমায় নিশ্চিন্তে থাকতে পারো!
.
আমি: বাট যাচ্ছিটা কোথায়?
.
আদ্রিয়ান: গেলেই দেখতে পাবে।
.
উফ এই ছেলেটাও না, বললে কী হয় খালি সাসপেন্স রাখবে!

আদ্রিয়ান: লান্চ করেছো?
.
আমি: হুম ক্যানটিন থেকে করেছি।
.
আদ্রিয়ান: সিওর?
.
আমি: হুম কিন্তু বাড়িতে তো জানানো হয়নি সবাই টেনশন করবে!
.
আদ্রিয়ান: Don’t worry.. আমি হিয়াকে বলে দিয়েছি! ও জানিয়ে দেবে।
.
আমি আর কিছু বললামনা, ভাবছি হঠাৎ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? বেশ ঘন্টা খানেক কেটে যাওয়ার পর নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম।
.
আমি: যাচ্ছিটা কোথায় আমরা?
.
আদ্রিয়ান: যাচ্ছিইতো গেলেই দেখতে পাবে!
.
আমি: বললে কী হয়?
.
আদ্রিয়ান: না বললে কী হয়?
.
আমি: আপনি এমন কেনো?

আদ্রিয়ান: আল্লাহ বানিয়েছে আমার কী দোষ?
.
আমি বুঝলাম এ কিছুতেই বলবেনা তাই চেষ্টা করেও লাভ নেই। তাই চুপ করে রইলাম। হঠাৎ উনি বলল
.
আদ্রিয়ান: গ্রামে গেছো কখনো?
.
আমি: অনেকবার। আমাদের নানাবাড়িও গ্রামে, ছোটবেলায় বেশি যাওয়া হতো। ছোটবেলার অনেক সুন্দর স্মৃতি আছে গ্রামে।
.
আদ্রিয়ান: গ্রাম ভালোলাগে?
.
আমি: খুব! প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে পারি। নদী, ক্ষেত, বাগান সব কিছুই খুব খুব খুব ভালোলাগে।
.
আদ্রিয়ান এবার স্লো ভয়েজে বলল
.
আদ্রিয়ান: আর আমাকে?
.
আমি চমকে ওনার দিকে তাকালাম বেশ অসস্হিকর একটা পরিবেশ তেরী হলো। তাই দুজনেই চুপ করে রইলাম। এই ছেলে হুটহাট এমন কথা কেনো বলে?
.
তিন ঘন্টারো বেশি সময় পর দেখলাম একটা গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু জানতে চাইলাম না জানি বলবেনা। এখন প্রায় ছয়টার মতো বাজে বেশ অনেকক্ষণ আগেই সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আশেপাশের পাশের পরিবেশটা ভালোই লাগছে। তাই বাইরে তাকিয়ে দেখছি।

বেশ খানিক্ষণ পরে গাড়িটা রোডের এক সাইডে পার্ক করলেন, তারপর আমার সিটবেল্ট খুলে দিয়ে নেমে গেলো তারপর দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: নামো!
.
আমি ওর হাত ধরার আগেই ও আমার হাত ধরে নামিয়ে গাড়ি লক করে, হাত ধরে হাটা দিলো, আমি দেখলাম খানিকটা দূরে একটা দোকান হয়তো চায়ের দোকান, ও আমাকে নিয়ে সেদিকেই যাচ্ছে। আমিও কিছু না বলে অবোধ বালিকার মতো সেদিকেই যাচ্ছি যেদিকে ও নিয়ে যাচ্ছে। এই ছেলেটা আমাকে এভাবে ট্রিট করে যেনো আমি একটা বাচ্চা হাত ছাড়লেই হারিয়ে যাবো।
.
দোকানে গিয়ে ও আমার হাত ছেড়ে দোকানদার দাদুর কাছে গিয়ে বলল।
.
আদ্রিয়ান: দাদু চিনতে পারছো আমায়?
.
দাদুটা বেশ কিছুক্ষণ সুক্ষভাবে তাকিয়ে থাকার পর তার মুখে খুশির ঝিলিক দেখা দিল, সে আল্লাদে আটখানা হয়ে বলল
.
দাদু: আদর ! আদর দাদুভাই না?
.
আদ্রিয়ান: জ্বি ইয়েস তোমার আদর দাদুভাই।
.
বলেই দাদুকে জরিয়ে ধরল দাদুও ধরল দাদুর চোখে পানি, আদ্রিয়ানো কেমন ইমোশনাল হয়ে গেছে, ওর মত স্মার্ট বিদেশে লেখাপড়া করা ছেলে একটা ময়লা পোশাক পরা বৃদ্ধ লোককে এভাবে জরিয়ে ধরে আছে, আর আমি চোখ ভরে এই দৃশ্য দেখছি, ভাবতেই অবাক লাগছে, সত্যিই ও আলাদা সবার চেয়ে আলাদা, আরো একবার মুগ্ধ হলাম ওর ওপর, আর কত রূপ আছে ওর? ভাবতেই ভালো লাগছে এই ছেলেটা আমার উডবি। যার মধ্যে কোন অহংকার নেই, দম্ভ নেই শুধু আছে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা আছে।

দাদু: এত বছর পর এই বুড়ার কথা মনে পড়ল?
.
আদ্রিয়ান: একটুও মনে পরেনি! কারণ তোমাকে তো আমি ভুলিই নি, মনে করব কেনো? ভেবেছিলাম বিদেশ থেকে এসে সোজা তোমার সাথে দেখা করব, পরে ভাবলাম তোমার হবু নাতবউকে নিয়েই আসি।
.
আমি অবাক হলাম, ওর আমার এনগেইজমেন্ট হলোতো মাত্র তিনদিন আগে,তাহলে দেশে এসেই হবু বউয়ের কথা জানলো কীকরে?
.
দাদু: হাচা? কই আমার নাতবউ?
.
আদ্রিয়ান আমার হাত ধরে দাদুর সামনে নিয়ে গেলো, আমিও সালাম দিলাম। দাদু আমার গালে হাত দিয়ে বলল।
.
দাদু: বাহ! আমার দাদুভাইয়ের পছন্দ আছে! এইক্কেবারে খাটি সোনা।
.
আমি লজ্জা পেলাম, মাথা নিচু করে রাখলাম।
.
আদ্রিয়ান: দাদুভাইটা কার দেখতে হবেনা? তবে সোনা না, সোনা হিরা সবকিছুই ওর কাছে মূল্যহীন।
.
দাদু: খুব ভালোবাসো বউরে?
.
আমি লজ্জায় মাথা তুলতে পারছিনা ছেলেটা এতো লজ্জায় কেনো ফেলে আমায়?
.
আদ্রিয়ান: তা দাদু আমাকে আর তোমার নাতবউকে তোমার স্পেশাল চা আর পাউরুটি খাওয়াবে না?

উত্তর দিলোনা যে? এরিয়ে গেলো কথাটা?
.
দাদু: হ্যা তুই ওরে লইয়া বয় আমি এহুনি আনতাছি।
.
আদ্রিয়ান আর আমি বেঞ্চে বসলাম।
.
আমি: কে উনি?
.
আদ্রিয়ান: আমার আরেক দাদু। আগে যখন আমার মন খুব খারাপ হতো বা খুব ভালো হতো তখন এখানে ড্রাইভ করে এসে সময় কাটাতাম। আসলে এখানে আসতে আসতেই ওনার সাথে পরিচয়। উনার দাদুভাই ডাকের মায়ায় পরে গেছিলাম। আদ্রিয়ান ডাকতে পারেনা তাই আদর ডাকে। বিদেশ যাবার পর আর আশা হয়নি, দেশে ফিরে পাচ বছর পর আবার এলাম তোমাকে নিয়ে।
.
আমি: ওনার কেউ নেই?
.
আদ্রিয়ান: ওনার স্ত্রী অনেকবছর আগেই মারা গেছেন। চা বিক্রি করে কোনরকমে খেয়ে পরে আছে, এই দোকানেই থাকে!
.
আমি: ওনার ছেলেমেয়ে?
.
আদ্রিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল।
.
আদ্রিয়ান: নেই। মানে থেকেও নেই। সারাজীবন চাষবাস করে দুই ছেলেকে মানুষ করেছে, একজন উকিল আরেকজন ব্যাবসা করে। কিন্তু মা মারা যাবার পর বাবার নিরক্ষরতার সুযোগ নিয়ে পেপারে টিপ সই নিয়ে সব সম্পত্তি নিজেদের নামে করে, সব বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে নিজেরা শহরে সেটেল হয়ে গেছে। আর এই নিরিহ বুড়ো মানুষটাকে নিঃস্ব করে দিয়ে গেছে। ঢাকা এখন বড় ফ্লাট, বউ বাচ্চা নিয়ে ভালোই আছে দুজন, কিন্তু এই বুড়ো মানুষটার খোজ নেওয়ার প্রয়োজনও মনে করেনা।

আমি: আর দাদু?
.
আদ্রিয়ান: দাদু কোনোরকম চা বিক্রি করে বেচে আছে আরকি। কিন্তু কি জানো? এতকিছুর পরেও নিজের ছেলেদের অভিশাপ দেয়না বরং রোজ ছেলেদের কথা ভেবে কাদে, নিজের নাতী নাতনিদের একবার কোলে নেবার আশায় থাকে। উনিতো টাকা চায়না ওদের কাছে, থাকার জায়গায়ও চায়না, শুধ চায় একবার এসে একটু দেখা করে যাক, ওনার নাতী নাতনিকে কোলে নিয়ে খেলতে চায়। কিন্তু এতো বড় বড় ফ্লাট বাড়িতে নিজের জন্মদাতা বাবার জন্য এদের কাছে জায়গা নেই। এত টাকা রোজগার করে কিন্তু বাবার জন্য কটা টাকা পাঠানোর মত টাকা এদের নেই। তবুও ওই বুড়ো লোকটা রোজ নামাজ পরে দোয়া করে যাতে তার ছেলেরা নাতি নাতনীরা ভালো থাকে।
.
আমি পুরো স্তব্ধ ওর কথা শুনে, খুব কষ্ট হচ্ছে, মনে হচ্ছে এখনি কেদে দেবো। মানুষের জীবনে এত কষ্টও আছে? এত কষ্ট সহ্য করে মানুষ বেচে থাকতে পারে? আমিতো সামন্য কষ্ট পেলেই সারাদিন কেদে বন্যা বইয়ে দেই।
.
আদ্রিয়ান আবারো বলতে শুরু করল
.
আদ্রিয়ান: একেই হয়তো বাবা মা বলে, সন্তান যাই করুকনা কেনো ওনাদের মুখ থেকে কোনোদিন সন্তানের জন্য আশির্বাদ ছাড়া অভিশাপ বেরোয় নাহ। কিন্তু অধিকাংশ সন্তান সেটা বুঝতেই পারেনা। এত কষ্ট করে যারা দুনিয়াতে আনে, নিজেরা না খেয়ে ওদের খাওয়ায়, মানুষের মতো মানুষ করে তাদেরকে ভূলে কীকরে সুখে থাকতে চায় ওরা? এত নিষ্ঠুর কীকরে হয়? জানো এমন অনেক মানুষ আছে যাদের বিশাল বিশাল আট্টালিকায় পোশা কুকুরের জন্য জায়গা হলেও নিজের জন্মদাতা বাবা মার জায়গা হয়না। অথচ সেই অট্টালিকার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান সেই মা বাবারই। আমরা যখন কথা বলতে পারিনা তখন বাবা মা ধৈর্য ধরে আমাদের না বলা কথা বুঝে নিয়ে আমাদের চাহিদা পূরন করে, কিন্তু তারা যখন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে তখন তাড়া কেবলই বিরক্তির কারণ হয়ে যায়,আমরা যখন হাটতে পারিনা তখন বাবা মা হাত ধরে হাটা শেখায় অথচ তারা যখন হাটার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তাদের জায়গা হয় বৃদ্ধাশ্রম, বা ফুটপাতে ( আদ্রিয়ানের গলাও ধরে আসছে)

আমি মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনছি। চোখ দিয়ে পানি পরছে আমার। আদ্রিয়ান সামনের দিকে তাকিয়ে কথা বলছে তাই দেখতে পাচ্ছেনা। সত্যিই তো জীবনে বড় হয়ে আমরা অনেকে তাদেরি ভূলে যাই যারা আমাদের বড় করল। নিজের বাবা মা কেই ফেলে দি যারা সারাজীবন যত্ন করে আগলে রেখেছে আমাদের। কত হাজার হাজার বাবা মা নিজেরই সন্তানের কাছে অবহেলিত হয় তার সাক্ষী হয়তো শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা বৃদ্ধাশ্রম আর ফুটপাতগুলো চিৎকার করে দেয়।
.
আমি নিজেকে সামলে বললাম।
.
আমি: এইরকম জায়গায় চা আর এসব বিক্রি করে ওনার চলে?
.
আদ্রিয়ান সামনে তাকিয়েই বলল
.
আদ্রিয়ান: উনি যখন আমাকে এসব বলেছিল খুব কষ্ট হয়েছিল, এরকম নিড়িবিলি জায়গায় দোকান খুব একটা চলতোনা, আমি চেয়েছিলাম ওনাকে আমার কাছেই নিয়ে আসতে কিন্তু উনি আসেন নি, টাকা দিয়ে সাহায্য করতে চাইনি কারণ আমি জানতাম উনি নেবেননা, তাই এখানকার কিছু লোকেদের বলে দিয়েছি দরকার না পরলেও যেন ওনার দোকান থেকে কিছু না কিছু নেন, তার বিনিময়ে তাদের মাঝেমাঝেই টাকা দিয়ে দিতাম, কেউ নিতো কেউ নিতোনা!
.
আমি আরো একবার অবাক হলাম। এতো ভালো কেনো উনি? সত্যিই আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একজনকে আমার জীবনে পাঠানোর জন্য, আর আব্বুর কাছেও কৃতজ্ঞ আমি। সত্যিই আজ আর কোন আফসোস নেই আমার, কোনো সংশয় নেই। আমি এখন জানি আমি বেষ্ট একজনকে পেয়েছি আমার জীবনে। যার কোনো তুলনা হয়না। He is the best person I have ever seen…
আমি আরো একবার অবাক হলাম। এতো ভালো কেনো উনি? সত্যিই আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একজনকে আমার জীবনে পাঠানোর জন্য, আর আব্বুর কাছেও কৃতজ্ঞ আমি। সত্যিই আজ আর কোন আফসোস নেই আমার, কোনো সংশয় নেই। আমি এখন জানি আমি বেষ্ট একজনকে পেয়েছি আমার জীবনে। যার কোনো তুলনা হয়না। He is the best person I have ever seen…

আদ্রিয়ান এবার আমার দিকে তাকালো আমাকে কাদতে দেখে উত্তেজিত হয়ে বলল।
.
আদ্রিয়ান: আরেহ। Why are you crying?
.
আমি কিছুই বলছিনা মাথা নিচু করে আছি। আদ্রিয়ান আমার থুতনি ধরে মুখটা উচু করে বলল।
.
আদ্রিয়ান: আমি আগেই বলেছি যে আমি আমার জিনিসের অপচয় পছন্দ করিনা, So don’t do this..
.
কিন্তু আমার চোখ দিয়ে এখনো হালকা পানি পরছে। ও আমার চোখ মুছে দিয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: Please don’t cry baby, আগে যদি জানতাম তুমি এতো ইমোশনাল হয়ে যাবে তাহলে বলতামিনা।
.
আমি ওর দিকেই তাকিয়ে আছি। এখন কান্না না করলেও মনটা ভালো হয়নি। এভাবে খানিকটা সময় কেটে গেল কিন্তু আমি মন খারাপ করে বসে আছি। ও হঠাৎ করে বলল
.
আদ্রিয়ান: Tell me one thing.. তোমাদের মেয়েদের কী চোখের পানি রেডি করা থাকে? চাইলেই টুপ করে পরে যায়?
.
আমি ওনার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিতেই বলল

আদ্রিয়ান: না মানে জাবিনকেও দেখি কিছু না হতেই কেদে সমুদ্র বানিয়ে ফেলে। রিমোট নিয়ে একটু ডিসকভারি চ্যানেল দেখতে গেলেই ভ্যা ভ্যা করে কাদতে কাদতে বলবে “আম্মু তোমার ছেলে আমাকে মটু পাতলু দেখতে দেয়না”। আমি এটাই বুঝতে পারিনা এত হ্যান্ডসাম হ্যান্ডসাম সিক্সপ্যাক ওয়ালা হিরো থাকতে এই মেয়ে ওই মোটকা আর পাতলার জন্যে এতো কেনো পাগল? Who the hell they are??
.
আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। উনি একটু চিন্তিত প্লাস ভাবান্তুক ফেস বানিয়ে হালকা ঝুকে ফিসফিয়ে বলল।
.
আদ্রিয়ান: By the way baby do you know who are that motka and patla?
.
আমি এবার ফিক করে হেসে দিলাম। হাসতে হাসতেই বললাম
.
আমি: You really don’t know who are motu patlu??
.
উনি বাচ্চাদের মতো করে মাথা নাড়ল যার অর্থ না।
.
আমি: আরে এটা একটা কার্টুন, আর মটু পাতলু কার্টুনের লিডিং ক্যারাক্টার!
.
উনি অবাক হয়ে তাকালো। তারপর সস্তির নিশ্বাস নিয়ে মুখ ফুলিয়ে বলল

আদ্রিয়ান: লাইক সিরিয়াসলি? ওই ষোল বছরের বুড়ি পেত্নি কার্টুন দেখার জন্য এভাবে লাফায়? আমিতো হেব্বি টেনশনে ছিলাম যে আমার বোন একসাথে দুজনের জন্য পাগল, তাও একজন মোটা আরেকজন পাতলা। বাংলা সিনেমার বোনেদের মতো যদি এসে বলত ” ভাইয়া ওদের ছাড়া আমি বাচবোনা, বিয়ে করলে ওদেরকেই করব”। তাহলেতো ফেসে যেতাম,এক সাথে দুজন? ভাবা যায়? যাক এটা ভেবে নিশ্চিন্ত হলাম যে এরা কার্টুন, সেই চান্সটা আর নেই। আহ! শান্তি।
.
আমিতো আরেক দফা বোকার মতো তাকিয়ে আছি, তবে এবার খুব হাসিও পাচ্ছে। উনি আবার বললেন
.
আদ্রিয়ান: সেটা হলে কী কেসটাই না হতো বলোতো? আরে বাংলা সিনেমার ভাইয়ারা বলে “ওই ছোটলোকের সাথে তোর বিয়ে আমি কিছুতেই হতে দেবোনা।” আর আমাকে কী বলতে হতো? ” বইন দয়া কর! যেকোনো একজনের কথা বল, দুইজনের সাথে কেমনে কী?”
.
আমি এবার শব্দ করে জোরে জোরে হাসতে লাগলাম। এমনভাবে বলল কথাগুলোযে যে কেউ হেসে দেবে, সিনেমার ডায়লগ গুলো ওভাবেই এক্টিং করেই বলছিল। বেশ খানিক্ষণ হাসার পর ওনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি হাসি মুখেই ভ্রু কুচকে বললাম
.
আমি: কী দেখছেন?
.
উনি এবার নিজেকে সামলে বলল
.
আদ্রিয়ান: ইউ নো তোমার চোখে পানি না মুখে এই হাসিটাই বেশি মানায়।

আমি ওনার থেকে চোখটা সরিয়ে নিয়ে একটু মুচকি হাসলাম। আর এটাও বুঝলাম এতক্ষণ উনি এসব আমাকে হাসানোর জন্যই করছিলো। সত্যিই হাসার কারণে এখন মনটাও ভালো হয়ে গেছে।
.
এরমধ্যেই দাদু চা আর পাউরুটি নিয়ে এলো। আদ্রিয়ান উঠে এগিয়ে নিয়ে এলো তারপর বেঞ্চের ওপর রাখল। তারপর হাতের তালু ঘসতে ঘসতে বলল
.
আদ্রিয়ান: উফ দাদু… পাচঁ বছর পর তোমার এই স্পেশাল চা আর পাউরুটি খাবো
.
এটা বলে যেই ও পাউরুটিতে হাত দেবে ওমনি দাদু ওর কান টেনে বলল
.
দাদু: আইগ্গে না। আইজ আর তুমি আগে পাইতাছো না। আইজ আমার নাতবউ আইছে আইজ ওয়ই আগে খাইব তুমি নাহ!
.
আদ্রিয়ান মুখ ফুলিয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: বুড়া এটা কিন্তু ঠিক না। নাউবউকে পেয়ে নাতিকে ভুলে গেলা? নাতবউ টা পেলে কোথায় শুনি?
.
দাদু: সে যাই কও আগে আমার নাতবউ ই খাইব।
.
আমি বেশ ইনজয় করছি এদের দাদা নাতির খুনসুটি!
.
আদ্রিয়ান: এইযে ম্যাডাম! দয়া করে শুরু করুন নইলে এই বুড়া আমাকে খেতে দেবেনা। And I can’t wait baby please start..

আজব বার বার বেইবি কেনো বলছে? আমিকি বাচ্চা? পরে জিজ্ঞেস করতে হবে।
.
আমি একটু পাউরুটি ছিরে চা তে ভিজিয়ে মুখে দিতেই আদ্রিয়ান ঝটপট আরেকটা পাউরুটি নিয়ে ভিজিয়ে খেতে শুরু করল। এখন এই ছেলেকে দেখলে কেউ বলবেনা যে ও ইউ কে থেকে পাচ বছর স্টাডি করে এসছে।
.
চা খেয়ে কিছুক্ষণ গল্প করার পর আদ্রিয়ান দাদুকে বলল
.
আদ্রিয়ান: দাদু এবার উঠবো।
.
দাদু: চলে যাবি?
.
আদ্রিয়ান: যেতে হবে দাদু! তোমার নাতবউকে নিয়ে আরেকটু ঘুরবো। আবার আসবো।
.
আদ্রিয়ান: Wait a minute..
.
বলেই গাড়ির দিকে ছুটলো।
.
দাদু আমার মাথায় হাত দিয়ে বলল
.
দাদু: আবার আসবা কিন্তু আদর দাদুভাইর লগে।
.
আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম। এরমধ্যেই আদ্রিয়ান চলে এলো। আদ্রিয়ান আমার হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে ইশারা করল দাদুকে দেবার জন্য, আমিও ওর কথামত দিলাম।

দাদু: এইডা আবার কী?
.
আদ্রিয়ান: খুলে দেখো।
.
দাদু প্যাকেটটা খুলে দেখলো তিনটা গেন্জি, দুইটা লুঙ্গি একটা চশমা।
.
দাদু: এগুলা আবার কেন?
.
আদ্রিয়ান: যাহ বাবা। নিজের দাদুকে কিছু দেবো তাতেও কারণ থাকতে হবে?
.
বলেই একটা হাসি দিয়ে আদ্রিয়ান দাদুকে আবার জরিয়ে ধরল। এরপর দাদুকে বিদায় দিয়ে চলে এলাম। গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিতেই জিজ্ঞেস করলাম
.
আমি: এবার কোথায়?
.
আদ্রিয়ান: এইতো সামনেই।
.
কিছুক্ষণ পর আবার গাড়ি থামলো যথারীতি উনি নিজেই আমার সিটবেল্ট খুলে আমাকে হাত ধরে নামালো, আর হাত ধরেই হাটতে লাগল, তবে এবার একটা খেতের মধ্যে দিয়ে হাটতে লাগল! আবছা অন্ধকার, দূরে দূরে বাড়ি গুলোতে জলতে থাকা আলো, ঠান্ডা বাতাস ভালোই লাগছে।
.
আদ্রিয়ান: Feeling better?
.
আমি: Yeah..

আর কিছু বললনা হাটতে হাটতে আমরা একটা নদীর পারে চলে এলাম। ঠিক তার পাশেই কাঠবাগান। দেখেতো আমি অবাক হয়ে গেছি।
.
আমি: Wow it’s just amazing..
.
আদ্রিয়ান: Like it?
.
আমি: So much…
.
এটা শুনে আদ্রিয়ান আবার ওর সেই পাগল করা হাসিটা দিলো।
.
কিন্তু বিপদ হলো যে নভেম্বর মাস চলার কারণে শীত পরেছে খুব। দুপুরে বাসায় চলে যাবো ভেবে কোনো গরম কাপড় আনি নি। এপ্রোনটাও গাড়িতে। এতক্ষণ শীত সহ্য করতে পারলেও এখন নদীর ঠান্ডা বাসাতে খুব কাপছি। আদ্রিয়ান সেটা দেখে বলল
.
আদ্রিয়ান: এনি প্রবলেম?
.
আমি: নো অল ওকে।
.
কিছুক্ষণ পরে চট করে আদ্রিয়ান বলল

আদ্রিয়ান: ওহ নো! আমারতো খেয়ালই ছিলোনা যে তুমি ছোয়েটার, জ্যাকেট কিছুই আনোনি। বলেই যেই নিজের জ্যাকেটটা খুলতে যাবে আমি বললাম
.
আমি: না না ওটার দরকার নেই। ওটা খুললে আপনারো শীত করবে।
.
আদ্রিয়ান: আমার নিচের গেন্জিটা ফুল হাতা আছে প্রবলেম হবেনা। বাট তোমার ঠান্ডা লাগলে সমস্যা।
.
বলেই ওর জ্যাকেটটা খুলে আমাকে পরিয়ে দিলো। ওর জ্যাকেট আমার গায়ে ঢোলা আর বড় হলেও শীত কম লাগছে এখন।
.
আদ্রিয়ান: বেইবি বাগানে যাবে নাকি নদীর পার দিয়ে হাটবে।
.
আমি: আপনি আমাকে বেইবি কেনো বলেন? আমিকি বাচ্চা?
.
আদ্রিয়ান: বাচ্চাইতো
.
আমি: মানে?
.
আদ্রিয়ান: মানে আমিতো তোমাকে বেইবিই বলব।
.
আমি: কেনো ইউ কে মেয়েদের বুঝি বেইবি বলতেন?
.
আদ্রিয়ান: আরে নাহ। ওসব আমি কোনোদিনি করিনি। আর তোমাকেও ওই মাইন্ডে ডাকিনা।
.
আমি: তাহলে?
.
আদ্রিয়ান: তুমি অনেকটা পিচ্ছি টাইপ। বাচ্চাদের মতোই, কিছু না ভেবেই কাজ কর, মেচিউরিটি কম তোমার মধ্যে and I like that.. আর তাছাড়া তুমি আমার চেয়ে বেশ ছোট তাই আমিতো বেইবি ই বলব।
.
আমি হেসে দিয়ে বললাম
.
আমি: নদীর পার দিয়েই হাটি।

আদ্রিয়ান: ওকে চলো।
.
বলেই আমার হাত ধরে হাটতে লাগল। বেশ খানিক্ষণ পরে বলল
.
আদ্রিয়ান: বেইবি তোমার জিন্সটা ফোল্ড করে উপরে ওঠাও।
.
আমি: কেনো?
.
আদ্রিয়ান: পানিতে পা ভিজিয়ে হাটবো।
.
আমি ওর কথা মথো জিন্স ফোল্ড করলাম ওও তাই করল। তারপর আমার হাত ধরে নদীর পানিতে পা ভিজিয়ে হাটতে লাগল। বেশ খানিক্ষণ হাটার পর ও বলল
.
আদ্রিয়ান: তুমি আমার ওপর রেগে আছো না?
.
আমি: কেনো?
.
আদ্রিয়ান: এইযে তোমাকে কিছুই না জানিয়ে তোমার জীবনের এতো ইমপর্টেন্ট একটা সিদ্ধান্ত নিলাম।
.
আমি: সেটা কী স্বাভাবিক না? (গম্ভীর কন্ঠে)
.
আদ্রিয়ান: I’m so sorry baby… আসলে আমার বলতে ইচ্ছে করছিলোনা না ভেবেছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো বাট বুঝতে পারিনি তুমি এতোটা হার্ট হবে।

বেশ মন খারাপ করেই বলশ কথাটা। আমার খুব হাসি পাচ্ছে। বেচারা ভাবছে আমি কতইনা রাগ করেছি কিন্তু আসলেতো অতটা রাগ করিনি! তবুও মুখটা গম্ভীর করেই রাখলাম
.
আদ্রিয়ান সেটা দেখে বাচ্চাদের মতো করে বলল।
.
আদ্রিয়ান: আচ্ছা তোমায় এত্তগুলা চকলেট খাওয়াবো তবুও রাগ করে থেকোনা প্লিস।
.
আমি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম ওও সাথে সাথেই হেসে দিলো।
.
হঠাৎ একটু জোরে বাতাস বইতে লাগল আমি ওর হাত ছাড়িয়ে আরেকটু এগিয়ে দু হাত বাড়িয়ে হাওয়া উপভোগ করতে লাগলাম। বেশ খানিক্ষণ পর হঠাৎ আদ্রিয়ান আমাকে পেছন থেকেই জরিয়ে ধরল আর আমার কাধের ওর থুতনি রাখল। আমিতো জমে গেছি পুরো, এতটাও আশা করিনি আমি, নড়ার শক্তিও পাচ্ছিনা। আদ্রিয়ান আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: Just close your eyes and feel this moment by your heart. I swear you will love it…
.
আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। আদ্রিয়ান আমার দুটোকে ওর দুই হাত দিয়ে ছড়িয়ে ধরে আমার পিঠ ওর বুকের লাগিয়ে রাখল। আমি জানি ওও চোখ বন্ধ করে রেখেছে। সত্যিই I am loving this moment…

এভাবে কতক্ষণ ছিলাম জানিনা। একসময় আদ্রিয়ান নিজেই আমাকে ছেড়ে দিলো তারপর আমার হাত ধরে শুকনো একটা জায়গায় এনে আমাকে দার করালো তারপর আমার সামনে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। এরপর আমার চোখে চোখ রেখেই এক হাটু ভেঙ্গে বসে পরল আমার সামনে।
.
আমিতো অবাক চোখে তাকিয়ে আছি কী করতে চাইছে ও? এভাবে হাটু ভেঙ্গে আমার সামনে বসার মানে কী? তারপর গেন্জির ভেতর থেকে একটা লাল গোলাপ বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে আদ্রিয়ান বলতে শুরু করল
.
আদ্রিয়ান: কী দিয়ে শুরু করব কী দিয়ে শেষ করব এটা নিয়ে অনেক ভেবেছি এই কয়েকদিন, কিছুতেই সাজাতে পারিনি, কিন্তু আর দেরি করা ঠিক হবেনা। আমি আমার মতো বলছি তুমি নিজের মতো করে সাজিয়ে নিও।
.
আমিতো এখনো অবাক হয়েই ওকে দেখছি।

আদ্রিয়ান: জানো আমি লাভ এট ফার্সট সাইট তো দূরে থাক কখনো লাভ ভালোবাসা এসবেই বিশ্বাস করতাম না। কিন্ত তুমি বাদ্ধ করেছো আমায় বিশ্বাস করতে। জানো প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছি সেদিন প্রথম আমার চোখ আটকে গেছিলো, হৃদস্পদন থেমে গেছিলো, মনে হচ্ছিলো একে দেখবো বলেই হয়তো এতদিন কারো দিকে তাকাতে ইচ্ছে করেনি। প্রথম যেদিন তোমার চোখে পানি দেখলাম তোমার ভেজা চোখের বড় ঘন কালো পাপড়ির আর চোখের গভীরতায় হারিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তোমার চোখের পানিও সহ্য হচ্ছিলো না তাই বকেছিলাম। তোমার বড় কালো চোখের প্রেমে পরেছি, তোমার ঠোটের খানিকটা দূরের ওই তিলের প্রেমে পরেছি, তোমার হাসিতে গালে পরা ওই টোলের প্রেমে পরেছি, তোমার বাচ্চামোর প্রেমে পরেছি, তোমার সব কিছুরই প্রেমে পরে যাই আমি, কিন্তু তোমার কোন জিনিসটাকে ভালোবাসি সেটা জানিনা। But you are my love at first site..
তুমি আমার আছে অসঙ্গায়িত, তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটা অসঙ্গায়িত, তোমাকে ভালোবাসার কারণটাও আমার কাছে অসঙ্গায়িত। Yes it’s infinite love.. I don’t know how much i love you, i don’t know why do i love you, I really don’t have any definition of my love for you….”Will you marry me?” বলবোনা কজ সেটা তোমাকে করতেই হবে, শুধু জানিয়ে দিতে চাই I LOVE YOU.

তুমি আমার কাছে অসঙ্গায়িত, তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটা অসঙ্গায়িত, তোমাকে ভালোবাসার কারণটাও আমার কাছে অসঙ্গায়িত। Yes it’s infinite love.. I don’t know how much i love you, i don’t know why do i love you, I really don’t have any definition of my love for you….”Will you marry me?” বলবোনা কজ সেটা তোমাকে করতেই হবে, শুধু জানিয়ে দিতে চাই I LOVE YOU..

আমি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে, প্রপোজাল লাইফে অনেক পেয়েছি, কিন্তু এরকম ভাবে কেউ করেনি, ওর বলা প্রতিটা শব্দ মন ছোয়া ছিলো, ওর প্রতিটা কথায় হারিয়ে যাচ্ছিলাম আমি, আমার নিজেরই ফিয়ন্সে আমাকে প্রপোজ করল? এত সুন্দর confession তাও আমার উডবির করা ভাবতেই ভালোলাগছে, বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর উনিই বলল
.
আদ্রিয়ান: Say something?
.
আমি কিছু না বলে মুচকি হেসে গোলাপটা নিলাম, উনি এতেই ভিষণ খুশি হয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: It’s enough for me..

তারপর ওভাবে বসেই ওনার পকেট থেকে একটা বেসলেট বের করল। বেসলেটটা ম্যাগনেট সিস্টেম, সিলভার কালার তার মধ্যে সাদা পাথরের চমৎকার ডিজাইন, আর মাঝে A আর O খুব সুন্দর স্টাইলে জোরা দিয়ে ডিজাইন করা।
.
আমি ভাবছি লোকে তো রিং দিয়ে প্রপোজ করে উনি কী বেসলেট দিয়ে করবে?
.
আদ্রিয়ান: এটাই ভাবছো তো যে রিং না এনে বেসলেট কেনো আনলাম? আসলে আমার নামের একটা রিং তো আছে তোমার হাতে তাই বেসলেট ই বেটার। আর তাছাড়া রিং দিয়েতো সবাই প্রপোজ করে আমি নাহয় ইউনিক কিছু করলাম।
.
আমি এবারেও অবাক ওর কথায়।
.
ও আমার হাতে বেসলেটা পরিয়ে দিতে দিতে বলল

আদ্রিয়ান: এটা আমাদের এনগেইজমেন্টের দিনি ওরডার করেছিলাম। ইউ নো বেসলেট টার ডিজাইন আমি নিজের হাতে একেছি? Just for you my Lady…
.
পরিয়েই আমার হাতের উল্টোপিঠে একটা কিস করল। আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলাম। তারপর উনি উঠে আমাকে বলল।
.
আদ্রিয়ান: Can I hug you?
.
আমিতো অবাক হলাম এই ছেলে একটু আগে পেছন থেকে জরিয়ে ধরল সেই সময়তো পারমিশন চায়নি? এখন চাইছে কেনো? ও আবারো বলল
.
আদ্রিয়ান: Please?
.
আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করলাম ও আলতো করে জরিয়ে ধরল আমায়। ছেলেটা আসলেই লম্বা, আমি 5’3″ তবুও ওর কাধের নিচে পরে আছি, বেশ খানিক্ষণ পর আমার কি হলো জানিনা আমিও হালকা করে ওর পিঠে হাত রাখলাম। আমি চোখ বন্ধ করে খুব মনোযোগ দিয়ে ওর হার্টের একেকটা বিট শুনতে লাগলাম। এতে ও আমাকে আরেকটু জোরে জরিয়ে ধরল। বেশ খানিক্ষণ পরে আমাকে ছেড়ে আমার দুই কাধে হাত রাখল তারপর আমার কপালে গভীরভাবে একটা কিস করল, আমি আবারো চোখ বন্ধ করে ফেললাম। তারপর ও আমার হাতের কবজির একটু ওপর ধরে বলল

আদ্রিয়ান: চলো বাগানটা থেকে হেটে আসি।
.
আমি মুচকি হেসে বললাম
.
আমি: চলুন।
.
ও আমার হাত ধরেই বাগানে নিয়ে গেলো বেশ খানিক্ষণ হাত ধরে বাগানের মধ্যে হাটলাম আর বাগানের বাতাস উপভোগ করলাম। এরপর উনি আমাকে নিয়ে একটা গাছের নিচে বসলেন। দুজনেই চুপচাপ বসে আছি। হঠাৎ ও আমার হাত ধরে বলল
.
আদ্রিয়ান: ইউ নো আজকের এই সন্ধ্যা আমার জীবনের সেরা সন্ধ্যা ছিলো। এই সন্ধ্যাটা আমি তোমার সাথে কাটাতে পেরেছি, তোমাকে আমার মনের কথা বলতে পেরেছি এন্ড মোস্ট ইম্পর্টেন্টলি তোমাকে এতোটা কাছে পেয়েছি।
.
আমি মুচকি হাসলাম। ও আবার বলল।
.
আদ্রিয়ান: Thank you! Thank you so much… I am loving this moment, i am loving this evening and I love you…

আমি ওনার দিকে তাকালাম, একটু আনইজি লাগছে কারণ উত্তরটা দেবার জন্য আমি এখনো প্রস্তুত নই।
.
আদ্রিয়ান: Don’t worry.. আমি কখনো উত্তর চাইবোনা তোমার কাছে আর না কোনো উত্তর এক্সপেক্ট করব, আমি জানি সময় হলে তুমি নিজেই আমকে বলবে, আর আমি সেই দিনটার জন্যই ওয়েট করব। না বললেও সমস্যা নেই আমি একাই তোমাকে ভালোবাসতে পারব
.
আমি: রাত হয়ে যাচ্ছেতো ফিরতে হবে।
.
আদ্রিয়ান: ও হ্যা ভুলেই গেছিলাম অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে, সরি! লেটস গো!
.
বলেই উঠে পরল আমিও দাড়ালাম, ও আমার হাত ধরে হাটতে হাটতে গাড়িতে নিয়ে বসালো তারপর নিজে উঠে দুজনের সিটবেল্ট লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট করল, অনেকটা সময় কেউ কিছু বললাম না হঠাৎ উনি গান প্লে করল। মিউজিক স্টার্ট হবার সাথে সাথেই আমি ওনার দিকে তাকালাম উনি একট হাসি দিলো আর আমি চোখ সরিয়ে বাইরে তাকালাম।

Yeh lambha jo thehra hai
Tera tera hai woh mera hai
Yeh lambha main ji lu jara…
Tujhse Milta rahu Mujhse milti rahe tu
Khudko dhunlungi phir khabi..
Tujh mein koya rahu main mujh mein khoyi rahe tu
khudo dhun lungi Phir kabhi…
Phir kabhi…
.
আদ্রিয়ান: You know আজ রাতে ঘুম হবেনা আমার!
.
আমি ভ্রূ কুচকে বললাম।
.
আমি: Why?
.
আদ্রিয়ান: তোমার সাথে কাটানো এই মুমেন্টগুলো খুব তাড়া করবে।

আমি একটা হাসি দিতেই বলল
.
আদ্রিয়ান: প্লিজ এভাবে হেসোনা বেবি এক সপ্তাহের ঘুম হারাম হয়ে যাবে।
.
এটা শুনে আমার হাসি বন্ধ হয়ে গেলো আমি তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে বাইরে তাকালাম।
.
Keu be baja gungunayein keu be baja mushkurayein
Pal bhi chamakne lagi hai, aab khab kaise chupayein
behkesi bate karle, haske haske aakhe bharle
Yeh behusiya phir kaha..
Tujhse milta rahu mai mujhse milti rahe tu
khudo dhunlungi phir kabhi…
Tujh mein khoya rahu main mujh mein khoyi rahe tu tujhko dhunlungi phir kabhi..
Phir Kabhi..
.
আমি খেয়াল করলাম আর চুলগুলো উরে ওনার মুখে বারি খাচ্ছে সেটা দেখে আমি তাড়াতাড়ি চুলটা বাধতে গেলেই উনি বলল

আদ্রিয়ান: Please don’t bound.. I am enjoying this..
.
আমি: Enjoying this?
.
আদ্রিয়ান: ইয়াহ মাতাল করা একটা ঘ্রাণ আসছে, জাস্ট হারিয়ে যাচ্ছি, let me enjoy the smell of your beautiful hair..
.
আমি কিছু না বলে ছেড়েই রাখলাম তারপর আবার বাইরে দেখতে লাগলাম..আবারো আরেকটা গান বাজতে লাগল
.
Main tainu samjhawan ki
Na tere bina lagda ji (ii)
Tu ki jane peyaar mera
main karu intezaar tera
tu dil tu ujaan meri
main tainu samjhawan ki
Na tere bina lagda ji…

ওনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমাকেই দেখছে তাই আমি চোখের ইশারায় বোঝালাম আমাকে পরেও দেখতে পারবেন এখন ড্রাইভিং এ মন দিন। উনিও মুচকি হেসে এক মাথে মাথা চুলকে ড্রাইভিং এ মন দিলো। আর আমি গালে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে আবার বাইরে তাকালাম।
.
Mere dil ne chun laiyane
tere dil diya raha
tu jo mera nal tu rehta
turpe mere asayha
Jina mera.. hay..
Unme tera ki main kara
tu sun iqraar mera
main karu intezaar tera
tu dil tu uzaan meri
Main tainu samjhawan ki
Nah tere bina lagda ji..

আদ্রিয়ান একটা জায়গায় গাড়ি থামালো রাত তখন এগারোটা। আমি বললাম
.
আমি: এখানে কেনো?
.
আদ্রিয়ান: সেই সন্ধ্যায় দাদুর দোকানে একটু চা পাউরুটি খেয়েছো ক্ষিদে পেয়েছে নিশ্চই!
.
আমি: কিন্তু..
.
আদ্রিয়ান: Please Don’t say no.. I’m also hungry. lets go…
.
আমিও আর কিছু বললামনা কারণ আমারো ভিষণ ক্ষিদে পেয়েছে। দুজনেই একটা রেস্টুরেন্ট এ গেলাম এরপর দুজনে পাশাপাশি বসলাম।
.
আদ্রিয়ান: Baby order please…
.
আমি: আপনিই করুন।
.
আদ্রিয়ান: সবসময় আমার ঘারেই চাপিয়ে দাও। Not done!
.
আমি: করুননা সমস্যা কী? (বাচ্চদের মতো করে)
.
আদ্রিয়ান: বাহ, আমাকে পটানোও শিখে গেছো? Okay… আমিই করছি।

খাওয়া শেষ করে আমরা গাড়িতে গিয়ে বসলাম। আদ্রিয়ান গাড়ি স্টার্ট করতে গিয়েও থেমে গিয়ে বলল।
.
আদ্রিয়ান: চলোনা আজ এখানেই একটা রুম বুক করে থেকে যাই।
.
আমি চোখ বড় বড় করে তাকাতেই বলল।
.
আদ্রিয়ান: এইরে তুমিতো অন্য মাইন্ডে নিয়ে নিচ্ছো। আমি ওসব কিছু মিন করি নি আসলে তোমাকে আজ ছাড়তে মনে চাইছেনা তাই আরকি।
.
আমি রাগ করার ভান করে বললাম।
.
আমি: হয়েছে চলুন।
.
আদ্রিয়ান মন খারাপ করে বলল
.
আদ্রিয়ান: Sorry..
.
এরপর গাড়ি স্টার্ট দিলো আর আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসতে লাগলাম

কিছুক্ষণ পর বলল
.
আদ্রিয়ান: রাগ করেছো তখনকার কথায়?
.
আমার খুব হাসি পাচ্ছে এখনো ওটা নিয়েই বসে আছে। আমি মুড নিয়ে বললাম
.
আমি: নাহ ঠিকাছে।
.
আদ্রিয়ান: সো সরি আমি সত্যিই ওসব মিন করিনি believe me!
.
আমি: How could i?
.
আদ্রিয়ান: I swear…

আমি ওনার দিকে তাকালাম মুখে অনুশোচনা স্পষ্ট। আমি ভাবছি উনি এমন কেনো? কখনো ভীষণ রাগী, মুডি! আবার কখনো শান্ত, ফ্রি একটা ছেলে। এক্চুয়ালি উনি সিচুউশন অনুযায়ী রিয়াক্ট করে। এটা খুব ভালো একটা দিক।
.
আমি হেসে দিয়ে বললাম।
.
আমি: আরেহ i was kidding.. কিছুই মনে করিনি আমি। আমি জানি আপনি ওমন নন।
.
আদ্রিয়ান: সত্যি?
.
আমি: তিন সত্যি?
.
এবার দুজনেই ফিক করে হেসে দিলাম। এরপর আর কথা বলিনি, বাড়ি পৌছতেই উনি নিজে দরজা খুলে আমাকে গাড়ি থেকে নামালো..
.
আমি: বাই!

Infinite Love part 16+17+18+19+20

আদ্রিয়ান: বাই (মন খারাপ করে)
.
আমি যেতে নিলেই আমার হাত ধরল। তারপর আবার জরিয়ে ধরল আমাকে। জরিয়ে ধরা অবস্হাতেই বলল

আদ্রিয়ান: I will miss you…
.
আমি কিছু না বলে চুপচাপ ওনার বুকের সাথে মিশে রইলাম।
.
খানিক্ষণ পর আদ্রিয়ান আমাকে ছেড়ে গালে হাত দিয়ে বলল
.
আদ্রিয়ান: Take care…
.
আমি মাথা নেড়ে চলে এলাম। অনেকখানি গিয়ে আবার পেছনে তাকিয়ে দেখলাম উনি গাড়িতে উঠার জন্য দরজা খুলেছে। আমি জোরে বললাম
.
আমি: শুনুন?
.
আদ্রিয়ান পেছনে তাকালো জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে।
.
আমি: বাড়ি পৌছে একটা মিসড কল দেবেন প্লিস!
.
আদ্রিয়ান জেনো হাতে চাদঁ পেলো,হেসে যেই গাড়িতে উঠবে আমি আবারো ডাকলাম।

আমি: আর হ্যা!
.
আদ্রিয়ান ঘুরে তাকালো
.
আমি: সাবধানে যাবেন।

এবার ওর হাসির রেখাটা বড় হলো। আমি আর পেছনে না তাকিয়ে সোজা ভেতরে যেতে লাগলাম। কিন্তু আমি জানি ও ততোক্ষণ তাকিয়ে থাকবে যতক্ষণ আমাকে দেখা যাবে! কিন্তু একটা কথাই ভাবাচ্ছে ও আমাকে ও বলল আমি ওর love at first site.. কিন্তু আমাদের প্রথম দেখায় ওর মুখে তেমন কোনো রিয়াকশন তো দেখিনি যেমনটা ও ওর কনফেশনে বলেছে। তাহলে কী মিথ্যা বলল? নাকি এমন কিছু আছে যেটা আমি জানিনা!

Infinite Love part 26+27+28+29+30