Infinite Love part 4+5+6

Infinite Love part 4+5+6
Writer: Onima

আমি কাপাকাপা পায়ে দরজাটা খুলতে যাচ্ছি এতক্ষন যাকে নিয়ে এত কল্পনা জল্পনা সে এখন আমার সামনে হবে? বড্ড ইচ্ছে করছে আয়নায় একবার নিজেকে দেখতে কিন্তু তা সম্ভব না। আচ্ছা উনি আমায় দেখে কীভাবে রিয়াক্ট করবে? দূর কী ভাবছি উনিতো আমায় চেনেই না, আগে কখনো দেখেইনি এসব ভাবাই অবান্তর। তাই কোন রকম বুকে ফু দিয়ে দরজাটা খুললাম দরজা খুলেতো আমি অবাক। শুধু অবাক নই, বড়সর ধাক্কাও খেলাম। ভাগ্যিস দূপুরে কিছু খাইনি, পেট ভরা থাকলে এতবড় ঝটকা খেয়ে অবশ্যই পেট ফেটে মারা যেতাম।

কারন আমার সামনে আদ্রিয়ান না আমার মামাতো দুই ভাই দাড়িয়ে আছে, মানে আপির দুই ভাই সজিব ভাইয়া আর অর্নব ভাইয়া। সজিব ভাইয়া আপির বড়, ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকেই মাসটার্স করেছে এখন জব করছে, আমায় বুড়ি বলে ডাকে। আর অর্নব ভাইয়া হিয়া আপুর ছোট কিন্তু আমার বড়, এবার ওনার্স করছে পলিটিকাল সাইন্স নিয়ে, পাবলিকে চাধ্স হয়নি কারন ওর পড়াশোনার চেয়ে খেলায় ইন্টারেস্ট বেশি।
আমি ওদের দেখে অবাক এরা কত্তে এসে টপকালো?
সজীব ভাইয়া: কীরে বুড়ি ভুত দেখলি মনে হয়?
আমি: মনে হবে কেনো ভুতিতো দেখলাম। তাও এক জোরা।?
অর্নব ভাইয়া: হারামি তোকে তো..
বলেই কানটা ধরে মুলে দিলো। আমি ঠোট ফুলিয়ে বললাম এতদিন পরে এসেও আমায় মারছো? not fare.?
অর্নব ভাইয়া: তোকে মারতে সেই লাগে পিচ্ছি একটা।
আমি: ভাইয়া..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সজীব ভাইয়া: হইছে চল ভেতরে চল।
ভেতরে যাওয়ার পর ওদের দেখে সবাই অবাক হলো আবার প্রচুর খুশিও হলো। আপি গিয়ে দুই ভাইকে জড়িয়ে ধরল।
আপি: তোমরা আসবে বলো নি তো।
সজীব ভাইয়া: সারপ্রাইজ দিলাম। আমার বুড়ি মেডিকেলে চান্স পেয়ে গেল আর আমরা আসব না?
আম্মু: ভাবি আসে নি?
সজীব ভাইয়া: আসবে পরে।
অর্নব ভাইয়া: আসলে আম্মু একটু নানু বাড়ি গেছে।
এরপর দুজন বাড়ির সবার সাথে কুশল বিনিময় করে। এরমধ্যেই অর্নব ভাইয়া বলে।
অর্নব ভাইয়া: ময়নাপ্পি খুদা লাগছেতো খাবার দেও।
আপি: চুপ কর পেটুক। গেষ্ট আসবে বাসায়, ওরা এলেই খাবো সবাই।
আব্বু: কিন্তু ওরা আসছেনা কেন?
আম্মু: একটা ফোন করে দেখোনা ওরা কোথায়
আব্বু: হুম দাড়াও।

এরমধ্যেই আব্বুর ফোন বাজল, ফোন রিসিভস করে আব্বু চলে গেল কথা বলতে, ফোনে কথা শেষ করে আব্বু এসে জানালো আদ্রিয়ানরা এখন আসতে পারবেনা। আদ্রিয়ান নাকি কোন কাজে আটকে গেছে বিকেলের দিকে আসবে। মনটাই খারাপ হয়ে গেল হুহ আসছে কাজ দেখাতে দেশে ফিরতে না ফিরতেই কী এমন কাজ? wait a minute!!! আমি মন খারাপ কেন করছি? আর এসবিবা কেন ভাবছি? সমস্যা কী আমার, এমন সব ফিল হচ্ছে যার কারণ আমারও অজানা সত্যই অজানা।
ওরা যখন এখন আসবে না তাই সবাই মিলে খেতে বসলাম। খাবার সময় হঠাৎ কাব্য বলল
কাব্য: ওই কম কম খা এমনিতেই অনেক মুটি হয়ে গেছিস পরে বিয়ে হবেনা।
আমি: না হলে তোর বাপে.. ( চোখ গেল আব্বুর দিকে উফফ সবসময় ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলি) মানে তোর কী?
কাব্যি: ওইযে তুই আমার বোন তাই।

আমি: তুই ঠিকমত খা দিনে দিনে কাঠি হয়ে যাচ্ছিস। ছেলেরা সিক্স প্যাক বানায় আর তুই কিনা মেয়েদের মত জিরো ফিগার বানাচ্ছিস???
সবাই হাহা করে হেসে দিল আর কাব্য মুখ ফুলিয়ে বলল
কাব্য: আজ চিকন বলে
আপি: এই অনি আমার ভাইটাকে একদম জালাবিনা চুপচাপ খা।?
অর্নব ভাইয়া: অনি তুই continue কর আমি আছি তোর সাথে।
আপি: হুহ আসছে রামের দোসর লক্ষণ জ্বী।
সজীব ভাইয়া: আমিও কিন্তু আমার বোনের পক্ষে।
আপি: হ্যা বিভিষন আসাটাই বাকি ছিল।
কাব্য:???

অর্নব ভাইয়া সজীব ভাইয়া আর আমি মুখ গোমরা করে কিছুক্ষন বসে থেকে সবাই একসাথে হেসে দিলাম।
এভাবেই হাসি ঠাট্টায় খাওয়ার কাজ হয়ে গেল। খাওয়া শেষে আমি সোফায় বসে গান শুনছি হঠাৎ ওহি এসে বসল। সুলতানাপ্পি অন্তকেও নিয়ে এল। এরপর তিনজন রোজকার খুনশুটিতে মেতে উঠলাম।
কিছুক্ষন পর ওপর গিয়ে দেখলাম খাটে রিপেয়ারিং চলছে মানে রুমে শোয়া যাবেনা তাই কাবার্ট থেকে ব্লাক গোল হাই নেকের পাতলা একটা টিশার্ট একটা রেড প্লাজো আর ফোনটা নিয়ে নিচে একটা রুমে ঢুকে চেন্জ করে নিলাম, কারন এটা আমার অভ্যেস আমি বাড়িতে ভারি বা লং ড্রেস পরতে পারিনা আর গেস্ট বিকেলে আসবে ততোক্ষন এখানেই শুয়ে গেমস খেলি পরে ওরা এলে চেন্জ করে একবারেই যাবো। যেই ভাবা সেই কাজ চেন্জ করায় আরাম লাগছে তাই আরামে শুয়ে গেমস খেলতে খেলতে কখনযে ঘুমিয়ে গেছি নিজেরি খেয়াল নেই। আমি এমনি কখন যে কোথায় ঘুমিয়ে যাই নিজেও জানিনা, আর আমার ঘুম ভাঙানো কোন যুদ্ধের চেয়েও কম না।

ঘুম ভাঙ্গার পর আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। চারপাশটা দেখে বুঝলাম সন্ধ্যা হোয়ে গেছে। Oh My Allah ওরা এসে গেছে নাকি? এতক্ষনে তো চলেও যাবার কথা, আপিরা কেউ ডাকলোনা? আর আমার যা ঘুম ডাকলেও কতটা শুনেছি কে জানে? এসব ভেবে যেই নামব বলে ভাবছি ওমনি আপি এল। কিন্তু আপির মুখে এক রহস্যময় দুষ্টুমির হাসি যার কারন আমার অজানা।
আমি: আপি ওরা কী চলে আসছে?
আপি: এসে আবার চলেও গেছে।
আমি: কীহ ডাকবেতো আমায়।?
আপি: আমার ওপর রাগছো কেন? অনেকবার ডেকেছি তোমায় নড়াতেও পারিনি, এত ঘুম কই পাও? আর এখানে ঘুমিয়েছ কেন?
আমি: রুমের খাটে রিপেয়ারিং করছিলো।
আপি: ওহ।

আমি: ওই ছেলেটা I mean আদ্রিয়ান এসছিলো?
আপি: Of course! ওর জন্যইতো আসা ওকে রেখে আসবে কেন?
আমি: দেখতে কী ওরকমি যেমন সবাই বলছিল? নিশ্চই না।
আপি: হুম একদমি না সবার কথা শুনে যা ইমাজিন করেছিলাম সেরকম সুন্দর না তার চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর আর ড্যাসিং। কাব্য ঠিকি বলেছিল চাইলেই বলিউড করতে পারত।
আমি: Really?
আপি: জ্বি।
আমি: দূর! তোমাদের ওই ওভার ট্যালেন্টেড ছেলেটাকে দেখা হলোনা।
আপি: আহারে! দুঃখ হচ্ছে? তুমি ওকে না দেখলেও ও কিন্তু তোমায় দেখেছে। (আবার সেই দুষ্টমি মাখা হাসি)
আমি: মানে?

আপি: মানে ওর একবার ওয়াসরুমে যাবার দরকার পরেছিল তাই আমি ওকে নিয়ে এই রুমে আসি, আমিতো জানতামনা তুমি এখানে ঘুমাচ্ছ আর নিচে এই রুমটাই সবচেয়ে কাছে ছিলো তাই এই রুমটাই দেখিয়ে দিয়েছি।
আমিতো আকাশ থেকে পরলাম মানে কী?
আমি: আল্লাহ না জানি কী অবস্হায় ছিলাম, উফফ। একটু দেখে নিবা না।
আপি: আমিকি জানি নাকি?
আমি: তারপর কী হল?
আপি: তারপর ওর দেরি হচ্ছে দেখে দেখতে গেলাম কোন প্রবলেম হয়েছে নাকি, গিয়ে দেখলাম..
আমি: কী দেখলে? (ঢোক গিলে)
আপি: তোকে ঘুমোতে।
আমি: আর কিচ্ছু না? ( সন্দেহের চোখে)
আপি: আর কী হবে? কিছুইনা…
Kuchto hai tujhse raabta
Kuchto hai tujhse raabta…

আমাকে এক চোখ টিপ দিয়ে গানটা গাইতে গাইতে আপি চলে গেল। যাহ বাবা কী এমন দেখেছে আপি যে এত রোমান্টিক মুডে আছে? পুরাই বোকা বনে গেলাম আপির কথা শুনে। দূর ছেলেটাকে দেখাই হলোনা? আজ প্রথম নিজের ঘুমের ওপর খুব রাগ লাগছে এই সময়টাতেই এমন মরা ঘুম আসতে হলো? না ঘুমোলেতো দেখতে পারতাম ওকে। আচ্ছা ওকে দেখতে না পারায় আমার এত খারাপ লাগছে কেন? ইডানিং নিজের ভাবনা আর কাজে নিজেই অবাক হচ্ছি। যাই হোক আমি ওকে দেখতে পারলাম না অথচ ও আমাকে ঠিকি দেখে নিলো তাও ঘুমন্ত অবস্হায়? আল্লাহ ঘুমলেতো আমার জামা কাপরের ঠিক থাকেনা প্লাজো খানিকটা উঠে যায়, টি শার্ট ভাজ হয়ে যায় কীভাবে ছিলাম কে জানে, ওরনাওতো ছিলোনা।

এসব ভাবতে ভাবতে নামতে যাবো গায়ের চাদর সরানোর সময়ই মাথায় এলো আমিতো গায়ে চাদর জরিয়ে শুই নি? গরম ছিলো তাই এসি চালিয়ে এমনিই শুয়ে পরেছিলাম তাহলে? তাহলে আর কী নিশ্চই আপি দিয়েছে আপি ছাড়া কে দেবে? বাট ছেলেটা রুমে আসার আগেই চাদরটা জরানো থাকলে ভালো হতো
যাই হোক এসব ভেবেই ড্রয়িং রুমে গেলাম। আপি আমাকে দেখে মুখ টিপে হাসছে, আজব এত হাসির কী হল? আমি সেটা ইগনর করে গিয়ে সোফায় বসলাম। কিছুক্ষণ পরেই সজীব ভাইয়া, অর্নব ভাইয়া আর কাব্য এল সাথে মোগলাই নিয়ে এসছে, আর আম্মু সবার জন্য চা বানিয়ে আনল, এরপর বাড়ির সবাই একসাথে খেতে আড্ডা দিচ্ছি, কিন্তু আজ আমি আড্ডায় মন দিতে পারছিনা মনে শুধু আদ্রিয়ান ঘুরছে, নিজের কাছেই অসহ্য লাগছে এত কেন ভাবছি ওর কথা? এসব ভাবতে ভাবতেই আম্মু বলল

আম্মু: কীহল অনি খাচ্ছোনা?
সবার দৃষ্টি এখন আমার দিকে। আমি জোর করে হেসে বললাম
আমি: এইতো খাচ্ছিতো।
খাচ্ছিতো বলে আবার সেই ভাবনায় ডুব দিলাম। এবার ওহি ডাকল।
ওহি: আপু..
আমি:
ওহি: আপু…(চিৎকার করে)
এবার আমার ধ্যান ভাঙলো।
আমি: হ্ হ্যা বলো বেবি।
সুলতানাপ্পি: কী এত ভাবছ বলোতো
আমি: কিছুনা। কী ভাবব? কীছুইনা। ও্ওহি ডাকছিলে কেন?
ওহি: খাইয়ে দাও তুমি।
আমি: আচ্ছা দাও খাইয়ে দিচ্ছি।

এরপর সবাই আড্ডায় মাতল এবার আমিও জয়েন করলাম। এরমধ্যেই সজীব ভাইয়া বলল
সজীব ভাইয়া: গ্রামে আমাদের করা পিকনিক আর খেলার কথা আজো মনে পরে।
আপি: হুম খেত থেকে কলই শুটি চুরি করে সেদ্ধ করে আমাদের বিশাল কাঠবাগানে বসে বসে খাওয়া।
অর্নব ভাইয়া: মাঝরাতে সবাই উঠে খিচুরি পাকিয়ে খাওয়া, ভূতের ভয় দেখানো কত কী।
কাব্য: I missed maximum things..
অর্নব ভাইয়া: সেটা তোর দোষ তুই দুনিয়াতে ডাউনলোড হতে টাইম লাগিয়েছিস আমরা কী করব।
আম্মু: সজীব এখনো লুঙ্গি পড়িস না? ?
আম্মুর এই কথা শুনে সবাই হেসে দিলাম। কারন সবাই জানি আম্মু কেন এই প্রশ্ন করল। আমার হাসিতো থামছেই না।সবার হাসিতে সজীব ভাইয়া রেগে আমার দিকে তাকালো, আর আমি হাসি থামিয়ে ভয়ে ভয়ে ভাইয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আবার জোরে হেসে দিলাম। আর ভাইয়া আরো রেগে তাকালো আমার দিকে কারন ভাইয়ার লুঙ্গি না পড়ার আর এই লেগপুল এর জন্য দায়িতো একমাত্র দি গ্রেট আমি।

আসলে ঘটনাটা হলো তখন আমার সাত বছর বয়স। গ্রামে নানু বাসায় সবাই মজা করে ছুটি কাটাচ্ছিলাম। সবাই মানে সব মামাতো খালাতো ভাইবোনরা। তো একদিন ঠিক করলো সবাই যে কাবাডি খেলবে। তাই অর্নব ভাইয়া, সজীব ভাইয়া, আপি, আরো কাজিনস্ সবাই বাড়ির বিশাল খেলতে নামলো, দর্শক ছিলো বাড়ির সব বড়রা। আমাকেও রাখলো খেলায়, আমি সবার চেয়ে খুব ছোট ছিলাম তাই আমি ছিলাম দুধভাত you know. আমি সজীব ভাইয়ার অপজিট টিমে ছিলাম। সজীব ভাইয়া একাই একশ ছিলো।কিছুতেই ওই দলকে হারানো যাচ্ছিলোনা, ভাইয়া একে একে এসে সবাইকেই আউট করে দিচ্ছিল, বাট জিততেতো হবেই তাই আমাকে আমার এক কাজিন বুদ্ধি দিলো ভাইয়া এই পাশে এলেই ভাইয়ার লুঙ্গি ধরে টান মারতে। আমি ছোট ছিলাম তাই অত কথা বুঝিনি, ভাইয়া কাবাডি কাবাডি বলে এপাশে আসতেই দিলাম লুঙ্গিটা ধরে টান। তবে ভাগ্য ভালো লুঙ্গিটা খুলে পড়ে যাবার আগেই ভাইয়া লুঙ্গিটা কোনোরকম ধরে দৌড়। সবাইতো হাসতে হাসতে অস্হির আর আমি ভাইয়ার দৌড় দেখে বোঝার চেষ্টাতে ছিলাম যে ব্যাপারটা কী হল? ??
তবে এরপর থেকে কোনদিন ভাইয়া ভূলেও আর লুঙ্গি পড়েনি।?

তবে এরপর থেকে কোনদিন ভাইয়া ভূলেও আর লুঙ্গি পড়েনি।?
রাতে খাটে শুয়ে শুয়ে ল্যাপটপটা ঘাটছি, চোখ টা ল্যাপটপে থাকলেও মনটা শুধুই আদ্রিয়ানকে নিয়ে ভাবছে, আদ্রিয়ানকে দেখতে না পাবার জন্য মনে মনে চরম আপসোস করছি। হঠাৎ আপি এসে পাশে বসে তার কাধ দিয়ে আমাকে একটু ধাক্কা মেরে বলল
আপি: কী মন খারাপ?
আমি: মন খারাপ কেন হবে?
আপি: বারে আদ্রিয়ানকে দেখতে পাশনি বলে।
আমি: What the.. ওর দেখা না পেলে আমার কী?আমি কেন মন খারাপ করতে যাবো?
আপি: সেটাতো তুমিই ভালো জানো। তবে ভেবনা মাঝে মাঝেই আসবে ও দেখা হোয়ে যাবে।
আমি: তাতে আমার কী? হলে হবে না হলে নাই।
আপি: হুম বুঝি বুঝি দেখছি তো একেক জনেল কারবার। একজন সারদিন চিন্তায় বিভর হোয়ে আছে। আর আরেকজনতো এক্কেবারে… (এইটুকু বলেই থেমে গেল)
আমি: আরেকজন এক্কেবারে?
আপি: কিছুইনা
আমি: না কী করেছে বল? শুধুতো আমায় ঘুমানো অবস্হায় দেখেছে তাও এক্সিডেন্টলি, আরতো কিছু করেনি তাহলে এভাবে বলছ কেন?

আপি: হ্যা হ্যা তাইতো আর কী করবে?
কিছু করেনিতো! কিছুই করেনি! ??
বলেই আপি কেটে পড়ল। আর আমি খালি আপির ভাবসাব দেখছি। হচ্ছেটা কী? আদ্রিয়ানরা যাবার পর থেকে আপির behavior is not normal.. কি এমন হয়েছে? আর অথৈ আর কাব্যও আমার দেখে আজব কিছু expression দিচ্ছিলো? What’s going on? দূর আমার ঐশি বেবিকে ফোন করে কথা বলি,সময় কাটবে। ঐশি মানে ঐশর্য, আমার আরেক বেষ্টু, আগেই বলেছিলাম ওও আমার মেডিকেলেই চান্স হয়েছে।
ঐশি: হ্যালো কিউটিপাই। কী খবর?
আমি: বিন্দাস। তোর কী খবর?
ঐশি: সেই। আচ্ছা শোন কালকেই এডমিট হয়ে যাবো বুঝলি?
আমি: ওকে বেবি আমি রেডি হোয়ে বেরিয়ে যাবো।
ঐশি: হুম, ইশুকে (ইশরাত) কে বলে দিয়েছি।
আমি: গুড। তিনজন একসাথেই যাবো।
এইভাবেই কিছুক্ষন কথা বলে ঘুমিয়ে পরলাম।

এভাবেই আরো কয়েকটা দিন কেটে গেল, এরমধ্যেই এডমিট হওয়া আর যাবতিয় কাজ সেরে নিয়েছি, তবে এইকয়েদিনে আদ্রিয়ানকে এক্কেবারেই ভুলতে পারিনি, বাড়িতে প্রায় রোজই ওর কথা হয়, আব্বু অনেকবার আমাদের সামনেই কথা বলেছে ওর সাথে কিন্তু ছেলেটার গলার আওয়াজটাও শুনতে পেলাম না। কিন্তু ইচ্ছাটা তীব্র ছিল কিন্তু সেটা কেন নিজেই জানিনা।
আজ অরিয়েনটেশন ক্লাস আপি অনেকবার ডেকে গেছে কিন্তু আমার ওঠার নাম নেই।
আপি: অনি ওঠো কখন থেকে ডাকছি? আজ অরিয়েনটেশন ক্লাস আছে ভূলে গেলে? ?
আমি: হুম…
আপি: কী হুম? সারে আটটা বাজে ওঠো…!!
শুনেই লাফ দিয়ে উঠলাম কী বলে? দশটায় অরিয়েন্টেশন ক্লাস আর এখন নাকি সারে আটটা বাজে? উঠবো কখন, রেডি হবো কখন, আর যাবো কখন??
আমি: উফফ আপি আগে ডাকবে তো!?

আপি: কখন থেকে ডাকছি হুস আছে? যা রেডি হয়ে নে। আমি খাবার রেডি করছি।
আমি ফোন এ হাত দিতেই দেখি ইশু আর ঐশির এত্তগুলা মিসড কল। আল্লাহ ওরা তো আমায় পানি ছাড়াই গিলে খাবে। ওদেরকে কল ব্যাক করে কোনরকম সামালদিয়ে ওয়াসরুম এ গেলাম ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে একটা হাটু অবধি সাদা গোল জামা, বেবি পিংক পাজামা( জিন্স না তবে দেখতে জিন্সের মত) পড়ে গলায় একটা বেবি পিংক ওরনা পেচিয়ে নিলাম তারপর ঠোটে হালকা করে বেবি পিংক লিপস্টিক দিলাম, হালকা দিলাম কারন আমার ঠোটের রংটাও ওরকমি ওরকমি, চুলটা আচরে ছেরে দিয়ে নিচে চলে এলাম ( আমার চুলগুলো ছাড়লে কোমর অবধি পরে তবে চুলের রং মোটেই কুচকুচে কালোনা, হালকা ব্রাউন)।
নিচে গিয়ে দেখি আমার খাবার রেডি করা। ডাইনিং এ বসতেই আম্মু বলল
আম্মু: আজ একটু তাড়াতাড়ি উঠলে কী হতো?

আমি: সরি আম্মু পারলেতো উঠতামই। এখন কথা বলুনা সময় নেই।
আপি: হ্যা জলদি খাও। You are already late.!!
আমি আর কথা না বাড়িয়ে খেয়ে বেরিয়ে গেলাম। রাস্তায় গাড়ি পেতেও সময় লাগলো, বাড়ির গাড়ি আমার কপালে জোটে না, কারন বাড়ির তিনটে গাড়িই তিনজনে অফিস নিয়ে যায়। অবশেষে DMC তে এলাম কিন্তু I am already 42 min late.
গেটের কাছে ভেতরে ঢুকতেই কারো পায়ে পারা দিয়ে ফেললাম।
ছেলেটা: উফফ্
আমি: হে দেখে চলতে পারেননা নাকি?

ছেলেটা: Excuse me. পায়ে আপনি আমার পারা দিয়েজেন।
আমি: So আপনিওতো আপনার পা টা আমার সামনে রেখেছেন।
ছেলেটা কতক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে দিল, লোকটার হাসি দেখে আমিও হেসে দিলাম।
ছেলেটা: আমি আদিব। তুমি?
আমি: অনিমা। আপনিকি স্টুডেন্ট?
আদিব: নাহ আমার এক বন্ধুর সাথে এসছি। ও আজকের অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামের গেস্ট।
আমি: আপনি একটু বলবেন কোন ফ্লোরে প্রোগ্রাম?
আদিব: Sure চল পৌছে দিচ্ছি।
আমি: না না তার দরকার হবেনা আপনি জাস্ট ডিরেকশনটা বলে দিন।
আদিব: ওকে 5th flour বিল্ডিং কোনটা তাতো জানোই।
আমি: হ্যা ধন্যবাদ ভাইয়া।
আদিব: ভাইয়া বলছ আবার ধন্যবাদ দিচ্ছো?
আমি: ওহ সরি কিন্তু এখন I’m late তাই বাই।
আদিব ভাইয়া: আচ্ছা।

তাড়াতাড়ি করে গিয়ে দেখি লিফট মহাভিজি। তাই কিছু না ভেবেই সিড়ি দিয়ে দৌড়তে শুরু করলাম। কিন্তু হটাৎ কোন এক খামবার সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পরে গেলাম। বেশ অনেকটা উচু থেকেই পরেছি, অনেকটা ব্যাথাও পেয়েছি কিন্ত ভাগ্য ভালো যে উলটা পালটা ভাবে পরিনি তাহলে নিশ্চিত হাত পা ভাঙতো, ঠিক এঙ্গেলে পড়ায় শুধু ব্যাথা পেয়েছি। কোন খাম্বার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়লাম তা দেখার জন্য মাথা তুলে তাকাতেই আমি পুরো হা।

একটা ছেলে নামচে সিড়ি দিয়ে। বেশ ফর্সা, অনেক লম্বা 6 ফিটের বেশি হবে, একটা নেভি ব্লু টি শার্ট পরছে, আর কালো জিন্স, তারওপর গাঢ় এস কালার লেদার জ্যাকেট, ব্লু আর এস এর কম্বিনেশন এ কেচ পরেছে। চুলগুলো ব্রাউন তবে হাইলাইট না। সিড়ি দিয়ে নামছে তার তালে তালে চুলগুলোও নড়ছে। কী চমৎকার দৃশ্য,আমি হাজার চেষ্টা করেও চোখ ফেরাতে পারছিনা, একে ক্রাশ বলা যায় কীনা আমি জানিনা কিন্তু এইটুকু জানি এই ছেলে আমার আঠারো বছরের রেকর্ড ব্রেক করে দিয়েছে।এই প্রথম কোন ছেলেকে দেখে আমি এভাবে তাকিয়ে আছি।

কিন্তুু হঠাৎ ই এই ছেলেটার কারনে পড়ে যাওয়ার কথাটা মাথায় চাড়া দিলো রেগেমেগে যেই কিছু বলতে যাবো, উনি অমনি বললেন
ছেলেটা: Hello miss are you okay?
আমি আরো একবার অবাক এত্ত সুন্দর ভয়েজ কোন ছেলের হতে পারে? তবুও নিজেকে সামলে প্রচন্ড রেগে বললাম
আমি: একেতো আপনার জন্য পরে গেলাম ধরলেনও না তারওপর আমাকে না তুলে জিজ্ঞেস করছেন, I’m okay or not? ম্যানার্স নেই কোন?
ছেলেটা এক হাটু ভেঙ্গে অামার পাশে বসল তারপর বলল
ছেলেটা: এটা কী তোমাদের I mean মেয়েদের মেয়েগত স্বভাব?
আমি: What do you mean?

ছেলেটা : I mean, আমি যদি তোমাকে তখন ধরতাম তাহলে বলতে এডভান্টেজ নিচ্ছি, এখন তুলতে এরে বলতে টাচ করার বাহানা খুজছি। এসব কিছুই করিনি বলে বলছ ম্যানার্স নেই। তোমরা নিজেরাই জানোনা তোমরা কীসে খুশি হও।
আমি পুরাই বোকা বনে গেলাম এ ছেলে বলে কী? ছেলেটা আবার বলল।
ছেলেটা: যদি উঠতে ইচ্ছে করে তাহলে হাতটা বাড়িয়ে দিতে পারো, বাট আমি নিজে থেকে হাত বাড়িয়ে কথা শুনতে পারবোনা।
Like really? এমনও পাগল ছেলে হয় আমিও হাত বাড়াবোনা হুহ আমারকি সেলফ রেস্পেক্ট নেই নাকি?
ছেলেটা কিছুক্ষন ওয়েট করার পরেও আমি হাত বাড়ালাম না তারপর ছেলেটা বলল।
ছেলেটা: Okay fine. I’m going. থাকো তুমি এখানে বসে।

বলেই চলে গেল। এ কেমন ছেলেরে বাবা আমিতো ব্যথায় উঠতেও পারছিনা। আর ওরিয়েন্টেশনেও লেট হয়ে গেছে অনেক ভীষন কান্না পাচ্ছে। তাই ঠোট ফুলিয়ে বসে রইলাম। হঠাৎ ছেলেটা এসে আমার হাত ধরে টান মেরে দাড় করিয়ে দিল। টান মারার সময় ভীষন ব্যাথা পেলেও এখন আর করছেনা হয়তো রগে টান পরেছিল ছেলেটা টান মারায় ঠিক হয়ে গেছে।
ছেলেটা আমার অনেকটা কাছে এসে কানের দিকে একটু ঝুকে বলল
ছেলেটা: অন্যের কাছ থেকে হেল্প নিলে সেল্ফ রেস্পেক্ট কমে যায়না।
আমি কিছুই বলছিনা। মানে বলার কোন ভাষা নেই হেবলার মত তাকিয়ে আছি ছেলেটার দিকে। তখন টান মারার জন্য ব্যাথা পেয়েছি খুব তাই চোখে পানি চলে এসছে সেটা দেখে ছেলেটা মুখ শক্ত করেই বলল
ছেলেটা: চোখ মোছ।

আমিতো অবাক হয়ে তাকিয়েই আছি। এত রেগে গেল কেন?
ছেলেটা এবার ঝারি মেরে বলল
ছেলেটা: I said চোখ মোছ।?
আমি ভয়ে তারাতারি চোখ মুছলাম। কিন্তু আমি কেন ভয় পেলাম একে? আর ওই বা কেন এত রেগে গেল?
ছেলেটা আরেকটু কাছে এসে বলল
ছেলেটা: কিছু জিনিসের মূল্য অনেক, তাই সেটা অকারনে ঝরাতে নেই। আর আমি অপচয় পছন্দ করিনা আর আমার জিনিসের অপচয় তো একেবারেই না।

বলেই সে চলে গেল আমিতো অবাকের শেষ পর্যায়ে। ওনার জিনিস মানে? আমার চোখের পানি ওনার? But how?
এসব ভেবে কাজ নেই আমি চলে গেলাম অরিয়েন্টেশন ক্লাস রুমের দিকে কারণ এখন এসব ভাবার সময় এক্কেবারেই নেই পাচতলায় অডিটোরিয়াম এ হচ্ছে প্রোগ্রামটা তাড়াহুরো করে গিয়ে ঐশি, ইশু আর আর্পি (অর্পিতা my another besti) কে খুজে বের করলাম ওরা ওদের মাঝে আমার জন্যে সিট রেখে দিয়েছে। আমি ওদের মাঝখানে গিয়ে বসলাম ওরা আমায় দেখে রেগে বলল
ঐশি: এত্ত তাড়াতাড়ি এলি যে? আরেকটু দেরিতে আসতি।
আমি: আসলে বেবি উঠতে লেট হয়ে গেছে।
ইশু: এটা আর নতুন কী?

অর্পি: তুই কী কোনদিনও মানুষ হবি না?
আমি: আমাকে দেখে কী অন্যকিছু মনে হয়?
ইশু: হইছে থাম সবাই এবার প্রোগ্রামে দেখ।
প্রোগ্রাম আর ডক্টরদের বক্তৃতা শুনে আমরা এসে ক্যান্টিনে বসলাম।
ইশু: তুইতো বেশ কিছুক্ষন আগেই ক্যাম্পাসে এসে পরেছিলি তবে এত লেট হলো কেন?
আমি: আর বলিসনা কী কী হয়েছে।
ঐশি: কী হয়েছে?

আমি ওদের সবটা বললাম।ওরা তো হাসতে হাসতে অস্থির আর দ্বিতীয় ছেলেটার কথা শুনেই ওরা ফিদা।
অর্পি: ওয়াও ছেলেটার পার্সোনালিটি তো সেই।
আমি: থামতো। আমাকে কী ধমকটাইনা দিসে আছতো খাটাশ
ইশু: হুম শুনেতো সেই লাগলো।
ঔশি: তুইতো দেরিতে এলি আজ গেস্ট হিসেবে সেই একটা হ্যান্ডসাম একটা ছেলে এসছিলো, কাজ ছিলো বলে চলে গেছে।
ইশু: হুম। তুই আসার একটু আগেই বেরিয়ে গেছে। মিস করলি।
আমি: ছাড়তো। I’m not interested..
ইশু: আরে নামটি তো শোন। ওনার নাম…

আমি: আরে বাদ দে বললামতো আমার জানার দরকার নেই।
এরপর কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাড়ি চলে এলাম। বাড়ি আসতেই একে একে সবাই প্রশ্ন করল কেমন ছিল অরিয়েন্টেশন ক্লাস। আমিও সবাইকে বললাম ভালো।
রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে খেয়ে নিলাম তারপর খাটে বসে গেমস খেলছি। আপি এসে বলল
আপি: সুইটহার্ট কেমন কাটল দিনটা।
আমি: ভালোই বাট একটা ছেলের জন্য সব স্পয়েল।
আপি: কেন?

তারপর আপিকেও সব বললাম আপিও প্রচুর হাসল। কিন্তু ছেলেটার শেষের বলা কথা শুনে আপি অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল। আজব এর আবার কী হল।
আমি এবার ভাবছি, ছেলেটা দেখতে সেই আচ্ছা আদ্রিয়ান কি ওর থেকেও সুন্দর? হতে পারে সেটা? লম্বাওতো খুব আমিও কম কী? আমি 5’3″?। কিন্তু এখন আমি ভাবছি ছেলেটার বলা কথাগুলো, প্রথমদিকে ছেলেটার বেলা কথা গুলো স্বাভাবিক ই ছিলো কিন্তু আমার চোখের পানি দেখার পর যা যা বলল তা মোটেই স্বাভাবিক নয়। প্রথম দিকের কথায় মনে হচ্ছিলো উনি আমায় চেনেননা কিন্তু আমার চোখের পানি দেখে যেভাবে কথা বললেন মনে হল উনি আমায় চেনে, একটা অধিকারবোধ ছিলো ওনার প্রতিটা কথায়। কিন্তু কেন উনিতো আমায় আগে দেখেননি না আমি দেখেছি তাহলে..

আমি এবার ভাবছি, ছেলেটা দেখতে সেই আচ্ছা আদ্রিয়ান কি ওর থেকেও সুন্দর? হতে পারে সেটা? লম্বাওতো খুব আমিও কম কী? আমি 5’3″?। কিন্তু এখন আমি ভাবছি ছেলেটার বলা কথাগুলো, প্রথমদিকে ছেলেটার বলা কথা গুলো স্বাভাবিক ই ছিলো কিন্তু আমার চোখের পানি দেখার পর যা যা বলল তা মোটেই স্বাভাবিক নয়। প্রথম দিকের কথায় মনে হচ্ছিলো উনি আমায় চেনেননা কিন্তু আমার চোখের পানি দেখে যেভাবে কথা বললেন মনে হল উনি আমায় চেনে, একটা অধিকারবোধ ছিলো ওনার প্রতিটা কথায়। কিন্তু কেন উনিতো আমায় আগে দেখেননি না আমি দেখেছি তাহলে..

What does he mean by “আমার জিনিস”। আমি কবে থেকে ওনার হলাম, না উনিতো আমায় ওনার জিনিস বলেনি বলেছে আমার চোখের পানিকে, কিন্তু ব্যাপারটা তো একই হল। যাকে কখনো দেখেইনি? কখনো কথাই হয়নি প্রথম দেখায় একটা মেয়েকে I mean একটা মেয়ের চোখের জলকে নিজের বলে দিলো? He really mean it? আচ্ছা বলল তো বলল এভাবে বলার কী ছিল?? কী জোরেই না ধমকটা দিয়েছে আল্লাহ, একটু মিষ্টি করেওতো বলতে পারত Pushpa থুরি Onima I hate tears রে…আহ! কী রোমান্টিক লাগতো শুনতে। দূর কী ভাবছি উনি কেনো আমাকে এভাবে বলবে। আচ্ছা সবার বলা আদ্রিয়ানের ডিসক্রিপশনের সাথে ওনার ডিসক্রিপশন অনেকটাই মিলে যায়। কিন্তু আদ্রিয়ান কীভাবে যাবে ওখানে কেনইবা যাবে? দূর আমিওনা কীসব ভাবি।

সকালে যথারীতি আপির ডাকে ঘুম ভাঙল।আপি আর আমি কফি খেতে কিছুক্ষন গল্প করলাম। আমাকে রেডি হতে বলে আপি নিচে গেল। মেডিকেলে যাবার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামলাম। আজ একটা পিংক কালার টপস, ব্লাক জিনস আর একটা ব্লাক স্কার্ফ গলায় জরিয়ে চুলটা পনিটেল করেছি, আজ লিপস্টিক ও দেইনি। কারন বিশেষ দিন ছাড়া সাজতে ভালোলাগেনা। ডাইনিং এ বসতেই আম্মু সবাইকে খেতে দিল। আপি আর আপি পাশাপাশি খেতে বসলাম। সবাই একসাথেই বসেছি ডাইনিং এ। তখনি চাচ্চু বলল
চাচ্চু: আম্মু আজকেতো মেডিকেলের ফার্স্ট ক্লাস।

আমি: জ্বী চাচ্চু।
চাচ্চু: মন দিয়ে ক্লাস করবে আর এটেন্টিভ থাকবে।
আমি: জ্বী।
আপি: আর প্লিস ক্লাসে অন্তত ঘুমাসনা। এটাতেতো তোর বিশাল রেকর্ড আছে।
আম্মু: আমিতো ভাবছি আমার বেচারা জামাইটার কথা কী হাল হবে ওর।
আমি: এমন ভাবে বলছ যেন জামাই রেডি করে রেখেছো?
আম্মু: হ্যা রেখেছিতো।

আম্মুর কথা শুনে সবাই আকাশ থেকে পড়ল আব্বু,চাচু আর পুফা বাদে।
কাব্য: সত্যিই? যাক এই আপদ তবে বিদায় হচ্ছে?
আমি: ওই চুপ কর। ঠিক করে রেখেছো মানে?
আব্বু: আরেহ এখনতো বড় হোয়েছো, বিয়েতো দিতেই হবে তাইনা? সেটাই তোমার আম্মু বলছিলো আরকি।
সজীব ভাইয়া: ইয়াহ বুড়ির বিয়েতে হেব্বি মজা হবে।
অর্নব ভাইয়া: হুম ডিজ্জে ডান্স।
আপি: প্রতিতা প্রোগ্রামে আমার কিন্তু আলাদা আলাদা ড্রেস চাই।
ওহি: ইয়ে…! ভীষণ মজা হব্বে।

সবাই এই নিয়ে হই হই লাগিয়ে দিল অন্ত ও হাসতে লাগল, সব্বার হইচইতে মনে হচ্ছে এখনই আমার বিয়ে হচ্ছে। বড় ছোট কেউ কারোর চেয়ে কম যাচ্ছেনা। এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায় দেখ। আর আমি হেবলার মত একবার এদিকে দেখছি তো আরেকবার অদিক। কিন্তু এরাতো থামছেই না। What the hell? প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছি এবার, নাহ আর সহ্য করা যাচ্ছেনা তাই জোরে চিৎকার করে বললাম
আমি: Stop iiiiittttttt !!
সবাই থেমে গেল মূহুর্তেই সব শান্ত।
আমি: What? এখনি বিয়ে দিয়ে দিচ্ছ আমায়? পাত্র দেখা শেষ? বিয়ে কবে? আজ নাকি কাল? নাকি বিয়েটাই হোয়ে গেছে আজ বাসর কোনটা? বলো?
আপি: ইয়ে মানে..

আমি: What ইয়ে মানে। সবাই এমন ভাবে নাচানাচি করছ যেন এখনই আমার বিয়ে?
আম্মু: বিয়ের বয়সতো হয়েছে তাইনা?
আমি: তো আপি, অর্নব ভাইয়া, সজীব ভাইয়া, আমার আরো কত কাজিনস আছে কই তাদের বিয়ে নিয়ে তো ভাবছোনা, এতদিনতো আমার বিয়ে নিয়েও ভাবোনি। আজ কী হল?
আপি: হইছে থাম আর হাইপার হোসনা খেয়ে মেডিকেল যা লেইট হয়ে যাবি।
আমি চুপচাপ খেতে থাকলাম। উফফ কতদিন পর রাগ দেখালাম। আসলে আমি এরকম রাগ সচারচর দেখাই না আর যখন দেখাই তখন সবাই চুপ থাকে।

আর কেউ কিছু বললোনা আমি খেয়ে চলে গেলাম মেডিকেলে।
মেডিকেলে এসে গেলাম না আজ অন্তত লেইট করিনি। দেখলাম আমার ফ্রেন্ড নামক বান্দরনিরা বিল্ডিং এর সামনের ছোট সিড়িটাতে বসে আছে, ওদের কাছে গেলাম ওরা আমার দিকে এভাবে দেখছে যেনো ভূত থুরি আমিতো মেয়ে তাই পেত্নি দেখছে।
ঐশি: আরেহ বাহ লেইট করলি না যে আজকে? শরীর তরির ঠিক আছে য
তো?

অরু: আল্লাহ তোরে মানুষ বানাইছে আজকের জন্য।
ইশু: ব্রেকিং নিউস আমাদের দি গ্রেট অনি বেইবি আজকে ঠিক টাইমে এসছে, হাতে তালিয়া।
অর্পি: এই আনন্দে ট্রিট হোয়ে যাক।
আমি এতক্ষণ এদের তামাশা দেখছিলাম তারপর বললাম
আমি: Done? হয়ে গেছে লেগপুল করা? এবার অফ যা।
অর্পি: সত্যি কথা সবারই গায়ে লাগে হুহ।
আমি: হইছে আমার সত্যবাদী এবার চল ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।
ঐশি: হ্যা চল।
এরপর সবাই মিলে ক্লাস করলাম। নিচে আসার পর অর্পি বলল।
অর্পি: চলনা বুয়েট ক্যাম্পাসটা একটু ঘুরে আসি।
আমি: কী দরকার? চল বাসায় যাই।
ইশু : আরে কাছেইতো ক্যাম্পাসটা চলনা, কী হবে?
ঐশি: হ্যা তাইতো চল।

অগত্যা যেতেই হলো হাটতে হাটতে পৌছলাম বুয়েট ক্যাম্পাস। এই প্রথম বুয়েটের ক্যাম্পাসে আসলাম ছোট হলেও বেশ সুন্দর এই ক্যাম্পাস। এখান থেকে প্রতি বছর কত ইন্জিনিয়ার বের হয়। আচ্ছা আদ্রিয়ানও তো একজন ইন্জিনিয়ার তাইনা? উফফ আমি এখানেও ওকে নিয়ে এলাম। নিজের ওপরি নিজে খুব বিরক্ত হই। এত কেন ভাবি ওর ব্যাপারে? Who is he? এমন একজন যাকে কখনও আমি দেখিই নি। আচ্ছা ঐ ছেলেটা যার জন্য আমি পরে গেছিলাম, আমাকে কাদতে দেখে ধমক দিলো উফফ কী ধমক ছিলোরে বাবা, ও কী করে? স্টুডেন্ট? নাকি অন্যকিছু? যা খুশি করুক আমার কী হুহ। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎই ইশু চিৎকার দিয়ে উঠল
আমি: আহ এত চেচাচ্ছিস কেন? কানের মাথা কী খাবি নাকি?

ইশু : আরে ঐ ছেলেটা।
ঐশি: কোন ছেলেটা?
ইশু: ঐ যে দেখ
আমরা সবাই ওর ইশারা করা দিকে তাকালাম। তাকিয়েতো আমি অবাক আরে এত সেই ছেলেটা যার সাথে কালকে ধাক্কা লেগে পড়ে গেছিলাম। কিন্তু এর সেই “I said চোখ মোছ” বিখ্যাত ধমকটার কথা মনে পরতেই হালকা ভয় আর রাগ দুটোই হলো।
ঐশি : আরে এতে সেই ছেলেটা কালকে অরিয়েনটেশন ক্লাসে যে গেস্ট ছিলো।
ইশু: ইয়া কী ড্যাসিং না।
অর্পি: হুম কী যেন নাম হ্যা মনে পরছে…
আমি: ওই থামবি। জীবনে তোরা ছেলে দেখিসনি?
অর্পি: দেখেছি কিন্তু এরকম দেখিনি।
আমি: হুহ কী আমার সুন্দর রে।

আমি ওই ছেলেটার দিকে তাকিয়েই কথাগুলো বলছিলাম। ছেলেটা আমার দিকে এক পলক গভিরভাবে তাকিয়ে হুট করে এমনভাবে চোখ সরিয়ে নিল যেন আমাকে এর আগে দেখেইনি, I am no one to him. আজব! আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চলে গেলাম সামনের দিকে। ওরাও দৌড় মারলো আমার পেছন পেছন। আমার কাছে এসে ওরা বলল
ইশু: কীরে কী হল?
আমি: এখনো বিয়ে করিনিতো তাই কিছু হয়নি,বিয়ে করে ভেবে দেখবো।
ঐশি: তোকে কিছু জিজ্ঞেস করাটাই বেকার।
আমি don’t care ভাব নিয়ে হাটছি হঠাৎ কলকের সেই ভাইয়া টাকে দেখলাম কী যেন নাম হ্যা আদিব। উনি আমাকে দেখে মুচকি হেসে এগিয়ে এলেন। এসে বললেন
আদিব ভাইয়া: Hey মেডিকেল স্টুডেন্ট বুয়েটে?
আমি: জ্বি ভাইয়া আসলে এমনি ঘুরতে এসছিলাম। ভালো আছেন?
আদিব ভাইয়া: খুব।তুমি?

আমি: জ্বি ভালো? আপনি এখানে? উডবি ইন্জিনিয়ার নাকি?
আদিব ভাইয়া: না না হয়ে যাওয়া ইন্জিনিয়ার।
আমি: ওহ এখান থেকেই নাকি?
আদিব: নাহ ইউকে থেকে
ইউ কে শুনেই বুকটা ধক করে উঠল আদ্রিয়ান ও তো..। ড্যাম আমি আবার ওর কথা ভাবছি? নিজেকে সামলে বললাম
আমি: ওহ আচ্ছা তাহলে এখানে কেন?
আদিব ভাইয়া: আসলে কাল যেই ফ্রেন্ড এর কথা বললাম না তার সাথেই একটা কাজে এসছি আরকি
আমি: ওহ। আপনি কী সারাক্ষণ আপনার সেই ফ্রেন্ড এর সাথেই থাকেন নাকি?
আদিব ভাইয়া: বলতে পারো। আমরা দুজন দুজনকে ছাড়া কিছুই বুঝিনা।
আমি: ওয়াও! খুব ভালো ফ্রেন্ডশিপ আপনাদের?
আদিব: হ্যা। ওরা কারা তোমার ফ্রেন্ড।
আমি: জ্বি।

এরপর একে একে এদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম। এভাবেই সবাই আড্ডা দিচ্ছি হঠাৎ কয়েকটা ছেলে এল এদেরকে ঐ খাটাশ ছেলেটার সাথে দেখেছিলাম। তাদের মধ্যে একজন বলল।
একজন: কীরে এখানে কী করছিস? খুজছি তোকে আর এ কে? আর ওরা কারা।
আদিব ভাইয়া: ও আমার বোন আর ওরা আমার বোনের ফ্রেন্ড।
আরেজন: বাহবা এসেই বোন বানিয়ে ফেললি?
আদিব: কেন কোন সমস্যা (ভ্রু কুচকে)

Infinite Love part 1+2+3

আরেকজন: না না কী প্রবলেম হবে পরিচয়তো করিয়ে দিবি নাকি।
এরপর আদিব ভাইয়া সবার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল। একজনের নাম গালিব, আরেকজনের ইশরাক, আরেকজনের ইমরান আর আরেকজন হৃদয়। আমরা সবাই আড্ডা দিতে লাগলাম
এরমধ্যেই আমাদের মাঝে ওই খাটাশ ছেলেটা এল। তখন না গেয়াল করলেও এখন খেয়াল করলাম। ছেলেটাকে আজকেও অমায়িক লাগছে। রেড টি শার্ট, ব্লাক জিন্স, হোয়াইট কেচ পরেছে, কিছু চুল কপালে পরে আছে, হাউ কিউট, একটা ছেলে এটতাও কিউট হয়? কিন্তু এ এখানে কী করছে? কী চাই টা কী এর? কীছু বলতে যাবো তার আগেই ওই ছেলেটা বলল
ছেলেটা: What is this yaar? তোদের কোথায় কোথায় খুজে বেরাচ্ছি আর তোরা মেয়েদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিস?
আদিব ভাইয়া: তুই আবার কবে থেকে আমাদের খুজতে শুরু করলি সবসময়তো আমরাই তোকে খুজে বেরাই।
ছেলেটা: Whatever… আমার কাজ শেষ এখানে যাবিতো নাকি?

আদিব ভাইয়া: যাবোতো। ওদের সাথে একটু আড্ডা দিয়ে যাই।
আদিব ভাইয়ার আর এনার কথা শুনে বুঝলাম উনিই আদিব ভাইয়ের সেই বন্ধু।
ছেলেটা: What? এখন আবার আড্ডা দিতে হবে?
ইশরাক ভাইয়া: আরে AD থাকনা। এমনিতেও এখনতো আর তোর কোন কাজ নেই।
গালিব: Right থাকনা AD। প্রবলেম কী?
ছেলেটার নাম তাহলে AD? নাহ যেটুকুও সন্দেহ ছিল যে এ আদ্রিয়ান হলেও হতে পারে সেটুকুও আর নেই। এর নাম তো AD। কিন্তু AD কারো নাম হয়? হয়তো শর্ট ফরম এ ডাকে। ফুল ফর্ম কী? কী আবার হবে? আদিত্য, আদনান, আদ্র এরকমি কিছু হবে হয়তো। যাকগে আমার কী?

Infinite Love part 7+8+9