Infinite Love part 7+8+9

Infinite Love part 7+8+9
Writer: Onima

ছেলেটার নাম তাহলে AD? নাহ যেটুকুও সন্দেহ ছিল যে এ আদ্রিয়ান হলেও হতে পারে সেটুকুও আর নেই। এর নাম তো AD। কিন্তু AD কারো নাম হয়? হয়তো শর্ট ফরম এ ডাকে। ফুল ফর্ম কী? কী আবার হবে? আদিত্য, আদনান, আদ্র এরকমি কিছু হবে হয়তো। যাকগে আমার কী? কিন্তু একটা ব্যাপারে চরম আফসোস হচ্ছে এ আদ্রিয়ান নয়, এতো AD. কেন জানি মনে হচ্ছে এ আদ্রিয়ান হলে ভালো হতো খুব ভালো হতো। আমার এই অদ্ভুত ভাবনার কারন আমার নিজেরই অজানা। আমার ভাবনায় ছেদ পড়ল AD এর কথায়।

AD: Okay fine… থাকছি আমি Happy?
All Boys: Supper happy!!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হুহ কত ভাব যেন কোথাকার কোন শাহাজাদা। একবারো আমাদের সাথে পরিচিত হতে চাইলনা। যেনো আমাদের ভালো করেই চেনে হুহ। একটু হেসে কথাতো বলতে পারত আমাদের সাথে। মানুষকে রেস্পেক্ট করতে জানেনা। Mannerless!
আদিব ভাইয়া: চল আমরা হাটতে হাটতে কথা বলি।
আমি: হুম।

আমরা সবাই হাটছি আর কথা বলছি, AD আমার পাশ দিয়ে হাটছে তবে বেশ দূরত্ব রেখে। তবুও কেমন জানি একটা ফিল হচ্ছে। বারবার আড় চোখে দেখছি ওকে কিন্তু ওই খাটাশটা সেদিকে হয়তো খেয়ালই নেই একমনে ফোন স্ক্রল করছে আর হাটছে। হয়তো গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে, বলুকগে আমার কী? I don’t care.
AD: You do..
হঠাৎ AD এর আওয়াজ শুনে চমকে তাকালাম তার দিকে ফোনের দিকে চোখ রেখেই বলেছে কথাটা। কিন্তু আমিতো মনে মনে বলছিলাম কথাগুলো এ শুনলো কীকরে? কীসের জন্য বলল I do. আমি নিজেকে সামলে বললাম
আমি: What?
AD: Nothing..(ফোনে চোখ রেখেই)
আমি: নাহ কিছু একটা বলছিলেন।
এবার উনি হাটা থামিয়ে ফোনের থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালেন। ওনাকে থামতে দেখে আমিও কেন জানি থেমে গেলাম। যার জন্য বাকিরা আগে চলে গেল। AD আমার একটু কাছে এসে হালকা ঝুকে স্লো ভয়েজে বলল
AD: বলেছিলামতো অনেক কিছুই। সব কথা কী শুনেছো আর যেটুকু শুনেছো তা কী বুঝতে পেরেছো?
আমি: মানে? ( বেশ অবাক হয়ে)
উত্তরে কিছুই বললেন না শুধু একটা বাকা হাসি দিয়ে চলে গেলেন।

আমিতো ওনার কথায় বোকার মত কয়েক সেকেন্ড দাড়িয়ে রইলাম তারপর নিজেকে সামলে ওনাদের পেছন পেছন দৌড় মারলাম।
সবাই হাটতে হাটতে মজা করে আড্ডা দিচ্ছি। কিন্তু ওই খাটাশ ছেলেটা একদৃষ্টিতে ফোন দেখছে। পারলে যেনো ফোনের মধ্যে ঢুকে যেত।হুহ কী এমন আছে ফোনে? যত্তসব।হঠাৎ আদিব ভাইয়া AD কে বলল।
আদিব ভাইয়া: কীরে? এত চুপচাপ কেন আছিস তুই? তুই বেশি কথা বলিসনা জানি কিন্তু এমন মৌন ব্রত্র তো পালন করিসনা। কী হয়েছে?
AD: Nothing… তোরা continue কর আমি আছিতো।
ইশরাক ভাইয়া: উফফ। প্লিস এমন সাইলেন্ট মুডে থাকিসনা।
গালিব ভাইয়া: হ্যা ইয়ার তোকে সাইলেন্ট মুডে একদম ভাল্লাগেনা।
হৃদয় ভাইয়া: হ্যা একদমি সব ফাকা লাগে।

হুহ এই খাটাশটাকে এত দাম দেওয়ার কী আছে? কী যেন একটা কথা আছে? হ্যা মনে পড়েছে “যেই না চেহারা নাম রাখছে পেয়ারা”

এবার উনি ওনার সানগ্লাস টা টি শার্ট থেকে বের করে চোখে পরলেন। তারপর বললেন
AD: হুম এবার চল।

আমি তো ওনাকেই দেখছি সানগ্লাসটা চোখে পড়ায় আরো কিউট লাগছে।
মুখে এক্কেবারে হালকা খোচা খোচা দারি উফফ। ছেলেদের এত সুন্দর হতে হয়? তবে কেন জানি এখন আমার মনে হচ্ছে যে উনিও আমায় দেখছে কিন্তু সানগ্লাসের জন্য সিওর হতে পারছিনা।
হঠাৎ উনি কথা বলতে শুরু করলেন।
AD: তোমরা সবাই মেডিকেল স্টুডেন্ট তাইনা?
ইশু: জ্বি ভাইয়া।
AD: ওহহ গ্রেট।

এরপর উনি একে একে সবার সাথে পরিচিত হলেন কিন্তু আমার দিকে তাকালেন ও না। সেটা দেখে প্রচুর রাগ লাগল আমার। এত ভাব কীসের? কী করেছি আমি? যে আমার সাথে কথা বলতে মন চায়না। আমিকি দেখতে এতোটাই খারাপ? লোকে ঠিকি বলে সুন্দর ছেলেদের ভাব বেশি। উনি ঐশি, অরু, ইশু সবার সাথে নানা করম কথা বলছেন আমি বাদে। আমার নিজেকে এখন অন্য গ্রহের প্রানি মনে হচ্ছে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আদিব ভাইয়া আমার সাথে কথা বলতে লাগল। কিন্তু আমার খালি মনে হচ্ছে AD কথার ফাকে ফাকে আমায় দেখছে, কিন্তু ওইযে সানগ্লাস ওইটার জন্যই বুঝতে পারছিনা।

হঠাৎই আমার চোখ গেল ফুচকার দিকে, আমি চেচিয়ে উঠলাম

আমি: আদিব ভাইয়া ফুচকা…!!! আমি ফুচকা খাবো। চলুননা! ( almost লাফাতে লাফাতে)

আমার ফুচকা খাওয়ার জন্য বাচ্চামো দেখে AD চোখের সানগ্লাসটা খুলে চোখ ছোট ছোট করে বলল
AD: তুমি ফুচকা খাবে বলে এভাবে লাফাচ্ছো? Like seriously?
আমি: হ্যা তো?
AD: এই মেয়েও নাকি মেঠিকেলে পরে। Wow! great!! ( দুবার হাতে তালি দিয়ে)
আমি: Hey! Now you are insulting me..
AD: It depends on point of view. যদি তোমার মনে হয় I’m insulting you then তাই। ( আবার সানগ্লাসটা পড়তে পড়তে)
আমি: আপনি কিন্তু…
আদিব ভাইয়া: ওকে স্টপ। তুমি ফুচকা খাবেতো চলো। তোমারাও খাবেতো?
AD বাদে সবাই একসাথে Yeah বলে চেচিয়ে উঠল।

তারপর গেলাম সবাই ফুচকার দোকানে গিয়ে আট প্লেট ফুচকা ওরডার দিলাম। যদিও আমরা নয়জন কিন্তু AD খাবেনা তাই আট প্লেটই ওরডার করা হলো। এই ছেলে এমন কেন? কী এমন হত সবার সাথে ফুচকা খেলে। উনি নাকি খায়না হুহ। আজাইরা ঢং।

ফুচকাওয়ালা মামা এটা দেখে জিজ্ঞেস করলেন
ফুচকাওয়ালা মামা: আপনেরা তো নয়জন। আটটা চাইলেনযে?
আমি: আসলে মামা এখানে একজন অসুস্হ মানুষ আছে যার ফুচকাতেও এলার্জি আছে। ??
আমার কথা শুনে সবাই হেসে দিল, আর উনি সানগ্লাসটা খুলে টি শার্টে ঝুলিয়ে রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। তা দেখে আমি একটু ভয় পেলেও তা প্রকাশ করলাম না। উনি কিছুক্ষন আমায় রাগী চোখে দেখে কিছু একটা ভেবে সবার সামনেই আমার এক্কেবারে কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললেন
AD: তুমিতো would be doctor. আমার ট্রিটমেন্ট তুমিই করে দিও। ?
আমি চোখ বড় বড় করে ওনার দিকে তাকিয়ে একটা কাশি দিয়ে একটু দূরে সরে এলাম।

এরপর আমাদের সবাইকে একে একে ফুচকার প্লেট দিলো। AD ও পাশের দোকান থেকে একটা কোলড্রিংক নিয়ে খেতে লাগল। একাই খাবে তাই বতোলে মুখ লাগিয়েই খাচ্ছেন। কিন্তু বিপদ হল আমি ফুচকা মুখে দেবার পর। একটা ফুচকা খেয়েই আমি জোরে জোরে চেচাতে লাগলাম। সবাই অবাক হয়ে গেল আমার চিৎকারে। আমিতো লাফাচ্ছি চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।

AD তো ছুটে এল আমার কাছে তাড়াতাড়ি আমাকে ধরে চেয়ায়ে বসিয়ে আমার সামনে এক হাটু ভেঙ্গে বসে এক হাতে আমার পিঠ স্লাইড করতে করতে আর আরেক হাতে আমার গালে হাত রেখে ঝাকাতে ঝাকাতে প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে বলল
AD: What happened Oni? Are you okay?
আমি কিছু বলতে পারছিনা, দম আটকে আসছে, চোখ দিয়ে পানি পরছে। সেটা দেখে ওনারো চোখ ছলছল করছে, যা আমার চোখ এড়ায়নি। কিন্তু কেন? উনি কেন এত কষ্ট পাচ্ছে?
AD: কোথায় কষ্ট হচ্ছে বল আমায়। এই কথা বলছোনা কেন? Hey answer me damn it? বলোনা কী হয়েছে? ( উত্তেজিত কন্ঠে)
আমি অনেক কষ্টে বললাম
আমি: পা..ননি..
AD: Oh shit !! এটা এতক্ষণ কীকরে বুঝলামনা? How duffer I am! এইটুকু বুঝতে আমার এত সময় লাগল যে ওর ঝাল লেগেছে! ( পাগলের মত এক নিশ্বাসে বলছে কথা গুলো)

আমি ওনার কাজে কথায় অবাকের ওপর অবাক হচ্ছি, এতটা ডেসপারেট কেন হলেন উনি? কিন্তু আমি কিছু বলতে পারছিনা ঝালের জন্য।

আসলে আমি এক্কেবারেই ঝাল খেতে পারিনা, মানে সামান্য ঝাল আমার সহ্য হয় না, একেবারেই না, প্রচন্ড কষ্ট হয়। তাই ফুটকা, চটপটি এসব খাওয়ার সময় আমি সবসময় ঝাল ছোয়াতেই বারন করি কিন্তু আজ কথার ছলে ফুচকাওয়ালা মামাকে বলতে ভূলে গেছি, আর ঝালের পরিমানটাও বেশিই ছিল,যার ফলসরূপ এমন হল।

উনি কিছু না ভেবে ওনার কিছুটা খাওয়া কোলড্রিংক এর বতোলটা মুখে ঢুকিয়ে দিলেন আমিও ঝালের জন্য কীছু না বলেই খেয়ে নিলাম। কোলড্রিংকটা ঠান্ডা ছিল আর এতে সুগার ছিলো তাই ভালোই কাজ হলো ঝালটাও অনেকটাই কমে গেল। বাহ! খাটাশটার বুদ্ধি আছে। কিন্তু আমার স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগবে।

উনি নিজের হাত দিয়ে আলতো কর আমার চোখদুটো মছে দিলেন তারপর ইশরাক ভাইয়াকে বললেন
AD: ইশরাক একটু পানি আন না প্লিস।

ওনার কন্ঠটা কেমন যেন শোনাচ্ছে, মূহুর্তেই লোকটা পালটে গেল। ইশরাক ভাইয়া পানি আনতে গেল। আমি একবার সবার দিকে তাকালাম সবাই খুব টেনশনে পরে গেছিলো আমায় নিয়ে বেশ ভালোই বুঝলাম। শুধু বুঝতে পারলাম না আমার সামনে বসে থাকা বান্দাকে।

ইশরাক ভাইয়া পানি নিয়ে এল। AD তাড়াতাড়ি বতোলটা নিয়ে আমাকে খানিকটা পানি খাইয়ে দিলেন এর পর হালকা একটু পানি আমার মুখে, গলায় মাখিয়ে দিলেন, তারপর ওনার পকেট থেকে একটা রোমাল বের করে আমার মুখ গলা মুছে দিয়ে সেই রুমালটা আবার পকেটে ভরলেন ওনার কাজে আমিতো পুরাই শকড্ আমার আর ওনার ফ্রেন্ডরা যে অবাক হয়নি তা কিন্তু না। বাট আমার সিচুউয়েশন দেখে ব্যাপারটা অতটা অস্বাভাবিক ভাবে নিলেননা।

মুখ গলা পানি দিয়ে মুছে দেওয়ায় শান্তি লাগছে। আহ। তাই চেয়ারটাতে হেলানদিয়ে খানিকক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখলাম। কিন্তু আজব ব্যাপার এই পুরোটা সময় AD আমার ডান হাত শক্ত করে ধরে ছিলো। একটু ভালোলাগায় চোখ মেলে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসলাম।

ইশু: হায় আল্লাহ। আমরাতো একদমি ভূলে গেছিলাম তুই ঝাল একদমি খেতে পারিসনা।
অর্পি: হ্যা ইয়ার। একদমি খেয়াল ছিলোনা। ইস!
ঐশি: ভাইয়া না থাকলে আজ কী হত কে যানে। কীকরে যে ভূলে গেলাম
আদিব ভাইয়া: এখন ঠিক লাগছে তো?
আমি: Yeeah i’m al-alright..
ইশরাক ভাইয়া: আমরা তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।
গালিব ভাইয়া: হ্যা কী মারাত্নক অবস্হা।
হৃদয় ভাইয়া: ভাগ্যিস AD ব্যাপারটা টেকনিক্যালি সামলেছে।
আমি ওনার দিকে তাকালাম। উনি কিছুই বলছেননা আমার সামনে ওভাবেই হাটু ভেঙ্গে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে তাছে স্হির দৃষ্টিতে। কিন্তু এতোটা শান্ত হয়ে বসে আছেন কেন উনি? এটা ঝড়ের আগের নিরবতা নয়তো? ভেবেই ঢোক গিললাম।

ঐশি: যাক! আল্লাহ বাচাইছে। You are alright.

হঠাৎই উনি দ্রুত উঠে দাড়ালেন। এতক্ষণ ওনার চোখে ভয় আর কষ্ট থাকলেও এখন শুধু রাগ অাছে, লালচে হোয়ে উঠল সুন্দর চোখদুটো।টুলের ওপর আমাদের আটজনের ফুচকার প্লেট রাখা ছিল উনি গিয়ে হাত দিয়ে বারি মেরে সবগুলো প্লেট ফুচকাসহ নিচে ফেলে দিলেন। এতই জোরে আওয়াজ হলো আমরা সব্বাই কেপে উঠলাম। এরপর উনি ফুচকাওয়ালা মামার দিকে তাকালেন। বুঝতে পারলাম ওনার চোখ দেখেই ফুচকাওয়ালা মামার হিশু করে দেবার মত অবস্হা, মামার কাছে গিয়ে উনি যথাসাধ্য ভদ্র তবে শান্তরাগী গলায় বললেন

AD: ফুচকা দেবার সময় কেউ ঝাল টক মশলা কতখানি খাবে সেটা জেনে নেবেন, ব্যাবসার জন্য ভালো।
কথাটা শান্ত ভাবে বলার যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন উনি হয়তো লোকটাকে অসম্মান করতে চায়না তাই এই চেষ্টা, তবে রাগটাকেও হয়তো কন্ট্রোল করতে পারছেননা। কিন্তু ওনার এত রেগে যাবার কারন কী? ঝাল আমি খেয়েছি কিছু হলে আমার হতো,তাতে ওনার কী? উনার মানবতার খাতিরে যেটুকু করার করছেন, in fact তার চেয়ে অনেক বেশিই করছেন। তাহলে এত Over react কেন করছে? যেনো আমি ওনার খুব আপন কেউ! আমার কিছু হলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট যেন উনিই পেতেন। strange!!

তারপর উনি ভীষণ রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেন,এখন শুধু চোখ না ওনার ফর্সা শরীর লালচে হয়ে আছে, এতটাই রেগে অাছেন, ওনাকে এভাবে তাকাতে দেখেইতো আমার আত্না শুকিয়ে গেছে, হাত পা প্রচুর কাপছে। ফুচকাওয়ালা মামা ভয়ে জরোসরো, আমাদের ফ্রেন্ডরা, আর উপস্হিত সকলেই শকড প্লাস ভীত। সকলেই ওনার রাগ দেখে কেপে উঠেছে, আমি মনে মনে দোয়া দুরুদ যা জানি সব পড়ছি, ওনার ওই রাগী চেহারা দেখার সাহস আমার নেই, তাই জামা খামছে নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছি, দাড়িয়ে আছি না জানি আমার ওপর দিয়ে এখন কোন টর্নেডো যাবে..

তারপর উনি ভীষণ রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেন,এখন শুধু চোখ না ওনার ফর্সা শরীর লালচে হয়ে আছে, এতটাই রেগে অাছেন, ওনাকে এভাবে তাকাতে দেখেইতো আমার আত্না শুকিয়ে গেছে, হাত পা প্রচুর কাপছে। ফুচকাওয়ালা মামা ভয়ে জরোসরো, আমাদের ফ্রেন্ডরা, আর উপস্হিত সকলেই শকড প্লাস ভীত। সকলেই ওনার রাগ দেখে কেপে উঠেছে, আমি মনে মনে দোয়া দুরুদ যা জানি সব পড়ছি, ওনার ওই রাগী চেহারা দেখার সাহস আমার নেই, তাই জামা খামছে নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছি, দাড়িয়ে আছি না জানি আমার ওপর দিয়ে এখন কোন টর্নেডো যাবে..

উনি আমার সামনে এসে দাড়ালো, ওনার চোখে মুখে অসম্ভব রাগ স্পষ্ট। আদিব ভাইয়া কিছু বলতে যাবেন উনি রাগী চোখে তাকাতেই আদিব ভাইয়া আর কিছু বললেননা। উনি আমার হাত ধরে এক টানে ফুচকার দোকানে ছাওনির বাশের সাথে লাগিয়ে ধরলেন, বেশ জোরেই ধরেছেন হাতটা, আর বাশের সাথে ধাক্কা লাগায় পিঠেও ব্যাথা পেয়েছি খুব। এরপর আমার ওপর দিয়ে বাশের ওপর তার এক হাত রাখলেন।

আমি ওনার দিকে তাকাতেই উনি বললেন
AD: যেটা খেতে পারোনা সেটা খাও কেন? How could you be so irresponsible damn it?? ছোট তুমি? বাচ্চা? নিজের ভালো মন্দ বোঝোনা? ঝাল তুমি সহ্য করতে পারোনা আবার পেংগুইন এর মত ফুচকা খাওয়ার জন্য লাফাতে থাকো? ঝালে সমস্যা তোমার আছে অন্য কেউ মনে করিয়ে দেবে সেটা? নিজের এটুকু খেয়াল না রাখতে পারলে বাড়ি থেকে বের হও কেন? ঘরে বসে থাকতে পারোনা? ইচ্ছেতো করছে..! Idiot কোথাকার! (বেশ ধমকেই কথাগুলো বলছেন উনি, আর ওনার ধমকে আমি কেপে কেপে উঠছিলাম। )

আমার আঠারো বছরের জীবনে কেউ আমায় এভাবে বকে নি, In fact কেউ কখনো ধমকো দেয়নি, আর ইনি? খুব কান্না পাচ্ছে চোখ দুটো ছলছল করে উঠেছে।

তখনি উনি বাশের ওপর একটা বারি দিয়ে বললেন
AD: Hey, don’t you dare to cry okay? এক ফোটাও পানি যদি চোখ থেকে বের হয় আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা।

ওনার কথায় আমার রেগে যাবার কথা কারন আমার সাথে কেউ এমন ব্যবহার করলে আমি মেনে নেই না, অন্য কেউ হলে এতক্ষনে ধুয়ে দিতাম কিন্তু ওনার ব্যবহারে আমি বেশ ভয় পাচ্ছি। রাগ লাগছেনা তা কিন্তু না কিন্তু এখন ভোয়টাই বেশি লাগছে তাই আমি যথেষ্ট কষ্ট করে নিজের চোখের পানি আটকে রাখার চেষ্টা করছি কিন্তু ফলসরূপ আমার ফর্সা মুখ লাল হয়ে উঠেছে। কিন্তু চোখের পানি কী আটকে রাখা যায়? আমার চোখ পানিতে ভরে উঠেছে, অনেক চেষ্টা করছি আটকে রাখার তখনি উনি বললেন

AD: বললামনা কাদবে না? Stop crying..

আরে ভাঈ চেষ্টাতো করছি! কিন্তু তোমার ওই বিশ্ববিখ্যাত ধমক শোনার পর চোখের পানিকি চোখে থাকতে চায়?

উনি হঠাৎই চেয়ারে জোরে একটা লাথি মেরে হনহন করে ওখান থেকে চলে গেলেন, ওনার লাথিতে তিনটে চেয়ারই পরে গেল, যেটাতে লাথি মেরেছিলেন সেটাতো ফেটেই গেলো। আমি অবাক হয়ে ওনার যাওয়া দিকে তাকিয়ে আছি। বাকি সবাই্ও সেটাই দেখছে।

উনি চলে যাবার পর এতক্ষণ আটকে রাখা চোখের পানি ছেড়ে দিলাম। ঐশি ওরা সকলে মিলে আমাকে ধরল, আদিব ভাইয়ারাও আমার কাছে এল, কান্নার জন্য
কিছু বলতে পারছিনা শুধু কেদেই যাচ্ছি।

ঐশি: Come on oni. এতো কান্না কেন করছিস, কিচ্ছু হয়নি।

ইশু: হ্যা থাম প্লিস। আর কান্না করিসনা।

আদিব ভাইয়া: আ.. I mean AD এর কথায় কিছু মনে করোনা। ও ন্যাচরালি কারো সাথে এমন করে না। আজ ওর কী হল জানিনা।

ইশরাক ভাইয়া: হ্যা ও যথেষ্ট শান্ত একটা ছেলে কিন্তু হঠাৎ এতো হাইপার হলো কেন বুঝতে পারছি না। প্লিস আর কেদনা।

কে শোনে কার কথা আমিতো কেদেই যাচ্ছি।

অর্পি: আসলে ওকে কেউ কখনো এভাবে ধমকায়নিতো তাই একটু ভয় বেশি পাচ্ছে।

আদিব ভাইয়া: হ্যা বুঝতে পারছি। কেনযে ছেলেটা এমন করত গেল। ওয়েট আমি কল করে দেখছি কোথায় গেলো ও।

আদিব ভাইয়া ওনাকে ফোন করলেন অধেক্ষন রিং হওয়ার পর উনি ধরলেন, আদিব ভাইয়া ফোনটা রেখে বললেন

আদিব ভাইয়া: ও বাড়ি চলে যাচ্ছে, আমাদের ওর জন্য ওয়েট কল করতে বারন করল।

আমি এতক্ষন ভয়ে কান্না করলেও এখন রাগে কান্না করছি। খাটাশ, খোবিশ, বান্দর আমাকে শুধু শুধু কতগুলি বকা দিয়ে গেল। Such a irritating man..আমি চোখ মুছে বললাম

আমি: বাড়ি যাবো।

ঐশি: হ্যা ভাইয়া ওকে বাড়ি নিয়ে যাই একটু রেষ্ট করুক।

আদিব ভাইয়া: হ্যা সেটাই ভালো হবেনা চলো তোমাদের পৌছে দেই।

ইশু: তার কোনো দরকার হবেনা ভাইয়া আমরাই নিয়ে যেতে পারব।

আদিব ভাইয়া: Sure?

ঐশি: একদম

ইশারাক ভাইয়া: ওকে তাহলে আমরা আসি।

অর্পি: আচ্ছা।

আদিব ভাইয়া: সাবধানে যেও।

এরপর ভাইয়ারা চলে গেল। আমরাও চলে এলাম বাড়িতে। ওরা অনেকবার চেয়েছিল বাড়ির ভেতর অবধি পৌছে দিতে, কিন্তু ওদের না করেছি কারন ওদের দেখলে বাড়ির সবাই নানা প্রশ্ন করবে, যার উত্তর দেবার ইচ্ছে আমার নেই।

বাড়িতে ঢোকার পরেই আম্মু সামনে পরল
আম্মু: এত দেরী করে ফিরলে যে?

আমি: একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম আম্মু।

আম্মু: কোথায় গিয়েছিলে?

আমি: বুয়েট ক্যাম্পাস।

আম্মু: ওখানেতো বেশিরভাগই ছেলে ওখানে গেছো কেনো?

আমি: এক্চুয়ালি মেডিকেলের ছেলেদের পছন্দ হচ্ছিলনা, তেমন হ্যান্ডসাম কেউ নেই, তাই বুয়েটে গেছিলাম তোমার জামাই খুজতে, হ্যাপি?

আম্মু: তা পেলে?

কিছু না বলেই চলে এলাম ওখান থেকে মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। এমন কেন আম্মু? আরে মেডিকেলে কী ছেলে নেই নাকি? আজব! সবসময়ই এমন উলটা পালটা প্রশ্ন করেন।

রুমে গিয়ে এসি অন করে বালিসে হেলান দিয়ে শুয়ে আছি। কিচ্ছু ভাললাগছেনা। How is he? মাত্র দুদিন ধরে দেখেছে আমাকে, এত অধিকারবোধ কোথা থেকে আসে? এরমধ্যেই আপি এসে ঠিক আমার পাশে বসল, যাক এখন একটু শান্ত হতে পারব, এই মেয়েটাই আমাকে শান্ত করার একমাত্র মেডিসিন। আমি ঝট করে আপির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পরলাম।

আপি: কী হোয়েছে সুইটহার্ট? (মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)

আমি: কী হবে?

আপি: কিছু না হলে এভাবে আমার কোলে মাথা রাখতিনা। তাই বলে ফেল।

উফ এর কাছে কিছুই লুকোনো যায়না সবই বুঝে যায়। অগত্যা আপিকে শুরু থেকে সব বললাম। সব শুনে আপি বেশ আজব ভাবে মিনিট খানেক আমার দিকে তাকিয়ে আছে, ধুর বাবা ভাল্লাগেনা এর আবার কী হলো? তাই নিরবতা ভাঙতে আমিই বললাম

আমি: ওহ আপি কী হল?

আপি: আচ্ছা ওই ছেলেটাকি খুব লম্বা? (অন্যমনষ্ক হয়ে)

আমি: হ্যা ছয় ফিটের একটু উপরে হবে।

আপি: ফর্সা? ( চিন্তিত হয়ে)

আমি: জ্বি ইয়েস। বেশ ফর্সা।

আপি: চুলগুলো কেমন? (আমার মাথা ওর কোল থেকে উঠিয়ে)

আমি: ব্রাউন তবে হাইলাইট না। কেন?

আপি: ঠোটটা?

আমি: এগুলা কী জিজ্ঞেস কর? আর কেন করতেছো?

আপি: বলনা।

আমি: চিকন, বেবি পিংক অনেকটা। কেন বলবেতো?

আপি: চোখ দুটো মায়া ভরা ? নাক টা খারা? খুব হালকা হালকা খোচা দাড়ি? (উত্তজিত হয়ে)

আমিতো অবাক। এই মেয়েতো একটা ডিসক্রিপশন বললে তিনটা বলে দিচ্ছে। কেসটা কী?

আপি: বলনা?

আমি: হ্যা তো?

এবার আপির সেই বিখ্যাত দুষ্টুমি মাখা হাসি। আর এবারো মেয়েটা কিছুই না বলে রাবতা গানের শিশ বাজাতে বাজাতে চলে গেল। অসহ্য হচ্ছেটা কী?

সন্ধ্যায় স্নাকস খাওয়ার সময় আজকেও সবাই আদ্রিয়ানকে নিয়ে আলোচনা করছে।

আব্বু: আদ্রিয়ান ছেলেটা আসলেই চমৎকার। সবে দেশে এসেছে কদিন ধরে এসেই কাজে লেগে পড়েছে। দেশে অলরেডি ল্যাব বানিয়ে ফেলেছে, দেশের ইন্জিনিয়ারিং কলেজ গুলো থেকে স্টুডেন্ট নিচ্ছে ওর কাজের হেল্পের জন্যে।

আম্মু: সত্যিই আজকাল এমন ছেলে পাওয়া কষ্ট।

চাচ্চু: আবার কবে আসবে ও?

আব্বু: বলেছে তো ফ্রি টাইম পেলেই আসবে।

হুহ ফ্রি টাইম পেলে আসবে। কী ব্যস্ত মানুষরে আমার।

কাব্য: ভাইয়া তো বলেছে নেক্সট যেদিন আসবে আমায় ব্যাটিং এর কিছু স্পেশাল টেকনিক শেখাবে।

আপি: তুই থামবি। খালি ক্রিকেট ক্রিকেট, যা গিয়ে পরতে বস।

আমি খালি নিরব দর্শকের মত চুপচাপ এই আদ্রিয়ান নামক প্যাচাল শুনছি।

সুলতানাপ্পি: কী হয়েছে অনিমা? কিছু বলছনা যে।

আমি: কিছু বলার মত পাচ্ছিনা তাই।

অর্নব ভাইয়া: মিস বাচালনি বলার মত কিছু পাচ্ছেনা? Like really? Wow.

আমি: ভাইয়া…

অর্নব ভাইয়া: ওকে সরি সরি! খা তুই খা।

উফফ এই ছেলেটার পেচালিকী সারাজীবন শুনব? দেখতে পাবোনা কোনদিন? থাকে কই এই ছেলে একটু বাড়িতে এলেওতো পারে অসহ্য।

রাতে শুয়ে শুয়ে একবার আদ্রিয়ানের কথা ভাবছি আরেকবার AD এর কথা। একজনকে দেখার কথা, সে কেমন হবে তার আচরণ কেমন হবে তা ভাবছি, আরেকজনের আচরনের হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছি। আচ্ছা যেই আমি কখনো কারো ব্যাপারে নূন্যতম ইন্টারেস্ট দেখাতামনা সেই আমি একসাথে দুটো ছেলের কথা ভাবছি ভাবা যায়?

কিছুক্ষন পর আপি এসে শুয়ে পরল আমার পাশে।
.
আমি: আজকে এখানে শোবে?
.
আপি: হুম তোমার সাথে গল্প করতে মন চাইল।
.
আমি: ভালোই হয়েছে আমারও ভালো লাগছেনা। গল্প করলে ভালো লাগবে।
.
আপি: তা কার কথা ভাবছিলে? আদ্রিয়ান নাকি AD? ( ভ্রু নাচিয়)
.
আমি: কারো কথাই না। (উঠে বসে)
.
আপি: আমার কাছে আর কী লুকাবে বলো? ( ইনিও উঠে বসলেন)
.
আমি: আসলে দুজনের কথাই ভাবছি। আজব ব্যাপার কী জানো?
.
আপি: কী? ( কৌতুহল নিয়ে নরেচরে বসে)

আমি: ওদের দুজনের কথা ভাবতে ভাবতে একসময় দুজনকেই গুলিয়ে ফেলি, একজনকে আরেকজনের সাথে মিলিয়ে ফেলি। এমন মনে হয় ওরা যেনো একি অংকের দুটো আলাদা সমীকরন, কিন্তু কিছুতেই হিসেবটা মেলাতে পারছিনা।
.
আমি: হয়তো এই অংকের সুত্রপাত যে করেছে সেই লোকটাই ভীষন জটিল?
.
আমি: মানে?
.
আপি: কিছুইনা এমনিই বললাম আরকি। ঘুমিয়ে পর, রাত হয়েছে।
.
আমি: হ্যা সেই ভালো। আমার বয়েই গেছে ওদের কথা ভাবতে।

আপি: হইছে থামো। একদিন এর কথা ভেবেই দিন শুরু হবে আর রাত শেষ হবে। (মুচকি হেসে)
.
আমি: কী? ( বুঝতে না পেরে)
.
আপি: Just kidding…Good night!
.
আপি: Good night! (অবাক হয়েই)

আপি শুয়ে পড়ল আর আমিও কিন্তু আমার মাথায়তো খালি ওই দুজনের কথাই ঘুরছে। কিছু একটাতো আছে যা আমি বুঝতে পারছিনা। কিন্তু সেটা কী? আর আপিই এরকম কেন করছে? কিছু কী জানে আপি?
আমিওনা কী ভাবি আপি কিকরে জানবে? আর জানলেই আমাকে বলবেনা কেন? ভাল্লাগেনা কিছু, এত প্রশ্ন মনে রেখে থাকা যায়।

হঠাৎই AD এর আজকের ব্যাবহারটা নিয়ে ভাবছি। আচ্ছা উনি আমাকে অনি বলে ডাকছিল কেন? আমার নামতো অনিমা। অনি নামেতো আমাকে আমার ফ্যামিলি আর ফ্রেন্ডরা ছাড়া কেউ ডাকেনা। ওনার সামনে তো কেউ আমার নাম ধরে ডাকেনি। হ্যা আদিব ভাইয়া ডেকেছিল কিন্তু তাতো অনিমা বলে। উফফ কিচ্ছু ভাবতে পারছিনা।
কিন্তু ওনার এত ওভার রিয়াক্ট করার কী ছিলো? ঝালই তো খেয়েছিলাম তাতে ওর কী? ওখানেতো আদিব ভাইয়ারাও ছিলো কই তারাতো এমন করেনি, তাহলে ওনার এত পেরা কীসের?
একটু সেবা করেছে বলে? কে করতে বলেছিল সেবা? না করলেই হতো।
তাহলে কী আমার জন্যে ওনার রুমালটা নষ্ট হয়েছে বলে এভাবে বকে শোধ নিলেন? আমিকি ওনাকে বলেছি নাকি যে রুমাল দিয়ে আমার মুখ গলা মুছে দিতে? যত্তসব।
ওহ বুঝেছি, নিশ্চই ওনার সাধের কোলড্রিংটা আমায় খাওয়াতে হয়েছে তাই এভাবে বকেছে? কনজুস! বললেই পারত কিনে দিতাম একটা? হুহ, একটা কোলড্রিংক এর জন্য এত বকা…
ওহ বুঝেছি, নিশ্চই ওনার সাধের কোলড্রিংটা আমায় খাওয়াতে হয়েছে তাই এভাবে বকেছে? কনজুস! বললেই পারত কিনে দিতাম একটা? হুহ, একটা কোলড্রিংক এর জন্য এত বকা…

ভোর রাতের দিকে ফোনের রিংটনে ঘুমটা হালকা ভেঙ্গে গেল..

উফফ! এতো রাতে কোন ছাগল ফোন করে ইরিটেড করছে আল্লাহ মালুম। ফোন বাজছে তো বাজছেই। বাজুকগে তাতে আমার কী? ঘুম is more important. No no most important. So ঘুমানোটা বেশি দরকার। তাই যে ইচ্ছে ফোন করতে থাক আমিতো ধরছিনা।

আরেহ, এতো থামার নামই নিচ্ছেনা। কোন উগান্ডা এত ভোর বেলা নিজেও ঘুমোচ্ছেনা আমাকেও ঘুমোতে দিচ্ছেনা। ধরবোনা আমি। হুহ। আমি অর্ধেক জাগনা অর্ধেক ঘুমন্ত অবস্হায় আছি। মানে ঘুমের ঘোরেই হালকা হালকা সবই শুনতে পাচ্ছি। হঠাৎই আপি বলল
.
আপি: অনি এই অনি ফোন বাজছে তোমার ধরো।
.
আমি: হুম? (ঘুমের ঘোরে)
.
আপি: কী হুম। ফোন বাজছে। May be important…ধর! (একটু জোরে)
.
বলেই আপি ওপাশ ফিরে ঘুমিয়ে পরল।উফফ শান্তি নাই। এক ড্রাম বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিফ করে বললাম

আমি: হ্যালো আসসালামুয়ালাইকুম ( ঘুম পুরো কাটেনি তাই ভাঙা গলায়)
.
কিন্তু ওপাশ থেকে কেবল জোরে জোরে নিশ্বাসের আওয়াজ এল। কিন্তু আমার তো এসব নিয়ে ভাবার সময় নেই আমার তো ঘুম পাচ্ছে খুব, তাই আবার বললাম
.
আমি: কে? কথা বলছেন না কেন (হাই দিতে দিতে)

ঘুমের ঘোর‍েও এটুকু বুঝতে পারলাম আমার কথা শুনে ওপাশ থেকে নিশ্বাসের শব্দ আরো বেরে গেল। দূর ভাল্লাগেনা আমি ওভাবেই কানে ফোন রেখে কখন ঘুমিয়ে গেলাম নিজেও জানিনা।
.
সকালে আপি ডাকে ঘুম ভাঙল।
.
আপি: অনি তাড়াতাড়ি ওঠো। মেডিকেলে লেইট হোয়ে যাবে নইলে।
.
আমি: হুম উঠেছি।
.
আপি: তখন কে ফোন করেছিল?
.
আমি: কখন?
.
আপি: ভোরবেলা।

হঠাৎ মনে পড়ল সেই কলটার কথা তাইতো। Who was that? কে ছিল? তাড়াতাড়ি ফোন খুজতে লাগলাম, পেয়েও গেলাম, মাথার সাইডেই পরে ছিল, ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম ফোনটা এখনো কাটে নি লাইনে আছে! তাড়াতাড়ি কানে নিয়ে বললাম
.
আমি: হ্যালো?
.
সাথে সাথেই ফোনটা ওপাশ থেকে কেটে দিল। কী রে বাবা? এসব পাবনা মেনটাল হসপিটালের পেসেন্ট সব আমার কপালেই জোটে? উফফ!!
.
ও মাই আল্লাহ! ফোন করেছিল ভোর চারটায় একন বাজে পনে আটটা এতক্ষন লাইনটা কাটেনি? স্ট্রেন্জ!!
.
আপি: কে ছিল?

আমি: Don’t know api.. সেইযে ফোন দিয়েছিল এখন লাইন কাটল, কিন্তু একটা কথাও বললনা পাগল নাকি?
.
আপি: বাদ দাও! যাও ফ্রেশ হয়ে রেডি হোয়ে নিচে এসো।
.
আমি: হুম।
.
এরপর আর ঐ ফোন নিয়ে ভাবিনি। ফ্রেশ হয়ে একটা হলুদ রং এর থ্রিপিছ বের করে পরে নিলাম। চুলগুলো ছেরে দিলাম। কানে হলুদ পাথরের ছোট ঝুমকা পরে as usual না সেজেই চলে গেলাম নিচে।

আমি: আম্মু জলদি নাস্তা দাও খুদা লাগছে।( চেয়ারে বসে)
.
আম্মু: তোর আবার খুদাও লাগে? (খাবার আনতে আনতে)
.
আমি: কেন অামিকি এলিয়েন নাকি?
.
কাব্য: তার চেয়ে কম কিছু না।
.
আমি: I’m not talking to you..
.
কাব্য: But I’m talking to you.
.
আপি: হইছে থামা তোদের টম এন্ড জেরি শো।

আম্মু খাবার সার্ভ করল আর আমি ঝটাপট খেয়ে সবাইকে বাই বলে বেরিয়ে গেলাম। তারপর একটা সি এনজি নিয়ে রওনা হলাম।
.
চলার পথে সি এন জি এর পেছন পেছন কালো একটা গাড়ি দেখে মনে হচ্ছিল আমাকে ফলো করছে গাড়িটা। দূর কেউ আমাকে কেন ফলো করবে? আমিকি স্পেশাল কেউ নাকি? ইদানিং যে মাথায় কী ঘুরছে আল্লাহ নোস্।
.
মেডিকেলে পৌছে গেলাম, যথারীতি আজকেও লেট কিন্তু ভাগ্য ভালো ক্লাস শুরু হয়নি। গিয়ে ক্লাসে আমার প্রাণপ্রিয় বান্ধবীদের কাছে বসলাম।
.
ঐশি: এইতো মহারানী নিজের ফরমে ব্যাক করছে..

ইশু: Yeah. She’s ten minutes late…
.
অর্পি: এ শোধরাবার না।
.
আমি কিছুই না বলে একটা হাই তুললাম জানি কিছু বলে কোন লাভ নাই। তাই চুপ থাকাই বেটার।
.
এরপর একজন ডক্টর এলো ক্লাস করাতে, ক্লাস শেষে অর্পি বলল
.
অর্পি: ইয়ার কী দেখতে স্যারটা, আমিতো ক্রাশ খাইলাম।
.
আমি: হুহ। তুই আর তোর ক্রাশ। কখনো কোথায় কার ওপর পরে আল্লাহ মালুম।
.
ঐশি: তা অনি ম্যাডাম আপনি আপনার রেকর্ড কবে ব্রেক করবেন?
.
আমি: সে তো কবেই ব্রেক হয়ে গেছে (আনমনে)
.
সবাই: What?(চেচিয়ে)

আমি: আরে! আমি তো ক্লাসে ঠিক টাইমে না আসার রেকর্ডের কথা বলছিলাম, কাল ব্রেক হলো না সেটাই আরকি
.
ঐশি: তাই বল। আমি ভাবলাম ক্রাশ এর কথা বলছিস।
.
আমি: আমি ওসব আনহাইজিনিক জিনিস খাই না। আমি স্বাহ্য সচেতন।
.
ইশু: হইছে! যেইদিন কারো ওপর ক্রাশ খাবি, সেদিন এমন ভাবে খাবি যে জীবনেও আর তাকে ছাড়তে পারবি না।
.
আমি: দেখা যাবে।
.
ইশু: এটাই হবে বাবু।
.
ক্লাস শেষে সবাই বেরিয়ে পড়লাম লক্ষ কার্জন হল।

রাস্তার সাইড দিয়ে হাটছি ঠিক তখনি দেখলাম রোডের সাইডে চায়ের দোকানে একটা জিপের কাছে আদিব ভাইয়ারা দাড়িয়ে আছে।
.
হ্যা সাথে ওই হনুমানটাও আছে। আজকে নীল শার্ট আর কালো জিন্স পরেছে, বরাবরের মত চুলগুলো কিছুটা কপালে পরে আছে, হাতে কালো রং এর ঘরি, পায়ে ব্লাক সু। ওয়াও! কিন্তু আমিতো ফিদা হইনি একদমি হইনি।
.
আদিব ভাইয়াকে দেখে ওদিকে যাওয়ার ইচ্ছে জাগলেও ওই খাটাশটাকে দেখে সেই ইচ্ছেটা আর নেই তাই দেখেও না দেখার ভান করে হাটছিলাম।
.
কিন্তু আমার সাধের বান্ধবীরা থাকতে কী তা হতে পারে? হঠাৎই অর্পি বলল
.
অর্পি: আরে ওই ভাইয়াগুলা না?
.
আমি: তো? এটা পাবলিক প্লেস যে কেউ থাকতে পারে। এতো এক্সাইটেট হবার কী আছে?
.
ঐশি: চল দেখা করে আসি।

আমি: কেন? তোর কোন কালের আত্নীয় লাগে?
.
ইশু: উফফ এমন কেনোরে তুই?
.
হঠাৎই আদিব ভাইয়া আমাদের দেখে হাত নারল, অগত্যা এখন দেখা করতেই হবে। মুচকি একটা হাসি দিয়ে এগিয়ে গেলাম ওদিকে।
.
আদিব ভাইয়া: কী ব্যাপার আজ এদিকে।
.
আমি: আসলে ভাইয়া কার্জন হলে যাচ্ছিলাম।
.
আদিব ভাইয়া: Wow! What a coincidence!! আমরাও তো ওখানেই যাবো। SE ( software engineering) ডিপার্টমেন্টে।
.
ইশু: কেন?
.
আদিব ভাইয়া: আসলে..

AD: ওই এখানেই কথা বলবি নাকি এগোবি?
.
আজব! বেচারাকে কথাটাও শেষ করতে দিলনা খাটাশ একটা।
.
আদিব ভাইয়া: হ্যা চল আর তোমরাও চল এক যায়গাতেই তো যাবো সব।
.
এই খাটাশটার সাথে যাবোনা হুহ, কালকে সবার সামনে কীভাবে ধুয়ে দিল আমায়। রেগে আছি আমি।
.
আমি: না ভাইয়া আমাদের একটু কাজ আছে ওটা সেরে যাবো।
.
আদিব ভাইয়া: ওহ তা..

ইশু: ঐ মিথ্যে বলছিস কেন? না ভাইয়া আমাদের কোন কাজ নেই আপনি চলুন।
.
আমি রেগে ইশুর দিকে তাকালাম। তখনি খাটাশটা I mean Mr. AD মুখ খুললেন।
.
AD: বাচ্চাদের একা একা চলতে নেই, বিপদ থাকে।
.
What does he mean? কথাটা আমায় বলল? বলুকগে, কিন্তু আমিতো ওনার সাথে কথাই বলবনা হুহ।
.
আদাব ভাইয়া: ভা.. I mean অনিমা,চলো। একসাথেই যাই যাচ্ছিতো এক জায়গাতেই।

কী আর করার গেলাম ওনাদের সাথেই। কার্জনের গেইটের সামনেই ফুচকা দেখলাম। দেখেই খাওয়ার জন্য চিৎকার করতে ইচ্ছে হল আর AD এর ভাষায় পেঙ্গুইন এর মত লাফাতে। কিন্তু এখন ওনার সামনে ফুচকা খাবার কথা বলার সাহস আমার নেই। আর চোখে ওনার দিকে তাকালাম ওমা উনিও আমার দিকে আর চোখে তাকিয়ে আছেন। থাক তাতে আমার কী? আমি সমনের দিকে হাটা দিলাম।
.
কার্জনের ভেতরে আমরা একটা জায়গায় বসলাম আর ওনারা কোন কাজে গেল। যাওয়ার আগে বলে গেল আমাদের ওয়েট করতে।

বেশ অনেক্ষন পর ওনারা বেড়িয়ে এল তারপর পুরো কার্জন হলটা ঘোরালো। কিন্তু AD বাদে আজকে ওনারা সবাই আমাকে আলাদা ভাবে ট্রিট করছে, জেনো আমি সম্পর্কে ওনাদের কাছে সম্মনীয় কেউ, আদিব ভাইয়া আর AD বাদে আপনি বলছে আমাকে সবাই, কিন্তু ঐশিদের ঠিকি তুমি বলছে। আর এই পুরোটা সময় AD সাহেব সবার সাথে কথা বললেও আমার সাথে বললেনা। কি লোকরে বাবা কালকের জন্য একটা ছোট করে সরি ও তো বলতে পারত। উলটে ভাব দেখালো হুহ।

বাইরে বেরোতে যাবো আমরা হঠাৎ একটা বাইক সাইড দিয়ে গিয়ে আমার ওরনা ধরে টান মারল, বাইকার লোকটাযে ইচ্ছে করে করেছে তা বোঝাই গেল। কিন্তু আমার ওরনাটা সেপটিবিন দিয়ে লাগানো লাগানো ছিলো যার ফল সরূপ ওরনাটা আমার গায়ে থাকলেও আমি পরে গেলাম আর ঘারের কাছ দিয়ে সেপটিভিন এর খোচায় খানিকটা কেটে গেল।
.
AD চিৎকার করে বলল
.
AD: ঐশর্য ওকে সামলাও!
.
কথাটা বলেই ওখানে তিনচারটা বাইক পার্ক করা ছিল, আর দুজন বাইকের মালিক সেখানেই ছিলো, তাদের একজনকে বলল
.
AD: Give me the key! (চিৎকার করে)

লোকটা হেবলার মত তাকিয়ে রইল সেটা দেখে AD হাত থেকে চাবিটা ছো মেরে নিয়ে ঝড়ের বেগে বাইকটা চলে গেল ওই বাইকটার পিছে।কী জোরে গেলোরে বাবা।
.
ওরা আমাকে তুলে এক বেঞ্চে বসালো। বাট কেউ খেয়াল করেনি আমার ঘারের দিকে একটু কেটে গেছে। আমিও বলিনি ওদের।
.
ইশু: আচ্ছা ভাইয়া কোথায় গেল?
.
আদিব: শিক্ষা দিতে।
.
ঐশি: মানে?
.
বদলে আদিব ভাইয়া কিছুই বললোনা খালি হাসল।

আধ ঘন্টারো বেশি সময় পর AD এলো। লোকটাকে তার বাইক ফিরিয়ে দিল।
আমি অবাক হয়ে ওনাকে দেখছি, শার্ট ঘামে ভিজে গেছে, শার্টের বেশ কয়েকটা বোতাম খোলা, হাতা এলোমেলো ভাবে ফোল্ড করা, কলারটা উচু করা, চুলগুলো এলোমেলো, চোখ লাল হয়ে আছে, ডান হাত হালকা ছিলে গেছে, হালকা রক্ত পরছে, এ কী করে এসছে? এমন লাগছে কেন? কী করতে গেছিলো উনি?

Infinite Love part 10+11+12