জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১১ || রোমান্টিক ভালবাসার গল্প

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১১
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

রিখিয়া একরাশ অস্বস্তি নিয়ে জ্যাকেটটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিল। প্রায় মধ্যরাত এখন। প্রচন্ড ঠান্ডা পরেছে। লোকজনের তেমন ভীর না থাকলেও স্টেশন ফাঁকা নয়। বিহান বা রিখিয়া কেউ কিছুই বলছেনা। রিখিয়া এখনও খাওয়া শুরু করেনি। বিহান খেতে খেতে বলল,
” শীতের রাতে গরম গরম পরোটা আর ডিম ভাজা। আহা!”
এরপর রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
” একি! তুমি খাচ্ছো না কেন? ঠান্ডা হয়ে গেলে ভালো লাগবে না।”
রিখিয়ার বেশ বিরক্ত হলো। তুর্বীর টেনশনে ওর মাথা ছিড়ে যাচ্ছে আর এই ছেলে খাওয়া নিয়ে পরেছে। রিখিয়া ভ্রু কুচকে বলল,

” আমার কতটা চিন্তা হচ্ছে আপনি বুঝতে পারছেন? আমার বান্ধবীকে পাওয়া যাচ্ছেনা। বুঝতে পারছেন আপনি?”
” আরে ডোন্ট ওয়ারি শী ইজ ইন সেফ হ্যান্ড”
বিহান আনমনে বলে ফেলল কথাটা। রিখিয়ার বিহানের কথাটা ঠিকভাবে ধরতে পারল না। তাই জিজ্ঞাসু কন্ঠে বলল,
” কিছু বললেন?”
” না। তাড়াতাড়ি খাও। আবার খুঁজতে হবে তো নাকি?”
রিখিয়া এবার রাগী কন্ঠে বলল,
” আমরা পুলিশ স্টেশনে কেন যাচ্ছিনা?”
” তোমার বান্ধবী বাচ্চা নয়, এডাল্ট একটা মেয়ে। আর কয় ঘন্টা হয়েছে ও নিখোঁজ? লজিক দিয়ে কথা বলো ভাই! এখন কথা না বারিয়ে চুপচাপ খাও।”
রিখিয়া মুখ গোমড়া করে খেতে শুরু করল। বিহান আড়চোখে একবার তাকাল রিখিয়ার দিকে তারপর গলা ঝেড়ে বলল,
” আচ্ছা, আমিতো আছি। ঠিক পেয়ে যাবো চিন্তা করোনা।”

রিখিয়া উত্তর না দিয়ে চুপচাপ খেতে লাগল। খাওয়া শেষ করে ওরা ওখানেই বসল কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতে। এরমধ্যেও রিখিয়া কয়েকবার তুর্বীকে কল করে ফেলেছে। কিন্তু ফোন বন্ধ। রিখিয়া কিছু না বলে চুপ করে আছে। কিছুক্ষণ পর বিহান খেয়াল করল রিখিয়ার চোখ ছলছল করছে। বিহান রিখিয়ার কাঁধে হাত রাখতেই রিখিয়া কেঁদে দিল। কেন জানিনা বিহনের রিখিয়ার কান্না একেবারেই সহ্য হচ্ছেনা। মেয়েটার সাথে এই নিয়ে মোট চারবার দেখা হল। এই অল্প সময়ে ওর হাসি বা কান্নায় তো বিহানের কিছু যায় আসার কথা না। তাহলে কেন এমন হচ্ছে? এই অনুভূতি কেন? ও রিখিয়ার দিকে ঘুরে বসে আলতো হাতে ওর চোখ মুখে দিল। রিখিয়া রিতীমত অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বিহানের দিকে। বিহান ছোট্ট এক শ্বাস ফেলে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” এভাবে কাঁদলে একটু পর স্টেশনের সবাই এসে আমাকে বেঁধে পেটাবে। ভাববে তোমার সাথে উল্টোপাল্টা কিছু করেছি। তোমার বোকামির জন্যে একবার সারারাত লকাপে কাটিয়েছি। এবার কী মার খাওয়াবে?”
রিখিয়া মুখ ফুলিয়ে একপলক বিহানের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। সেদিন না হয় একটা ভুল করেছিল, তাই বলে এভাবে লজ্জা দিতে হবে? বিহান বাঁকা হেসে রিখিয়ার দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বলল,
” জানো? লজ্জা পেলে তোমার গাল দুটো পুরো লাল লাল হয়ে যায়? টমেটো টাইপ।”
রিখিয়া চোখ বড় বড় করে তাকাল বিহানের দিকে। বিহান হেসে চোখ টিপ মারল। এতে তো রিখিয়ার একেবারে বিষম খাওয়ার যোগার। কিছুক্ষণ অদ্ভুত চোখে বিহানের দিকে তাকিয়ে থাকার পর ওর একটু হাসি পেল। হাসতে নিয়েও নিজেকে কন্ট্রোল করে নিল। বিহান সেটা খেয়াল করে বলল,

” আ-আ-আ স্মাইল, স্মাইল। এটা ঠিক না, তুমি হাসছিলে। হাসো প্লিজ। আরে স্মাইল না!”
রিখিয়া এবার আর হাসি আটকে রাখতে পারল না। মুখের ওপর হাত রেখে হেসে দিল। বিহানও হাসল। রিখিয়া হাত নামিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
” আপনি সত্যিই পাগল।”
” ব্রো ও সেটাই বলে।”
” ব্রো কে?”
” আমার ভাই, বন্ধু, গার্ডিয়ান সব।”
রিখিয়া অবাক হল কারণ ও আন্দাজ করতে পেরেছে কার কথা বলছে । বাবা-মা কে ছেড়ে সমবয়সী একজনকে গার্ডিয়ান বলছে? কেন? কিছু একটা ভেবে শিউর হতে বলল,
” সেদিন থানায় আপনার সাথে যেই ছেলেটা ছিল সে?”
” হুম।”
রিখিয়া মুচকি হেসে বলল,
” খুব ভালোবাসেন তাকে?”
” বাসতে বাদ্ধ। কারণ ও আমাকে আমার চেয়েও বেশি ভালোবাসে।”
” আপনার বাবা-মা?”
বিহান চুপ হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল,
” চল, এগোনো যাক?”
বিহান যে রিখিয়ার কথা এড়িয়ে গেল সেটা রিখিয়া বুঝতে পেরেছে। কিন্তু কী করবে? কারো ব্যাক্তিগত জীবণ নিয়ে অতিরিক্ত আগ্রহ দেখানোর মত ম্যানারলেস ও নয়। আর হওয়া ঠিকও না।

সৌহার্দ্য ওয়াসরুমে গেছে। তুর্বীর মনে হল এটাই বেস্ট টাইম পালানোর। এতক্ষণ তো সৌহার্দ্য পুরো চোখে চোখে রেখেছে ওকে। ওকে ছেড়ে দেওয়ার শর্ত একটাই যা করেছে তার জন্যে সরি বলতে হবে, আর প্রমিস করতে হবে ওকে আর এরকম জ্বালাবে না। কিন্তু তুর্বী কী এত সহজে মেনে নেওয়ার মেয়ে? ওর একটাই কথা ও রাজি হবেনা। এই S.R. এর ভয়ে তো একেবারেই না। গায়ের জোরে একবার পালাতে গিয়েছিল কিন্তু সৌহার্দ্য সাথে পেরে ওঠে নি। তাই এখন এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়না ও। তুর্বী ধীরপায়ে উঠে দাঁড়িয়ে টি-টেবিলের ওপর থেকে ছুরিটা নিয়ে নিল সেফটির জন্যে। দরজার কাছে গিয়ে দেখল দরজাটা লক করা। কয়েকবার ঠেলে, ধাক্কা দিয়েও কোন লাভ হল না। ও দরজার একটা লাথি মেরে বলল,

” দূর! লক করে রেখে গেছে।”
প্রচন্ড রাগ লাগছে ওর। রাগে ছুরিটা দিয়ে দরজায় অকারণেই আঘাত করল কয়েকবার।
” শুধু শুধু আমার দরজার বারোটা কেন বাজাচ্ছো?”
তুর্বী চমকে পেছনে তাকালো। তাকিয়ে দেখে সৌহার্দ্য দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আছে। মাস্ক পরে থাকায় চেহারার এক্সপ্রেশন দেখতে পাচ্ছেনা। সৌহার্দ্য তুর্বীর দিকে আসতেই তুর্বী ছুরিটা সৌহার্দ্যর দিকে তাক করে বলল,
” দেখুন। আমাকে যেতে দিন হ্যাঁ? নইলে কিন্তু…”
সৌহার্দ্য দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
” না হলে?”
” ছুরি চালিয়ে দেব কিন্তু।”
” এটা ছাড়া আর কিছু পারো?”
তুর্বী কিছু বলল না কিন্তু ছুরিটা আরো এগিয়ে ধরল। তুর্বীর ছুরিকে তোয়াক্কা না করে সৌহার্দ্য এগোতে এগোতে বলল,
” তোমার কী সত্যি মনে হয় তোমার এসব সিলি ট্রিক্ট কোন কাজের?”
বলে তুর্বীর হাত ধরে ছুড়িটা নিয়ে ওকে টেনে এনে আবার বেডে বসিয়ে দিল। তুর্বী একরাশ বিরক্তি নিয়ে পা উঠিয়ে বসে বলল,

” আপনি আমায় ছাড়বেন কী না? সেটা বলুন আগে।”
সৌহার্দ্য আলসেমি ঝেড়ে তুর্বীর পাশে বসে বলল,
” আগে আমি যা বলেছি তা মেনে নাও। ছেড়ে দেব।”
” কখনই না।”
” তাহলে এভাবেই থাকো।”
বলে সৌহার্দ্য আবার ফোন স্ক্রোলিং এ মনোযোগ দিল। তুর্বী চোখ মুখ কুচকে বিরক্তি নিয়ে বসে আছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে আড়চোখে তাকাল সৌহার্দ্যর দিকে, গলাটা একটু ঝেড়ে বলল,
” তা খোমাটা একটু দেখালে কী হয় ?”
সৌহার্দ্য অবাক কন্ঠে বলল,
” ‘খোমা’ কী জিনিস?”
” আরে মুখ, মানে চেহারা।”
সৌহার্দ্য বিরক্তি নিয়ে বলল,
” সেটা সোজাভাবে বললেও হত। এসব কী ভাষা?”
” আপনি যে এত মূর্খ একটা মানুষ তা জানতাম না।’

সৌহার্দ্য একটা হতাশার নিশ্বাস ত্যাগ করল। ফোনটা সাইডে রেখে বলল,
” এমনিতে তো আমার ফেসবুক পেজে, কমেন্টে বড় বড় করে লিখতে আমাকে সামনে পেলে এই করবে, সেই করবে। এখন তো সামনেই আছি। বল কী করবে?”
তুর্বী গাল ফুলিয়ে হাত ভাজ করে বলল,
” তখন কী জানতাম নাকি যে আপনি এত ডেঞ্জারাস একটা মাল।”
সৌহার্দ্য রাগী গলায় বলল,
” আবার এসব ভাষা!”
তুর্বী আরো রেগে গিয়ে বলর,
” একশবার বলব। কী করবেন আপনি?”
সৌহার্দ্য গেঞ্জির হাতা ফোল্ড করে তুর্বীর দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর দিকে ঝুকে বলল,
” দেখতে চাও কী করব?”
তুর্বী একটু পিছিয়ে তুতলিয়ে বলল,
” নাহ! আমি কিছুই বলিনি। আর বলবও না।”
” বেটার।”

বলে সৌহার্দ্য আবার ফোনটা হাতে নিল। তুর্বী নিজের ওপরই বিরক্ত হচ্ছে। ও এই লোকটাকে হুটহাট ভয় কেন পেয়ে যাচ্ছে? না পেয়েও তো উপায় নেই। ও এখানে একা আছে। লোকটা চাইলেই যা খুশি করতে পারে ওর সাথে। তাই একটু সাবধান হতে হবে। সৌহার্দ্য বলল,
” এই ফার্মহাউজের ছাদটা খুব সুন্দর। যাবে?”
তুর্বী চোখ ছোট ছোট করে তাকাল সৌহার্দ্যর দিকে। সৌহার্দ্যর ব্যবহারে বেশ অবাকই হচ্ছে। ও মুখ বাঁকিয়ে বলল,
” বাহবা! আপনি কেমন কিডন্যাপার বলুনতো? যাকে কিডন্যাপ করেছেন তাকে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখার বদলে ছাদের সৌন্দর্য দেখাতে চাইছেন? মতলব কী হ্যাঁ?”

সৌহার্দ্য নিজেই অবাক হয়ে গেল। ঠিকই তো! ও কেন করছে এসব? ও তো তুর্বীকে ভয় দেখিয়ে একটু শিক্ষা দিতে চেয়েছিল যাতে ওকে অন্তত আর বিরক্ত না করে। কিন্তু ও এসব কেন করছে, তার উত্তর ও নিজেই জানেনা। কিন্তু কেন যেন তুর্বীর উপস্থিতি সৌহার্দ্যর খুব ভালো লাগছে। স‍ৌহার্দ গলা ঝেড়ে বলল,
” আমি তোমার মত অভদ্র নই। অন্যের সাথে ভালো ব্যবহার করতে জানি। এবার বল যাবে?”
তুর্বী কিছু একটা ভেবে বলল,
” আচ্ছা। চলুন। এখানে বসে বসে বোর হওয়ার চেয়ে বেটার।”
সৌহার্দ্য তুর্বীর হাত ধরল। তুর্বী অবাক হয়ে বলল,
” আরে? কী হচ্ছে কী?”

” তোমাকে দিয়ে কোন বিশ্বাস নেই। দেখা যাবে দরজা খুললেই মিলখা সিং হয়ে দৌড় লাগাবে।”
তুর্বী একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাকালো সৌহার্দ্যর দিকে। সৌহার্দ্য সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তুর্বীর হাত ধরে নিয়ে গেল ছাদে। তুর্বীও চুপচাপ গেল সৌহার্দ্যর সাথে। ও এমনিতেও পালানোর চেষ্টা করত না। কারণ ওর কেন জানি মনে হচ্ছে সৌহার্দ্য ওকে সকালবেলা এমনিই যেতে দেবে।
ছাদের একপাশে পাশাপাশি বসে আছে দুজন। দুজনেই চুপচাপ আছে। তুর্বীর বারবার পাশের ব্যাক্তির মুখটা দেখতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু সে তো মুখ দেখাতেই অনিচ্ছুক। নিরবতা ভেঙ্গে সৌহার্দ্য বলল,
” তোমাকে তুলে নিয়ে আসাতে তুমি তোমার বান্ধবীর চিন্তার কথা বললে। ফ্যামিলির কথা বললে না? তোমার বাবা-মা কোথায় থাকেন?”
তুর্বী খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে লম্বা শ্বাস ফেলে বলল,
” যেখানে আছে ভালোই আছে হয়ত।”
সৌহার্দ্য ভ্রু কুচকে ফেলল। তুর্বী কথার মানে বুঝতে না পেরে ও বলল,
” মানে? তুমি জানোনা তারা কোথায়?”
” আমাকে কবে ছাড়ছেন?”
সৌহার্দ্যর কথা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে কথাটা বলল তুর্বী। সৌহার্দ্য অদ্ভুত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তুর্বীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

” আমাকে এভাবে জ্বালিয়ে তোমার কী লাভ সেটা বল? ডোন্ট ইউ থিংক এটা ওয়েস্ট অফ টাইম?”
তুর্বী নড়েচড়ে বসে বলল,
” একদমই না। আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর কেন দেবেন না। কেমন আর.জে. আপনি হ্যাঁ?”
সৌহার্দ্য মুচকি হেসে বলল,
” আমি আর.জে. ওপরওয়ালা তো নই যে সব জানবো। হ্যাঁ আমি অনেকের সমস্যার সমাধান করে দেই এটা ঠিক কথা। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে আমি সব জানতা। আমি কোনোদিন সেটা দাবীও করিনি। তাহলে? আর ধর যদি তুমি আমাকে সবার সামনে অপমান করে, বা এটা ওটা বলে সবার সামনে ছোট করেও দিলে। এতে তোমার কী লাভ হবে? তোমার কী সব প্রবলেম সলভ হয়ে যাবে? বরং তোমার সময়গুলো নষ্ট হবে। ঠিক নয় কী? এভাবে অকারণেই নিজের মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট করার কী বোকামো নয়?”

তুর্বী ‘থ’ মেরে কিছুক্ষণ বসে রইল। সত্যিই তো! এভাবে তো ভেবে দেখে নি কখনও। তারমানে এতদিন এই S.R. এর পেছনে শুধু শুধুই সময় নষ্ট করেছে? একেবারে টোটালি লস হয়ে গেল? দূর! আগে কেন মাথায় এলোনা এসব? নিজের কাজের জন্যে নিজেরই এখন ভীষণরকম আফসোস হচ্ছে তুর্বীর। আর এদিকে সৌহার্দ্য তুর্বীর দিকে তাকিয়ে ভাবছে যে যাক, ওর কথাগুলো কাজে দিয়েছে হয়ত। কখনও কখনও যাকে শক্তি দিয়ে বোঝানো যায় না, তাকে যুক্তি দিয়ে বোঝানো যেতে পারে। এবার হয়ত মেয়েটাকে পিছু ছাড়াতে পারবে। এই মেয়েটার কাছ থেকে ছাড়া পাবে ভেবেই সৌহার্দ্যর বেশ শান্তি লাগছে।

এদিকে বিহান এটা ওটা বলছে আর ড্রাইভ করছে। অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও কোন রেসপন্স না পেয়ে বিহান পাশে তাকিয়ে দেখল রিখিয়া ঘুমিয়ে পরেছে। বিহান কিছু বলবে তার আগেই রিখিয়ার মাথা ঢলে পরল ওর ওপর। ও একহাতে রিখিয়াকে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখে ভাবল য‍ে এখন যখন ঘুমিয়ে গেছে তখন আর খোঁজার নাটক করার দরকার নেই, বরং একটা জায়গায় গাড়ি নামিয়ে রেস্ট করা যাক। বিহান গাড়িটা একটা ব্রিজের সামনে চায়ের দোকানের পাশে রাখল। দোকানটা এখন বন্ধ। চারপাশটাও অনেকটা নিরব। বিহান নিজের সিটটা একটু এলিয়ে নিয়ে হেলান দিয়ে শুয়ে রিখিয়ার মাথাটা নিজের বুকে রাখল। কয়েক ঘন্টা আগে রিখিয়া ওর বুকে মাথা রাখায় যেই প্রশান্তি পেয়েছিল, সেই শান্তি আবার অনুভব করতে চায় ও। পরম তৃপ্তিতে চোখ বন্ধ করে নিল ও।

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১০

ঘুমের ঘোরে শীতের মধ্যে একটু উষ্ণতা পেয়ে বিহানকে আকড়ে ধরে ওর বুকে গুটিয়ে গেল রিখিয়া। কিছুক্ষণ পর বিহান চোখ খুলে তাকাল। রিখিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। কত পবিত্র, কতটা নিষ্পাপ লাগছে এই মুখটা? ঘুমন্ত সুন্দরী! আনমনেই একটু হাসলো বিহান। রিখিয়ার মুখের ওপর পরা চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিলো। নিজের অজান্তেই রিখিয়ার কপালে ঠোঁট ছোঁয়াতে গিয়েও থমকে গেল। কী করছিল কী ও? কী হচ্ছে কী ওর সাথে? না এসব অবান্তর অনুভূতি নিজের মনে জায়গা দিতে পারেনা ও।

একদম পারেনা। ও তো জানে এসব মেয়েদের ছলনা, সব ছলনা। চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিল ও। কিন্তু অজানা কারণেই রিখিয়াকে নিজের বুক থেকে সরালোনা।বিড়বিড় করে বলল, ” না, এভাবে দুর্বল হওয়া আমায় মানায় না। এরা ভালোবাসতে জানেনা। শুধু ছলনা করতে জানে। নিজের স্বার্থের জন্যে অন্যকারো পুরো জীবনটা নষ্ট করে দিতেও এদের বিবেকে বাঁধে না। এই মেয়েও তাই করছে, নিজের মায়ার আমাকে ফাঁসাতে চাইছে। কিন্তু আমি দুর্বল হবোনা, নেভার!” বলে সিটে হেলান দিয়ে লম্বা শ্বাস ফেলল ও। বুকের মধ্যে তীব্র উথালপাতাল হচ্ছে। অদ্ভুতভাবে সেই তান্ডব থামাতে রিখিয়াকেই নিজের বুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল বিহান।

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১২