জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১২ || রোমান্টিক ভালবাসার গল্প

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১২
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

তুর্বী ছাদে পা ঝুলিয়ে চুপচাপ বসে আছে আর মাঝেমাঝে সৌহার্দ্যকে আড়চোখে দেখছে। আর সৌহার্দ্যও একমনে ফোন স্ক্রোল করছে। রাত সাড়ে তিনটা বাজে। ভোর হয়ে যাবে ঘন্টা দুই এর মধ্যেই। তুর্বী গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবছে যে সত্যিই ও এতদিন ধরে যা করছিল তার কোন মানে আছে কী না। অনেকটা সময় পর সৌহার্দ্য বলল,
” তো কী ঠিক করলে? আমাকে বিরক্ত করবে আর?”
তুর্বী দাঁত দিয়ে নখ করে কাটতে কাটতে বলল,
” একটা কথা ভাবলাম বুঝলেন?”
সৌহার্দ্য একটু হাসলো। ও জানে তুর্বী কী বলবে। তবুও গলা একটু ঝেড়ে বলল,
” কী কথা?”
তুর্বী একটু নড়েচড়ে বসে বলল,

” যেহেতু আপনি একটা ইউসলেস আর.জে। আর আমার প্রবলেম সলভ আপনি করতে পারবেন না। তাই আমি ডিসাইড করেছি যে আপনার পেছনে আমি আর আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করব না। এমনিতেও আপনি কোন কাজের না। ”
সৌহার্দ্য শুধু শুনছে এই মেয়ের কথা। ওকে পুরো ইউসলেস বানিয়ে দিল! তুর্বী সৌহার্দ্যর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে একটু গলা ঝেড়ে নিয়ে বলল,
” কিন্তু তার মানে এটা ভববেন না যে আমি আপনার ভয়ে বা আপনার কথায় এমন করছি। আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই করছি। বুঝলেন?”
সৌহার্দ্য এই কথায় ঠিক কী রিয়াকশন দেবে বুঝে উঠতে পারছেনা। মেয়েটা ভাঙবে তবু মচকাবে না টাইপ। তাই চুপ করেই রইল। তুর্বী আবার বলল,

” সো, বুঝতেই পারছেন আমি ঠিক করেই নিয়েছি যে আপনাকে আর জ্বালাবো না।”
হঠাৎ করেই সৌহার্দ্যর ভেতরে কেমন একটা করে উঠল। তুর্বী ওকে আর জ্বালাবে না?
আর মেসেজ করবে না? আর কখনও তুর্বীর এসব উদ্ভট কথাবার্তা শুনতে পাবেনা? ওর চঞ্চলতা দেখতে পাবেনা? কিন্তু ও তো এটাই চাইত। এইজন্যই তো তুর্বীকে এখানে তুলে নিয়ে এসছিল ওকে আর বিরক্ত না করে সেই ব্যবস্থা করতে। কিন্তু এখন যখন তুর্বী নিজেই বলছে ওকে আর জ্বালাবে না। তখন ওর এত কষ্ট, এত খারাপলাগা তৈরী কেন হচ্ছে? কেন মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছে ও? ওর এসব ভাবনার মাঝেই তুর্বী বলল,
” কী ব্যপার? চুপ করে গেলেন কেন?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” অব্ না মানে তো তুমি আমাকে আর মেসেজ করে, পোস্ট করে বা শো-তে কল করে জ্বালাবেনা তো?”
” উমহুম। কেন জ্বালাবো। যেহেতু কোন লাভই হবেনা।”
কথাটা শুনে সৌহার্দ্য চুপ করে রইল। ওর তো এখন খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু ও খুশি হতে পারছেনা একদমই। ওর মন খারাপ হওয়ার কারণ ওর নিজেরই অজানা। যেজন্য এতকিছু করল, জীবনে যেটা করবে বলে ভাবেওনি সেই কিডন্যাপিং ও করল তাও একটা মেয়েকে, সেটাই তো হচ্ছে। তাহলে ওর এরকম লাগার কারণ কী? তুর্বী তুরি বাজিয়ে বলল,

” হ্যালো মিস্টার? বললাম তো আর কিছু করব না। এবার তো ছাড়বেন না কী?”
সৌহার্দ্য কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে স্হির গলায় বলল,
” হুম কিন্তু সকাল হোক। তারপর যেও।”
তুর্বী আয়েশ করে পা দুটো তুলে গুটিয়ে বসে বলব,
” হ্যাঁ সকাল হলেই যাবো। এখন আমার ফোনটা দেওয়া যাবে? রিখু কে একটা ফোন করতাম মেয়েটা কী করছে কে জানে!”

সৌহার্দ্য নিজের পকেট থেকে তুর্বীর ফোনটা বের করে তুর্বীর দিকে দিল। তুর্বী ফোনটা নিয়ে সুইচড অন করে সোজা রিখিয়াকে ফোন করল। কিন্তু ফোনটা বেজে বেজে কেটে গেল। তুর্বী অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চেষ্টা করে সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে বলল,
” ফোন তুলছেনা। এটা কী হল? কী করছে ও?”
সৌহার্দ্য স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
” দেখো হয়ত ঘুমোচ্ছে।”
” আমি বাড়িতে নেই আর ও ঘুমোবে? আর ফোনের আওয়াজে তো ওঠা উচিত?”
” আরে ওও তো একটা মানুষ। হয়ত তোমাকে নিয়ে টেনশন করতে করতে ঘুমিয়ে পরেছে। ফোন সাইলেন্ট হয়ত। তুমি একটা টেক্সট করে দাও।”
” ইয়া।”

তুর্বী রিখিয়ার ফোনে একটা মেসেজ করে দিয়ে সৌহার্দ্যর দিকে তাকিয়ে একটা লম্বা হাই তুলল। সৌহার্দ্য চুপচাপ আকাশ দেখছে। তুর্বীর খুব ঘুম পাচ্ছে বেশ অনেক্ষণ যাবতই, কিন্তু সেটা সৌহার্দ্যকে বলে নি। সৌহার্দ্যও বুঝতে পারেনি কারণ ওর চোখ মুখ স্বাভাবিক ছিল। বেশ অনেকটা সময় পর তুর্বী ঢলে পরে যেতে নিলেই সৌহার্দ্য দ্রুত ধরে ফেলল। ব্যাপারটায় হকচকিয়ে গেল ও, বিড়বিড় করে বলল,

” পাগল নাকি এই মেয়ে? এমন কেউ করে? ঘুম পাচ্ছে আমাকে বললে কী হত? এক্ষুনি তো ছাদ থেকে পরত।”
তুর্বীকে নিজের সাথে মিশিয়ে ধরে রেখে কিছু একটা ভাবল সৌহার্দ্য। কিছুক্ষণ ভেবে তুর্বীর মাথাটা নিজের কোলের ওপর রেখে দিলো। তুর্বী সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে ঘুমোচ্ছে। তুর্বীর মুখের দিকে তাকিয়ে আনমনেই হেসে ফেলল সৌহার্দ্য। এই ঘুমন্ত দেখলে কে বলবে এই মেয়ে এত ছটফটে, এত চঞ্চল। আচ্ছা? কাল অবধি মেয়েটার ওপর ও বিরক্ত ছিল, খুব বেশিই বিরক্ত ছিল। কিন্তু আজকের এই রাতটাতে কী এমন করল ওই মেয়ে যে কাল থেকে ওর সংস্পর্শে থাকতে পারবেনা বলে ওর এত ফাঁকা লাগছে। এর উত্তর কী আদোও খুঁজে পাবে সৌহার্দ্য।

চোখে আলো অনুভব করে বিহানের ঘুম ভেঙ্গে গেল। ভ্রু কুচকে উঠতে যাবে তখনই নিজের বুকের ওপর ভারী কিছু অনুভব করল। চোখ খুলে তাকিয়ে নিজের বুকের ওপর রিখিয়াকে দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্যে চমকে গেছিল। পরে আস্তে আস্তে কাল রাতের কথা মনে পরতে ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলল। রিখিয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসল ও। এই মেয়ে যখন জানবে অন্য একটা ছেলের বুকে এতক্ষণ লেপটে শুয়ে ছিলো তখন লজ্জায় মাথাই তুলতে পারবেনা। এসব ভাবতে ভাবতেই রিখিয়ারও ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ আস্তে আস্তে খুলে হাত দিয়ে চোখ কচলে নিল। হঠাৎ ওর মাথায় নাড়া দিয়ে উঠল যে ও কোথায় শুয়ে আছে। তাড়াতাড়ি মাথা তুলে বিহানকে দেখে চমকে উঠল। একপ্রকার ছিটকে দূরে সরে গেল। অবাক হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিল ও। সবটা বুঝতে পারলেও বিহানের এত কাছে কীকরে গেল সেটা বুঝতে পারছেনা। হঠাৎ করেই কিছু একটা ভেবে তাড়াতাড়ি নিজের দিকে তাকিয়ে চেক করে নিল। পোশাক, ওড়না সব ঠিক আছে দেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ও। এরপর বিহানের দিকে তাকিয়ে দেখে বিহান হাত ভাজ করে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। রিখিয়ার একটা ঢোক গিলল। বিহান ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে ভ্রু নাচালো। রিখিয়া ইতস্তত করে তাকাল কিন্তু কিছু বলল না। বিহান বলল,

” রক্ষক হয়ে সারারাত তোমাকে পাহারা দিলাম আমি। সকালে উঠে তুমি আমাকেই ভক্ষক ভাবছ? কেসটা কী হল?”
রিখিয়া একটু লজ্জা পেল। ও সত্যিই ভয় পেয়েছিল নিজেকে বিহানের এতো কাছে দেখে। আজকাল আপন কারো ওপরই বিশ্বাস রাখা যায় না। সেখানে বিহান তো ওর চেনা কেউ না। তাই বিহান ওর ঘুমন্ত অবস্থার সুযোগ নিতে পারে সেটা ভাবা অন্যায় কিছু না। রিখিয়া আরো একবার নিজের দিকে তাকাল। বিহান শক্ত স্হির কন্ঠে বলল,
” সব ঠিক আছে দেখে খারাপ লাগছে? একটু এলোমেলো থাকলে কান্নাকাটি আর মেলোড্রামা করে আমায় ফাঁসানো যেত তাইনা?”
রিখিয়া অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
” মানে?”
বিহানের হুস এল ও কী বলছে। না, এখন এসব বললে তো হবেনা। ও নিজেকে সামলে মুচকি হেসে বলল,
” আরে মজা করছিলাম আমি।”
” ওহ। না ম্ মানে আমি আপনার বুকে..”
বিহান শব্দ করে হেসে বলল,

” এইজন্য মুখের এই দশা? আসলে শেষরাতে ঘুমানোর আগে তোমাকে বুকে নিয়ে ঘুমালাম যাতে তোমাকে কেউ কিডন্যাপ করতে না পারে। বুঝলে?”
বলে বিহান আবার হেসে দিল। রিখিয়া কিছুক্ষণ অদ্ভুতভাবে বিহানের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেও হেসে দিল। হঠাৎ তুর্বীর কথা মনে পরতেই ও তাড়াতাড়ি ফোন বের করল। দেখল যে তুর্বীর বেশ কয়েকটা মিসড কল, আর ওর ফোন সাইলেন্ট হয়ে আছে। নিউ মেসেজ দেখে সেটা চেক করে দেখল তুর্বী জানিয়েছে ও ঠিক আছে। রিখিয়া বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” তুর ফোন করেছিল। মেসেজে জানিয়েছে ও ঠিক আছে।”
বিহান বিড়বিড়িয়ে বলল, ‘ বাপড়ে একরাতেই মেয়েটাকে সোজা করে দিল? ব্রো তো আমার চেয়েও ফাস্ট!” রিখিয়া বিহানকে হালকা ধাক্কা মেরে বলল,
” আপনি শুনছেন আমি কী বলছি?”

” অব্ হ্যাঁ তুমি কল কর এখন। সকাল হয়ে গেছে তো।”
রিখিয়া মাথা ঝাকিয়ে তাড়াতাড়ি তুর্বীকে ফোন করল।
এদিকে ফোনের আওয়াজে হুস এলো সৌহার্দ্যর। কখন সকাল হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। তুর্বীর ঘুমন্ত মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিল ও। কী হয়েছে ওর নিজেই জানেনা। শুধু জানে অদ্ভুত কিছু একটা হচ্ছে। ভীষণ অদ্ভুত কিছু। সৌহার্দ্য ফোন তুলে দেখে ‘রিখু’ নামে সেভ করা কারো ফোন। ও বুঝতে পারল এটা রিখিয়া। ও তুর্বীকে ডাকবে তার আগেই তুর্বী ভ্রু কুচকে বিরক্তিমিশ্রিত কন্ঠে বলল,
” রিখু ইয়ার এলার্ম টা অফ কর না। কান ফেটে যাচ্ছে।”
বলে উল্টোদিকে ঘুরে সৌহার্দ্যর কোল হাতে জড়িয়ে ধরল। সৌহার্দ্য মুখে আবারও হাসি ফুটল। পাশে রাখা মাস্ক টা আবার মুখে পরে নিয়ে ও এবার আলতো কন্ঠে ডাকল,

” তুর্বী? তুর্বী?”
তুর্বী ঘুম কন্ঠে বলল,
” হুমম।”
সৌহার্দ্য বুঝল এই মেয়েকে এভাবে ডেকে কোন লাভ হবে না। তাই এবার একটু জোরেই ডাকল। তুর্বী হকচকিয়ে উঠে বসে বলল,
” ক-কে? কী? কোথায়? কী হয়েছে?”
” রিখিয়ার ফোন এসছে। ধরো।”
সৌহার্দ্যকে দেখে তুর্বী অবাক কন্ঠে বলল,
” এই কালা মাস্ক আবার কে? এই কে আপনি?”
সৌহার্দ্য তো আকাশ থেকে পরল। এই মেয়ে ঠিক কী পদার্থ দিয়ে তৈরী সেটাই বুঝতে পারছেনা সৌহার্দ্য। তুর্বীর এবার আস্তে আস্তে সবটা মনে পরল। ও ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,
” ওহ আপনি? সরি ভুলে গেছিলাম।”

সৌহার্দ্য কিছু না বলে তুর্বীর হাতে ফোন ধরিয়ে দিল। দেখল রিখিয়া কল করেই যাচ্ছে। তুর্বী রিসিভ করে বলল,
” হ্যাঁ বল।”
” বল মানে? কোথায় তুমি? এরকম কেউ করে? জানো কত টেনশনে ছিলাম? হাউ ক্যান ইউ বি সো কেয়ারলেস তুর!”
” আরে ইয়ার আগে শ্বাস নে, লম্বা করে। তারপর আবার কনটিনিউ কর।”
” শাট আপ। কোথায় আছ?”
“আমি তো.. আছি, ঠিক আছি। এসে বলছি। তুই কোথায়?”
” আমিও এসেই বলছি সব। তাড়াতাড়ি এসো।”
এতক্ষণ বিহান হাত ভাজ করে সিটে হেলান দিয়ে দেখছিল রিখিয়াকে। ফোন রেখে রিখিয়া বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” থ্যাংকস আমাকে হেল্প করার জন্যে। তুর ঠিক আছে আসছে বাড়িতে। আমি তাহলে আসি হ্যাঁ?”
বিহান মাথা দুলিয়ে বলল,
” নো। আগে এখন ব্রেকফাস্ট করব। আমার সকাল সকাল খাওয়ার অভ্যাস। আর আমার একা খেতে একদমই ভালো লাগেনা। সো আগে ব্রেকফাস্ট করব। এরপর তোমাকে তোমার বাড়িতে ড্রপ করে দেব।”
রিখিয়া ইতস্তত করে বলল,

” কিন্তু…”
” নো মোর কিন্তু, চলো।”
বলে গাড়ি স্টার্ট করল। রিখিয়াও আর কিছুই বলল না। এরপর দুজনেই একসাথে ব্রেকফাস্ট করার পর। বিহান রিখিয়ার বাসার উদ্দেশ্যে গাড়ি ঘোরালো। রিখিয়ার বাসার সামনে গাড়ি থামতেই রিখিয়া বিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
” কাল রাত থেকে অনেক সাহায্য করেছেন। ধন্যবাদ।”
রিখায়া গাড়ি থেকে নামতে গেলেই বিহান বলল,
” ওয়েট, ওয়েট! শুকনো থ্যাংকস আমি নেব না।”
রিখিয়া অবাক হয়ে বলল,
” মানে?”

” মানে, গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচালাম। সারারাত তোমাকে পাহারা দিলাম। তোমার বন্ধুকে খুঁজতে সাহায্য করলাম তার বদলে আমি তো কিছু পাই নাকি?”
রিখিয়া ভ্রু কুচকে বলল,
” কী চাই আপনার?”
” একদিন কফি খাই একসাথে? এটা জাস্ট আমার অফার। বাকিটা তোমার হাতে।”
রিখিয়া কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে বলল,
” ভেবে দেখব।”
বিহান ঠোঁট কামড়ে হেসে পকেট থেকে ওর কার্ড বের করে দিয়ে বলল,
” এটা আমার কার্ড। যদি মনে হয় যে আমার সাথে কফি খাওয়া যায় তো কল করো।”
রিখিয়া কার্ডটা নিয়ে বেড়িয়ে গেল। ওর মুখে যে মুচকি হাসি ফুটে উঠেছে সেটা রিখিয়া নিজেও জানেনা। বিহান রিখিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসল। ও জানে রিখিয়া ফোন করবে, আর আসবেও। আসতেতো ওকে হবেই।

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১১

তুর্বী বেডে পা ঝুলিয়ে বসে কফি খাচ্ছে। একটু আগেই ব্রেকফাস্ট করেছে। সৌহার্দ্য অফার করার আগেই তুর্বী খাবার চেয়ে নিয়েছে। যাতে সৌহার্দ্য একটুও অবাক হয়নি। এই মেয়েকে দেখে অবাক হতে হতে এখন আর অবাক হতে পারছেনা ও। শুধু দেখে যাচ্ছে। কফি শেষ করে তুর্বী উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
” তো মিস্টার S.R. যাই এখন?”
সৌহার্দ্য বলল,
” আমার ড্রাইভার দিয়ে আসবে বাড়ি অবধি গাড়ি করে।”
” ওকে চলুন। দেখিয়ে দিন কোন গাড়িতে যাবো, কাদের সাথে যাবো।”
বলে হাটা দিল, সৌহার্দ্যও ওর পেছন পেছন গেল। ড্রাইভারকে বলে দেওয়ার পর তুর্বী গাড়িতে উঠতে নিয়েও থেমে গেল। পেছন ঘুরে বলল,
” চলেই তো যাচ্ছি মুখটা দেখান না?”
সৌহার্দ্য একটু এগিয়ে বলল,
” এর পরের বার যখন দেখা হবে। দেখাব। প্রমিস!”
” হুরর। আর দেখা হলেও কী চিনব? যাই হোক বাই!”

সৌহার্দ্য কিছু বলল না। তুর্বী গাড়িতে ওঠার পর সৌহার্দ্য ড্রাইভারকে বলতেই সে গাড়ি স্টার্ট করল। তুর্বী মাথা বের করে আরেকবার বাই বলল। সৌহার্দ্য এবারও রেসপন্স করল না। গাড়িটা চলে যেতেই ছোট্ট শ্বাস ফেলল সৌহার্দ্য। চলে গেল মেয়েটা! আবার কখনও দেখা হবে? আবার তুর্বীর এই চঞ্চলতা দেখতে পারবে? কী জানি? ভাগ্যে কী আছে কেউ জানেনা। দেখা যাক নিয়তি তার চাকা কোনদিকে ঘোরায়।

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ১৩