জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৬ || রোমান্টিক ভালবাসার গল্প

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৬
লেখিকা: অনিমা কোতয়াল

ঋতু তাড়াতাড়ি এসে রিখিয়ার জামার চেইনটা পুরোটা লাগিয়ে দিল। রিখিয়া যখন দেখল সব ক্যামেরা, সবার দৃষ্টি ওদের দিকে তখন ওর রাগটা আরও বেড়ে গেলো। চোখ মুছে ভাঙা গলায় বলল,
” আপনাদের মত চরিত্রহীন ছেলেদের কাছে এর থেকে কী আশা করা যায়। আপনাদের কাছে তো সব মেয়েই সমান। মেয়েদের নিজের খেলনা মনে করেন হ্যাঁ? আমিও কাকে কী বলছি? মেয়েদের মন নিয়ে খেলা তো আপনাদের বৈশিষ্ট্য। তাইতো এরকম পাবলিক প্লেসে একটা মেয়েকে অপমান করতেও আপনার বিবেকে বাঁধলো না।”
বিহান এখনও একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে রিখিয়ার দিকে। এটুকু বলে একবার দৌড়ে ওখান থেকে বেড়িয়ে গেল রিখিয়া। জার্নালিস্টরা যাওয়ার পথে রিখিয়াকে অনেক প্রশ্ন করলেই ও কিছু না বলে দৌড়ে বেড়িয়ে গেল। ঋতুও রিখিয়ার পেছন পেছন গেল। এরপরেই জার্নালিস্টরা সবাই মিলে বিহানকে চেপে ধরল। বিহান কারো প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না ওখান থেকে নরলোও না। শুধু চোখ মুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। সিকিউরিটির জন্যে পুলিশ এনেছিল কম্পানির এম.ডি তারা এগিয়ে এল।

বড় সোফায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে টিভি দেখছে আর চকলেট কাচ্ছে তুর্বী। একা একাই বকবক করে যাচ্ছে তখন থেকে কিন্তু রিখিয়া কোন উত্তর দিচ্ছে নাহ সোফার সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে হাটু গুটিয়ে বসে টিভির দিকে তাকিয়ে আছে আর কফি খাচ্ছে, কিন্তু ও অন্যভাবনায় মগ্ন। রিখিয়া অফিস থেকে এসে কোন কথা বলেনি। চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে,চেঞ্জ করে সোজা কিচেনে চলে গেছে। তুর্বী তখন ল্যাপটপে কাজ করছিল। ল্যাপটপটা তুর্বীকে ওর অফিস থেকেই দিয়েছে। নিজের টাকায় কেনার মত অত টাকা নেই ওর। প্রথমে ভেবেছিল ব্যাংকে কোন ঝামেলা হয়েছে তাই কিছু বলেনি তুর্বী। এমন সময় প্রশ্ন করলে মন আরও খারাপ হয়। তাই পরে জিজ্ঞেস করবে ভেবেই চুপ ছিল ও। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে যে ব্যাপারটা সিরিয়াস, নইলে ও এত বকবক করে যাচ্ছে কিন্তু রিখিয়া ‘হ্যাঁ’, ‘না’ কিছুই বলছে না? তুর্বী এবার ঠিক হয়ে উঠে রিখিয়ার পাশে ফ্রোরে বসল। রিখিয়ার দৃষ্টি এখনও টিভির দিকে। তুর্বী রিখিয়াকে ওর হাতের কনুই দিয়ে একটা খোঁচা মারল। রিখিয়া তাকাতেই তুর্বী ভ্রু নাচিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” কী হয়েছে বলতো?”
রিখিয়া একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে তুর্বীর হাত জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মাথা রাখল। তুর্বী রিখিয়ার গালে হাত রেখে বলল,
” কী হয়েছে বলবি তো? এভাবে চুপ থাকলে কীকরে বুঝবো?”
রিখিয়া এবার আস্তে আস্তে ঐ রেস্টুরেন্টে ঘটা সব কথা খুলে বলল। তুর্বীতো রেগে আগুন হয়ে গেল। ও রাগে গজগজ করে বলল,
” কী? এত বড় সাহস ঐ ছেলের? তোর শরীরে হাত দিয়েছে। একেতো আমি..। এই তুই পুলিশকে জানাস নি? পুলিশে দিস নি ওকে? এটা তো একটা ক্রাইম।”
রিখিয়া অসহায় দৃষ্টিতে তাকাল তুর্বীর দিকে। তুর্বী রিখিয়ার হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
” দেখ এটা একপ্রকার সেক্সুয়াল এসল্ট এর মধ্যে পরে। কোন মেয়েকে ইচ্ছাকৃতভাবে শরীরের যেকোন জায়গায় অস্বস্তিকরভাবে ছোঁয়াকেই সেক্সুয়াল এসল্ট এর মধ্যে পরে। আর এটা আইনত অপরাধ। তুই এভাবে ছেড়ে কীকরে দিতে পারিস? ইনফ্যাক্ট ছাড়বিই বা কেন? এদের চর জন্যে শুধু চড় থাপ্পড় যথেষ্ট না। সোজা জেলের ঘানি টানাতে হয়। এরপর থেকে যদি কখনও এমন হয় বা হতে দেখিস সাথে সাথেই ‘ ৯৯৯’ তে ফোন করবি। এত যত ছাড়বি এরা ততই পেয়ে বসবে।।”

হঠাৎ করেই রিখিয়ার সেই মিডিয়ার লোকেদের কথা মনে পরল এনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে নিউস করে ফেলেছে। এসব ভেবে রিখিয়া কিছু বলবে তার আগেই ওর ফোনে ফোন এল। ওর ব্যাংকের ম্যানেজার ফোন করেছে। ও তাড়াতাড়ি রিসিভ করে কথা বলল। ফোন রেখে দেওয়ার পর তুর্বী বলল,
” কী রে কে ফোন করেছে?”
তুর্বী একবার ফোনের দিকে একবার তুর্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” স্যার ফোন করেছিল আমায় যেতে বললেন ঐ রেস্টুরেন্টে। এসছি তো ঘন্টা দুই হয়ে গেছে এখনও ওখানের ঝামেলা মেটে নি নাকি?”
তুর্বী বলল,
” আরে যেতে যখন বলেছে নিশ্চয়ই কোন না কোন কারণ আছে। আগেতো চল গিয়ে দেখি কেসটা কী হল।”

এদিকে সৌহার্দ্য হঠাৎ করেই কাজ পরে যাওয়াতে সিলেট এসছিল। ওর আজ বিকেলের মধ্যেই ঢাকায় চলে আসার কথা ছিল কিন্তু একটা দরকারি কাজ পরে গেছিল যেটা বিহান জানে না। ও ভেবেছিল কাজ সেড়ে হোটেলে ফিরে বিহানকে জানাবে কিন্তু সোসাল মিডিয়াতে ঢুকে এসব দেখে ও অবাক হয়ে গেল। এসব কী হচ্ছে? ও জানে বিহান একটু অন্যরকম। কিন্তু ও কখনও কোন মেয়েকে এভাবে অসম্মান করবেনা এটা ও জানে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে সৌহার্দ্যর। কেন? এই ছেলেটাকেই কেন? কেন এই ছেলেটাকে বারবার এরকম জঘন্য পরিস্থিতির মুখে পরতে হয়। সৌহার্দ্য আর কিছু না ভেবে সব কাজ ফেলে ঐ মুহূর্তেই বেড়িয়ে পরল ঢাকার উদ্দেশ্যে।

দুজনেই গেল সেই রেস্টুরেন্টে ওখানে গিয়ে তো অবাক। মারাত্মক ভীর হয়ে গেছে। মিডিয়ার লোকেরা তো যথারীতি তাদের কাজ করেই যাচ্ছে। ওরা ভীর ঠেলে ভেতরে গিয়ে দেখে ওখানে কয়েকজন পুলিশ, রিখিয়াদের ব্যাংকের ম্যানেজার, আরো দুজন ভদ্রলোক আছেন। আর বিহান একটা চেয়ারে শক্ত হয়ে বসে আছে। ওই মুহূর্তের পর এখনও অবধি একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি ও। রিখিয়া যেতেই ম্যানেজার পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলল,
” হ্যাঁ এই সেই মেয়ে।”
পুলিশ অফিসার রিখিয়ার সামনে এসে ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করল। আর রিখিয়া সেটাই বলল অফিসারকে সেটা ওর দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সত্যি। এবার অফিসার বিহানের দিকে তাকিয়ে বললেন,
” উনি যা বলছেন সেটা সত্যি? আপনি সত্যি এসব করেছেন?”

বিহান রিখিয়ার দিকে শুধু শক্ত চোখে একপলক তাকালো তারপর আবারও নিচের দিকে তাকিয়ে রইল কিন্তু কিছুই বলল না। যেহেতু ভিকটিম আর আশেপাশের সাক্ষী একই কথা বলছে আর অভিযুক্ত নিজেই চুপ হয়ে আছে নিজের পক্ষে কিছুই বলছে না। তাই অফিসার রা বিহানকে নিয়ে চলে গেল। আর রিখিয়ার স্টেটমেন্ট ও নিয়ে নিল। তুর্বী সুক্ষ দৃষ্টিতে দেখছিল এতক্ষণ বিহানকে। ওর ইচ্ছে ছিল যে এসেই বিহানকে আচ্ছামত ঝেড়ে দেবে। কিন্তু বিহানকে দেখে ওর কেন যেন মনে খটকা লেগে গেল। সেই খটকার কারণ হচ্ছে বিহানের অতি শান্ত আর শক্ত রূপটা। রিখিয়া ওকে বলল,
” কী রে? কী ভাবছো?”
” তুই শিওর? এই ছেলেটাই ছিল?”
” মানে?”
” নাহ। কিছুনা চল।”

রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেছে। এতক্ষণে সোসাল মিডিয়া, নিউজে এটা নিয়ে তোলপাড় হয়ে গেছে। আসলে ব্যাপারটা এতটা বাড়াবাড়ি হতোনা যদি এটা বাসে, অন্য কোন ভীড়-টীড় বা কিছতে হতো। কিন্তু এটা একটা বড় বিজনেসম্যানের পার্টিতে, এতো মিডিয়া আর পুলিশদের উপস্থিতিতে ঘটেছে। আর মানুষ তো একটা ইস্যু পেলে সেটা না চটকে ছাড়েনা সেইজন্যই এতটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো।
বিহান চুপচাপ বসে আছে। একরাতেই ওর চোখ মুখ সব লাল হয়ে গেছে। সৌহার্দ্য ওর পাশে বসে আছে গম্ভীর হয়ে। দুজনেই থানাতে বসে আছে। সারারাত বিহানকে থানাতেই থাকতে হয়েছে। অথচ ওর পরিবারের কেউ আসেনি ওর কাছে। স্পেশাল রিকোয়েস্টেই লকাপের ভেতরে গিয়ে বিহানের পাশে বসেছে সৌহার্দ্য। ঘন্টাখানেক আগে সৌহার্দ্য এসে পৌছেছে এখানে। এসেই পুলিশ অফিসারকে বলে আবার সবাইকে ডেকে পাঠিয়েছে। স‍ৌহার্দ্য বিহানের কাধে হাত রেখে বলল,

” এভাবে চুপ করে থাকলে কিচ্ছু হবেনা। কেন কিছু বলছিস না? বল যে কী হয়েছিল।”
“চলে যা।”
দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা পর এটুকুই বলল বিহান। সৌহার্দ্য এবার রেগে গিয়ে বলল,
” দেখ এবার কিন্তু মার খাবি কী শুরু করেছিস কী তুই? আমাকে তো বলবি?”
কিন্তু বিহান এখনও চুপ করে আছে। সৌহার্দ্য এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“ঠিকাছে কিচ্ছু বলিস না। যা করার আমিই করছি। পাঁচ বছর আগে যেটা করতে পারিনি সেটাযে আজও পারব না সেটা ভাবার কোন কারণ নেই।”
বলে লকাপ থেকে বেড়িয়ে কাউকে ফোন করে কথা বলল। এরমধ্যে চেচামেচি করতে করতে থানায় এলো তুর্বী আর ওকে শান্ত করতে করতে রিখিয়া আসছো। তুর্বী চেঁচিয়ে বলল,
” কী পেয়েছেন কী আপনারা হ্যাঁ? কখনও রাতে ডাকছেন আবার সকালে। এগুলোর মানে..”
এটুকু বলতে বলতেই সৌহার্দ্যর দিকে চোখ পরতেই অবাক হল তুর্বী সৌহার্দ্যও বেশ অবাক হয়েছে। তুর্বী বলল,
” আপনি এখানে?”
সৌহার্দ্য বলল,
” আমারও একই প্রশ্ন।”
” আমার ফ্রেন্ডের সাথে এসছি। কালকে এমনিতেই একটা ছেলে ওকে হ্যারাজ করল তারওপর কখনও এখানে ডাকে তো কখনও ওখানে।”

” আমিই ডেকেছি আপনাদের। আর যার বিরুদ্ধে আপনাদের অভিযোগ সে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এবং ভাই।”
তুর্বী এবার কোমরে হাত দিয়ে বলল,
” ওওও। তারমানে নিজের ক্যারেক্টারলেস বন্ধু প্লাস ভাইয়ের হয়ে ওকালতি করতে এসছেন?”
এটুকু বলতেই সৌহার্দ্য থানা কাঁপিয়ে ধমক দিয়ে উঠল তুর্বীকে। তুর্বী হালকা কেঁপে উঠল। সৌহার্দ্য তুর্বীর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
” একদম চুপ! বিহানের সম্পর্কে একটা শব্দও না গট ইট? ও এমন কিচ্ছু করেনি।”
তুর্বী একটু সাহস জুগিয়ে বলল,
” তো আমার বান্ধবী মিথ্যা বলছে?”
” আমি সেটা বলিনি। কালকে সোসিয়াল মিডিয়াতে আপনার বান্ধবীর ওসব কথার ভিডিওগুলো দেখেই বুঝেছি ও যথেষ্ট ভদ্র মেয়ে। তাই ও মিথ্যা বলেনি। কিন্তু আমার ভাইও কিচ্ছু করেনি।”
তুর্বী হাত ভাজ করে বলল,
” প্রমাণ করুন?”
সৌহার্দ্য হেসে বলল,
” প্রমাণ করতেই সবাইকে ডেকেছি। ওয়েট!”
এরমধ্যেই মিডিয়া লোকেরাও চলে এল। অফিসার অবাক হয়ে বললেন,
” এরা কেন?”
সৌহার্দ্য বলল,
” বিহানের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ যখন ওনারাই পাবলিক করেছেন তখন ওর নির্দোষ হওয়ার খবরটাও ওনারাই সবাইকে দেবে।”

এরমধ্যে বিহানকেও এখানে নিয়ে আসা হলো। বিহান এখনও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সবাই অপেক্ষায় আছে যে সৌহার্দ্য কী করতে চাইছে সেটা দেখার জন্যে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই রেস্টুরেন্টে লোকেরা চলে এলো। সৌহার্দ্য এগিয়ে গিয়ে বলল,
” এনেছেন?”
উত্তরে তারা হ্যাঁ বলল। সৌহার্দ্য এবার সবার উদ্দেশ্যে বলল,
” কালকে রাতের ঐ পার্টির সিসি টিভি ফুটেজ আছে ওনাদের কাছে। তাই এখন এটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে যে কী হয়েছিল আসলে।”

সবাই চমকে উঠল। এটাতো কারো মাথাতেই আসেনি। তুর্বী আর রিখিয়া দুজনেই এবার একটু নড়েচড়ে দাঁড়াল। আসল ঘটনাটা ওরাও দেখতে চায়। সৌহার্দ্য পূলিশদের সাহায্যে ফূটেজটা সবাইকে দেখাতে শুরু করল। সবাই কৌতূহলী চোখে দেখছে। ওই জায়গাতে এসেই সবাই দেখল যে রিখিয়ার ড্রেসের চেইনটা প্রায় পুরোটাই খোলা। আর বিহান রিখিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রিখিয়ার কাছে গিয়ে বিহান রিখিয়াকে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু রিখিয়া শুনতে পাচ্ছেনা আবার ভয় পেয়ে সরেও যাচ্ছে। বিহান এবার রিখিয়ার পেছন গিয়ে নিজেই চেইনটা অর্ধেকের মত লাগাতেই রিখিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল আর থাপ্পড় মেরে দিল ওর গালে। এটুকুতেই পজ করল ফুটেজটা। সবাই অবাক। কী ভেবেছিল আর কী হল? রিখিয়াতো শকড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর ভালো করতে এসে ছেলেটাকে এভাবে চরম হেনস্তা হতে হল ভাবতেই এখন কান্না পাচ্ছে ওর। অসহায় চোখে তাকাল বিহানের দিকে। বিহান দেয়ালে হেলান দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে, ফূটেজ চলাকালীন সময়েও একবারও তাকায়নি ফুটেজের দিকে। তুর্বী তো দাঁত দিয়ে নখ কাটতে কাটতে বলল, ‘লে কলা’। সৌহার্দ্য স্বস্তির শ্বাস ফেলল ও জানত বিহান এত খারাপ কাজ করতেই পারেনা। ও এবার অফিসারের দিকে তাকিয়ে রেগে বলল,

” এটা কী আপনাদের কালকে দেখার কথা ছিল না? সিসি ক্যামেরা থাকে কেন?”
অফিসার ইতস্তত করে বলল,
” আসলে অনেকে সাক্ষী ছিল আর উনিও নিজের হয়ে কিছু বলছিলেন না। উনি যদি তখন সব বলতেন তাহলে আমরা চেক করতাম।”
সৌহার্দ্য কিছু বলল না আর। কারণ এখন তর্ক করে লাভ নেই। মিডিয়ার লোকেরা প্রশ্ন করতে চেয়েছিল কিন্তু এটুকু বিনোদন দিয়েই তাদের বিদায় দেওয়া হল। এরপর বিহানকেও ছেড়ে দেওয়া হল। রিখিয়ার চেহারা পুরো কাঁদোকাঁদো হয়ে গেছে। তুর্বী খোঁচা মেরে চোখের ইশারা করতেই ও এগিয়ে গিয়ে বিহানকে বলল,
” দেখুন আ’ম..”
আর কিছু না শুনেই হনহনে পায়ে থানা থেকে বেড়িয়ে গেল বিহান। রিখিয়াতো কেঁদেই দিল। সৌহার্দ্য ওকে কাঁদতে দেখে বলল,
” আরেহ। কাঁদছেন কেন? দেখুন আপনার দোষ নেই এখানে। আপনার জায়গায় যে কেউ থাকলে এটাই করত।”
রিখিয়াতো কেঁদেই যাচ্ছে। সৌহার্দ্য তুর্বীর দিকে তাকিয়ে বলল,
” এইযে মিস বান্ধবীকে সামলান। আমি যাই আমার পাগলকে সামলাই গিয়ে।”

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৫

বলে তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে গেল সৌহার্দ্য। নিজের ফ্লাটে ঢুকে নিজের রুমে গিয়ে সৌহার্দ্য রুমে আসার আগেই দরজা বন্ধ করে দিল বিহান। রাগে কষ্টে ফুসতে শুরু করল ও। টেবিলে রঙের টিউব রাখা ছিল অনেকগুলো, এক ধাক্কায় সব ফেলে দিল। সারারুম জুড়ে রঙ ছড়িয়ে গেছে। আসলে যখন বিহান খেয়াল করল রিখিয়ার ড্রেসের চেইন খোলা তখন এটাও খেয়াল করেছে কতগুলো ছেলে ওকে চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে আর ওর দিকেই আসছে। তাই ও তাড়াতাড়ি গেছিল রিখিয়ার কাছে। ওর পেছনে দাঁড়িয়ে ওকে প্রটেক্ট করছিল আর বারবার বলছিল ‘ আপনার ড্রেসের জিপ খোলা আছে।’

কিন্তু মেয়েটা শুনতে পায়নি মিউসিকের জন্যে। আর ও কাউকে ডাকতে গেলেও ওকে সরতে হবে ওর কাছ থেকে আর সেটা করলে আবার ঐ ছেলেগুলো চোখ দিয়ে তো গিলবেই তারওপর উল্টাপাল্টা কিছু করতেও পারে তাই নিজেই লাগাচ্ছিল কিন্তু অসাবধানতাবশত ওর হাত রিখিয়ার পিঠে লেখে যায়। আর রিখিয়া ঘুরে তাকানোর পর ও হেসে বলতে যাচ্ছিল যে, ” মিস আগে নিজেকে তো সামলাতে শিখুন?” কিন্তু তারআগেই এসব হল। বিহান রাগে চিৎকার করে বসে পরল। জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলল, ” সব মেয়েই একরকম, সবাই এক। তোমাকে ভালো ভেবেছিলাম অন্যরকম ভেবেছিলাম। ভেবেছিলাম হয়ত সব মেয়েই ‘মায়া’ হয়না। কিন্তু না, আজ আমাকে বিশ্বাস করিয়ে ছাড়লে সব মেয়ে জাতটাই এরকম হয়। আই হেইট গার্লস এন্ড আই হেইট ইউ। আমি মেয়েদের মন নিয়ে গেলি এটাই বলেছিলে তাইনা? মন নিয়ে খেলা ঠিক কেমন হয় এবার আমি তোমাকে বোঝাবো মিস রিখিয়া ইসলাম।

জল ফড়িঙের খোঁজে পর্ব ৭