অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ৭ || Ishita Rahman Sanjida

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ৭
Ishita Rahman Sanjida

স্নিগ্ধ সকাল,লন্ডন শহরে সূর্য উঁকি দিয়েছে অনেকক্ষণ হয়ে গেছে। নরম তুলতুলে বেডে সাদা কম্বল জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে মীরা। পাশে সাবরিন ও চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। অনেক ক্লান্ত থাকার দরুন দু’জনেই কালকে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। হালকা বাতাসে জানালার শুভ্র রঙের পর্দাগুলো উড়ছে। ফলে আলো এসে পড়ছে মীরার মুখে। চোখমুখ কুঁচকে সে অন্যদিকে ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো।

দশটা বাজে সাবরিন ডেকে তুললো মীরাকে। আড়মোড়া ভেঙ্গে মীরা উঠলো। ওয়াসরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলো সে। তারপর সাবরিনের সাথে বের হলো ব্রেকফাস্ট করার জন্য। ওদের ফ্ল্যাট থেকে একটু দূরেই একটা রেস্তোরাঁ। সেখানে দু’জনে গিয়ে বসলো। খাবার অর্ডার দিয়ে মীরা বলল,’সিমকার্ড সেট করে তাড়াতাড়ি মনি’মায়ের খবর নিতে হবে। আমার আর ভালো লাগছে না।’
‘রিল্যাক্স মীরা। অপারেশন ঠিক ভাবেই হয়ে যাবে। জরায়ুর টিউমার এর অপারেশন হলো খুব সিম্পল। মানুষ এটাকে বড় করে দেখে।দেখবে তোমার মনি’মায়ের অপারেশন ঠিক ভাবেই হয়ে গেছে।’
মীরা চিন্তিত মুখে বলল,’তাই যেন হয়। দোয়া করো।’

খাওয়া শেষ করে দুজনে আশেপাশে ঘুরতে বের হলো। মীরা ও সাবরিন দুজনেই ফোনে নতুন সিম সেট করে। তারপর আশেপাশে একটু ঘোরাফেরা করতে লাগলো। রাস্তার পাশে ছোটখাটো দোকানপাট। তবে মীরা অবাক হলো যে এখানে বেশিরভাগ বাংলাদেশিদের দেখছে। প্রায় মানুষের মুখে বাংলা কথা। এতে মীরার বেশ লাগছে। সাবরিন আর মীরা রাস্তার ধারের একটা দোকানে দাঁড়িয়ে হরেকরকমের জিনিসপত্র দেখছে। দুএকটা নেড়েচেড়ে দেখতেছে। হঠাৎ গাড়ির হর্নের শব্দ দু’জনেই চমকে পিছন ফিরে তাকালো।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কালো রঙের একটা গাড়ি তড়িৎ গতিতে একদিকে আসছে। মীরা চোখ বড় করে ফেলেছে। সাবরিন ভয়ে জমে গেছে।নড়তে পারছে না। গাড়িটা ওদের সামনে আসতেই মীরা আর সাবরিন দুদিকে ছিটকে সরে গেল। ব্যালেন্স না রাখতে পেরে দু’জনেই পড়ে গেল। সাথে ব্যাথাও পেলো। গাড়িটা গিয়ে ছোট্ট দোকানটায় আঘাত হানে। ফলে দোকানটা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। দোকানি আগে থেকেই সরে গিয়েছে না হলে তা আজকে হয়ে যেতো।

মীরা জামাকাপড় ঝেড়ে উঠে দাঁড়ালো। গাড়িটা পেরিয়ে সাবরিনকে উঠালো। আশেপাশের অনেকেই এদিকে তাকিয়ে আছে। কেউ বোধহয় বুঝতে পারেনি যে কি হয়েছে??সাবরিন আর মীরা গাড়ির ভেতরে উঁকি দিলো। বলল,’মরে গেলো নাকি??’
সাবরিন ঠোঁট উল্টে বলল,’কি জানি??’
হঠাৎ গাড়ির দরজা খুলে গেল। কালো শার্ট পরা একটা ছেলে বের হয়ে এলো। সে গাড়ির সামনের অবস্থা দেখে বলে উঠলো,’ওহ শিট।’

তারপর এদিক ওদিক তাকালো। চোখেও তার কালো রঙের সানগ্লাস। ছেলেটা দোকানিকে তার ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিলো কোন কথা না বলেই। তার মুখে বিরক্তিকর ছাপ। এটা দেখে মীরার প্রচন্ড রাগ হলো। নূন্যতম ম্যানার্সটুকু নেই। কোথায় সরি বলবে তা না করে টাকার গরম দেখাচ্ছে। এদিকে যে দুটো মেয়েকে প্রায়ই মেরেই ফেলেছিল তা চোখে পড়ছে। ছেলেটা গাড়িতে উঠতে গেলেই মীরা জোরে বলে উঠলো,’এক্সকিউজ মি??’
ছেলেটা ঘাড় ঘুরিয়ে মীরার দিকে তাকায়। সাবরিনকে ছেড়ে মীরা ছেলেটার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,’Are you eyeless??’

ইশান চোখ থেকে সানগ্লাসটা নামিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল,’ওয়াট??’
মীরা মুখ বাঁকিয়ে বললো,’আই সেইড দ্যাট আর ইউ আইলেস??ক্যান্ট সি দ্যা রোড?? স্টুপিড বয়। দিস এক্সিডেন্ট ইজ ইউর উইলফুলি।’
ইশান তো রেগে বম হয়ে গেল। কে এই মেয়ে?? এখানকার কোন মেয়ে আজ পর্যন্ত ওর চোখে চোখ রাখার সাহস পায়নি। আর এই মেয়েটা ওকে ধমকাচ্ছে সাহস কত বড়?? আবার বলছে নাকি ও অন্ধ?? ইচ্ছাকৃত ভাবে এক্সিডেন্ট করেছে??ইশান রেগে বলল,’হাউ ডেয়ার টক টু রাবিশ।’
‘আই ডোন্ট টক টু রাবিশ। ইউ অলসো টক রাবিশ।’
ইশান ও ইংরেজি তে পাল্ট জবাব দিলো, ‘আমার সাথে এভাবে কথা বলার সাহস হয় কিভাবে তোমার??’

মীরাও কি কম যায় নাকি সেও বলল, ‘সাহসের কি দেখছেন?? আপনি ইচ্ছা করেই এসব করেছেন??যদি আমাদের কিছু হয়ে যেতো তাহলে তার দায় কে নিতো??’
ইশান গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলল,’সো হোয়াট??এতে আমার কি করার আছে??’
ইশানের এরকম ছন্নছাড়া জবাবে মীরার আরো রাগ হলো বলল,’কি?? আপনি তো অনেক বড় মাপের বেয়াদব ছেলে। কোন ম্যানারস নেই। কোথায় সরি বলবে তা না করে উল্টো ঝাড়ি মারছে।’
মীরার কথায় ইশান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,’আমি সরি বলবো তাও তোমার মতো মেয়েকে। যতসব ফালতু মেয়ে। গেট লস্ট।’

ইশান গাড়িতে উঠে বসে। মিনিটের মধ্যেই গাড়ি নিয়ে হাওয়া সে। আজকে সে ইফাজের সাথে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। রাগটা হলো বাংলাদেশ যাওয়া নিয়ে। ইফাজ কয়েকমাস পর ইশানকে বাংলাদেশ যেতে বলেছে। কারণ টা হলো সে ইশানকে একা যেতে দেবে না। ইফাজও ইশানের সাথে যাবে। আর এখন ইফাজের কাজের চাপ বেশী।তাই কয়েকমাস পর যাবে। এজন্যই রাগ করেছে ইশান। রাগের মাথায় ড্রাইভ করতে গিয়ে সে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সোজা দোকানে ঢুকিয়ে দিয়েছে। অবশ্য মাঝেমধ্যে এরকম হয় ইশানের। কি যেন ভাবতে ভাবতে ড্রাইভিং করে আর এক্সিডেন্ট করে। ইশান চলে যেতেই মীরা রেগেমেগে সাবরিনের কাছে আসে। বলে,’বড়লোকের ছেলেদের স্বভাবই এরকম। গরিবের রক্ত চুষে খেতে এরা ওস্তাদ। অসভ্য বেয়াদব ছেলে। তোমার কোথাও লাগেনি তো সাবরিন??’
সাবরিন মাথা নেড়ে বলল,’নাহ, চলো ফিরে যাই।’

‘আচ্ছা চলো।’
ইশান মীরাকে দেখে চিনতেও পারেনি। কিভাবে চিনবে এতবছর পর কি মীরা সেই ছোট রয়েছে??সে তো অনেক বড় হয়ে গেছে।আর ইশানতো পুরোই বিদেশিদের মতোই দেখতে হয়েছে। ফর্সা লম্বা পুরোপুরি বিদেশি। মীরার তাকে চেনার কোন চান্সই নেই।
ফিরে গিয়েই মীরা কল করলো সামিরকে। সামির ফোন রিসিভ করতেই মীরা উত্তেজিত হয়ে বলল,’আঙ্কেল মনি’মায়ের অপারেশন হয়ে গেছে?? কেমন আছে মনি’মা??তোমরা কি হসপিটালে নাকি বাড়িতে??আমি মনি’মায়ের সাথে কথা বলবো??’

সামির বলল,’আস্তে আস্তে বল। গলা তো শুকিয়ে যাবে তোর। পিহুর অপারেশন হয়ে গেছে ভালোভাবে। আমি ভিডিও কল করছি তোকে।’
সামির ভিডিও কল করতেই মীরা রিসিভ করলো। সামিরের হাসিমুখ দেখে মীরার একটু স্বস্তি হলো। যাক ভালোভাবে অপারেশন হয়ে গেছে। সামির ফোনটা পিহুর কাছে দিলো। পিহুর মুখটা দেখেই মীরার মুখে হাসি ফুটে উঠল। পিহুর হাতে ক্যানেলা লাগানো তাই সামির ফোনটা ধরে আছে। মীরার চোখে পানি চলে এসেছে। সে বলল,’কেমন আছো মনি’মা??’
পিহু হেসে বলে,’আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস??’

মীরা মুখটা গোমড়া করে বলল,’যেমন করে পাঠিয়েছো তেমনি আছি। খুব মিস করছি তোমাকে!! ইচ্ছে করছে ছুটে চলে যাই তোমার কাছে।’
পিহু মীরাকে বলল,’আমাকে নিয়ে চিন্তা করিস না। তুই যেকাজে গিয়েছিস তা কর।’
‘করবোই তো। এত বড় শহরে ওদের খুঁজতে তো টাইম লাগবে। আমি কিন্তু তিনমাস থাকতে পারবো না। ওদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে তোমার কাছে চলে যাবো। ভালো লাগছে না আমার এখানে।’
মীরার কথা শুনে পিহু হাসলো। মীরা আবার বলল,’মুক্তা আন্টির কাছে দাও।’

মুক্তা ফোন ধরতেই মীরা বলল,’শোন আন্টি মনি’মায়ের খেয়াল রাখবে। অপারেশন করাতে রক্তক্ষরণ তো হয়েছে। বাজার থেকে মোচা কিনে আনবে। মনি’মাকে খাওয়াবে। এতে রক্তস্বল্পতা কমবে বুঝেছো??আর ওষুধ টাইম টু টাইম খাওয়াবে??’
মীরার কথায় সবাই হেসে ফেললো। দূরে থেকেও এতো কেয়ার করছে। মুহিত ফোনটা নিয়ে নিলো তারপর মীরার সাথে কথা বলতে লাগলো। সবার সাথে কথা বলে মীরা ফোন কেটে দিলো। এবার মীরার একটু শান্তি হচ্ছে।
সবকিছু ঠিকঠাক হয়েছে এটা ভেবেই মীরার ভালো লাগছে। কিন্তু ইশান আর ইফাজের কথা মনে পড়তেই।

সাবরিন আজকে তার অফিসে জয়েন হয়েছে। নতুন দেশ নতুন জায়গা নতুন অফিস সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগছে তার। কিন্তু মীরা বাড়িতে সম্পূর্ণ একটা। একা একা বোরিং হচ্ছে সে। তাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কোন দিকে যাবে তা ভেবে পাচ্ছে না। কিন্তু এভাবে তো ইশান আর ইফাজকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব না। এখানকার কারো সাথে যোগাযোগ করতে হবে। আর সাবরিন ও তো এখানে নতুন। ও তো মীরার মতোই কিছু চেনে না। মীরা ঘুরে এপার্টমেন্টের দিকে তাকালো। এটা প্রায় বিশ থেকে পঁচিশ তলা তো হবেই। মীরা গুনে দেখলো না। এত উঁচু বিল্ডিং বেশিক্ষণ দেখলে চোখ ঘোলাটে হয়ে আসে। চৌদ্দ তলায় সে আর সাবরিন থাকে। মীরা ফোন বের করতে গুগল ম্যাপ দেখে রাস্তা বরাবর হাঁটতে লাগলো। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে সে আবার ফিরে আসলো।

সন্ধ্যায় সাবরিন ফিরে এলো। মুখটা তার গোমড়া। মীরা বলল,’কি হয়েছে?? নতুন অফিস কেমন লাগলো??কোন প্রব্লেম হয়েছে??’
সাবরিন হতাশ হয়ে সামনে থাকা কাউচে গিয়ে বসলো। কপালে হাত রেখে বসলো। মীরা গিয়ে সাবরিনের পাশে গিয়ে বসতে বসতে বলল,’এ্যানি প্রবলেম সাবরিন??’
সাবরিন সোজা হয়ে বসে বলল,’বিগ প্রবলেম মীরা।’
মীরা একটু চিন্তিত হয়ে বলল,’কি প্রবলেম??’

‘তোমার জন্য একটা ব্যাড নিউজ আছে তবে একটা গুড নিউজ ও আছে।’
মীরা কপাল কুঁচকে ফেলে বলে,’তুমি অফিসে গেলে আর নিউজ এলো আমার??’
সাবরিন বড় একটা শ্বাস ফেলে বলল,’অফিস থেকে একজনকে আমার পার্টনার হিসেবে দিয়েছে। সে কাল থেকে আমার সাথে এখানে থাকবে। কারণ এই ফ্ল্যাট অফিস থেকেই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তুমি??’
মীরা বলল,’সমস্যা নেই আমি একটা হোটেলে গিয়ে উঠব।’

সাবরিন আবার বলল,’আরে গুড নিউজ শুনবে না??আমি এব্যাপারে অফিসের ম্যানেজারের সাথে কথা বলেছি। তিনি একটা মেয়ের কথা বলেছেন আমাকে। মেয়েটা নাকি তার বাড়িতে একাই থাকে। একজন পার্টনার খুঁজছে সে। তাই তিনি আমাকে বলেছে। থাকার জন্য নাকি কোন টাকাও সে নেবে না। তার শুধু একজন সঙ্গি চাই। এখন তুমি যদি চাও তবে যেতে পারো। আমার মতে সেখানে যাওয়াটাই বেটার। কারণ ওই মেয়েটা লন্ডনেরই। এখানকার সবকিছু চেনে। তুমি ওর কাছ থেকেও সাহায্য পেতে পারো। তুমি যাদের খুঁজতে এসেছো ওই মেয়েটার সাহায্যে হয়তো খুঁজেও পেতে পারো।’

মীরা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,’কথাটা মন্দ বলোনি। তাছাড়া ওই লোকগুলোর জন্য আমি শুধু শুধু টাকা খরচ করবো কেন??তার থেকে এটাই বেটার কি বলো??’
‘হুম কিন্তু আমার খারাপ লাগছে তোমাকে ছাড়া থাকব কিভাবে ওই অচেনা মেয়েটার সাথে??’
মীরা দাঁড়িয়ে বলল,’মন খারাপ করো না।আর আমি তো এমনিতেই চলে যেতাম। তখন তো তোমাকে একাই থাকতে হতো। তার চেয়ে ভালো যে এখন থেকেই মানিয়ে চলো। আমি কফি আনছি তুমি বসো।’
‘কফি???’ সাবরিনের কথা শুনে মীরা মুচকি হেসে বলল,’একটু আগেই কিনে এনেছি। শুধু গরম করলেই হবে।’

দুজনে কফি খেয়ে অনেক রাত পর্যন্ত গল্পের করে ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে উঠে মীরা আগে বাড়িতে ফোন করে সব খবরাখবর নিলো। তারপর লাগেজ গুছিয়ে নিলো। সাবরিন ম্যানেজারের সাথে কথা বলে সব জেনে নিলো। দু’জনেই বেরিয়ে পড়লো। একটা ক্যাব বুক করে তাতে চেপে বসলো। মীরা আর সাবরিন অবাক হয়ে আশেপাশের মানুষ দেখছে। অসম্ভব সুন্দর লন্ডন শহর। প্রথমে এতো খেয়াল না করলেও মীরা এবার সবই অবাক হয়ে দেখতেছে। সাবরিন বলল,

‘জানো মীরা এই শহরটা অনেক সুন্দর পুরো স্বপ্নের মতো। অনেক ঘোরার জায়গা আছে। যেমন, বাকিংহাম প্যালেস,হাইড পার্ক,লন্ডন আই, টেমস নদী,ইউকে পার্লামেন্ট ভবন,বিগ বেন, টাওয়ার ব্রিজ, অক্সফোর্ড স্ট্রিট, ব্রিটিশ জাদুঘর এন্ড অলসো। জানো অক্সফোর্ড স্ট্রিটে অনেক সিনেমার শুটিং করা হয়েছে। তুমি যখন যাবে খেয়াল করলেই দেখতে পাবে যে প্রায় সিনেমাতেই ওই জায়গাটা দৃশ্যমান।’

মীরা এতক্ষণ সাবরিনের কথা শুনছিল।সে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বলে,’বাব্বাহ তুমি তো দেখছি সব জানো। আগে কি এখানে এসেছিলে নাকি??’
‘নাহ তবে এসব ইন্টারনেটে অহরহ পাওয়া যায়।’

তারপর সাবরিন আর মীরার সাথে কথা বলল না। গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেল ওরা। একটা সাদা রঙের বাড়ির সামনে ওরা দুজন দাঁড়িয়ে আছে। ম্যানেজারের দেওয়া ঠিকানাতেই ওরা এসেছে। বাড়িটা বেশ সুন্দর। বেশি বড় নয় আবার বেশি ছোটও নয়। বাড়ির সামনে প্রাঙ্গন নেই। বাড়ি সংলগ্ন রাস্তায় ওরা দাঁড়িয়ে আছে। সাবরিন গিয়ে কলিং বেল চাপলো। কিছুক্ষণ পর একটা সাদা চামড়ার মেয়ে বের হলো। ঠোঁটে তার স্নিগ্ধ হাসি। সাবরিন আর মীরা উভয়েই মেয়েটার দিকে চোখ বুলায়। সাদা রঙের ঢোলাঢালা একটা শার্ট পড়েছে মেয়েটা। আর টু কোয়াটার প্যান্ট পড়েছে। ফর্সা উরু দেখা যাচ্ছে। তবে মেয়েটার চুলগুলো ছেলেদের মতো ছোট করে কাটা এবং হালকা সোনালী রং করা। সাবরিন হা হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। মীরার তো মাথা ঘোরাচ্ছে এই বুঝি পড়ে যাবে।

সাবরিন আস্তে করে বলল,’এটা মেয়ে না ছেলে মীরা??’
মীরা জবাব দিলো,’চেহারা দেখে তো মেয়ের কাতারেই পড়ে।’
ওদের কথার মধ্যে মেয়েটা বলল,’হু ইজ সাবরিন??’
সাবরিন নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল,’হ্যালো আই এম সাবরিন।’
‘ওহ নাইস টু মিট ইউ। দ্যা ম্যানেজার সেইড টু মি ইউরসেলফ।’
সাবরিন মাথা ঝাকালো। তারপর মীরার দিকে তাকিয়ে বলল,’সি ইজ মীরা ইউর হোম পার্টনার।’
মেয়েটা একগাল হাসি নিয়ে মীরার দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,’হাই আই এম জিনিয়া।’
মীরা হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডসেক করে বলল,’আই এম মীরা ফরম বাংলাদেশ।’

‘আর ইউ বাংলাদেশি??ওয়াও আই এম সো হ্যাপি। ইউ আর সো কিউট লাইক হানি। ক্যান আই কল ইউ হানি??’
‘ইয়াহ সিউর!!’
জিনিয়া সাদরে মীরাকে গ্রহন করলো। সাবরিন বিদায় নিয়ে চলে গেছে। জিনিয়া ওর বাড়িটা মীরাকে দেখালো। অনেক গুলো রুম আছে। মীরা বেছে বেছে দোতলার বারান্দা সহ রুমটা নিলো। জিনিয়া মীরাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিলো। ওর রুলস হলো,মীরা ওর বাড়িতে ওর বন্ধু হয়ে থাকবে। দুজনে একসাথে সময় কাটাবে ঘুরতে যাবে। রান্নাও একসাথে করবে মাঝেমধ্যে বাইরে খাবে।মীরা এতে খুব অবাক হলো। বিদেশিরা সত্যি খুব ভালো হয় তা জিনিয়াকে না দেখলে বোঝা যায় না। একদিনেই কেমন আপন করে নিল মীরাকে। তবে জিনিয়ার পোশাকগুলো মীরার একদমই পছন্দ নয়। তবুও সে কিছু বলল না।

কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে গিয়ে সব গুছিয়ে নিতে লাগল। আর ভাবতে লাগলো যে,যদি জিনিয়া একাকিত্ব বোধ করে তাহলে বিয়ে করছে না কেন??আর ওর বাবা মাই বা কোথায়??মীরা আর কিছু ভাবলো না।এসব ভেবে ওর কি??ও তো মাত্র কয়েকদিনের জন্য এসেছে আবার চলে যাবে। এসব নিয়ে মাথা ঘামানো চলবে না। জিনিয়ার সাথে কথা বলতে হবে। সে কি ইফাজ আর ইশান নামের কাউকে চেনে কি না??

রাতে জিনিয়া মীরাকে নিয়ে বের হয়। জিনিয়া একটা শর্ট টপস পড়েছে। এতেও ওর হাঁটু বের করে রেখেছে। মীরা তা দেখে নাক কুচকায় কিন্তু কিছু বলে না। রাতের শহর দেখতে মীরার খুব ভালো লাগছে। পুরো শহরে রং বেরঙের বাতি জ্বলছে। কোথাও এতটুকু অন্ধকার নেই। রাস্তাগুলো সুন্দর আর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। মীরা এসেছে বলে জিনিয়া সেলিব্রেট করতে চায়। তাই মীরাকে সে বারে এসেছে। বারে এই প্রথম এলো মীরা। বাংলাদেশে থাকতে তো রাতে বাড়ির বাইরে যেতোই না আর বার তো দূরের কথা।

বারের ভেতরে মানুষে গিজগিজ করছে। কিছু ছেলেমেয়ে মাতাল হয়ে নাচানাচি করছে। কেউ কেউ বসে বসে বিভিন্ন নেশা করছে তো কেউ রুমে মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করছে। এসব দেখে মীরার গা গুলিয়ে এলো। ছিঃ এসব দেখা তো পাপ। তবে মীরা জিনিয়াকে কিছু বলতেও পারলো না। কারণ জিনিয়াকে যে ওর ভিশন দরকার।

ভিড় ঠেলে ড্রিংকস কর্ণারে গিয়ে একটা চেয়ারে বসলো জিনিয়া। এক পেগ নিয়ে সে মীরার দিকে এগিয়ে দিলো। মীরা মাথা নাড়িয়ে বলল,’নো নো আই হেট ড্রিংকস। ইউ ক্যান টেক।’
জিনিয়া জোর করলো না। জিনিয়া কয়েক পেগ খেয়ে ড্যান্স করতে চলে গেল।আর মীরা বসে বসে চারিদিকে দেখতে লাগল। ওর পাশে কয়েটকা মেয়ে দাঁড়ানো। দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদশি। হাবভাব আর চেহারা দেখে এটাই বোঝা যাচ্ছে। মীরা তো বারবার অবাক হচ্ছে। এখানে তো বাংলাদেশী আর বাংলাদেশী।

হঠাৎ মীরা শোরগোলের আওয়াজ পেলো। ঘটনা বোঝার জন্য মীরা উঠে দাঁড়িয়ে উঁকি দিলো। সামনেই একটা উঁচু টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকজনকে হইচই করতে শুনলো। মীরা সেদিকে তাকিয়ে আরো অবাক। কারণ কালকের ওই বখাটে ছেলেটা ওখানে আছে। টেবিলে হাত দিয়ে সামনের ব্যক্তিদের দিকে তাকিয়ে আছে সে। আর টেবিলের উপর কতগুলো ছোট গ্লাসে মদ ঢালা। সেগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে সে। কিন্তু আশ্চর্য ওখানে জিনিয়াও রয়েছে। আর কতগুলো ছেলে। মীরা ভাবল জিনিয়া কি ছেলেটাকে চেনে??মীরা সেদিকে এগিয়ে যাওয়া ধরলেই একটা মেয়ে ওর হাত টেনে ধরে। মীরা পিছনে তাকিয়ে মেয়েটাকে দেখলো।

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ৬

মেয়েটা বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে ঝাকাতে ঝাকাতে বলল,’ওদিকে যেও না। মারা পরবে। ওখানে যাওয়া নিষেধ।’
মেয়েটার মুখে বাংলা শুনে মীরা বুঝতে পারলো যে সে বাংলাদশী। মীরাও বলল,’কেন যাবো না??কি আছে ওখানে??’
মেয়েটা ইশানের দিকে ইশারা করে বললো, ‘ওই যে ছেলেটাকে দেখছো??ওই ছেলেটা ওদের কাছে অন্য কোন মেয়ে এলাও করে না। শুধু ওই মেয়েটাকে ছাড়া। ওদের বন্ধু মহলে ওই একটাই ঘাড় ত্যাড়া মেয়ে বাকি সব ছেলে।’

মীরা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল,’কেন??আর কে ওই ছেলেটা??’
মেয়েটা তার মুখে বাকা হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘ইশান!!!ক্রাশ বয় অফ লন্ডন’স গার্লস।’
ইশান নামটা শুনে মীরার বুকটা ধক করে উঠল। এই ইশান সেই ইশান নয়তো। যাকে খোঁজার জন্য মীরা লন্ডন এসেছে??মীরা ঘাড় ঘুরিয়ে ইশানের দিকে তাকিয়ে রইল।

অপ্রিয় সেই প্রিয়জন পর্ব ৮