রক্তক্ষরণ অপেক্ষা পর্ব ৭ || নাফিসা মুনতাহা পরী

রক্তক্ষরণ অপেক্ষা পর্ব ৭
নাফিসা মুনতাহা পরী

শুভ্রর এমন আক্রোশময় কন্ঠে পরী এতটুকুও বিচলিত হলোনা। বরং রগচটা কন্ঠে বলে উঠলো-
~” এই তুমি কি করতে চাও আমার সাথে!”
কি করতে চাই সেটা একটু পড়েই বুঝতে পারবা। শুভ্র কথাটি বলতেই পরী একটা মুচকি হেঁসে বলল-
~” এত সহজ…..!”
~” হুম আমার কাছে সহজই মনে হচ্ছে। দেখি, আজকের পর থেকে আমাকে ছাড়া তুমি কিভাবে থাকতে পারো!”
অবশ্যই দেখবা, তবে তোমার মত করে নয় আমার মত করে বলেই পরী দৌড়ে গিয়ে দেয়ালে নিজের মাথা দিয়ে জোড়ে ধাক্কা দিলো। ধাক্কার শব্দ কানে যেতেই শুভ্রর কলিজা কেঁপে উঠলো। এই পরী করছো কি বলেই শুভ্র চেঁচিয়ে উঠলো।
পরী কয়েক সেকেন্ড ওভাবে থেকে আস্তে আস্তে শুভ্রর দিকে ফিরে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল-
~” আরও কিছু দেখতে চাও মি.শুভ্র আদনান!”
পরীর চুলের ভিতর দিয়ে চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়ছে কানের সাইট দিয়ে। শুভ্রর ভিতরও আজ প্রচন্ড জেদ চেঁপে গেল। পরীর কথার মাঝেই শুভ্র দৌড়ে গিয়ে পরীকে শক্ত করে ধরে বলল-
~” এই এত জেদ কেন তোমার! তুমি পাগল হয়ে গেছ?”
~” পাগলামীর দেখেছ কি! এখনো অনেক দেখানোর বাঁকি আছে।”

~” চুপপ পাগলের বাচ্চা পাগল। তোর বাপ একটা বদ মেজাজের গুদাম, আর তার মেয়ে তুই কত ভালো হবি! তোর চৌদ্দ গোষ্ঠীর বায়োডাটা আমার জানা আছে। তুই কি কি করতে পারিস সেটাও আমি ভালো করে জানি। চুপচাপ থাকি বলে তোর পাওয়ার বেড়ে গেছে তাইনা! তুই আমাকে এখনো চিনোসনা। রুপমকে জিঙ্গাস করে দেখিস আমি কি জিনিস! এমনি এমনি তোর পিছ ও ছাড়ে নাই। তুই কি ভাবছোস, সব সময় আমি এমন ঠান্ডা স্বভাবের থাকবো! আর একটা উল্টাপাল্টা কাজ যদি করিস তাহলে থাবড়াইয়া সব ছুটাইবো।”
উমমহ্ বলেই পরী শুভ্রকে একটা ধাক্কা মারে গায়ে শক্তিতে। শুভ্র ওকে নিয়ে পড়ে যেতেই দ্রুত এক হাতে ওয়াল ধরে নিজেকে সামলে নেয়। শুভ্র দাঁতে দাঁত চেপে পরী বলে একটা চিৎকার দেয়।
এত তেজ! তোর তেজই আজ মারবো বলেই ওর ওড়না টান দিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে মারে। তারপর সোজা ঠোট কামড়ে ধরলো। যন্ত্রনায় পরী ছটপট করতে লাগলো। বার বার শুভ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করেও সফল হতে পারলোনা পরী। শুভ্র তখন পরীর উপর সম্পূর্ন ভাবে চড়াও হলো। বাহিরে তুমুল হারে বৃষ্টি ঝড়ছে। মাঝে মাঝে বাজও পড়ছে। অন্যদিকে পরীর শরীরে নিজের ভালোবাসার নিষ্ঠুর আঘাত করতে শুভ্র ব্যস্ত হয়ে পড়লো। পরীর দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম তবুও শুভ্র ওকে ছাড়তে নারাজ।
পরী শব্দ করে ফিকরে কেঁদে উঠলো, শুভ্র ছেড়ে দাও আমায়। আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। তবুও শুভ্রর কোন মায়া হলোনা পরীর উপর। বরং নিজের ঠোট দিয়ে ওর ঠোট শক্ত করে চেপে ধরে মাতালের মত আচরন শুরু করে দিলো শুভ্র। একসময় পরী আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায় শুভ্রর নিখুত আদরময় ভালোবাসার কাছে।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

এমন সময় জোড়ে জোড়ে দরজায় কেউ ধাক্কা দিতে লাগলো। পরী, পরী বলে নীলিমা আরও জোড়ে জোড়ে শব্দ করে ডাকতে লাগলো। এমন চিৎকারে শুভ্র প্রচন্ড বিরক্ত হলো। পরী ঠোট ছেড়ে দিয়ে মুখে আঙ্গুল পুরে বলল-
~” চুপ, একটা শব্দও যেন না শুনি!”
পরী শুভ্রের দিকে বড় বড় চোখ করে অঝরে কেঁদেই চলল। শুভ্র কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার পরীর দিকে মনযোগ দিতেই আবার সেই ডাক। এবার শুভ্র সে দিকে কান না দিয়ে পরীকে নিয়ে মেতে উঠলো। কিন্তু নীলামা এমন কথা বলল যে, শুভ্র নিজেকে থামাতে বাধ্য হল।
~” শুভ্র, আমি জানি তুমি এখানে রয়েছ। সাথে পরীও রয়েছে। দেখ, তোমার ব্যাপারে আমি নাক গলাতে চাইনা কিন্তু আমার মেয়েটাকে বের করে দাও। অনেক হয়েছে এসব। দরজা খোল…..।”
কথাগুলো শুনে শুভ্র আর এগুতে পারেনি। ঝোকের মাথায় কতবড় অন্যায় কাজ করছিলো এতক্ষন ধরে সেটা এবার শুভ্র বুঝতে পারলো। পরীকে বিছানা থেকে তুলে ওকে অনেকগুলো কিস করে আদুরে গলায় বলে উঠলো-
~” I am not the best, but I promise I will love you with all my heart…….”
পরী কোন কথা না বলে চোখ মুছে ওড়না তুলতে যেতেই শুভ্র সেটা নিজেই তুলে ওকে পড়িয়ে দিল। ও নিজেই পরীকে ফিটফাট করে দিয়ে আবেগী কন্ঠে বলে উঠলো-

~” এবার যদি তুমি আমার কাছ থেকে চলে যাও তাহলে আমি শেষ হয়ে যাব পরী। প্লিজ আমার সাথে ফ্রী হয়ে বসে কথা বলো। আমাকে জানতে দাও তোমার কি কি সমস্যা! কিছু না বললে আমি তোমায় বোঝাব কি করে!”
হয়েছে তোমার কথা বলা! বলেই পরী চিৎকার দিয়ে উঠলো। আজ যা যা করেছ খুব খারাপ কিছু করেছ। একদম ভালো করোনি। কথা শেষ না হতেই শুভ্র ওকে জড়িয়ে ধরে চুপ করে রইলো। এদিকে নীলিমার অস্থিরতা বেড়েই চলছে। পরীকে ছেড়ে দিয়ে প্রথমে শুভ্রই দরজা খুলে বের হল।
~” শুভ্র পরী কই!”
ভিতরে আছে কাকি বলেই শুভ্র ছাতার নিচে রাখা কেকটা নিয়ে এসে কাকির হাতে দিয়ে কিছু না বলে নিচে চলে গেল। নীলিমাও কিছু না বলে পরীকে নিয়ে নিচে নেমে আসলো। সেই রাতে পরী পুরো রাত ধরে কেঁদেছে শুধু। পরদিন সকাল থেকে পরীর শরীরে জ্বর আসলো। একটানা ১২ দিন জ্বর ছিল গায়ে।

বাসায় নতুন একটা সদস্য এসেছে। পরীর বন্ধু ফয়সাল একটা বিড়াল পাঠিয়েছে। তার নাম “কেটি”।
বেচারা জানালার ধারে দাড়িয়ে শুধু আকাশ দেখে। সে এমনই একটা অদ্ভুদ বিড়াল যে মাছের কাটা খেতে পারেনা। তাকে মাছ বেছে বেছে খাওয়ায় দিতে হয়। সে ফুলের টবের কাছে গিয়ে একটু একটু করে ফুলের পাতা ছিড়ে খায়। নীলের কালো গোলাপের গাছের পাতাও সে খেয়ে ফেলেছে যা দেখে নীল দৌড়ে এসে কেটির কান ধরে টেনে পরীর রুমে গিয়ে বলল-
~” আপু আপনার কেটিরে সামলান বলছি। সে আমার ব্লাক রোজের পাতা খেয়ে ফেলেছে। এবার যদি ওকে দেখি আমার গাছের কাছে তাহলে এই চার তলা থেকে ওকে নিচে ফেলে দিব।”
পরী তখন স্ট্যাডি করছিলো। নীলের কথা শুনে পরী মাথা তুলে কিছু সময় ওর দিকে চেয়ে বলল-
~” এই ছেলে, তোমার এত সাহস কি হয় আমার কেটির কান ধরা! আর ওকে নিচে ফেলে দিবা! দিয়ে দেখ একবার! তোমাকে একদম হাওয়া করে দিব বুঝলে!”

পরীর এমন অদ্ভুদ কথায় নীল কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে সোজা ওর মায়ের কাছে গিয়ে বলল-
~” আম্মু, তোমার ভাতিজী কি সাইকো! না জ্বীনে ধরা মেয়ে? এমন করে কথা বলে কেন? ওনার কথা যেই শুনবে তারই পিলে চমকে যাবে।”
নীলিমা কাজ করতে করতেই বলল-
~” কেন, তোর পিলে চমকে গেছে নাকি! তুই তো এত সহজে ভয় পাওয়ার ছেলে নস!”
ধ্যাত কি বলি আর কিসের জবাব দেয় সে। তোমাদের বংশই মনে হয় পাগলের বংশ। কথাটা বলেই নীল জ্বীভে কামড় দেয়। এখানে আর এক মুহুত্বও থাকলে মায়ের হাতের খুন্তি বারি নির্ঘাত তার কপালে জুটবে তাই দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়লো নীল।

পরী ওর মায়ের নাম্বার ডায়েল করলো। পরপর ৩বার বেজে কল কেটে গেল। কিন্তু রিসিভ হলোনা। ফোনটা খাটে ছুড়ে ফেলে গুটিশুটি মেরে বসে রইলো। বাসায় যদি থাকতাম তাহলে ঐ কংফু ব্যাটার সাথে নির্ঘাত এতদিনে বিয়ে হত। আর এখানে এলাম তো সব সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল। না বাবা কথা বলে না মা। মাঝে মাঝে কিরনের সাথে কথা হয়। আমার জন্য দাদী অবদি বাবার চোখের ত্রিশূল হয়ে গেছে। তাদের সাথে দাদীর কোন সম্পর্কই আর নেই। এসব ভাবতে ভাবতে নীলিমা এক কাপ কফি এনে পরীর সামনে রেখে বলল-
~” মা কি চিন্তা করো!”
পরী একটু হাসার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলোনা। গম্ভীর ভাবেই বলল-

~” তেমন কিছু নয় আন্টি। আজ মাগরিবের পরে আমার এক বান্ধবীর বাসায় যাবো, দাওয়াত আছে। গেলে সমস্যা হয়ে আন্টি! ও দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছে ওর বরের সাথে তাই সবাইকে ইনভাইট করেছে। আসতে রাত হবে। যদি নীল আমাকে নিয়ে আসতো তাহলে খুব ভালো হত। আমাদের এদিকে কারো বাসা না। তাই আমাকে একাই আসতে হবে। আসতে আসতে প্রায় ১১টা বেজে যাবে।”
সেটা পরে দেখা যাবে বলে নীলিমা পরীকে ভালো করে দেখে বলল-
~” শুভ্রর সাথে কি তোমার শুধু প্রেমের সম্পর্ক না আরো গভীর কোন সম্পর্ক রয়েছে! আমি তোমার মায়ের মত। আমাকে সব বলতে পারো মা…।”
পরী কিছু বলতে যাবে এমন সময় নিঝুমের রুম থেকে হাই ভোল্টেজে গান ভেঁসে এল। নিজের কথা মনে হয় নিজেই শুনতে পাওয়া যাবেনা। নীলিমা উঠে চলে গেল। পিছে পিছে পরীও গেল।
I’m your girl, I’m your girl
I’m your mama
Come on boy, don’t be shy
don’t want drama
I’m your girl, I’m your girl
Belladonna, sexy mama
……………………………..
Gimme gimme some of that
Ulah ula ula.

নিঝুম গানের তালে তালে কোমড় দুলিয়ে নাচছে। যাকে বলে মাদ্রাজির দাপানি নাচ। পরী মুখ চেপে ধরে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মত অবস্থা।
নীলিমা পায়ে চটি খুলে হাতে নিয়ে নিঝুমের সামনে দাড়াতেই ও চমকে উঠে দৌড়ে গিয়ে গান বন্ধ করে দিয়ে পরীর আড়ালে গিয়ে দাড়ালো।
ঐ খাড়া, ওর পিছনে লুকালি কেন! পড়া বাদ দিয়ে এমন অসভ্য মার্কা গান শুনছিস? তাইতো বলি তোর রেজাল্ট এত খারাপ কেন?
স্যরি স্যরি আম্মু আর এমন হবেনা বলে চেঁচিয়ে উঠলো নিঝুম। পরীকে কেন্দ্র করে এদের মা মেয়ের ভিতর দফায় দফায় গোল্লাছুট খেলা হয়ে গেল। শেষে পরী নিঝুমকে নিয়ে ওর রুমে চলে আসলো। বিছানায় বসতেই কেটি এসে পরীর কোলে বসে পড়লো। পরী ওর গা চুলকে দিতেই ও চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইলো।

বিকেলে রেডী হয়ে পরী সিড়ি দিয়ে নেমে দু’তলায় যেতেই দেখলো শুভ্র দ্রুত বেগে উপরে উঠে আসছে। পরী আর এক মুহুত্ত্ব দেরী না করে দৌড়ে উপরে উঠে এলো। শুভ্র বুঝতে পারেনি ওটা পরী ছিল। শুভ্র উপরে চলে যেতেই পরী হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সেদিন যা ভয় দেখাইছেনা, আর ওর সামনে পরী যায়! মন থেকে সব ঝেড়ে ফেলে দ্রুত নেমে গেল। এবং একটা ট্যাক্সি নিয়ে বান্ধবীর বাসায় রওনা দিলো।

মাগরিবের নামায পড়ে নীলিমা বসে নিঝুমের পড়া দেখছে। এমন সময় বাসায় মারিয়া আসলো। নিঝুম পড়া বাদ দিয়ে মারিয়াকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। মারিয়া বেশ কৌতুহলী হয়ে নিঝুমকে প্রশ্ন করলো, নিঝুম পরী কোথায়!

~” পরী! পরী কে? আমরা তো তাকে চিনিনা মারিয়া!”
~” না মানে আপনাদের বাসায় নাকি কোন একটা মেয়ে থাকে? সে কোথায়! তার সাথে আলাপ করতে এলাম।”
ওর নামতো পরী নয় মারিয়া! ওর নাম নাফিসা। আমার ভাতিজী সে। মাস্টাস্ করছে এবার। তুমি কি তার কথা বলছো? কথাগুলো বলেই মারিয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়লো নীলিমা। কিছুতো একটা হয়েছে যার জন্য মারিয়া পরীকে সন্দেহ করে ওর খোজে এখানে এসেছে। তাই বেশ সর্তকতার সাথে মারিয়ার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলো নীলিমা।
নাহ্ যেই পরীর খোঁজে মারিয়া এখানে এসেছে তার সাথে কোন মিলই নেই এই নাফিসা মেয়েটার। তাহলে সে পরী নয়। শুধু শুধু শুভ্রর উপর সন্দেহ করে ওর উপর রাগ করে থাকার কোন মানেই হয়না। এত ভালো একটা বর তার। তার দিকে চোখ তুলে তাকানোও যে অপরাধ। কারন তার মত কোন মানুষই হয়না। পৃথিবীর মধ্য শ্রেষ্ট একটা মানুষ। মারিয়া হাফ ছেড়ে বাচলো। আরও কিছুক্ষন গল্প করে খুশি মনে চলে গেল মারিয়া।
নীলিমার কাছে ব্যাপারটি খুব একটা সুবিধার মনে হলোনা। তাই আরও সাবধান হতে হবে তাকে। নিঝুমকে নিষেধ করে দিল, নাফিসার নাম যে পরী সেটা যেন মারিয়া কিছুতেই না জানে। কোন অবস্থাতেই যেন জানেনা তারা বৌ শাশুড়ী। জানলেই সর্বনাশ।

রাত ১১টা বাজে। পরী আর সুজাতা ডাল রাস্তায় দাড়িয়ে আছে প্রায় ২০ মিনিট ধরে। অনুষ্ঠান অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। সবাই মোটামুটি চলে গেছে। অনেকে ওদের বরকে নিয়ে এসেছিল। পরীর বার বার শুভ্রের কথা মনে পড়ছিল। বর হয়েও সে আজ পর। তার জন্য অন্য মেয়ে রয়েছে। কথাগুলো ভাবতেই চোখ ছলছল করে ওঠে ওর। নীলকে অনেক্ষন আগেই কল দিয়েছে। বলল ৫মিনিটের মধ্যই সে আসবে। প্রায় ২০ মিনিট হয়ে গেল তবুও আসার নাম নেই।
একটু পর সুজাতাকে ওর বাবা নিতে আসলো। সুজাতা যেতে চাইছিলোনা কিন্তু পরী বলল এই একটু পড়ই নীল আসবে। ২/১ মিনিট লাগবে। তুই চলে যা।
সুজাতা চলে গেলে পরী একাই দাড়িয়ে রইল। ডাল রাস্তা তাই গাড়ী নেই। মেইন রাস্তা হলে এতক্ষনে গাড়ীর অভাব হতোনা। দাড়িয়ে থাকতে থাকতে বোরিং হয়ে যাচ্ছে পরী। ফোন বের করে বার বার কল দিতে লাগলো নীলকে। কিন্তু কল আর রিসিভ হয়না। শেষে পরী রাস্তার ধারে বসে ফুফিয়ে কাঁদতে লাগলো।
খানিকপর ঝড়ের বেগে বাইক নিয়ে এসে নীল দাড়াতেই পরী উঠে দাড়ালো। তারপর রাস্তায় নেমে এসে গাড়ীতে বসে থাকা অবস্থায় নীলকে ধাক্কা দিল। নীল বাইক নিয়েই পড়ে গেল। বেশ ভালোই ব্যাথা পেল সে। সে উঠে দাড়াতেই পরী চিৎকার দিয়ে বলল-

রক্তক্ষরণ অপেক্ষা পর্ব ৬

~” এই তোকে কে আসতে বলেছে। আমি যাবোনা তুই চলে যা।”
নীল রেগে গিয়ে তেড়ে এলো পরীর দিকে। আমার ঠেকা পড়ছে তোমাকে নিতে আসতে। আম্মু জোড় করলো তাই এলাম। তাছাড়া আম্মুর কথায়ও আসতামনা, তুমি শুধু বার বার কল দিচ্ছিলা তাই বাধ্য হয়ে এলাম। যাও তুমি কি ভাবে যাবা যাও বলেই নীল বাইক ওভাবে রেখেই উল্টা পথে চলে গেল।
পরী শুধু অসহায়ের মত নীলের চলে যাওয়া দেখলো। নীল চোখের আড়াল হতেই পরী অসহায়ের মত বাইকের কাছে বসে মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগলো। এমন সময় একটা ছেলে এসে পরীর মাথায় হাত দিয়ে বলল-
~” ও ম্যাডাম রাস্তার মাঝখানে কি করছেন? সাহার্য্য লাগলে আমায় বলেন। আমি হেল্প করি?”
অচেনা লোকটির কথা শুনে পরী চমকে উঠে দাড়িয়ে পড়লো। পরীর এমন অবস্থা দেখে লোকটি সাহস পেয়ে আরো কাছে আসতেই পরী চুপসে গেল। এমন সময় কোথা হতে নীল দৌড়ে এসেই লোকটিকে থাপড়াইতে লাগলো। হারামজাদা, শুয়োরের বাচ্চা মেয়ে মানুষ দেখলেই তোদের এসব কুকর্মের বাসনা মনে জাগে! আরও কয়েকটা চড় মারতেই লোকটা ভয়ে ভো দৌড় দিল।
এবার পরীর কাছে নীল আসতেই পরী আবার রাস্তার উপরে উঠতেই নীল গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো-
~” এবারতো অন্তত ক্ষমা করে দাও। বলছিতো আর হবেনা। তুমি জানো, তোমার জন্য শুধু তোমার জন্য আমার গার্লফেন্ড আজ আমাকে ছেড়ে গেছে। ৪ বছরের রিলেশন, আর সে কিনা আমায় বলে তুমি নাকি আমার গার্লফেন্ড? এটা মানা যায়! তাই ব্রেকআপ……।”

পরী ওর চোখের পানি মুছে নীলের কথার কোন পাত্তা না দিয়ে বাইকে উঠে পড়লো। নীল ওর হেলমেট খুলো পরীকে দিয়ে বলল, এটা পড়ে নাও। পরীও কোন কথা না বলো হেলমেট পড়ে নিতেই নীল বাইক স্টার্ট দিল।
তারা যখন বাসায় আসলো তখন রাত ১২টা পার হয়ে গিয়েছে। যখন ওরা বাসায় ঢুকলো তখন পরী হঠাৎ লক্ষ্য করলো শুভ্র ব্যালকোনিতে দাড়িয়ে ওকেই দেখছে। পরী এবার যা করলো তাতে শুভ্রের মাথায় চড়চড় করে রক্ত উঠে গেল। সেদিন ওকে এত শায়েস্তা করলো তবুও লজ্জা হলোনা! শুভ্র রেগে গিয়ে ব্যালকোনি থেকে চলে গিয়ে দ্রুত নিচে নামতে লাগলো।

রক্তক্ষরণ অপেক্ষা পর্ব ৮