ভুলতে পারিনি তাকে পর্ব ১৪ || নীল ক্যাফের ডায়েরী

ভুলতে পারিনি তাকে পর্ব ১৪
Mahfuza Akter

পূর্ণিমা রাতের জ্যোৎস্না শোভিত পরিবেশ। চারদিকে চাঁদের মিষ্টি আলো মো মো করছে। সেই স্নিগ্ধ আলোয় কেউ একজন অধীর অপেক্ষার পর তার প্রিয় মানুষটিকে মন ভরে দেখছে।
—আমি তোমার কাছে কখনোই ক্ষমা চাইবো না, মিষ্টিপাখি। অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমায়! তোমার হাত ধরে তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম, একটা সুন্দর জীবন উপহার দিতে চেয়েছিলাম। আমি সত্যিই তোমার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি। আমাকে কিন্তু কখনো ক্ষমা করো না। অলওয়েজ ঘৃণা করবে! এতো বেশি ঘৃণা করবে যে, মানুষ তোমাকে দেখে অবাক হয়ে যাবে। আমিই একমাত্র ব্যক্তি, যে কিনা অন্যায় করে ক্ষমা না চেয়ে ঘৃণা প্রার্থনা করছে। এতো বড় সৌভাগ্য নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলাম।

আভাস শ্রুতির পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে উল্টো ঘুরে চলে যেতে নিলেই তার হাতে টান পড়ে। আভাসের চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম। শ্রুতি কি জেগে গেছে? কিন্তু তন্ময় তো বলেছিল শ্রুতি ঘুমের ওষুধ খেয়ে আজ বেঁহুশের মতো ঘুমাবে! তাহলে জেগে গেল কীভাবে? আজ আর তার রক্ষে নেই! বোল হয়, মার আর অপমান দুটোই লেখা ছিল কপালে। ভেবেই নিজের প্রতি ঘৃণায় তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো আভাস।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

—তোমাকে চাই!
শব্দদয়ের আকস্মিক ঝমঝমানি আভাস বারবার শুনতে পারছে। শ্রুতির মুখ থেকে এমন কথা শুনে আভাস ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাতেও পারছে না। বেশ কিছুক্ষণ সময় এমন শকিং অবস্থাতেই পার করলো আভাস। হঠাৎ তার মনে হলো, শ্রুতি অনেকক্ষণ যাবৎ চুপচাপ, হয়তো সে স্বপ্নের ঘোরে এসব বলছে। শ্রুতির দিকে তাকাতেই দেখলো ও চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। তাই ভাবনাটার গভীরতা বুঝতে পেরে আভাস একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। শ্রুতির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে যাবে এমনসময় হঠাৎ আচমকা জোরে টান পড়ায় বিছানার উপর হুমড়ি খেয়ে চিৎ হয়ে পড়লো আভাস। চিৎকার করার আগেই শ্রুতি ওর বুকের ওপর উঠে বসে মুখে হাত চেপে বললো,

—একবার হাত ছাড়িয়ে চলে গিয়েছিলি বলে কি এবারও তোকে যেতে দিবো ভেবেছিস? আজ তুই মরবি অথবা আমায় বিয়ে করবি!
শ্রুতির অকস্মাৎ রণচণ্ডী রূপ দেখে আভাস ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। পাশাপাশি ভয়ও পাচ্ছে। আভাসকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে শ্রুতি বললো
—আমার ঘরে এতো রাতে কিভাবে এলি? বাবা তো তোকে ঢুকতে দিবে না!
আভাস কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
—পাইপ বেয়ে বারান্দা দিয়ে এসেছি!
—বাহ্! বেশ ফিল্মি একটা ব্যাপার তো! কেন এসেছিস হঠাৎ? সত্যি করে বলবি, নয়তো গলা টিপে মেরে ফেলবো।
আভাস একটা ঢোক গিলে বললো,
—আমি ভেবেছিলাম, তুমি আজ হয়তো তোমার মায়ের কথা ভেবে মন খারাপ করে ছিলে! তাই তোমায় দেখতে………

—তাহলে দেখে এভাবে চলে যাচ্ছিস কেন?
—তুমি আমায় তুই-তোকারি করে কথা বলছো কেন?
—তো কী বলবো? তোকে তুমি করে বললে আমার মুখ দিয়ে শুধু একটা কথাই বের হয়।
—কী কথা?
শ্রুতি আভাসের গাল টেনে দিয়ে বললো,
—তোমাকে চাই।
আভাস মনে মনে ভাবছে,
—হয়তো অতি শোকে পাগল-টাগল হয়ে গেছে, তাই এসব উল্টাপাল্টা বকছে।
শ্রুতি আভাসের দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
—আমাকে চাস না তুই!

আভাস চমকে উঠে সংবিৎ ফিরে পেয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে ডানে-বামে মাথা নাড়ালো। শ্রুতি এটা দেখে আভাসের গালে ঠাস করে থাপ্পড় দিয়ে বললো,
—তোর চাওয়ার ধার ধারি না আমি। এমনি কথার কথা বলেছিলাম।
আভাস থাপ্পড় খেয়ে আর শ্রুতির কথা শুনে পুরোই বোকা বনে গেল। হঠাৎ শ্রুতি শান্ত ভঙ্গিতে বলে উঠলো,
—আপনার মাকে নিয়ে এতো ভয় পাচ্ছেন কেন আপনি?
আভাস অবাক হয়ে বললো,
—ভয়! মাকে কেন ভয় পাবো?
শ্রুতি নির্বিকার ভাবে বললো,

ভুলতে পারিনি তাকে পর্ব ১৩

—এই যে, আপনার মা আমি বেচে আছি জানলে আবার অ্যাটাক করবে।
আভাস মাথা নিচু করে বসে আছে। তার মুখ থেকে কোনো কথা সরছে না।
—আচ্ছা, একটা সত্যি কথা বলবেন?
আভাস শ্রুতির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই শ্রুতি বললো,
—আসলেই কি ভালোবাসেন আমায়? আমি জানি সত্যটা, কিন্তু তা-ও আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই।
পুরো ঘরটা মুহুর্তেই নিস্তব্ধ হয়ে গেল। আভাস মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে আর শ্রুতি তার দিকে উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে। হঠাৎ নীরবতার প্রাচীর ভেঙে আভাস বলে উঠলো,

—ভালোবাসি আমার মিষ্টিপাখিকে।
শ্রুতি ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। অনেকদিন পর তার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটলো।
—বিয়ে করবেন আমায়?
নিঃসংকোচ আবেদন। শ্রুতির হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে আভাস ঘোর আপত্তি জানিয়ে বললো,
—অসম্ভব! বোঝার চেষ্টা করো, প্লিজ। আমি তোমার লাইফটা রিস্কে ফেলতে পারবো না। এখন আমি এমন একটা পরিস্থিতিতে আছি যে, একদিকে মা আর একদিকে তুমি। মাকে আমি মনেপ্রাণে ঘৃণা করি, তার সাথে আমি কথা বলি না। তবু্ও তোমাকে আমি বিয়ে করছি না।
শ্রুতি আভাসের গলা চেপে ধরে বললো,

—করবি না মানে? তোর ঘাড় করবে। ভালো কথা বলেছি, মজা লাগেনি তাই না? যদি হ্যাঁ না বলিস, তাহলে আজ তোকে মেরেই ফেলবো।
আভাসের শ্বাস বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। সে বহু কষ্টে বললো,
—করবো, করবো। আজই করবো।

ভুলতে পারিনি তাকে পর্ব ১৫